এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ধর্ম, মৌলবাদ ও আমাদের ভবিষ্যৎ : কিছু যুক্তিবাদী চর্চা

    Debasis Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ | ৬০৪৭৫ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • ইসলাম সম্পর্কে আলাদা করে দু-চার কথা

    মৌলবাদ নিয়ে এই ধরনের একটা লেখায় যদি কেউ ঘোষণা করেন যে, এইবার ইসলাম নিয়ে আলাদা করে কিছু বলা হবে, তখন পাঠকের সে নিয়ে একটা প্রত্যাশা তৈরি হতে পারে। কাজেই, এখানে গোড়াতেই সে ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে বলে রাখা দরকার, না হলে পাঠক হয়ত বিভ্রান্ত ও ক্ষুব্ধ হবেন। সম্ভাব্য প্রত্যাশাটি এই রকম যে, মৌলবাদের স্বরূপ নিয়ে যখন চর্চা হচ্ছে, এবং তার মধ্যেই আলাদা করে ইসলাম নিয়ে চর্চার ঘোষণা হচ্ছে, তখন নিশ্চয়ই দেশে দেশে ইসলামীয় মৌলবাদের উৎপত্তি ও বিকাশ নিয়ে ঐতিহাসিক বিবরণ পাওয়া যাবে এখানে, বিভিন্ন স্থান-কালে তার সাধারণ বৈশিষ্ট্য ও বিশেষ বিশেষ বৈচিত্র্যের উল্লেখ পাওয়া যাবে, এবং অন্যান্য ধর্মের মৌলবাদের সঙ্গে তার মিল ও অমিল এবং তার কার্যকারণ ইত্যাদি বিষয়ক অনুসন্ধান ও তার ফলাফলও পাওয়া যাবে। হ্যাঁ, এখানে তা করতে পারলে ভালই হত, কিন্তু তার উপায় নেই। সেটা করতে গেলে আগে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধর্মের মৌলবাদের কার্যকলাপ নিয়ে একটা সুনির্দিষ্ট ও বিস্তারিত আলোচনা সেরে রাখতে হত, তবেই তার প্রেক্ষিতে ইসলামীয় মৌলবাদের বৈশিষ্ট্যগুলো স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠতে পারত। দুঃখের বিষয়, সে পরিসর এখানে ছিল না, এখানে তো এতক্ষণ মৌলবাদ নিয়ে শুধু কতকগুলো অতি সাধারণ কথাই বলেছি। বলে রাখা দরকার, এখানে আমি সরাসরি সেইসব নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করব না, যদিও যা আসলে বলব তার মধ্যে এ বিষয়ে আমার মতামত ও চিন্তাভাবনারও কিছু ইঙ্গিত হয়ত মিলবে। এখানে আমি মূলত কথা বলব ইসলাম ধর্ম ও সংশ্লিষ্ট মৌলবাদ প্রসঙ্গে আমাদের সমাজের মূলস্রোত ধ্যানধারণা নিয়ে, এবং তার ঠিক-বেঠিক নিয়েও। এ নিয়ে কথা বলব কারণ, আমার ধারণা, ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে যাঁরা ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়তে চান, তাঁদের এ বিষয়টি এড়িয়ে যাবার কোনও উপায় নেই।
     
    ওপরে বলেছি, যাঁরা ধার্মিক নন বরঞ্চ ‘ধর্ম’ জিনিসটার সমালোচক, তাঁদের মধ্যে ইসলাম নিয়ে দু রকমের ভাবনা বেশ পরিচিত। অনেকে মনে করেন, এই ‘মৌলবাদ’ সংক্রান্ত সমস্যাটা আসলে শুধুই ইসলামের সমস্যা, আর কারুরই নয় --- ধর্মের নামে ফতোয়াবাজি আর মারদাঙ্গা মূলত মুসলমানেরাই করছে। অন্যদের যদি আদৌ কিছু সমস্যা থেকেও থাকে, তো সেটা শুধু ইসলামি জঙ্গিপনার প্রতিক্রিয়া মাত্র। আবার, এ অবস্থানটি অন্য অনেকের দুশ্চিন্তারও কারণ। ইসলামি জঙ্গিপনার বিপদ স্বীকার করেও তাঁরা মনে করেন যে, এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নির্দোষ ও নিরীহ আম মুসলমানের ঢালাও খলনায়কীকরণ হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ছড়ানো হচ্ছে ঘৃণা বিদ্বেষ ও হিংস্রতা। প্রথম ভাবনাটি ভুল, কেন তার কিছু ব্যাখ্যা নিচে আছে।
     
    আর ওই দ্বিতীয় প্রকারের যে দুশ্চিন্তা, আমি এবং আমার মত অনেকেই যার শরিক, তার এক প্রতিনিধি-স্থানীয় দৃষ্টান্ত আমার হাতে এসেছে কয়েকদিন আগে, আমার এক তরুণ বন্ধুর সাথে ফেসবুকীয় কথোপকথনে। তিনি কে, সেটা এখানে প্রাসঙ্গিক না, কিন্তু তিনি আমাকে যে সব প্রশ্ন করেছেন তা বোধহয় অতিশয় প্রাসঙ্গিক। এখানে সেগুলো হুবহু উদ্ধৃত করলে হয়ত আমাদের আলোচ্য প্রশ্নগুলোকে সুনির্দিষ্ট আকার দিতে সুবিধে হবে। অবশ্য, এখানে উদ্ধৃত প্রত্যেকটি প্রশ্নগুলোর সুনির্দিষ্ট ও নিষ্পত্তিমূলক উত্তর দেওয়া এ লেখার উদ্দেশ্য ততটা নয়, যতটা হল মূল প্রশ্নগুলোকে চিহ্নিত করার মাধ্যমে সমস্যাটাকে আরেকটু স্পষ্ট করে তোলা। নিচে রইল সেই তরুণ বন্ধুর দুশ্চিন্তা-জারিত প্রশ্নগুলো।
     
    দাদা,

    একটা বিষয় একটু বিস্তারিত জানতে চাই আপনার কাছে। আপনি যদি সময় করে একটু ডিটেইলসে উত্তর দেন, খুব উপকৃত হই। অনেকদিনই এটা আপনাকে জিজ্ঞেস করব করব ভেবেছি, কিন্তু করা হয়নি, কারণ বিষয়টা একটু সেন্সেটিভ, আর প্রশ্নটা একটু বিস্তারে করতে হবে।

    ছোটবেলা থেকেই (ক্লাস ওয়ান থেকে) আমি দেখে এসছি, আমার পরিমণ্ডলে শুধুমাত্র ধর্মে মুসলিম হওয়ার জন্য মানুষকে সন্দেহের চোখে, বিদ্বেষের চোখে দেখা হয়। ক্রিকেটে পাকিস্তান জিতলে "কীরে, খুব আনন্দ বল!" বলে টন্ট কাটা হয়, কেবল নাম দেখে বাড়িভাড়া দিতে অস্বীকার করা হয়, এমনকি মুসলিম ছাত্র ক্লাসে ভাল রেজাল্ট করলেও "আশ্রম থেকে শেষে মুসলিম ফার্স্ট হবে" এরকম কথা খোদ টিচারের মুখেই শুনেছিআমি ঘটনাক্রমে মুসলিম পরিবারে জন্মাইনি, কিন্তু একদম ছোটবেলা থেকেই আমার মুসলিম বন্ধু বা প্রতিবেশীদের এভাবে সামাজিক হেট ক্যাম্পেনিং এর মুখে পড়াটা ভীষণ দুঃখজনক লাগে। এই খারাপ লাগাটা ক্লাস ওয়ান থেকেই শুরু হয়েছিল, তো তখন তো আমি ধর্ম ভাল না খারাপ, যুক্তিবাদ ভাল না খারাপ, এতকিছু তো বুঝতাম না।

    এখন মুসলিমবিদ্বেষকে যারা জাস্টিফাই করে, তাদের থেকে যে যুক্তিগুলো উঠে আসে, সেগুলো -

    ১) আর কোন ধর্মে আইসিস, তালিবান, বোকোহারামের মত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আছে?

    ২) "ওরা" (মুসলিমরা) সংখ্যায় বাড়লেই ইসলামিক রাষ্ট্র চায়, সংখ্যায় কমলেই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র চায়।

    ৩) সব ধর্মে সংস্কার হয়েছে, কিন্তু "ওরা" এখনও মধ্যযুগেই পড়ে আছে।

    ৪) সব ধর্মেই বহুবিবাহ বন্ধ হয়েছে, কিন্তু "ওদের ধর্মে" বহুবিবাহ আজও জায়েজ, ওদের ধর্মে নারীর অবস্থা সবচাইতে খারাপ।

    ৫) "ওরা" নিজেদের বাঙালি মনে করে না, মননে চিন্তনে আরব, ওদের কাছে ধর্মই সব।

    ৬) ধর্মের নামে মানুষ হত্যা "ওদের ধর্মের মত কোন ধর্মই করেনি।"

    ৭) "ওদের" বাড়াবাড়ির জন্যই বিজেপির মত দলের সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ, হিন্দু মৌলবাদ ইসলামিক মৌলবাদের প্রতিক্রিয়ার ফসল।

    ইত্যাদি ইত্যাদি। আপাতত এই কটাই মনে পড়ছে।

    এখন আমার প্রশ্ন

    ১) মুসলিমবিদ্বেষীদের এই দাবিগুলো কি তথ্যগতভাবে সত্যি?

    ২) সত্যিই কি ইসলাম আর পাঁচটা ধর্মের থেকে ব্যতিক্রমী ভায়োলেন্ট? এখন তো যুক্তি, তথ্য, পরিসংখ্যানের বিভিন্ন মেথডলজি দিয়ে অনেক বিষয় কম্পারেটিভ স্টাডি করা যায়। "ইসলাম অন্য পাঁচটা ধর্মের থেকে ভায়োলেন্ট" - এই বিষয়টা কি যুক্তি, তথ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা যায়? মানে আমার প্রশ্ন, দাবিটার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু?

    ৩) ধরে নিলাম, ইসলাম সবচাইতে ভায়োলেন্ট ধর্ম। কিন্তু তাতে করেই কি মুসলিমবিদ্বেষ জায়েজ হয়ে যায়?

    ৪) একজন নাস্তিক হিসাবে মুসলিম সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার হরণ করা হলে তার প্রতিবাদ করা কি অন্যায়?

    ৫) হিন্দু মৌলবাদ কি সত্যিই ইসলামিক মৌলবাদের প্রতিক্রিয়ার ফসল? ইসলামিক মৌলবাদ না থাকলে সত্যিই কি হিন্দু মৌলবাদ বলে কিছু থাকত না?

    ৬) আইসিস বা তালিবানের মত মুসলিম লিগ বা বর্তমানে মিমকে কি মৌলবাদী বলা যায়? নাকি "সাম্প্রদায়িক, কিন্তু মৌলবাদী নয়"-এমনটা বলা উচিত?

    আমার প্রশ্ন করার মূল কারণটা কিন্তু কোনভাবেই ইসলামকে ডিফেন্ড করা বা তার ভয়াবহতাকে লঘু করা নয়। আমিও ধর্মহীন সমাজের স্বপ্ন দেখি, সব ধর্মের মত ইসলামের অবসানও আশা করি।

    কিন্তু মধ্যবিত্ত শিক্ষিত স্তরে ইসলামের সমালোচনাটা যেভাবে হয়, তার টোনটা ঠিক যুক্তিবাদের নয়, টোনটা বিদ্বেষের। এখন রিলিজিয়াস ক্রিটিসিজমকে ঢাল করে বুঝে বা না বুঝে অনেক প্রগতিশীল মানুষও বিদ্বেষের টোন ব্যবহার করছেন। এটা খুব আশঙ্কার।

    এখন, এই প্রশ্নগুলোর প্রত্যেকটাকে আলাদা করে উত্তর দেবার চেষ্টা না করে বরং এ প্রসঙ্গে কতকগুলো সাধারণ কথা ভেবেচিন্তে দেখি। তাতে করে সমাধান না আসুক, অন্তত সমস্যাটার চেহারাটা আরেকটু স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠতে পারে কিনা, দেখা যাক। হতে পারে, ভাবতে গিয়ে হয়ত ওপরের দু-একটা প্রশ্ন শেষতক বাদই পড়ে গেল, বা উল্টোভাবে, যে প্রশ্ন এখানে নেই তেমন কিছু এসে কথার মধ্যে ঢুকে পড়ল।

    প্রথমেই বলা দরকার, অনেকে আধুনিক মৌলবাদী উত্থানকে মুসলমান জঙ্গি উত্থানের সঙ্গে এক করে দেখেন, যা মোটেই সঠিক নয়। বর্তমান পৃথিবীর প্রধান ধর্মীয় ধারাগুলোর সবকটির মধ্যেই মৌলবাদী উত্থান ঘটেছে, বিভিন্ন মাত্রা, ভঙ্গী ও ধরনে। আমেরিকায় খ্রিস্টান মৌলবাদীদের কথা আমরা জানি, জানি ইসরায়েলের ইহুদী মৌলবাদীদের কথা, জানি ভারতের হিন্দু মৌলবাদীদের কথা, এবং জানি এই ভারতেই আশির দশকে তেড়েফুঁড়ে ওঠা শিখ মৌলবাদীদের কথাও --- যাদের হাতে ভারতের এক প্রধানমন্ত্রী নিহত হয়েছিলেন। ‘অহিংসার ধর্ম’ বলে কথিত বৌদ্ধধর্মও এ প্রবণতার বাইরে নয় মোটেই। থাইল্যান্ড, বর্মা ও শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ ধর্মের তরফেও জঙ্গি প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। আজ অনেকেরই হয়ত আর মনে নেই, দুহাজার এক সালের কুখ্যাত ‘নাইন ইলেভেন’-এর ঘটনার আগে পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ধর্মীয় নাশকতার ঘটনা বলে ধরা হত উনিশশো পঁচানব্বই সালের দুটি ঘটনাকে। তার একটি ঘটেছিল আমেরিকার ওকলাহোমা সিটি-র ‘ট্রেড সেন্টার’-এ, যাতে বিস্ফোরক-ভর্তি ট্রাক দিয়ে ওই ভবনটিতে ধাক্কা মেরে প্রায় দেড়শো লোকের প্রাণনাশ করা হয়েছিল, এবং সেটা ঘটিয়েছিল কতিপয় খ্রিস্টান মৌলবাদী। অন্যটি ঘটেছিল জাপানে, যেখানে পাতাল রেলের সুড়ঙ্গে বিষাক্ত সারিন গ্যাসের কৌটো ফাটিয়ে দেওয়া হয়, তাতে বিষাক্ত গ্যাসে সরাসরি যত না মারা যায় তার চেয়ে অনেক বেশি লোক মারা যায় এবং গুরুতরভাবে জখম হয় সুড়ঙ্গের ভেতরে আতঙ্কগ্রস্তদের দৌড়োদৌড়িতে পদপিষ্ট হয়ে --- এবং সেটা ঘটিয়েছিল কট্টরপন্থী বৌদ্ধদের একটি ক্ষুদ্র উপগোষ্ঠী। আমরা বৌদ্ধধর্মটা অন্তত অহিংস বলে জানতাম, তাই না? তার দু বছর আগে উনিশশো তিরানব্বই সালে ভারতে সংঘটিত কুখ্যাত ‘বম্বে বিস্ফোরণ’ অবশ্যই একটি বৃহৎ নাশকতা, এবং সেটা ঘটিয়েছিল মুসলমান জঙ্গিরাই। কিন্তু, মুসলমান মৌলবাদীদের বক্তব্য অনুযায়ী, সেটা ছিল তার এক বছর আগে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রতিক্রিয়া। বলা বাহুল্য, এই বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনাটিকেও আবার মুসলমানদের অত্যাচারের প্রতিক্রিয়া বলেই দেখানো হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, সেটা কোনও সাম্প্রতিক ‘অত্যাচার’-এর প্রতিক্রিয়া ছিল না। হিন্দু মৌলবাদীদের নিজেদের দাবি অনুযায়ীই, এটা নাকি মোগল সম্রাট বাবরের তরফে ঘটে যাওয়া পাঁচশ বছরের পুরোনো এক অন্যায়ের প্রতিকার মাত্র! এবং, এই বাবরি মসজিদের ধ্বংসও আবার এ দেশে ধর্মীয় নাশকতার প্রথম ঘটনা নয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাও নয়। এ দেশে আজ পর্যন্ত ধর্মীয় নাশকতার সবচেয়ে বড় ঘটনা বলে যদি কোনও বিশেষ ঘটনাকে ধরতেই হয়, তো সেটা সম্ভবত উনিশশো চুরাশি সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধিকে হত্যা করার ঘটনা। সেটা মুসলমানেরা ঘটায়নি, ঘটিয়েছিল শিখ মৌলবাদীরা।

    ধর্মের সমালোচনা যে আধুনিক পৃথিবীর অন্যতম প্রধান কাজ, তাতে সন্দেহ নেই। সমালোচনা মানে সব ধর্মেরই সমালোচনা, ইসলামেরও।  কিন্তু, ইসলাম ধর্মের সমালোচনায় একটি ভুল আমরা প্রায়শই করে থাকি। আমরা বলি, ইসলাম ধর্ম (এবং সেইহেতু ওই ধর্মাবলম্বীরাও) তো হিংস্র হবারই কথা, কারণ, ইসলামীয় ধর্মশাস্ত্রে হিংসার উপাদান খুব বেশি আছে। হয়ত সত্যিই আছে, কিন্তু যুক্তিটা তা সত্ত্বেও ভুল, এবং দুটো দিক থেকেই ভুল। কারণ, প্রথমত, সব ধর্মশাস্ত্রেই হিংসার উপাদান কমবেশি আছে। এবং দ্বিতীয়ত, যে ধর্মের শাস্ত্রে হিংসার উপাদান কিছু কম আছে সে ধর্মগোষ্ঠীর মানুষের আচরণে হিংসা কম থাকবেই --- এ প্রত্যাশার ভিত্তিটাও বোধহয় খুব পোক্ত নয়।
     
    হিংস্রতার বর্ণনা ও তার নৈতিক সমর্থন হিন্দু শাস্ত্রগুলোতে কোরানের চেয়ে কিছু কম নেই। কম নেই বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টেও, যদিও, হয়ত বা সত্যিই কিছু কম আছে নিউ টেস্টামেন্টে।  আবার, শাস্ত্রগ্রন্থে হিংস্রতার বর্ণনা কম থাকলেই যে ধার্মিকেরা কিছু কম হিংস্র হবেন, এমন নিশ্চয়তাও পাওয়া কঠিন। যুদ্ধলিপ্সা, হত্যা এবং হিংস্রতায় যিনি প্রবাদপ্রতিম, সেই চেঙ্গিস খান কিন্তু মোটেই মুসলমান ছিলেন না, 'খান' পদবী দেখে যা-ই মনে হোক।  খ্রিস্টানরা ষোড়শ-সপ্তদশ শতক জুড়ে আমেরিকাতে স্থানীয় অধিবাসীদের বিরুদ্ধে যেভাবে হত্যালীলা চালিয়েছে নিউ টেস্টামেন্টের যাবতীয় ক্ষমার বাণী সত্ত্বেও, তা ইতিহাসে বিরল। মধ্যযুগের শেষে এবং আধুনিক যুগের গোড়ায় 'ক্ষমাশীল' খ্রিস্টানদের ডাইনি পোড়ানোর হিড়িক দেখে আতঙ্কে শিউরে ওঠেন না, এমন কেউই কি আছেন এ যুগে? 'ইসলামিক স্টেট' তার ঘোষিত 'বিধর্মীদের' হত্যা করে হত্যার উদ্দেশ্যেই, বা প্রতিশোধের উদ্দেশ্যে, এবং সেটা সারা জগতের লোককে ডেকে দেখানোর জন্যেও বটে। দেখ হে, আমরা কত ভয়ঙ্কর, কত বড় বীর, এই রকম একটা ভাব। কিন্তু মধ্যযুগের খ্রিস্টানরা ডাইনি মারত ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা দিয়ে, এবং যন্ত্রণা দেওয়াটাই সেখানে মূল উদ্দেশ্য, যাতে অকথ্য অত্যাচার করে তার মুখ থেকে অন্য আরেক ‘ডাইনি’-র নাম বার করে আনা যায়। এই কাজটির জন্য তারা বিচিত্র ও বীভৎস সব কলা-কৌশল ও যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করেছিল। কাজেই, বিশেষ একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর ধর্মান্ধতা ও ধর্মীয় হিংস্রতার সঙ্গে তার শাস্ত্রীয় অনুমোদনের একটা সহজ সরল সম্পর্ক ধরে নেওয়াটা বোধহয় সব সময় খুব নিরাপদ নয়।

    মুসলমানদের হিংস্রতার মতই আরেকটি বাজে গল্প আছে মুসলমানদের জনসংখ্যাবৃদ্ধি নিয়ে। মুসলমানদের হুহু করে বংশবৃদ্ধি হচ্ছে, এবং দ্রুত তারা হিন্দুদেরকে ছাপিয়ে গিয়ে গোটা দেশটাকে দখল করে ফেলবে, এই মিথ্যে আতঙ্কটা হচ্ছে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রচারের অন্যতম প্রধান বিষয়বস্তু, বহু মানুষই যা সরলমনে বিশ্বাস করেন। এখানে বলে নেওয়া দরকার, মুসলিম জনসংখ্যা যে বাড়ছে এবং তার হার যে হিন্দুদের চেয়ে এখন পর্যন্ত কিছু বেশিই বটে, এটা কিন্তু মিথ্যে নয়। মিথ্যে হল এই প্রচারটা যে, এইভাবে বাড়তে বাড়তে হিন্দুদের চেয়ে তাদের সংখ্যা নাকি বেশি হয়ে যাবে, এবং তারাই দেশটাকে গ্রাস করে ফেলবে। আসলে ঘটনা হল, সব ধর্মের জনসংখ্যাই বাড়ছে, এবং সংখ্যালঘুদের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার সব দেশেই সংখ্যাগুরুদের চেয়ে সামান্য একটু বেশি হয়, যদি সেখানে সংখ্যালঘু নিধন না চলে, এবং বিশেষত যদি সে সংখ্যালঘুরা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া হয়। জনসংখ্যাবৃদ্ধির আসল যোগটা ধর্মের সঙ্গে নয়, অর্থনীতির সঙ্গে। হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যেও গরিবদের জনসংখ্যাবৃদ্ধি যদি আলাদা করে হিসেব করা হয় তো দেখা যাবে যে তা সচ্ছল হিন্দুদের চেয়ে অনেক বেশি। সম্পন্নরা ভাল রোজগার করতে চায়, ভালভাবে থাকতে চায়, এবং সন্তানের জীবনযাপনও যাতে সে রকমই হয়, সে ব্যবস্থা করতে চায়। তারা জানে যে সেটা করতে গেলে সন্তানকে উচ্চমানের শিক্ষাদীক্ষা দেওয়া দরকার, তার পেছনে ভাল করে যত্ন ও খরচাপাতি করা দরকার, এবং সেটা করার ক্ষমতাও তাদের আছে। ছেলেপুলে বেশি হলে তা সম্ভব নয়, এবং তাতে করে বাচ্চার মায়ের স্বাস্থ্যের বারোটা বাজবে, মা ঘরের বাইরে গিয়ে পেশাগত কাজকর্ম করে অর্থ উপার্জনও করতে পারবে না। ফলে, তারা বেশি সন্তান একদমই চায় না। উল্টোদিকে, গরিবরা এত কথা জানেও না আর তাদের সে ক্ষমতাও নেই। ফলে তারা যত বেশি সম্ভব সন্তান চায়, সেটা মায়ের স্বাস্থ্যহানি ও মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে হলেও। গরিবরা জানে তাদের সন্তান দুধেভাতে থাকবে না, এবং শেষপর্যন্ত কোনও শ্রমসাধ্য কাজেই যোগ দেবে যাতে শিক্ষা বা 'স্কিল' সেভাবে লাগে না। ফলে, সন্তানের সংখ্যা বেশি হলে দুরবস্থা আর অযত্নের মধ্যেও হয়ত রোগভোগ মৃত্যু এড়িয়ে কেউ কেউ টিঁকে যাবে, আর পরিশ্রম করে পরিবারের আয় বাড়াতে পারবে, যৎসামান্য হলেও। অথচ এদেরই যখন অর্থনৈতিক উন্নতি হবে, তখন এরা মেয়েদেরকে পড়াশোনা শেখাতে চাইবে, ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে সন্তানকে কেরানি-আমলা-ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-উকিল এইসব বানাতে চাইবে, ফলে স্বল্পসংখ্যক সন্তান চাইবে, এবং মায়ের জীবন ও স্বাস্থ্যকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করবে। একটু ভাল করে খোঁজখবর করলেই জানা যাবে, অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ঘটছে কিন্তু আসলে ঠিক তাইই, হিন্দু ও মুসলমান উভয়ের ক্ষেত্রেই। এবং, মুসলমানরা পিছিয়ে আছে বলেই তাদের অগ্রগতিও দ্রুততর। তাদের জন্মহারের বৃদ্ধি কমছে কিছু বেশি দ্রুতলয়ে। এভাবে চললে আর দেড় দুই দশক পরেই হয়ত হিন্দু-মুসলমানের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার সমান হয়ে যাবে, এবং মুসলমানদের ভারত দখলের কুৎসিত অশিক্ষিত গল্পতেও তখন আর কেউই পাত্তা দেবে না। ইতিহাসের স্বাভাবিক গতি এই দিকেই।
     
    এখানে 'অগ্রগতি' বলতে জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার কমিয়ে আনার কথা বুঝিয়েছি। মুসলমানদের ক্ষেত্রে এই কমিয়ে আনাটা হিন্দুদের চেয়ে বেশি হারে ঘটছে (বৃদ্ধির হার কমে যাওয়া মানে জনসংখ্যা কমে যাওয়া নয় কিন্তু, এ হার কমতে কমতে শূন্যের নিচে নামলে তবেই জনসংখ্যা কমতে শুরু করবে)। এই কমে আসাটা উন্নয়নের পরোক্ষ সূচক। এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিন বাদে যে হিন্দু-মুসলমানের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার সমান হয়ে যাবে তাতে সন্দেহ নেই।  পিছিয়ে আছে বলেই অগ্রগতি বেশি তাড়াতাড়ি হচ্ছে --- এ কথাটা হয়ত অনেককে বিস্মিত করতে পারে, কিন্তু কথাটা বলার কারণ আছে। নিশ্চয়ই জানেন, ভারত চিন ব্রাজিলের মত একটু এগিয়ে থাকা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ইউরোপ আমেরিকার উন্নত দেশগুলোর থেকে বেশি। এর কারণ হচ্ছে, একবার উন্নত হয়ে গেলে একই গতিতে আরও আরও উন্নত হতে থাকাটা ক্রমশই আরও বেশি বেশি করে কঠিন হয়ে ওঠে, তাই উন্নয়নের প্রথম দিকে বৃদ্ধির যে গতি থাকে পরের দিকে আর তত গতি থাকে না। মুসলমানদের জনসংখ্যার ক্ষেত্রেও তাইই ঘটছে, এবং আরও ঘটবে (ও দুটোকে খুব নিখুঁতভাবে মেলানোর দরকার নেই, যদিও)।

    আমরা যারা এই বিষয়গুলোকে এইভাবে ভাবার চেষ্টা করি, তাদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আসে প্রায়শই, ফেসবুকে সে গর্জন রোজই শোনা যায়। এখন, এটা তো সত্যি কথাই যে, পশ্চিমবাংলার যুক্তিবাদীদের লেখালিখিতে, এবং যথারীতি আমার নিজের লেখাতেও, হিন্দু মৌলবাদের সমালোচনাই বেশি আসে, মুসলমান মৌলবাদের কথা বাস্তবিকই আসে অনেক কম। ঠিক এই অভিযোগটি সেক্যুলারদের প্রতি হিন্দু মৌলবাদীরা করে থাকেন নিয়মিতই (বস্তুত, প্রত্যেক ধর্মের মৌলবাদীরাই তাদের নিজস্ব গোষ্ঠী বা সমাজের সেক্যুলারদের প্রতি এই একই অভিযোগ করে থাকে)। কিন্তু একটু ভাবলে বুঝবেন, এটাই প্রত্যাশিত ও স্বাভাবিক। এবং, অন্যরকম কিছু হলেই বরং অত্যন্ত অস্বাভাবিক ও অসঙ্গত হত, এমন কি অন্যায়ও হত। কেন, তার একাধিক কারণ আছে। প্রথমত, এ দেশের রাষ্ট্র ও সমাজ যে মৌলবাদী হুমকিটির মুখোমুখি, সেটা তো হিন্দু মৌলবাদই, অন্য কোনও মৌলবাদ নয়। শিক্ষা-প্রশাসন-বিচারব্যবস্থার ধর্মীয়করণ, সংবিধানকে পাল্টে দেবার পরিকল্পনা, ভিন-ধর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন, ধর্মের জিগির তুলে তার আড়ালে সরকারি সম্পত্তি পাচার --- এ সব তো মুসলমানরা করছে না, হিন্দুত্ববাদীরাই করছে। অতএব, তাদের মুখোশ খোলাটাই এখানে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক। মুসলমান জঙ্গিরা নাশকতা ঘটালে তার মোকাবিলার জন্য পুলিশ-মিলিটারি আছে, কিন্তু নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসা মৌলবাদীদের রোখবার দায়িত্ব তো আর পুলিশ-মিলিটারি নেবে না, সেটা সাধারণ ভারতীয় নাগরিকের কাজ। আমি যে দেশে এবং যে ধর্মীয় সমাজের মধ্যে বাস করি, সেখানে যারা অন্ধত্ব ও হিংস্রতা ছড়াচ্ছে, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রকে বিনাশ করছে, তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোটাই তো আমার পক্ষে স্বাভাবিক, তাই না? বাংলাদেশি মুক্তমনারা যদি মুসলমান ধর্ম ছেড়ে হিন্দুদেরকে গালি দিতে থাকতেন, বা বার্ট্র্যান্ড রাসেল যদি 'হোয়াই আই অ্যাম নট আ ক্রিশ্চান' না লিখে 'হোয়াই আই অ্যাম নট আ হিন্দু' লিখে বসতেন, তাহলে যেমন উদ্ভট অসঙ্গত কাজ হত, এখানে আমরা হিন্দু ধর্ম ছেড়ে মুসলমান নিয়ে পড়লেও ঠিকই একই ব্যাপার হবে (যদিও বাংলাদেশি মুক্তমনারা ঠিক যা বলেন এবং যেভাবে বলেন, তার অনেক কিছুর সঙ্গেই আমার দ্বিমত আছে, তবে সেটা এখানে প্রাসঙ্গিক না)। দ্বিতীয়ত, আমরা পশ্চিমবঙ্গের বেশির ভাগ মুক্তমনা যুক্তিবাদী নাস্তিকেরা হিন্দু সমাজে জন্মেছি বলেই সে সমাজ ও তার ধর্ম শাস্ত্র রীতিনীতি আচার বিচার এইসব অনেক বেশি জানি, ফলে সে ব্যাপারে আমাদের সমালোচনা অনেক বেশি নিরেট, নির্ভুল এবং অর্থবহ হয়, যা ভিনধর্মী সমাজে যারা জন্মেছে তারা পারবেনা। ঠিক একই কারণে, মুসলমান সমাজ ও ধর্ম সম্পর্কে মুসলমান সমাজে জন্মানো যুক্তিবাদীদের সমালোচনা অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য ও ফলপ্রসূ হয়। যদিও, এর মানে মোটেই এই নয় যে এক ধর্মে জন্মানো লোক অন্য ধর্মের সমালোচনা করতেই পারবেনা --- যে কোনও মানুষের যে কোনও ধর্মের সমালোচনা করার অধিকার আছে, এবং করা উচিত। তবে কিনা, নিজের সমাজের অন্ধত্ব অযুক্তি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথমে সোচ্চার হওয়াটা যে কোনও মানুষেরই ‘স্বাভাবিক’ অধিকার, কর্তব্যও বটে।
     
    আচ্ছা, তা সে যা-ই হোক, মোদ্দা কথাটা তাহলে কী দাঁড়াল --- মুসলমানেরা ধর্মান্ধতায় অন্যদের চেয়ে এগিয়ে, না পিছিয়ে? এসব ঠিকঠাক বলতে গেলে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে পৃথিবীজোড়া সমীক্ষার নির্ভরযোগ্য ফলাফল চাই, না হলে সবটাই চায়ের দোকানের আড্ডা হয়ে যাবে। আপাতত আছে কি সে সব, আমাদের হাতে? সুখের বিষয়, সে সব আছে। এই কিছুদিন মাত্র আগেও সেভাবে ছিল না, কিন্তু এই একুশ শতকে বেশ ভালভাবেই আছে। বেশ কয়েকটি বিখ্যাত সংস্থা এখন মানুষের জীবনের নানা দিক নিয়ে প্রামাণ্য সমীক্ষা করে থাকে, তার মধ্যে ধর্মবিশ্বাসও পড়ে। এইসব সমীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বড় বড় বিশেষজ্ঞরা নানা গভীর গবেষণাও করে থাকেন, এবং তাতে তেমন চমকপ্রদ কোনও ফলাফল পাওয়া গেলে সারা পৃথিবীর গণমাধ্যমে সে নিয়ে আলোড়ন উঠে যায়। এই রকমই একটি সংস্থা হল ‘উইন গ্যালাপ’। তারা সারা পৃথিবী জুড়ে মানুষের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে এক বিখ্যাত সমীক্ষা চালিয়েছিল ২০১২ সালে, তাতে বিভিন্ন ধর্মগোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মবিশ্বাসের প্রাবল্য, ধর্মবিশ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে আসা মানুষের সংখ্যা, এইসবের হিসেব ছিল। তাতে কি দেখা গেল? নিচে দেখে নিন ২০১২ সালের পৃথিবীজোড়া সমীক্ষার ফলাফল, সুন্দর করে সারণিতে সাজানো। এখানে পরিষ্কারভাবেই দেখা যাচ্ছে, নিজেকে বিশ্বাসী বলে দাবি করেন অথচ ধার্মিক বলে দাবি করেন না --- এমন মানুষের অনুপাত মুসলমানদের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি। কারা কবে সমীক্ষাটি করেছে, এবং তা কোন নথিতে প্রকাশিত, সব তথ্যই পাবেন এখানে।
     
     
    এবার একটি ইসলামীয় দেশকে নিয়ে ভাবা যাক, যেখানে প্রায় সর্বাত্মক মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং ইসলামীয় রাষ্ট্র আছে। ধরুন, ইরান। এই  দেশটা সম্পর্কে আপনি কী জানেন? জানি, এ প্রশ্নের উত্তরে প্রায় সকলেই একই কথা বলবেন। ছিয়ানব্বই দশমিক পাঁচ শতাংশ (সরকারি সেন্সাসের তথ্য অনুযায়ী) মুসলমান অধ্যুষিত একটি ধর্মান্ধ দেশ, যার মধ্যে আবার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা শিয়া মুসলমানদের। কট্টর মৌলবাদীরা সেখানে দেশ চালায়, প্রশ্ন করলেই কোতল হতে হয়, মুক্তচিন্তা কল্পনাতীত। সম্প্রতি সেখানে হুলুস্থুলু ঘটে গিয়েছে, সে সব খবরাখবর আপনারা দেখেছেন। একটি মেয়েকে ইসলাম-সম্মত পোশাক না পরার অপরাধে সেখানে হত্যা করা হয়েছে, তাই নিয়ে প্রবল আন্দোলন হলে রাষ্ট্রের তরফে নেমে এসেছে দমন-পীড়ন, এবং সদ্য-সমাপ্ত ফুটবল বিশ্বকাপে সারা পৃথিবীর সামনে তার প্রতিবাদ করায় সে দেশের জাতীয় দলের এক খেলোয়াড়কে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। এখানে মৌলবাদের দাপটের ছবিটা একদমই স্পষ্ট, আবার গণমানুষের আপত্তিটাও খুব আবছা নয়।

    আসলে, এখানে ধর্মীয় রাষ্ট্রের দোর্দণ্ডপ্রতাপের তলাতেই লুকিয়ে আছে অন্য এক বাস্তবতা। নেদারল্যান্ডের একটি গবেষণা সংস্থা (GAMAAN), ইরানই যাদের অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু, তারা ২০২০ সালে  ইরানে সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে। সে সমীক্ষার ফলাফল যদি বিশ্বাস করতে হয়, তো সেখানে সাঁইত্রিশ শতাংশ মত লোক নিজেদের মুসলমান বলে দাবি করেন (শিয়া-সুন্নি মিলিয়ে), যাঁরা কোনও ধর্মীয় পরিচয় দিতে রাজি নন তাঁরা বাইশ শতাংশ, যাঁরা পরিষ্কারভাবে নিজেকে নাস্তিক-অজ্ঞাবাদী-মানবতাবাদী এইসব বলে পরিচয় দেন তাঁরা সব মিলিয়ে প্রায় সতেরো শতাংশ, যাঁরা নিজেকে শুধুই 'স্পিরিচুয়াল' বলেন তাঁরা প্রায় সাত শতাংশ, এবং বাকিরা আরও নানা বিচিত্র ধর্মের মানুষ। নিচের ছবি দুটোয় সমীক্ষার ফলাফল এক নজরে পাওয়া যাবে। হ্যাঁ বন্ধু, একুশ শতকে পৃথিবী বদলাচ্ছে, এবং হয়ত বিশ শতকের চেয়েও দ্রুত গতিতে! এবং, ইসলামীয় দেশগুলো কোনওভাবেই এ প্রবণতার বাইরে নয়। নিচে সে সমীক্ষার ফলাফল দেখুন, চিত্রাকারে।
     
     
    ধর্ম, ঈশ্বর, স্বর্গ, নরক, মৃত্যু-পরবর্তী জীবন, অবতার ইত্যাদি ধ্যানধারণা বিষয়ে ইরান-বাসীদের বিশ্বাস (বা অবিশ্বাস) ঠিক কী রকম, সে চিত্রও উঠে এসেছে সমীক্ষা থেকে। নিচে দেখুন।
     
     
     
    তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, মুসলমানদের ধর্মপ্রীতি নিয়ে আমাদের অধিকাংশের মধ্যে যেসব জনপ্রিয় ধ্যানধারণা আছে, তার সমর্থন এইসব সমীক্ষার ফলাফল থেকে মিলছে না মোটেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যে ইঙ্গিত এখান থেকে আমরা পাচ্ছি, সেটা সামগ্রিক বৈশ্বিক প্রবণতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, নাকি একটা সম্পূর্ণ আলাদা উল্টোপাল্টা কিছু। সেটা বুঝতে গেলে বর্তমান শতকের বিগত কয়েকটি দশকে গোটা পৃথিবীর ধর্মবিশ্বাসের গতিপ্রকৃতি এক নজরে দেখে নেওয়া দরকার। এমনিতে সেটা একটু মুশকিল, কারণ, তার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংস্থার করা অনেকগুলো সমীক্ষা-কর্ম খুঁটিয়ে দেখে সেগুলোর প্রাসঙ্গিক ফলাফলটুকু বেছে নিয়ে তুলনা করতে হবে। সেইজন্যে, আমি যতটা পেরেছি সেগুলোকে সাজিয়ে একটা মাত্র সারণিতে নিয়ে এসেছি, তাতে পাঠিকের কিছু সুবিধে হবার কথা। সেটা নিচে দিলাম, দেখুন। সারণির কোন সংখ্যাটি কোন সংস্থার করা কবেকার সমীক্ষায় পাওয়া গেছে, সেটা ওখানেই দেওয়া আছে। প্রথম সংখ্যাটি অবশ্য কোনও সংস্থার তরফে দেওয়া নয়। এটি দিয়েছিলেন সমাজতত্ত্ববিদ ফিলিপ জুকারম্যান, তখন পর্যন্ত প্রাপ্য সমস্ত টুকরো টুকরো সমীক্ষার ফলাফল এক জায়গায় করে।
     
     
     
     
    এবার নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে, মুসলমানদের ধর্মবিশ্বাসের গতিপ্রকৃতি অন্য ধর্মাবলম্বীদের থেকে খুব বেশি আলাদা নয়। আসলে, এই একুশ শতকে দাঁড়িয়ে, সব ধর্মগোষ্ঠীর মধ্যেই ধর্মবিশ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে আসার যে প্রবণতা রয়েছে, মুসলমানরা কোনও মতেই সে প্রবণতার বাইরে নয় (অবশ্যই, এ হিসেব সামগ্রিক ও বৈশ্বিক, এবং অঞ্চল ও অন্যান্য পরিস্থিতি-ভেদে মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য আছে)।

    কেন এই জগৎজোড়া প্রবণতা? আমাদের স্বাভাবিক বুদ্ধি বলবে, সবই যুগের হাওয়া। মানে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং গণতন্ত্র-মানবতাবাদ-যুক্তিবাদ এইসবের প্রভাবই এর কারণ। কথাটা সত্যি, কিন্তু সমাজবিদেরা এর চেয়েও বড় কারণ আবিষ্কার করেছেন। তাঁরা আজ সুপ্রচুর তথ্য-যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছেন, মানব সমাজের উন্নতির সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক বিপ্রতীপ। দেশের মাথাপিছু আয় বাড়লে, সমাজকল্যাণে সরকার বেশি বেশি খরচা করলে, অর্থনৈতিক অসাম্য কমলে এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের হাল ভাল হলে ধর্মের রমরমা কমতে থাকে (এখানে আর বিস্তারে যাব না, যদিও আগে এ নিয়ে আলোচনা করেছি এবং পরেও করব)। সমাজ-বিকাশের এই সাধারণ নিয়ম মুসলমান সমাজের ওপরে প্রযোজ্য হবে না, এমনটা  ভেবে নেওয়ার কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। ইরানে যা ঘটছে, সেটা সমাজ-বিকাশের এই সাধারণ নিয়মের চাপেই। নেটে একটু খোঁজাখুঁজি করলেই দেখতে পাবেন, ইরানের মাথাপিছু উৎপাদন ভারতের প্রায় আটগুণ, বাজেটের শতাংশ হিসেবে স্বাস্থ্যখাতে সরকারি খরচ প্রায় সাতগুণ এবং শিক্ষাখাতে তা দেড়গুণেরও বেশি, এবং নারী ও পুরুষ উভয়েরই আয়ু আমাদের থেকে ভাল (গণতন্ত্র আর মানবাধিকারের দশা শোচনীয়, যদিও)। কাজেই, ইরানে মৌলবাদী রাজনীতি ও প্রশাসনের ওপর কেন গণ-অসন্তোষের চাপ আছে এবং পাকিস্তান আর আফগানিস্তানে কেন তা ততটা নেই --- এইটা বুঝতে পারা খুব কঠিন না।

    বলা প্রয়োজন, সমাজ-বিকাশজাত এই চাপের খেলা সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান উন্নত পশ্চিমী দেশগুলোতেও, বিশেষত এই একুশ শতকে। এই সেদিন পর্যন্ত আমেরিকা আর আয়ার্ল্যান্ডে ধর্মবিশ্বাসের প্রাবল্য ছিল অন্যান্য উন্নত দেশের চেয়ে অনেক বেশি। ধার্মিক সমাজবিদেরা তাই দেখিয়ে বলতেন, অর্থনৈতিক উন্নতি হলেই ধর্মের রমরমা কমবে, এটা হচ্ছে গিয়ে প্রগতিবাদীদের বানানো একটা মিথ্যে কথা। কিন্তু সময় যতই গড়াচ্ছে ততই বিষয়টা জলের মত স্বচ্ছ হয়ে আসছে, এবং আপত্তি তোলবার পরিসর হয়ে আসছে অতিশয় সঙ্কুচিত। মার্কিন সমাজে ধর্মবিশ্বাসের পরিবর্তনটা দেখতে পাবেন এক নজরেই, নিচের লেখচিত্রে। লক্ষ করে দেখুন, ১৯৫০ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত আমেরিকাতে যখন খ্রিস্টানরা এসে ঠেকেছে ৮৫ শতাংশ থেকে ৬৯-এ, এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা যখন মোটের ওপর একই আছে, তখন ধর্মহীনদের শতকরা অনুপাত গিয়ে ঠেকেছে শূন্য থেকে একুশে (অন্য কিছু সমীক্ষায় এটি প্রায় তিরিশ বলে দেখানো হয়েছে, যদিও)।
     
     
     
    আর, এই শতকের প্রথম দশকে আয়ার্ল্যান্ড-বাসীর ধর্মবিশ্বাসে যা ঘটেছে, সেটা দেখে নিন নিচের সারণিতে। আয়ার্ল্যান্ড হল গোঁড়া ক্যাথোলিক অধ্যুষিত একটি দেশ। একটা উন্নত পশ্চিমী দেশের পক্ষে অবিশ্বাস্যভাবে, এই সেদিন পর্যন্তও এই দেশটিতে গর্ভপাত নিষিদ্ধ ছিল, এবং গর্ভপাতের দরকার পড়লে আইরিশ নারীদেরকে পার্শ্ববর্তী ব্রিটেনে গিয়ে হাজির হতে হত। তারপর উন্নত আধুনিক অর্থনীতির সঙ্গে রক্ষণশীল ধর্ম-সংস্কৃতির দীর্ঘ সংঘর্ষের ফলাফল তখনই সারা বিশ্বের নজরে এল, যখন দু হাজার আঠেরো সালে গর্ভপাত আইনসিদ্ধ হয়ে গেল (আয়ার্ল্যান্ড নিয়ে আমার আলাদা একটি লেখা ‘গুরুচণ্ডালি’-তে পাবেন)।
     
     
    বলা বাহুল্য, মোটের ওপর এই একই ঘটনা ঘটবার কথা মুসলমান-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতেও, এবং ঘটছেও তাইই। বেশ কয়েকটি ধর্ম-শাসিত রক্ষণশীল দেশে কমছে কঠোর ধর্মীয় বাধানিষেধ, বাড়ছে ধর্মহীনতা, এবং সাধারণ্যে কমছে ধর্মের প্রতি আনুগত্য, যদিও অনেক ক্ষেত্রেই তা  এখনও স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান নয়। বিষয়টাকে যদি খুঁটিয়ে নজর করা হয়, তাহলে এমন অনেক কিছুই হয়ত জানা যাবে, যে ব্যাপারে আমরা আগে সচেতন ছিলাম না। যেমন, ইরান-ইরাক-আফগানিস্তান যেভাবে ধর্মনিরপেক্ষ থেকে ধর্মীয় রাষ্ট্র হয়ে গেল, এবং যেভাবে তুর্কি দেশটিতে ক্রমেই শক্ত হচ্ছে মৌলবাদের মুঠি আর টলমল করছে ধর্মনিরপেক্ষতার আসন, সে নিয়ে আমরা প্রায়শই দুশ্চিন্তিত হই। ঠিকই করি। কিন্তু, আমরা কখনই খেয়াল করে দেখিনা যে, এই ধরাধামে একান্নটি মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মধ্যে একুশটিতে কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ সরকারই চলছে (সে ধর্মনিরপেক্ষতার দশা প্রায়শই আমাদের চেয়ে খুব একটা ভাল নয় যদিও, তবে সেটা তো অন্য চর্চা)। এবং, ধর্মনিরপেক্ষীকরণের প্রক্রিয়া এখনও চালু, সে তালিকায় এই সেদিনও যুক্ত হয়েছে সুদান।

    তবুও প্রশ্ন আসতেই পারে, এবং আসবেও, জানা কথা। ওপরে উদ্ধৃত আমার তরুণ বন্ধুর ভাষায়, সে প্রশ্নটা এ রকম --- “আর কোন ধর্মে আইসিস, তালিবান, বোকোহারামের মত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আছে?”। সত্যিই তো, প্রশ্ন হতেই পারে। ওপরে ব্যাখ্যা করেছি (এবং পূর্ববর্তী পর্বগুলোতেও), মৌলবাদী উত্থান সব ধর্মেই হয়েছে, শুধু ইসলামে নয়। এবং, জঙ্গি ক্রিয়াকলাপও কম বেশি হয়েছে সব ধর্মের তরফেই। সেই সত্যে ভর করে আমি হয়ত তর্ক করতে পারতাম, অন্যান্য ধর্মের মৌলবাদের সঙ্গে ইসলামের তফাতটা তাহলে গুণগত নয়, নিছকই পরিমাণগত। এরা কম, ওরা কিছু বেশি, এটুকুই মাত্র। কিন্তু, এ তর্ক শেষতক দাঁড়াবে না। পাথরের নুড়ির সঙ্গে পাথরের টিলার গুণগত পার্থক্যকে স্রেফ পরিমাণের দোহাই দিয়ে নস্যাৎ করাটা বোধহয় খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ইসলামীয় জঙ্গিপনার নিবিড়তা, ঘনত্ব, প্রচণ্ডতা এবং আন্তর্জাতিকতা, এ সবকে নিছক কম-বেশির ব্যাপার বলে উড়িয়ে দেওয়া অসম্ভব। যদি বলি, মধ্যপ্রাচ্যে একাধিক আধুনিক রাষ্ট্র থেকে খামচে নিয়ে একটা গোটা এবং আনকোরা নতুন ধর্মীয় রাষ্ট্র বানিয়ে তোলা, অনেকগুলো দেশে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার উল্টে দিয়ে মৌলবাদী রাজত্ব কায়েম করা, প্রায় সবকটি মহাদেশে বড়সড় নাশকতা চালানোর মত সংগঠন তৈরি করতে পারা --- এত সব শুধুই জঙ্গিপনার কম-বেশির ব্যাপার, তার মধ্যে আলাদা করে বলার মত গুরুত্বপূর্ণ গুণগত বৈশিষ্ট্য কিছুই নেই --- তাহলে অবশ্যই বোকামি হবে, বাস্তবকে অস্বীকার করার বোকামি। কাজেই, জঙ্গিপনার এই ভয়ঙ্কর নিবিড়তা আর ব্যাপকতাকে ইসলামীয় মৌলবাদের একটি স্বতন্ত্র গুণগত বৈশিষ্ট্য বলে স্বীকার করে নেওয়াই ভাল। কিন্তু মুশকিলটা হচ্ছে, সেটা মেনে নিলেও আসল সমস্যাটা রয়েই যায়। সব মুসলমানই তো আর মৌলবাদী জঙ্গি নন, তার এক অতি ক্ষুদ্র অংশই কেবল মৌলবাদী জঙ্গি। কাজেই, এই জঙ্গিপনাকে ইসলামীয় মৌলবাদের একটি স্বতন্ত্র গুণগত বৈশিষ্ট্য বলে মেনে নিলেও প্রশ্ন থাকে, ‘ইসলাম’ নামক ধর্মটির কোনও মৌল উপাদান থেকেই কি এই বৈশিষ্ট্যটি উৎসারিত হচ্ছে, নাকি, মুসলমান অধ্যুষিত সমাজ তথা রাষ্ট্রগুলোর  কোনও বিশেষ ঐতিহাসিক পরিস্থিতিই এ বৈশিষ্ট্যের নির্মাতা?
     
    কেউ কেউ এ প্রশ্নের উত্তর খুব দ্রুত দিয়ে ফেলতে ভালবাসেন। তাঁরা বলেন, এ বৈশিষ্ট্য অবশ্যই ‘ইসলাম’ নামক ধর্মটিরই মৌল উপাদান থেকে নিঃসৃত, কারণ, ইসলামীয় ধর্মশাস্ত্রে হিংসার অনুমোদন আছে। এ যুক্তিটি যে ভুল, সে আলোচনা ওপরে করেছি। কিন্তু কথা হচ্ছে, এ প্রশ্নের উত্তর তবে কীভাবে খোঁজা যায়? আজকের দিনে বিজ্ঞানে, বিশেষত সমাজবিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে, এ ধরনের প্রশ্নের সমাধানের জন্য যা করা হয় তাকে বলে ‘কন্ট্রোল্‌ড্‌ এক্সপেরিমেন্ট’। সমাজের ওপর তো আর পরীক্ষা চলবে না, অতএব সেখানে দরকার ‘কন্ট্রোল্‌ড্‌ অবজার্ভেশন’ বা সুনিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণ। অর্থাৎ, পুরোপুরি একই রকম করে তৈরি (বা সংগ্রহ) করে রাখা দুটি ক্ষেত্রের মধ্যে একটিতে একটি সুনির্দিষ্ট নির্ধারক উপাদান যোগ করে (বা একটি সুনির্দিষ্ট নির্ধারক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে), এবং অপরটিতে তা না করে, শুধুমাত্র প্রথম ক্ষেত্রটিতে কোনও এক নির্দিষ্ট প্রত্যাশিত ফলাফল এলো কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা, যাতে ওই নির্দিষ্ট উপাদানটির (বা প্রক্রিয়াটির) সঙ্গে ওই ফলাফলটির কার্যকারণ সম্পর্ক সন্দেহাতীতভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়। কোনও ওষুধের কার্যকারিতা প্রমাণের জন্য যেমন একই ধরনের দু দল রুগির মধ্যে একদলকে সে ওষুধ দিয়ে এবং অন্যদলকে তা না দিয়ে পরীক্ষা করা হয় যে দ্বিতীয় দলের তুলনায় প্রথম দলের কিছু বেশি উপকার হল কিনা, এও তেমনি। মনে করুন প্রশ্ন উঠল যে, মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামের যে মৌলবাদী উত্থান দেখা গেল, ইরাকের খনিজ তেল এবং আফগানিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থানগত সামরিক গুরুত্ব না থাকলেও কি তা ঘটতে পারত, শুধুমাত্র ইসলামীয় শাস্ত্র, সমাজ ও সংস্কৃতির একান্ত নিজস্ব আভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যের কারণেই? এ প্রশ্নের বিজ্ঞানসম্মত ও বস্তুনিষ্ঠ উত্তর বেরিয়ে আসতে পারে একমাত্র সেই ধরনের পদ্ধতিতেই, অর্থাৎ, ‘কন্ট্রোল্‌ড্‌ অবজার্ভেশন’ বা সুনিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। যেখানে ইসলামের প্রবল প্রভাব আছে অথচ কোনও বড়সড় অর্থনৈতিক বা সামরিক লাভালাভের পরিস্থিতি নেই, সে রকম সমস্ত জায়গাতেও কি মৌলবাদী জঙ্গিপনার উদ্ভব ঘটেছে? আবার, যেখানে ওই ধরনের পরিস্থিতি আছে অথচ ইসলাম নেই, সে রকম কোনও জায়গাতেই কি জঙ্গি আন্দোলনের উদ্ভব ঘটেনি? এই ধরনের অনুসন্ধান হয়ত আমাদেরকে এ ধরনের প্রশ্নের বস্তুনিষ্ঠ উত্তরের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারত। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ প্রসঙ্গে এ রকম গবেষণার কথা আমাদের জানা নেই।
     
    এই যে মুসলমান মৌলবাদের অস্তিত্বের কারণ হিসেবে ইসলামের আভ্যন্তরীণ কারণকে পুরোপুরিই দায়ী করা, ওপরের দুই অনুচ্ছেদে যার কথা বললাম, এর ঠিক উল্টো প্রবণতাটা হচ্ছে এর পেছনে ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ’ (বা আরও সাধারণভাবে ‘পশ্চিমী চক্রান্ত’) বা ওই জাতীয় ইসলাম-বহির্ভূত কোনও কিছুকে পুরোপুরি দায়ী করা (এবং সেইহেতু ইসলামীয় সমাজ ও সংস্কৃতির আভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যগুলোকে এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক বলে সাব্যস্ত করা)। মুসলিম মৌলবাদের উত্থানের পেছনে পাশ্চাত্য শক্তি, বিশেষত আমেরিকার ভুমিকা অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্বের সাথেই আলোচনা করা উচিত। কিন্তু, বিশ শতকের পৃথিবীর ইতিহাসের সমস্ত ঘটনাই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অঙ্গুলিহেলনে ঘটছে, চোখ বুজে এইটা বলে দিলে আপাতদৃষ্টিতে হয়ত তাকে নিন্দা করা হয়, কিন্তু আসলে শেষ বিচারে তার ক্ষমতাকে অনেকখানি বাড়িয়ে দেখা হয়। আমেরিকা (বা সাধারণভাবে ‘পশ্চিম’) মুসলমান দেশগুলোর আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল, শুধু এটুকু বললে প্রায় কিছুই বলা হয় না --- আসল প্রশ্ন হচ্ছে তারা তা পারল কী করে --- পৃথিবীর সব জায়গাতেই যে তারা যা চেয়েছে তাইই পেরেছে এমন তো আর নয়। মুসলমান সমাজ ও দেশগুলোর সুনির্দিষ্ট বিন্যাস ও ঐতিহাসিক পরিস্থিতি, বিকাশের সুনির্দিষ্ট অবস্থা, তাদের সামাজিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা, অন্তর্দ্বন্দ্ব, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সংশ্লিষ্ট সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্তাদের তরফে নানা মতাদর্শ ও গোষ্ঠী-পরিচিতি নির্মাণের খেলা, এবং কখন ঠিক কোন তাড়নায় তারা কোন বৃহৎ শক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব বা শত্রুতার সম্পর্কে আবদ্ধ হচ্ছে, আর কোন বৃহৎ শক্তিই বা তাদেরকে সামলানো বা ব্যবহার করার জন্য ঠিক কী চাল চালছে --- এই সবের ভাল বিশ্লেষণ ছাড়া বিষয়টা ঠিকভাবে বোঝাই যাবে না। তাছাড়া, এই দেশগুলোতে 'সেক্যুলার' শাসন প্রতিষ্ঠিত হবার পরেও প্রায়শই শাসকরা স্বৈরাচারি এবং দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে কেন, এবং, কেনই বা মৌলবাদীরা বারবার তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জনগণের পাশে থাকার ভাণ করতে পারে, এটাও এ প্রসঙ্গে গভীরভাবে বোঝার বিষয়।  

    বলা বাহুল্য, এ সব প্রশ্নে যথার্থ ও যথেষ্ট বিশ্লেষণ এবং নিষ্পত্তিমূলক উত্তর এখনও আসেনি সমাজবিজ্ঞানীদের তরফ থেকে। যতদিন তা না আসে, ততদিন আমরা কী করতে পারি? ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে পারি, বিষয়টি সম্পর্কে ইতিমধ্যে যা জানা গেছে সে সব জানার চেষ্টা করতে পারি, যুক্তিসম্মত ও বস্তুনিষ্ঠ চিন্তার অভ্যাস করতে পারি …………… আর কিছু পারি কি?

    হ্যাঁ, পারি বোধহয়। মন থেকে অকারণ সন্দেহ ঘৃণা হিংসা বিদ্বেষ এইসব চিহ্নিত করে তা বর্জন করার অনুশীলনটা চালিয়ে যেতে পারি।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ | ৬০৪৭৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • aranya | 2601:84:4600:5410:659a:82d6:b61f:***:*** | ০৪ জানুয়ারি ২০২৩ ০০:২৬514999
  • দেবাশিস, খুবই ভাল লাগছে পড়তে, আপনার লেখা। আমেরিকায় 'লোন উল্ফ' অয়াটাক কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই খ্রিস্টীয় সন্ত্রাসবাদী-দের করা নয়। আমেরিকায় যেহেতু গান ওনারশিপ প্রচন্ড বেশি, যে কোন লোক যে কোন কারণেই এমন হামলা করতে পারে। মানসিক সমস্যা, খ্রিস্টীয় সন্ত্রাসবাদ, ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ (বস্টন ম্যারাথন বম্বিং এর কারণ হতে পারে ) এমন অনেক কিছুই এ জন্য দায়ী তবে বহু মানুষের হাতে অস্ত্র থাকায় স্কুল, মল, চার্চ ইঃ জনবহুল জায়গায় হামলা করা সহজ 
  • aranya | 2601:84:4600:5410:659a:82d6:b61f:***:*** | ০৪ জানুয়ারি ২০২৩ ০০:৪০515000
  • দেবাশিস, আপনার কাছে কি বাংলাদেশে মৌলবাদের উথ্থান ও প্রসার নিয়ে কোন স্টাডি আছে? এই যে প্রতি বছর নিয়ম করে বহু হিন্দু মন্দির , ধর্মস্থান আক্রান্ত হয়, হিন্দুদের বাড়িতে আগুন লাগে, কয়েক বছর আগে ব্লগার হত্যা চলছিল - এর কারণ কী মধ্য প্রাচ্য বিশেষতঃ সৌদি আরবের ফান্ডিং, সেই ফান্ডিং ব্যবহার করে লাগাতার মসজিদ, মাদ্রাসা (বিজ্ঞান শিক্ষা দেবে এমন স্কুলের বদলে ) তৈরী ? কিভাবে এটাকে আটকানো যায়? 
    ৭১ এ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয় ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসাবে। কিন্তু পরবর্তীকালে সংবিধান পাল্টে রাষ্ট্রধর্ম করা হয় ইসলাম কে। এটা দুঃখের, কারণ কোন দেশের একটি রাষ্ট্রধর্ম থাকা মানেই অন্য ধর্ম কে খাটো করা। 
    বাংলাদেশ নিয়ে আগ্রহী কারণ আমার পূর্বপুরুষের দেশ, এবং এই দেশটির ঘটনার আঁচ পঃ বঙ্গ ও ভারতে এসে লাগে 
  • Debasis Bhattacharya | ০৪ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:৩৩515004
  • aranya,
     
    এটা পড়তে ভাল লাগছে জেনে আনন্দিত। ঠিক, 'লোন উল্ফ' মানেই খ্রিস্টান এমন নয়, অন্য নানা রকমই আছে। ইসলামীয় সন্ত্রাসের কিছু ঘটনাও এই গোত্রেরই। তবে, যদ্দুর জানি, এই ধরনের ঘটনার পেছনে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই থাকে 'হোয়াইট সুপ্রিমেসিস্ট' ঘরানার এবং অভিবাসী-বিরোধী কট্টরপন্থী খ্রিস্টানরাই, যারা মেজাজে সংরক্ষণশীল এবং রাজনীতিতে দক্ষিণপন্থী। এবং হ্যাঁ, এদের অনেকেরই মানসিক স্বাস্থ্য ঠিকঠাক থাকেনা। 
     
    না, কোনও দেশ বিষয়ে 'স্টাডি' বলতে আমি যা বুঝি তা বাংলাদেশ সম্পর্কে আমার নেই। যদিও, একই ইতিহাস ও সংস্কৃতির শরিক হিসেবে একজন গড় পৃথিবীবাসীর থেকে বাংলাদেশ বিষয়ে আমি কিছু বেশি জানি, জানবারই তো কথা। যেমনটি আপনিও, নিশ্চয়ই। বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের বাড়তি আগ্রহের কারণ আছে বইকি, এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ একমত। হিন্দু-পীড়নের ব্যাপারে বলি, সংখ্যালঘু জাতি ও গোষ্ঠীদেরকে পীড়ন করার ব্যাপারে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এক আশ্চর্য বিশেষজ্ঞতা আছে। ভারত পাকিস্তান বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা মায়ানমার সকলেই অর্থনীতি বিজ্ঞান প্রযুক্তি স্বাস্থ্য শিক্ষা এইসবে দুনিয়ার তলানিতে পড়ে থাকলে কী হবে, এই ব্যাপারে দুনিয়ার পথিকৃৎ হতে পারে। তাতে এইসব দেশের কত্তারা যখন লজ্জিত না হয়ে গর্বিত হতে পারেন, তখন আমার আপনার মত তুচ্ছ প্রাণি এইসব আটকাবো কীভাবে বলুন?
     
    ব্লগার খুনের হিড়িক যখন পড়েছিল, তখন আমরা লেখালিখি করেছি, মিটিং মিছিল করেছি, এখানকার খ্যাতিমান ব্যক্তিদেরকে সই সাবুদ করিয়ে শেখ হাসিনার কাছে এইসব বন্ধ করবার আবেদন পাঠিয়েছি। এর বেশি আর কীই বা করতে পারি আমরা? 
  • aranya | 2601:84:4600:5410:5c34:c82c:cafc:***:*** | ০৪ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:৪৯515005
  • 'ব্লগার খুনের হিড়িক যখন পড়েছিল, তখন আমরা লেখালিখি করেছি, মিটিং মিছিল করেছি, এখানকার খ্যাতিমান ব্যক্তিদেরকে সই সাবুদ করিয়ে শেখ হাসিনার কাছে এইসব বন্ধ করবার আবেদন পাঠিয়েছি'
     
    - ভাল লাগল, আপনাদের উদ্যোগের কথা শুনে। শ্রী জাত তখন লিখেছিলেন - অন্ধকারের কবিতা, সে জন্য তার ওপর ফতোয়া জারি আছে এখনো, বাংলাদেশে 
  • Debasis Bhattacharya | ০৪ জানুয়ারি ২০২৩ ২৩:১৮515006
  • guru,
     
    আপনার ৫ ও ৬ নং বক্তব্য ভাল বুঝতে পারিনি। আবারও মনে করিয়ে দিই, আপনার অব্যবহিত আগের মন্তব্যের ৫ ও ৬ নং-এর কথা বলছি না কিন্তু, তার আগের মন্তব্যের ৫ ও ৬ নং-এর কথা বলছি। 
     
    (৫) এশিয়া ও আফ্রিকায় নানা পশ্চাৎপদতার ফলে সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সবলভাবে রূপায়িত করা যাচ্ছে না, এ কথা খানিকটা ঠিক, আবার এ নিয়ে হয়ত কিছু তর্কও করা যায়। যেমন আমি বলতে পারি, চিন জাপান কোরিয়া আধুনিকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে যথেষ্ট যোগ্যতার সঙ্গেই আত্মীকরণ করতে পেরেছে। কিন্তু ধরুন, আমি তর্ক না করে আপনার কথা মেনেই নিলাম। তাতেও কি এইটা দাঁড়ায় যে, কঠোর পশ্চিমী ধর্মনিরপেক্ষতা আমাদের জন্য ঠিক না? তাহলে তো সেই যুক্তিতে আধুনিক অর্থনীতি গণতন্ত্র মানবাধিকার বিজ্ঞান প্রযুক্তি শিল্প সাহিত্য সবই 'আমাদের জন্য ঠিক না' হয়ে যাবে! এগুলো কোনওটাই আমাদের জন্য ঠিক না, এমনটা কি সত্যিই বলতে চান আপনি? সেটা তাহলে পরিষ্কার করে জানা দরকার। আর যদি এমন বলতে চেয়ে থাকেন যে, আধুনিক অর্থনীতি গণতন্ত্র মানবাধিকার বিজ্ঞান প্রযুক্তি শিল্প সাহিত্য সবই আমাদের জন্য ঠিক, কিন্তু শুধু ধর্মনিরপেক্ষতাটা ঠিক না, তাহলে একটু ভাল করে আপনার কাছে বুঝে নিতে চাইব, কেন বাকি সবই ঠিক শুধু ওইটাই ঠিক না। 
     
    (৬) ইসলাম একটি ধর্ম। কিন্তু 'ইসলামোফোবিয়া' তো আলাদা একটি ধর্ম নয়, একটি বিশেষ মনোবৃত্তি, যা বিভিন্ন ধর্মের লোকজন থেকে নাস্তিক থেকে প্রাক্তন মুসলমান পর্যন্ত অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। কাজেই, তা 'মৌলবাদ' বলে গণ্য হবে কেন? আর, আগের দুই পর্বে আমি মৌলবাদের স্বরূপ ও সারসত্তা নিয়ে আমার ধারণা যা ব্যক্ত করেছি, তাতে তো তা আরওই হবার কথা না! এবং একে 'অ্যান্টি-মডার্নিটি রিয়্যাকশন' বলে আখ্যা দেওয়াও কঠিন। বরং, অন্য আরেকটি মেটাফর আরেকটু ভাল হতে পারে কিনা, ভেবে দেখবেন। 
     
    ধরুন যদি এভাবে বলি, 'মৌলবাদ যদি আধুনিকতার প্রতিক্রিয়ায় ধর্মের অ্যালার্জি হয় তবে ইসলামোফবিয়া হল গিয়ে তার সেকেন্ডারি ইনফেকশন' --- তাহলে কেমন শোনাবে? 
  • &/ | 151.14.***.*** | ০৫ জানুয়ারি ২০২৩ ০৪:৪০515007
  • মাত্র কয়েকদিন আগে সোশাল মিডিয়ায় একটি ছবি নিয়ে খুব তোলপাড় হল। এখনও হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির সঙ্গে কয়েকজন ছাত্রীর ছবি। ছবিতে ছাত্রীরা সবাই আপাদমস্তক কালো বোরখায় আবৃত, কারুর মুখ দেখা যাচ্ছে না। অনেকেই দুঃখ করছেন স্বাধীনতার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা শাড়ি পরা অবস্থায়, খোলা চুলে, উজ্জ্বল মুখে হেঁটে যাচ্ছেন--এরকম ছবি পাওয়া গিয়েছে আর স্বাধীনতার এত বছর পরে কিনা এরকম বোরখা আবৃত অবস্থা!
    নন-লিনিয়ার আধুনিকতা বলতে কি এরকমই কিছুকে সাপোর্ট করা হয়? যদি হয়ে থাকে, তাহলে --- বুঝতেই পারছেন।
  • দেবাশিস্ ভট্টাচার্য | 2401:4900:706b:cabd:f18b:3f3f:1f40:***:*** | ০৫ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:৪৫515008
  • 'guru' ইতিপূর্বে যা বলেছেন সে বিষয়ে আমার বক্তব্য বলা হয়ে গেল। এবার আমার জবাবের প্রেক্ষিতে তিনি যা বলেছেন সে নিয়ে কথা বলা যাবে। তার মধ্যে 'লিনিয়ারিটি'প্রসঙ্গ আসতেই পারে।
  • Debasis Bhattacharya | ০৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:১৮515010
  • guru,
     
    আমার জবাবের প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে যা বলেছেন, সে নিয়ে এবার কিছু বলার সুযোগ পাব। 
     
    (১) আমি সম্পূর্ণ একমত, অবাধ নির্বাচন চালু করাটা গণতান্ত্রিক আধুনিকতাবাদী সংস্কারের অবিচ্ছেদ্য ও অপরিহার্য অংশ। এটা করতেই হবে, এমন কি কখনও গণতন্ত্র ও আধুনিকতার বিরোধী শক্তি ক্ষমতায় এসে যেতে পারে এ ঝুঁকিকে মেনে নিয়েই।
     
    (২) 'লিনিয়ার মডার্নিটি' বলতে ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন, সেটা এখনও আমার কাছে খুব পরিষ্কার নয়। পশ্চিম যদি ভেবেই থাকে যে সব সমাজেরই ধর্মবিশ্বাসের বিবর্তনের নকশাটা তাদেরই মতন, সে ভাবনাটা ভুল না ঠিক সে তো পরের বিচার, কিন্তু সে ধারণাকে 'লিনিয়ার' আখ্যা দেবার কারণ কী? আর, তার সঙ্গে কলোনাইজেশন-এরই বা সম্পর্ক কী?
     
    (৩) ধর্মনিরপেক্ষতার আবাহনের সঙ্গে কেন বারবার উপনিবেশ-বিরোধিতার প্রশ্ন মিশে যাচ্ছে, সেটা আমি বুঝতে পারিনি। আমরা কি কোথাও এ দুটোকে এক করে ফেলছি? ঔপনিবেশিক প্রেক্ষিত থাকলে যে ধর্মনিরপেক্ষতা সহ আধুনিকতার অন্য সমস্ত দিকই আত্মীকরণে সমস্যা হয়, এ তো আর অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু আমার বক্তব্য হচ্ছে, সমস্যা সত্ত্বেও তো আপনাকে শেষে গিয়ে ওটাই করতে হবে, কারণ, আমরা না পারব সতীদাহ-নরবলির যুগে ফিরতে, আর না পারব আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তি অস্ত্রশস্ত্রকে যাগযজ্ঞ আর তুকতাক দিয়ে ঠেকাতে। 
     
    তাহলে, ঔপনিবেশিকতার অজুহাত দিয়ে লাভ কি?
     
    (৪) আপনি চান, এশিয়া আর আফ্রিকা পশ্চিমের সঙ্গে 'কোর-পেরিফেরি' সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসুক, এবং আমিও ঠিক তাইই চাই --- প্রাচ্য জ্ঞানে ও সামর্থ্যে প্রতীচ্যের সমকক্ষ হয়ে উঠুক। কোনও সুস্থ মস্তিষ্কের লোক কি অন্য কিছু চাইতে পারে? 
     
    কিন্তু, প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতা আর আধুনিকতা ছাড়া আমরা তা কোনওদিনই করতে পারব বলে আমার মনে হয়না। আপনার যদি তা মনে হয়, তো ঠিক কিভাবে, সেটা আপনার থেকে জেনে নিতে চাইব। 
  • guru | 115.187.***.*** | ০৬ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:৩০515018
  • @দেবাশিস বাবু 
     
                          অনেক ধন্যবাদ অনেক ধৈর্য ধরে আমার প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্য | আমি আমার বক্তব্য কয়েকটি পয়েন্টে রাখছি |
     
    ১ | দেখুন আধুনিকতা এশিয়া ও আফ্রিকার দরকার তাতে কোনো সন্দেহ নেই | এইখানে আমি আপনি একমত | এশিয়া ও আফ্রিকাতে মুক্ত অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র দরকার সে যেই ক্ষমতাতে আসুক না কেন সেই বিষয়েও আমি আপনি একমত | এখন আমি যেটা বলতে চাই সেটা হোলো আম্রিকি রাষ্ট্রীয় স্বার্থ কখনোই চাইবেনা এশিয়া ও আফ্রিকাতে কোনো রাষ্ট্রই এমন কোনো রাষ্ট্রীয় নীতি গ্রহণ করবে যার ফলে সে এই নিও কলোনিয়ালিস্ট কোর পেরিফেরি সম্পর্কের বাইরে চলে যাবে | 
     
    এর কয়েকটি খুব বড়ো উদাহরণ সামনে আছে | ধরুন পশ্চিম এশিয়া তে ইরাক ও সিরিয়াতে দুটি আরব জাতীয়তাবাদী সরকারের আমলে আধুনিকতার দিকে এরা অনেকদূর এগিয়েছিলো বিশেষত নারীর শিক্ষা ও স্বাস্থ এইসব বিষয়ে | কিন্তু নিজস্ব রাষ্ট্রীয় স্বার্থে তাদের পুরোপুরি ধ্বংস করলো আম্রিকা যার ফলে আর কত বছরে তারা যে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে তার কোনো ঠিক নেই | উত্তর আফ্রিকাতে লিবিয়া গদ্দাফির আমলে সবচেয়ে বেশী উন্নতি কোরেছিলো এখন তাদের দেখলে চোখে জল আসে | মূলতঃ আম্রিকি রাষ্ট্রীয় স্বার্থের নিও কলোনিয়ালিজম এর জন্যই এই দশা |
     
    যেমন ধরুন আম্রিকি দোস্ত ইস্রায়েল যখন প্যালেস্টিনিয়ানদের উপর অকথ্য অত্যচার করে তখন আম্রিকার আধুনিকতার সমর্থকেরা কিছুই বলেনা কিন্তু যদি রাশিয়া আম্রিকি পুতুল উক্রাইনের সরকারের উপরে আক্রমণ করে তখনি তাদের ভোল পাল্টে যেতে পারে যদিও রাশিয়া কিন্তু নিজের মতো করে আধুনিকতার চেষ্টা করছে |
     
    একই ভাবে আম্রিকা চীনের তাইওয়ানের নীতি নিয়ে দাঁত নখ উঁচিয়েই আছে এবং চীনের বিরুদ্ধে চিপ ওয়ার বাঁধিয়ে দিলো যার একটাই উদ্দেশ্যঃ কোনোভাবেই যেনো চীন আম্রিকার এই সেমি কন্ডাক্টরের কোর পেরিফেরি অর্থনীতির বাইরে না যেতে পারে | অর্থাৎ আম্রিকা কোনোভাবেই চায়না এশিয়া ও আফ্রিকার কোনো দেশ নিও কলোনিয়াল কোর পেরিফেরি অর্থনীতির বাইরে যাক |
     
    অর্থাৎ কোনো রাষ্ট্র তখনই পশ্চিমি আধুনিকতার দিকে যেতে পারে যখন সে নারী শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের দিকে যথেষ্ট খরচ করবে কিন্তু বর্তমানে বাস্তবে নিও কলোনিয়াল অর্থনিতি যেইগুলি এশিয়া ও আফ্রিকাতে IMF, ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক জ্বাতীয় সংস্থাগুলি নিয়ন্ত্রণ করে তারা কোনোভাবেই এই দিকে খরচ করতে দেবেনা |
     
    আম্রিকি রাষ্ট্রীয় স্বার্থ বিশেষ করে তার মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সের স্বার্থ প্রকৃত আধুনিকতার পরিপন্থী | দেখুন আমি আগেও বলেছি যে আম্রিকা মিলিটারি ভেটেরান ও ইউক্রেইন্ জাতীয় যুদ্ধে যত খরচ করে মাত্র এক বছর সেই গুলি পুরোপুরি বন্ধ করে দিলে মনে হয় সমগ্র এশিয়া ও আফ্রিকার গরিব দেশগুলিতে আগামী দশ বছরের নারী শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা হয়ে যাবে |
     
    আপনারা যারা আধুনিকতার এক্টিভিস্ট তারা এই ব্যাপারে আন্দোলন করতে পারেননা যাতে আম্রিকা মিলিটারি ভেটেরান খাত ও ইউক্রেইন্ জাতীয় যুদ্ধে ফালতু খরচ বন্ধ করে এশিয়া ও আফ্রিকার গরীব দেশগুলোতে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উপর খরচ করতে বাধ্য হয় | যতক্ষণ এই ব্যাপারে আপনারা কিছুই না করে হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন ততক্ষন এশিয়া ও আফ্রিকার গরিব মানুষের মধ্যে আধুনিকতা আসবেনা |
     
    ২ | মডার্নিটি লিনিয়ারিটি নিয়ে আমি মনে করি মূল সমস্যা হচ্ছে পশ্চিমি আধুনিকতার সমর্থকদের তরফ থেকে উদারতার মনোভাবের | পশ্চিমী মডার্নিটি অনেকটাই বাইনারি ভাবে দুনিয়াকে দেখে | ধরুন বোরখার প্রসঙ্গটি তুলি | একটি মুসলিম মেয়ে বাড়ির বাইরে পড়াশোনা ও চাকরি বাকরি করতে যায় কিন্তু সে বাড়ির বাইরে যাবার সময়ে হেজাব বা বোরখা পরে এবং তার নিজের মেয়েদেরও একইভাবে বাঁচতে শেখায় অন্যদিকে আরেকটি মুসলিম মেয়ে পড়াশোনা চাকরি বা সংসার ও সন্তান করতে খুব একটা ইচ্ছুক নয় কিন্তু সোশ্যাল সিকিউরিটি এর উপরে বেঁচে থাকতে চায় ও প্রকাশ্যে বিকিনি পরে | এখন পশ্চিমি আধুনিকতা দ্বিতীয় মেয়েটি যে আনপ্রোডাক্টিভ তাকেই সমর্থন করে যেহেতু সেই মেয়েটি কোনো বাচ্চাকে পৃথিবীতে এনে মুসলিম সংখ্যা বাড়াচ্ছেনা যেটি পশ্চিমী আধুনিকতার মূল চাহিদা মুসলীম নারীর কাছে | অপরদিকে প্রথম মেয়েটি প্রোডাক্টিভ হলেও পশ্চিমী আধুনিকতা তাকে স্বীকার করেনা আধুনিক বলে যেহেতু সে পশ্চিমী আধুনিকতার বাইনারি চাহিদাটি অর্থাৎ সন্তানের জন্ম না দেওয়া এই চাহিদাটি পূর্ণ করছেনা | এখন এই জায়গাতেই আমি মনে করি পশ্চিমী আধুনিকতার একটু উদার ও মুক্তমনা হবার ও প্রথম মেয়েটিকে আধুনিক হিসেবে মেনে নেবার প্রয়োজন যেহেতু সে সামাজিকভাবে দ্বিতীয় মেয়েটির তুলনাতে অনেক বেশি প্রোডাক্টিভ |
     
    ৩ | আমি ইসলামোফোবিয়াকে ধর্ম বলে মনে করি এইকারণে যে আমি ধর্ম মানে বুঝি যাহা ধারণ করে | বর্তমানে যারা ইসলামোফোবিক তারা তাদের দিনের বেশির ভাগ সময়টাই ইন্টারনেটে বা অন্যান্য মাধ্যমে কাটে ইসলামোফোবিক প্রচার ও প্রোপাগান্ডা শুনে অর্থাৎ islamophobic প্রচারের মাধ্যমেই তারা নিজেদের জীবনের অনেকটাই সময় কাটায় অর্থাৎ তাদের জীবনের মূল ধারণকারী ইমোশন হলো ইসলামোফোবিয়া | এখন জন্মসূত্রে প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী এইসব মানুষ যেকোনো প্রতিষ্ঠানিক ধর্মেরই হতে পারে তা হিন্দু মুসলিম খ্রীষ্টান শিখ বৌদ্ধ জৈন এমনকি নাস্তিক হলেও তারা ইসলামোফোবিক ধর্মের অধিকারী যেহেতু এটি তাদের জীবনধারণকারী মূল ইমোশন | যেমন ধরুন আপনি নিজে পশ্চিমী আধুনিকতার সমর্থক অর্থাৎ এটি আপনার ধর্ম যেহেতু আপনি এর প্রচার ও প্রসারে আপনার দিনের বেশির ভাগ সময় কাটান অর্থাৎ এই ইমোশন বা আদর্শ যাই বলুন সেটি আপনার জীবন ধারণ করে | এখন বাস্তবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আপনি নিজেকে নাস্তিক সেক্যুলার যুক্তিবাদী মুক্তমনা বা অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানের বলেই নিজের পরিচয় দিন না কেন |
     
    আপনার মতামতের অপেক্ষা রইলাম |
  • r2h | 192.139.***.*** | ০৬ জানুয়ারি ২০২৩ ২১:২৮515026
    • guru |০৬ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:৩০
    • ... যাতে আম্রিকা মিলিটারি ভেটেরান খাত ও ইউক্রেইন্ জাতীয় যুদ্ধে ফালতু খরচ বন্ধ করে এশিয়া ও আফ্রিকার গরীব দেশগুলোতে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উপর খরচ করতে বাধ্য হয় | যতক্ষণ এই ব্যাপারে আপনারা কিছুই না করে হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন ততক্ষন এশিয়া ও আফ্রিকার গরিব মানুষের মধ্যে আধুনিকতা আসবেনা |...

    এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলির মধ্যে আধুনিকতা আনার জন্যে আমেরিকাকে দাতব্য করতে হবে - এমন দাবি শুনলে আমেরিকা হেসে লুতুপুতু হয়ে যাবে না? মানে পয়সা যদি খরচ করতেই হয় তাহলে তো নিজের দেশের জন্যে করাটাই স্বাভাবিক। মিলিটারির খরচ বাঁচিয়ে শিক্ষা স্বাস্থ্য নাগরিকদের মনোরঞ্জন লাঠিখেলা কাঠিনাচ সে যাই হোক। আর এদিক সেদিক যদি কিছু দেয়।
    কতগুলি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ তাদের উন্নতির জন্যে অন্য একটি দেশের দাতব্যের ওপর নির্ভর করে থাকবে, না হলে তাদের কিছুই হবে না, এ আজব ব্যাপার। খামোখা সার্বভৌমত্ব রেখেই বা লাভ কি তাহলে।
  • aranya | 2601:84:4600:5410:5d32:ea30:6a6e:***:*** | ০৬ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:২৪515027
  • @ গুরু, আপনি কি ভাই নিচের পয়েন্ট গুলো র ব্যাপারে সিরিয়াস, মানে সত্যিই এমন টা ভাবেন -
     
    ১। বোরখা ও হিজাব পরা আধুনিকতার নিদর্শন
     
    ২।  মুসলীম নারীর কাছে পশ্চিমী আধুনিকতার মূল চাহিদা সন্তানের জন্ম না দেওয়া
     
    ৩। আমেরিকা যাতে এশিয়া ও আফ্রিকা য় স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে খরচ করে, তার জন্য ভারতের এক্টিভিস্ট-দের আন্দোলন করা উচিত 
  • dc | 2401:4900:232d:371c:1cd0:4fd8:d415:***:*** | ০৬ জানুয়ারি ২০২৩ ২৩:২৪515029
  • "আমেরিকা যাতে এশিয়া ও আফ্রিকা য় স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে খরচ করে, তার জন্য ভারতের এক্টিভিস্ট-দের আন্দোলন করা উচিত"
     
    laughlaugh
  • dc | 2401:4900:232d:371c:1cd0:4fd8:d415:***:*** | ০৬ জানুয়ারি ২০২৩ ২৩:২৫515030
  • অরণ্যদা মনে হচ্ছে এটা মিস করে গেছেনঃ 
     
    "উত্তর আফ্রিকাতে লিবিয়া গদ্দাফির আমলে সবচেয়ে বেশী উন্নতি কোরেছিলো এখন তাদের দেখলে চোখে জল আসে"
     
    laugh
  • হে হে | 2405:8100:8000:5ca1::f6:***:*** | ০৬ জানুয়ারি ২০২৩ ২৩:৪৮515031
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:3379:9571:2c78:***:*** | ০৭ জানুয়ারি ২০২৩ ০৩:২২515038
  • এশিয়া আফ্রিকার দেশগুলো দাতব্যের দাবী করতে যাবে কেন? রিপারেশনের দাবী করবে। ইউরোপ আমেরিকা এই দেশগুলো থেকে যা লুঠপাট করেছে সেগুলো মুদ্রাস্ফীতি, সুদ, আর ইমোশনাল মেটিরিয়াল ড্যামেজের ক্ষতিপূরণ দিলেই হবে।
  • r2h | 192.139.***.*** | ০৭ জানুয়ারি ২০২৩ ০৩:৩৯515039
  • এটা একটা যুক্তি অবশ্যই। কিন্তু এটা বাস্তবে সম্ভব করতে চাইলে জাপান চীন, বর্গী বাঙালী, চীন তিব্বত, পাকিস্তান বাংলাদেশ নিয়ে যে জটিলতা শুধু দক্ষিন এশিয়াতেই হবে তার সুযোগে কামান বেচে সাহেবরা আরো লাল হয়ে যাবে। ওদিকে ওদের নিজেদের আলমারিও স্পেন লাটিন আমেরিকা পর্তুগাল ইত্যাদি মধ্যযুগীয় কংকালে ভর্তি।
  • &/ | 151.14.***.*** | ০৭ জানুয়ারি ২০২৩ ০৩:৫৭515040
  • আরও পিছিয়ে গেলে আছে আর্য-অনার্য ব্যাপার, সেই কোল ভীল মুন্ডা ইত্যাদি ভূমিপুত্রদের উৎখাত করে আর্যদের দেশ দখল। আরও পিছিয়ে গেলে আরও ফ্যাচাং আছে। নিয়ানডার্থালদের কেস আছে।
  • &/ | 151.14.***.*** | ০৭ জানুয়ারি ২০২৩ ০৪:০৫515041
  • এইভাবে খ্যাঁচা লাগিয়ে দিলে এক্কেবারে নারদ নারদ, লেগে যা বাঙালি বর্গী। লেগে যা চীনে জাপানে। লেগে যা তিব্বতে রাণাঘাটে। মুহাহাহাহা।
    (অতীতের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে এখন টাকা দিতে হবে, এটা এমন একটা জটিল ফাঁদ, যে প্রায় কোনোদেশই বাদ পড়বে না। অতীতের পাপের ঝোলায় প্রায় সবারই কিছু না কিছু আছেই)
  • দেবাশিস্ ভট্টাচার্য | 2401:4900:3148:382e:0:6d:2804:***:*** | ০৭ জানুয়ারি ২০২৩ ০৯:৪৮515043
  • guru,
     
    এবার বোধহয় আমাদের আলোচনায় 'রিগর' জিনিসটা কমে যাচ্ছে, আমরা একটু আলগা আর অসতর্ক হয়ে পড়ছি। তর্ক বা আলোচনা যতক্ষণ আঁটোসাঁটো থাকে, ততক্ষণ তার মধ্য দিয়ে ঝাপসা কথাগুলো ক্রমশ আরও স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠতে থাকে, এবং আমরা ক্রমাগত মূল প্রশ্নগুলোর সমীপবর্তী হতে থাকি। কিন্তু আলোচনা যখনই তরল হয়ে যেতে থাকে, তখন অগ্রগতি থেমে যায় এবং আমরা একই কথার চারপাশে ঘুরপাক খেতে থাকি। আমার মনে হচ্ছে, এখানে এখন তাইই ঘটছে। রসিকতা আর হালকা বিদ্রূপের কথা বলছি না, বরং ওগুলো অল্পস্বল্প থাকলে আলোচনা উপভোগ্য হয়। কিন্তু, যুক্তির নিজস্ব গতিপথ থেকে সরে গেলে আলোচনা ঘেঁটে যায়।
     
    (১) আমরা আমাদের দেশে ধর্মনিরপেক্ষতার দাবি তুলব, শিক্ষা আর চিকিৎসায় হিন্দুকরণকে বাধা দেব, আইন যাতে নিরপেক্ষ হয় তার দাবি তুলব, ধর্মীয় ঘৃণাভিত্তিক রাজনীতির বিরোধিতা করব --- এতে বার বার আমেরিকার কথা আসছে কেন, একদমই বুঝিনি। আমেরিকা আফ্রিকার শিশুদের শিক্ষার জন্য খরচ না করে ইউক্রেন-যুদ্ধে টাকা দিচ্ছে, অতএব আমরা ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারব না --- এ কেমন আবদার? এটা কি 'আকাশেতে ঝুল ঝোলে, কাঠে তাই গর্ত' গোছের তর্ক নয়?
     
    (২) এর আগে বললেন, পশ্চিম অন্যদের ধর্মবিশ্বাসের পরিবর্তনের নকশাকে নিজেদের মত করে ভাবে, এটাই 'লিনিয়ারিটি'। এখন বলছেন, মুসলমান মেয়েদেরকে পশ্চিম যে 'বাইনারি'-তে দেখে, সেটাই নাকি লিনিয়ারিটি। পড়াশোনা চাকরি সংসার সন্তান এইসব কিছুই না করে শুধু সামাজিক নিরাপত্তার ওপর ভর করে দিনরাত বিকিনি পরে বসে থাকে --- এমন আশ্চর্য মুসলমান কন্যা আপনিই বা কোথায় পেলেন আর পশ্চিমই বা কোথায় পেল, তা মোটেই বুঝতে পারিনি। আর যদি পেয়েই থাকেন, তো তার মধ্যে লিনিয়ারিটি কোত্থেকে আসছে, সেটা আরওই বুঝতে পারিনি।
     
    (৩) যা ধারণ করে থাকে তাইই যদি ধর্ম হয়, তাহলে আপনার বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্ক-টাকে সবার আগে 'ধর্ম' বলতে হবে, অত্যন্ত সহজবোধ্য কারণে। রাজি আছেন?
  • guru | 146.196.***.*** | ০৭ জানুয়ারি ২০২৩ ২১:১৪515063
  • দেবাশীষ বাবু 
     
    ১ | আপনি যে ভারতীয় এক্টিভিস্ট এই ব্যাপারটি আমার জানা ছিলোনা আমি ভেবেছিলাম আপনি প্রবাসী বাঙালী | আর তাছাড়া আমি আপনার আলোচনা থেকে আপনি যে শুধুমাত্র ভারতের ব্যাপারেই এটা বলছেন সেটাও আমি বুঝিনি আমি ভেবেছি আপনি সারা পৃথিবীর ব্যাপারেই পাশ্চাত্য আধুনিকতার ইম্প্লিমেন্ট করার কথা বলছেন | আপনি আপনার উত্তরে আপনার আলোচনার স্কোপ ডিফাইন করে দিলেই হতো যেটা এখন আপনি করলেন | যাগ্গে আমি আপনি একটা ব্যাপারে কি একমত হতে পারি যে একটি দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ে বেশী খরচ না করলে আধুনিকতা আস্তে পারেই না ? 
     
    যদি হয়ে থাকেন তাহলে বলছি যে আম্রিকি মিলিটারী ইন্ডাস্ট্রিয়াল এর বাৎসরিক বাজেট অন্তত ৮০০ থেকে ৮৫০ বিলিয়ন ডলার এবং এই মিলিটারি ইন্ডাষ্টিয়াল কমপ্লেক্সের অন্তত ১০ পারসেন্ট যদি তৃতীয় বিশ্বে স্বাস্থ্য ও শিক্ষাতে লাগানো যায় ক্ষতি কোথা ? তাছাড়া আমার পরিচিত বহু ব্যক্তি খোদ আম্রিকাতে বসে এই নিয়ে ক্যাম্পেইন করেছেন ও করছেন যাতে এই বিপুল বাজেট এর কিছুটা অন্ততঃ মানবকল্যাণে লাগানো যায় | এতে আপনার পশ্চিমী আধুনিকতার বিরোধীতা কিভাবে হচ্ছে বুঝতেই পারছিনা | আপনি কী তাহলে পশ্চিমী আধুনিকতা আর আম্রিকি মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সের স্বার্থ দুটি একই মনে করেন নাকি ?
     
    ২ | ভারতের ক্ষেত্রে সত্যি পশ্চিমী আধুনিকতার প্রয়োজন আছে বেশ কিছু ক্ষেত্রেই এটা নিয়ে আমরা দুজনেই একমত | স্বাস্থ্য ও শিক্ষা এই দুটি  ক্ষেত্রে আমি মনে করি বিশেষ করে পশ্চিমী আধুনিকতার ব্যবহারের প্রয়োজন আছে | যেমন ধরুন সরকারী স্কুলে মিড ডে মিলে ডিম ও অন্যান্য আমিষ খাদ্য দেবার আমি ঘোরতর পক্ষপাতী | এখন ভারতে বিজেপি শাসিত বেশ কিছু রাজ্যে সরকারী স্কুলে মিড ডে মিলে প্রায় আইন করে আমিষ খাদ্য দেওয়া যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এর ফলে ভবিষ্যতে এই সব রাজ্যের ক্ষতি হবে এবং তা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি | এই একটি ব্যাপারে কি আমরা এক মত হতে পারি ?
     
    ৩ | আপনি আধুনিকতা বলতে ঠিক কি বুঝছেন সেটির স্কোপ ডিফাইন করে দিলে ভালো হয় কেননা আমার মনে হয়  এখানে আমাদের মধ্যে সবার প্রথমে আধুনিকতার সংজ্ঞা ও স্কোপ ধরে নেবার প্রয়োজন আছে তাহলে আলোচনার সুবিধা হবে |
     
    ৪ | আমি এই একটি ব্যাপার দেখেছি যে অনেক যুক্তিবাদী নাস্তিক মুক্তমনা সেক্যুলার মানবতাবাদী কিছুতেই তাদের বিশ্বাস বা ইডিওলজি কে ধর্ম বলতে চাননা | এর কারণটি কি বলতে পারবেনকি ? আর আমি যখন বলছি ধর্ম তাই যা ধারণ করে এটির এতো অতি সরলীকরণ করে আপনি পুরো ব্যাপারটাকেই অতি তরল করে দিলেন |  আপনি কি আপনার কাছে কোনো ধর্ম কি সেটি ডিফাইন করতে পারবেন কি ? আপনার  কাছে ইসলামোফোবিয়া একটি আধুনিকতার ধর্ম কেন নয় আপনি বলে দিতে পারবেন কি ? 
     
     
  • guru | 146.196.***.*** | ০৭ জানুয়ারি ২০২৩ ২১:২৫515065
  • @ডিসি 
     
              লিবিয়ার গদ্দাফি পূর্ব ও পরবর্তী ইতিহাস যে জানে তার কাছে আমি কি বলেছি সেটা খুব পরিষ্কার হয়ে যাবে |  
     
    @অরণ্য 
                দেখুন আপনার সব কথার উত্তর দিচ্ছি যদি আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দেন |
     
              ১ | আপনি যে ইসলামোফোবিয়া ধর্মে বিশ্বাসে ব্যক্তি তা গুরুতে আমরা সবাই জানি | ইসলামোফোবিয়ার বৈশিষ্ট গুলি সবই আপনার মধ্যে ফুটে উঠছে | আপনি কি ইসলামোফোবিয়াকে আপনার আধুনিকতার অঙ্গ মনে করেন ??
     
     
       
  • র২হ | 96.23.***.*** | ০৭ জানুয়ারি ২০২৩ ২৩:৩২515066
  •  
    • guru | ০৭ জানুয়ারি ২০২৩ 
    • ...@অরণ্য 
                  ...
                ১ | আপনি যে ইসলামোফোবিয়া ধর্মে বিশ্বাসে ব্যক্তি তা গুরুতে আমরা সবাই জানি | ...
     
    না, সবাই তো জানে না। এই যেমন আমিই জানি না।
    যত আজাইরা কথা।
  • gablu gublu | 115.187.***.*** | ০৮ জানুয়ারি ২০২৩ ০০:৩৯515067
  • এইবার খেলা জমেছে। নিরামিষ আলোচনা চলছিল। এবার মশলা পড়েছে। সবাইকে ধন্যবাদ। এগোন আরো 
  • দেবাশিস্ ভট্টাচার্য | 2401:4900:3148:382e:0:6d:2804:***:*** | ০৮ জানুয়ারি ২০২৩ ০১:৩২515068
  • guru,
     
    আপনি আমাকে প্রবাসী বাঙালি ভেবে বসায় আমি যারপরনাই হতভম্ব, তবে আপনি আমার বক্তব্য ঠিকই বুঝেছেন --- আমি সারা পৃথিবীতেই পশ্চিমী আধুনিকতা প্রবর্তনের পক্ষপাতী। আমি মনে করি, এ ব্যাপারে অন্তত, ভারতে বসে আমি যা দাবি করছি, তা চিন জাপান নাইজেরিয়া পেরু সব জায়গাতেই করতে পারতাম। কাজেই, আমার সম্পর্কে আপনার এ ধারণা পরিবর্তনের কোনও প্রয়োজন নেই। 
     
    স্বাস্থ্য আর শিক্ষায় খরচ না করলে আধুনিক হওয়া যাবেনা, ঠিক। তবে কিনা, আধুনিক বোধবুদ্ধি তৈরি না হলে স্বাস্থ্য আর শিক্ষা ব্যাপারটা কী এবং কেন তা জরুরি এই উপলব্ধিটাও গজাবে না, এই উল্টো কথাটাও বোঝা খুবই জরুরি।
     
    না, আমেরিকার সামরিক বাজেটের ১০ শতাংশ তৃতীয় বিশ্বের জন্য খরচা হলে আমার কোনও আপত্তি নেই। এমন কি, বললে বিশ্বাস করবেন না, যদি ১০০ শতাংশই ওভাবে খরচা করিয়ে দিতে পারেন, তাতেও আপত্তি করব না। পরীক্ষা প্রার্থনীয়!
     
    আমেরিকা তৃতীয় বিশ্বের জন্য কিছু খরচ করুক --- আমেরিকায় বসে বা না বসে এ রকম দাবি অনেকেই করে থাকেন, এটা শুনেছি। তবে, তারা সব আপনার পরিচিত, এইটা অ্যাকদম জানা ছেলোনাকো। 
     
    আমিও স্কুলের বাচ্চাদের ডিম খাওয়ানোর পক্ষে, এবং বিজেপি যে তাদেরকে নিরামিষাশী বানানোর চেষ্টা করছে তার বিপক্ষে। তবে, ক্যাইসটায় যে আম্রিগা জড়িত, সেটা জানা ছেলোনাকো। 
     
    আমি ছোটবেলায় একজনকে জানতাম, সে যে কোনও প্রসঙ্গে সন্দেশের কথা টেনে আনত। যেমন, কেউ হয়ত বলল, এ পাড়ার মেয়েদের স্কুলটার কোনও জবাব নেই, সে তখন সঙ্গে সঙ্গে বলবে, হলে কী হবে, ওর পাশে যে মিষ্টির দোকান আছে তারা সন্দেশটা জঘন্য বানায়। বা ধরুন কেউ বলল ---  আপনি কি জানেন যে আশুতোষ মুকুজ্জে একই সঙ্গে একজন গণিতবিদ শিক্ষাবিদ ও আইনবিদ ছিলেন --- তখন সঙ্গে সঙ্গে সে বলে উঠবে, আপনি কি জানেন যে আশু মুকুজ্জে সন্দেশ খেতে কত ভালবাসতেন? এই রকম আর কি! আপনার আম্রিগা ক্যাইসটা সেই রকম নাকি?
     
    আধুনিকতা আর ধর্ম নিয়ে আলোচনায় ওদুটো কথা আমরা সাধারণত যে অর্থে ব্যবহার করি সেটুকু জানলেই হয়, সংজ্ঞা নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার পড়েনা। বরং, সাধারণ অর্থ ভুলে গিয়ে সংজ্ঞা খুঁজে বেড়ালে সমস্যা বাড়ে। রাস্তায় ষাঁড়ে তাড়া করলে যদি ষাঁড়ের সংজ্ঞা নিয়ে ভাবেন তাতে যে বিপদ, এখানেও ঠিক তাই। 
  • aranya | 2601:84:4600:5410:710a:ee70:14dc:***:*** | ০৮ জানুয়ারি ২০২৩ ০৮:০৭515071
  • গুরু, ভাই টি, আপনি খুবই রসিক মানুষ। আমাকে ইসলামফোব আখ্যা দেওয়াটা খাসা হয়েচে, গুরুর সবাই তা জানে - এটা আরও ভাল, তবে সবার চেয়ে ভাল - 
    না, পাঁউরুটি আর ঝোলা গুড় নয়, সোশাল সিকিউরিটির উপর নির্ভরশীল, বিকিন পরিহিতা, সংসার বিরাগী, মুসলিম আধুনিকার ছবি । এ একেবারে মোক্ষম, চোখে জল এসে যায়:-) 
  • guru | 146.196.***.*** | ০৮ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:৫০515082
  • @দেবাশীষ বাবু ,
     
                           আমরা তাহলে অনেক ব্যাপারেই একমত হতে পারছি | এবার দেখা যাক আমাদের divergence এর বিষয়গুলি |

    ১ | ভারতের ক্ষেত্রে আধুনিকতার ইমপ্লিমেন্টেশন এর ক্ষেত্রে অনেক স্ট্রাকচারাল ইস্যু আছে যেটির কোনো আশু সমাধান নেই | যেমন ধরুন ভারতের কিছু কোস্টাল রাজ্য যেমন কেরালা তামিল নাড়ু প্রভৃতি রাজ্যগুলির মধ্যে আধুনিকতার চেতনা অনেক বেশী কিন্তু যেহেতু এইসব রাজ্যগুলির জনসংখ্যা গোবলয়ের অর্ধ শিক্ষিত রাজ্য গুলোর থেকে কম সেহেতু তাদের লোকসভাতে সিট কম ও কাজেই তাদের জাতীয় পলিসিমেকিং এর ক্ষেত্রে গূরুত্ব অনেক কম | আরো ভয়ের ব্যাপার যে গোবলয়ের রাজ্যগুলো তাদের লোকসভাতে সংখ্যাধিক্যের জোরে তাদের সমাজের বৈশিষ্ট্য এই উন্নত রাজ্যগুলোতে চাপিয়ে দিতে চাইছে | 

    অর্থাৎ আধুনিকতায় অনেকটাই অগ্রসর হবার পরেও শুধুমাত্র জনসংখ্যা কম হবার কারণেই (যেটাও আধুনিকতার অগ্রসর হবার একটি সুফল বলা যায় ) এই অগ্রসর রাজ্যগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে | এর ফলে এই দেশে আধুনিকতা অনেকটাই ধাক্কা হবে | এর বিষয়ে আপনার মতামত জানার অপেক্ষা রইলো |                   
     
    ২ |  আপনার সঙ্গে কথা বলতে বলতে আমি পশ্চিমী আধুনিকতা নিয়ে আরো কিছুটা পড়াশোনা করে নিয়েছি | এইখানে পশ্চিমি আধুনিকতা নিয়েও বলা যায় এটি কোনো হোমোজেনিয়াস মডেল নয় অর্থাৎ পশ্চিমি আধুনিকতার মধ্যেও বিভিন্ন মডেল আছে | যেমন ধরুন ব্রিটিশ মডেল একটি যেইখানের থেকে পরবর্তীকালের ইলেক্টোরাল ডেমোক্র্যাসি , ফিনান্স ক্যাপিটালিজম এই ধারণাগুলি এসেছে এবং এই মডেলে ক্ষমতাশালী গোষ্ঠী নিজের নিজের মতো করে ধর্ম পালনের অধিকার দেয় মানুষকে ও রাষ্ট্র কারুর উপর কিছুই চাপিয়ে দেয় না | এর পরে আছে ফ্রেঞ্চ মডেল যেটি মূলত ফরাসি বিপ্লবের পরে এসেছিলো এবং এই মডেলটি সম্ভবত সবচেয়ে বেশী প্রতিষ্ঠিত ধর্ম বিরোধী এবং বেশ কিছু ক্ষেত্রে এই মডেলে জোর করে ধর্ম বিরোধিতা ও নাস্তিকতা রাষ্ট্রের পরিচয় হয়ে দাঁড়াতে থাকে | এবং তৃতীয় মডেলটি হলো বিসমার্কের তৈরী জার্মান রাষ্ট্রের মডেল যেইখানে ধর্ম (এবং অন্যান্য সব কিছু অর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক মতবাদ ) সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রের নিজস্ব স্বার্থের উপরে নির্ভরশীল একটি রাষ্ট্রীয় আইডেন্টিটি গঠনের এলিমেন্ট | রাষ্ট্র এইখানে সম্পূর্ণ নিজের স্বার্থে যেকোনো ধর্ম বা অন্য যেকোনো পাবলিক ইমাজিনেশন ইডিওলজি কে ব্যবহার করতে পারে |

    আমি হয়তো বাংলাতে আমার সীমিত ভাষাজ্ঞান নিয়ে ঠিকঠাক করে এই তিনটি মডেলকে বোঝাতে পারলামনা সেটা আমার অক্ষমতা | আমার বলার উদ্যেশ্য ছিল যে পাশ্চাত্য আধুনিকতা নিজেও কোনো মনোলিথিক কিছু নয় এর মধ্যেও অনেক বিভিন্ন অর্থ সামাজিক ভিন্ন ভিন্ন মডেল আছে |

    আপনি স্পষ্ট করে এখনো বলেননি যে পাশ্চাত্য আধুনিকতা বলতে এই তিনটি মডেলের মধ্যে থেকে কোন মডেলটির আপনি পক্ষে |      
     
    ৩|  ইসলামোফোবিয়া এমন একটি বিষয় যেটি নিশ্চিতভাবেই আমাদের সময়ের সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন | এখন আমরা এই বিষয়টি নিয়ে মতবিরোধ থাকতেই পারে যেইখানে আমি মনে করি ইসলামোফোবিয়া নিজেই এখন একটি ধর্ম ও আপনি মনে করেন এটি শুধুমাত্র একটি আধুনিকতা বিরোধী রিঅ্যাকশন মাত্র | কিন্তু এই ব্যাপারটি যে এখন সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক সামাজিক প্রশ্ন এই ব্যাপারে তো আমরা একমত হতেই পারি | আপনি কি বলেন ??                                                                                                 
  • দেবাশিস্ ভট্টাচার্য | 223.19.***.*** | ০৯ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:২৪515087
  • guru,
     
    হ্যাঁ, আপনি আর আমি অনেকগুলো মূল জায়গাতেই একমত, অনেক আগেই বলেছি তো। তবে কিনা, এই ঐকমত্যটা যে যৌক্তিক কঠোরতা এবং ধারণাগত স্বচ্ছতার বিকল্প নয়, সেটাও কিন্তু মনে রাখাটা জরুরি।
     
    হ্যাঁ, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে আধুনিকতা রূপায়ণের সমস্যা আছে বইকি! সে সমস্যা ভারতে এক রকম, আবার অন্য কোনও দেশে হয়ত আরেক রকম। তবে, কিছু মৌলিক মিল তো থাকবেই। সমস্যা সমাধানে মিল ও অমিল দুটোই বিবেচনা করা জরুরি।
     
    আবারও হ্যাঁ, উন্নত পশ্চিমী সব কটি দেশে ধর্মনিরপেক্ষতার রূপ ঠিক এক রকম নয়। এ পার্থক্য থাকবেই। এ তো বিভিন্ন স্থান-কালে বিভিন্ন সমাজের ঐতিহাসিক বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে আসা বস্তু, কারখানায় বানানো মাল নয়। হুবহু এক হবে কীভাবে? এ নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা আগে করেছি, এই গুরু-তেই। কিন্তু তবু, যাবতীয় পার্থক্য সত্ত্বেও, কতকগুলো মৌল উপাদান সবগুলোতেই আছে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, যুক্তিবাদ, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য, ধর্মের সমালোচনা, ধর্মনিরপেক্ষতা --- এ উপাদানগুলো কম বেশি সব কটাতেই পাবেন, এবং সেটাই জরুরি।
     
    না, ইসলামোফোবিয়া সরাসরি আধুনিকতার প্রতিক্রিয়া নয়, বরং এ এক মিশ্র বস্তু। একে খানিকটা প্রতিক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া বলতে পারেন, আবার খানিকটা আদিম ধর্মীয় ঘৃণার জের বা রেশ বা ধ্বংসাবশেষ, আবার খানিকটা হয়ত পরিস্থিতিগত নানা আকস্মিকতার ফল।
     
    এবং না, ইসলামোফোবিয়া জগতের প্রধান সমস্যা নয়, বা তার ধারেকাছেও কিছু নয়। প্রধান সমস্যাগুলো আজও অনেকটাই চিরকালীন --- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, এইসবের অভাব। আর, কুসংস্কার, অন্ধত্ব, অযুক্তি, ঘৃণা, বিভেদ, হিংস্রতা, প্রভুত্বকামিতা, এইসবের বাড়াবাড়ি। এই আর কি!
  • রাধার কানাই | 42.***.*** | ০৯ জানুয়ারি ২০২৩ ১৮:৩২515094
  • @গুরু বাবু,আপনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমি একটা কথা যোগ করছি। @দেবাশিস্ দাও সম্ভব হলে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। 
     
     
    " পশ্চিমী আধুনিকতা" কথাটার জন্য আলোচনায় গোলমাল হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। 
    ১) রাষ্ট্রীয় অর্গানাইজেশনগুলোকে ( পার্লামেন্ট,কোর্ট) ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন করা।
    ২)শিক্ষাকে ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন করে বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষার প্রচলন।
    ৩) চিকিৎসার আধুনিকীকরণ।
    ৪) সকলের জন্য শিক্ষা চিকিৎসা ও জীবিকার অধিকার প্রতিষ্ঠা।

    আধুনিকতার বৈশিষ্ট্যের মধ্যে এগুলোকে উদাহরণ হিসাবে টানা যায়,হতে পারে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোয় এগুলো আগে এসছে,কিন্তু তার মানে তো এই নয় যে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো বাদ দিয়ে বাকি জায়গায় আধুনিকতার সংজ্ঞা পাল্টে যাবে! এগুলো কোনটাই নির্দিষ্ট রাষ্ট্রে হয়েছে বলে তার আবেদন তো আর সেই রাষ্ট্রের মধ্যেই নয়,তার আবেদন তো সারা পৃথিবীব্যাপী।নিউটনের সূত্র আবিষ্কারের পর সেই জ্ঞান যেমন কেবল ইংল্যান্ডের সম্পদ নয়,সারা পৃথিবীরই সম্পদ,পাভলভের স্নায়ুতন্ত্র সংক্রান্ত আবিষ্কার যেমন " সোভিয়েত বায়োলজি" নয়,সারা পৃথিবীর শারীরবিজ্ঞানের সম্পদ,তেমনই আধুনিকতা বলতে প্রচলিত অর্থে আমরা যা বুঝি,সেগুলো নির্দিষ্ট কোন অঞ্চলের নয়,ইতিহাসের নিয়মেই সময়ের দাবি।

    নারীর নিজস্ব পোষাক বেছে নেওয়ার অধিকার, রোজগার করার অধিকার,পুরুষের সমান বেতনের অধিকার, নিজস্ব জীবনসঙ্গী বাছার অধিকার এবং যৌনসম্পর্কের ক্ষেত্রে কনসেন্টের অধিকার, এ তো আর কেবল পশ্চিমা নারী নয়,সারা পৃথিবীর নারীরই অধিকার এবং নারী-স্বাধীনতার মাপকাঠিও বটে। কাজেই " পশ্চিমা আধুনিকতা" টার্ম  টার জন্য আলোচনাটা ঘেেঁটে যাচ্ছে মনে হচ্ছে 
  • Madhab | 2405:8100:8000:5ca1::4d:***:*** | ০৯ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:০৬515096
  • পশ্চিমা আধুনিকতার পিছনে দৌড়ান একটু চাপ না?পশ্চিমা আধুনিকতা গাঁজাকে বেআইনি করল দেখাদেখি আমরাও করলাম। এখন আবার বড়দারা গাঁজাকে আইনি করছে আবার তো আমাদের ঝান্ডা হাতে পাছু পাছু দৌড়াতে লাগবে।
  • :-( | 103.76.***.*** | ০৯ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:১১515100
  • হচ্ছে না। আধুনিকতা ও অগ্রগতির কনসেপ্ট বা সংজ্ঞার লিনিয়ারিটিকে চ্যালেঞ্জ করতে তাতিন আর কল্লোলদাকে লাগবে। নোঙর হিসেবে ধরতে হবে আউল-বাউল এবং বিভিন্ন জনজাতির চর্যা, কালেকটিভ ট্রাডিশনাল নলেজ, কাস্টম, ঐতিহ্য, গণস্মৃতি, দর্শন, সমাজব্যবস্থা ইত্যাদি। যুক্তি ও বিজ্ঞানের টোটালিটারিয়ান স্পর্ধাকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে। একটু কঠিন কাজ। লাস্ট নবারুণ করেছিলেন। আধুনিকতা উন্নতি ও অগ্রগতির সংজ্ঞা ঘেঁটে দিতে আইডেন্টিটি পলিটিক্সের কোওর্ডিনেটে খেলতে কোরান-হাদিস-বেদ-উপনিষদ-পুরাণ-মহাকাব্য গোছের মৌলবাদীপ্রিয় আঁকড়াবার শিকড়ে কাজ হবে না, ছাগু বা চাড্ডিদের দিয়ে তো একেবারেই হবে না।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন