এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  উচ্চশিক্ষার আনাচকানাচ

  • উচ্চশিক্ষার বামনাবতার: প্রত্যক্ষদর্শীর কলমে

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
    আলোচনা | উচ্চশিক্ষার আনাচকানাচ | ১২ এপ্রিল ২০২২ | ৯১২৪ বার পঠিত | রেটিং ৪.৮ (৯ জন)
  • উচ্চশিক্ষায়তনগুলির ঝকঝকে দেওয়াল, চকচকে আসবাব, ছিমছাম পড়ুয়ার দল। ধূলো ঢোকে না - এমন পরীক্ষাগার, মাছি গলে না - এমন পাহারা। খাওয়া ভাল, হাওয়া ভাল, সবচেয়ে ভাল - পরিবেশ। সত্যিই কি সবই পাউরুটি আর ঝোলাগুড়? ছায়া পড়ে না, আলোকোজ্জ্বল করিডরের কোথাও? মেঘ জমে না - সাজানো ক্যাম্পাসের ওপর? নিঃসীম অন্ধকার নেই কোনো ঝলমলে মুখের আড়ালে? আছে হয়তো - খবরে আসে না। কিল খেয়ে কিল হজম করেন - কখনো ছাত্র, কখনো শিক্ষক। অনুচ্চারিত কোড আছে কোথাও - আর্মি ক্যাম্পসদৃশ। চোখের তলায় পরিশ্রমের কালি দেখা গেলেও, পিঠের বিশাল ডিপ্রেশনের বোঝা অদৃশ্যই থাকে। ঘনঘন নষ্ট হয় একেকটা স্বপ্ন। কদাচিৎ, একটা করে জীবনও শেষ হয়ে যায়। কোথাও তো দরকার, এই গুনগুন, ফিসফাস গুলোর জায়গা হওয়ার? অ্যাকাডেমিয়ার কণ্ঠস্বর অনেক, বক্তব্যও বিভিন্ন - এ সব কথা মনে রেখেই, গুরুর নতুন বিভাগ, "উচ্চশিক্ষার আনাচকানাচ" ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারী - উচ্চশিক্ষার অঙ্গনের যে সব কথা এতদিন জানাতে পারেননি কোথাও - লিখে পাঠান গুরুচণ্ডা৯-তে। নিজের কথা, পাশের কিউবিকলের কথা, পরিবারের লোকের কথা। এমন কাউকে চেনেন - যাঁর আছে এমন অভিজ্ঞতার সঞ্চয়? লিখতে বলুন তাঁদের। সব লেখাই প্রবন্ধ হতে হবে তার মানে নেই। প্রবন্ধ আসুক, অভিজ্ঞতার ভাগাভাগি হোক, বিতর্ক জমুক। ফিসফিসগুলো জোরে শুনতে পাওয়া গেলেই হল।


    এই লেখাটা পড়ে অনেকেই হয়তো সন্দেহ প্রকাশ করতে পারেন এবং একপাক্ষিক ভিত্তিহীন কাঁদুনি গাওয়া বলে যথেচ্ছ গালাগালও দিতে পারেন – কারণ এ লেখায় প্রকাশিত বক্তব্যের সমর্থনে দেওয়ার মত তথ্য বা ডেটা লেখকের কাছে নেই। এর অন্যতম কারণ এই যে, এ লেখার সমস্তটাই লেখকের নিজের অভিজ্ঞতা – যা লেখকের সাথে ঘটেছে অথবা সে হতে দেখেছে এবং সে সময় লেখকের মানসিক অবস্থা বা পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি তাকে ‘জনসমক্ষে তুলে ধরবার মত প্রমাণ স্বরূপ তথ্য’ রাখার অবস্থায় রাখেনি। এই মুখবন্ধটুকু দেওয়াটা জরুরি, কারণ আমরা যারা সামান্য হলেও গবেষণা বা রিসার্চ করি, তারা ‘প্রত্যক্ষই শ্রেষ্ঠ প্রমাণ’-এ বিশ্বাস করি এবং হাত নেড়ে ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু’ বলে চালানোর চেষ্টা করি না। কিন্তু এক্ষেত্রে সেই অপারগতা লেখকের সদিচ্ছায় নয়। আশা করি সেটুকু মার্জনা করা হবে।

    ২০১২ সালে আমি দেশের একটি অন্যতম রিসার্চ ইন্সটিট্যুটে গবেষণা করবার সুযোগ পাই পিএইচডি স্টুডেন্ট হিসেবে। সত্যি বলতে কি, তার আগে রিসার্চ কী, সেখানে ঠিক কী করতে হয় বা সেটা প্রথাগত পড়া-মুখস্থ করে পরীক্ষা দেওয়ার থেকে কতটা আলাদা – সে বিষয়ে আমার সম্যক কোনো ধারণা ছিল না। নিজের সিনিয়র, আত্মীয়, বন্ধুদের থেকে শুনে এবং ফিজিক্সের প্রতি একটা আকর্ষণ থেকে মনে হয়েছিল – এই পথে চললে হয়তো কিছু একটা করতে পারব। সেই আশা নিয়ে আমি উক্ত ইন্সটিটিউটে ঢুকি। তা, প্রথম ছ’মাস কোর্সওয়ার্ক ইত্যাদি করে কেটে যায় এবং সেখানে অসাধারণ কিছু শিক্ষকের সান্নিধ্যে আসবার সুযোগ পেয়ে অনেক কিছু শিখি। আমি কোনোকালেই মারাত্মক প্রতিভাবান ছাত্র ছিলাম না, কিন্তু ভাল শিক্ষক পাওয়ার সুবাদে বিষয়ের প্রতি বেশ একটা আগ্রহ তৈরি হয়। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, তখনও আমার ছাত্রদশা কাটেনি এবং বুঝিনি ‘রিসার্চ’ বিষয়টা কী এবং তা ক্লাস করে পরীক্ষা দিয়ে নম্বর পাওয়ার থেকে কী ভয়ানকভাবে আলাদা। আমার সুপারভাইজারের সঙ্গে এর মধ্যে আমার দেখা হয়েছে, তিনি আমাকে তাঁর গবেষণা সম্পর্কে অবগত করেছেন এবং আমি বুঝতে পেরেছি তাঁর বিষয়টি সিমুলেশন-নির্ভর – অর্থাৎ, সেখানে কাগজ-কলমের থেকে কম্পিউটারের ব্যবহার বেশি। এবার, এই বিষয়টিতে আমার চিরকালই একটা ভয় ছিল, কারণ আমি ‘কোড’ ব্যাপারটা একদমই বুঝতাম না। এই বুঝতে না পারার সিংহভাগ কারণ অবশ্যই আমার নির্বুদ্ধিতা এবং তারই সাথে ভাল একজন পথপ্রদর্শকের অভাব। যাইহোক, আমি ভয় পেলেও মনে মনে ভাবি – লড়ে যাব, যখন পিএইচডি করতেই ঢুকেছি আর গাইড যখন আছেনই, নিশ্চয়ই তিনিও সাহায্য করবেন। মুশকিল হচ্ছে, ‘লড়ে যাব’ ভাবলেই হয় না, কোথা থেকে লড়াইটা শুরু করব – সেটাও ভাবতে হয়। সেই ধরতাইটা একবার কেউ ধরিয়ে দিলে তারপর বাকিটা বুঝে নেওয়া গেলেও যেতে পারে। আমার গাইড আমার ‘কোড’ না লিখতে পারার এই অপরাগতা কয়েকদিনেই বুঝে যান এবং তার পর থেকে শুরু হয় তাঁর ‘বুলি’ করা। তিনি বিভিন্ন সময় তাঁর অফিসে আমাকে ডাকতেন, নানারকম ‘কোড’ লিখতে দিতেন এবং বলতেন পরদিন এসে সেটা দেখাতে। অত্যন্ত সাধু ফ্রয়েডিয়ান উদ্যোগ – যে জিনিসে ভয়, সেটাই বারংবার করে ভয় কাটানো। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, ‘কোড’ লিখতে গেলে আগে জানতে হবে তার অন্তর্নিহিত ফিজিক্সটা কী। তবেই তো বুঝব – কেন লিখছি, কী লিখছি আর কীভাবে লিখতে হবে। আমার উদ্দেশ্য তো স্রেফ ‘কোড’ লেখা নয়, বরং সেটিকে একটা ‘টুল’ হিসেবে ব্যবহার করা। সেইটা আমাকে কখনই বলা হত না। ফলস্বরূপ সেইসব ‘কোড’-এর কোনোটাই আমি লিখতে পারতাম না এবং গাইডের অফিসে রুদ্ধদ্বার কক্ষে যৎপরোনাস্তি অপমানিত হতাম। সেইসব ‘অপমান’-এর মধ্যে আমার বুদ্ধি সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ, পিএইচডি ছেড়ে অন্য চাকরির ব্যবস্থা দেখা এবং ‘আমি সত্যি চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি’ – এই বাক্যের পুরোটাই যে মিথ্যে এবং আমি সারাদিন খেলে বেড়িয়ে কাটাই – এই দাবিতে আমাকে প্রকাণ্ড মিথ্যেবাদী প্রমাণ করা ইত্যাদি – সবই থাকত।

    তারপর থেকে আমার যেটা শুরু হল, সেটা ভয় পাওয়া। আমি আমার গাইডের ‘কাল সকালে দেখা করবে’ ইমেল পাওয়া মাত্র কীর’ম একটা ‘নাম্ব’ হয়ে যেতাম। রাতে ঘুমোতে পারতাম না এই ভেবে, যে, কাল আমাকে যেটা করে দেখাতে বলেছে – সেটা আমি পারিনি এবং তার জন্যে আমাকে অপমানিত হতে হবে। এবং বলাই বাহুল্য, হতও তাই। গাইডের সাথে মুখোমুখি দেখা হয়ে যাবে – সেই ভয়ে ইন্সটিটিউটে আমি লুকিয়ে ঢুকতাম আর বেরোতাম। ভদ্রলোক বোধহয় রোজ বসে বসে নতুন নতুন অপমান করবার পন্থা ভেবে বের করতেন। একদিন আমাকে সকালে ডাকলেন অফিসে। আমি ঢুকতেই একগাল হেসে ‘গুড মর্নিং’ বলে জিজ্ঞেস করলেন চা খাব কি না। আমি মাথা নেড়ে না বললাম। তো, উনি নিজের জন্যে এককাপ চা বানিয়ে আমার সামনের চেয়ারে বসলেন। আমাদের মাঝে দুটো কম্পিউটার স্ক্রিন। তার একটাকে আমার দিকে ঘুরিয়ে বললেন, ‘আজ তোমাকে একটা জিনিস শেখাব।’ আমি ভাবলাম আজ বোধহয় ওঁর ‘মুড’ ভাল আছে, কিছু একটা নতুন কাজ-টাজ দেবেন। উনি কম্পিউটার স্ক্রিন-এ গুগল-এর হোমপেজ খুলে আমাকে বললেন, ‘বল তো এইটা কী?’ আমি মিনমিন করে বললাম ‘সার্চ ইঞ্জিন’। উনি বললেন, ‘বাহ্! তুমি তো জানো দেখছি। এবার আমি তোমাকে দেখাব কীভাবে সার্চ করতে হয়। তুমি সেইটা জানো না, নইলে ‘ওই কাজ’টা করে ফেলতে পারতে।’ আমি মাথা নিচু করে বসে রইলাম। উনি চায়ের সাথে বিস্কুটের অভাব আমাকে দিয়ে পূরণ করলেন। এসবের ফলস্বরূপ – যে বিষয়ের প্রতি বেশ আগ্রহ ছিল, তার প্রতিই প্রবল বিতৃষ্ণা তৈরি হল এবং সাথে সাথেই প্রবল হীনমন্যতা। ক্রমাগত মনে হত, সত্যিই আমি আমার নিজের এবিলিটিকে ওভারএস্টিমেট করে ফেলেছি, রিসার্চ চূড়ান্ত প্রতিভাবান মানুষদের জায়গা এবং আমি তাদের ধারকাছ দিয়েও যাই না। এখন এই সমস্যা আমি কাকে জানাব? অনেকেই বলেন, ডিপ্রেশান হলেই কথা বলতে। কিন্তু এক্ষেত্রে আমি কী বলব? যে আমি কীভাবে কোড লিখব বুঝছি না বলে আমার গাইড আমাকে হেনস্থা করছে? কাকে বলব এ কথা? সে শুনেই বা কী সাহায্য করবে? কোডটা লিখে দেবে? স্বভাবতই আমি ইন্সটিটিউট ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু সেখানেও বয়েলিং ফ্রগ সিনড্রোম কাজ করে। একটা জায়গায় সুযোগ পেয়েছি অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, সেটা ছেড়ে দিলে যদি আর কোথাও না পাই? দোষ নির্ঘাৎ আমারই, আমাকেই আরও পরিশ্রম করতে হবে, গাইড কীভাবে ভুল হতে পারেন? এত ছেলেমেয়ে তো কাজ করছে – কই কারুর তো আমার মত অবস্থা না? দেখাই যাক না, যদি পরিস্থিতির উন্নতি হয়? এইসব দোলাচলতার মধ্যে আমার প্রায় আড়াই বছর কেটে যায় ইন্সটিটিউট ছাড়বার স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছতে। আমার গাইডের সঙ্গে আমার শেষ এনকাউন্টারটি আরও চমকপ্রদ। এক সন্ধেবেলা, আমার নির্বুদ্ধিতায় হতাশ-উনি আমাকে অফিসে ডেকে পাঠান। আমাকে একটি স্টেপলারের মত জিনিস দেখিয়ে জিগেস করেন, ‘বল তো এইটা কী?’ আমি হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখে বুঝতে না পেরে ওঁকে বলি, যে, আমি জানি না এর কী কাজ। উনি বলেন, ‘তোমাকে আমি চব্বিশ ঘণ্টা দিলাম, তার মধ্যে তুমি জেনে এসে বল – এইটা কী কাজে ব্যবহার করা হয়। তুমি এটা সঙ্গে নিয়ে যাও, অন্যদেরকে দেখাও, কিন্তু কাল যেন আমি তোমার থেকে সঠিক উত্তর পাই।’ এমনই দুর্ভাগ্য, যে সেটারও উত্তর আমি দিতে পারিনি পরদিন। উনি তখন বেশ একটা হাইক্লাস হাসি হেসে আমাকে বলেন, ‘একেই বলে রিসার্চ, বুঝেছ?’

    আমি এই ঘটনার একমাস পর ইন্সটিটিউট ছাড়ি। পরে জানতে পারি, যে জিনিসটির আত্মার স্বরূপ উদ্ঘাটন করতে উনি আমাকে দিয়েছিলেন – সেটি একটি বিদগুটে দেখতে স্টেপলারের পিন তোলবার যন্ত্র। এর মধ্যে অবশ্য আরও কয়েকটি ঘটনা ঘটে। একটি অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের কোর্স করাবার জন্যে আমাকে আমার গাইড বলেন। সেখানে প্রথম বা দ্বিতীয় দিন ক্লাস শুরু হতেই প্রফেসর বলেন, উনি কয়েকটি বিষয় দেবেন এবং গ্র্যাজুয়েশন ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের (BS -MS) ছাত্রছাত্রীদের তার মধ্যে থেকে একটিকে বেছে নিয়ে প্রজেক্ট করতে হবে। কিন্তু পিএইচডি করছে যারা – তাদের ক্ষেত্রে সেটা বাধ্যতামূলক না, কেউ ইচ্ছে করলে করতে পারে যদিও। তো তিনি ক্লাসে জিগেস করছেন, কে কে কোন বিষয়টি নিতে চায়, ক্রমে আমারও পালা এল। আমি তখন এমনিতেই নিজের কাজ নিয়েই জর্জরিত, বোঝার ওপর শাকের আঁটি নেওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই। আমি বললাম, যে, না আমি করতে চাইনা। উনি তৎক্ষণাৎ আমাকে জিগেস করলেন, ‘তাহলে ক্লাসে এসেছো কেন? আমার মুখ দেখার জন্যে?’ আমি কী আর বলব, কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে, ‘আমি তো স্যার পিএইচডিতে’ বলে বসে পড়লাম। বেশ এক ঘর ছাত্রছাত্রীর মাঝে সুন্দর একটা হেনস্থা-দৃশ্য তৈরি হল। এর কিছুদিন পর একটি সেমিনারে উক্ত প্রফেসর তাঁর নিজেরই সিনিয়র রিসার্চ স্কলারকে পাঁচ মিনিট দেরি করে ঢোকার জন্যে আমাদের সামনেই বললেন (ইংরিজিতে), ‘তোমার হাতে ঘড়ি আছে দেখছি, তুমি ওটা দেখতে জানো? গাধা কোথাকার! আর জীবনে যেন দেরি না হয়।’ তারপর শুনলাম উনি নাকি ওর’ম বলেই থাকেন, ওটাই ওঁর বিশেষত্ব। রিসার্চ স্কলারদের সর্বসমক্ষে যা খুশি বলে দেওয়া। থিওরেটিক্যাল কনডেন্সড ম্যাটারের এক ‘প্রতিভাধর’ অধ্যাপক, আমারই সমসাময়িক এক বন্ধুকে শুধু ঘাড় ধরে নিজের গ্রুপ থেকে বের করে দিয়েই ক্ষান্ত হননি, সাথে উনি এটাও এনশিওর করেন, যে, সে যেন ইনস্টিটিউটে আরে কারোর কাছেই কাজ না করতে পারে।

    আমার সমসাময়িক যারা আমার সাথেই পিএইচডি করতে ঢুকেছিল, ইনস্টিটিউট ছেড়ে চলে আসার পর শুনলাম, তাদের অনেকের জীবনই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে তাদের গাইডদের কল্যাণে। তাদের মধ্যে অনেকের সাথেই এখনও কথা হয় এবং তারা যে থিসিস জমা করে শেষ অবধি ওই ইনস্টিটিউট থেকে বেরোতে পেরেছে – এতেই যথেষ্ট খুশি হয়। তাদের মধ্যেই একজনকে – সে-ও ঢুকেছিল থিওরিটিক্যাল কনডেন্সড ম্যাটারে পিএইচডি করতে – তার গাইড বলেছিলেন, ‘তোমার জ্ঞান এতটাই কম – তুমি নিজেই জানো না যে তুমি কতটা কম জানো।’ তার মনের যথেষ্ট জোর ছিল বলে সেখানেই দাঁত কামড়ে পিএইচডি শেষ করে এবং বিদেশে পোস্টডক করতে চলে যায়। এর’ম উদাহরণ যে আরও কত আছে – লিখতে গেলে বছরখানেক লাগবে মনে হয়। এ হেন একটি বিষাক্ত পরিবেশ যে ইনস্টিটিউটে সযত্নে লালন করা হয়, সেখানে একজন রিসার্চ ফেলো আজ যখন আত্মহত্যা করেন – সেই সংবাদ আমাকে খুব একটা আশ্চর্য করে না। বরং এইটা ভেবে দুঃখ হয়, যে এই পরিবেশটিকে সেখানে নর্ম্যালাইজ করে ফেলা হয়েছে। সেখানে ধরেই নেওয়া হয়েছে, একজন অধ্যাপক তাঁরই সিনিয়র রিসার্চ স্কলারকে সর্বসমক্ষে ‘গাধা’ বলতেই পারেন, কারণ ওটাই ওঁর ‘স্টাইল’। সেখানে ধরেই নেওয়া হয়েছে, পিএইচডি করতে যারা এসেছে – তারা সকলেই নির্বোধ, অপোগণ্ড, অলস এবং তাদের উচিৎ ছিল আগেভাগেই সবকিছু জেনে আসা আর এখানে এসে স্রেফ ডিগ্রিটি নিয়ে কেটে পড়া। দুর্ভাগ্যের বিষয়, সেখানকার প্রবীণ অধ্যাপকরা এসব জেনেও দু’চোখে ঠুলি আর কানে তুলো দিয়ে বসে থাকেন। প্রসঙ্গত, সেই সর্বসমক্ষে ‘গাধা’ বলে দেওয়া অধ্যাপক, রিসার্চ স্কলারের আত্মহত্যার এক-দু’দিন পরই নিজের গ্রুপের সদস্যদের নিয়ে (তাঁর একটি আবার আলাদা গালভরা নামের গ্রুপ আছে) একটি পার্টি করেন গেস্টহাউসের ঘরে। সেই গেস্টহাউসেরই ওপর-তলাতেই মৃত ছেলেটির মা ছিলেন তখন। কতটা নির্লজ্জ হলে অধ্যাপক হওয়া যায়?

    আমি এখনও বিশ্বাস করি, সেইসব দিনগুলোতে আমার গাইড আমাকে দুচ্ছাই করে হ্যাটা না করে যদি দুটো ভাল কথা বলতেন, একটু দেখিয়ে দিতেন – কোন পথে হাঁটলে সুবিধে হয়, আমার হয়তো আড়াইটে বছর নষ্ট হত না। শুধু সময়ের দিক দিয়েই নয়, আমাকে এই অহেতুক মানসিক পীড়াও সহ্য করতে হত না। এর মানে কি উনি কাউকেই গাইড করতে পারেননি? উনি নিজে একজন খারাপ গবেষক? মোটেই না। অনেক ছাত্রছাত্রী ওঁর সাথে কাজ করেছে, ভাল ভাল জায়গায় পৌঁছে গেছে – এখনও করছে, ভবিষ্যতেও করবে। কিন্তু যারা সেইসব অসামান্য প্রতিভাবান ছাত্রছাত্রীদের দলে পড়ে না, যারা আমার মত – তাদের ‘তুমি অপদার্থ, তোমার দ্বারা কিস্যু হবে না’ বলে কি এত সহজেই দাগিয়ে দেওয়া যায়? নাকি তাকে দিনের পর দিন নিজের অফিসে ডেকে ‘বুলি’ করলেই তার আজ্ঞাচক্র উন্মুক্ত হয়ে হু-হু করে অতিমানবীয় ব্রেনওয়েভ জেনারেট করতে শুরু করে? আমাকে আমার তত্কালীন গাইড বলেছিলেন, ‘তোমার পিএইচডি – তোমার দায়িত্ব। আমাকে বলে কী হবে, তুমি কেন প্রব্লেম সল্ভ করতে পারছ না?’ এখন মনে হয় এ তো মারাত্মক অক্সিমোরন! উনিই ‘গাইড’ আর উনিই বলছেন, ওই যে সামনে হিমালয় – কোনদিক দিয়ে উঠবে নিজে বুঝে নাও, আমাকে বাপু জ্বালাতে এসো না! আরও বেশি ভয় লাগে, যে, এঁদের দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে যেসব ছাত্রছাত্রী হাটে-বাজারে ছড়িয়ে পড়ে, তারাও একইরকম স্যাডিস্ট হয় না তো? এভাবেই বংশপরম্পরায় এই ‘কালচার’ চলতেই থাকে।

    ভাবতে সত্যিই অবাক লাগে, অ্যাকাডেমিয়া-তে কীভাবে এর’ম সংকীর্ণ মনের মানুষ তৈরি হয়? শিক্ষা তো মনের প্রসার ঘটায়, মানুষকে বিনয়ী করে, এম্প্যাথেটিক হতে শেখায়। তাহলে এঁরা এর’ম কেন? আমাদের মধ্যে একটা প্রচলিত ধারণা কাজ করে, যে, যিনি বেশ নামী জায়গা থেকে বড় বড় ডিগ্রি, উপাধি ইত্যাদি নিয়ে এসেছেন এবং কথায় কথায় ‘আমি অমুককে চিনি’ বা ‘তমুক আর আমি একই টেবিলে বসে খেতাম’ – ইত্যাদি বলেন, তাঁর সাতখুন মাফ। তিনি ইচ্ছে করলেই হাতে মাথা কেটে নিতে পারেন, ইচ্ছে হলেই ডেকে নিয়ে দু’গালে চড় কষিয়ে দিতে পারেন এবং সেক্ষেত্রে চুপচাপ মেনে নেওয়াটাই শ্রেয়, কারণ তাঁর অনেক ক্ষমতা। IISER Kolkata-র অফিসিয়াল স্টেটমেন্টটি দেখে ঠিক সেটাই মনে হল। ভাবটা অনেকটা “এর’ম ঘটনা ঘটতেই পারে, কিন্তু মাথায় রাখবেন, যে উনি অমুক জায়গা থেকে গামছা কিনতেন এককালে” ইত্যাদি, অতএব উনি সব প্রশ্নের ঊর্ধ্বে। এই ক্ষমতার সুযোগ নিয়েই বহু উচ্চপদে আসীন অ্যাকাডেমিশিয়ানরা বিভিন্ন রিসার্চ ইনস্টিট্যুটে বছরের পর বছর কাজ না করে নানাবিধ ইতরামি করে চলেন, যার খেসারত দিতে হয় রিসার্চ স্কলারদের। ‘কাজে প্রগ্রেস হচ্ছে না?’ রিসার্চ স্কলারের দোষ, ‘সময়মত থিসিস জমা করতে পারনি?’ রিসার্চ স্কলারের দোষ, ‘সে কী! মারা গ্যালে নাকি?’ রিসার্চ স্কলারের দোষ; কারণ সুপারভাইসার তো সাধক, তিনি জ্ঞানসাগরে সেই যে ডুব মেরেছেন, তারপর থেকে ওঠার নামটি নেই, স্কলারের পেটি ইমোশান ধুয়ে কি তিনি জল খাবেন? এখানে শুধু একজন বা দশজন গাইডকে দুষে অবশ্য লাভ নেই, আঙুল তোলা উচিত সেই সিস্টেমের দিকে – যা চোখের সামনে এগুলি ঘটছে দেখেও এইসব মানুষদের(?) পোষে, যথেচ্ছ লাই দেয় আর আত্মহত্যায় পরোক্ষে প্ররোচনা দেয়।

    রিসার্চার হিসেবে আমি নিজে খুব সাধারণ মানের, কোনোভাবে টিকে গেছি বহু প্রতিভার এই জঙ্গলে। কিন্তু প্রায় বছর আষ্টেক কাজ করবার সুবাদে এ’টুকু বুঝেছি, পিএইচডি বিষয়টা নিরানব্বই শতাংশ পরিশ্রম (বুদ্ধি তো কমবেশি সকলেরই থাকে, তাই না?)। আর এক শতাংশ অনুপ্রেরণা, যেটা একমাত্র একজন গাইডই দিতে পারে। আর ওই এক শতাংশ অনুপ্রেরণাই বহু প্রতিভাকে ম্লান করে দেওয়ার জন্যে যথেষ্ট।




    IISER Kolkata-র অফিসিয়াল স্টেটমেন্ট (মূল ট্যুইট)


    ছবি - Elīna Arāja

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১২ এপ্রিল ২০২২ | ৯১২৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Amit | 120.2.***.*** | ১৩ এপ্রিল ২০২২ ০৯:৩৪506273
  • স্বর্ণেন্দু বাবুর মন্তব্যেও বিন্দুমাত্তর আশ্চর্য হয়নি। বাকি দের সম্পর্কে না জেনেই সেগুলিকে স্ট্র ম্যান আর্গুমেন্ট বলে না ওড়াতে পারলে নিজের তথাকথিত এলিটিসিজম ফ্ল্যাশ করাই বা যায় কি করে ? অবশ্য আনন্দবাজার এর কাছে মহান বলতে কি বোঝাতে চাইছেন সেটা নিয়ে তিনিই ভালো বলতে পারবেন। আমার দিক থেকে কোনো আগ্রহ নেই। 
  • Swarnendu Sil | ১৩ এপ্রিল ২০২২ ০৯:৫০506275
  • @SH 

    সে হতেই পারে। তবে আমি ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক, এরাস্মাস আর ইপিএফেলে কিছু এক্সপেরিমেন্টাল ফিজিক্স ল্যাবের কথা জানি, যাতে গাইডের সাথে ছয়মাসে একবারও দেখা হত কিনা সন্দেহ। বিশাল বড় বড় রিসার্চ গ্রুপ, হেল্প যা কিছু সেসব করত গ্রুপের পোস্টডক বা সিনিয়র পিএইচডি স্টুডেন্টরা। 

    বাদবাকি যা বললেন, রিসোর্স নেই, রিসার্চ ইকোসিস্টেম নেই এসবে তো দ্বিমত হওয়ার বিশেষ জায়গা নেই। একদমই তাইই। 
  • dc | 122.183.***.*** | ১৩ এপ্রিল ২০২২ ১০:০২506276
  • স্বর্ণেন্দুবাবু একদম ঠিক, যেকোন ফোরকাস্টিংএই প্রথম দিকের ফোরকাস্ট ডেটা অনেকটা মিলে যায়। যেমন ধরুন কাস্টমার ডিম্যান্ড ফোরকাস্ট করলে প্রথম ক মাস এর ডিম্যান্ড অলরেডি তৈরি হয়ে গেছে, কাজেই সেটা প্রায় সেল্ফ ফুলফিলিং প্রফেসি। তারপর ফোরকাস্টিং পিরিয়ড যতো সামনের দিকে যায় ততো আনসার্টেনটি বাড়ে, ৯৫% এনভেলোপও চওড়া হয়। এটাই ওই গ্রাফগুলোতে দেখে খুব ভালো লাগলো। কতোরকম আলাদা আলাদা ফিল্ড, অথচ আন্ডারলাইং অংক আর অ্যাসাম্পসানগুলো প্রায় এক। 
     
    বাকি আলোচনা আগ্রহ নিয়ে পড়ছি, যদিও এ নিয়ে কিছু বলার কোন যোগ্যতাই আমার নেই (যদিও হায়, একসময়ে পিএইচডি করার আমারও খুব ইচ্ছে ছিল :-()  
  • Somnath Roy | ১৩ এপ্রিল ২০২২ ১০:০৭506277
  • গাইড হাতে চামচ তুলে দেবে, এইরকম এক্সপেক্টেশন ভারতে সম্ভবতঃ বেশি। এখানকার ছাত্রদের মধ্যেও এধরণের এক্সপেক্টেশন দেখেছি, কোডে বাগ নিয়ে গাইডের ঘরে ঢুকে পড়ছে এবং বহুক্ষেত্রে গাইড হাতে ধরে দেখিয়েও দেয়, সেইটা হয়তো এক্সপেক্টেশন বাড়ায়।
  • | 2601:5c0:c280:4020:2c1a:114e:e3c3:***:*** | ১৩ এপ্রিল ২০২২ ১০:১৩506278
  • @স্বর্ণেন্দুঃ আমি বলতে চাইনি যে এই স্টাডি-টা ভারতে রেপ্লিকেট করলে এগজ্যাক্টলি এক রেজাল্ট দেখা যাবে। যেতেও পারে, আবার না-ও পারে। ভারত বাদ দিন, অন্য একটা ফিল্ড - যেমন থিয়োরিটিক্যাল ফিজিক্সে রেপ্লিকেট করলেও মিলবে কি না কেউ জানে না, যতক্ষণ না করে দেখছে। (এটা এতো অবভিয়াস একটা ব্যাপার যে বানান করে না দিলেও চলে, তাই না?) 

    আর এই পেপারটায় এমন কিছুই বলে নি যা অ্যাকাডেমিশিয়ান-রা জানেন না। যেমন লিখেছে, "Our results show that the prestige of faculty’s current work environment, not their training environment, drives their future scientific productivity" -- এইটা তো মনে হয় অনেক জায়গাতেই সত্যি, এমন কি ভারতবর্ষেও। দারুণ জায়গা থেকে পাশ করেও পরে এমন জায়গায় কাজ করেন যেখানে কোনো ফ্যাকাল্টিদের হেল্প করার কোনোও রিসোর্স নেই, কোনো ইনফ্রা নেই - সেখানে প্রোডাক্টিভিটি বলুন আর ক্রিয়েটিভ কাজ বলুন, ক্ষতি তো হবেই। সেই ক্ষতিটার ক্যাসকেডিং এফেক্ট গিয়েও তো ছাত্রদের ঘাড়ে পড়ে কখনো? যে ফ্যাকাল্টি নিজে পারছেন না আর রিসার্চ করতে, তিনি কী করে ঠিকঠাক মেন্টর করবেন? 

    (এ আমি নিজের জীবনেও দেখেছি, ভয়ঙ্কর টিচিং লোড দিয়ে সপ্তাহে দুশো খাতা গ্রেড করতে দিলেই কেমন রিসার্চ জানলা দিয়ে পালিয়ে যায়, ইচ্ছে থাকলেও সপ্তাহে ৫ দিন ছাত্র পড়ানোর পর আর শরীর/মাথা কাজ করে না।) 

     
  • পার্থ প্রতিম রায় | 2409:4060:2d81:6cde::fbc9:***:*** | ১৩ এপ্রিল ২০২২ ১০:১৮506279
  • আমার মতে, এইসব সমস্যার উৎস হলো
    ১. আমাদের বিদ্যালয় শিক্ষা পদ্ধতি, যেখানে অনুসন্ধানের মাধ্যমে জানা র বিপরীতে শুধুমাত্র পড়ে এবং শুনে জানা ই একমাত্র পদ্ধতি
    ২. পরীক্ষা পদ্ধতি, যেখানে বছরের শেষের পরীক্ষা ই একমাত্র মূখ্য মূল্যায়ন করার মাধ্যম
    ৩. গবেষণায় ভর্তির পরীক্ষা নির্ভর পদ্ধতি, যেখানে অনুসন্ধিৎসু মনের অধিকারী ছাত্র ছাত্রীদের নির্বাচিত হবার সুযোগ কম, ও পরীক্ষা য় উত্তর লেখা অভ্যাস কারী দের সুযোগ বেশি। 
  • | 2601:5c0:c280:4020:2c1a:114e:e3c3:***:*** | ১৩ এপ্রিল ২০২২ ১০:২২506281
  • সোমনাথদার (১০ঃ০৭) বক্তব্যটা নিয়ে একটা কথা বলি। 

    আমি বলেছিলাম " তিনি অঙ্ক-ও করে দিতেন না, কোডিং দূরস্থান। তবে, অতো বড়ো লোক বলে দূরদৃষ্টি ছিলো, কোন প্রবলেমে কাজ করা উচিত সামগ্রিক-ভাবে জানতেন,... " 

    এবার ঐ এক-ই গাইডের কাছে এক-ই সাথে, এক-ই ইনস্টিটিউট থেকে পাশ করা দুইজন ছাত্র ঢোকে, দুইজনেই পিএইচডি-ও করে বেরোয় কালক্রমে। কিন্তু দুইজনের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ভিন্ন - কারণ একজন যেমন ঐ বিন্দুমাত্র মাইক্রো-ম্যানেজমেন্ট না থাকা, ম্যাথেমেটিক্যাল অ্যাবস্ট্রাকশন, ফিলোজফিক্যাল আড্ডা এবং ওয়েল-পোজড নয় এমন প্রবলেমে thrive করেছিলো, তার খুব-ই ব্রাইট ও হাড়-খাটিয়ে বন্ধুর সেটা কাজ করেনি। দিনের পর দিন র‍্যাণ্ডম গল্প তার ভালো লাগতো না তা নয়, কিন্তু তার একটু হাত-ধরার দরকার ছিলো, স্পুন-ফীডিং বলতে খারাপ লাগছে, কিন্তু একটু সেটাই দরকার ছিলো হয়তো। সে প্রায়-ই বলতো আরে এগজ্যাক্ট প্রবলেম-টা কি সেটাই বুঝতে পারছি না খালি বিগ পিকচার!  ভাগ্য ভালো, তার একজন কো-চেয়ার ছিলো - সেই কাজটা ভালো হয়েছিলো বলে রক্ষে। 

    এখন প্রশ্ন ১) এই দ্বিতীয় জনের জন্য এই ভদ্রলোক কে কী আমরা ভালো গাইড বলবো? আমি জানি না। আর প্রশ্ন ২) এই ব্যাপারটা যে একজনের সাথে স্যুট না করলে অন্য একজন ফেইল-সেফ দায়িত্ব নিলেন। সেটা কি আমাদের দেশে ফিজিবল? সিরিয়াসলি-ই জানতে চাই। 

    অবশ্য বেশি হাত ধরাও গণ্ডগোলের। স্পষ্ট মনে আছে, আমার আগের ডিপার্ট্মেন্টে একজন জব ক্যাণ্ডিডেট এসে প্রেজেন্টেশন দেওয়ার পর একজন জিগ্যেস করেন, 'তা ভাই, এতো এরিয়া থাকতে পার্শিয়াল ডিফারেনশিয়াল ইক্যুয়েশনে-ই কাজ করলে কেন?" - সে জবাব দিয়েছিলো, 'কী-ই জানি! অ্যাডভাইজার যা করতে বলেচিলো, করেচি'! 

    হয়তো আমরা নিজেদের অভিজ্ঞতাকে এক্সট্রাপোলেট করে ভাবি সবার ঐরকম ভাবে হতেই পারে। সেই সারভাইভারশিপ বায়াসের মতো --- ঠিক যেই টোটকা/মডেল, একজনের জন্য কাজ করেছে, সেই মডেলেই অন্যজন ওষ্ঠাগত হতেই পারেন, আমরা শুধু এই হাতে গোনা কয়েকটা সাকসেস স্টোরিগুলো দিয়ে "আমাদিগের কী করিতে হইবে" সে নিদান দিয়ে লাভ নেই। বরং ভাবা উচিত, আর্লি-কেরিয়ার এই সব ভালনারেবল স্কলার-দের "সেফটি নেট" কোথায়? 
  • Somnath Roy | ১৩ এপ্রিল ২০২২ ১০:২৯506282
  • আমার অভিজ্ঞতা এইদেশে যেহেতু ছাত্রের ফান্ডিংটা অনেকজায়গাতেই সমস্যার নয়, পাঁচ বছর সরকারের টাকা আসে, গাইড চেঞ্জ করা সহজ। আমাদের প্রতিষ্ঠানে দেখেছি, গাইড পাল্টাতে চাইলে ডিপার্ট্মেন্ট খুবই সাপোর্টিভ হয়। তবে ছাত্রর দিক থেকে সমস্যা টের পেলে অন্য কেউ গাইড করতে রাজি হয় না। সিনিয়র প্রফেসররা সেইসব ক্ষেত্রে ম্যানেজ করেন।
    বিদেশে স্টুডেন্টের ফান্ডিং আসে মেপে, গাইড পালটানো বরং কঠিন হয়।
  • Somnath Roy | ১৩ এপ্রিল ২০২২ ১০:৩২506284
  • এমনিতে  একটা জেনারেল  ট্রেন্ড সবজায়গাতেই হয়। তুমি যদি স্রোতে না ভাসতে পারো (বিভিন্ন কারণে) তাহলে প্রাথমিকভাবে অসুবিধে তোমার হবে। কিন্তু,আইসার কলকাতা এই ছাত্রমৃত্যুতে যে অদ্ভুত নোটিশ জারি করেছে (যা মূল পোস্টে আছে) ওখানকার জেনারেল ট্রেন্ডটাও সুবিধের মনে হচ্ছে না।
    আমি বিভিন্ন ইন্সটিটিঊতে ছাত্রমৃত্যু, খুন এবং আত্মহত্যার ঘটনা দেখেছি। কোথাও এরকম আশ্চর্য নোটিশ (গাইডের কেরিয়ার গ্রাফ, ছাত্রের পাবলিকেশন রেকর্ড ইত্যাদিসহ) বের করতে দেখিনি।
  • Swarnendu Sil | ১৩ এপ্রিল ২০২২ ১০:৫১506287
  • @dc, 
    dcদা আমাকে হঠাৎ বাবু লিখতে শুরু করলেন কেন? বহুকাল আসি না গুরুর পাতায়, আর এখন লগইন করেই লিখি, কিন্তু আমি পুরনো স্বর্ণেন্দুই, নিক sswarnendu। 

    @পার্থ প্রতিম রায় 

    শেষ যে পয়েন্টটা লিখলেন সেইটার জন্যে অনেক অনেক ক। এন্ট্র্যান্স পরীক্ষাগুলো এখন গবেষণার জন্যে লিথাল বললেও কম বলা হয়। অঙ্কে আগে সব ইন্সটিটিউটই নিজের নিজের এন্ট্র্যান্স পরীক্ষা নিত, তাতে তবু একটা সুযোগ ছিল। এখন বেশিরভাগ ইন্সটিটিউটই নিজেদের পরীক্ষ নেওয়া কাটিয়ে দিয়ে 'কেন্দ্রীয় প্রবেশিকা পরীক্ষা' গুলোর দিকে ( মানে সরকার যেতে কার্যত বাধ্য করছে )। অঙ্কে সেই কেন্দ্রীয় পরীক্ষাটির নাম JAM. ইন্টিগ্রেটেড পিএইএচডির ইন্টারভ্যিউ প্যানেলে জ্যাম র‍্যাঙ্কারদের যা সব বলতে দেখেছি, সেসব বললে লোকে বিশ্বাস করবে না। ভাববে বানিয়ে বলছি। পরীক্ষাটা যেহেতু MCQ, তাই অঙ্কের ছাত্রকে ক্যালে-হ্যামিল্টন থিওরেমের প্রমাণ জিজ্ঞাসা করলে ক্যান্ডিডেট অম্লান বদনে জানায় যে তিনি বিএসসির তিন বছরে কোন থিওরেমের প্রুফ পড়েন নি, জ্যামের প্রিপারেশন নিতে হবে বলে তিনি শুধু স্টেটমেন্ট পড়েছেন আর স্টেটমেন্ট থেকে কি ফলো করে না করে সেই পড়েছেন। 
    আর একজনকে একটা থিওরেমের স্টেটমেন্ট বলে How do you prove it? জিজ্ঞাসা করায় তিনি জিগালেন what are the options?  আমরা প্রথমে বুঝতেই পারিনি কি বলতে চাইলেন, একটু বাদে জিগ্যেস করে বুঝলাম যে তিনি আশা করছেন যে প্রুফ করারও তিনটে অপশন দেওয়া হবে, উনি একটা 'টিক' দেবেন। মাইরি বলছি, নিজের অভিজ্ঞতা, একফোঁটা জল নেই।  

    @ য, 

    ফেইল সেফ হিসেবে কোঅ্যাডভাইসর থাকা খুবই কাজের জিনিস, কিন্তু আমাদের দেশে বহু ইন্সটিটিউটেই অন্তত অঙ্কে একজনের কাজ করা বিষয়ের কাছাকাছি বিষয়ে কাজ করে এরকম লোকও প্রায় থাকে না ব্যতিক্রম ক্ষেত্র বাদ দিলে। তাই এখন অন্তত ফিজিবল নয় সম্ভবত। 

    আর আমি কিন্তু এই সেফটি নেটের জন্যই ছাত্র ছাত্রীদেরও কিছুটা প্রফেশনাল হলে আখেরে লাভ হবে বলতে চাইছি। ছাত্রছাত্রীরা এদেশে পিএইচডি কার কাছে, কি বিষয়ে করতে যাব না যাব, গাইডের থেকে কি এক্সপেক্ট করব না করব সেসব কিছু নিয়েই পেশাদারের মত ভাবে না।  কিছুটা বিভিন্ন ফিল্ডের supposed prestige সম্পর্কে ননসেন্স কিছু প্রিকনসিভড নোশন, ফিল্ডটা কি? খায় না মাথায় দেয়? তাতে কাজ করতে কোন জিনিসগুলোর স্কিল লাগে আর কোনগুলো বিশেষ না জানলেও চলে এসব কিছুই ভাবে না। এদিকে গোটা কোর্স কারিকুলামে ভাল করেছে টপোলজির কোর্সে হয়ত, অ্যানালিসিসের কোর্সগুলোয় হয় মোটামুটি নয় ছড়িয়েছে, অথচ  পার্শিয়াল ডিফারেনশিয়াল ইক্যুয়েশনে কাজ করতে চায় বলে হাজির, কারণ MSc তে PDE র একটা লালুভুলু কোর্সে প্রচুর নম্বর পেয়েছিল। এবার এগুলো খুব গোদা গোদা, তাই সহজেই সংশ্লিষ্ট ফ্যাকাল্টির দিক থেকে ডিটেক্ট করা যায়। যেগুলো এত মোটা দাগের মিসম্যাচ নয়, সেসব তো বোঝা শক্ত ফ্যাকাল্টির দিক থেকে, ছাত্র বা ছাত্রীটি নিজে জানবে কিছুটা। এইসব কমলে, এক্সপেকটেশনগুলো ক্যালিব্রেট হলে মনে হয় পোটেনশিয়াল মিসম্যাচগুলো কম হবে, এরকম মর্মান্তিক ডিসাস্টারগুলো কম ঘটবে। 
  • SH | 2601:18c:c900:4810:bba6:2941:5be1:***:*** | ১৩ এপ্রিল ২০২২ ১১:০৫506289
  • @স্বর্ণেন্দু শীল হ্যাঁ । ইউরোপ আমেরিকা র বড় ল্যাব গুলো তে অনেক সিনিয়র পোস্টডক থাকে। যারা হেল্প টা করে। অনেক সিনিয়র পোস্টডক এর বয়স প্রায় ৪০। ওই ল্যাব গুলো তে গাইড রে ডিফেরেন্ট টপিকস এর ফান্ডিং পেলে যেটা তারা নিজেরা জানে না তখন ওই টপিকস এর কোনো সিনিয়র পোস্টডক রিক্রুট করে। সেই সিনিয়র পোস্টডক হেল্প টা করে দেয় জুনিয়র পিএইচডি দের ।যেটা ইন্ডিয়া তে পসিবল না। ডিফারেন্ট টপিকস এর ভালো পোস্টডক পাওয়া খুব কঠিন। বেশির ভাগ টপিকস এ পুরো ইন্ডিয়া টেই কেউ নেই .
     
  • যদুবাবু | ১৩ এপ্রিল ২০২২ ১১:০৯506290
  • হ্যাঁ অঙ্কে স্পেশালি খুবই চাপ, অবশ্য আমার অভিজ্ঞতা খুব সীমিত। আমি ২০১৬-২০ একটা ম্যাথ ডিপার্টমেন্টের ফ্যাকাল্টি ছিলাম, ম্যাথের এক একটা সাব ডিসিপ্লিন যেন এক একটা দ্বীপ বা পাহাড় চূড়া মনে হতো। ছাত্রদের সাথে একটু কাউন্সেলিং করা হতো অবশ্য, তাদের এরিয়া আইডেন্টিফাই করার জন্য। তাতে একটু হলেও লাভ হতো। 
     
    আপনার দ্বিতীয় স্টেটমেন্টের সাথে একমত নই পুরোপুরি (আমি ছাত্রদের দোষ দেখছি না), তবে তর্কে যাবো না। এটা হয়তো বিলিফ সিস্টেমের ব্যাপার, বা অন্যকিছু। 
     
     
  • Swarnendu Sil | ১৩ এপ্রিল ২০২২ ১১:২৪506291
  • @যদুবাবু, 

    ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে আবারও স্পষ্টাক্ষরে লিখে যাই, এইরকম মর্মান্তিক ডিসাস্টারে ছাত্রদের দোষ আছে কিছুটা এরকম কোন বক্তব্য আমার নেই। একেবারেই নেই। এইসব মিসম্যাচে ছাত্রর পিএইচডি যা হতে পারত তার চেয়ে অনেক খারাপ হয়, পিএইচডি করার সময় প্রচুর সমস্যা তৈরি হয়, তিক্ততা বাড়ে, হতাশা জন্মায় ইত্যাদি প্রভৃতি নানা কিছু হয়, কিন্তু অ্যাডভাইসরের দিকে থেকে গ্রস মিসহ্যান্ডলিং ছাড়া আত্মহত্যার মত ঘটনা ঘটার জায়গায় পৌঁছনো কার্যত অসম্ভবই।  

    আর a place of learning এ বুলিং, হিউমিলিয়েট করা, হ্যারাস করা, অ্যাবিউজ করা, সেটাও ফরম আ পজিশন অফ পাওয়ার, এসব ইনহিউম্যান ক্রাইম totally unacceptable and must be stopped. পিরিয়ড। তাই নিয়ে কথা হওয়ারই কিছু নেই। 

    কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা খানিক প্রফেশনাল হতে শিখলে এর চেয়ে অনেক ছোটমাত্রার সমস্যাগুলোও অনেকাংশে এড়ানো যাবে বলে মনে হয়। তাছাড়া বহু ইন্সটিটিউটে এমন বহু ফ্যাকাল্টি আছেন যাঁদের এসব বিষয়ে দিব্য রেপুটেশন আছে, পিএইচডি করতে ঢোকার আগে সিনিয়র স্টুডেন্টদের জিগ্যেস করলেই সেগুলো জানতে পারবে যে কেউ, তা সত্ত্বেও সেসব ফ্যাকাল্টিদের কাছে ছাত্রছাত্রী উপচে পড়ে, এরকম কেস বহু। কেন? আমার কাছে কোন সদুত্তর নেই। 

     
  • Swarnendu Sil | ১৩ এপ্রিল ২০২২ ১১:৩১506292
  • উত্তরের কাছাকাছি যেটা আছে সেইটা হল স্পুনফেড হওয়ার এক্সপেকটেশন। আমি এরকম বেশ কয়েকটা কেস জানি যেখানে সংশ্লিষ্ট ফ্যাকাল্টি যে অ্যাবিউসিভ, এমনকি ভিন্ডিক্টিভ, তাও সবাই জানে, তবুও যায় কারণ মাস্টার্স প্রোজেক্টে কিছুই কাজ না করেও ফ্যাকাল্টি কোড দিয়ে বলেন চালিয়ে নিয়ে এসো ( দুর্জনে বলে সেই কোডও আগের অন্য স্টুডেন্টদের লেখা, যারা আর না পেরে ছেড়ে দিয়ে গেছে ), চললে বলেন যাও এবার লিখে জমা দাও। আর পিএইচডির পরে প্রবল গ্লোয়িং রেকমেন্ডেশন দেন আর তিনি ওয়েল-কানেক্টেড, কিসস্যু না  জানা ছাত্রও তাঁর রেকমেন্ডশনের জোরে দেশের নানান ভাল জায়গায় চাকরী পায়। এসবের কোন শর্টকাট, সহজ সরল সমাধান আছে বলে আমার অন্তত মনে হয় না। 
  • যদুবাবু | ১৩ এপ্রিল ২০২২ ১১:৩৬506293
  • বুঝেছি। ধন্যবাদ। আপনি অবশ্য আগেও এটা লিখেছেন স্পষ্ট করেই। আমার বোঝার ভুল + বিভিন্ন কারণে, ব্যক্তিগতভাবেও এই ব্যাপারে প্রচণ্ড disturbed হয়ে আছি। (Btw, য = যদুবাবু, মাঝে মাঝে লগইন করা চাপ এমন যন্তর থেকে লিখি)। 
     
  • r2h | 134.238.***.*** | ১৩ এপ্রিল ২০২২ ১১:৪৯506295
  • এসব নিয়ে আমি কিছু জানি বুঝি না, ধারনা নেই, বক্তব্যও নেই।

    তবে একটা জিনিসে চোখ আটকালো। প্রফেশনলিজম আর এমপ্যাথি, এই দুটোর মধ্যে সম্পর্ক জটিল। মানে, দুটো মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ না, আবার এমপ্যাথিও যে শুধুই সহজাত মানবিক গুন তাও না, এমপ্যাথি নিয়ে নানান তত্ত্ব, অভ্যাস, প্রশিক্ষণ, এমপ্যাথি-নির্ভর স্টাডি, পরিসংখ্যান, পরামর্শ এইসব আজকাল সুলভ।
    তবে উচ্চশিক্ষায় সেসবের প্রয়োগ আছে কিনা জানি না। বড় কর্পোগুলি মন দেয়, ব্যাবসার ক্ষেত্রে। স্কুল শিক্ষকদেরও শেখায়।

    নতুন কথা কিছু না, একটু ফুট কাটলাম শুধু।
  • Swarnendu Sil | ১৩ এপ্রিল ২০২২ ১২:০০506297
  • হ্যাঁ, য= যদুবাবু বুঝেছি। 

    এতে ডিসটার্বড না হওয়াই অস্বাভাবিক। একে তো ঘটনাটাই মর্মান্তিক, তারপরে আইসার কলকাতার স্টেটমেন্টে এই অ্যাডভাইসরের সিভি ছেপে দেওয়া! এর চেয়ে ন্যক্করজনক কিছু ভাবাও শক্ত। অথচ এরকম একের পর এক ঘটেই চলেছে। কিছুদিন আগেই এনসিবিএস এর এক দেশের এক অগ্রগণ্য বায়োলজিস্টকে নিয়ে যা ঘটল, তাতে শেষত বলির পাঁঠা হল সদ্য ঢোকা পিএইচডি স্টুডেন্ট। সদ্য ঢোকা পিএইচডি স্টুডেন্ট পেপারে ডেটা ফোর্জিং করল, আর কেউ কিছু জানতেন না, এটা আদৌ বিশ্বাসযোগ্য? অথচ ইন্সটিটিউশনাল লেভেল থেকে সেই আষাঢ়ে গপ্পটিই বলা হল। সেই মহিলা এবং তাঁর স্বামী, যিনি এসবে প্রকাশ্যে ছাত্রছাত্রীদের দোষ দিয়েছিলেন সরাসরি, বহাল তবিয়তে বর্তমান। এদেশে ইন্সটিটিউশনাল মেকানিজমগুলোর কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে সমস্যা অ্যাড্রেস করা নয়, সেগুলোকে ধামাচাপা দেওয়া। 

    আর মুশকিলটা হল এদেশে এসব আকচার ঘটে, তার জন্যে বিশাল কিছু সিভিও হতে হয়না, তবুও কিসস্যু হয় না তাঁদের। বিদেশে অ্যাবিউজের ঘটনা ঘটে না তা নয়, কিন্তু সেগুলো প্রায় একশ শতাংশ ক্ষেত্রে তাঁরাই করে যেতে পারেন যাঁরা বিশাল হনু লোক, স্বনামধন্য। 

    এই এনসইবিএসের অল্প কিছুদিন আগেই ইটিএইচ একজন অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্টকে স্যাক করে, যিনি নিজের ফিল্ডে বস্তুতই বিশ্বসেরা। কিছু পরে তাঁর স্বামী, যিনিও নিজেও বেশ পরিচিত নাম, তাঁকেও পোটেনশিয়াল কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট কারণ দেখিয়ে রিজাইন করতে বলে। ভদ্রমহিলার প্রায় ১২-১৫ বছর ধরে ছাত্রছাত্রীদের অ্যাবিউজ করে যাওয়ার কথা আনকভারড হয়। আমি তখন ওখানে পোস্টডক, ওই ডিপার্টমেন্টের কিছু লোকজনের সাথে কথা হয়েছিল। সেগুলো এরকম এদেশের মত ওপেন সিক্রেট ছিল না, খুব অল্প লোকেই আঁচ পেয়েছিল। যারা ভুক্তভোগী, ওনাকে চটালে শুধু সুইটজারল্যান্ড না, ইওরোপ না, সারা পৃথিবীর সব দরজা বন্ধ হয়ে যাবের ভয়ে কেউই কাউকেই কিছু বলেনি। কিন্তু শেষত যখন কেউ বলেছে, তখন ইন্সটিটিউশনাল মেকানিজম ফ্যাকাল্টিকে আড়াল করেনি, এনকোয়ারি বসিয়ে পুরনো স্টুডেন্টদের সাথে কথা বলে ওনাকে দোষী সাব্যস্ত করে স্যাক করে, পৃথিবীর এক নম্বর লোক হওয়া সত্ত্বেও। 

    ভারতে চারআনার সিভি নেই এমন লোকও দিনের পর দিন এমন 'ওপেন সিক্রেট' রেপুটেশন নিয়ে দিব্যি থাকেন। 
  • একক | ১৩ এপ্রিল ২০২২ ১৫:০১506299
  • আলোচনা এতক্ষণ অব্ধি যা বুঝলুম, ভারতে,  মার্ক্স বোঝাব বললেই ফাঁকা  ঘরে অতিথি পাওয়া যায়,  বিদেশে স্বয়ং মার্ক্স হতে হয়,  নিদেন নামকরা মার্কিসিস্ট ফিলোজফার। তাই ত?  
     
    এ ত, পিছিয়ে থাকা দেশের স্কেলজনিত গল্প। সমস্যার ধরন তাতে নেই হয়ে যায় না।
  • Somnath Roy | ১৩ এপ্রিল ২০২২ ১৬:২০506306
  • @একক, হ্যাঁ, আলটিমেটলি হোমো সেপিয়েন্স। সে শুধরে যাবে এই আশা করাই বৃথা। তাকে হাড়হারামজাদা ধরে নিয়েই তার সঙ্গে ডিল করতে হয়।
  • Swarnendu Sil | ১৩ এপ্রিল ২০২২ ১৬:৪৮506309
  • @একক, 

    না মনে হয়। এটা শুধু স্কেলের বিষয় নয়। বিদেশে হিউমিলিয়েট করে বা অ্যাবিউজ করে এরকম গাইড প্রচণ্ডই সিঙ্গুলার কেস, বেশিরভাগ 'স্বয়ং মার্ক্স' রাও আদৌ এসব করেন না। বস্তুত পিএইএচডি স্টুডেন্ট গাইডের দেখা সাক্ষাতই সাধারণত বেশ কম পায়, যেটা আমি আমার প্রথম মন্তব্যেই লিখেছিলাম। কারোরই অত সময় নেই। চোরে কামারে দেখা হয় না। 

    এদেশে সে তুলনায় গাইডরা সদা বিদ্যমান টাইপ ব্যাপার। একটা সিগ্নিফ্যান্ট অংশ অ্যাবিউসিভ, আরও একটা বড় অংশ প্রবল bossy, ইনটার ফেয়ারিং। পার্সোনাল প্রফেশনালের বাউন্ডারি নেই।   অন্য ফ্যাকাল্টিদের সাথে কথা বললে গাইড রেগে যান, এদেশে এমন গল্প হুদো হুদো  শুনতে পাবে। বিদেশে তোমার গাইড তুমি কার সাথে কথা বলছ খোঁজ রাখে এ অকল্পনীয় একটা ব্যাপার। 

    একটা গল্প বলি, সত্যি ঘটনা। বিদেশের এক প্রবল নামকরা জায়গায় এক বিশ্বখ্যাত ম্যাথেমাটিশিয়ান ক্যাফেটেরিয়ায় একদিন এক ছোকরাকে বসে কাগজ পেন্সিলে কিসব কষছে আর কফি খাচ্ছে দেখে তাঁকে জিগালেন সেই টেবিলে তিনি বসতে পারেন কিনা। ছাত্রটি বিগলিতভাবে হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়ই বলায় বসে তাকে জিগালেন সে যা করছে তা ম্যাথেমেটিক্স মনে হচ্ছে, তাই যদি ছেলেটির অসুবিধে না থাকে, সে কিসে কাজ করে জানতে তিনি আগ্রহী। ছেলেটি আহ্লাদে আটখানা হয়ে অনেকক্ষণ ধরে নানা কিছু এক্সপ্লেইন করল, তিনিও শুনলেন। শুনে বললেন, বাহ খুবই ইন্টারেস্টিং জিনিসে কাজ কর, তা তুমি কার সাথে কাজ কর? মানে তোমার অ্যাডভাইসর কে? ছেলেটি কাঁচুমাচু মুখে জানালে, আজ্ঞে আপনি। তাতে ম্যাথেমেটিশিয়ানটি বললেন, ওহ তাই নাকি? কোন বছর ঢুকেছিলে বল তো। ছেলেটি বছর দুয়েক আগে বলায় তিনি 'বাহ খুবই ভাল' ইত্যাদি বলে টলে চলে গেলেন।

    এতটা  বিদেশেও এক্সট্রীম কেস মানছি, কিন্তু এদেশে গাইডরা যে পরিমাণ সময় ব্যয় করেন পিএইচডি ছাত্রদের পিছনে, সেটা বিদেশে আকাশকুসুমই। আর 'তোমার পিএইচডি তোমার দায়িত্ব'? এ কথাটা বিদেশে আলাদা করে গাইডকে বলতে হয় না সাধারণত। পিএইচডি জয়েন করার দিন দুয়েক বাদে গ্র্যাজুয়েট স্কুলের পক্ষ থেকে সে বছর জয়েন করা ডিপার্টমেন্টের নতুন পিএইচডি স্টুডেন্টের জন্যে যে ওয়েলকাম প্রোগ্রাম অ্যারেঞ্জ করা হয়, তাতে সেই কয়েক ঘণ্টায় সিনিয়র পিএইচডি স্টুডেন্ট, গ্রাজুয়েট কমিটির চেয়ার, সেকশনের ডীন ইত্যাদিরা মিলে  এই এক্স্যাক্ট সেম বাক্যটি অন্তত দশবার বলেছিলন আমাদের। 
    ভারতে এবং সম্ভবত একমাত্র ভারতেই স্টুডেন্টদের কাছে এই বাক্যটা revealation। বা এই লেখায় যেমন লেখা হয়েছে, oxymoron ইত্যাদি মনে হয়।    
     
  • যদুবাবু | ১৩ এপ্রিল ২০২২ ১৭:৪২506317
  • স্বর্ণেন্দুঃ সব-ই মানছি কিন্তু "বিদেশে তোমার গাইড তুমি কার সাথে কথা বলছ খোঁজ রাখে এ অকল্পনীয় একটা ব্যাপার" - এইটা ঠিক না। আমার সাথে হয় নি কিন্তু আমি নিজেই এরকম লোককে চিনি। একেবারে এমবার্গো ঘোষণা করে রেখেছিলেন, অন্য ফ্যাকাল্টীর সাথে কফি খেতে গেলেও জবাবদিহি করতে হতো। এবং সেখানে বাদী-বিবাদী কেউ ভারতীয় নন, জায়গাটি এলিটস্য এলিট। (নামধাম করতেও হাত নিশপিশি করছে, কিন্তু করার উপায় নেই।) 

    সত্যি কথা বলতে আমার মনে হয় ব্যাপারটার মধ্যে একটা ইনহেরেন্ট প্যাটার্ণ আছে, যার ইন্টিগ্রিটি নেই, 'এমপ্যাথি' বা অন্য লোকের সমস্যা বোঝার ক্ষমতা বা ইচ্ছে নেই, দুম করে লোকেশন বা এনভয়রনমেন্ট চেঞ্জ করলে তার সেই গুণগুলো গজিয়ে যাবে এরকম মনে হয় না। হ্যাঁ, কোনো কোনো জায়গায় রেস্পনসিবল কন্ডাক্ট অফ রিসার্চ বা মেন্টরিং ১০১ গোছের কিছু জিনিষ করে কিছুটা শেখানো হয়, বা বলে দেওয়া হয় এইসব ভায়োলেট করলে কী কী রিপার্কাসন হতে পারে, তাতে কখনো কখনো লাভ হয়। 
  • Swarnendu Sil | ১৩ এপ্রিল ২০২২ ১৭:৫৮506320
  • @য
    এইটা আমার কাছে রিভিলেশন হল। এইটা আমি সত্যিই দেখিনি বা শুনিনি। আর আপনি তো আগেই লিখলেন, আমরা সবাইই নিজেদের অভিজ্ঞতা এক্সট্রাপোলেট করেই ধারণা তৈরী করি। তবুও প্রশ্ন করি, এইটা খুব কমন বিদেশে এরকম আপনার অভিজ্ঞতা কি? ভারতে যে বেশ কমন সেইটা আমি বহু শুনেছি,  অন্য থ্রেডেও তো অনেকেই লিখছিলেন।   
  • যদুবাবু | ১৩ এপ্রিল ২০২২ ১৮:০৬506322
  • নাঃ, খুব কমন কি না জানি না। একটা বেশ বড়ো সার্ভে হয়েছিলো এই ব্যাপারে, কাল রাত্রে লেখার পরেই খোঁজ করছিলাম, পেলে জানাবো। আমিও যখন শুনেছিলাম, আজ থেকে বছর চারেক আগে, আশ্চর্য হয়েছিলাম। এ তো নিজের পায়েই কুড়ুল মারা। আমি তো উলটে ছাত্রছাত্রীদের বলি যাও গিয়ে সবার সাথে সময় চেয়ে আলাপ করে এসো, ইন্ট্যার‍্যাক্ট করো, এই সুযোগ আর পাবে না। আসলে আমি বা আমরা একরকম কোকুনের মধ্যে থাকি, তার বাইরে কতো কিছু ঘটে, কতটাই বা জানি! শুনলে খারাপ / আশ্চর্য লাগে। 
  • প্যালারাম | ১৩ এপ্রিল ২০২২ ১৮:০৯506323
  • স্বর্ণেন্দু শীল বাবুর আপত্তি হল, কেন বেয়াড়া ছোকরা গাইডের কাছে গাইডেন্স চাইবে, আর তা না পেলে 'মোরন'-মাফিক মন্তব্য করবে।
    বেশ।
    প্রায় ধারাবাহিক উপন্যাসসম এই মন্তব্য, পালটা মন্তব্য দেখে যা বুঝলাম, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আপনারও কম নেই, আর তা নিয়ে আপনি বলতে খুবই আগ্রহী। ঠিক সেইটাই তো কাম্য। কথা হোক।
    অসুবিধে হল, এইভাবে ছড়ানো-ছিটোনো মন্তব্যে - নিজের অভিজ্ঞতাজনিত বায়াস, হালকা ব্ল্যাঙ্কেট স্টেটমেন্ট, বিরূপ মন্তব্যকারীর যুক্তিখণ্ডন, আত্মপক্ষ সমর্থন ইত্যাদি নানা মেদ জমে, বক্তব্যের খেই বলে কিছু থাকেনা। ভাটিয়ালি নামের পেজ-সমুদ্র মন্থন চলছে মনে হয়।
    আমার সচেতন, সবিনয় নিবেদন - সদ্য একটি ছাত্রের আত্মহত্যাজনিত ওঠা প্রশ্নগুলির - সমস্যা, সমাধান, 'কী নেই ভারতে' আর কী কী ভাবে বিদেশ অ্যাকাডেমিয়া ভাল - এ সব নিয়ে যা মনে হয়, তা এই 'উচ্চশিক্ষার আনাচকানাচ' নামের উপবিভাগে - খেরোর খাতা/ব্লগ, চাই কি গুরুর সম্পাদকীয় গ্রুপে - গুছিয়ে লিখে দিন।
    উপরোক্ত মেদগুলির বর্জন হলে, লেখা পড়বে বেশি মানুষ, অ্যাওয়্যারনেস বাড়বে, আরও যা যা সুবিধে লেখালেখি করলে হয়, সেগুলি হবে।
    তাছাড়া, লেখাটা হলে - 'বিদেশে কেউ তেমন কাউকে গাইড করেনা' - খালি ভারতেই হয়, আর সেটা খুব খারাপ ব্যাপার - এই অস্যার্থটি যুক্তিতর্ক সহযোগে এক জায়গায় প্রমাণ করারও সুযোগ থাকবে।
    প্রয়োজনে এই মন্তব্যসমূহে যা লিখেছেন, সেগুলোও ব্যবহার করবেন'খন? 
  • Swarnendu Sil | ১৩ এপ্রিল ২০২২ ১৯:১৭506325
  • @প্যালারামবাবু, 

    কিছু মনে করবেন না, কিন্তু আমি আমার মন্তব্য সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যগুলোর যে টোন, সেটার কারণ আদৌ বুঝছি না। আমার 'আপত্তি' র কথা উঠল কোথা থেকে সেটাও না। বাদবাকি একগাদা কথা যা আমি কোথাও বলিনি, অথচ আপনার মতে আমার বক্তব্য সেসব  কিম্বা 'গভীর সব পর্যবেক্ষণ', ' পক্ষপাতটা বোঝা যায়', 'ধারাবাহিক উপন্যাসসম', 'আর তা নিয়ে আপনি বলতে খুবই আগ্রহী' ইত্যাদি খোঁচা বাদই দিলাম নাহয়। 

    গুরুতে প্রত্যেকটা লেখার নীচেই অনেকেই নানান মন্তব্য করেন, নানারকম মত ইত্যাদি। আমিও তাইই করেছি। বরং আপনারই তাতে প্রবল আপত্তি বলে আপনার লেখার টোনে মনে হচ্ছে। লেখার যা কন্টেন্ট তার সাথে আমি সহমত নই আর  আপনারই স্বীকৃতি মতে আপনি লেখককে চেনেন, সেটাই কি কারণ? 

    গুরুতে সব লেখার নীচেই লোকে নানারকম মত লেখে, আপনি আমার মতে সহমত নন, আপনিও আপনার মত লিখেছেন, লিখছেন। অসুবিধে কি? আমি আমার বক্তব্য এখানে মন্তব্যে লিখব না খেরোর খাতায় না গুরুর সম্পাদকীয় গ্রুপে, মেদসহ খেই হারিয়ে যাওয়া লেখা লিখব না গুছিয়ে মেদহীন, সেসব আমাকেই ভাবতে দিন না। সে নিয়ে আপনার উদ্বিগ্ন না হলেও চলবে। 
  • Somnath | ১৩ এপ্রিল ২০২২ ১৯:৩৪506326
  • "না মনে হয়। এটা শুধু স্কেলের বিষয় নয়। বিদেশে হিউমিলিয়েট করে বা অ্যাবিউজ করে এরকম গাইড প্রচণ্ডই সিঙ্গুলার কেস, বেশিরভাগ 'স্বয়ং মার্ক্স' রাও আদৌ এসব করেন না।  "

    --স্বর্ণেন্দুর বিদেশ থেকে কি ভারতীয়/পাকিস্তানি/চিনে/কোরিয়ান ফ্যাকাল্টিরা বাদ?  তবে তুমি গাধা বলে অ্যাবিউজ কম হয়, নিশ্চিত। কিন্তু অ্যাবিউজ অবশ্যই হয়। মাসে একবার দেখা হলেও হয়।
  • প্যালারাম | ১৩ এপ্রিল ২০২২ ১৯:৪৮506327
  • @স্বর্ণেন্দু শীল 
    খোঁচা ছিল নিঃসন্দেহে, প্রথম কমেন্টে। এটায় নেই। টোন যা খুঁজে পেয়েছেন - উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়। 
    যেটা লুকোনোর কোনো কারণ নেই, তা হল, আপনার বক্তব্যের খেই আমি কয়েক কমেন্ট আগেই হারিয়ে ফেলেছি। সেই কারণেই, সমর্থন, বিরোধিতা - কী করবো, কতটা করবো - বুঝিনি। এক্ষেত্রে সেটা করতে গেলে গঠন থাকে না। খেউড় হয়।
    তাই বলেছি, এক জায়গায় লিখুন। এতে খোঁচা নেই।
    বিরোধিতা করতে চাইলেও, গুছিয়ে করতে পারবো। কতটা সমর্থন করি, সেটাও পরিষ্কার বুঝবো।
    আব আপ কি মর্জি।
  • Swarnendu Sil | ১৩ এপ্রিল ২০২২ ১৯:৫০506328
  • @সোমনাথ 

    তুমি গাধা, তোমার দ্বারা কিচ্ছু হবে না কিম্বা এই স্টেপ্লারের পিন তোলার যন্ত্রটা কি 'রিসার্চ' করে আনো এই মার্কা অ্যাবিউজ নিয়েই তো কথা হচ্ছে। হিউমিলিয়েশন।  
    তুমি সম্ভবত ওভারওয়ার্কিং এর অ্যাবিউজের কথা বলছ, সে ককেশীয় গাইড হলেও একেবারে হয় না তা নয়, তুমি যেসব বললে সেসব ক্ষেত্রে আর একটু বেশি হয় গড়ে। 
  • যদুবাবু | ১৩ এপ্রিল ২০২২ ২০:৩৭506330
  • যেটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলছিলাম, সোমনাথ-দা একেবারেই স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে। তবে কী ঐ সব জেনারাইলেজশন/ স্টিরিওটাইপ-ই ভুল। বললেই কেউ না কেউ বলবেন কই আমার তো অন্যরকম এক্সপিরিয়েন্স! যাকগে। এমনিও এসব করেই বা কী লাভ? 

    @প্যালাদাঃ তর্কে যেতে চাই না, বরং কমন গ্রাউণ্ড-টাকে যদি ধরি? স্বর্ণেন্দুর লেখার এই অংশটা তো তোমার-ও বক্তব্য? "একে তো ঘটনাটাই মর্মান্তিক, তারপরে আইসার কলকাতার স্টেটমেন্টে এই অ্যাডভাইসরের সিভি ছেপে দেওয়া! এর চেয়ে ন্যক্করজনক কিছু ভাবাও শক্ত। অথচ এরকম একের পর এক ঘটেই চলেছে।" 

    তোমার যা মনে হয় একটু লেখো? কী করা যেতে পারে এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে? হা-হুতাশ, দোষারোপ, 'যদ্যপি আমার গুরু'-র গল্প আর প্যাটার্ণ রেকগনিশন বাদ দিয়ে? সিস্টেমিক চেঞ্জ তো আসতে আসতে আমি-তুমি মরে যাবো, কিন্তু সেইদিকে যেতে গেলেও কী করা উচিত? সত্যিই জানতে চাই, ব্যক্তিগত আগ্রহেই। 

     
  • Swarnendu Sil | ১৩ এপ্রিল ২০২২ ২০:৪৪506332
  • @প্যালারাম 

    বেশ তো, এখানেই যতদূর সম্ভব গুছিয়ে লিখে দিচ্ছি। আমার বক্তব্য আর পাঁচজনের বক্তব্যর মতই নিজের অভিজ্ঞতাজাত ধারণা। আমার মতে তা কিছু এমন বিশেষ নয় যে আলাদা করে টই খুলে লিখতে হবে। এখানে আলোচনা চলছে, এখানেই থাকুক।  

    ১) ভারতের অ্যাকাডেমিয়ায় ( এটার মানে এর পর থেকে প্রিমিয়ার ইন্সটিটিউটগুলোয়, গড়পড়তা ইউনিভার্সিটিতে কি হয় আমি আদৌ জানি না  ) ফ্যাকাল্টিদের একটা অংশ ( ছোট কিন্তু সিগ্নিফিক্যান্ট ) ডাউনরাইট অসৎ, এরা ছাত্রদের কাজের ক্রেডিট চুরি, বুলিং, অ্যাবিউজ, বসিং করা, পার্সোনাল লাইফে ইন্টারফেয়ার করা, ছাত্রদের প্রতি ভিন্ডিক্টিভ হওয়া  ইত্যাদি প্রভৃতি, অ্যাকাদেমিয়ায় যতরকম খারাপ কাজ ইম্যাজিন করা যায়, তার প্রায় সবই করেন। 
    ২) আর একটু বড় অংশ হয়ত অসৎ নন, কিন্তু ছাত্রদের হিউমিলিয়েট করা, অ্যাবিউজ করা এসব হ্যাবিচুয়ালি করে থাকেন। এনারাও বসিং করে থাকেন এবং সাধারণত ( যদিও সবক্ষেত্রে নয় )  পার্সোনাল লাইফে ইন্টারফেয়ার করা, ছাত্রদের প্রতি ভিন্ডিক্টিভ হওয়া  ইত্যাদিও করে থাকেন। 
    ৩) আর একটু বড় অংশ  অসৎ নন, হিউমিলিয়েট ও করেন না, কিন্তু বসিং করা ও পার্সোনাল লাইফে ইন্টারফেয়ার করা ইত্যাদি করে থাকেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এঁরা ভিন্ডিক্টিভও, সব ক্ষেত্রে হয়ত নয়। 

    এই তিন ধরণের লোকেদের ক্ষেত্রেই কিছুদিন বাদেই এই সংক্রান্ত তাঁদের একরকম 'ওপেন সিক্রেট' রেপুটেশন গড়ে ওঠে, তাতে কিছু পাল্টায় না। ছাত্রছাত্রী তাঁদের কাছে কাজ করতে যাওয়াও না, ইন্সটিটিউশনের দিক থেকে কোন বাধা ইন্টারভেনশনের তো প্রশ্নই নেই। উল্টে এনারা বিপাকে পড়লে ইন্সটিটিউশনগুলো এঁদের আড়াল করে।  বস্তুত বহু ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট ফ্যাকাল্টিদের এরকম ঘটনার কথা খানিক প্রচ্ছন্ন গর্ব সহ বলতেও শোনা যায়।  

    ক) বিদেশে ( অর্থাৎ পশ্চিমে, উত্তর আমেরিকা ও ইওরোপে ) বুলিং বা হিউমিলিয়েট করা এ বস্তুত নেই, যে কটা টুকটাক কেস মাঝে মাঝে জানা যায় সেগুলোর প্রায় একশ শতাংশ ক্ষেত্রে গাইডরা বিশাআআল হনু লোক, তাই সেগুলো স্টুডেন্টরাই প্রায় কোথাও বলে না, নিজেদের মধ্যেও কম বলে। তাই ভারতের মত ওপেন রেপুটেশন এরকম কেস নেই। কিছু এরকম এলে ইন্সটিটিউশন নিজের পিঠ বাঁচাতে সেখানেও চায়, কিন্তু নিজের পিঠ আর অভিযুক্ত ফ্যাকাল্টির পিঠ এক করে দেখে না। ল-স্যুটের ভয় আছে। তাই বিশাল হনু লোকেরাও এসব কেসে 'কেস খান' । 

    খ) ক্রেডিট চুরি আর ভিন্ডিক্টিভ হওয়া আছে। ভারতের থেকে কম না বেশি বলতে পারব না। কম আমার মনে হয়, কিন্তু সেইটায় সাব্জেক্টিভ বায়াস প্রবল থাকতে পারে।  

    গ) ওভারওয়ার্কিং অ্যাবিউজ আছে, দেশের থেকে বেশিই থাকতে পারে। সেটা উত্তর আমেরিকায় তুলনায় অনেক বেশি, ইওরোপে জার্মানী বাদে বেশ কম বলেই আমার ধারণা। উত্তর আমেরিকাতেও ককেশীয় প্রফেসরদের থেকে সোমনাথদা যেগুলো উল্লেখ করেছে, সেসব ক্ষেত্রে গড়ে বেশি। 

    ঘ) পার্সোনাল জীবনে খবরদারী আমার অভিজ্ঞতায় নেই, তবে ওপরে য লিখেছেন উনি দেখেছেন। 

    এবার আসি ছাত্রদের প্রসঙ্গে। 
     
    ১) এদেশে ছাত্রছাত্রীদের গাইডের থেকে এক্সপেক্টেশন সাধারণভাবে অনেক বেশি, সেটা গাইড পিএইচডি উৎরে দেবেন থেকে গাইড নানান টেকনিকাল বিষয়ে সাহায্য করবেন এইরকম নানা মাত্রার হয়, কিন্তু এর সবচেয়ে কমটা, মানে গাইড টেকনিকাল বিষয়ে সাহায্য করবেনটাও বিদেশে ছাত্রছাত্রীরা আশাও করে না, পায়ও না। এদেশে এই প্রবল এক্সপেক্টেশন থেকে যাওয়ার একটা বড় কারণ সম্ভবত একটা বিশাল অংশের গাইড সেই সাহায্য করেও দেন। 

    ২) এদেশে ছাত্রছাত্রীরা পিএইচডি করতে আসার সময় বিদেশের তুলনায় অনেক নেইভ, অপেশাদার থাকে। 'মাস্টার্স পড়ছি' আর 'পিএইএচডি করছি', এই কথাদুটোয় যে ক্রিয়াপদটা পাল্টে গেছে এ বিষয়ে সম্যক ধারণা তাঁদের বেশিরভাগের আদৌ থাকে না। 'গাইড যেমন বলবেন চেষ্টা করব, পিএইচডি হয়ে যাবে'  এরকম একটা অনুক্ত ধারণা মাথায় কাজ করে, যাকে আমার মনে হয় এতদিন ডিগ্রী পাওয়ার পড়াশোনা যেভাবে করে এসেছেন তাঁরা তারই এক্সট্রাপোলেশন। রিসার্চ ব্যাপারটা যে আলাদা, পিএইচডি ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ইন্ডিপেন্ডেন্ট রিসার্চার হওয়ার ট্রেনিং পিরিয়ড, এইটা তাঁরা ভাবেন না। আবারও এইটা থেকে যাওয়ার একটা কারণ সম্ভবত এই যে বহু ফ্যাকাল্টিও এমন বাধ্য অনুগত ছাত্র টাইপ ছাত্র পেতে চান, তাঁরা 'পিএইচডি করাচ্ছি' ভাবেন, ছাত্রদের ইওঙ্গার লেস এক্সপিরিয়েন্সড সহকর্মী ভাবার বদলে নিজেদের মিনিয়ন ভাবতে ভালবাসেন। 

    এবার এ দুটোয় সম্পর্ক কি? সম্পর্ক এইই যে ভারতে এমন ওপেন রেপুটেশন থাকা লোকের কাছেও ছাত্রছাত্রী উপচে পড়ে মূলত এই জন্যে যে তাঁরা 'উৎরে দেন', 'প্লেস করে দেন', 'কেরিয়ার সেট করে দেন'।

    'তোমার পিএইচডি তোমারই দায়িত্ব, তোমারই খাটনি, তোমারই কাজ'  --- এইটা ভাবার কালচার নেই বলেই ভাবে 'গাইডই তো সেই দেখবে, এসব তো হবেই' ইত্যাদি ভেবে প্রচুর স্টুডেন্ট 'উৎরনো' অ্যাবিউসিভ গাইডের কাছেও জেনেশুনেই ভিড় জমায়। নিজের পিএইচডি নিজের দমেই করতে হয় ও করে মানুষে, এই কালচারাল অ্যাম্বিয়েন্সে থাকলে এইসব লোকজনের কাছে এমনিই যেত না। এটুকুই মোটামুটি বক্তব্য।  
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে প্রতিক্রিয়া দিন