এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ভীষ্ম পর্ব (প্রথম পাঁচ দিন)

    dd লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৫ জুন ২০১৬ | ২৩৩৪ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ভীষ্ম পর্ব

    প্রাককথন
    ********************

    ভীষ্মকে সেনাপতি করেই তো কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শুরু। তবে শুরুর আগেও কিছু শুরু থাকে। যেমন ভীষ্ম পর্বের আগে উদ্যোগ পর্ব।

    রাজনৈতিক অবস্থান কেমন ছিলো দুই যুযুধান শিবিরে সে নিয়ে আর বিশদে লিখছি না। তবে খুব গোদা ভাবে লিখতে গেলে সমস্ত পুর্ব, উত্তর,আর উত্তর পশ্চিম ভারত ছিলো কৌরব পক্ষে। আর মোটামুটি ভাবে মধ্য আর পশ্চিম ভারত ছিলো পান্ডব পক্ষে। মহাভারতের যুদ্ধে দক্ষিন ভারতের ভূমিকা খুব গুরুত্বপুর্ণ ছিলো না। এক পান্ড্য রাজ(বর্তমানের মাদুরাই) প্রবীর ছিলো পান্ডব পক্ষে এবং তাও কয়েকবার তার নাম দেখা গেছে মহাভারতের পাতায় এ ছাড়া দক্ষিণাপথ,অন্ধ্র, কেরল,চোল এইসব দেশের সেনাদের মাত্র দু একবারই অন্যান্য দেশের সাথে শুধুমাত্র নাম উচ্চারিত হয়েছে। এর ফলে কয়েকটি যুদ্ধোপ্রকরণ বিষয়ে নিশ্চয়ই কম বেশী ছিলো। এক তো হাতী। পুর্ব ও উত্তর পুর্ব ভারত সংগে থাকায় হাতীর রমরমা ছিলো কৌরব পক্ষে। অংগ, বংগ, কলিংগ ও প্রাগজ্যোতিষপুরের সেনারা যখনই পান্ডবের মুখোমুখী তখনই তাদের সাথে ছিলো গজারোহী সেনা। বিশেষতঃ প্রাগজ্যোতিষপুরের রাজা ভগদত্তের ছিলো সুবিখ্যাত রণহস্তী। পান্ড্যদেশের রাজা প্রবীর অবশ্য পান্ডবপক্ষে হাতীর পিঠে চড়েই যুদ্ধ করেছিলেন।

    মহাভারতের দুই পক্ষের নায়কদের মধ্যে দুর্যোধনই হাতীর পিঠে চড়তেন। প্রথম দিনের যুদ্ধের শুরুতেও তিনি গজারোহী ছিলেন। আবার একেবারে শেষদিনের অন্তিমক্ষনেও রণাংগনে তিনি ছিলেন হাতীর পিঠে।

    দুই, পার্বত্য ও বনবাসী উপজাতি বেশীর ভাগই ছিলো কৌরব পক্ষে। কিরাত,খর্বট,খশ,পুলিন্দ। এদের অস্ত্র শস্ত্র বোধয় বেশী ছিলো না। কেন না এক দল পাহাড়ীয়া সেনা শুধু পাথর ছুঁড়েই যুদ্ধ করত। উপজাতি ছাড়াও কৌরব পক্ষে ছিলো শক,হুন,চীন, ম্লেচ্ছ, যবন, এদের অনেকেই ছিলো ভালো ধনুর্ধর।

    আর্য্যাবর্ত্তে চিরকালই ভালো ঘোড়ার অভাব। ভালো ঘোড়া সেই সময়ে আসতো কাম্বোজ,গান্ধার,আজান থেকে অর্থাৎ এখনকার আফঘানিস্তান আর উত্তর পশ্চিম পাকিস্তান অঞ্চল থেকে। তাই শকুনির সাথে সব সময়েই প্রাসধারী অশ্বারোহী সেনা থাকতো যেমন থাকতো জয়দ্রথের সংগেও রইতো সিন্ধু দেশীয় অশ্বারোহী সেনা । অন্য মহারথীরা কিন্তু এতো অশ্বারোহীর সাহায্য পান নি।

    আর তৃতীয় পয়েন্ট হছে সেনাপতি নির্বাচন। পান্ডব পক্ষে কোনো ঝামেলাই নেই। সর্ব সম্মতিক্রমে ধৃষ্টদ্যুম্ন সেনাপতি হলেন যদিও অর্জুন আর যুধিষ্ঠিরের প্রাধান্য নিয়ে কোনো দ্বিধাই ছিলো না। ব্যুহ রচনাতেও ধৃষ্টদ্যুম্ন ছাড়াও এই দুই জন পান্ডব সক্রিয় ভূমিকা নিতেন।

    কুরুপক্ষে কিন্তু এটা নৈব নৈব চ। এর পরেও দেখবো সেনাপতি নির্বাচনে দুর্য্যোধনকে কতদিক সামলে সুমলে চলতে হয়েছিলো। পান্ডবপক্ষে এই সমস্যাটি ছিলো না।

    দুটি ট্রিভিয়া দেই। এক তো কেকয় দেশ (বর্তমানের পাকিস্তানের পাঞ্জাব)। এদের রাজা বৃহৎক্ষত্র আর তার চার ভাই ছিলেন পান্ডব পক্ষে কিন্তু আরো পাঁচ ভাই ছিলেন কৌরবপক্ষে। দুই দল ভাইএর মধ্যে সংঘাত হবে যেরকম হয়েছিলো কুরু পান্ডবের মধ্যে।

    আর আর একটি হচ্ছে বিদর্ভের রাজা রুক্মি। ইনি ছেলেন কৃষ্ণের স্ত্রী রুক্মিনির ভাই। অত্যন্ত দর্পী এই রাজা প্রচুর সেনানী নিয়ে পান্ডবপক্ষে যোগ দিতে আসেন অযাচিত ভাবে এবং অর্জুনকে বলেন "কেনো ভীত হইয়াছো?'' বললেন, আমি একাই সবাইকে হারিয়ে দেবো আর কারুর দরকার নেই। অর্জুন তো চটেই কাঁই। বললেন , কে বলেছে আমি ভয় পেয়েছি। তার পর এর আগের তার নানান বীরত্বের কথা শুনিয়ে বলে যে আমার কারুকেই দরকার নেই।"আপনার ইচ্ছা ও সুযোগ অনুসারে হয় অন্যত্র গমন করুন বা এইখানে অবস্থিত হউন"। অপমানিত রুক্মি দলবল নিয়ে সটান কৌরব শিবিরে গেলেন এবং সেখানেও অতি দর্পী কথাবার্ত্তার জন্য বিতাড়িত হলেন। ফলতঃ রুক্মি নিরপেক্ষই থেকে যাবেন এই ভারতযুদ্ধে।
    যুদ্ধ প্রস্তুতি

    এই হচ্ছে দুই দলের প্রধান অনুগামীরা।

    কৌরব পক্ষে ঃ প্রাগজ্যোতিষপুরের ভগদত্ত (চীন ও কিরাত দেশীয় সেনা সহ), বাহ্লিক (পুর্ব পাকিস্তান)দেশের রাজা ভুরিশ্রবা,মদ্রদেশের (পাকিস্তানের শিয়ালকোট অঞ্চল)শল্যরাজ, সৌবীরের ও সিন্ধুদেশের জয়দ্রথ, কাম্বোজের (বাহ্লিক দেশের প্রতিবেশী) শক ও যবন সেনাদের নিয়ে সুদক্ষিণ, মাহিষ্মতীবাসী মহীপাল, অবন্তীর(মধ্যপ্রদেশের মালোয়া অঞ্চল) বিন্দ ও অনুবিন্দ, কেকয় রাজ্যের পাঁচ ভাই, অংগ,বংগ,পুন্ড্র,তাম্রলিপ্ত ও কলিংগের সেনানীরা, যাদবরাজ কৃতবর্মা, ত্রিগর্ত্ত রাজ (বর্ত্তমান জলন্ধরের কাছাকাছি যায়গা,এর সেনানীরাই ছিলো সংশপ্তক বাহিনী। কখনো পালাতো না। আমৃত্যু লড়াই করতো।),(বর্তমান জগ্গল গোত্রের জাঠ গোষ্ঠী)জলসন্ধ। পাহাড়িয়া সেনাদের রাজা পৌরব। কৌরব পক্ষে আরো ছিলো অম্বষ্ঠ, প্রতীচ্য, উদীচ্য,মালব,শিবি, শুরসেন(মথুরা), শুদ্র, মলদ, কিতব,প্রাচ্য ও দাক্ষিনাত্যগন (অন্ধ্র,কাঞ্চি)।বিন্ধ্য অঞ্চলের উপজাতিরা ,খস,পুলিন্দ, সংস্থান, শিবি, রে্চক, কুক্কুর, বেণিক, বসাতি, কুন্তল, মেলক,দশার্ণ।কারীষ,মুন্ড, বিকুঞ্জ,কৌন্তিবৃষ,বামনকোশল।

    পান্ডব পক্ষে
    যদুবংশীয় যুযুধান (ওরেফে সাত্যকি), ,চেদি দেশের (বুন্দেলখন্ড)শিশুপাল পুত্র ধৃষ্টকেতু, বৃষ্ণি রাজ চেকিতান, দুই জরাসন্ধপুত্র মগধরাজ সহদেব এবং জয়ৎসেন, মৎস্যদেশের (জয়পুর সংলগ্ন অঞ্চল) রাজা বিরাট, পান্ড্যরাজ (মাদুরাই) প্রবীর, ভীষ্মের চিরশত্রু কাশীরাজ, কেকয় দেশের বৃহৎক্ষত্র ও তার চার ভাই।দক্ষিন দেশের আরো রাজ্য যেরকম তালবন (টুলু ?) চোলা ও কেরল।
    দেশ ও জনগোষ্ঠীর, যাদের কিছুটা পরিচয় এখনো পাওয়া যায় ঃ
    কুন্তল নামে দুটি অঞ্চল আছে। দক্ষিনভারতেরটি মহাভারতে অনূক্ত। উত্তর ভারতে এখনো কুন্তল নামে জাঠেদের গোষ্ঠী রয়েছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে।
    বসাতী - অধুনা হরিয়ানা,
    খস - ওরিজিনালি কাশ্মীরের পাহাড়িয়া উপজাতি
    কারুষ ও মলদ - সরযু ও গংগার সংগমস্থলে অংগদেশের (ভাগলপুর) কাছের দুটি রাজ্য। সত্যি বলছি, মিথকথা যে ইন্দ্র এস্থানে মলত্যাগ করেন ,সেই থেকে এর নাম মলদ।

    অম্বষ্ঠ একটি সাব কাস্টের নাম। ব্রাহ্মণ পিতা বা বৈশ্য মায়ের সন্তান যাদের বাংলার বৈদ্যদের সাথে তুলনা করা হয়েছে। তবে এই অম্বষ্ঠরা বোধহয় লাহোরের কাছের বাসিন্দা।
    আলেকজান্ডারে সাথে যুদ্ধ করতেও অনেক অম্বষ্ঠ সেনা হাজির ছিলেন আর রাজসূয় যজ্ঞের সময় নকুল এদের জয় করেন।

    আসলে এই কোনো দেশ/গোষ্ঠী কোথায় ছিলো সেগুলি এতোই নানান মতের চোরাবালি যে বেশী কিছু লেখাই যায় না।

    এইবারে সেনাপতি নির্বাচন।পান্ডবপক্ষে কারুরই মাথা ব্যাথা নেই। সহদেব রাজা বিরাটের নাম প্রস্তাব করলেন তো নকুল বললেন দ্রুপদই উপযুক্ত। অর্জুন প্রস্তাব করলেন ধৃষ্টদ্যুম্নের নাম। ভীমের পছন্দ হল শিখন্ডী। যুধিষ্ঠির বললেন এতো কথায় কাজ কী? কৃষ্ণই ঠিক করে দিন। কৃষ্ণ অর্জুনের পছন্দে সায় দিলেন। কেনো না যুদ্ধ তো আসলে কুরু পাঞ্চালের মধ্যেই। যাই হোক, ধৃষ্টদ্যুম্নের নাম প্রস্তাব হতেই সকলে রাজী। কোথাও কোনো অনুযোগ অভিযোগ নেই।

    কৌরব শিবিরে সমবেত রথী মহারথীদের দুর্যোধন একটি গল্প শুনালেন। পুরাকালে ক্ষত্রিয় হেহয় রাজাদের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণেরা যুদ্ধ ঘোষণা করে,তাদের সাথে যোগ দেয় বৈশ্য ও শুদ্রাও। কিন্ত্য সংখ্যায় অধিক হওয়া স্বত্তেও সেই মহাজোট হেরে যেতে থাকে। তখন বিবেচিত হয় যে হেরে যাওয়ার কারন ভালো সেনাপতির অভাব। এইসব কাহিনী বলে টলে দুর্য্যোধন প্রচুর প্রশস্তির পর ভীষ্মের নাম প্রস্তাব করলেন। ভীষ্ম খুসীই হলেন। জানালেন তিনি রোজই দশ হাজার সেনাকে নিহত করবেন। কিন্তু তার দুটি পুর্বসর্ত্ত আছে। এক, কর্ণ রনাংগনে থাকলে ভীষ্ম যুদ্ধ করবেন না।কারন কর্ণ অতি দুর্বিনীত ও স্পর্ধী। আর দ্বিতীয়তঃ ভীষ্ম শিখন্ডীকে কখনো আঘাত করবেন না। কেনো না পুর্বজন্মে তো বটেই,এই জন্মেও শিখন্ডী জন্মেছিলেন স্ত্রী রূপেই।

    অগত্যা কর্ণ সরে দাঁড়ালেন। জানালেন যে ভীষ্মের মৃত্যু হলেই তিনি রণাংগনে নামবেন।এতেও শান্তি নেই, যুদ্ধ শুরুর আগে, শিবিরে যখন ভীষ্ম আর দ্রোণ দুই পক্ষের তুল্যমুল্য বিচার করছেন ও দুই পক্ষের বীরদের রথী, মহারথী অতিরথী এইরকম বিভাগ করছেন তখন কর্ণের সামনেই কর্ণকে তারা অর্ধরথ হিসেবে সব্যস্ত করলেন। রাগে দাঁত কিড়মিড় করা ছাড়া কর্ণের আর কোনো পথ ছিলো না।

    এইবারে মুখ্য সেনাপতির পর জেনারেলদের নির্বাচন। পান্ডবপক্ষে প্রত্যেকে এক অক্ষৌহিনী সেনা নিয়ে ছয়জন,যথা ভীমসেন, দ্রুপদ,বিরাট, শিখন্ডী, সাত্যকি, চেকিতান হবেন অক্ষৌহিনী প্রধান আর নিজের অধীনে এক অক্ষৌহিনী সেনা নিয়ে কমান্ডার ইন চীফ রইবেন ধৃষ্টদ্যুম্ন। মনে রাখবার মতন কথা যে অর্জুন কিন্তু এই লিস্টে নেই।

    কৌরব পক্ষে মুখ্য সেনাপতি ভীষ্মের অধীনে প্রত্যেকে এক অক্ষৌহিনী সেনার অধিনায়ক হলেন কৃপ, দ্রোণ, শল্য, জয়দ্রথ, সুদক্ষিণ, কৃতবর্মা, অশ্বত্থামা, ভুরিশ্রবা, শকুনি ও কর্ণ। কর্ণের নাম নিশ্চয়ই ভুল করে লেখা হয়েছে কেন না গোটা ভীষ্মপর্বেই তিনি অনুপস্থিত ছিলেন।

    কৌরব পক্ষে দুর্য্যোধন তার হাতী,ঘোড়া আর সেনানীদের উত্তম,মধ্যম ও অধম শ্রেনীতে ভাগ করলেন। উত্তমেরা প্রথম সাড়িতে, মধ্যমেরা মাঝখানে আর অধমেরা সবার পিছনে।মনু সংহিতাতেও রয়েছে যে কুরুক্ষেত্র, কান্যকুব্জ, অহিছত্র, বিরাট - এইসব দেশের লোকেরা লম্বা,স্বাস্থ্যবান ও বীর হয়। তাদের সামনের দিকেই রাখতে হবে।

    প্রথম দিনের যুদ্ধ
    ***********************************
    কুরু সৈন্যের সংখ্যাধিক্য দেখে যুধিষ্ঠির প্রাথমিক ভাবে মুষড়ে পড়েছিলেন। পান্ডবপক্ষে তাই রচনা হল অচল বা বজ্রব্যুহ।মনু সংহিতাতে নির্দেশ আছে সেনাসংখ্যা অল্প হলে সূচীব্যুহ বা বজ্রব্যুহ গড়তে হবে। বজ্র্য ব্যুহ তে তিন প্রকার শেণীতে বল সাজাতে হয়। কুরুপক্ষের ব্যুহের কোনো উল্লেখ নেই।
    দুর্য্যোধন আগেই সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে ভীষ্মের হাতে শিখন্ডী অবধ্য। তাই কৌরব পক্ষের সেনাপতিরা যেনো সদাই সচেষ্ট থাকেন ভীষ্মকে রক্ষা করতে।আর যদি তারা শিখন্ডীকে আগেই নিহত করতে পরেন তাহলে তো কথাই নেই।

    যেনো এক স্টেজ রিহারস্যাল, এই ভাবে দ্বৈরথ শুরু হল।সাত্যকি বনাম কৃতবর্মা, যুধিষ্ঠির বনাম শল্য,অভিমন্যু বনাম বৃহদ্বল,ধৃষ্টদ্যুম্ন বনাম দ্রোণ। আজ নয় কিন্তু ভবিষ্যতে, এই সকল যুগ্মই আবার লড়াই করবেন এবং প্রতিটি ডুয়েলেই এদের একজন প্রাণ হারাবেন।

    তবে বীরত্ব দেখালেন যারা তারা কিন্তু পরের প্রজন্ম। অভিমন্যু, বিরাট পুত্র শ্বেত ও শংখ, ইরাবান।পদাতিক ও অশ্বারোহী সেনারা বোধহয় কেউই তীর ধনুক ব্যবহার করতেন না। তাদের জন্য বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই অস্ত্র ছিলো প্রাস ও ঢাল তরোয়াল।কুঠার,গদা এইসবও ছিলো। ব্যাঘ্রচর্মের কোষ থেকে তরোয়াল বার করে সেনানীরা লড়াই করছিলেন।পরে অবশ্য অন্য একদিনের যুদ্ধ বর্ননায় যবন সেনাদের কথায় এটাও লিখিত ছিলো এঁদের সকলেরই দাড়ি ছিলো ,এরা কাঁসার তৈরী বর্ম পরতেন ও সকলেই ছিলেন ধনুর্ধর।

    শল্য,কৃপ,কৃতবর্মা আর দুর্য্যোধনের দুই ভাই বিবিংশতি ও দুর্মূখ,এই পাঁচজনকে সংগে নিয়ে ভীষ্ম পান্ডব ব্যুহ ভেদ করলেন। চেদি,কাশী,পাঞ্চাল ও করুষ দেশের (মধ্যপ্রদেশের দাতিয়া জেলা অঞ্চল) সেনাদের মধ্যে ভীমের রথের ধ্বজা দেখা যাচ্ছিলো।

    পিঙ্গল মানে তামাটে বা লালচে রঙের ঘোড়ার রথে ছুটে এলেন অভিমন্যু। মনে রাখবেন বড়ো বড়ো মহারথীদের ঘোড়ারা সর্বদাই সাদা রঙের হত। এসেই অভিমন্যু ভীষ্মের অনুচর অর্থাৎ কৃপ শল্য দুর্মুখ ইত্যাদিদের যথেচ্চ শরাঘাত করতে লাগলেন। তার হস্তলাঘবতা মানে দ্রুত বাণ ছোঁড়ার কায়দা দেখে সকলেই তাকে অর্জুনের সাথে তুলনা করছিলেন। ভীষ্মের বানে বিদ্ধ হলেও অভিমন্যু মৈনাক পাহাড়ের মতন খাড়া থাকলেন এবং নয়টি বানে ভীষ্মের ধ্ব্জটি কেটে ফেললেন।
    পান্ডবেরা ছুটে এলেন অভিমন্যুকে সাহায্য করতে। বিরাটের ছেলে উত্তর সেই সময় এক রণহস্তীর উপর চড়ে চড়াও হলেন শল্যর উপর। সেই হাতী শল্যের রথের ঘোড়াদের মেরে ফেললেও সেই অচল রথ থেকে শক্তি ছুঁড়লে উত্তরের প্রানহীন দেহ হাতীর পিঠ থেকে ছিটকে পড়লো কুরুক্ষেত্রের মাটীতে। শল্য এরপর তরোয়ালের কোপে হাতীর শুঁড় ছিন্ন করে সেটিকেও যমালয়ে পাঠালেন।

    বিরাট পুত্র উত্তরই কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে প্রথম হত নায়ক।
    উত্তরের মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ হয়ে এবারে ভীষ্মের মুখোমুখী হলে উত্তরের ভাই শ্বেত। তবে প্রথমেই দুইজনে মুখোমুখী হন নি। দুই জনেই অপর পক্ষের অনামা শত্রুদের নিধনেই ব্যাস্ত ছিলেন। কোথাও রথের উপরে চড়ে বসেছে আরেকটা রথ, কোথাও রথের থেকে লটকে আছে প্রানহীন বীরের দেহ,রথীহীন ঘোড়ার লাফিয়ে লাফিয়ে দিগ্বিদিক ছুটে যাচ্ছে কোথাও, রণভুমে কাৎ হয়ে পড়ে অনেক রথ। অবশেষে দুজনেই মুখোমুখী হলেন। শ্বেতের বাণে ভীষ্মের ধনুক ছিন্ন হল, ধজাও। ক্রুদ্ধ ভীষ্ম এইবারে ভল্লের আঘাতে শ্বেতের চার ঘোড়া আর সারথীকে নিহত করলে শ্বেত এক শক্তি নিয়ে ছুঁড়ে মারলেন ভীষ্মকে আর ভীষ্মকে বললেন এইবার দেখি কেমন পুরুষ তুমি। ভীষ্মের বাণে সেই শক্তি ছিন্ন হলে এক গদা হাতে শ্বেত ধেয়ে এলেন। ভীষ্ম তৎক্ষনাত নিজের রথ থেকে লাফিয়ে নেমে পড়লেন কিন্তু গদার আঘাতে শ্ব্বেত সেই রথ চুর্ণ করে দিলো। রথহীন হয়ে ভীষ্ম এইবারে "দুঃখিতচিত্তে" শল্যের রথ উঠে বসলেন।ভীম আর অভিমন্যু একটানা আঘাত করে চলেছিলেন ভীষ্মকে কিন্তু ভীষ্ম এক কালান্তক বাণ গ্রহন করে নিক্ষেপ করলে সেটি শ্বেতের বর্ম ভেদ করে মাটীতে প্রবেশ করল। বিরাট তাঁর দ্বিতীয় সন্তানটিকেও হারালেন।"তাহার পর দুঃশাসন শ্বেতকে নিপাতিত দেখিয়া ভয়ংকর বাদ্যধ্বনির সহিত সকলদিকে ঘুরিয়া ঘুরিয়া নৃত্য করিতে লাগিলেন"।
    বিরাটের দুই পুত্র,উত্তর আর শ্বেত নিহত হলে তৃতীয় পুত্র শংখও ভীষ্মের প্রতি ধেয়ে এলেন। মহাভারতকার বলেছেন সময় তখন ছিলো মধ্যাহ্ন।

    শল্যকে দেখে শংখ একেবারে জ্বলে উঠলেন।কিন্তু শল্যের সাথে এঁটে উঠতে পারছিলেন না। শল্য রথ থেকে নেমে গদার আঘাতে শংখের রথ চুর্ণ করলে শংখ ঢাল তরোয়াল হাতে এক ছুটে অর্জুনের রথে উঠে বসে "সুস্থচিত্ত" হলেন। ভীষ্ম তখন মন্ডালাকারে ধনুক ঘুরিয়ে পান্ডবদের রথীদের সংহার করতে লাগলেন। পান্ডব সেনাদের মধ্যে হাহাকার পড়ে গেলো কিন্তু তাদের বাঁচাবার জন্য কেউই হাজির ছিলেন না। অবশেষে সন্ধ্যা হলে প্রথম দিনের যুদ্ধ শেষ হল।

    কিন্তু অর্জুন কোথায় ছিলেন?

    প্রথমদিনের যুদ্ধের পর বিশ্রামের সময় দুর্য্যোধন যেমন "হৃষ্টচিত্ত" থাকলেন যুধিষ্ঠির তেমনই বিমর্ষ ছিলেন। যুদ্ধ শেষে শিবিরে ফিরে যুধিষ্ঠির একান্তে কৃষ্ণকে বললেন "কি করিলে আমার মংগল হইবে তাহা তুমি আমায় স্বত্তর বল। বিলম্ব করিও না।" অনুযোগ করে বললেন অর্জুনকে তো আজ রণাংগনে উদাসীনই দেখলাম। যেটুকু বীরত্বের সাথে লড়াই তা করেছেন একা ভীমসেন। "একমাত্র শস্ত্রজ্ঞ তোমার এই সখা (অর্জুন) আমাদিগকে উপেক্ষাই করিতেছেন।"এই বিক্রমে যদি ভীষ্ম যুদ্ধ চালায় তো অচিরেই আমাদের সমস্ত সৈন্য বিনষ্ট হবে। দেখো, যদি ভীষ্মকে ঠেকাতে পারে দেখো এরকম কোনো মহারথীর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়। "মহামনাঃ যুধিষ্ঠির এই কথা বলিয়া শোকাপহতোপচিত্তে অন্তর্মনাঃ হইয়া চিন্তা করিতে লাগিলেন"। কৃষ্ণ বিমর্ষ চিত্ত যুধিষ্ঠিরকে নানান উৎসাহবাক্য দিলেন। অর্জুনের উপর আর তার আস্থা ছিলো না বোঝাই যাচ্ছে। তবে কথাটা ঠিক। কৃষ্ণও এই বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। এবং এর দুদিন পরেই তিনি এর "ব্যাবস্থা" করবেন।

    দ্বিতীয় দিনের যুদ্ধ
    **********************************************
    যুধিষ্ঠিরের পরামর্শে পান্ডবেরা ক্রৌঞ্চ ব্যুহ গড়লেন। এর পরেও দেখবো যুধিষ্ঠিরই ঠিক করতেন কবে কোন ব্যুহ হবে।
    ক্রৌঞ্চ বা বক এর মতন দেখতে ব্যুহের দুই পক্ষ ছিলো বিস্তীর্ণ আর সামনে বকের ঠোঁটের মতন সূচীমুখ । অর্জুনকে এই বকের "ঠোঁটে" রাখা হল। সচল ব্যুহের আক্রমনের একটাই পথ - যেনো অর্জুনকে বাধ্য করা হচ্ছে যুদ্ধের জন্য।
    অন্য পক্ষে কৌরবদের তেমন মাথাব্যাথা নেই। দুর্য্যোধন বললেন "আমাদের সৈন্যসংখ্যা পান্ডবদের তুলনায় অনেক বেশী। আর ভীষ্ম যেমন লড়াই করছেন তাতে বাকী রথীরা শুধু ভীষ্মকে সুরক্ষা দিক - তার উপর যাতে আঘাত না আসে সেইমতন তাকে ঘিড়ে থাকুক, বাকীটা উনি ই করবেন"।কৌরবেরা কী ব্যুহ রচনা করলেন সে নিয়ে কোনো উল্লেখ পর্যন্ত্য নেই।

    সেই ভীষ্মই আবার একটানা পান্ডবসেনাদের ক্ষয় করে যেতে লাগলেন। অগত্যা অর্জুন কৃষ্ণকে বললেন আমাকে ভীষ্মের কাছেই নিয়ে চলো।ভীষ্মের মুখোমুখি হয়ে এক সংকুল যুদ্ধ শুরু হল , কেন না দুই পক্ষেরই যতেক মহারথী সবাই ওখানেই জড়ো হল।ভীষ্ম আর অর্জুন মুখোমুখী হয়ে দুজনেই দুজনকে বাণবিদ্ধ করতে লাগলেন। দুই সারথীই খুব দক্ষতার সাথে রথ চালিয়ে পরষ্পরের শরাঘাত বিফল করে দিচ্ছেন। একাধিকবার উল্লেখ হয়েছে যে এই দুই বীর "সমরাংগনে ক্রীড়া করিতে লাগিলেন"। এই সময়ে অর্জুন বোধহয় দ্বৈরথ ছেড়ে সাধারন কৌরব সেনাদের নিধনে মনোযোগী হলেন।দুর্য্যোধন বোধহয় ভেবেছিলেন প্রথম দিনের মতন তিনি আবার প্রায় ওয়াকওভার পেয়ে যাবেন, কিন্তু অর্জুনের হাতে ক্রমাগতঃ নিজের পক্ষের সেনানীদের হতাহত দেখে দুর্য্যোধন নিতান্ত ক্রুদ্ধ হয়ে ভীষ্মকে বললেন,আপনি রয়েছেন,দ্রোণও রয়েছেন। কিন্তু তা স্বত্তেও কীভাবে অর্জুন এইরকম পরাক্রম দেখিয়ে আমার সৈন্যদেরকে নিহতে করে যাচ্ছে। আপনার কথা শুনেই আমি কর্ণকে বাদ দিয়েছি ,"অতএব এক্ষণে যাহাতে অর্জুন শীঘ্র নিহত হয়,এমন উপায় স্থির করুন"।

    প্রচন্ড ক্ষুব্দ ভীষ্ম এই অনুযোগ শুনে "ধিক ক্ষত্রিয়ধর্মে" বলে আবার ভয়ংকর হয়ে উঠলেন। দুর্য্যোধন কিন্তু কুরুক্ষত্র যুদ্ধের সব সময়েই ভীষ্ম আর দ্রোণকে,বিশেষতঃ দ্রোণকে এইভাবে উত্যক্ত করে চলবেন।

    ইতিমধ্যে দ্রোণ আর ধৃষ্টদ্যুম্নের লড়াই খুব জমে উঠলো। এই দুইজনের দ্বৈরথ প্রায় প্রতিদিনই এক বা একাধিকবার হত এবং কখনই ধৃষ্টদ্যুম্ন সুবিধে করতে পারতেন না। আজও এই নিয়মের ব্যাত্যয় হল না। অচিরেই দ্রোণের ভল্লের আঘাতে ধৃষ্টদ্যুম্ন অশ্বহীন, রথহীন এবং ছিন্ন শরাসন হলেন। ঢাল আর তরোয়াল নিয়ে রণক্ষেত্রে নামলেন দ্রুপদতনয় - অসিযুদ্ধে উনি পটু। দ্রোণের নিক্ষিপ্ত বাণসকল উনি ঢাল দিয়ে আটকাতে লাগলেন। ভীমসেন দ্রুত ছুটে এসে ধৃষ্টদ্যুম্নকে নিজের রথে তুলে নিয়ে সড়ে পরলেন।

    এরপরের লড়াই কলিংগরাজের সাথে ভীমসেনের। পুর্বদেশের সব রাজাই গজারোহী সেনা নিয়ে যুদ্ধ করতেন। আজকে কলিংগরাজ শ্রুতায়ু প্রচুর রথ নিয়ে আর তার সংগী নিষদরাজ কেতুমান প্রচুর হাতী নিয়ে ভীম আর তার সহযোগী চেদী, মৎস্য ও করুষ দেশের সেনাদের একেবারে ঘিড়ে ফেললেন।
    কলিংগ যুবরাজ শত্রুদেব ভীমসেনের ঘোড়াদের মেরে ফেললে ভীম অচল রথের থেকেই তার গদা ছুঁড়ে শত্রুদেবকে নিহত করলেন। পুত্রহত্যায় ক্রুদ্ধ কলিংগরাজ এইবারে তাঁর আরেক ছেলে ভানুমানকে নিয়ে হামলা চালালেন। ভীম এইবার হাতে নিলেন খড়গ আর ষাঁড়ের চামড়ার ঢাল। শ্রুতায়ুর বানগুলিকে তিনি খড়গাঘাতেই ছিন্ন করতে থাকলেন।

    এটি কিন্তু সমগ্র মহাভারতের ঐতিহ্যের বিরুদ্ধকথন। মহাভারতের যুদ্ধে তীর ধনুকের উপরে কেউ নেই। সে যাই ই ছুঁড়ে মারা হোক না কেনো, শক্তি,চক্র,গদা বা অসি - সবই বাণের আঘাতেই খন্ড খন্ড হয়ে যায়। এটি তার ব্যতিক্রম।

    ভীম এরপর ভানুমানের মহাগজের দুই দাঁত ধরে লাফিয়ে উঠে পড়লেন তার পিঠে। ভানুমানকে খড়গের এক কোপে নিহত করে আর এক কোপে হাতীটিরও মুন্ডচ্ছেদ করে দিলেন হেলায়। এবার ভীম এক এক করে হাতীর পিঠের উপর লাফিয়ে একটানা শত্রু নিধন করে চললেন। খড়গাঘাত ছাড়াও লাথি বা উরুর আঘাতেও প্রানহরন করলেন অনেকের।"অসংখ্য গজারোহী সৈন্য" নিহত হলে মাহুতহীন হাতীগুলি ইতঃস্তত ছোটাছুটি করে কলিংগ সেনাদেরই হতাহত করে দিতে লাগলো। হাতীর দল শেষ হয়ে গেলে তিনি এইবারে পড়লেন ঘোড়া ও রথের উপর।

    দুই পুত্রহত্যায় ক্রুদ্ধ শ্রুতায়ু আরো প্রচুর সেনানী নিয়ে এসে ভীমকে বাণবিদ্ধ করলে ভীমের সুযোগ্য সারথী বিশোক রথ নিয়ে এসে ভীমকে নিয়ে চলে গেলেন।ততক্ষনে আবার সাত্যকি আর ধৃষ্টদ্যুম্নও এসে গেছেন ভীমকে মদত দিতে।ভীম আবার ফিরে এসে নাগাড়ে কলিংগ সেনাদের হতাহত করতে লাগলেন এবং ভীম আবার ফিরে এসে নাগাড়ে কলিংগ সেনাদের হতাহত করতে লাগলেন এবং তাঁর হাতে নিহত হল নিষদরাজ কেতুমানও।

    প্রচুর শোরগোল শুনে অগত্যা ভীষ্ম এসে হাজির। ভীষ্ম আর ভীমের তুমূল লড়াই। ভীষ্মর বানে ভীমের ঘোড়াগুলি নিহত হলে ভীমও এক শক্তি নিক্ষেপ করে ভীষ্মকে সারথীশুন্য করলেন। ভীষ্মের ঘোড়াগুলি দিশাহারা হয়ে ভীষ্মকে নিয়ে ছুটে চলে গেলো।

    যুদ্ধ শেষ হবার মুখে এক রাউন্ড লড়াই হবে দুর্য্যোধন পুত্র লক্ষণ আর অভিমন্যুর মধ্যে। ফলাফল সন্মানজনক ড্র। এই দুই বীরের লড়াই হবে অনেকবার যতদিন না ১৩তম দিনে অভিমন্যুর তীরে লক্ষণের শিরশ্ছেদ না হচ্ছে। আর প্রতিবারই দেখি দুর্য্যোধন ঠিক হাজির নিজের ছেলের শৌর্য্য দেখতে। কৌরবেরা যুদ্ধ জিতলে এই লক্ষণই হবেন মহারাজ।

    একেবারে শেষদিকে অর্জুন মহাসংহারী হয়ে উঠলেন। তার অস্ত্রাঘাতে বহু কুরুসেনা হতাহত হচ্ছিলো । ভীষ্ম তখন দ্রোণকে বললেন অর্জুনকে আজ আর সামলানো যাবে না, বরং আমরা এখনই আজকের মতন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে দেই । দ্রোণ রাজী হলে দ্বিতীয় দিনের যুদ্ধও শেষ হল।

    অর্জুন আর কৃষ্ণ আজকে "হৃষ্টচিত্তে" শিবিরে গমন করলেন।

    তৃতীয় দিনের যুদ্ধ
    *********************************************
    প্রথম দুই দিনের যুদ্ধে কৌরব পক্ষ কোন ব্যুহ রচনা করেছিলেন সে নিয়ে কোনো উল্লেখ নেই। আজকের লড়াইতে কৌরবেরা গড়লেন গারুড় ব্যুহ। গারুড় ব্যুহ হছে মধ্যভাগে স্থুল এইরকম সেনা বিন্যাস। একটি বইতে রেফারেন্স হিসেবে পড়েছিলাম যে মহারাজ পুরু আলেকজান্ডারের বিরুদ্ধে এই ব্যুহ রচনা করেছিলেন। এটির বিশেষতঃ এর সামনের সাড়িতে হস্তী যুথ,তার পিছনে রথ ও সব শেষে অশ্বারোহীরা থাকবে। অনেকটা যেনো কার্স্কের লড়াইতে জার্মান সেনাদের ট্যাকটিক্স। প্রথমেই খুব ভারী ট্যাংক (টাইগার) ও ট্যাংক ডেস্ট্রয়ার (ফার্দিনান্দ), এর পরেই মাঝারী বা মেইন ব্যাটেল ট্যাংক (প্যানথার) আর সব পিছনে দ্রুতগামী হাল্কা ট্যাংক। ভারী ট্যাংক বা হাতীর আঘাতে সাড়িবদ্ধ সেনাদের প্রাচীর ভেঙে গেলে রথ বা মেইন ব্যাটেল ট্যাংক ঢুকে পড়বে।
    আর পান্ডবেরা করলেন অর্দ্ধচন্দ্র। নাম শুনেই বোঝা যায় চেহারাটা কেমন। দুই দিকে দিয়ে ঘিড়ে ফেলবার একটা আক্রমনাত্মক সেনাসজ্জা।

    কৌরব পক্ষে বুহের একদম অগ্রগামী অংশে অর্থাৎ ব্যুহ মুখে রইলেন ভীষ্ম, আর তার পিছনেই(ব্যুহের মাথায়) দ্রোণ আর কৃতবর্ম্মা রইলেন। তাদের পিছনে অশ্বত্থামা ,কৃপাচার্য্য আর সব বড় রথীরা।অনেকটা পিছনে দুর্য্যোধন ।দুই পক্ষ বা উইংসে কিন্তু সবই এলেবেলের দল। দক্ষিন পক্ষে মাগধ,কলিংগ ও দানোরক সেনারা আর বামদিকে পক্ষে কারুষ,বিকুঞ্জ,মুন্ড সেনারা। এই দুই উইংগসে কোনো নামকরা রাজা বা রথী নেই। আর এমন কিছু দেশের সেনাদের উল্লেখ আছে যাদের চেনাই যায় না।

    অর্জুন কিন্তু পান্ডব ব্যুহের মধ্যমণি ছিলেন না। তিনি বামদিকে রইলেন। আর ডানদিকে রইলেন ভীমসেন আর সাত্যকি, তাদের পিছনেই ধৃষ্টকেতু, দ্রুপদ আর বিরাট।।ব্যুহের মধ্যভাগে রইলেন ধৃষ্টদ্যুম্ন আর শিখন্ডী। অনেকটা পিছনে করীসৈন্য নিয়ে যুধিষ্ঠির। প্রথম দিনের বজ্র যুদ্ধেও যুধিষ্ঠির বুহের পিছন দিকেই ছিলেন।

    দুই পক্ষের সেনা বিন্যাস আর রথীদের স্থাপনাতেই দুই পক্ষের ট্যাকটিক্স বোঝা যায়। কৌরবেরা চাইছিলেন একটা দুর্গভেদী র্যা মরডের আঘাতে পান্ডব ব্যুহের মধ্যভাগ ভেঙে দেবেন আর পান্ডব পক্ষ চাইছিলো দুই উইংগস দিয়ে তারা কুরুর ব্যুহকে ফ্ল্যাংকিং অ্যাটাক করবেন।

    কৌরবপক্ষের রথীরা "একাগ্রচিত্ত হইয়া অনেকবার পান্ডব সৈন্যগনের শ্রেণী ভংগ করিলেন"। পান্ডবেরাও কৌরবদের "ছিন্ন ভিন্ন করিতে লাগিলেন"। কিন্তু কোনো পক্ষই অন্যপক্ষের ব্যুহ পুরোপুরি ভেদ করতে পারলো না।"সৈন্যগন সেনামুখ হইতে বহির্গত হইয়া যুদ্ধ করিতে লাগিল"।

    ভীষ্ম আজকে ভীষণ। তিনি অতিদ্রুত গতিতে সারা কুরুক্ষেত্রের মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন এবং পান্ডব পক্ষের রথীদের দেখে তাদের নাম উচ্চারণ করে (এই দ্যাখ অমুক, তোকে হত্যা করছি")তাদেরকে শরাঘাতে নিধন করছিলেন। তার এক এক বাণে এক একটি হাতীর মৃত্যু হচ্ছিলো, এক এক নারাচে (লোহার ভারী বানে) একই সাথে তিন চারজন যোদ্ধা বিদ্ধ হচ্ছিলো।

    ভীত সন্ত্রস্থ পান্ডবসেনারা তখন পালাতে শুরু করলো।"তাহারা ভীষ্মশরে এরূপ ব্যথিত ও ভগ্ন হইয়া নানাদিকে ধাবমান হইল যে দুইজনকে একত্রে গমন করিতে দেখা গেলো না"। একেবারে প্যানিক। পান্ডবপক্ষের রথীরা চেষ্টা করেও তাদের সেনাদের পালিয়ে যাওয়া আটকাতে পারছিলেন না। পান্ডবসেনাদের তখন মনে হচ্ছিলো তারা যেনো দিগ বিদিক জ্ঞানহারা স্ট্যাম্পীডের গরুর দংগল।

    কৃষ্ণ আর অর্জুনের চোখের সামনেই এইসব ঘটছিলো। কৃষ্ণ তখন অর্জুনকে বললেন এই ই সময়,তুমি এখন ভীষ্মকে আক্রমন কর।"অতএব যদি মুগ্ধ না হইয়া থাক তো ভীষ্মকে প্রহার কর"। অর্জুন তখন ভীষ্মের মুখোমুখী হলেন ও দুই জনের দ্বৈরথ শুরু হল। এই দ্বৈরথ যতক্ষণ চলবে সাধারন পান্ডব সেনাদের ততক্ষনই শান্তি।

    অর্জুন পর পর দুইবার ভীষ্মের ধনুক ছিন্ন করলে ভীষ্ম খুবই খুসী হলেন। তারিফ করলেন অর্জুনের। বললেন "আমি তোমার প্রতি যৎপরিনস্তি প্রীত হইয়াছি। তুমি আমার সহিত স্বচ্ছন্দে যুদ্ধ কর"।

    ভীষ্ম, অর্জুন আর কৃষ্ণকে বাণে একেবারে ছেয়ে ফেলে কৃষ্ণকেই "তীক্ষ্ণ বাণ দ্বারা কম্পিত করতঃ অট্ট অট্ট হাস্য করিতে লাগিলেন"। কৃষ্ণ ভাবলেন "অর্জুন তীক্ষ্ণ শরে একান্ত আহত হইয়াও ভীষ্মের গৌরবানুরোধে আপনার কর্ত্তব্য বিষয়ে মনোযোগ করিতেছেন না।" অতএব আমি ই ভীষ্মকে বধ করব।

    ভীষ্মের অনুগামী কৌরব পক্ষের সব মহারথীরা আর অন্যদিকে অর্জুনের সহযোগী পান্ডবদের তাবড় রথীরা, সবাই এই দ্বৈরথেই সামিল হলেন। কিন্তু ভীষ্মকে আটকানো যাচ্ছিলো না।ভীষ্মের নির্দেশে কৌরব পক্ষের সব মহারথীরাই অর্থাৎ দ্রোণ, কৃপ ,কৃতবর্ম্মা , জয়দ্রথ, শকুনি এরা সবাই মিলে কৃষ্ণকে ফোকাস করে শর নিক্ষেপ শুরু করলেন। অনুমান করা যায় যে ভীষ্ম আর অর্জুন কেউই পরষ্পরকে আঘাত করতে চাইছিলেন না। ভীষ্ম তাই "সফট টারগেট" হিসেবে কৃষ্ণকেই বেছে নিয়েছিলেন। পান্ডবসেনারা আবার ছত্রভংগ হয়ে পালাতে শুরু করলেন। সৈন্যদের পালানোর খবর পেয়ে আর ভীষ্মের অধিক পরাক্রম আর অর্জুনের "মৃদুতা" দেখে দেখে কৃষ্ণের সব ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙল। সাত্যকিকে ডেকে বললেন যারা পালিয়েছে,তাদের তো কথাই নেই আর যারা এখনো যুদ্ধ করছেন, তাদেরকেও পালাতে দেও। আমি একাকীই ভীষ্মকে সংহার করব।

    তারপরে তো সেই অলৌকিক ঘটনা। চক্রহাতে কৃষ্ণ রথ ছেড়ে মাটীতে নেমে ভীষ্মের দিকে ধেয়ে এলে ভীষ্ম তো স্তব শুরু করে দিলেন। অর্জুনও ছুটে এসে হাতে পায়ে ধরে কৃষ্ণকে আবার রথে তুললেন।

    তবে কৃষ্ণকে এই কৌশল আরো একবার নিতে হবে অর্জুনকে সংহারী যুদ্ধ মনযোগী করবার জন্য।

    এইবারে অর্জুন খুবই মনোযোগী। সমূলে কৌরবপক্ষের বিনাশ চললো। কৃষ্ণ হৃষ্টচিত্ত হলেন। এদিকে সন্ধ্যাও ঘনিয়ে আসছে - কুরুপক্ষের দিক দিয়েই যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করা হল।
    "একা অর্জুনই আমাদের সকল রথীকে হারিয়ে দিয়েছে" এই কথা বলতে বলতে কৌরবপক্ষের সেনারা তাদের শিবিরে ফিরে গেলেন।

    চতুর্থ দিনের যুদ্ধ
    ***************************************
    কিন্তু, শিখন্ডী কোথায় ?

    পান্ডবপক্ষকে তো কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের শুরুতেই শিখন্ডী জানিয়েছিলেন যে তাঁর সৃষ্টিই হয়েছে ভীষ্ম নিধনের জন্য। ভীষ্মও কুরুপক্ষকে বলেছিলেন শিখন্ডীর সাথে তিনি যুদ্ধ করবেন না। সেই মতন দুর্য্যোধন নির্দেশও দিয়েছিলেন শিখন্ডী যেনো ভীষ্মের কাছে না আসতে পারে। কিন্তু পান্ডব পক্ষে একবারও দেখি না শিখন্ডীকে ভীষ্মের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে।

    চতুর্থ দিনে দুই পক্ষেই ব্যাল বুহ রচনা করে।বর্ধমানের মহারাজার স্পনসর্ড অনুবাদে এই ব্যাল ব্যুহের উল্লেখ পেয়েছি কিন্তু আর কোনো অনুবাদে ব্যুহের নাম নেই। ব্যাল'এর আভিধানিক অর্থ হিংস্র পশু, অনেক ক্ষেত্রে নিদৃষ্ট করে সাপকেও বলা হয়। তো সর্প ব্যুহ বললে তাও একটা অনুমান করা যায় ব্যুহের আকৃতি কেমন ছিলো।

    মহাভারতে শুধু লেখা আছে পান্ডব ব্যুহের কর্ণদেশে (অর্থাৎ সামনের সাড়িতে দুই ফ্ল্যাংকে) চার হাজার করে হাতী ছিলো। এইসব ব্যুহ সজ্জা কিন্তু করতেন রাজা যুধিষ্ঠিরই। ধৃষ্টদ্যুম্নের কোনো ভূমিকাই ছিলো না।

    যুদ্ধ শুরু হলো ।আকাশ ধুলোময়। "ভ্রমনকারী অশ্বারোহী বাহিনী"র কথা শুনে মনে হয় একটা ক্যাভালরী চার্জের মতন কিছু হত। যদি ধরে নেই এই যুদ্ধের সময় কাল ৮০০ থেকে ১০০০ বিসি তাহলে তখনো রেকাবের উৎপত্তি হয় নি। ছোটো কমপাউন্ড ধনুও তখনো চালু নয়। তাই অশ্বারোহী বাহিনীর অস্ত্র ছিলো প্রাস ও অসি - এটাও উল্লেখ করা হয়েছে।
    এই সংকুল যুদ্ধের মধ্যে ভীষ্মের নজরে এলো অর্জুনের কপিধ্বজ পতাকা। সেই মতন তিনি তাঁর সব মহারথীদের নিয়ে অর্জুনের দিকে অগ্রসর হলেন। সেই দেখে অভিমন্যু , ব্যুহদ্বার থেকে বার হয়ে এসে অর্জুনকে আড়াল করে দাঁড়ালেন। ভীষ্ম তাঁকে "অতিক্রম করে", মানে পাশ কাটিয়ে অর্জুনের মুখোমুখী হলে দুজনে দ্বৈরথ শুরু হল।

    অভিমন্যু কিন্তু কুরুপক্ষের পাঁচ রথী, যারা ভীষ্মের অনুবর্ত্তী ছিলেন, তাঁদের রুখে দিলেন। অশ্বত্থামা ,ভুরিশ্রবা, শল্য আর বাকী দুজন হচ্ছেন চিত্রসেন ও সাংযমনির পুত্র। এঁরা কারা? চিত্রসেন নামে এক বিখ্যাত গন্ধর্ব রাজা ছিলেন আর আরেকজন চিত্রসেন হচ্ছেন কর্ণের এক ছেলে।আর সাংযমনি বা তার অনামা পুত্রেও কোনো হদীশ নেই। যদিও বেশ বিস্তারিত ভাবে অভিমন্যুর সাথে এদের লড়াইএর কথা রয়েছে।
    সপুত্র অর্জুনকে নিহত করবার জন্য দুর্যোধন কেকয় ও মদ্র দেশীয় সেনাদের সেইখানে পাঠালেন আর সেই দেখে ধৃষ্টদ্যুম্নও দলবল নিয়ে সেখানে হাজির। ধৃষ্টদ্যুম্নের বাণে সাংযমনি পুত্র রথ ও সারথীশুন্য হলে তিনি তরোয়াল হাতে ধৃষ্টদ্যুম্নের দিকে ছুটলেন আর গদার আঘাতে প্রাণ হারালেন।

    এই রকম আরো কিছু এলেবেলে লড়াইর বিবরণ আছে। অভিমন্যুর হাতে নিহত হবেন মগধরাজ। কে এই মগধরাজ? জরাসন্ধের ছেলে মগধরাজ সহদেব তো পান্ডবপক্ষেই যোগ দিয়েছিলেন । না কি কেকয় দেশের মতন মগধেও দুটি দল ছিলো?একই রকমের সমস্যা দেখি কারুষ দেশ নিয়েও। পান্ডব ও কৌরব দুই পক্ষেই কারুষ সেনাদের উলেখ আছে।
    তবে আজকের হীরো কিন্তু সেই ভীমসেন। হাতী দেখলেই ভীম রথ থেকে নেমে গদা হাতে হাতীদের বধ করতে থাকেন। আজকের যুদ্ধেও তিনি ভয়ংকর হয়ে উঠে প্রচুর গজসেনা বিনাশ করলে দুর্য্যোধনের সাথে তার দ্বৈরথ শুরু হয়। এর পরে চোদ্দোজন কুরু ভাই এক যোগে ভীমকে আক্রমণ করলে ভীম সাত জন কৌরব রাজকুমারকে নিহত করেন। যে একশো ভাইকে হত্যা করার সংকল্প তিনি করেছিলেন, এই চতুর্থ দিন থেকে সেই প্রতিশোধের পালা শুরু হল।

    তখন দিনও শেষ হয়ে আসছে। সেই সময়ে ঘটোৎকচ ভয়ানক যুদ্ধ শুরু করলে ভীষ্ম দ্রোণকে ডেকে বললেন,"দুরাত্মা ঘটোৎকচের সহিত যুদ্ধ করিতে আমার অভিরুচি হইতেছে না"।আমরা সবাই খুবই বিক্ষত। আমাদের বাহনেরাও পরিশ্রান্ত ।"এক্ষণে পান্ডবেরা জয়ী হইয়াছে, অতএব আমার বিবেচনায় উহাদিগের সহিত যুদ্ধ করা উচিৎ নহে"। আজ থাক, কাল না হয় আবার যুদ্ধ করা যাবে।

    সেই মতন চতুর্থ দিনের যুদ্ধ শেষ হলো। কৌরবেরা "পরাজিত ও লজ্জিত" হয়ে নিজেদের শিবিরে ফিরে গেলেন।অন্যদিকে পান্ডবেরা ভীম ও ঘটোৎকচের প্রসংশা করতে করতে নিজেদের শিবিরে ফিরে গেলেন। দুর্য্যোধন সাত ভাইকে হারিয়ে চিন্তাকুল হয়ে পড়লেন।

    বিশ্রামের সময়ে ভীষ্মের শিবিরে দুর্য্যোধন এসে বিনীত ভাবে প্রশ্ন করলেন কোন ম্যাজিকে পান্ডবেরা এই যুদ্ধ জিতেই চলেছ। তাদের লোকবল কম। আর কুরু পক্ষে রয়েছে অনেক অনেক বেশী মহারথীরা।

    ভীষ্ম বোঝালেন যে পান্ডবেরা সত্য ও নায়ের পক্ষে। তাই তারাই জিতছে। এটা কিন্তু নিছক ধর্মকথা নয়।কমব্যাট সাইকলজিতে একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। প্রতিহিংসা নয়, কোন পক্ষ যদি মনে করে তারা ন্যায়ের জন্য লড়াই করছেন তো তাদের "মরাল" থাকে জোরদার। কম সংখ্যক লোক নিয়েও তারা যুদ্ধ জিতে থাকেন 'ক্লসউইৎস একেই বলতেন volksgeist বা spirit of the people, এবং মনে করতেন যুদ্ধ জয়ের জন্য এটা একটা বড়ো কারন।
    ভীষ্ম উপদেশ দিলেন পান্ডবদের সাথে সন্ধি করবার জন্য। দুর্য্যোধন নিতান্তই অরাজী। এই সন্ধি করবার উপদেশ কৌরবদের সব মহারথীরাই দুর্য্যোধনকে দিয়ে যাবেন কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের অন্তিম ক্ষণ পর্যন্ত্য কিন্তু দুর্য্যোধন কখনোই রাজী হন নি।

    কৌরবপক্ষের এটাও এক দুর্বলতা ছিলো। একে তো টিম স্পিরিট বলে কিছু নেই।আর অন্যদিকে পান্ডবেরা এক ঘনিষ্ঠ পরিবারের মতন সংঘবদ্ধ তায় কৌরবপক্ষের ভীষ্ম,দ্রোণ - এইসব বড় নেতারা পান্ডবদের সেনা নিধনেই ব্যাস্ত থাকতেন, খোদ পান্ডব ভাইদের মৃত্যুর কোনো কারন তারা হতে চান নি কখনো।

    সঞ্জয়ের কাছে এই যুদ্ধের বিবরণী শুনতে শুনতে ধৃতরাষ্ট্র যখন আক্ষেপ করছিলেন তখন সঞ্জয় তাঁকে জানালেন, "পান্ডবেরা কোন প্রকার মন্ত্রপয়োগ, মায়াজাল বিস্তার বা কোন প্রকার বিভীষিকা প্রদর্শন করিতেছেন না। তাঁহারা শক্তি ও ন্যায়ানুসারেই যুদ্ধ করিতেছেন"।

    পঞ্চম দিনের যুদ্ধ
    *********************************
    আজ কৌরবেরা গড়লেন মকর ব্যুহ। সামনে আর পিছনে অল্প সংখ্যক সেনা রেখে মধ্য ভাগ স্থুল করলে তিন রকমের ব্যুহ হয়। বরাহ, মকর ও গারুড়। এর মধ্য বরাহব্যুহ মোটামুটি "সবই ছাব্বিশ ইঞ্চি " গোছের ,তবে একটু পেট মোটা, মকর মানে কুমীর ব্যুহ ওরই ভেরিয়েশন ,তবে মধ্যভাগে সেনা আরো বেশী আর সামনে আর পিছনে সেনা বিন্যাস আরো দীর্ঘ। গারুড় ব্যুহ হছে সব থেকে বেশী চওড়া মধ্য ভাগ।

    এর বিরুদ্ধে পান্ডবেরা গড়লেন শ্যেন(বাজ পাখী) ব্যুহ। এই ব্যুহের বিবরণ কোথাও পাই নি। তবে অনুমান করতে পারি যে আমেরিকান ঈগলের লোগোর মতন এই ব্যুহের দুই পক্ষ ছিলো উদ্যত আর বাজ পাখীর মুখের মতন মূল মহারথীরা ছিলেন মধ্যস্থলে।

    পান্ডব ব্যুহের একেবারে সামনে, ভ্যানগার্ড হিসেবে ভীমসেন(বাজ পাখীর ঠোঁটে) আর তার পিছনেই শিখন্ডী আর ধৃষ্টদ্যুম্ন( দুই চোখ) , অর্জুন আরেকটু ভিতরে (পাখীর গলায়)। যুধিষ্ঠির সব দিনই যেমন থাকেন,অনেকটা পিছনে রইলেন।
    আজকের দিনে শিখন্ডীকে কিছুটা দেখা যাবে।
    যুদ্ধের শুরুতেই দুর্য্যোধন দ্রোণের কাছে গিয়ে অনুযোগ করলেন। "আপনারা থাকতে পান্ডবেরা কী ভাবে যুদ্ধে জিততে পারে? কিছু একটা বিহিত করুন"

    যুদ্ধের শুরুতেই শিখন্ডী গিয়ে ভীষ্মকে আক্রমন করলেন। ভীষ্ম তো শিখন্ডীকে আঘাত করবেন না। দুর্যোধন তখন দ্রোণকে খবর দিলেন। দ্রোণও দ্রুত শিখন্ডী দিকে তাড়া করে আসতেই শিখন্ডী "বিত্রস্তমনে ভীষ্মকে পরিত্যাগ করিয়া গমন করিলেন"।
    সংকুল যুদ্ধ শুরু হল।সমগ্র রণাংগনেই দ্বৈরথ চলছিলো তুল্যমূল্য বিচারে।যথা ভীষ্ম বনাম অর্জুন,ভীম ও জয়দ্রথ। সপুত্র দ্রোণের বিরুদ্ধে দ্রুপদ ও চেকিতান।ক্রমাগতঃই যোদ্ধারা অদল বদল হচ্ছিলো। যেমন কিছু পরেই ভীষ্মের মুখোমুখী হলেন ভীম আর অর্জুনের সাথে লড়াই বাঁধলো অশ্বত্থামার। সেই দ্বৈরথে পরিস্থিতি ছিলো যাকে বলে "অ্যাড্ভান্টেজ অর্জুন" কিন্তু অর্জুন মনে করলেন "ইনি আমার আচার্য্যের অতি প্রিয় সন্তান তায় ব্রাহ্মণ, অতএব আমার পরম মাননীয়"। এই ভেবে অশ্বত্থামার প্রতি কৃপা দেখিয়ে তিনি সাধারন কৌরব সেনা নিধনেই মন দিলেন।

    অর্জুনের এই অহৈতুকী ভক্তিভাব খুবই প্রবল রইবে সারাটা যুদ্ধেই।

    রোজই যেমন হয়, অভিমন্যু আর লক্ষণের একটা দ্বৈরথ হবে এবং তাতে লক্ষণ সম্পুর্ণ পরাজিত হন। তার ঘোড়া ও সারথি নিহত হলে দ্রোণ এসে বিক্ষত লক্ষণকে নিজের রথে বসিয়ে চলে গেলেন। লড়াই হবে সাত্যকি আর ভুরিশ্রবার মধ্যেও।এরা খুব প্রাচীন জ্ঞাতি শত্রু। আজকের লড়াইতে ভুরিশ্রবা সাত্যকির দশ ছেলেকেই নিহত করবেন। ক্রুদ্ধ সাত্যকি ভুরিশ্রবার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। দুজনের তুমূল লড়াই হবে আর দুজনেরই রথ চুর্ণ হলে দুজনেই ঢাল তরোয়াল নিয়ে মুখোমূখী হলেন। সে সময়ে ভীমসেন এসে সাত্যকিকে আর দুর্য্যোধন এসে ভুরিশ্রবাকে নিজের নিজের রথে তুলে নিয়ে গেলেন। প্রায় প্রতিদিনই এদের লড়াই হবে। একেবারে জয়দ্রথ বধের দিন অর্জুনের সাহায্যে ভুরিশ্রবাকে নিহত করবেন সাত্যকি। সমস্ত কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে এই একবারই অর্জুন তাঁর কোড অব কন্ডাক্ট ভাঙবেন।

    তখন দিনও শেষ হয়ে এসেছে। ভীষ্ম আজকের মতন যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করলেন।

    ****************************************
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৫ জুন ২০১৬ | ২৩৩৪ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    চম - dd
    আরও পড়ুন
    ও শানওয়ালা - dd
    আরও পড়ুন
    দ্রোণ পর্ব - dd
    আরও পড়ুন
    কর্ণসংহার - dd
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dd | ***:*** | ০৫ জুন ২০১৬ ০৫:০৯55092
  • ভীষ্ম পর্বে লড়াই তো হবে দশ দিন। কিন্তু একটানা দশ দিনের রিপিটিটিভ কমেন্টারী কি এক ধাক্কায় পড়া সম্ভব ? সেই বিবেচনায় দুই ইন্স্টলমেন্টে শেষ করবো।

    সংগে থাকুন।
  • avi | ***:*** | ০৫ জুন ২০১৬ ০৫:৫৩55093
  • পড়ে ফেললাম। :)
    নারায়ণী সেনা আর সংশপ্তক সেনা তাহলে আলাদা? আমি কেন কে জানে, দুটোকে এক ভাবতাম। :-(
  • dd | ***:*** | ০৫ জুন ২০১৬ ০৬:১৮55094
  • সংশপ্তক মানে যারা আমৃত্যু লড়াই করে। নারায়নী সেনারা সংশপ্তাক ছিলেন, ত্রিগর্ত্তের সেনারাও।
  • avi | ***:*** | ০৫ জুন ২০১৬ ০৬:২০55095
  • ওহো, এবার পরিষ্কার। :-)
  • Rit | ***:*** | ০৫ জুন ২০১৬ ০৬:৪৫55096
  • এই মহাভারতের চটি হবে না?
  • Atoz | ***:*** | ০৫ জুন ২০১৬ ০৮:৪৭55097
  • আমি এখনও পড়িনি, গুছিয়ে রাখলাম। পড়বো ভেবেই ভালো লাগছে।
  • arijit | ***:*** | ০৫ জুন ২০১৬ ০৯:২৪55098
  • ভাল হয়েছে কিন্তু।
  • DP | ***:*** | ০৬ জুন ২০১৬ ০১:৪৩55102
  • বরাবরের মতই ভাল লাগল। এই একই দেশের সৈন দুদিকে, এই ব্যাপারে একটা কথা মনে হল। একেক সময় মনে হয় সেসময় বোধহয় সব রাজা টেরিটোরিয়াল রাজা ছিলেন না। অনেকে কমিউনিটি র রাজা ছিলেন। যেমন যাদবদের মনে হয় আলাদা কোন রাজ্য সে অর্থে ছিলনা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকত, আর সব যাদবের নেতা ছিলেন নন্দ। একই কথা নিষাদ, দাস, এদের ক্ষেত্রেও মনে হয়।
  • amit | ***:*** | ০৬ জুন ২০১৬ ০১:৫১55099
  • dd-দা কে প্রশ্ন।

    আর্য ক্ষত্রিয় আর অনার্য দের মিলনে সন্তান হলে কি তাদের কে অনার্য ধরা হত ? ঘটোত্কচ এর প্রতি ভিস্মের মন্তব্য একটু নিম্ন শ্রেনীর লাগলো । এমনকি যখন পরে ঘটোত্কচ আরো যুদ্ধ করেছেন, তাতে মায়ার প্রভাব বেশী করে বলা হয়েছে , তার বীরত্বের কথা ততটা নয়। যেন তারা প্রকৃত যোদ্ধা নন।

    আর পুরো মহাভারতে কথাও দেখি না কোনো মহারথী সাধারণ সৈনিকের হাতে মারা গেছেন। তুমুল যুদ্ধের সময়েও কি এত শ্রেণীবোধ ছিল যে সাধারণ সৈনিক কখনই মহারথীদের আক্রমন করবে না , শুধু পড়ে পড়ে মার খাবে ? যে একটা দুটো ঘটনা, যেমন ব্যাধের হাতে কৃষ্ণের মৃত্যু, সেগুলোকে দেখানো হয় ছলে/ কৌশলে মারা, সামনা সামনি নয়। আর্য- অনার্য সরাসরি যুদ্ধের কি আরো উদাহরণ আছে ? (রামায়ন ছেড়ে দিচ্ছি, ওখানে আর্য অনার্য বর্ণনা বড় বেশী সরলীকরণ মনে হয় )।
  • avi | ***:*** | ০৬ জুন ২০১৬ ০২:০৯55103
  • নন্দ না, উগ্রসেন সম্ভবত। নন্দ বৃন্দাবন এলাকার গোপনেতা ছিলেন, মথুরার আশেপাশে। যাদব, বৃষ্ণি, ভোজ এদের সম্ভবত ওই অনেক গোষ্ঠীর ধারণা ছিল, তার মধ্যে কোনো একজনকে সম্মানার্থে রাজা বলা হত, তাঁরা মেজর ডিসিশন মেকার ছিলেন না।
  • অনামী | ***:*** | ০৬ জুন ২০১৬ ০২:৩৮55104
  • পান্ডবদের সেনাদের মধ্যে পাঞ্চালরাজের সেনারাও তো থাকবে?
  • dd | ***:*** | ০৬ জুন ২০১৬ ০৩:২২55100
  • হ্যাঁ, এটা আমারো সব সময়েই মনে হয়। কোথাও একটা লিখেও ছিলাম। রথীরা কেউই সাধারন সেনানীদের হাতে হতাহত হন না। অথচ যুদ্ধের বিবরনীতে দেখি যুদ্ধ তো হয়ই সকলের সাথে, যেমন অর্জুন বনাম সংশপ্তক বাহিনী,অভিমন্যু বনাম মদ্র সেনা, ভীম বনাম কলিংগ সেনা ইত্যাদি।

    সাধারন সেনাদের কাছে (মনে হয়) তীর ধনুক থাকতো না।ফলে তারা রথীদের লং বো'র রেঞ্জে থাকতো কিন্তু নিজেরা কিছুই করতে পারতো না। তায় রথীরা সব সময়েই অনেক প্রহরী (তারাও রথী কিন্তু নামকরা নয়) আর সেনা নিয়েই যুদ্ধ করতেন।

    অভিমন্যু বধের সময় দেখি কর্ণের সহকারী ছিলেন ছয় রথী আর অভিমন্যুর পার্ষ্ণি সারথী দুইজনে। এদেরকে ডিঙিয়ে সাধারন সেনারা তাদের হাতে ছুঁড়ে মারাঅস্ত্রের নাগালেই পেতেন না রথীদের।

    ঘটোৎকচের কথাটা ঠিক। যেনো রাক্ষসী মায়া ছাড়া আর তার কোনো বীরত্ব নেই।

    আর বেদেই তো আর্য্য অনার্য্য যুদ্ধের কথা আছে। ফর্সা মানুষ বনাম কালো মানুষ। অনেকবার।
  • dd | ***:*** | ০৬ জুন ২০১৬ ০৪:০১55101
  • তবে সেনা বাহিনীতে জাত পাত ছিলো বলে তো মনে হয় না। প্রচুর পরিমানে বিদেশী সেনা ছিলো ম্লেচ্ছ,চীনা,যবন। কাম্বোজের রাজা সুদক্ষিণ বোধহয় ইন্দো ইরানিয়ান সংকর জাতের লোক ছিলেন। তিনি তো কৌরবের এক জেনারেল ছিলেন।

    কিরাত,নিষদ,খস,পুলিন্দ এইসব উপজাতি সেনারা ছিলো। তবে ঘটোৎকচ ,অলম্বুষ এরা নিছক "রাক্ষস" ছিলেন। শুধু মায়া যুদ্ধতেই ওস্তাদ। কিন্তু সঞ্জয় এটাও তো বলেছেন পান্ডব পক্ষে "পান্ডবেরা কোন প্রকার মন্ত্রপয়োগ, মায়াজাল বিস্তার বা কোন প্রকার বিভীষিকা প্রদর্শন করিতেছেন না। তাঁহারা শক্তি ও ন্যায়ানুসারেই যুদ্ধ করিতেছেন"।

    আসলে প্রচুর কনফ্লিক্টিং কথা আছে - একটু বেছে বুছে পড়তে হবে।
  • dd | ***:*** | ০৬ জুন ২০১৬ ০৪:৩৫55105
  • উল্টোটা। পাঞ্চাল সেনাদের সাথে ছিলো পান্ডবেরা।

    বাকী সকলেরই রাজত্ব ছিলো,রাজ্য ছিলো। পান্ডবদের কিছুই ছিলো না । কৃষ্ণ আর শ্বশুরবাড়ী ছাড়া। তাদের সব অ্যালাএন্সই কোনো না কোনো বিয়ের সুত্র ধরে, আত্মীয়তার সম্পর্ক।

    অন দ্য আদার হ্যান্ড, শুধুমাত্র কলিংগরাজই বোধহয় একমাত্র রাজা যিনি বৈবাহিক সম্পর্কের জন্য কৌরব পক্ষে ছিলেন। উনার অনামা মেয়েকে দুর্য্যোধন স্বয়ংবর সভা থেকে তুলে বিয়ে করেছিলেন।
  • Rit | ***:*** | ০৬ জুন ২০১৬ ০৫:১১55106
  • যুদ্ধটাই তো কুরু ভার্সাস পাঞ্চাল, পান্ডবরা তো প্লেসহোল্ডার। অর্জুনের মত বীর থাকতে সেনাপতি কিনা ধৃষ্টদ্যুম্ন? আর দ্রোণের তো প্রাচীন বিবাদ পাঞ্চালের সাথে। দ্রৌপদীর পাঁচ সন্তানকে বেছে বেছে মেরে ফেলল অশ্বত্থামা। সে কি এমনি এমনি?
  • avi | ***:*** | ০৬ জুন ২০১৬ ১১:০৯55107
  • আমার আবার সেনাপতি হিসেবে অর্জুন খুব দক্ষ হতে পারেন, কখনোই মনে হত না। তুখোড় ভালো ব্যক্তিগত যোদ্ধা, কিন্তু সৈন্যস্থাপন বা ম্যান ম্যানেজমেন্ট কতটা ভালো সামলাতেন সন্দেহ। অবিশ্যি ধৃষ্টদ্যুম্নও বিশাল ভালো কিছু ছিলেন কিনা জানি না। কিন্তু অর্জুন, একিলিস, বীরেন্দ্র সেওয়াগ এনারা অন্য রকম মেটেরিয়াল। ঠিকমতো ব্যবহার করা গেলে অমোঘ, কিন্তু ঠিক ক্যাপ্টেন টাইপ নন। কৃষ্ণ যে কৃষ্ণ, স্রেফ আঠারো দিন ধরে অর্জুনকে সামলাতেই হদ্দ হয়ে গেলেন, পি কে ব্যানার্জির মতো ভোকাল টনিক দিয়ে যেতে হল একটানা।
  • Atoz | ***:*** | ০৬ জুন ২০১৬ ১১:৩০55108
  • রুক্মি লোকটা মনে হয় ইচ্ছে করেই এরকম করেছিল। ভগ্নীপতি কৃষ্ণকে মোটেই দেখতে পারতো না সে, কিন্তু ভগ্নিপতি যে! তাই কায়দা করে অর্জুন ক্ষেপিয়ে দুর্যোর ওখানে গিয়ে ওদেরো ক্ষেপিয়ে গ্যালারিতে উঠে বসলো। "মর তোরা মারামারি করে, আমি ভুট্টাভাজা খেতে খেতে দেখি।" ভাবলো হয়তো।
  • avi | ***:*** | ০৬ জুন ২০১৬ ১১:৩৪55109
  • তখন কি বাদাম্ভাজা পাওয়া যেত না? (জাস্ট কিউরিয়াস)
  • Atoz | ***:*** | ০৬ জুন ২০১৬ ১১:৩৭55110
  • বাদাম? সেতো শুনি হার্মাদ থুরি থুরি পর্তুগীজেরা আনলো! ঃ-)
  • অনামী | ***:*** | ০৭ জুন ২০১৬ ০৪:১১55112
  • "উল্টোটা। পাঞ্চাল সেনাদের সাথে ছিলো পান্ডবেরা।বাকী সকলেরই রাজত্ব ছিলো,রাজ্য ছিলো। পান্ডবদের কিছুই ছিলো না । কৃষ্ণ আর শ্বশুরবাড়ী ছাড়া। "

    তাই কি dd -দা? পাঞ্চালরা থোড়ি না নিজে নিজে যুদ্ধ করতে গেছিল? এইটা ঠিক যে পাঞ্চালরা বৈবাহিক সুত্রে পান্ডবদের সাথে আবদ্ধ ছিল এবং কৃষ্ণ সখ্যতা ও আত্মীয়তা| একদিক দিয়ে দেখতে গেলে কৃষ্ণ তো দুর্যোধনের বেয়াই | শাম্বর সাথে তো দুর্যোধনের মেয়ে লক্ষণার বিয়ে হয়েছিল| পান্ডবরা যদি ধরুন বনবাসে কলেরা হয়ে বা ম্যালেরিয়া হয়ে মরে যেত, তাহলে কি আর পাঞ্চালরা বা কৃষ্ণ বা অভিমন্যুকে সামনে রেখে যুদ্ধ করত? লড়াইটা পান্ডব vs কৌরব-ই ছিল| কুরুবংশের উত্তরাধিকার নিয়ে| যদি ধরুন সয়ম্বর সভায় কর্ণকে দ্রৌপদী অপমান না করত তাহলে দ্রৌপদির সাথে হয়ত কর্ণের বিবাহ হত এবং পাঞ্চালরা তখন কুরুপক্ষে থাকতে বাধ্য হত| দ্রুপদের রাগ তো দ্রোনের উপর ছিল, ধৃতরাষ্ট্র বা কৌরবদের উপর নয়|
  • ranjan roy | ***:*** | ০৭ জুন ২০১৬ ১২:১১55111
  • এদিকে অনেক অম্বষ্ঠ আছেন। তাঁরা নিজেদের কায়স্থ বলে মনে করেন। অবশ্য শাস্ত্রানুসারে অম্বষ্ঠরা, ডিডি যেমন বলেছেন-- ব্রাহ্মণ ও বৈশ্যের অনুলোম বিবাহের সন্তান।
  • dd | ***:*** | ০৮ জুন ২০১৬ ০৩:২০55113
  • @অনামী।
    এ তো সবই ইন্টার্প্রেটেশনের ব্যাপার। ঐ সিপিএম কংরেস জোটের মতন। কে ল্যাজ কে মুন্ডু বোঝা যায় না। তাই আপনার কথাও ঠিক।

    তবে পান্ডবদের নিজস্ব সৈন্য সামন্ত কিছু তো ছিলো না। রাজ্যও কিছু ছিলো না।আর একটা বিরোধীতার চোরাস্রোত সকল সময়েই ছিলো। তাদের বনবাসের সময়ো পাঞ্চাল ও কেকয়রা পান্ডবদের সাথে দেখা করে গেছিলেন। তারপরে ধরুন সুভদ্রা অভিমন্যুর বিয়েতে যৌতুক এসেছিলো যা সেটা একটা বিশাল অস্ত্রাগার। এ রকম কিছু টুক টাক খবর, ধৃতরাষ্ট্রের দু;শ্চিন্তা ইত্যাদি মিলিয়ে বোঝা যায় একটা প্রিপেরেশন চলছিলোই। "সূত্রধার" কৃষ্ণের মাধ্যমে। আর পাঞ্চালদের স্পনসরশিপে।

    আমার আবার এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে খুব একটা উৎসাহ নেই।
  • avi | ***:*** | ১২ জুন ২০১৬ ০৫:৫৬55114
  • পরের পর্ব আসছে না। ঃ(((((
  • dd | ***:*** | ১৩ জুন ২০১৬ ০২:৪৭55115
  • এইত্তো। এলো বলে
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন