এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ভীষ্ম বধ (শেষ পাঁচ দিন)

    dd লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৫ জুন ২০১৬ | ১৩৯২ বার পঠিত | রেটিং ৩ (১ জন)
  • ভীষ্ম বধ (শেষ পাঁচ দিন)
    *******************************
    কী হল গত পাঁচ দিনে? নামকরা রথীদের মধ্যে নিহত হলেন পান্ডব পক্ষের বিরাটপুত্র উত্তর ও শংখ, সাত্যকির দশ পুত্র আর কৌরব পক্ষে দুর্য্যোধনের সাত ভাই এবং নিষদ রাজ কেতুমান। কলিংগরাজ শ্রুতায়ুর দুই ছেলেও।

    শংখ আর কেতুমান বাদ দিলে বাকী সবাই শুধু পিতৃ/ভ্রাতৃ পরিচয়েই বিখ্যাত - যোদ্ধা হিসেবে নন।

    প্রথম দিনে কৌরবপক্ষের সার্বিক জয় হলেও আরো তিনদিন পান্ডবেরাই বেশী শত্রুক্ষয়ে সমর্থ হয়েছিলেন।আর একদিন বলা যায় সমান সমান। কিন্তু অনেক বেশী সেনা আর রথীদের নিয়েও সন্মানজনক ড্র মানে কৌরবদেরই কোয়ালিফায়েড ডিফিট। ধৃতরাষ্ট্রের হতাশা,দুর্য্যোধনের ক্ষোভ থেকেই সেটা পরিষ্কার। অন্যদিকে পান্ডবপক্ষে শুধু অর্জুনের "মৃদুতা" নিয়েই সমস্যা।

    স্পষ্টতঃই সঞ্জয়ও যাকে বলে বোরড হয়ে গেছিলেন। তাই ষষ্ঠ ও সপ্তম দিনের যুদ্ধের বিবরণীতে কন্টিনিউটির অভাব ছিলো।

    ষষ্ঠ দিনের যুদ্ধ
    *********************************
    এই দিনে যুধিষ্ঠির ধৃষ্টদ্যুম্নকে নির্দেশ দিলেন মকর ব্যুহ সাজাতে। ভ্যানগার্ড অর্থাৎ একেবারে ব্যুহের ঠোঁটে ভীমসেন ,তার পিছনেই অর্জুন আর দ্রুপদ (মকরের মুখে), নকুল সহদেব মকরের চোখে। তার পিছনে যুধিষ্ঠির,সাত্যকি, ঘটোৎকচ। সেনাপতি ধৃষ্টদ্যুম্ন আর বিরাট রইলেন অনেকটা পিছিয়ে - (মকরের পিঠে) আর একেবারে শেষ ভাগে অর্থাৎ পুচ্ছদেশে শিখন্ডী আর ইরাবান। শিখন্ডীকে কেনো যে পিছিয়ে রাখা হচ্ছিলো কে জানে?

    আর ভীষ্মের সাজালেন ক্রৌঞ্চ ব্যুহ। যার ভ্যানগার্ড দ্রোণাচার্য্য। ব্যুহের চোখে অশ্বত্থামা আর কৃপাচার্য্য। অর্থাৎ সপরিবারে পুরো গুরুকুলটাই মূল আক্রমন। এদের পিছনে ব্যুহের মাথায় আর আরো পিছনে দুর্য্যোধন।

    তাহলে ভীষ্ম কোথায় রইলেন? সেই বিষয়ে কবি নীরব। ব্যুহ সজ্জার বিবরণে এরকম অনেক ঘাটতি আছে। একে তো সব দিনের ব্যুহের নামই নেই তায় প্রায়ই বড়ো রথীদের নামও বাদ চলে যায়।

    আরেকটি ইন্টেরেস্টিং তথ্য যে ব্যুহের শেষ দিকে রিজার্ভ ফোর্সে ছিলো বিদেশী সেনারা, তুষার,যবন,শক ও চূলিক।

    এর পরে ধৃতরাষ্ট্র আর সঞ্জয়ের কথোপকথন খুবই তথ্যবহূল।
    ধৃতরাষ্ট্র প্রশ্ন করলেন, আমাদের সেনানীও প্রচুর। তারা কেউই বালক বা বৃদ্ধ নন, খুব কৃশ বা স্থুলও নন। তারা তাদের অস্ত্র অর্থাত অসি, প্রাস (লম্বা বর্শা), মুষল, ঋষ্টি (মনুসংহিতায় বর্ননায় মনে হয় তরোয়াল),তোমর (আগাগোড়া লোহার, শাবল গোছের অস্ত্র),ভিন্দিপাল (কাঠের বাঁট, হাতুড়ী গোছের ,গদা),শক্তি(বল্লম) এইসবে অভ্যস্ত। খেয়াল রাখুন সাধারন সেনানীদের অস্ত্রে তীর ধনুকের কথা নেই। বল্লম ছাড়া হস্তমুক্ত অস্ত্রও নেই। থাকবে কী করে? একজন সেনানী কত'ই বা অস্ত্র একসাথে বয়ে বেরাতে পারবে ?

    ধৃতরাষ্ট্র আরো বল্লেন আমার সেনারা তো পেশাদার, "আমরা উহাদিগের গজ, হস্তী ও রথ গমনের পরীক্ষা করিয়াই বেতন দিয়া নিযুক্ত করিয়াছি।"....."উহারা সকলেই আর্য্যোবংশদ্ভব ও সমৃদ্ধ"। আমাদের সেনারা (পান্ডবদের মতন)" গোষ্ঠী, সৌহার্দ্দ্য, আভিজাত্য বা সম্পর্কের কারনে নিযুক্ত হয় নাই। এরা স্বেচ্ছায় আমাদের কাছে এসেছেন তবে কেনো আমরা তাহলে পান্ডবদের হাতে পরাজিত হচ্ছি ?

    সঞ্জয় অবশ্য ব্যাপারটাকে স্রেফ কর্মফল বলেই কাটিয়ে দিলেন।

    আজকের দিনটা ভীমের।

    উনি কৌরব ব্যুহ ভেদ করে ভিতরে ঢুকতেই দুর্য্যোধনের ভাইরা তাকে ঘিড়ে ফেললেন। ভীম প্রথমে খেয়াল করেন নি। উনি অন্যান্য সেনাদের নিধনেই ব্যাস্ত ছিলেন। যখন টের পেলেন যে তাকে একেবারে ঘিড়ে ফেলা হয়েছে তখন ভীমকে আর রোখা গেলো না। রথ থেকে মাটীতে নামলেন তার প্রিয় গদা হাতে।

    ওদিকে ভীমের বিপদ টের পেয়ে ধৃষ্টদ্যুম্ন দ্রোণের সাথে তাঁর নিত্যনৈমিত্তিক দ্বৈরথ ছেড়ে চলে এলেন যেখানে ভীমের রথের ধ্বজা দেখা যাচ্ছে। এসে দেখলেন শুন্য রথ, সারথী বিশোক একাই বসে আছেন। ধৃষ্টদ্যুম্ন তো আঁতকে উঠলেন। বিশোক জানালেন যে ভীমসেন যেই বুঝলেন তাকে "অবরোধ" করা হয়েছে অমনি গদা হাতে নেমে পড়লেন। আমাকে আদেশ করলেন, রথটা এখানেই "পার্ক" করো হে। "মুহূর্ত্তকাল অবস্থান করো", আমি ওদের খতম করেই ফিরে আসছি।

    ধৃষ্টদ্যুম্ন তখনই ভীমের সন্ধানে রথ চালালেন।
    ভীমসেনকে অনুসরণ করা আদৌ কঠিন ব্যাপার নয়। শত্রুসেনাদের আর্ত্তনাদ আর ক্রমাগতঃ ভগ্ন রথ, নিহত ঘোড়া ও হাতীর সরণি ধরে এগিয়ে গিয়ে অচিরেই ভীমসেনকে দেখা গেলো। ভীমসেন তখন একেবারেই অবরুদ্ধ। ধৃষ্টদ্যুম্নকে হাজির দেখে দুর্য্যোধন নিতান্ত ক্রুদ্ধ হলেন। ভাইদের বললেন "দুরাত্মা দ্রুপদতনয়" ও এসে গেছেন। চলো আমরা দুইজনকেই সাবাড় করি।

    ওদের খবর পেয়েই যুধিষ্ঠির ব্যাকুল হয়ে পড়লেন। অভিমন্যু ও আরো বারোজন রথীদের তৎক্ষনাৎ পাঠানো হলো কুরু ব্যুহ মধ্যে। যুধিষ্ঠির বললেন শিগগিরি ওদের খবর জানাও আমাকে। যতক্ষন না ওদের সংবাদ না পচ্ছি ততক্ষণ "আমার মনস্থির হইতেছে না"।

    পান্ডব রথীরা তখুনি সূচীব্যুহ অর্থাৎ ফ্যালাংক্স বানিয়ে রথ চালালেন। আর কুরুপক্ষও বসে নেই ,দ্রোণও ছুটলেন অভিমন্যুকে আটকাতে। দ্রোণকে আসতে দেখে ধৃষ্টদ্যুম্ন আর রিস্ক নিলেন না, কেকয় রাজার রথে ভীমকে তুলে নিজে ছুটলেন দ্রোণকে সামলাতে। দ্রোণ তখন "প্রভু দুর্য্যোধনের অন্ন স্মরণ করিয়া ,তাঁহার হিতার্থে ধৃষ্টদ্যুম্নের উপর শত শত বাণ নিক্ষেপ করিলেন"। দ্রোণ ভল্লাস্ত্রে তাকে অশ্বহীন ও সারথীহীন করলে ধৃষ্টদ্যুম্ন তখন অভিমন্যুর রথে উঠে, মনে হয়,পিছু হঠলেন।
    ভীম ফিরে এসে সুস্থ চিত্তে নিজের রথেই উঠলেন। অভিমন্যু প্রমূখ বারোজন রথীকে বাকীদের রক্ষা করার আজ্ঞা দিয়ে নিজে ছুটলেন কুরুসৈন্য নিধনে। তাকে দেখেই সবাই পালাতে শুরু করলে "তাহারা যে জীবন লইয়া পলায়ন করিল ইহাও ভীমসেনের নিতান্ত অসহ্য বোধ হইল"।

    নিজের রথেই ভীমসেনকে দেখে দুর্য্যোধন ছুটলেন তার ভাইদের নিয়ে। এই যে দুর্য্যোধনের ৯৯জন ভাই, দুঃশাসন বাদ দিয়েও, কয়েকজনের নাম যোদ্ধা হিসেবে বার বার উল্লেখিত হয়েছে, যেমন বিকর্ণ,চিত্রসেন আর জয়ৎসেন। অভিমন্যুর নেতৃত্বে বারো জন পান্ডব রথী তখন ভীমের পাশে, দুর্য্যোধনের পাশেও সব কৌরব মহারথীরা। যাকে বলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে।কিন্তু ভীমের বাণে দুর্য্যোধন কাহিল হয়ে পড়লেন ।

    এর মধ্যে অর্জুন- দ্রৌপদী পুত্র শ্রুতকর্মা তার এক শক্তির আঘাতে ধৃতরাষ্ট্র তনয় দুর্ম্মুখকে নিহত করলেন। এটি বেশ বিভ্রান্তিকর। কেন না বহুবারই উল্লেখ হয়েছে যে ধৃতরাষ্ট্রের ১০০ ছেলেকেই একা ভীমই হত্যা করেছিলেন। এর পরেও দেখবো একদিন অর্জুনও ধৃতরাষ্ট্রের দশ ছেলেকে নিধন করবেন। হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ মত দিয়ে ছেন যে এরা সবাই ধৃতরাষ্ট্রের "অসবর্ণ"পুত্র ছিলো। অর্থাৎ যুযুৎসুর মতন দাসী পুত্র। এই দশ জনের নাম ছিলো না। তাই এই গোঁজামিল মত দেওয়া যায়। কিন্তু এই লড়াইতে স্পষ্টঃই বলা আছে ধৃতরাষ্ট্রের পুত্র দুর্ম্মুখ। ঐ নামেরই অন্য কেউ নয়।

    এর পর পরেই আবার দেখি নকুল-দ্রৌপদী তনয়,শতানীকের ভল্লের আঘাতে আর এক ধৃতরাষ্ট্র পুত্র দুষ্কর্ণের মৃত্যু হল। কোনো টীকাকারই এর ব্যাখ্যা করেন নি।

    কুরুক্ষেত্রের অন্যত্র দেখি ভীষ্ম, "পশুপালক যেরকম পশুদের তাড়িত করে সেইরকম পান্ডব সেনাদের সেইরূপ তাড়িত করিতে প্রবৃত্ত হইলেন"। ভীষ্মকে ঠেকাতে সেই অর্জুনকেই আসতে হলো দক্ষিনদিক থেকে।

    ব্যাস। এরপরেই দেখি ভীষ্ম প্রচন্ড ক্র্রুদ্ধ হয়ে সেদিনের মতন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলেন। যুধিষ্ঠিরও লড়াই ফেরৎ ধৃষ্টদ্যুম্ন আর ভীমসেনকে দেখে "তাঁহাদের মস্তক আঘান করিয়া হৃষ্টচিত্তে শিবিরে গমন করিলেন"। এই দিনের যুদ্ধের বিবরণী খুবই অ্যাবরাপ্টলি শেষ হল।

    সপ্তম দিনের যুদ্ধ
    ****************************************************
    যুদ্ধ শুরু হবার আগেই দুর্য্যোধন রক্তাক্ত শরীরে গেলেন ভীষ্মের শিবিরে। বললেন কিছুই বুঝতে পারছি না কী ভাবে পান্ডবদের হারাবো? আমি মকর ব্যুহ ভেদ করেই ভিতরে ঢুকেছিলাম , কিন্তু ভীমসেনের বাণে নিতান্ত কাতর হয়েছি। "ক্রুদ্ধ ভীমসেনকে দেখিয়া আমি ভয়ে মুর্ছিত হইয়াছি"।

    ভীষ্ম দুর্য্যোধনকে কাহিল ও দুঃখিত দেখে প্রচুর উৎসাহ দিলেন। বললেন আমি নিরপেক্ষ হয়েই পান্ডবদের বিরুদ্ধে লড়াই করব। "হে মহানুভব ! আমি তোমার নিমিত্তে যুদ্ধ করিয়া প্রাণ ত্যাগ করিতেও উৎসাহ বোধ করিতেছি"।জানালেন দুর্য্যোধনের জন্য শত্রুপক্ষ তো দুরের কথা দেব বা দানবদেরও উনি ছেড়ে কথা বলবেন না।

    দুর্য্যোধন আশ্বস্ত হয়ে কৌরব সেনাদের যুদ্ধ সজ্জা করবার আদেশ দিলেন। ভীষ্ম দেখলেন দুর্য্যোধন তখনো চিন্তাকুল। তাকে ভীষ্ম আবার আশ্বস্ত করলেন ও দুর্য্যোধনের যুদ্ধক্ষতে বিশল্যকরণী ও অন্যান্য ওষধি নিজহাতে লেপন করে দিলেন।
    ভীষ্ম সাজালেন মন্ডল ব্যুহ। পান্ডবরা সাজালেন বজ্র ব্যুহ। দুই পক্ষই তাদের ব্যুহের ফরমেশন অটুট রেখে বিপক্ষের দিকে অগ্রসর হলেন।

    যুদ্ধের শুরুতেই বিরাট আর তার তৃতীয় ও শেষ জীবিত পুত্র শংখ একইসাথে দ্রোণাচার্য্যকে আক্রমণ করলেন। দ্রোণাচার্য্যের বানে শংখের ঘোড়া ও সারথী নিহত হলে উনি বাবার রথে উঠে বসলেন - বাপ ব্যাটায় একই সংগে লড়াই করবেন। কিন্তু দ্রোণের এক বাণে শংখ প্রাণ হারালে রাজা বিরাট স্রেফ পালিয়ে গেলেন।

    অভিমন্যুর সাথে জোর লড়াই হলো তিন দুর্য্যোধন ভাইএর - চিত্রসেন,বিকর্ণ ও দুর্মর্ষণের। অভিমন্যু ওদেরকে রথহীন করেও প্রানে মারলেন না, কেনো না ভীম যে আগেই এনাদের সকলের জীবনের ইজারা নিয়ে নিয়েছেন। অথচ গত দিনেই দেখা গেছে দুর্য্যোধনের দুই ভাই প্রান হারিয়েছেন দুই দ্রৌপদী তনয়ের হাতে। হিসেব তো মিলছে না ।

    এর মধ্যে শিখন্ডী ভীষ্মের মুখোমুখী হলে ভীষ্ম শিখন্ডীর ধনুক ছিন্ন করে ফেললেন। শিখন্ডীও তখুনি রথ ঘুরিয়ে দে দৌড়। যুধিষ্ঠির দেখতে পেয়ে ছুটে এলেন। বললেন, যুদ্ধের আগেই তুমি কথা দিয়েছিলে যে তুমিই ভীষ্মকে হত্যা করবে, আর এখন "রণে পরাজিত ও ছিন্ন চাপ হইয়া বন্ধুগন ও সোদরদিগকে পরিত্যাগ পুর্ব্বক কাহারো অপেক্ষা না করিয়া কোথায় যাইতেছ?" আরো বললেন, ভয়ে তোমার মুখ শুকিয়ে গেছে। ঐ দেখো ,অর্জুন স্বয়ং চলেছেন ভীষ্মের মোকাবিলায়।

    শিখন্ডী অগত্যা আবার ভীষ্মের দিকে রথ চালালেন। ভীষ্ম তখন অপ্রতিরোধ্য। তার বাণে আকাশ ছেয়ে গেছে। শিখন্ডীকে দেখে ক্রুদ্ধ হয়েই ভীষ্ম অন্যত্র চলে গেলেন।

    ক্রমে সন্ধ্যা হয়ে এলো, সেদিনের মতন যুদ্ধ শেষ। সবাই নিজের নিজের শিবিরে ফিরে গিয়ে ক্ষতের চিলিৎসা ও "বিবিধ জলে" স্নান করে শান্ত হলেন।

    অষ্টম দিনের যুদ্ধ
    *******************************************************

    বছর চল্লিশ আগে বলিউডের হিন্দি ব্লকবাস্টারগুলো খুব লম্বা হত। সাড়ে তিন ঘন্টার কম হলে পাবলিক খুসী হত না। আর সেই সিনেমাগুলো ভালো লাগলে বহু লোকে বার বার দেখতো। পাঁচ ছয়বার তো বটেই কুরি তিরিশ বারও দেখতো। বাজারের টার্ম ছিলো রিপিট দর্শক। এরাই সিনেমাগুলোকে তিন চার মাস ধরে হলে রেখে দিতো।

    তো রিপিট দর্শকদেরা প্রতিবারই তো পুরোটা দেখতে চাইতো না তাই ফার্স্ট হাফে ঘটনা প্রায় কিছুই এগোতো না। সামান্য ভাঁড়ামী, নায়িকার চোখ ছল ছল। ভিলেইন শুধু হম্বি তম্বিই করছে। নায়কের একটা বড় জোর দুটো প্যানপ্যানে গান।
    ইন্টারমিশনের পরই সব জমজমাট।গোটা সাতেক ভাইটাল গান, অন্ততঃ চার পাঁচটা হুল্লাট অ্যাকশন।স্বপ্নে বিদেশ ভ্রমন। পুরো পয়সা উশুল। রিপিট দর্শকেরা তাই সেকেন্ড হাফেই হলে ঢুকতেন।

    মহাভারতেও তাই। প্রথম দশদিন যেনো টেনে টেনে যুদ্ধ চলছে। একই বর্ননা প্রতিদিন। সামান্য দু একটা নতুন ঘটনা। এ ছাড়া কিছু নয়। ভীষ্ম বধের পর অর্থাৎ দশম দিনের পর থেকেই নানান ঘটনা ঘটতে থাকবে। বহু নামজাদা রথী মহারথীর মৃত্যু হবে। যুদ্ধের বিবরণীও অনেক ড্রামাটিক হবে।

    অষ্টম দিনেও একই রকম।
    আজ কৌরব পক্ষে হল সাগর ব্যুহ আর পান্ডব পক্ষে শৃংগাটক ব্যুহ। নাম শুনে আর কিছুটা বিবরণ পড়ে মনে হয় সাগর ব্যুহ ছিলো ছোটো ছোটো ভাগে অনেকগুলি রেজিমেন্ট গড়ে তুলে আক্রমণ করা। সাগরের ঢেউএর মতন। একটাই মুখ্য আক্রমনের মুখ নয়।

    আর পান্ডবদের শৃংগাটক ব্যুহ দুটো শিংএর মতন কিছুটা বড় দুটি উইংস, কিন্তু অর্দ্ধচন্দ্রের মতন বিশাল বাহু নয়। দুই "শিং"এ রইলেন ভীমসেন আর সাত্যকি। মধ্যখানে অর্জুন।
    আজকেও ভীম সাতজন কুরু ভাইএর প্রাণ হরন করবেন।
    সাত কৌরব ভাই ভীষ্মের সাথে একত্র হয়ে ভীমের সাথে যুদ্ধ করতে গেলে ভীম প্রথমেই ভীষ্মের সারথিকে মেরে ফেললেন। সারথিহীন রথ এর ঘোড়ারা উদভ্রান্তের মতন ছুটে চলে গেলে ভীম সহজেই সাত ভাইএর ইহলীলা সাংগ করলেন।

    দুর্য্যোধন গেলেন ক্ষেপে। গতকালই উনি ভীষ্মের কাছে অভিমান করেছিলেন। ভীষ্মও প্রচুর উৎসাহের কথা শুনিয়েছিলেন, নিজের হাতে দুর্য্যোধনের ক্ষতে পট্টি লাগিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্য্যোধনের আর ধৈর্য্য থাকছিলো না।
    দুর্য্যোধন ভীষ্মকে বললেন ,ভীমের হাতে আমার ভাইএরা একের পর এক নিহত হচ্ছে। আর " আপনি সর্বদা যেন মধ্যস্থ হইয়া আমাদিগকে উপেক্ষা করিতেছেন"। আমাদের কপালটাই খারাপ যে এই যুদ্ধ করবার ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

    ভীষ্ম সাশ্রুলোচনে বললেন,` বিদুর, আমি, দ্রোণ, গান্ধারী - আমরা সবাই তো তোমায় মানাই করেছিলাম এই যুদ্ধ শুরু করতে। এখন স্থির বুদ্ধি হয়ে লড়ে যাও। দেবতারাও পান্ডবদের যুদ্ধে হারাবার ক্ষমতা রাখে না`।এইধরনের কথা নিজের সেনাপতির কাছ থেকে শুনলে আর দুর্য্যোধনের মরাল কতোটা থাকে ?

    আজকের যুদ্ধে সেন্টার স্টেজে ছিলো অশ্বারোহী সেনারা। প্রথমে দেখি নকুল সহদেব এক অশ্বারোহী বাহিনীকে আক্রমন করে শত শত ঘোড়াকে নিহত করছেন। এরেপরেও শকুনি, সিন্ধু, আরট্ট, কাম্বোজ, বানায়ু, তিত্তির প্রভৃতি দেশীয় অশ্বারোহীদের নিয়ে রণাংগনে এসেছেন।

    এদের মোকাবেলায় এলেন অর্জুন উলুপী পুত্র ইরাবান। তাঁর সাথেও ছিলো অশ্বারোহী বাহিনী। পরিষ্কার করে লেখা নেই মনে হয় উনিও ঘোড় সওয়ারই ছিলেন। শকুনিরা ছয় ভাই "শীল সম্পন্ন বয়স্থ উত্তম উত্তম"ঘোড়ার পিঠে চড়ে ইরাবানকে আক্রমন করলেন। পুরো মহাভারতেই কিন্তু নায়কেরা কেউ ঘোড়ার পিঠে চড়ে যুদ্ধ করতেন না। একে তো ভালো ঘোড়ার অভাব, তায় সেই সময় রেকাবও ছিলো না। তাই তাদের অস্ত্র ছিলো মুখ্যতঃ লম্বা বর্শা বা প্রাস। ছয় ভাইএর প্রাসের আঘাতে ইরাবান বিক্ষত হচ্ছিলেন। ইরাবান তখন ঢাল তরোয়াল নিয়ে মাটীতে নামলেন। খুব দ্রুত ঘোড়া চালিয়েও শকুনির ছয় ভাই ইরাবানকে কবজা করতে পারছিলেন না।

    ইরাবান দুই হাতেই খড়্গ নিয়ে একে একে শকুনির পাঁচ ভাইকে নিহত করলেন, শুধু একজন, ঋষভ, খুব আহত হয়েও পালিয়ে বাঁচলেন।গান্ধার দেশের মানুষ বলে শকুনি সব সময়েই অশ্বারোহী ও প্রাসধারী সেনা নিয়ে যুদ্ধ করতেন। কুরুক্ষেত্রের অন্তিম দিনেও দেখবো শকুনি নিজেও প্রাস নিয়ে লড়াই করছেন তাঁদের দেশের ঘোড়সওয়ার সেনাদের সংগে নিয়ে।

    ইরাবানকে রুখতে এলেন রাক্ষস অলম্বুষ। এর সাথে যুদ্ধে (অনেক অলৌকিক বর্ননা আছে) খড়গাঘাতে ইরাবান প্রাণ হারালেন। মহাভারতের অন্যান্য যুদ্ধের মধ্যে এই লড়াইএর তফাৎ যে আর কোথাও অশ্বারোহী বাহিনীর সংঘর্ষের বিবরন নেই আর অসি যুদ্ধে আর কোনো নায়কও মারা যান নি।

    আর আজকের আরেকটি বড় খবর বংগাধিপতির যুদ্ধ অভিযান। এনার নাম নেই। কিন্তু যুধিষ্ঠিরের রাজসুয় যজ্ঞে, বংগের রাজা চন্দ্রসেনের নাম কিন্তু খুব উল্লেখযোগ্য ভাবে বলা হয়েছিলো। পুন্ড্রের(উত্তর বংগ) পৌন্ড্র বাসুদেবও বড়ো রাজা ছিলেন। কুরুক্ষেত্রের আগেই তিনি কৃষ্ণের হাতে নিহত হন।

    দশ হাজার হাতী (পড়ুন অনেক হাতী)নিয়ে বংগাধিপতি দুর্য্যোধনের সাথে সাথে চললেন ঘটোৎকচের বিরুদ্ধে লড়াইতে। ঘটোৎকচ এক বিশাল শক্তি দুর্য্যোধনের উপর ক্ষেপন করতে গেলে বংগাধিপতি তার হাতীটিকে নিয়ে দুর্য্যোধনকে আড়াল করে দাঁড়ালেন। সেই শক্তির আঘাতে তাঁর হাতীটি নিহত হলে বংগাধিপতি এক লাফে হাতীর পিঠ থেকে নেমে পড়লেন।

    দিনের শেষে খুবই ভয়ানক হয়ে উঠলেন ঘটোৎকচ। তাকে আর কেউ সামলাতে পারছিলো না। সেই দুর্য্যোধন আবার ভীষ্মের কাছে গিয়ে প্রায় কেঁদে পড়লেন, একটা কিছু করুন।
    ভীষ্ম কোনো কারনে ঘটোৎকচের সাথে লড়াই করতে চাইতেন না। এর আগেও একদিন বলেছিলেন ঐ দুরাত্মার সহিত যুদ্ধে আমার অভিরুচি নাই। আজকেও উনি লড়াইটা ডেলিগেট করে দিলেন প্রাগজ্যোতিষ(আসাম)'র রাজা ভগদত্তকে।

    ভগদত্তের হাতীর নাম সুপ্রতীক। মহাভারতের সব থেকে নামকরা রণহস্তী। সেই অতিকায় হাতীতে চড়ে ভগদত্ত এলেন ঘটোৎকচের মোকাবিলায়। পান্ডবপক্ষে ছিলেন দশার্ণ দেশের (পশ্চিম মধ্যপ্রদেশ আর দক্ষিন পুর্ব রাজস্থানের মধ্যবর্তী মালোয়া অঞ্চল) রাজাও এলেন তার হাতীতে চড়ে। কিন্তু ভগদত্ত সহজেই সেই হাতীটিকে মারাত্মক আহত করে দিলে সেটি নিজের পক্ষের সেনাদের উপর দিয়ে ছুটেই পালিয়ে গেলো।

    ভীম আর ঘটোৎকচ একযোগে ভগদত্তকে আক্রমন করলে ভগদত্ত ভীমের সারথী বিশোককে আহত করলেন। এই বিশোক শেষদিন পর্যন্ত্য ভীমের সারথী হিসেবে থাকবেন।তিনি ই একমাত্র পেশাদার সারথী যাকে সব সময়ই তার নামে পরিচিত করা হত ।যুধিষ্ঠিরের সারথী ছিলেন ইন্দ্রসেন, কিন্তু তাঁর নাম ঐ একবারই উল্লেখ করা হয়েছিলো। দুর্য্যোধনের বাণে গাঢ়বিদ্ধ হয়ে ভীম একবার প্রায় মুর্ছাগত হলেন।রথের ধ্বজা ধরে কোনোরকমে সামলে নিলেন। এরপরেই ভীম আর ঘটোৎকচ, দুজনেই ভয়ংকর হয়ে উঠলেন।ভীমের হাতে আজকে নিহত হবে দুর্য্যোধনের আরো সাত ভাই।

    ক্রমে "যোধগন শ্রান্ত, ভগ্ন ও মর্দিত হইলে রাত্রি উপস্থিত হইল; রণ ব্যাপারে আর কিছুই দৃষ্টিগম্য রহিল না। মহাভয় জনক সুদারুন ঘোর নিশামুখে কুরু ও পান্ডব উভয় পক্ষই সৈন্যদিগের অবহার করিলেন"। অষ্টম দিনের যুদ্ধও শেষ হল।
    লড়াই শেষ হল কিন্তু খবর শেষ হল না।

    দুর্য্যোধন, হতাশ ও ক্ষুব্দ, মন্ত্রনার জন্য ডাকলেন তার অতি বিশ্বস্ত কর্ণ আর শকুনি। বললেন ,ভীষ্ম তো বটেই, কৃপ,দ্রোণ,শল্য ও ভুরিশ্রবা " ইঁহারা পান্ডবদিগকে যে কি কারনে নিবারণ করেন না তাহা বুঝিতে পারিতেছি না"। আমার সৈন্য ও অস্ত্র সম্ভার ,দুটোতেই টান পড়ছে।

    কর্ণ বললেন , বটেই তো। ভীষ্ম তো "রণ করিতে ভালোবাসেন"। ঝট করে যুদ্ধ থেমে গেলে তার আর ভালো লাগবে কেনো? তাই তিনি সময় নষ্ট করছেন। এই ভীষ্মকে বলুন অস্ত্র ত্যাগ করতে। আর আমিও তখন ফীল্ডে নামি আর একাই পান্ডবদের সবাই খতম করে দেবো। আপনি এখনই ভীষ্মের শিবিরে যান।

    দুর্য্যোধন ম্যান ম্যানেজমেন্ট খুব বুঝতেন। কখনো বাষ্পাকুল চোখের ভক্তি গদগদ হয়ে পিতামহকে কাতর অনুরোধ করছেন, কখনো চুটিয়ে গালি দিছেন। আর আজ তিনি যাবেন মহারাজা হিসেবে। একাকী নয়। সাড়ম্বরে।

    তিনি "অংগদ,মুকুট ও হস্তাভরণে ভুষিত হইয়া" ঘোড়ার পিঠে উঠলেন।। সাথে চললো অস্ত্রধারী সেনা,রথী,গজেরা। তাঁর সব কটি ভাই। আরো সব অনুগতেরা। "সুগন্ধী তৈল সিঞ্চিত কাঞ্চন প্রদীপে" জ্বালিয়ে তার চারদিকে রইলো ভৃত্যের দল। রাজপুরুষেরা হাতে বেত ও ঝর্ঝর (করতাল গোছের) নিয়ে চললেন সামনে সামনে।

    তবে দুর্য্যোধন কিন্তু ভীষ্মের কাছে এসেও খুবই বিনয়ী ছিলেন। শিবিরে ঢুকে যথোচিত অভিবাদন করে ছলছল চোখেই বললেন হে পিতামহ। সেনাপতির পদে আরোহন করে আপনি অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ,কিন্তু হয় পান্ডবদের প্রতি আপনি দয়াশীল বা আমার কপালের দোষে আমার প্রতি আপনি দ্বেষযুক্ত। এখন দয়া করে অনুমতি দিন, কর্ণ এসে অস্ত্র ধারন করুক। উনি একাই পান্ডবদের নিধনে সক্ষম হবেন"।

    ভীষ্মের উচিৎ ছিলো পদত্যাগ করার। কেনো না এটি তো অনুরোধ নয়, এটি স্পষ্টতঃই আদেশ। কিন্তু উনি এই নির্দেশ শুনেও "অনুমাত্র অপ্রিয় বাক্য" বললেন না।দীর্ঘ ভাষণ দিলেন। বোঝালেন যে পান্ডবেরা তো আগেই কৌরবদের হারিয়েছে (বনপর্বে গন্ধর্বদের সাথে যুদ্ধে, আর বিরাট রাজার দেশে ক্যাটেল রেইডের সময়)। তখন যে অর্জুন সমুলে কর্ণকে যুদ্ধে হারিয়েছিলেন সেটার পর আর কোন প্রমান চাই?কর্ণ তো তখন অপরাজেয় কিছু ছিলেন না। ক্রুদ্ধ সর্পের মতন দীর্ঘশ্বাস ফেলে আরো বললেন তখন তো কর্ণ আর তোমার ভাইএরা পালিয়ে বেঁচেছিলো। যা হোক, আমি আবার বলছি আমি সকল পাঞ্চাল ও সোমকদের নিধন করবো। শুধু শিখন্ডী বাদে। তুমি এখন নিজের শিবিরেই ফিরে যাও।

    দুর্য্যোধন আর কথা বাড়ালেন না। ভীষ্মকে অভিবাদন করে নিজের শিবিরে ফিরে আসলেন।

    নবম দিনের যুদ্ধ
    *******************************************************
    যুদ্ধের শুরুতেই দুর্য্যোধন সব ট্যাকটিকাল স্টেপ গুলো ঠিক করে নিলেন। বললেন এই ভীষ্মই আমাদের ভরসা। সুতরাং সব রথীরা এবং যে "দ্বাবিংশতি শ্রেণীভুক্ত" সেনা আছে, সবাই ভীষ্মকে রক্ষা করুন। দুঃশাসনকে নির্দেশ দিলেন যে অর্জুন নিশ্চয়ই শিখন্ডীকে সামনে রেখে যুদ্ধ করবেন, সংগে রাখবেন পাঞ্চাল দেশীয় বীর যুধামন্যু আর উত্তমৌজা। সেটা যেনো না হয়।

    সেইমতন কৌরবপক্ষী ভীষ্ম সাজালেন সর্বতোভদ্র ব্যুহ। আটটা কনসেন্ট্রিক বৃত্ত অথবা চতুর্ভুজ ভাবে সেনারা থাকবে। প্রতিটি স্তরেই একটি করে ব্যুহ মুখ রইবে। ভীষ্ম থাকবেন সবার সামনে। তাকে ঘিড়ে থাকবেন অন্যান্য রথীরা।

    জন কীগান তার The history of warfare’'এ লিখেছিলেন, যুদ্ধরথের প্রথম যুগে এক একজন তীরন্দাজ রথী মিনিটে পাঁচ কি ছয়বার তীর নিক্ষেপ করতে পারতেন। সেই মতন দশজন রথী আধঘন্টার মধ্যেই অন্ততঃ শ পাঁচেক পদাতিক সেনাকে ঘায়েল করতে পারতো দুশো গজ দুরত্ব থেকেই। সাধারন সেনানীদের কাছে ক্ষেপনীয় অস্ত্র বিশেষ থাকতো না।তাই তারা রথীদের পাল্টা আঘাত করতেও খুব সক্ষম হতেন না। একেবারে প্রায় একতরফা কিলিং মেশিন ছিলো এই রথীরা।

    পান্ডবপক্ষের কোন ব্যুহ রচনা হল সেটির উল্লেখ নেই। কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় তাঁদের ব্যুহের ভ্যানগার্ড রইলেন ,অবশ্যই ভীম এবং নকুল ও সহদেব। এমন কি রইলেন যুধিষ্ঠিরও। যিনি সচরাচর পিছন দিকেই থাকেন। তাঁদের পরে রইলেন ধৃতরাষ্ট্র,সাত্যকি ও বিরাট। তারও পরে অর্জুন ও শিখন্ডী। বোধ হয় প্ল্যান ছিলো ভীষ্মকে ক্লান্ত করে দিয়ে তারপর অর্জুন আর শিখন্ডী তার মুখোমুখী হবেন।

    যেমন হয় প্রতিদিনই। মহারথীরা পরষ্পরকে ব্যাস্ত রাখলেন। ভীমকে রুখতে এলো অসমের ভগদত্ত ও কলিংগের শ্রুতায়ু, দুজনেই হাতীর পিঠে,সংগে আরো গজসেনা। হাতী দেখলে ভীমের আর ধৈর্য্য থাকেনা। উনি তখনই তীর ধনুক ছেড়ে বিশাল গদা হাতে রথ থেকে লাফিয়ে নামলেন।

    আর অন্যত্র ভীষ্ম আজ ভয়ংকর। কৃষ্ণ তাড়না করলেন অর্জুনকে। এই তো সময়। এখনই চলো ভীষ্মকে সংহার কর। অর্জুন অনিচ্ছুক ভাবে কৃষ্ণের দিকে তির্য্যক ভাবে তাকিয়ে বললেন যারা আমার অবধ্য তাদের নিধন করে রাজ্য লাভ তো নরকবাসের সমতুল্য। বনবাসও তার থেকে বেশী অপ্রিয় নয়। সে যাগ্গে, তুমি যেরকম বলছ, সেরকমই হোক। তুমি আমাকে ভীষ্মের কাছে নিয়ে চল।

    দ্বৈরথ শুরু হলে অর্জুন ভীষ্মের ধনুক দুইবার ছিন্ন করলেন। ভীষ্ম মহাখুসী। চেঁচিয়ে বললেন "সাধু, সাধু"। সবটাই যেন খেলা খেলা। কৃষ্ণ দারুন রথ চালিয়ে ভীষ্মের শরক্ষেপন ব্যার্থ করছিলেন কিনু ক্রমশঃই অর্জুনের সাথে দুজনেই ভীষ্মের বাণের আঘাতে ক্রমাগত বিক্ষত হচ্ছিলেন।

    অর্জুন "মৃদু" যুদ্ধ করে চলেছেন কিন্তু ভীষ্ম কিন্তু সিরিয়াস। কৃষ্ণ দেখলেন সকলেই শত্রু বিজয়ে একনিষ্ঠ, "এমন কি, যুধিষ্ঠির (শত্রু) সৈন্যদিগের প্রতি যুগ প্রলয় করিতেছেন" । কৃষ্ণের আবার ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙলো। তৃতীয় দিনের মতন আবার উনি রথ থেকে নেমে ভীষ্মের দিকে তেড়ে গেলেন। সেই একই ঘটনা। ভীষ্ম স্তব করতে লাগলেন আর অর্জুন এসে আবার হাতে পয়ে ধরে কৃষ্ণকে রথে তুললেন। কিন্তু দ্বৈরথ বোধহয় আর হল না।

    ভীষ্ম নাগাড়ে পান্ডব সেনাদের পিঁপড়ের মতন বধ করতে লাগলেন। অবশেষে সন্ধ্যা হলে পান্ডব সেনারা নিষ্কৃতি পেলেন।

    তাহলে, সারাদিনে শিখন্ডীকে নিয়ে অর্জুন কোথায় রইলেন? একটি পাসিং রেফারেন্স রয়েছে।আজকের দিনের যুদ্ধের প্রথম দিকে শিখন্ডীকে নিয়ে ধৃষ্টদ্যুম্ন, বিরাট, দ্রুপদ - এই পান্ডব রথীরা ভীষ্মকে ঘিড়ে ধরলে তিনি শিখন্ডী ব্যতীত সকলকে অক্লেশে বাণবিদ্ধ করলেন। এর পরেই দুই পক্ষের সকল বীরেরাই একসাথে জড়ো হয়ে পুরোটাই ঘেঁটে গেলো। আর ভীষ্মের উপর আর ফোকাস থাকলো না।
    প্রচুর পান্ডব সেনাক্ষয়ের মধ্যে নবম দিনের যুদ্ধ সমাপ্ত হল ।

    দশম দিন ও ভীষ্ম বধ
    *******************************************************
    আর আজকের যুদ্ধটা বা বলা উচিৎ সেই যুদ্ধের বিবরণী খুবই খাপছাড়া গোছেরই হল। আসলে ভীষ্মের পতন/মৃত্যু ছাড়া আর কোনো এজেন্ডাতো নেই।

    শিখন্ডীকে অগ্রগামী রেখে পান্ডব ব্যুহ সজ্জিত হল। শিখন্ডীর চক্ররক্ষক ভীম আর অর্জুন। ট্যাকটিক্স নিয়ে কোনো সন্দেহই নেই। ভীম আর অর্জুনের পিছনেই রইলেন পরবর্তী পান্ডব প্রজন্ম, দ্রৌপদীর পাঁচ ছেলে ও অভিমন্যু। তাদের পিছনে ধৃষ্টদ্যুম্ন ও অন্যান্য পাঞ্চালেরা। সবার পিছনে রইলেন যুধিষ্ঠির, নকুল সহদেবের সংগে।

    কৌরব পক্ষের ব্যুহের নামও নেই। তবে ভ্যানগার্ড সেই ভীষ্মই। তাকে ঘিড়ে দুর্য্যোধনের ভাইএরা। পৃষ্ঠরক্ষক হলেন দ্রোণ ও অশ্বত্থামা এবং গজসৈন্য নিয়ে ভগদত্ত।কৃপাচার্য্য,কৃতবর্ম্মা ও অন্যান্য রথীরা এঁদের পিছনেই। সবার নাম সব দিনেই উল্লেখিত হত না। হয়তো কেউ কেউ থাকতেন রিসার্ভে। সারাদিন তো আর যুদ্ধ করা যায় না।জয়দ্রথ বধের দিনেও, যখন সময় বড়ই মুল্যবান, তখনো দেখি কৃষ্ণ রথ থামিয়ে ঘোড়াদের বিশ্রাম দিচ্ছেন। গায়ের থেকে শলাকা বার করছেন। ওষধি দিছেন। জল খাওয়াচ্ছেন। মালিশও করে দিচ্ছেন। সাত্যকিও রথ থামিয়ে কিরাত দেশীয় মদ্যপান করে ও ঘোড়াদেরো খাইয়ে নতুন উদ্যমে লড়াই শুরু করছেন। যুদ্ধের মাঝেই একটু রেস্ট নেওয়া বা রিসার্ভ ফোর্সকে ডাকা কোনো নতুন ঘটনা নয়।

    বিবরণী সেই এক লম্বা লিস্ট। কার সাথে কার দ্বৈরথ চলছে। যেমন রোজই হয়, শল্য ও যুধিষ্ঠির,দ্রোণ ও ধৃষ্টদ্যুম্ন এবং ভীম ও গজসৈন্য ইত্যাদি। হাতী দেখলেই বোধহয় ভীমসেন অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে পড়তেন।

    শিখন্ডীকে নিয়ে অর্জুন চেষ্টা করে যাচ্ছেন ভীষ্মের কাছে পৌঁছাতে। তাকে আটকাচ্ছেন কুরু ভাইএরা। ভীষ্মের শেষ যুদ্ধ। উনি নাগাড়ে পান্ডব সেনাদের ঘায়েল করে চলেছেন।
    ধৃষ্টদ্যুম্নের নির্দেশে মরনপন করে পান্ডব সেনারা ভীষ্মকে আক্রমন করলেন। ভীষ্ম সকল ক্ষত্রিয়কেই নিহত করলেন। তার হাতে মৃত্যু হল বিরাটের ভাই শতানীকেরও। এর আগে বিরাটের তিন ছেলেও মারা গেছে প্রথম দশ দিনে। পরিবার হিসেবে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্থ তিনিই। সুর্য্য যখন ঠিক মধ্যগগনে তখন ভীষ্ম দুই পক্ষের সেনা দলের মধ্যস্থানে এসে পৌঁছালেন। মনে হয় এর অর্থ তিনি কিছুটা অরক্ষিত হয়ে পড়েছেন। তাঁর প্রহরী রথীরা কিছুটা বেসামাল।

    কৃষ্ণ অর্জুনকে বললেন। ঐ দেখো,"ঐ ভীষ্ম উভয় সেনার অভ্যন্তরে অবস্থিতি করিতেছেন"।এখনই বলপুর্বক ওনার প্রাণ হরন কর। অর্জুন শিখন্ডীকে নিয়ে ছুটলেন ভীষ্মের অভিমুখে। ভীষ্মের অনুগামীরা সদলে অর্জুনের হাতে নিহত হলেন।
    যদি বলেন নিউমেরিকেল সুপিরিওরিটি তো সেই সময় ভীষ্মের চতুর্দিকে শুধুই পান্ডব রথীরা। প্রায় সকলেই। ভীষ্ম কিন্তু অবহেলে "দ্রুপদ ও ধৃষ্টদ্যুম্নরে গননা না করিয়া" পান্ডব সেনাদের আরো গভীরে প্রবেশ করলেন। মনে হয় তাঁর আর রক্ষণাত্মক যুদ্ধে কোনোই উৎসাহ নেই। শিখন্ডীর নিক্ষিপ্ত বাণে ক্রমাগতঃ বিদ্ধ হচ্ছেন ভীষ্ম কিন্তু পাল্টা মার দিতে পারছেন না। শিখন্ডীকে ঢালের মতন সামনে রেখে অর্জুন ভীষ্মের শরাসন ছিন্ন করলেন।

    দ্রোণ প্রভৃতি কুরু রথীরা ততক্ষনে টের পেয়েছেন ভীষ্মের ঘেড়াও। তারা রথ চালিয়ে ছুটে এলেন ভীষ্মকে রক্ষা করতে আর ভীম, অভিমন্যু, বিরাট, দ্রুপদ ও অন্যান্য পান্ডবেরা "দ্রোণ প্রভৃতির দ্রুত গমন জনিত তুমুল শব্দ শ্রবণ করিয়া" এসে গেলেন তাদের রুখতে।

    শিখন্ডীর বাণে তখন বার বার বিদ্ধ হচ্ছে ভীষ্ম। অন্য ধনুক হাতে নিতেই অর্জুন বার বার সেগুলিকেও ছিন্ন করে দিলেন। অর্জুনের বাণ শুধু ভীষ্মকে শস্ত্রহীন করছিলো, শিখন্ডীর উপর দায় ভীষ্মকে আঘাত করার।

    অসহায় ভীষ্ম তখন এক শক্তি নিক্ষেপ করলে অর্জুনের ভল্লে সেটি খন্ডিত হয়ে গেলো। ভীষ্ম তখন বুঝলেন পরাজয় ও মৃত্যু এখন অবধারিত।

    এই সময়ের বর্ণনা খুবই মর্মস্পর্শী। ভীষ্ম তার আঘাত দেখিয়ে বলছেন , এই যে বাণ সকল আমার বর্ম ভেদ করে আমায় গাঢ় বিদ্ধ করছে, এগুলি শিখন্ডীর নয়। এই যে বাণ সকল যমদুতের মতন আমার প্রাণ বিনাশ করছে এগুলি শিখন্ডীর বাণ নয়।এই যে বাণ সকল আমার মর্মভেদ করছে এগুলি শিখন্ডীর বাণ নয়। এগুলি অর্জুনেরই বাণ তাহাতে সন্দেহ নাই। যেনো শেষ মুহুর্ত্তেও কোনো ক্ষোভ নেই বরং তারিফ আছে।

    ছিন্ন ধনুক ভীষ্ম তখন তাঁর শেষ অস্ত্র, ঢাল তরোয়াল গ্রহন করলেন। কিন্তু তিনি রথ থেকে নামবার আগেই অর্জুন তাঁর ঢাল আর তরোয়াল ছিন্ন করলেন। ভীষ্ম তখন কুরুপক্ষের রথীদের থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। শিখন্ডীকে সামনে রেখে অর্জুনের সাথে লড়াই করা অসম্ভব। কৌরবেরা, দ্রোণ, কৃপ, ভগদত্ত ইত্যাদি সাতজন রথী আপ্রাণ চেষ্টা করছেন ভীষ্মের কাছে পৌঁছাতে আর সেরকমই ভাবে পান্ডব পক্ষে ভীম, অভিমন্যু, সাত্যকি প্রমুখ সাত জন মহারথী তাদেরকে রুখে দিচ্ছেন। প্রতিটি মুহুর্ত্তই ভীষ্মকে তার অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিছে সে সময়ে।

    অর্জুনের একটানা বাণে ভীষ্মের শরীরে আর দুই আঙুল স্থানও অক্ষত রইলো না। তিনি অবশেষে তাঁর রথ থেকে মাটীতে লুটিয়ে পড়লেন। স্বর্গ থেকে দেবতারাও হায় হায় করে উঠলেন।"ভীষ্ম নিপাতিত হইতেছেন দেখিয়া আমাদের হৃদয়ও তাঁহার সহিত নিপাতিত হইল।"

    ভীমসেন বগল বাজিয়ে উল্লাসে চিৎকার করে উঠলেন। আরো কেউ কেউ হর্ষিত হল। কেই বিষাদগ্রস্থ। ভীষ্মের মৃত্যু সংবাদ শুনে দ্রোণ মুর্ছিত হয়ে পড়লেন। মুহুর্ত্তের মধ্যেই সংজ্ঞা ফিরে পেয়ে তিনি কৌরবদের আজকের মতন যুদ্ধ অবসানের নির্দেশ দিলেন। পান্ডবদের দুতেরা দ্রুতগামী ঘোড়ায় চেপে সারা রণাংগনে বার্ত্তা পাঠালেন যুদ্ধ শেষের।

    তখন সুর্য্যাস্ত প্রায় হতে চলেছে। দিন ও শেষ।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৫ জুন ২০১৬ | ১৩৯২ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    চম - dd
    আরও পড়ুন
    ও শানওয়ালা - dd
    আরও পড়ুন
    দ্রোণ পর্ব - dd
    আরও পড়ুন
    কর্ণসংহার - dd
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ***:*** | ১৬ জুন ২০১৬ ০১:৫৩55117
  • দীপ্তেন দা, খুব ভালো লাগলো।

    আমি আপনার মতো এত গুলো ভার্সান পড়িনি। মূলতঃ রাজশেখর বসু র অনুবাদ ই পড়েছি। তার সাথে অনেক মিল পাচ্ছি।

    আপনার লেখায় মনের কোনে উঠা কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর পেলাম। "আরো কিছু বাকি রয়ে গেল"। সেগুলো মনে করার জন্যেই আবার পড়তে হবে।

    যেমন ইরবান নানারকম জাদু জানতো। অম্বুলুষের সাথে তার শেষের দিক টায় মায়া যুদ্ধ ই হয়। কিন্তু ইরবান পেরে উঠেন না।

    খড়্গ দিয়ে আরেক জনের মাথা কাটা হয় । তিনি ভুরিঃশ্রবা। সত্যকি র সাথে তার যুদ্ধে সাত্যকি পরাজিত হয়ে মোটামুটি প্রাণের মায়া ত্যাগ করে দিয়েছেন। চুলের মুঠি ধরে ভুরিঃশ্রবা সাত্যকি র মুন্ডু কাটবো কাটবো করছেন। এইসময় সাত্যকি বাঁচাতে অর্জুন দুর থেকে বাণ ছুড়ে ভুরিঃশ্রবার দুটি হাত ও কেটে ফেলেন। সেই সময় অর্জুন কে গালাগালি দিতে দিতে ভুরিঃশ্রবা ওপারে যাবার আগে হালকা যোগা করছিলেন সেই সময় বারন করা সত্ত্বেও সাত্যকি গিয়ে তার মাথা কেটে ফেলেন।

    ধৃষ্টদুম্ন্য ও কিন্তু অসি বা খড়্গাঘাতে দ্রোণের মুন্ড ধড় সে অলগ করে দেন। যদি পান্ডব দের সবাই বারণ করেছিল না মেরে দ্রোণ কে বন্দী বানাতে বলছিল।

    /ঘিড়ে নয় ঘিরে। ছোট্ট ভুল কিন্তু চোখে লাগছে।
  • dd | ***:*** | ১৬ জুন ২০১৬ ০৩:৪১55118
  • @ব।

    ইরাবান ঘটোৎকচ নানান মায়া যুদ্ধ করতো। আমি সব কটা অসম্ভব বা অলৌকিক জিনিস কাচিয়ে বাদ দিয়েছি। আর সংখ্যা তে যে অবাস্তব (দশ হাজার হাতী বা ষাঠ হাজার ক্ষত্রিয়) সংখ্যা - সেগুলোও। যেখানেই অবিশ্বাস্য বর্ননা পেয়েছি বাদ দিয়েছি।

    ধরে নিচ্ছি, সত্যি একটা বড় যুদ্ধ হয়েছিলো - সময়কাল ৮০০ বি সি (+/-) দুশো বছর। সেই সময়ের যুদ্ধ কেমন হতো বা হতে পারতো, সেটাই ভেবে লিখেছি।

    আর কুরুক্ষেত্রে অসিযুদ্ধে একমাত্র নায়ক যিনি মারা গেছেন তিনি ইরাবান। ভুরিশ্রবা ছিন্ন বাহু হয়ে মুর্ছাগত ছিলেন, দ্রোণও তাই (মুর্ছা না বলে যোগনিদ্রা এইসব ও বলা যায়)। নিরস্ত্র ও সংজ্ঞাহীন শত্রুকে সাত্যকি বা ধৃষ্টদ্যুম্ন গলা কেটে নেন। সেটা তো অসি যুদ্ধ নয়।

    ইরাবান আর অলম্বুষের সোর্ড ফাইট হয়। তাতেই ইরাবান প্রাণ হারান।
  • Bratin | ***:*** | ১৬ জুন ২০১৬ ০৫:৩৮55119
  • বুঝেছি ডিডি ।
    ধন্যযোগ।
  • avi | ***:*** | ১৬ জুন ২০১৬ ০৫:৪৮55120
  • পড়ে ফেললাম। দিব্যি। এই মহাভারত যুদ্ধগুলো কি শেষ হয়ে গেল নাকি?
  • d | ***:*** | ১৬ জুন ২০১৬ ১২:২৪55116
  • এই ঘটোৎকচের জন্য আমার ভারী কষ্ট হয়। ট্রাইব বলে সমস্ত আত্মীয়স্বজন কেমন হেলাফেলা করে গেল বেচারীর সাথে সারাজীবন। অথচ ওই ছিল ভীমের যোগ্য পুত্র, সুযোগ্য উত্তরাধিকারী হতে পারত পান্ডবদের।
  • দীপু | ***:*** | ১২ অক্টোবর ২০১৯ ১২:০৯55121
  • ভালো লাগলো
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে প্রতিক্রিয়া দিন