এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিবিধ

  • কুরুক্ষেত্রের শেষ প্রহর

    dd লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ০৫ মে ২০১৬ | ২২০০ বার পঠিত
  • কুরুক্ষেত্রের শেষ প্রহর

    সতেরোদিন যুদ্ধের শেষে কর্ণের মৃত্যু হলে ,অন্ততঃ সেদিনে, সাময়িক ভাবে হলেও কৌরব সেনানীদের মনোবল ভেঙে পরেছিলো। সেনারা ছুটছিলো ,পালাচ্ছিলো। আতংকিত স্ট্যাম্পিডে মারা যাচ্ছিলো মানুষ। হাতীর ধাক্কায় রথ,রথের ধাক্কায় ঘোড়া আর ঘোড়ার ধাক্কায় পদাতি চুর্ন হচ্ছিলো, আঘাত পচ্ছিলো। একা দুর্যোধন, তিনিই কুরুপক্ষের শেষ মানুষ, যিনি তখনো দাঁড়িয়ে ছিলেন। চেষ্টা করছিলেন নিজের সেনানীদের উদ্বুদ্ধ করতে।

    এবং সেই ভাঙা বিকেলে রক্তাক্ত রণভুমিতে তিনি তখনো আগ্রাসী,তখনো আক্রমনাত্মক, তখনো সংগ্রামকামী ছিলেন। সেই রণভূমিতেই তিনি স্বপক্ষীয় সেনানীদের বুঝালেন,আর ফিরবার পথ নেই। পান্ডবদের সাথে মরণপন যুদ্ধে বেঁচে পালানোর মতন নিরাপদ আশ্রয় এই ভুবনে কোথাও নেই। এই কুরুক্ষেত্রের মাটীতেই হয় যুদ্ধ জিততে হবে নয় মরতে হবে। মধ্যপন্থা আর নেই।

    এর কিছু আগে অশ্বত্থামা একবার সন্ধির প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু দুর্যোধন রাজী হন নি, বলেছিলেন দুঃশাসনের রক্তপান করে ভীম চিরকালের জন্য দুই পক্ষের সন্ধির সভাবনা ভেঙে দিয়েছেন। বৈরীতা যে খানে পৌঁছেছে সেই খান থেকে আর পিছু হটে আসা সম্ভব নয়। এইবারে কর্ণের মৃত্যুর পরে কৃপাচার্য্য এসে আবার সন্ধির প্রস্তাব দিলেন দুর্যোধনকে। অনেকক্ষন ধরে বললেন এই বৃদ্ধ অস্ত্রগুরু। তাঁর যুক্তি ছিলো যে এই যুদ্ধ আমরা হেরেই বসে আছি, আমাদের বিজয়ের কোনো সম্ভাবনাই আর নেই । পান্ডবদের সাথে কোনো রকমে একটা রফা করে ফেললে প্রাণটা অন্ততঃ বাঁচে। সুরগুরু বৃহস্পতিও এই বিধান দিয়েছিলেন যে শত্রুপক্ষের তুলনায় হীনবল বা সমানবল হলে সন্ধি প্রস্তাব করনীয়। আর আমরা এখন পান্ডবদের তুলনায় "বলবিক্রমে ন্যুন হইয়াছি"। কৃপাচার্য্য "এইরূপ কহিয়া দীর্ঘ ও উষ্ঞ নিশ্বাস পরিত্যাগপুর্বক বিমোহিত হইলেন।"

    দুর্যোধন একটু সময় নিলেন ভাবতে। তারপরে বললেন , দুই পক্ষেই অনেক বেশী ব্যক্তিগত ক্ষত ও ক্ষতি হয়ে গেছে। অর্জুন কি কখনো ভুলবেন অভিমন্যুর প্রতি আমাদের অপরাধ ? দ্রৌপদী কি ভুলবেন রাজসভায় তার অপমান ? সুতরাং যুধিষ্টির, দয়ালু ও শান্তকামী যুধিষ্টির , চাইলেও সন্ধি বজায় রাখা অতো সহজসাধ্য হবে না। আর আমিও এই "সাগরম্বরা ধরিত্রী উপভোগ করিয়াছি",আর এখন পান্ডবদের অনুগ্রহে কোনো (ছোটো) রাজ্যভোগ করতে পারবো না। আর বললেন, আপনার কথায় আমি রাগছি না,কিন্তু রাজা হিসাবে আমি আমার সমস্ত কর্তব্যই মেনে এসেছি । আমি দু;খীদের দুখ দুর করেছি, অন্যের রাজ্য দখল করেছি, নিজের রাজ্য প্রতিপালন করেছি। কীর্তিস্থাপন ছাড়া আমার আর কিছুই কাম্য নয়। আর যে সকল বীরেরা আমাদের জন্য মৃত্যুবরণ করেছে ,এখন সন্ধি স্থাপন করলে তাদের প্রতি আমি বিশ্বাসহন্তা হব। আমার থেকেই এই পরাজয় হয়েছে, অতএব আমি ক্ষত্রিয় ধর্ম অনুযায়ী, যুদ্ধেই স্বর্গলাভ করতে চাই। রাজ্যলাভে আমার আর কোনো লোভ নেই।

    তখনো তিনি রথারুঢ়, সে সময়েই কুরুপক্ষের প্রবীনের অর্থাৎ কৃপাচার্য্য,অশ্ব্ত্থামা,শকুনি,শল্য,কৃতবর্ম্মা এরা এলেন দুর্যোধনের কাছে। তাঁদের আর্জি, সেনাপতি নির্বাচন করুন।

    এই বিষয়ে পান্ডবপক্ষের সাথে কুরুপক্ষের তফাৎটা চোখে পরার মতন। পান্ডবদের সেনাপতি ছিলেন ধৃষ্টদুম্ন। সেইটাই স্বাভাবিক,কেননা যুদ্ধটা তো আসলে কুরু পাঞ্চালের। যদিও ব্যুহ নির্মান থেকে সেদিনের ট্যাকটিকাল নির্দেশ বেশীর ভাগটাই আসতো যুধিষ্ঠিরের কাছ থেকে। অর্জুন বা ভীম, এরা কেউই সেনাপতির পদ নিয়ে মোটেই মাথা ঘামাতেন না।

    দুর্যোধন প্রথমে গেলেন অশ্ব্ত্থামার কাছে। দ্রোণ নিহত হলে,কর্ণকে সেনাপ্রধান পদে নিয়োগের আগেও দুর্যোধন আগেই অশ্ব্ত্থামার অনুমতি নিয়েছিলেন। এই বার ও ব্যতিক্রম হলো না।

    রথে চড়েই দুর্যোধন গেলেন গুরুপুত্রের কাছে। অশ্বত্থামা ছিলেন খুবই হ্যান্ডসাম,("তাঁহার কিছুমাত্র অংগবৈলক্ষণ্য নাই"),তায় ছিলেন বিদ্যার সাগর, এবং রনপন্ডিত । বেদ,বেদাংগ ছাড়াও সমরবিদ্যার দশ অংগ ও চতুষ্পাদ অস্ত্র বিদ্যাও(১) এনার আয়ত্বে। দুর্যোধন সেই অশ্ব্ত্থামাকে বললেন, আপনি ই এখন আমাদের অনন্যগতি। "অতএব কাহাকে সেনাপতিপদে অভিষিক্ত করিব, আদেশ করুন।"

    দুর্যোধন ছিলেন সবিশেষ বুদ্ধিমান। কর্ণের সারথি হিসাবে শল্যকে রাজী করনো থেকে সব বিষয়েই তিনি ছিলেন বিচক্ষন বক্তা। অনেকগুলি ক্ষমতাশালী প্রধান রথীদের পরষ্পর বিরোধী ব্যক্তিত্ব সামলে সুমলে তাঁকে এই বিশাল সমরযজ্ঞ চালনা করতে হয়েছিলো।

    অশ্বত্থামা দুর্যোধনের কথা শুনে বললেন, শল্যই এই পদের উপযুক্ত। উনি নিজের ভাগ্নেদের ছেড়ে আমাদের পক্ষে যোগদান করেছেন, সেটি ও বিচার্য্য।

    নিশ্চিন্ত দুর্যোধন এইবারে আবার শল্যের কাছে উপস্থিত।এইবার তিনি রথ থেকে মাটীতে নামলেন,নেগোসিয়েশনের কোন পর্য্যায়ে পৌঁছে কেমন ভাবে বুঝিয়ে দেওয়া যায় মালিক কে, সেই সুক্ষ আচরণবিধি দুর্যোধনের আয়ত্বে ছিলো। কখন দাপটের সাথে রথে চড়েই কথা বলবেন আর কখন বা বিনম্র ভাবে মাটীতে নেমে হেঁটে আসবেন, এইসব তিনি বুঝতেন। শল্যকে বললেন "হে মিত্রবৎসল ! যে সময়ে বিদ্বান ব্যক্তিরা মিত্র ও অমিত্রের পরীক্ষা করিয়া থাকেন,এক্ষণে সেই সময় সমুপস্থিত হইয়াছে। আপনি আমাদিগের বন্ধু,অতএব এক্ষণে সেনাপতিপদে অভিষিক্ত হউন ।" শল্য কিন্তু তখনো নিজের রথেই বসে আছেন, মহাভারতকার এই ক্ষুদ্র কিন্তু তৎপর্য্যপুর্ন ডিটেইলসও বাদ দেন নি। শল্য সাগ্রহে রাজী। শ্লাঘার সাথে বললেন আরে আমি একাই ওদের হারিয়ে দেবো, আর এমনি ব্যুহ রচনা করবো যা দুর্ভেদ্য হবে। ব্যুহ রচনা সেনাপতির একটি প্রধান কাজ ছিলো বোঝাই যাচ্ছে ।

    সেই রাতেই দুর্যোধন শল্যকে সেনাপতিপদে বরণ করলেন। উজ্জীবিত কুরুপক্ষ সোৎসাহে হর্ষধ্বনি করে উঠলো। শল্য সগর্বে জানালেন, অমি ভীষ্ম,দ্রোণ ও কর্ণের থেকেও বেশী বীরত্ব দেখাবো।

    পান্ডব শিবিরে যুধ্ষ্ঠিরের কানে পৌঁছালো কুরুপক্ষের কোলাহল। কৃষ্ঞকে বললেন, তাহলে বোধহয় শল্যই সেনাপতি নির্বাচিত হলেন। "তুমি ও আমাদের সেনাপতি ও রক্ষাকর্ত্তা। এক্ষণে বিবেচনাপূর্বক যাহা কর্ত্তব্য হয়,স্থির কর।" কৃষ্ঞ আদৌ গুরুত্ব দিলেন না, বললেন ভীষ্ম,দ্রোণ আর কর্ণের মতন সাগর পাড়ি দিয়ে শল্যের মতন গোষ্পদে আবার ভয় কিসের?

    সেই রাত, মহাভারতকার লিখলেন,পরম নিশ্চিন্ত পান্ডবপক্ষ "মহা আহ্লাদে" হাতীর মতন ঘুমালেন।

    কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের অষ্টাদশ দিনের প্রভাত হল। কৌরব পক্ষে রাজা দুর্যোধন তাঁর সেনানীদের বর্ম ধারনের অনুমতি দিলেন। সেনারা আদেশ পাওয়া মাত্রই বর্ম ধারন করেই রণাংগনের দিকে ছুট দিলেন। মরাল তখনো বেশ তাজাই। সমরৎসাহ আর উদ্দীপনার জন্য নানান বাজনা বেজে উঠলো। রথিরা তার অধীনের সৈন্যদের আলাদা আলাদা করে দাঁড় করালেন (২)। এই সমেয় বেশ কয়েকটি ট্যাকটিকাল সিদ্ধান নেওয়া হল। যেমন কোনো যোদ্ধাই পান্ডবদের সাথে একা একা লড়াই করবে না, সব সময়েই কুরুপক্ষ একসাথে সন্মিলিত আক্রমণ চালাবে। "আমরা সকলে মিলিত হইয়া পরষ্পরের রক্ষাবিষয়ে সবিশেষ যত্ন করিয়া যুদ্ধ করিব।"

    তবে, বাস্তবে, এই ধরনের "সন্মিলিত আক্রমন" আদৌ ঘটেছিলো কি না বোঝা যায় না বিবরনী পড়ে ।

    প্রথমে ব্যুহ রচনা। শল্য রচনা করলেন সর্ব্বতোভদ্র ব্যুহ। একটি চতুর্ভুজ, তার মধ্যে আরেকটি চতুর্ভুজ ।।।।। এই রকম ভাবে চার,ছয় বা আটটি চতুর্ভুজের ব্যুহ। প্রতিটি স্কোয়ারের প্রতিটি বাহুতে একটি করে দ্বার, অর্থাৎ কিছুটা ফাঁকা যায়গা - যেইখান দিয়ে আক্রমনের জন্য চতুরংগ বল পাঠানো যায়। এর প্রতিব্যুহ যে পান্ডবেরা কি করলেন সেটি আর লেখা নেই। শুধু লেখা আছে পান্ডবেরা সেনাদের তিন ভাগে বিভক্ত করেছিলেন । সামরিক যুক্তিতে ভাবতে বাধা নেই যে পান্ডবেরা চেয়েছিলেন আক্রমন করতে, তাই দুই পক্ষে ছিলো দ্রুতগামী ঘোড়সওয়ার আর রথ, তুলনায় কৌরব ব্যুহ ছিলো খুবই রক্ষনাত্মক। চারদিক থেকেই শত্রু আক্রমনের ভয় থাকলে এই সর্ব্বতোভদ্র ব্যুহ স্থাপন করা হতো ।

    এই শেষদিনের যুদ্ধে ভীম আর অর্জুন ছিলেন কিছুটা নিষ্প্রভ, তুলনায় যুধিষ্ঠির ছিলেন অনেক উজ্জ্বল। শেষ রাত্রের ওস্তাদিটা তাঁরই। আর আরেকটি লক্ষ্যনীয় ঘটনা আরো তিন কর্ণ পুত্রের নিধন, তিন জনেই নকুলেরি হাতে। কর্ণবধের দিন অর্থাৎ সপ্তদশদিনে কর্ণের পাঁচ সন্তান নিহত হন। এর মধ্যে বৃষসেন ছিলেন মহারথি ও কর্ণের যোগ্যতম সন্তান। অভিমন্যু বধের জন্য যে সপ্তরথী দায়ী ছিলেন তাঁদের অন্যতম। এ ছাড়া শত্রুঞ্জয় ও নিহত হন অর্জুনের হাতে,উত্তমৌজার হাতে নিহত হন সুষেণ ও প্রসেন আর ভীমের হাতে ভীমসেন।

    নকুলের হাতে তিন কর্ণপুত্রের মৃত্যুর হয়তো একটি মহাভারতীয় যুক্তি আছে। গতদিনের যুদ্ধে কর্ণ নকুলকে নিতান্ত অসহায় পেয়েও কর্ণ তাঁকে বধ করেন নি কিন্তু যাচ্ছেতাই ভাবে অপমান করেছিলেন। হয়তো সেই প্রতিহিংসা বোধ নকুলকে সম্পৃক্ত করেছিলো।

    আজকের যুদ্ধ বিবরনী শুরুতেই এই তিন কর্ণনন্দনের মৃত্যু সংবাদ দেন মহাভারত্কার । প্রথমে লড়াই ছিলো নকুল ও চিত্রসেনের। দুজনেই সমকক্ষ ছিলেন । দুই মহাবীরই অস্ত্রবিদ্যায় নিপুন ও রথাচর্য্যাবিশারদ। “তাঁহারা পরষ্পর পরষ্পরের ছিদ্রান্বেসী ও বধসাধনে যত্নবান হইয়া তুমুল সংগ্রাম করিতে লাগিলেন।" চিত্রসেন শরাঘাতে নকুলের ঘোড়া ও সারথিকে যমালয়ে পাঠালেন, তো নকুল ঢাল তরোয়াল নিয়েই ধেয়ে এলেন। চিত্রসেনের নিক্ষিপ্ত শরজাল আটকালেন তার ঢালে আর তারপর একলাফে রথের উপর উঠে তরোয়াল দিয়ে চিত্রসেনের মাথা কেটে ফেললেন।

    এরপর পতন হবে সত্যসেনের। দ্বৈরথ যুদ্ধে নকুল এক রথশক্তি নিক্ষেপ করলে সেটি সত্যসেনের "হৃদয়াদেশ শতধা বিভিন্ন করিয়া ফেলিল"। রথশক্তি মানে রথ বহন যোগ্য শক্তি অর্থাৎ বল্লম জাতীয় অস্ত্র। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের একটি উল্লেখে পাই ঘোড়সওয়ার সেনাদের অস্ত্র ছিলো প্রাস অর্থাৎ লোহার ফলা লাগানো বাঁশের বর্শা, সেগুলি হয়তো দীর্ঘ ও ক্ষেপনীয় ছিলো না। তুলনায়, মনে হয় রথ শক্তি ছিলো ছোটো বল্লম যেগুলিকে রথে নিয়ে আসা যায় এবং হাতে ছুঁড়ে শত্রুকে আঘাত করা হতো।

    তৃতীয় পুত্র সুষেণ,তার সাথে নকুলের যুদ্ধ শুরু হলে নকুল আবার তার ঘোড়া আর সারথিকে হারালেন। সেই সময় দ্রৌপদী তনয় সুতসোম ছুটে এসে নিজের রথে নকুলকে তুলে নিয়ে যান । পাঁচ দ্রৌপদী তনয়ের মধ্যে ভীমসেনের এই ছেলেটিই একটু আলাদা ভাবে উল্লেখিত হয়েছেন। সেই রথে উঠে নকুল অন্য এক ধনুক নিয়ে যুদ্ধ শুরু করলেন, সুতসোমে সাথেই ছিলেন নিশ্চয় । কেননা সুষেণ তিন শরে নকুলকে আর কুরিটি শরে সুতসোমের "বাহুযুগল ও বক্ষঃস্থল বিদ্ধ করিলেন" । নকুল তখন অর্দ্ধচন্দ্রবাণে সুষেণের মাথা কেটে ফেললেন। কর্ণের অষ্টম পুত্রের মৃত্যু হলো। (৩)

    এদিন কুরুক্ষেত্রে এই তিন কর্নপুত্র ছাড়া যেসব কুরু বীরেরা নিহত হয়েছিলেন তারা হলেন সহদেবের হাতে শকুনি ও তার পুত্র উলুক,সাত্যকির হাতে ক্ষেমকীর্ত্তি ও শাল্ব, ভীমের হাতে দশ গান্ধারী পুত্রেরা ও সুদর্শন, এবং যুধিষ্ঠিরের হাতে শল্য ও তার অনামা ভাই।

    আর পান্ডবপক্ষের যে কয়জন নামকরা বীর আজকের যুদ্ধে মারা যাবেন তারা হচ্ছেন চেকিতান ও সুরথ। চেকিতান কেকয় রাজ ধৃষ্টকেতুর পুত্র। উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাবের চাট্টে গোত্রের জাঠেরা এখনো নিজেদেরকে চেকিতানের বংশধর বলে মনে করে। সুরথের কোনো রেফরেন্স নেই, যেমন নেই কুরুপক্ষের ক্ষেমকীর্ত্তির।

    কুরুক্ষেত্রের ভাঙাহাটে শেষ দিনের যুদ্ধে একদফা গদার লড়াই হলো শল্য আর ভীমের মধ্যে। দ্রোণপর্ব একাদশ দিনের যুদ্ধেও এই মামা ভাগ্নের এক রাউন্ড গদার লড়াই হয়েছিলো। আজকের যুদ্ধই সেদিনের যুদ্ধ বিবারণীর একেবারেই কার্বন কপি, মনে হয় পুনরিল্লিখিত হয়েছে। যুদ্ধের শুরুতে দেখি কৃতবর্মা ভীমসেনের চারটি ভালুক রঙের ঘোড়াকে বিনাশ করলেন। রথে নতুন ঘোড়া জুরলে সেই চারটি ঘোড়াও অশ্ব্ত্থামার হাতে নিতত হলে ভীম রথ থেকে নেমে গদার আঘাতে কৃতবর্মার রথ চুর্ন করলেন। আর কৃতবর্মাও "সেই ভগ্ন রথ হইতে অবতীর্ণ হইয়া পলায়ন করিলেন "।

    অতঃপর শল্য আর ভীম মুখোমুখী। ভীম লড়াইএর শুরুতেই গদার আঘাতে শল্যের চারটি ঘোড়াকে মেরে ফেললেন। রথে তীর ধনুক নিয়ে লড়াই করবার থেকে মাটীতে নেমে গদা হাতে প্রতিদ্বন্দিতায় শল্য আর ভীম দুজনেই বেশী উৎসাহী থাকতেন। দুজনে দুজনকে মন্ডালাকারে ঘুড়ে আক্রমণ করতে লাগলেন। গদায় গদায় ঠোকাঠুকিতে আগুনের ফুলকি উড়তে লাগলো। এবং আগের দিনের মতনই দুজনেই রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত হয়ে মুর্চ্ছা গেলেন। কৃপাচার্য্য ছুটে এসে অচেতন শল্যকে তার রথে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন,আর ভীম মুহুর্ত্তের মধ্যেই সংজ্ঞা ফিরে পেয়ে শল্যকে আবার যুদ্ধের জন্য ডাকতে লাগলেন।

    রণাংগনের অন্যদিকে দুর্যোধন নিহত করলেন চেকিতানকে । উল্লেখযোগ্য হলো চেকিতানের মৃত্যু হলো প্রাসের(৪) আঘাতে। প্রাস অর্থাৎ লম্বা বর্শা বা লে মুলতঃ অশ্বারোহীদের অস্ত্র ছিলো। রথারুঢ় রথিরা সচরচর শক্তি বা রথশক্তি ব্যবহার করতেন (জভেলিন)। বাকী রণাংগনে যুদ্ধ হচ্ছিলো এই ভাবে - শল্যর সাথে ছিলেন শকুনি,কৃপ ও কৃতবর্মা। এদের লক্ষ্য ছিলো যুধিষ্ঠির। অশ্বত্থামা আরো তিন হাজার রথি নিয়ে অর্জুনকে ব্যাস্ত রাখছিলেন। ধৃষ্ট্দ্যুম্নকে আটকে রাখছিলেন দুর্যোধন। কুরুপক্ষের স্ট্র্যাটেজি ছিলো অর্জুন, ভীম আর ধৃষ্টদ্যুম্নকে ব্যাস্ত রেখে শল্য আর যুধিষ্ঠিরের সংগ্রাম। এটাই কুরুপক্ষের শেষ আশা ছিল যুদ্ধ জয়ের।

    কিন্তু ,অন্ততঃএকদিনের জন্য হলেও, যুধিষ্ঠির আজ ছিলেন অন্যরূপে। সেটি ই উপযুক্ত ছিলো শুধুমাত্র কাব্যিক প্রয়োজনেই। কুরুক্ষেত্রে মাটীতে কুরুপক্ষের শেষ নায়্কের মৃত্যু যুধিষ্ঠিরের হাতে হওয়াটা জরুরী ছিলো। শল্য আর যুধিষ্ঠিরের আজ মাত্র দুই বারই লড়াই হবে।

    ইতিমধ্যে অশ্বত্থামা আর অর্জুনের দ্বৈরথ শুরু হয়ে গেছে, কিন্তু এনো দুই পক্ষের কারুরই আর মরণপন লড়াইতে মন নেই। অশ্বত্থামা দশবাণে অর্জুনকে বিঁধলে অর্জুন কিন্তু অশ্বত্থামাকে সরাসরি আক্রমণ করলেন না। তিনি "গুরুপুত্রের উপর শরনিক্ষেপ না করিয়া তাঁহার অশ্ব ও সারথিকে বিনষ্ট করিলেন এবং তৎপরে মৃদুভাবে তাঁহাকে প্রহার করিতে লাগিলেন ।"

    সেই অচল রথে বসেই অশ্বত্থামা লড়াই চালিয়ে যেতে লাগলেন। এর পরেই বিবরণীতে একটি জাম্প কাট !দেখি অশ্বত্থামা আর অর্জুনের সাথে যুদ্ধে ব্যাস্ত নন, তার দ্বৈরথ চলছে পাঞ্চালদেশীয় বীর সুরথের সংগে। অশ্ব্ত্থামার নিক্ষিপ্ত নারাচে সুরথের মৃত্যু ঘটলে অশ্বত্থামা সুরথের রথটিকেই দখল করে যুদ্ধ করতে লাগলেন। সেই সময় "ভগবান ভাষ্কর গগনমন্ডলের মধ্যস্থলে অবস্থান করিতেছেন"। ঠিক দুপুর বেলা যখন অনত্র শল্য ও যুধিষ্ঠিরের দ্বৈরথ শুরু হয়েছে ।

    ষোড়শ অধ্যায়ের নামকরন "শল্যসহ যুদ্ধে যুধিষ্ঠিরের দৃঢ়তা"। শল্য প্রথমে যুধিষ্ঠিরকে কাবু করে ভীমসেনের দিকে ধেয়ে গেলেন। তাঁর বীরত্ব দেখে কুরু পান্ডব দুই পক্ষই মদ্ররাজকে ধন্যবাদ দিতে লাগলো। এই ধরনের শিভালরী ও শত্রু মিত্র নিরপেক্ষ ভাবে প্রসংশা সেই সময়ের ভব্যতার মধ্যেই পরতো।

    যুধিষ্ঠির তার ভাইদের ও বাসুদেবকে ডেকে বললেন, আজকের দিন আমার। শল্যের সাথে লড়াই ও আমার। যুদ্ধে জিতি বা মৃত্যু হ্ক, ক্ষত্রিয় ধর্ম মেনে আজ মামা শল্যের সাথে লড়াই হোক আমার। আরো বললেন শল্য ও আমার, দুজনেরই অস্ত্র সমান সমান। "রথযোজকগন শাস্ত্রানুসারে আমার রথে সমুদয় উপকরণ সংস্থাপিত করুন" । চাইলেন সাত্যকি দক্ষিনচক্র আর ধৃষ্টদ্যুম্ন বামচক্র রক্ষা করুক(এর আগে নকুল আর সহদেব ছিলেন যুধ্হিষ্ঠিরের পার্শ্বরক্ষক), অর্জুন থাকুন আমার পিছনে আর "মহাধনুর্ধর ভীমসেন" থাকুন আমার সামনে, "তাহা হইলেই আম মদ্ররাজ অপেক্ষা সমধিক বলশালী হইব।"

    শল্য আর যুধিষ্ঠিরের সংঘর্ষ হবে দুই বার। যেনো প্রচলিত স্ক্রিপ্ট মেনে ফার্স্ট রাউন্ডে যুধিষ্ঠিরই কাবু হলেন। যুধিষ্ঠির শল্যের দুই চক্ররক্ষক, চন্দ্রসেন আর দ্রুমসেনকে "বিনাশ করিলেন"। কিন্তু নিজে শল্য পরাক্রমে "নিতান্ত নিপীড়িত হইয়া পুরন্দর বিদলিত জম্ভাসুরের ন্যায় হতপরাক্রম হইলেন" (৫)

    যুধিষ্ঠিরকে নিপীড়িত দেখে ছুটে এলেন নকুল,সহদেব ,সাত্যকি আর ভীম। তারা শল্যকে ঘিরে ধরে শরবর্ষণ করে যেতে লাগলেন, শল্য একাই এতোগুলি মহারথির মোকাবিলা করতে থাকলেন। সে সময়ে শল্য একটানা শরবিদ্ধ হয়ে "গৈরিকধাতুধারাস্রাবী অচলের ন্যায় শোণিতধার ক্ষরণ করিতে লাগিলেন"। ভীমসেন নারাচ,নকুল শক্তি,সহদেব গদা ও যুধিশ্ঠির শতঘ্নী (৬) প্রয়োগ করে শল্যকে সংহারের প্রচেষ্টা করলেন।

    এরপর কৃপ যুধিষ্ঠিরের সারথির শিরশ্ছেদন করলেন,আর তার চারটি ঘোড়াও মারা পরলো শল্যের হাতে। পাল্টা আক্রমনে ভীম শল্যের সারথি আর চার ঘোড়াকে হত্যা করলেন।অবশেষে যুধিষ্ঠির এই সময়ে এক শক্তি নিক্ষেপ করে শল্যের প্রাণসংহার করলেন। "তখন মদ্ররাজ নাসা, চক্ষু,কর্ণ ও আস্যদেশ হইতে বিনিঃসৃত রুধিরধারায় সংসিক্ত কলেবর হইয়া ।।।।।। বাহু প্রসারণপুর্বক কুলিশদলিত অচলশিখরের ন্যায় ।।।।। ভুতলে নিপতিত হইলেন। বোধ হইতে লাগিল যেন,বসুন্ধরা প্রিয়তম পতির ন্যায় প্রায়্পুর্বক তাঁহাকে প্রত্যুদগমন ও আলিংগন করিতেছে। তিনি যেন বসুন্ধরাকে প্রিয়তমা পত্নীর ন্যায় বহুকাল উপভোগ করিয়া তাঁহাকে গঢ় আলিঙ্গন পুর্বক সুষপ্তি লাভ করিলেন।"

    এটিই বোধহয় মহাভারতের কোনো মহানায়কের মৃত্যুর সবথেকে মর্মস্পর্শী বর্ণনা।

    প্রথম দিকের যুদ্ধের বর্ননায় ভাষার যে জৌলুশ ছিলো সেটা যেনো এই অন্তিম দিনের বিবরণীতে অনেকটা নিষ্প্রভ। বরং শল্যের মৃত্যু বর্ননায় যে কবিত্ব দেখা গেছে সেই করুনরস পুর্বে এতো মরমী ছিলো না।

    যুধিষ্ঠির কিন্তু থামেন নি। এরপরেও তিনি শল্যের এক অনামা ভাইকে ভল্লাস্ত্রে মাথা কেটে ফেললেন। ঐ সময়ে সাত্যকি ও কৃতবর্মাকে রথ ও সারথিশুন্য করে ফেলেছিলেন। শল্য নিহত হওয়ার আগেই কুরু সেনানীরা যথেষ্ট ভীত ছিলেন, কৃতবর্মাকে পরাজিত দেখে এবার তারা পালাতে শুরু করলেন। দুর্যোধন প্রায় একাকীই লড়াই চালিয়ে যেতে লাগলেন। তিনি নিজে রথ ছেড়ে এইবার হাতীর পিঠে উঠলেন, যাতে তিনি শত্রু মিত্র সকলের কাছে আরো দৃশ্যমান হন।

    এই সময়ে দেখি এক অদ্ভুত ঘটনা, শল্য নিহত হলে তার অনুচর অন্যান্য মদ্র বীরেরা যেনো ক্ষেপে গিয়ে প্রতি আক্রমণ শুরু করলে, সেই সুইসাইডিয়াল লড়াই ঠেকাতে দুর্যোধন তাঁদের বারংবার নিষেধ করছিলেন, কিন্তু মদ্রেরা তার কথা আর শুনছিলেন না। তাঁদের প্রিয় মহারাজের মৃত্যু তাদেরকে উন্মাদ করে দিয়েছিলো। রণাংগনের অন্যপ্রান্তে অর্জুন খবর পেলেন যে শল্য নিহত হয়েছেন ও অবশিষ্ট মদ্রকেরা যুধিষ্ঠিরের প্রতি ধাবমান হয়েছে, তিনিও দ্রুত রথ চালিয়ে মদ্রকদের সন্মুখীন হলেন। "ঐ সময়ে মহারথ মদ্রকগন পান্ডবসেনাগনকে পুনরয় আলোড়িত করিয়া ' রাজা যুধিষ্ঠির ও তাঁহার ভ্রাতৃগন কোথায়?'এই বলিয়া চিৎকার করিতে লাগিল। যদিও সন্মিলিত পান্ডবগনের আক্রমনে মদ্রকেরা দলে দলে প্রাণ হারাচ্ছিলেন তবুও অবশিষ্ট মদ্রকেরা হাল ছাড়লেন না। এই সময় দুর্যোধন তাঁদের স্বান্তনা করিয়া" বারংবার নিবারণ করিতে লাগিলেন; কিন্তু তাঁহারা কোনোক্রমেই তাঁহার শাসন রক্ষা করিল না।"

    বাধ্য হয়ে শকুনি তখন ইন্টারফেয়ার করলেন। দুর্যোধনকে বললেন, এ কি কথা? আমরাতো সকালেই ঠিক করেছিলাম যে আমরা কেউ আলাদা আলাদা হয়ে লড়াই করব না ? আর এই মদ্রকেরা যখন এই রকম আক্রমণ চালাচ্ছে তখন আপনি দিব্বি নিশ্চিন্ত হয়ে বসে আছেন ?" দুর্যোধন বললেন, আমি বারবার নিষেধ করা স্বত্ত্বেও এরা পান্ডবদেরকে আক্রমণ করে যাচ্চে, আমাকে গ্রাহ্যই করছে না। তো, আমার দোষটা কোথায় ?"

    শকুনি তার ভাগ্নেকে বুঝিয়ে বললেন, যোদ্ধার যখন নিতান্ত ক্রুদ্ধ হয়ে লড়াই করে তখন তারা কারুর কথাতেই কান দেয় না। "অতএব তুমি কোপ সংবরন করো। এক্ষনে উপেক্ষা করিবার সময় নহে।" চলো, আমরা সর্বশক্তি দিয়ে মদ্রকদের সাহায্য করি।

    কেনো দুর্যোধন চাইছিলেন যে মদ্রকেরা এইরকম মরণপন সংগ্রাম থেকে বিরত থাকুক ? হয়তো তিনি তার অবশিষ্ট সেনানীদের একত্র করে রিগ্রুপিংএর চেষ্টা করছিলেন। অধিনায়ক হিসাবে বুঝতে পারছিলেন ঐ ধরণের বিচ্ছিন্ন ভাবে একক সংঘর্ষে লোক দেখানো বীরত্ব যতোই না কেনো ক্ষাত্ররসে উদ্বুদ্ধ থাকুক, আখেরে ফললাভ হয় না।তুলনা করা যেতেই পারে জাপানী জেনারেল কুরিবয়সি, যিনি ইয়ো জিমার যুদ্ধে তার সেনানীদের এইরকম অবধারিত মৃত্যুকামী বানজাই আক্রমন করতে নিষেধ করে দিয়েছিলেন। যুদ্ধের শেষ দিকে তার অনুশাসন ঢিলে হয়ে আসলে অবশিষ্ট জাপানী সেনারা কুরিবয়সীর নির্দেশ অমান্য করে আত্মঘাতী আক্রমন করেন ও দলে দলে বিফল মৃত্যুবরন করেন। যাহোক, তিনি শকুনির কথা শুনে আবার ঝাঁপিয়ে পরলেন, এবং প্রথম দিকে কুরুসেনারা প্রদীপ নিববার আগে একবার জ্বলে উঠবার মতন উদ্দীপ্ত হলেও শেষটায় আরো ছত্রভংগ হয়ে পরলেন।

    সঞ্জয় বলিলেন হে মহারাজ ! নিতান্ত দুর্রধষ মহারথ মদ্রনাথ নিপাতিত হওয়াতে অপনার পক্ষীয় বীরবর্গ ও আপনার পুত্রগন প্রায় সকলেই সমরে পরান্মুখ হইলেন। অগাধ সাগরে নৌকা ভগ্ন হইলে বণিকেরা যেমন পারলাভের প্রত্যাশা করে,তদ্রুপ তাহারা মদ্ররাজের নিধনান্তর আশ্রয়লাভের অভিলাষ করিতে লাগিলেন। অনন্তর আমরা সকলেই সেই মধ্যাহ্নকালে শরনিকরে ক্ষতবিক্ষত,,নিতান্ত ভীত ও পরাজিত হইয়া, সিংহনিপীড়িত মৃগযুথের ন্যয়, ভগ্নশৃংগ বৃষভের ন্যায়, শীর্ণদন্ত মাতংগের ন্যায় প্রতিনিবৃত্ত হইলাম। তৎকালে কোন যোদ্ধাই সৈন্যসন্দ্ধান ও বিক্রম প্রকাশে সাহসী হইলেন না। ।।।।।।। তাঁহারা জয়লাভে এককালে নিরাশ হইয়া ক্ষতবিক্ষত কলেবরে ভীতচিত্তে কেহ কেহ অশ্বে,কেহ কেহ গজে,কেহ কেহ রথে ও কেহ কেহ বা পাদচারে মহাবেগে পলায়ন করিতে লাগিলেন।"

    না, যুদ্ধ তখনো শেষ হয় নি। সবে তো দুপুর হয়েছে,আরো কয়েক ঘন্টা দিনের আলো থাকবে। দুর্যোধন আবার চেষ্টা করলেন ভীত সেনাদের রণংগনে ফিরিয়ে আনবার। আর অল্প কয়জনই রথী তখনো বেঁচে। ম্লেচ্ছদের রাজা শাল্ব শেষ লড়াই করতে এলেন হাতীর পিঠে চড়ে। ধৃষ্টদ্যুম্নের নারাচে আহত হয়ে সেই গজরাজ পালিয়ে যেতে চাইলে শাল্ব ডাঙসের বারি মেরে হাতীটিকে আবার ফিরিয়ে আনলেন। এইবারে সেই হাতী ধৃষ্টদ্যম্নের রথ সারথি ও ঘোড়াগুলিকে আছাড় মেরে চুর্ণ করলো। পান্ডবেরা সদলে সেই হাতীটিকে ঘিড়ে ধরে শরবর্ষণ করতে শুরু করলো। আহত হাতীটিকে ধৃষ্টদ্যুম্ন গদার আঘাতে নিহত করলেন আর সাত্যকিও নিশিত ভল্লে শাল্বের শিরশ্ছেদন করলে,হাতী আর তার আরোহী দুজনেই ধরশায়ী হলেন। সাত্যকির হাতে মারা গেলেন কুরুপক্ষের ক্ষেমকীর্তি ও।

    শুধু যে যোদ্ধারাই রণক্লান্ত ছিলেন তা নয়, মনে হয় সঞ্জয় নিজেও আর এই রক্তক্ষয়ী ভ্রাতৃঘাতী সংগ্রামের বীররসাশ্রয়ী বিবরণে আর উৎসাহ পাচ্ছিলেন না । শেষ দিনের ধারা বিবরণীতে যেনো পালা শেষের করুণ রসই বেশী।
    আর মাত্র কয়েকটি অধ্যায় জুড়ে শেষ লড়াইর কথা সঞ্জয় বলেছেন। তবে সেখানে পার্রম্পয্যের অভাব রয়েছে।

    মনে হয় মাত্র কয়েকজন রথিই শেষ পর্যন্ত্য যুদ্ধ চালাচ্ছিলেন। সঞ্জয় উবাচ "হে মহারাজ!ঐ সময় কেবল মহারাজ দুর্যোধন একাকী সমরভুমি পরিত্যাগ করিলেন না।" কিন্তু তখনো কৃপ, কৃতবর্মা, শকুনি, এরা স্বস্থানেই ছিলেন।

    দিশা হারা কুরুপক্ষের বিবরণে সঞ্জয় নিজেও কিছুটা অগোছলো হয়ে পরেছিলেন।

    যা হোক,লড়াই তখনো চলছিলো। শকুনির সাথে ছিলো প্রাসধারী দশ হাজার অশ্বারোহী। উল্লেখযোগ্য অশ্বারোহী বাহিনীর প্রাস অস্ত্র নিয়ে মহাভারতের এটি ই একমাত্র উল্লেখ। আর সেই আক্রমণে পান্ডবসেনার জোর হাওয়ার মুখে মেঘের মতন ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেলো। যুধিষ্ঠির তখন সহদেবকে আদেশ করলেন শকুনি ও তার সেনানীদের প্রতিহত করতে। শকুনি তখন পান্ডবদের পিছন দিকে আক্রমণ করছিলে আর তার অশ্বারোহী প্রাসধারী সেনারা ছিলো পান্ডবদের সামনে। সহদেবের অধীনের অশ্বারোহী সেনারা রথের ব্যুহ ভেদ করে শকুনির অশ্বারোহী বাহিনীকে আক্রমন করলেন "অনবরত শরবর্ষণ" করে।

    সে সময়ে দুই ক্যাভালরী বাহিনীর লড়াইতে কুরুক্ষেত্র ধুলি ধূসরিত হয়ে গেছিলো । পান্ডবপক্ষের অশ্বারোহীরা দেখলেন এতো সংকুল এবং ক্লোজ ফাইটিং চলছে যে "এখানে মহাগজের কথা দূরে থাকুক, রথ লইয়া যুদ্ধ করাও সাধ্যায়্ত্ব নহে"। শকুনি তখন স্বপক্ষীয় সেনাদের মধ্যেই "লুকিয়ে ছিলেন"।

    ঘোর যুদ্ধ চলছিলো মুলতঃ অশ্বারোহী ও পদাতি সেনাদের মধ্যে। হাতাহাতি লড়াই চলছিলো, তাই অস্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছিলো শূল,অসি ও পট্টিশের (৭) মাধ্যমে। পান্ডবপক্ষের বীররা তখন শকুনিকে সম্পুর্ণ ভাবে ঘিড়ে ফেলেছিলেন, তার আর পালিয়ে যাওয়ার পথ অবশিষ্ট ছিলো না।

    দুর্যোধনের শেষ লড়াই হলো ধৃষ্টদ্যুম্নের সাথে। দু জনেই দুজনের রথ ভগ্ন ও সারথি ও ঘোড়াদের নিহত করলেন। ঘোড়ার পিঠ চড়ে দুর্যোধন দ্রুত শকুনির কাছে পৌছে গেলেন। এই সময়ে কৌরবদের রথ প্রায় সব গুলিই চুর্ণ হয়েছিলো,তারা তখন হাতীর পিঠে চড়ে পান্ডবদের আক্রমণ করলেন। (৮)

    কুরুপক্ষের অন্যান্য বীরেরা,অশ্বত্থামা,কৃপ,কৃতবর্মা, এঁরা তখন দুর্যোধনকে আর দেখতে পাচ্ছিলেন না। তারা শংকিত চিত্তে "মহারাজ কোথায় গেলেন?" বলে চিৎকার করতে লাগলেন। তারা ভাবলেন কুরুরাজ নিশ্চয়ই নিহত হয়েছেন। "তখন কোন কোন যোদ্ধা তঁহাদের বাক্য শ্রবণ করিয়া কহিলেন "দুর্যোধনের সারথি বিনষ্ট হওয়াতে তিনি শকুনির নিকট গমন করিয়ছেন।"অন্যান্য ক্ষতবিক্ষত ক্ষত্রিয়গন কহিলেন; "দুর্যোধনকে লইয়া আমাদিগের আর কি কার্য্য সাধন হইবে?" বোঝাই যাচ্ছে তখন আর কুরুপক্ষের আর সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার মতন মনোবল নেই।

    এর আগে অর্জুন একবার কুরুপক্ষের খ্যাতনামা নিহতদের রোলকল করছিলেন, স্মরণ করিয়ে দেই সেই দীর্ঘ সারনি। ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণ,শল্য শাল্ব তো বটেই ও আট কর্ণপুত্র,শ্রুতায়ু, জলসন্দ্ধ, শ্রুতায়ুধ, বিন্দ,অনুবিন্দ, জয়দ্রথ,অলায়ুধ (বক রাক্ষসের ভাই),বাহ্লীক, (ব্যাকট্রিয়া বা বাল্খ নিবাসী উত্তর পুর্ব ইরানীয়ান বিদেশী জাতি। এদের রাজা ছিলেন সোমদত্তের পিতা ও ভুরিশ্রবার পিতামহ), সোমদত্ত, ভগদত্ত ,সুদক্ষিণ। গান্ধারীর পুত্রদের মধ্যে দুর্যোধন ছাড়া আর মাত্র বারো জন বেঁচে ছিলেন, দুর্রমষণ, শ্রুতন্ত, জৈত্র, ভুরিবল, রবি,জয়ৎসেন, সুজাত, দুর্ব্বিসহ,অরিহা, দুর্ব্বিমোচন,দুষ্প্রধর্ষ ও শ্রতর্ব্বা। এই শেষ দিনের যুদ্ধের শেষ সময়ে ভীমের হাতে এঁদের সকলেরই মৃত্যু হলো।

    তবে গান্ধারীর নিরানব্বইতম পুত্র যিনি আজ ভীমের হাতে নিহত হবেন সেই শ্রতর্ব্বা কিছুটা হলেও সমানে সমানে লড়েছিলেন। শ্রুতর্ব্বার বাণে ভীমের বুক ও হাত বিদ্ধ হলে তিনি " পর্ব্ব কলীন সাগরের ন্যয় নিতান্ত অস্থির হইলেন", এরপরে ভীমের বাণে শ্রুতর্ব্বার ঘোড়াও সারথি হত হলে তিনি খড়্গ চর্ম্ম গ্রহন করলেন। ভীম এবার ক্ষুরপ্র বাণে তার শিরশ্ছেদন করলেন।(৯)

    এইবার কৃষ্ঞ তার এই কুরুক্ষেত্রের রণাংগনে শেষ ট্যাকটিকাল উপদেশ দিলেন। অর্জুনকে বললেন আর বৃথা সেনানীদের প্রাণহরণ করো । দেখি,দুর্যোধন এখন অশ্বারোহী সেনাদের প্রতিরক্ষায় রয়েছেন ( রথ হয়তো কুরুপক্ষে প্রায় নিঃশেষ হয়ে এসেছিলো),আর তার কাছে কৃপ,কৃতবর্ম্মা,অশ্বত্থামা কেউ নেই। যাও, কাউকে দিয়ে খবর পাঠিয়ে ধৃষ্ট্দ্যুম্নকে নিয়ে আসো। এখনই আমারা সদলে ওকে আক্রমন করি। যেন দুর্যোধন না পালাতে পারে। বাসুদেব অনুমান করতে কি পেরেছিলেন যে দুর্যোধন রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যওয়ার পরিকল্পনা করছেন? অথচ এই দুর্যোধনই নিজের সেনাদের বার বার বলেছিলেন, কেউ পালিও না। ক্ষত্রিয় জাতির পক্ষে এর থেকে শ্রেয় মৃত্যু আর কিছু নেই ।

    দুর্যোধনের নিজেরও আর রথ নেই। কুরুক্ষেত্রে তার শেষ লড়াই ঘোড়ার পিঠে চড়ে। সে সময়ে দুর্যোধনের হাতে অস্ত্র ছিলো প্রাস। সেই প্রাস দিয়ে তিনি নকুলের মথায় গুরুতর জখম করে দিলেন।

    শেষ বড় দ্বৈরথ উলুক ও সহদেবের মধ্যে, এবং এর পরে হবে সহদেবের সাথে শকুনির।
    যুদ্ধের শেষ দিনে যেন হঠাৎ করে প্রাসের জনপ্রিয়তা বেড়ে গেছিলো ! কেন না দেখি শকুনি ঐ প্রাস দিয়েই সহদেবকে আঘাত করে বিহ্বল করে দিয়েছিলেন। সংজ্ঞা ফিরে পেয়ে সহদেব এক ভল্লাস্ত্রে উলুকের মস্তক ছেদন করে ফেললেন। স্বীয় পুত্রের মৃত্যু দর্শনে শোকাচ্ছন্ন শকুনি সহদেবের সাথে লড়াই শুরু করলেন। শকুনির শরাসন ছিন্ন হলে তিনি একটি তরোয়াল ছুঁড়ে মারলেন,সেটি বিফলে গেলে একটি গদা ও সেটিও বিফলে গেলে একটি শক্তি নিক্ষেপ করলেন সহদেবের উপর। অপ্রতিরোধ্য সহদেবের তীরে সে সবই ছিন্নভিন্ন হলে, শকুনি অবশিষ্ট গান্ধার অশ্বারোহীদের সাথে নিয়ে স্রেফ পালাতে শুরু করলেন। সহদেব ধেয়ে গিয়ে তাকে বললেন, "ক্ষত্রিয় ধর্ম্মানুসারে স্থির হইয়া যুদ্ধ কর"।

    সহদেবের শরাঘাতে নিতান্ত আহত হয়ে শকুনি এক প্রাস নিয়ে তেড়ে লেন। সহদেব তিন ভল্লে শকুনির দুই হাত কেটে ফেলে অবশেষে আর লৌহময় ভল্লে শকুনিক ছিন্ন মস্তক করে তার প্রাণ সংহার করলেন।

    কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ এইখানেই শেষ। কোথায় গেলেন কৃপ,কৃতবর্মা আর অশ্বত্থামা?যেমন সিনেমায় ফেড আউট হয় সেই ভাবেই কুরুপক্ষের অবশিষ্ট বীরেরা ও রাজা দুর্যোধন,রণক্ষেত্র থেকে ধীরে অপসারিত হলেন। সঞ্জয় ও বোধহয় এই লজ্জাষ্কর ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি করেন নি।

    আঠারোদিনের সংগ্রাম শেষ হলো। কুরুক্ষেত্রের মহারণ সমাপ্ত হলেও মহাভারতের যুদ্ধ কিন্তু আরো চলবে। দ্বৈপায়ন হ্রদের ধারে ভগ্নউরু দুর্যোধন একাকী পরে থাকবেন। অন্য কুরুবীরা আসবেন, কিন্তু মৃত্যুপথযাত্রী নৃপতিকে একাকী রেখে তারাও পথ ধরবেন। গভীর রাতে শিবিরে তষ্করের মতন ঢুকে পান্ডবদের হত্যা করবেন তারা।
    মৃত্যুর মিছিল চলবেই। শেষ হবে যদুবংশ। এক ব্যাধের সামান্য তীরে প্রান যাবে কৃষ্নের। আর আরেকদিন অর্জুনের শিথিল হাত থেকে খসে পরবে গান্ডীব।

    শেষতম মিছিল যাবে মহাপ্রস্থানের পথে,স্বর্গদ্বারে যুধিষ্ঠিরের সাথে তার স্ত্রী বা সর্বক্ষনের সংগী কোন ভাই আর নেই। সেই একক যাত্রায় শেষ হবে মহাভারত।

    (১) যুদ্ধের দশ অংগ, যথাক্রমে সংযম, জাগরণ, ধৈর্য,পুষ্টি,স্মৃতি,বাণক্ষেপনাদি নিপুনতা, শত্রুভেদন, চিকিৎসা,কার্য্যে উদ্দীপনা ও বিবিধ বিজ্ঞান। লক্ষ্যনীয় যে অস্ত্র নিপুনতা মাত্র একটি বিষয়, নাকী নটি শারীরিক, মানসিক, মনস্তাত্ত্বিক ও বৌদ্ধিক বিষয়।
    চতুষ্পাদ অস্ত্রবিদ্যা - দীক্ষা,শিক্ষা,আত্নরক্ষা ও সাধন সম্পন্নতা। এই গুলি নিজে শিখতে হবে ও অপরকে শেখানোর ক্ষমতাও অর্জন করা চাই।

    (২) ব্যুহে সৈন্য সংস্থাপনে কৌটিল্য খুব খুঁটিয়ে বর্ননা দিয়েছেন । একটি উদাহরণ ,"পদাতির শ্রেণীতে পরষ্পর ব্যবধান থাকিবে ১ শম (প্রায় দশ ইঞ্চি),অশ্বের শ্রেণীতে ৩ শম,রথের শ্রেণীতে ৪ শম ও গজশ্রেণীতে ৮ শম" মানে প্রায় সাত ফিটের ব্যবধান। বেশ ঘেঁষাঘেষি করেই চতুরংগবল দাঁড়াতো।

    (৩)কর্ণের তিনটি স্ত্রী ছিল এবং নটি পুত্র। নাম গুলি সব সময় একই থাকতো না। বা হতে পারে তাদের একাধিক নাম ছিলো। ভীষ্মপর্বেও উল্লেখ আছে অংগাধিপতি কর্ণপুত্র বৃষকেতুর, কিন্তু এরপরে আর তার খোঁজ পাওয়া যায় না।

    (৪) প্রাস প্রায় দুই মানুষ দীর্ঘ, বাঁশের দ্ন্ড ও লোহার তীক্ষন ফলক। ব্যবহারের নিয়ম চার প্রকার,আকর্ষণ,বিকর্ষণ,ধুনন (অর্থাৎ ইতঃস্তত পরিচালন) ও পশ্চাৎ বিদ্ধকরণ।

    (৫) মহাভারতের দ্বৈরথ যুদ্ধে পরাক্রমের তুলনায় ইন্দ্র আর তার বধ্য রাক্ষস ও অসুরদের কথা বহুবার এসেছে। জম্ভাসুরের কথা আছে শ্রীমদভাগবতে।

    (৬) হয়তো শতঘ্নী নামে একাধিক অস্ত্র ছিলো। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে যে বিবরণ পাওয়া যায় তাতে সেটি একটি অচল যন্ত্র, দুর্গপ্রাকারের প্রতিরক্ষার অস্ত্র। টীকাকার লিখেছেন "বহু লৌহ কন্টক সমাচ্ছন্ন বৃহৎ স্তম্ভ দুর্গপ্রকারে স্থাপিত হয়"। বৈজয়ন্তকোষ(১২ খ্রীষ শতাব্দীর আগে) ও সেরকমই লেখা আছে। শব্দকল্পদ্রুমে "অয়ঃকন্টকসংছন্না মহাশিলা।" রামায়ণেও একই বর্ননা আছে। কয়েকটি দেবীমুর্ত্তির হাতেও শতঘ্নী অস্ত্রের উল্লেখ রয়েছে। সেটি বোধহয় বৃহদাকার, অচল এবং ছোটো ও ক্ষেপনীয়, দুই ধরনেরই হত।

    (৭) পট্টিশ প্রায় মানুষ প্রমান তরবারী, দুই ধিকে ধারালো ও সুচাগ্র । দুই হাতে ধরতে হতো। বর্মাবৃত শত্রুর মোকাবিলায় এই ধরনের ভারী তরোয়াল উপযুক্ত ছিলো। তুলনীয় মধ্যযুগের ইওরোপীয়ান ব্রড সোর্ড বা লং সোর্ড।

    (৮) পান্ডবদের তুলনায় কুরুপক্ষের হাতীর উপর নির্ভরতা বেশী ছিলো। প্রাগজ্যোত্ষপুরের ভ্গদত্ত ছাড়াও কুরু পক্ষে ছিলো অংগ,বংগ,কলিংগ ও মগধের রাজারা। বিশেষ্তঃ অংগ,বংগ,পুন্ড্রের যোদ্ধারা রণহস্তী অনেক বেশী ব্যবহার করেছিলেন। এইদিন, অল্প কিছুক্ষনের জন্য হলেও দুর্যোধন নিজেও হাতীর পিঠে চড়ে কিছুক্ষন লড়াই করেছিলেন।

    (৯)মহাভারতের জেনারেশন নেকস্ট একটি বিস্ময়। এতো এতো রথী মহারথী,কিন্তু পরবর্তী প্রজন্মের খুব অল্প সংখ্যকই সফল যোদ্ধা ছিলেন।পান্ডবপক্ষে প্রথম সাড়িতে অবশ্যই অভিমন্যু এবং ঘটোৎকচ। কিছুটা নামকরা বলতে ইরাবাণ। দ্রৌপদীর পাঁচ পুত্র বেশীর ভাগ সময়েই একই সাথে উল্লেখিত হয়েছেন, যেনো পাঁচ জনের কারুরই আলাদা আইডেনটিটি নেই। তবু ওরই মধ্যে ভীমের ছেলে সুতসোম কয়েক ক্ষেত্রে অনারেবল মেনশন পেয়েছেন বিরাট রাজার ছেলে উত্তর,যুদ্ধের প্রথমেই শল্যের হাতে নিহত হন। কোথায় গেলেন সাত্যকি,ধৃষ্টদ্যুম্নের ছেলেরা? শুধুই ক্যানন ফোডার? পান্ডবদের কি আরো ছেলে ছিলো না? যুধিষ্ঠিরের দ্বিতীয় স্ত্রীর ?

    কুরুপক্ষে দুর্যোধনের ছেলে লক্ষণ বীর ছিলেন,আর কর্ণের আট ছেলের নাম আলাদা ভাবে উল্লেখিত হলেও নামকরা ছিলেন বৃষসেন। দুঃশাসন তনয়ের নাম মূল মহাভারতে কোথাও নেই, ইনি বীর ছিলেন এবং মুখোমুখী লড়াইতে অভিমন্যুকে বধ করেন । কিন্তু মহাভারত্কার এতোই একপেশে এর নামটিও উচ্চারিত হয় নি। আগাগোড়াই "দুঃশাসন তনয়" বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নামের ব্যাপারে এরকম স্পর্শকাতরতা আর কোথাও নেই। বাকী ৯৮জন কুরুপুত্রের কি একটি নামকরা যোদ্ধা ছেলে ছিলো না? ছিলো না শল্য,শাল্ব,অশ্বত্থামার? বাকী রথীদের?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ০৫ মে ২০১৬ | ২২০০ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    চম - dd
    আরও পড়ুন
    ও শানওয়ালা - dd
    আরও পড়ুন
    দ্রোণ পর্ব - dd
    আরও পড়ুন
    কর্ণসংহার - dd
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ranjan roy | ***:*** | ০৬ মে ২০১৬ ০২:৫০53747
  • একই কথা! চলুক। চলুক।
  • sosen | ***:*** | ০৬ মে ২০১৬ ০৩:০৯53748
  • লেখার নাম ডিডি কেন
  • dd | ***:*** | ০৬ মে ২০১৬ ০৪:৩০53749
  • আরে ছ্যা ছ্যা।

    এই সব কম্পিউটারবাজী কিছুতেই মকশো করতে পারছি না। কী করে কেজানে লেখার নাম ও dd হয়ে গ্যাছে। আর আমি অন্য একটা ফন্টে লিখেছিলাম শেষটা - সেটাও কীরকম এবরো খেবরো হয়ে গেছে কপিপেস্টের সময়।

    এটা জিজ্ঞাস্য - আবার মুছে দিয়ে রিরাইট করা যায় ?
  • Ekak | ***:*** | ০৬ মে ২০১৬ ০৪:৫৭53750
  • দুর্দান্ত ডিটেইল ! একটা জায়গায় বারবার খটকা লাগে আমার । ডিডি দা এগুলো মন দিয়ে ভাবেন তাই জিগাচ্ছি আর কি । দেখবেন অনেক ক্ষেত্রেই লেখা থাকে অমুক অস্ত্র কে তমুক শর বা বান দিয়ে ছিন্ন করলেন । এইটা কিভাবে সর্বদা পসিবল । একটা মোমেন্টাম এর ব্যাপার আছে । মাস ইনটু ভেলোসিটি । যত দ্রুতশালী তীর হোকনা কেন তার মাস কম । তার পক্ষে দামড়া গোছের কোনো অস্ত্র কে ছিন্ন করা সম্ভব না । একটু মোমেন্টাম দিয়ে ভেবে দেখুন কোন অস্ত্র দিয়ে কি প্রতিরোধ করা হচ্ছে । কোথাও কোথাও গলতা আছে মনে হয় ।
  • dd | ***:*** | ০৬ মে ২০১৬ ০৫:৩৯53751
  • হ্যাঁ তো। সব সময়েই হয়েছে। কুঠার গদা বল্লম তরোয়াল যা কিছু ছুঁড়ে মারা হয়েছে সেগুলি সব সময়েই তীর দিয়ে ছিন্ন করা হয়েছে - অ্যাকরডিং টু মহাভারত। এটা একেবারে ইম্পসিবল ঘটনা। অথচ বহু বহু উল্লেখ আছে।

    ধনুর্ধারীদের খামোখা ইম্পরট্যান্স দেওয়া ছাড়া আর কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে ?

    আরো হচ্ছে রামায়ণের যুদ্ধ পদ্ধতি আর তার সাথে মহাভারতের বা অন্য পুরাণ বা হরিবংশের যুদ্ধ পদ্ধতি আর অস্ত্রেরো রকমফের আছে। প্রত্যেকটাই আলাদা।

    যাস্ট ওয়ান একজাম্পল। ভল্ল। মহাভারতের সব থেকে ইম্পর্ট্যান্ট আর এফেকটিভ অস্ত্র । সব থেকে বেশী লোক প্রাণ হারিয়েছে এই ভল্লে বা ভল্লাস্ত্রে।কিন্তু পরিষ্কার করে লেখা নেই ব্যাপারটা কী। এক যায়গায়ই মাত্র উল্লেখ আছে ধনুকে করে নিক্ষেপ হতো।

    সেটা বাদ দিলেও ভল্লকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। না পুরাতনী সাহিত্যে না কোনো পুরাণে। না কোনো দেব দেবীর হাতে।
  • b | ***:*** | ০৬ মে ২০১৬ ০৫:৫২53752
  • বিহারে "ভালা" বলে যাকে সেটা বর্শা টাইপেরঃ কাঠের দন্ডের আগে লোহার ফলক লাগানো।
  • Ekak | ***:*** | ০৬ মে ২০১৬ ০৬:১০53753
  • এই "ধনুক " বা ধনু নিয়েই সন্দেহ টা । আমরা এখন ধনুকের যে রোগা প্যাটকা রূপ দেখি আদৌ সেটাই সর্বর্ত্র মীন করা হয়েছে কি ? একচুয়ালি ধনু তো একটা লঞ্চার । এবার কী ছুঁড়ছি তার ওপর বেস করে লঞ্চার পাল্টাবে । বেশি মাস এন্ড লেংথ ওয়ালা জিনিস ছুড়লে বড় ,লঞ্চার ও সেরকম হতে পারে । আলাদা আলাদা রকমের ধনুকের বিবরণ পাচ্ছেন কোথাও ? মহাভারত্কার ধনুর্ধর দের বড় দেখানোর জন্যে শুধু ব্যাপরটা এগিয়ে রাখছেন এটা কেমন মিলছেনা :)
  • শিবাংশু | ***:*** | ০৬ মে ২০১৬ ০৬:১৮53754
  • 'ভল্ল' বাংলায় বল্লম, চলিত হিন্দিতে ভালা.....।
    ধনুর্ধররা ক্ষত্রিয়দের ক্রীমি লেয়ার। রণক্ষেত্রে হাতাহাতি লড়াইটা মূলত নিম্নবর্গের যোদ্ধাদের কাজ। শাস্ত্রকাররা সঙ্গত কারণেই শ্রেণীসচেতন এবং অস্ত্রেরও উচ্চ-নিম্ন বর্গ নির্ধারণ করতেন। ভীমের সেরিব্রাল ক্ষমতা নিয়ে সংশয়ী কবি তাঁকে গদা ধরিয়েছেন। গ্ল্যামারাস অর্জুন বা কর্ণ ধনুর্ধারী।
  • avi | ***:*** | ০৬ মে ২০১৬ ০৬:২০53755
  • উফফফ, টু গুড। এগুলোর জন্যেই তো বারবার এখানে ঢুঁ দিই। মিলিটারি ডিটেইল ব্যাপক। এই টপিকের ওপর একটা আলাদা লেখা পড়েছিলাম অভিষেকের ব্লগে, শেষের বর্ণনাটা তুলে দিই, "Bheem, in a rare display of archery skills, smashed both the shield and the sword; with Shalya disarmed, the stage was now set for Yudhishthir. He picked up a jewel-encrusted (why, I wonder) heavy-duty spear and hurled it at the great man.

    The spear pierced Shalya's chest; he staggered for a few steps, trying to advance towards Yudhishthir, with the possible intent of killing him with his bare hands: but this was a task as uphill as AK Hangal trying to look like a teenager - and the mighty Punjabi munda fell on his face, his hands still outstretched like Shah Rukh Khan, the hilt of the spear protruding out of his back, his chest immersed in dust soaked in his own blood.

    It was several centuries too early for him to utter "waheguru ji ka khalsa, waheguru ji ki fateh"; instead, he possibly thought of the vast stretches of Brassica juncea fields in which he had spent his childhood days; and then, it all ended." ঃ) ঃ-)
    আচ্ছা, প্রাস শেষদিকে বেশি ব্যবহার হওয়ার একটা কারণ কি বাকি বড় অস্ত্র বেশিরভাগ ফুরিয়ে যাওয়া হতে পারে?
  • cb | ***:*** | ০৬ মে ২০১৬ ০৭:৩৯53743
  • ওঃ ফাটিয়ে দিয়েছেন

    "তখন মদ্ররাজ নাসা, চক্ষু,কর্ণ ও আস্যদেশ হইতে বিনিঃসৃত রুধিরধারায় সংসিক্ত কলেবর হইয়া ।।।।।। বাহু প্রসারণপুর্বক কুলিশদলিত অচলশিখরের ন্যায় ।।।।। ভুতলে নিপতিত হইলেন। বোধ হইতে লাগিল যেন,বসুন্ধরা প্রিয়তম পতির ন্যায় প্রায়্পুর্বক তাঁহাকে প্রত্যুদগমন ও আলিংগন করিতেছে। তিনি যেন বসুন্ধরাকে প্রিয়তমা পত্নীর ন্যায় বহুকাল উপভোগ করিয়া তাঁহাকে গঢ় আলিঙ্গন পুর্বক সুষপ্তি লাভ করিলেন।"

    এ জিনিষ আলাদা লেভেলের
  • d | ***:*** | ০৬ মে ২০১৬ ০৭:৪৪53744
  • কিন্তু লেখাটার নাম ডিডি!!?
    :-)))) ডিডি আফনে তো লগন কইর‌্যাই ল্যাখসেন, আবার নিজের নাম দিসেন ক্যান

    পরে পড়ছি।
  • de | ***:*** | ০৬ মে ২০১৬ ০৮:৪৮53745
  • দারুণ!!!
  • শিবাংশু | ***:*** | ০৬ মে ২০১৬ ১১:৩৫53746
  • দারুণ, টিপিক্যাল dd, জীয়ো,

    বিষয়টি অতি প্রিয়, নিজেরও মাঠে নেমে পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে....

    বানানগুলো একটু এডিট করে নেওয়া যায় কি? :-)
  • Du | ***:*** | ০৭ মে ২০১৬ ০১:০২53756
  • মদ্ররা মাদ্রাজী নয়, পাঞ্জাবী??
  • dd | ***:*** | ০৭ মে ২০১৬ ০৩:০১53757
  • @ দু।

    মদ্ররা পাঞ্জাবী(পাকিস্তানের)। শিয়ালকোটের কাছে। মোটেই মাদ্রাজী নয়। বরং পান্ড্য দেশ ছিলো এখনকার মাদুরাই মানে তামিল রাজ্য।

    এরকম আরেকটা পপুলার ভুল হয় মনিপুর নিয়ে। মহাভারতের মনিপুর সাগরের ধারে এবং(সম্ভবতঃ) উড়্শ্যার কোনো অঞ্চল। আদৌ এখনকার নর্থ ইস্টের মনিপুর নয়।

    শিবাংশু ঠিকই লিখেছে। বারংবার বিভিন্ন রকমের যুদ্ধের কথায় উত্তম মধ্যম ও অধম শ্রেণীবিভাগ করা হয়েছে। তীর ধনুক হচ্ছে সর্বোত্তম যুদ্ধ। রাজা গজারা ছাড়া সবাই চান্স পেতেন না।

    একককে। ও রকম "লঞ্চার" হওয়াটা বেশ লজিকাল কিন্তু আগে বা পরে কোথাও'ই ওরকম কোনো বর্ননা নেই। এমন কি ক্রস বো'এর ও নয়। আর দড়াম করে গদা কুঠার ছুঁড়ে মারলে তখন কী আর লঞ্চার বাগিয়ে টিপ করে তীর ছোঁড়া যায় ?

    যদিও খুব বিশিষ্ট তিন চার জনের কাছে (দ্রোণ অর্জুন ইঃ)বিতস্তি পরিমান তীর(এক বিঘৎ) আর তার ধনুকের উল্লেখ আছে। ক্লোস কোয়ার্টার ফাইটে ইউজ হতো। ক্রস বো গোছের একটা কিছু হতেও পারে।

    এটা এক বিস্মায়, সারা দুনিয়া জুড়ে ক্রস বো ছিলো আর পাইক (লম্বা আঁকষি- ঘোড়সওয়ার বা রথকে অচল করে দেবার জন্য), ছাতার ভারতবর্ষে এ দুটো কোনোদিনই ছিলো না।
  • dc | ***:*** | ০৭ মে ২০১৬ ০৩:৪২53758
  • আমি মহাভারতের খুবই কম জানি, হয়তো এখানে কমেন্ট করাটাও ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু ডিডিদার লেখাগুলো এতো বেশী ভালো যে না করে পারলাম না। মহাভারতে সর্বোত্তম যোদ্ধারা, যেমন ভীষ্ম, পরশুরাম, দ্রোণ, অশ্বত্থামা, অর্জুন আর কর্ণ, এরা তো দিব্যাস্ত্র খুব বেশী ব্যাবহার করতো, তাই না? এমনকি অর্জুনের গান্ডীব নিজেই তো দিব্যাস্ত্র ছিল। দেবতারা গান্ডীবকে পুজো করতো।

    ডিডিদা যে লিখলেন

    "কুঠার গদা বল্লম তরোয়াল যা কিছু ছুঁড়ে মারা হয়েছে সেগুলি সব সময়েই তীর দিয়ে ছিন্ন করা হয়েছে - অ্যাকরডিং টু মহাভারত। এটা একেবারে ইম্পসিবল ঘটনা"

    এটা বোধায় এই কারনে সম্ভব হতো যে ঐ তীর ধনুক গুলো দিব্যাস্ত্র ছিল, মানে স্পেশ্যাল ওয়েপনস। মহাভারত গল্পের ইন্টার্নাল লজিকে দেখতে গেলে তো ঠিকই ছিল মনে হচ্ছে। অবশ্যই রিয়েল ওয়ার্ল্ডে এরকম করা অসম্ভব, কিন্তু মহাভারত গল্পটাই তো এমনভাবে লেখা যে খুব কম কয়েকজন যোদ্ধা দিব্যাস্ত্র ব্যাবহার করতে পারবে আর সেগুলো দিয়ে নানা অসম্ভব কাজ করতে পারবে। জানিনা ঠিক লিখলাম কিনা।
  • dc | ***:*** | ০৭ মে ২০১৬ ০৩:৪২53759
  • ওপরের কমেন্টটা আমি, dc করেছি।
  • Atoz | ***:*** | ০৮ মে ২০১৬ ০৯:২৬53760
  • "তখন মদ্ররাজ নাসা, চক্ষু,কর্ণ ও আস্যদেশ হইতে বিনিঃসৃত রুধিরধারায় সংসিক্ত কলেবর হইয়া ।।।।।। বাহু প্রসারণপুর্বক কুলিশদলিত অচলশিখরের ন্যায় ।।।।। ভুতলে নিপতিত হইলেন। বোধ হইতে লাগিল যেন,বসুন্ধরা প্রিয়তম পতির ন্যায় প্রায়্পুর্বক তাঁহাকে প্রত্যুদগমন ও আলিংগন করিতেছে। তিনি যেন বসুন্ধরাকে প্রিয়তমা পত্নীর ন্যায় বহুকাল উপভোগ করিয়া তাঁহাকে গঢ় আলিঙ্গন পুর্বক সুষপ্তি লাভ করিলেন।"

    -এই শ্লোক শুনে নির্ঘাত গণেশজী কলম ছেড়ে উঠে, "ওরে ওরে ওরে, শ্লোকটা একটুখানি মনের মধ্যে ধরে রাখ রে, আমি একটু মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে নিই। কী অসাধারণ জিনিস বানালি রে!" বলে মাটিতে একটু গড়াগড়ি দিয়ে নিয়েছিলেন।
    ঃ-)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে প্রতিক্রিয়া দিন