এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ধর্ম, মৌলবাদ ও আমাদের ভবিষ্যৎ : কিছু যুক্তিবাদী চর্চা

    Debasis Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ | ৬০৪৬৩ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • ইসলাম সম্পর্কে আলাদা করে দু-চার কথা

    মৌলবাদ নিয়ে এই ধরনের একটা লেখায় যদি কেউ ঘোষণা করেন যে, এইবার ইসলাম নিয়ে আলাদা করে কিছু বলা হবে, তখন পাঠকের সে নিয়ে একটা প্রত্যাশা তৈরি হতে পারে। কাজেই, এখানে গোড়াতেই সে ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে বলে রাখা দরকার, না হলে পাঠক হয়ত বিভ্রান্ত ও ক্ষুব্ধ হবেন। সম্ভাব্য প্রত্যাশাটি এই রকম যে, মৌলবাদের স্বরূপ নিয়ে যখন চর্চা হচ্ছে, এবং তার মধ্যেই আলাদা করে ইসলাম নিয়ে চর্চার ঘোষণা হচ্ছে, তখন নিশ্চয়ই দেশে দেশে ইসলামীয় মৌলবাদের উৎপত্তি ও বিকাশ নিয়ে ঐতিহাসিক বিবরণ পাওয়া যাবে এখানে, বিভিন্ন স্থান-কালে তার সাধারণ বৈশিষ্ট্য ও বিশেষ বিশেষ বৈচিত্র্যের উল্লেখ পাওয়া যাবে, এবং অন্যান্য ধর্মের মৌলবাদের সঙ্গে তার মিল ও অমিল এবং তার কার্যকারণ ইত্যাদি বিষয়ক অনুসন্ধান ও তার ফলাফলও পাওয়া যাবে। হ্যাঁ, এখানে তা করতে পারলে ভালই হত, কিন্তু তার উপায় নেই। সেটা করতে গেলে আগে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধর্মের মৌলবাদের কার্যকলাপ নিয়ে একটা সুনির্দিষ্ট ও বিস্তারিত আলোচনা সেরে রাখতে হত, তবেই তার প্রেক্ষিতে ইসলামীয় মৌলবাদের বৈশিষ্ট্যগুলো স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠতে পারত। দুঃখের বিষয়, সে পরিসর এখানে ছিল না, এখানে তো এতক্ষণ মৌলবাদ নিয়ে শুধু কতকগুলো অতি সাধারণ কথাই বলেছি। বলে রাখা দরকার, এখানে আমি সরাসরি সেইসব নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করব না, যদিও যা আসলে বলব তার মধ্যে এ বিষয়ে আমার মতামত ও চিন্তাভাবনারও কিছু ইঙ্গিত হয়ত মিলবে। এখানে আমি মূলত কথা বলব ইসলাম ধর্ম ও সংশ্লিষ্ট মৌলবাদ প্রসঙ্গে আমাদের সমাজের মূলস্রোত ধ্যানধারণা নিয়ে, এবং তার ঠিক-বেঠিক নিয়েও। এ নিয়ে কথা বলব কারণ, আমার ধারণা, ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে যাঁরা ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়তে চান, তাঁদের এ বিষয়টি এড়িয়ে যাবার কোনও উপায় নেই।
     
    ওপরে বলেছি, যাঁরা ধার্মিক নন বরঞ্চ ‘ধর্ম’ জিনিসটার সমালোচক, তাঁদের মধ্যে ইসলাম নিয়ে দু রকমের ভাবনা বেশ পরিচিত। অনেকে মনে করেন, এই ‘মৌলবাদ’ সংক্রান্ত সমস্যাটা আসলে শুধুই ইসলামের সমস্যা, আর কারুরই নয় --- ধর্মের নামে ফতোয়াবাজি আর মারদাঙ্গা মূলত মুসলমানেরাই করছে। অন্যদের যদি আদৌ কিছু সমস্যা থেকেও থাকে, তো সেটা শুধু ইসলামি জঙ্গিপনার প্রতিক্রিয়া মাত্র। আবার, এ অবস্থানটি অন্য অনেকের দুশ্চিন্তারও কারণ। ইসলামি জঙ্গিপনার বিপদ স্বীকার করেও তাঁরা মনে করেন যে, এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নির্দোষ ও নিরীহ আম মুসলমানের ঢালাও খলনায়কীকরণ হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ছড়ানো হচ্ছে ঘৃণা বিদ্বেষ ও হিংস্রতা। প্রথম ভাবনাটি ভুল, কেন তার কিছু ব্যাখ্যা নিচে আছে।
     
    আর ওই দ্বিতীয় প্রকারের যে দুশ্চিন্তা, আমি এবং আমার মত অনেকেই যার শরিক, তার এক প্রতিনিধি-স্থানীয় দৃষ্টান্ত আমার হাতে এসেছে কয়েকদিন আগে, আমার এক তরুণ বন্ধুর সাথে ফেসবুকীয় কথোপকথনে। তিনি কে, সেটা এখানে প্রাসঙ্গিক না, কিন্তু তিনি আমাকে যে সব প্রশ্ন করেছেন তা বোধহয় অতিশয় প্রাসঙ্গিক। এখানে সেগুলো হুবহু উদ্ধৃত করলে হয়ত আমাদের আলোচ্য প্রশ্নগুলোকে সুনির্দিষ্ট আকার দিতে সুবিধে হবে। অবশ্য, এখানে উদ্ধৃত প্রত্যেকটি প্রশ্নগুলোর সুনির্দিষ্ট ও নিষ্পত্তিমূলক উত্তর দেওয়া এ লেখার উদ্দেশ্য ততটা নয়, যতটা হল মূল প্রশ্নগুলোকে চিহ্নিত করার মাধ্যমে সমস্যাটাকে আরেকটু স্পষ্ট করে তোলা। নিচে রইল সেই তরুণ বন্ধুর দুশ্চিন্তা-জারিত প্রশ্নগুলো।
     
    দাদা,

    একটা বিষয় একটু বিস্তারিত জানতে চাই আপনার কাছে। আপনি যদি সময় করে একটু ডিটেইলসে উত্তর দেন, খুব উপকৃত হই। অনেকদিনই এটা আপনাকে জিজ্ঞেস করব করব ভেবেছি, কিন্তু করা হয়নি, কারণ বিষয়টা একটু সেন্সেটিভ, আর প্রশ্নটা একটু বিস্তারে করতে হবে।

    ছোটবেলা থেকেই (ক্লাস ওয়ান থেকে) আমি দেখে এসছি, আমার পরিমণ্ডলে শুধুমাত্র ধর্মে মুসলিম হওয়ার জন্য মানুষকে সন্দেহের চোখে, বিদ্বেষের চোখে দেখা হয়। ক্রিকেটে পাকিস্তান জিতলে "কীরে, খুব আনন্দ বল!" বলে টন্ট কাটা হয়, কেবল নাম দেখে বাড়িভাড়া দিতে অস্বীকার করা হয়, এমনকি মুসলিম ছাত্র ক্লাসে ভাল রেজাল্ট করলেও "আশ্রম থেকে শেষে মুসলিম ফার্স্ট হবে" এরকম কথা খোদ টিচারের মুখেই শুনেছিআমি ঘটনাক্রমে মুসলিম পরিবারে জন্মাইনি, কিন্তু একদম ছোটবেলা থেকেই আমার মুসলিম বন্ধু বা প্রতিবেশীদের এভাবে সামাজিক হেট ক্যাম্পেনিং এর মুখে পড়াটা ভীষণ দুঃখজনক লাগে। এই খারাপ লাগাটা ক্লাস ওয়ান থেকেই শুরু হয়েছিল, তো তখন তো আমি ধর্ম ভাল না খারাপ, যুক্তিবাদ ভাল না খারাপ, এতকিছু তো বুঝতাম না।

    এখন মুসলিমবিদ্বেষকে যারা জাস্টিফাই করে, তাদের থেকে যে যুক্তিগুলো উঠে আসে, সেগুলো -

    ১) আর কোন ধর্মে আইসিস, তালিবান, বোকোহারামের মত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আছে?

    ২) "ওরা" (মুসলিমরা) সংখ্যায় বাড়লেই ইসলামিক রাষ্ট্র চায়, সংখ্যায় কমলেই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র চায়।

    ৩) সব ধর্মে সংস্কার হয়েছে, কিন্তু "ওরা" এখনও মধ্যযুগেই পড়ে আছে।

    ৪) সব ধর্মেই বহুবিবাহ বন্ধ হয়েছে, কিন্তু "ওদের ধর্মে" বহুবিবাহ আজও জায়েজ, ওদের ধর্মে নারীর অবস্থা সবচাইতে খারাপ।

    ৫) "ওরা" নিজেদের বাঙালি মনে করে না, মননে চিন্তনে আরব, ওদের কাছে ধর্মই সব।

    ৬) ধর্মের নামে মানুষ হত্যা "ওদের ধর্মের মত কোন ধর্মই করেনি।"

    ৭) "ওদের" বাড়াবাড়ির জন্যই বিজেপির মত দলের সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ, হিন্দু মৌলবাদ ইসলামিক মৌলবাদের প্রতিক্রিয়ার ফসল।

    ইত্যাদি ইত্যাদি। আপাতত এই কটাই মনে পড়ছে।

    এখন আমার প্রশ্ন

    ১) মুসলিমবিদ্বেষীদের এই দাবিগুলো কি তথ্যগতভাবে সত্যি?

    ২) সত্যিই কি ইসলাম আর পাঁচটা ধর্মের থেকে ব্যতিক্রমী ভায়োলেন্ট? এখন তো যুক্তি, তথ্য, পরিসংখ্যানের বিভিন্ন মেথডলজি দিয়ে অনেক বিষয় কম্পারেটিভ স্টাডি করা যায়। "ইসলাম অন্য পাঁচটা ধর্মের থেকে ভায়োলেন্ট" - এই বিষয়টা কি যুক্তি, তথ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা যায়? মানে আমার প্রশ্ন, দাবিটার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু?

    ৩) ধরে নিলাম, ইসলাম সবচাইতে ভায়োলেন্ট ধর্ম। কিন্তু তাতে করেই কি মুসলিমবিদ্বেষ জায়েজ হয়ে যায়?

    ৪) একজন নাস্তিক হিসাবে মুসলিম সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার হরণ করা হলে তার প্রতিবাদ করা কি অন্যায়?

    ৫) হিন্দু মৌলবাদ কি সত্যিই ইসলামিক মৌলবাদের প্রতিক্রিয়ার ফসল? ইসলামিক মৌলবাদ না থাকলে সত্যিই কি হিন্দু মৌলবাদ বলে কিছু থাকত না?

    ৬) আইসিস বা তালিবানের মত মুসলিম লিগ বা বর্তমানে মিমকে কি মৌলবাদী বলা যায়? নাকি "সাম্প্রদায়িক, কিন্তু মৌলবাদী নয়"-এমনটা বলা উচিত?

    আমার প্রশ্ন করার মূল কারণটা কিন্তু কোনভাবেই ইসলামকে ডিফেন্ড করা বা তার ভয়াবহতাকে লঘু করা নয়। আমিও ধর্মহীন সমাজের স্বপ্ন দেখি, সব ধর্মের মত ইসলামের অবসানও আশা করি।

    কিন্তু মধ্যবিত্ত শিক্ষিত স্তরে ইসলামের সমালোচনাটা যেভাবে হয়, তার টোনটা ঠিক যুক্তিবাদের নয়, টোনটা বিদ্বেষের। এখন রিলিজিয়াস ক্রিটিসিজমকে ঢাল করে বুঝে বা না বুঝে অনেক প্রগতিশীল মানুষও বিদ্বেষের টোন ব্যবহার করছেন। এটা খুব আশঙ্কার।

    এখন, এই প্রশ্নগুলোর প্রত্যেকটাকে আলাদা করে উত্তর দেবার চেষ্টা না করে বরং এ প্রসঙ্গে কতকগুলো সাধারণ কথা ভেবেচিন্তে দেখি। তাতে করে সমাধান না আসুক, অন্তত সমস্যাটার চেহারাটা আরেকটু স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠতে পারে কিনা, দেখা যাক। হতে পারে, ভাবতে গিয়ে হয়ত ওপরের দু-একটা প্রশ্ন শেষতক বাদই পড়ে গেল, বা উল্টোভাবে, যে প্রশ্ন এখানে নেই তেমন কিছু এসে কথার মধ্যে ঢুকে পড়ল।

    প্রথমেই বলা দরকার, অনেকে আধুনিক মৌলবাদী উত্থানকে মুসলমান জঙ্গি উত্থানের সঙ্গে এক করে দেখেন, যা মোটেই সঠিক নয়। বর্তমান পৃথিবীর প্রধান ধর্মীয় ধারাগুলোর সবকটির মধ্যেই মৌলবাদী উত্থান ঘটেছে, বিভিন্ন মাত্রা, ভঙ্গী ও ধরনে। আমেরিকায় খ্রিস্টান মৌলবাদীদের কথা আমরা জানি, জানি ইসরায়েলের ইহুদী মৌলবাদীদের কথা, জানি ভারতের হিন্দু মৌলবাদীদের কথা, এবং জানি এই ভারতেই আশির দশকে তেড়েফুঁড়ে ওঠা শিখ মৌলবাদীদের কথাও --- যাদের হাতে ভারতের এক প্রধানমন্ত্রী নিহত হয়েছিলেন। ‘অহিংসার ধর্ম’ বলে কথিত বৌদ্ধধর্মও এ প্রবণতার বাইরে নয় মোটেই। থাইল্যান্ড, বর্মা ও শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ ধর্মের তরফেও জঙ্গি প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। আজ অনেকেরই হয়ত আর মনে নেই, দুহাজার এক সালের কুখ্যাত ‘নাইন ইলেভেন’-এর ঘটনার আগে পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ধর্মীয় নাশকতার ঘটনা বলে ধরা হত উনিশশো পঁচানব্বই সালের দুটি ঘটনাকে। তার একটি ঘটেছিল আমেরিকার ওকলাহোমা সিটি-র ‘ট্রেড সেন্টার’-এ, যাতে বিস্ফোরক-ভর্তি ট্রাক দিয়ে ওই ভবনটিতে ধাক্কা মেরে প্রায় দেড়শো লোকের প্রাণনাশ করা হয়েছিল, এবং সেটা ঘটিয়েছিল কতিপয় খ্রিস্টান মৌলবাদী। অন্যটি ঘটেছিল জাপানে, যেখানে পাতাল রেলের সুড়ঙ্গে বিষাক্ত সারিন গ্যাসের কৌটো ফাটিয়ে দেওয়া হয়, তাতে বিষাক্ত গ্যাসে সরাসরি যত না মারা যায় তার চেয়ে অনেক বেশি লোক মারা যায় এবং গুরুতরভাবে জখম হয় সুড়ঙ্গের ভেতরে আতঙ্কগ্রস্তদের দৌড়োদৌড়িতে পদপিষ্ট হয়ে --- এবং সেটা ঘটিয়েছিল কট্টরপন্থী বৌদ্ধদের একটি ক্ষুদ্র উপগোষ্ঠী। আমরা বৌদ্ধধর্মটা অন্তত অহিংস বলে জানতাম, তাই না? তার দু বছর আগে উনিশশো তিরানব্বই সালে ভারতে সংঘটিত কুখ্যাত ‘বম্বে বিস্ফোরণ’ অবশ্যই একটি বৃহৎ নাশকতা, এবং সেটা ঘটিয়েছিল মুসলমান জঙ্গিরাই। কিন্তু, মুসলমান মৌলবাদীদের বক্তব্য অনুযায়ী, সেটা ছিল তার এক বছর আগে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রতিক্রিয়া। বলা বাহুল্য, এই বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনাটিকেও আবার মুসলমানদের অত্যাচারের প্রতিক্রিয়া বলেই দেখানো হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, সেটা কোনও সাম্প্রতিক ‘অত্যাচার’-এর প্রতিক্রিয়া ছিল না। হিন্দু মৌলবাদীদের নিজেদের দাবি অনুযায়ীই, এটা নাকি মোগল সম্রাট বাবরের তরফে ঘটে যাওয়া পাঁচশ বছরের পুরোনো এক অন্যায়ের প্রতিকার মাত্র! এবং, এই বাবরি মসজিদের ধ্বংসও আবার এ দেশে ধর্মীয় নাশকতার প্রথম ঘটনা নয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাও নয়। এ দেশে আজ পর্যন্ত ধর্মীয় নাশকতার সবচেয়ে বড় ঘটনা বলে যদি কোনও বিশেষ ঘটনাকে ধরতেই হয়, তো সেটা সম্ভবত উনিশশো চুরাশি সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধিকে হত্যা করার ঘটনা। সেটা মুসলমানেরা ঘটায়নি, ঘটিয়েছিল শিখ মৌলবাদীরা।

    ধর্মের সমালোচনা যে আধুনিক পৃথিবীর অন্যতম প্রধান কাজ, তাতে সন্দেহ নেই। সমালোচনা মানে সব ধর্মেরই সমালোচনা, ইসলামেরও।  কিন্তু, ইসলাম ধর্মের সমালোচনায় একটি ভুল আমরা প্রায়শই করে থাকি। আমরা বলি, ইসলাম ধর্ম (এবং সেইহেতু ওই ধর্মাবলম্বীরাও) তো হিংস্র হবারই কথা, কারণ, ইসলামীয় ধর্মশাস্ত্রে হিংসার উপাদান খুব বেশি আছে। হয়ত সত্যিই আছে, কিন্তু যুক্তিটা তা সত্ত্বেও ভুল, এবং দুটো দিক থেকেই ভুল। কারণ, প্রথমত, সব ধর্মশাস্ত্রেই হিংসার উপাদান কমবেশি আছে। এবং দ্বিতীয়ত, যে ধর্মের শাস্ত্রে হিংসার উপাদান কিছু কম আছে সে ধর্মগোষ্ঠীর মানুষের আচরণে হিংসা কম থাকবেই --- এ প্রত্যাশার ভিত্তিটাও বোধহয় খুব পোক্ত নয়।
     
    হিংস্রতার বর্ণনা ও তার নৈতিক সমর্থন হিন্দু শাস্ত্রগুলোতে কোরানের চেয়ে কিছু কম নেই। কম নেই বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টেও, যদিও, হয়ত বা সত্যিই কিছু কম আছে নিউ টেস্টামেন্টে।  আবার, শাস্ত্রগ্রন্থে হিংস্রতার বর্ণনা কম থাকলেই যে ধার্মিকেরা কিছু কম হিংস্র হবেন, এমন নিশ্চয়তাও পাওয়া কঠিন। যুদ্ধলিপ্সা, হত্যা এবং হিংস্রতায় যিনি প্রবাদপ্রতিম, সেই চেঙ্গিস খান কিন্তু মোটেই মুসলমান ছিলেন না, 'খান' পদবী দেখে যা-ই মনে হোক।  খ্রিস্টানরা ষোড়শ-সপ্তদশ শতক জুড়ে আমেরিকাতে স্থানীয় অধিবাসীদের বিরুদ্ধে যেভাবে হত্যালীলা চালিয়েছে নিউ টেস্টামেন্টের যাবতীয় ক্ষমার বাণী সত্ত্বেও, তা ইতিহাসে বিরল। মধ্যযুগের শেষে এবং আধুনিক যুগের গোড়ায় 'ক্ষমাশীল' খ্রিস্টানদের ডাইনি পোড়ানোর হিড়িক দেখে আতঙ্কে শিউরে ওঠেন না, এমন কেউই কি আছেন এ যুগে? 'ইসলামিক স্টেট' তার ঘোষিত 'বিধর্মীদের' হত্যা করে হত্যার উদ্দেশ্যেই, বা প্রতিশোধের উদ্দেশ্যে, এবং সেটা সারা জগতের লোককে ডেকে দেখানোর জন্যেও বটে। দেখ হে, আমরা কত ভয়ঙ্কর, কত বড় বীর, এই রকম একটা ভাব। কিন্তু মধ্যযুগের খ্রিস্টানরা ডাইনি মারত ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা দিয়ে, এবং যন্ত্রণা দেওয়াটাই সেখানে মূল উদ্দেশ্য, যাতে অকথ্য অত্যাচার করে তার মুখ থেকে অন্য আরেক ‘ডাইনি’-র নাম বার করে আনা যায়। এই কাজটির জন্য তারা বিচিত্র ও বীভৎস সব কলা-কৌশল ও যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করেছিল। কাজেই, বিশেষ একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর ধর্মান্ধতা ও ধর্মীয় হিংস্রতার সঙ্গে তার শাস্ত্রীয় অনুমোদনের একটা সহজ সরল সম্পর্ক ধরে নেওয়াটা বোধহয় সব সময় খুব নিরাপদ নয়।

    মুসলমানদের হিংস্রতার মতই আরেকটি বাজে গল্প আছে মুসলমানদের জনসংখ্যাবৃদ্ধি নিয়ে। মুসলমানদের হুহু করে বংশবৃদ্ধি হচ্ছে, এবং দ্রুত তারা হিন্দুদেরকে ছাপিয়ে গিয়ে গোটা দেশটাকে দখল করে ফেলবে, এই মিথ্যে আতঙ্কটা হচ্ছে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রচারের অন্যতম প্রধান বিষয়বস্তু, বহু মানুষই যা সরলমনে বিশ্বাস করেন। এখানে বলে নেওয়া দরকার, মুসলিম জনসংখ্যা যে বাড়ছে এবং তার হার যে হিন্দুদের চেয়ে এখন পর্যন্ত কিছু বেশিই বটে, এটা কিন্তু মিথ্যে নয়। মিথ্যে হল এই প্রচারটা যে, এইভাবে বাড়তে বাড়তে হিন্দুদের চেয়ে তাদের সংখ্যা নাকি বেশি হয়ে যাবে, এবং তারাই দেশটাকে গ্রাস করে ফেলবে। আসলে ঘটনা হল, সব ধর্মের জনসংখ্যাই বাড়ছে, এবং সংখ্যালঘুদের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার সব দেশেই সংখ্যাগুরুদের চেয়ে সামান্য একটু বেশি হয়, যদি সেখানে সংখ্যালঘু নিধন না চলে, এবং বিশেষত যদি সে সংখ্যালঘুরা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া হয়। জনসংখ্যাবৃদ্ধির আসল যোগটা ধর্মের সঙ্গে নয়, অর্থনীতির সঙ্গে। হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যেও গরিবদের জনসংখ্যাবৃদ্ধি যদি আলাদা করে হিসেব করা হয় তো দেখা যাবে যে তা সচ্ছল হিন্দুদের চেয়ে অনেক বেশি। সম্পন্নরা ভাল রোজগার করতে চায়, ভালভাবে থাকতে চায়, এবং সন্তানের জীবনযাপনও যাতে সে রকমই হয়, সে ব্যবস্থা করতে চায়। তারা জানে যে সেটা করতে গেলে সন্তানকে উচ্চমানের শিক্ষাদীক্ষা দেওয়া দরকার, তার পেছনে ভাল করে যত্ন ও খরচাপাতি করা দরকার, এবং সেটা করার ক্ষমতাও তাদের আছে। ছেলেপুলে বেশি হলে তা সম্ভব নয়, এবং তাতে করে বাচ্চার মায়ের স্বাস্থ্যের বারোটা বাজবে, মা ঘরের বাইরে গিয়ে পেশাগত কাজকর্ম করে অর্থ উপার্জনও করতে পারবে না। ফলে, তারা বেশি সন্তান একদমই চায় না। উল্টোদিকে, গরিবরা এত কথা জানেও না আর তাদের সে ক্ষমতাও নেই। ফলে তারা যত বেশি সম্ভব সন্তান চায়, সেটা মায়ের স্বাস্থ্যহানি ও মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে হলেও। গরিবরা জানে তাদের সন্তান দুধেভাতে থাকবে না, এবং শেষপর্যন্ত কোনও শ্রমসাধ্য কাজেই যোগ দেবে যাতে শিক্ষা বা 'স্কিল' সেভাবে লাগে না। ফলে, সন্তানের সংখ্যা বেশি হলে দুরবস্থা আর অযত্নের মধ্যেও হয়ত রোগভোগ মৃত্যু এড়িয়ে কেউ কেউ টিঁকে যাবে, আর পরিশ্রম করে পরিবারের আয় বাড়াতে পারবে, যৎসামান্য হলেও। অথচ এদেরই যখন অর্থনৈতিক উন্নতি হবে, তখন এরা মেয়েদেরকে পড়াশোনা শেখাতে চাইবে, ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে সন্তানকে কেরানি-আমলা-ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-উকিল এইসব বানাতে চাইবে, ফলে স্বল্পসংখ্যক সন্তান চাইবে, এবং মায়ের জীবন ও স্বাস্থ্যকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করবে। একটু ভাল করে খোঁজখবর করলেই জানা যাবে, অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ঘটছে কিন্তু আসলে ঠিক তাইই, হিন্দু ও মুসলমান উভয়ের ক্ষেত্রেই। এবং, মুসলমানরা পিছিয়ে আছে বলেই তাদের অগ্রগতিও দ্রুততর। তাদের জন্মহারের বৃদ্ধি কমছে কিছু বেশি দ্রুতলয়ে। এভাবে চললে আর দেড় দুই দশক পরেই হয়ত হিন্দু-মুসলমানের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার সমান হয়ে যাবে, এবং মুসলমানদের ভারত দখলের কুৎসিত অশিক্ষিত গল্পতেও তখন আর কেউই পাত্তা দেবে না। ইতিহাসের স্বাভাবিক গতি এই দিকেই।
     
    এখানে 'অগ্রগতি' বলতে জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার কমিয়ে আনার কথা বুঝিয়েছি। মুসলমানদের ক্ষেত্রে এই কমিয়ে আনাটা হিন্দুদের চেয়ে বেশি হারে ঘটছে (বৃদ্ধির হার কমে যাওয়া মানে জনসংখ্যা কমে যাওয়া নয় কিন্তু, এ হার কমতে কমতে শূন্যের নিচে নামলে তবেই জনসংখ্যা কমতে শুরু করবে)। এই কমে আসাটা উন্নয়নের পরোক্ষ সূচক। এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিন বাদে যে হিন্দু-মুসলমানের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার সমান হয়ে যাবে তাতে সন্দেহ নেই।  পিছিয়ে আছে বলেই অগ্রগতি বেশি তাড়াতাড়ি হচ্ছে --- এ কথাটা হয়ত অনেককে বিস্মিত করতে পারে, কিন্তু কথাটা বলার কারণ আছে। নিশ্চয়ই জানেন, ভারত চিন ব্রাজিলের মত একটু এগিয়ে থাকা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ইউরোপ আমেরিকার উন্নত দেশগুলোর থেকে বেশি। এর কারণ হচ্ছে, একবার উন্নত হয়ে গেলে একই গতিতে আরও আরও উন্নত হতে থাকাটা ক্রমশই আরও বেশি বেশি করে কঠিন হয়ে ওঠে, তাই উন্নয়নের প্রথম দিকে বৃদ্ধির যে গতি থাকে পরের দিকে আর তত গতি থাকে না। মুসলমানদের জনসংখ্যার ক্ষেত্রেও তাইই ঘটছে, এবং আরও ঘটবে (ও দুটোকে খুব নিখুঁতভাবে মেলানোর দরকার নেই, যদিও)।

    আমরা যারা এই বিষয়গুলোকে এইভাবে ভাবার চেষ্টা করি, তাদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আসে প্রায়শই, ফেসবুকে সে গর্জন রোজই শোনা যায়। এখন, এটা তো সত্যি কথাই যে, পশ্চিমবাংলার যুক্তিবাদীদের লেখালিখিতে, এবং যথারীতি আমার নিজের লেখাতেও, হিন্দু মৌলবাদের সমালোচনাই বেশি আসে, মুসলমান মৌলবাদের কথা বাস্তবিকই আসে অনেক কম। ঠিক এই অভিযোগটি সেক্যুলারদের প্রতি হিন্দু মৌলবাদীরা করে থাকেন নিয়মিতই (বস্তুত, প্রত্যেক ধর্মের মৌলবাদীরাই তাদের নিজস্ব গোষ্ঠী বা সমাজের সেক্যুলারদের প্রতি এই একই অভিযোগ করে থাকে)। কিন্তু একটু ভাবলে বুঝবেন, এটাই প্রত্যাশিত ও স্বাভাবিক। এবং, অন্যরকম কিছু হলেই বরং অত্যন্ত অস্বাভাবিক ও অসঙ্গত হত, এমন কি অন্যায়ও হত। কেন, তার একাধিক কারণ আছে। প্রথমত, এ দেশের রাষ্ট্র ও সমাজ যে মৌলবাদী হুমকিটির মুখোমুখি, সেটা তো হিন্দু মৌলবাদই, অন্য কোনও মৌলবাদ নয়। শিক্ষা-প্রশাসন-বিচারব্যবস্থার ধর্মীয়করণ, সংবিধানকে পাল্টে দেবার পরিকল্পনা, ভিন-ধর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন, ধর্মের জিগির তুলে তার আড়ালে সরকারি সম্পত্তি পাচার --- এ সব তো মুসলমানরা করছে না, হিন্দুত্ববাদীরাই করছে। অতএব, তাদের মুখোশ খোলাটাই এখানে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক। মুসলমান জঙ্গিরা নাশকতা ঘটালে তার মোকাবিলার জন্য পুলিশ-মিলিটারি আছে, কিন্তু নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসা মৌলবাদীদের রোখবার দায়িত্ব তো আর পুলিশ-মিলিটারি নেবে না, সেটা সাধারণ ভারতীয় নাগরিকের কাজ। আমি যে দেশে এবং যে ধর্মীয় সমাজের মধ্যে বাস করি, সেখানে যারা অন্ধত্ব ও হিংস্রতা ছড়াচ্ছে, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রকে বিনাশ করছে, তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোটাই তো আমার পক্ষে স্বাভাবিক, তাই না? বাংলাদেশি মুক্তমনারা যদি মুসলমান ধর্ম ছেড়ে হিন্দুদেরকে গালি দিতে থাকতেন, বা বার্ট্র্যান্ড রাসেল যদি 'হোয়াই আই অ্যাম নট আ ক্রিশ্চান' না লিখে 'হোয়াই আই অ্যাম নট আ হিন্দু' লিখে বসতেন, তাহলে যেমন উদ্ভট অসঙ্গত কাজ হত, এখানে আমরা হিন্দু ধর্ম ছেড়ে মুসলমান নিয়ে পড়লেও ঠিকই একই ব্যাপার হবে (যদিও বাংলাদেশি মুক্তমনারা ঠিক যা বলেন এবং যেভাবে বলেন, তার অনেক কিছুর সঙ্গেই আমার দ্বিমত আছে, তবে সেটা এখানে প্রাসঙ্গিক না)। দ্বিতীয়ত, আমরা পশ্চিমবঙ্গের বেশির ভাগ মুক্তমনা যুক্তিবাদী নাস্তিকেরা হিন্দু সমাজে জন্মেছি বলেই সে সমাজ ও তার ধর্ম শাস্ত্র রীতিনীতি আচার বিচার এইসব অনেক বেশি জানি, ফলে সে ব্যাপারে আমাদের সমালোচনা অনেক বেশি নিরেট, নির্ভুল এবং অর্থবহ হয়, যা ভিনধর্মী সমাজে যারা জন্মেছে তারা পারবেনা। ঠিক একই কারণে, মুসলমান সমাজ ও ধর্ম সম্পর্কে মুসলমান সমাজে জন্মানো যুক্তিবাদীদের সমালোচনা অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য ও ফলপ্রসূ হয়। যদিও, এর মানে মোটেই এই নয় যে এক ধর্মে জন্মানো লোক অন্য ধর্মের সমালোচনা করতেই পারবেনা --- যে কোনও মানুষের যে কোনও ধর্মের সমালোচনা করার অধিকার আছে, এবং করা উচিত। তবে কিনা, নিজের সমাজের অন্ধত্ব অযুক্তি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথমে সোচ্চার হওয়াটা যে কোনও মানুষেরই ‘স্বাভাবিক’ অধিকার, কর্তব্যও বটে।
     
    আচ্ছা, তা সে যা-ই হোক, মোদ্দা কথাটা তাহলে কী দাঁড়াল --- মুসলমানেরা ধর্মান্ধতায় অন্যদের চেয়ে এগিয়ে, না পিছিয়ে? এসব ঠিকঠাক বলতে গেলে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে পৃথিবীজোড়া সমীক্ষার নির্ভরযোগ্য ফলাফল চাই, না হলে সবটাই চায়ের দোকানের আড্ডা হয়ে যাবে। আপাতত আছে কি সে সব, আমাদের হাতে? সুখের বিষয়, সে সব আছে। এই কিছুদিন মাত্র আগেও সেভাবে ছিল না, কিন্তু এই একুশ শতকে বেশ ভালভাবেই আছে। বেশ কয়েকটি বিখ্যাত সংস্থা এখন মানুষের জীবনের নানা দিক নিয়ে প্রামাণ্য সমীক্ষা করে থাকে, তার মধ্যে ধর্মবিশ্বাসও পড়ে। এইসব সমীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বড় বড় বিশেষজ্ঞরা নানা গভীর গবেষণাও করে থাকেন, এবং তাতে তেমন চমকপ্রদ কোনও ফলাফল পাওয়া গেলে সারা পৃথিবীর গণমাধ্যমে সে নিয়ে আলোড়ন উঠে যায়। এই রকমই একটি সংস্থা হল ‘উইন গ্যালাপ’। তারা সারা পৃথিবী জুড়ে মানুষের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে এক বিখ্যাত সমীক্ষা চালিয়েছিল ২০১২ সালে, তাতে বিভিন্ন ধর্মগোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মবিশ্বাসের প্রাবল্য, ধর্মবিশ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে আসা মানুষের সংখ্যা, এইসবের হিসেব ছিল। তাতে কি দেখা গেল? নিচে দেখে নিন ২০১২ সালের পৃথিবীজোড়া সমীক্ষার ফলাফল, সুন্দর করে সারণিতে সাজানো। এখানে পরিষ্কারভাবেই দেখা যাচ্ছে, নিজেকে বিশ্বাসী বলে দাবি করেন অথচ ধার্মিক বলে দাবি করেন না --- এমন মানুষের অনুপাত মুসলমানদের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি। কারা কবে সমীক্ষাটি করেছে, এবং তা কোন নথিতে প্রকাশিত, সব তথ্যই পাবেন এখানে।
     
     
    এবার একটি ইসলামীয় দেশকে নিয়ে ভাবা যাক, যেখানে প্রায় সর্বাত্মক মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং ইসলামীয় রাষ্ট্র আছে। ধরুন, ইরান। এই  দেশটা সম্পর্কে আপনি কী জানেন? জানি, এ প্রশ্নের উত্তরে প্রায় সকলেই একই কথা বলবেন। ছিয়ানব্বই দশমিক পাঁচ শতাংশ (সরকারি সেন্সাসের তথ্য অনুযায়ী) মুসলমান অধ্যুষিত একটি ধর্মান্ধ দেশ, যার মধ্যে আবার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা শিয়া মুসলমানদের। কট্টর মৌলবাদীরা সেখানে দেশ চালায়, প্রশ্ন করলেই কোতল হতে হয়, মুক্তচিন্তা কল্পনাতীত। সম্প্রতি সেখানে হুলুস্থুলু ঘটে গিয়েছে, সে সব খবরাখবর আপনারা দেখেছেন। একটি মেয়েকে ইসলাম-সম্মত পোশাক না পরার অপরাধে সেখানে হত্যা করা হয়েছে, তাই নিয়ে প্রবল আন্দোলন হলে রাষ্ট্রের তরফে নেমে এসেছে দমন-পীড়ন, এবং সদ্য-সমাপ্ত ফুটবল বিশ্বকাপে সারা পৃথিবীর সামনে তার প্রতিবাদ করায় সে দেশের জাতীয় দলের এক খেলোয়াড়কে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। এখানে মৌলবাদের দাপটের ছবিটা একদমই স্পষ্ট, আবার গণমানুষের আপত্তিটাও খুব আবছা নয়।

    আসলে, এখানে ধর্মীয় রাষ্ট্রের দোর্দণ্ডপ্রতাপের তলাতেই লুকিয়ে আছে অন্য এক বাস্তবতা। নেদারল্যান্ডের একটি গবেষণা সংস্থা (GAMAAN), ইরানই যাদের অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু, তারা ২০২০ সালে  ইরানে সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে। সে সমীক্ষার ফলাফল যদি বিশ্বাস করতে হয়, তো সেখানে সাঁইত্রিশ শতাংশ মত লোক নিজেদের মুসলমান বলে দাবি করেন (শিয়া-সুন্নি মিলিয়ে), যাঁরা কোনও ধর্মীয় পরিচয় দিতে রাজি নন তাঁরা বাইশ শতাংশ, যাঁরা পরিষ্কারভাবে নিজেকে নাস্তিক-অজ্ঞাবাদী-মানবতাবাদী এইসব বলে পরিচয় দেন তাঁরা সব মিলিয়ে প্রায় সতেরো শতাংশ, যাঁরা নিজেকে শুধুই 'স্পিরিচুয়াল' বলেন তাঁরা প্রায় সাত শতাংশ, এবং বাকিরা আরও নানা বিচিত্র ধর্মের মানুষ। নিচের ছবি দুটোয় সমীক্ষার ফলাফল এক নজরে পাওয়া যাবে। হ্যাঁ বন্ধু, একুশ শতকে পৃথিবী বদলাচ্ছে, এবং হয়ত বিশ শতকের চেয়েও দ্রুত গতিতে! এবং, ইসলামীয় দেশগুলো কোনওভাবেই এ প্রবণতার বাইরে নয়। নিচে সে সমীক্ষার ফলাফল দেখুন, চিত্রাকারে।
     
     
    ধর্ম, ঈশ্বর, স্বর্গ, নরক, মৃত্যু-পরবর্তী জীবন, অবতার ইত্যাদি ধ্যানধারণা বিষয়ে ইরান-বাসীদের বিশ্বাস (বা অবিশ্বাস) ঠিক কী রকম, সে চিত্রও উঠে এসেছে সমীক্ষা থেকে। নিচে দেখুন।
     
     
     
    তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, মুসলমানদের ধর্মপ্রীতি নিয়ে আমাদের অধিকাংশের মধ্যে যেসব জনপ্রিয় ধ্যানধারণা আছে, তার সমর্থন এইসব সমীক্ষার ফলাফল থেকে মিলছে না মোটেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যে ইঙ্গিত এখান থেকে আমরা পাচ্ছি, সেটা সামগ্রিক বৈশ্বিক প্রবণতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, নাকি একটা সম্পূর্ণ আলাদা উল্টোপাল্টা কিছু। সেটা বুঝতে গেলে বর্তমান শতকের বিগত কয়েকটি দশকে গোটা পৃথিবীর ধর্মবিশ্বাসের গতিপ্রকৃতি এক নজরে দেখে নেওয়া দরকার। এমনিতে সেটা একটু মুশকিল, কারণ, তার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংস্থার করা অনেকগুলো সমীক্ষা-কর্ম খুঁটিয়ে দেখে সেগুলোর প্রাসঙ্গিক ফলাফলটুকু বেছে নিয়ে তুলনা করতে হবে। সেইজন্যে, আমি যতটা পেরেছি সেগুলোকে সাজিয়ে একটা মাত্র সারণিতে নিয়ে এসেছি, তাতে পাঠিকের কিছু সুবিধে হবার কথা। সেটা নিচে দিলাম, দেখুন। সারণির কোন সংখ্যাটি কোন সংস্থার করা কবেকার সমীক্ষায় পাওয়া গেছে, সেটা ওখানেই দেওয়া আছে। প্রথম সংখ্যাটি অবশ্য কোনও সংস্থার তরফে দেওয়া নয়। এটি দিয়েছিলেন সমাজতত্ত্ববিদ ফিলিপ জুকারম্যান, তখন পর্যন্ত প্রাপ্য সমস্ত টুকরো টুকরো সমীক্ষার ফলাফল এক জায়গায় করে।
     
     
     
     
    এবার নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে, মুসলমানদের ধর্মবিশ্বাসের গতিপ্রকৃতি অন্য ধর্মাবলম্বীদের থেকে খুব বেশি আলাদা নয়। আসলে, এই একুশ শতকে দাঁড়িয়ে, সব ধর্মগোষ্ঠীর মধ্যেই ধর্মবিশ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে আসার যে প্রবণতা রয়েছে, মুসলমানরা কোনও মতেই সে প্রবণতার বাইরে নয় (অবশ্যই, এ হিসেব সামগ্রিক ও বৈশ্বিক, এবং অঞ্চল ও অন্যান্য পরিস্থিতি-ভেদে মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য আছে)।

    কেন এই জগৎজোড়া প্রবণতা? আমাদের স্বাভাবিক বুদ্ধি বলবে, সবই যুগের হাওয়া। মানে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং গণতন্ত্র-মানবতাবাদ-যুক্তিবাদ এইসবের প্রভাবই এর কারণ। কথাটা সত্যি, কিন্তু সমাজবিদেরা এর চেয়েও বড় কারণ আবিষ্কার করেছেন। তাঁরা আজ সুপ্রচুর তথ্য-যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছেন, মানব সমাজের উন্নতির সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক বিপ্রতীপ। দেশের মাথাপিছু আয় বাড়লে, সমাজকল্যাণে সরকার বেশি বেশি খরচা করলে, অর্থনৈতিক অসাম্য কমলে এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের হাল ভাল হলে ধর্মের রমরমা কমতে থাকে (এখানে আর বিস্তারে যাব না, যদিও আগে এ নিয়ে আলোচনা করেছি এবং পরেও করব)। সমাজ-বিকাশের এই সাধারণ নিয়ম মুসলমান সমাজের ওপরে প্রযোজ্য হবে না, এমনটা  ভেবে নেওয়ার কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। ইরানে যা ঘটছে, সেটা সমাজ-বিকাশের এই সাধারণ নিয়মের চাপেই। নেটে একটু খোঁজাখুঁজি করলেই দেখতে পাবেন, ইরানের মাথাপিছু উৎপাদন ভারতের প্রায় আটগুণ, বাজেটের শতাংশ হিসেবে স্বাস্থ্যখাতে সরকারি খরচ প্রায় সাতগুণ এবং শিক্ষাখাতে তা দেড়গুণেরও বেশি, এবং নারী ও পুরুষ উভয়েরই আয়ু আমাদের থেকে ভাল (গণতন্ত্র আর মানবাধিকারের দশা শোচনীয়, যদিও)। কাজেই, ইরানে মৌলবাদী রাজনীতি ও প্রশাসনের ওপর কেন গণ-অসন্তোষের চাপ আছে এবং পাকিস্তান আর আফগানিস্তানে কেন তা ততটা নেই --- এইটা বুঝতে পারা খুব কঠিন না।

    বলা প্রয়োজন, সমাজ-বিকাশজাত এই চাপের খেলা সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান উন্নত পশ্চিমী দেশগুলোতেও, বিশেষত এই একুশ শতকে। এই সেদিন পর্যন্ত আমেরিকা আর আয়ার্ল্যান্ডে ধর্মবিশ্বাসের প্রাবল্য ছিল অন্যান্য উন্নত দেশের চেয়ে অনেক বেশি। ধার্মিক সমাজবিদেরা তাই দেখিয়ে বলতেন, অর্থনৈতিক উন্নতি হলেই ধর্মের রমরমা কমবে, এটা হচ্ছে গিয়ে প্রগতিবাদীদের বানানো একটা মিথ্যে কথা। কিন্তু সময় যতই গড়াচ্ছে ততই বিষয়টা জলের মত স্বচ্ছ হয়ে আসছে, এবং আপত্তি তোলবার পরিসর হয়ে আসছে অতিশয় সঙ্কুচিত। মার্কিন সমাজে ধর্মবিশ্বাসের পরিবর্তনটা দেখতে পাবেন এক নজরেই, নিচের লেখচিত্রে। লক্ষ করে দেখুন, ১৯৫০ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত আমেরিকাতে যখন খ্রিস্টানরা এসে ঠেকেছে ৮৫ শতাংশ থেকে ৬৯-এ, এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা যখন মোটের ওপর একই আছে, তখন ধর্মহীনদের শতকরা অনুপাত গিয়ে ঠেকেছে শূন্য থেকে একুশে (অন্য কিছু সমীক্ষায় এটি প্রায় তিরিশ বলে দেখানো হয়েছে, যদিও)।
     
     
     
    আর, এই শতকের প্রথম দশকে আয়ার্ল্যান্ড-বাসীর ধর্মবিশ্বাসে যা ঘটেছে, সেটা দেখে নিন নিচের সারণিতে। আয়ার্ল্যান্ড হল গোঁড়া ক্যাথোলিক অধ্যুষিত একটি দেশ। একটা উন্নত পশ্চিমী দেশের পক্ষে অবিশ্বাস্যভাবে, এই সেদিন পর্যন্তও এই দেশটিতে গর্ভপাত নিষিদ্ধ ছিল, এবং গর্ভপাতের দরকার পড়লে আইরিশ নারীদেরকে পার্শ্ববর্তী ব্রিটেনে গিয়ে হাজির হতে হত। তারপর উন্নত আধুনিক অর্থনীতির সঙ্গে রক্ষণশীল ধর্ম-সংস্কৃতির দীর্ঘ সংঘর্ষের ফলাফল তখনই সারা বিশ্বের নজরে এল, যখন দু হাজার আঠেরো সালে গর্ভপাত আইনসিদ্ধ হয়ে গেল (আয়ার্ল্যান্ড নিয়ে আমার আলাদা একটি লেখা ‘গুরুচণ্ডালি’-তে পাবেন)।
     
     
    বলা বাহুল্য, মোটের ওপর এই একই ঘটনা ঘটবার কথা মুসলমান-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতেও, এবং ঘটছেও তাইই। বেশ কয়েকটি ধর্ম-শাসিত রক্ষণশীল দেশে কমছে কঠোর ধর্মীয় বাধানিষেধ, বাড়ছে ধর্মহীনতা, এবং সাধারণ্যে কমছে ধর্মের প্রতি আনুগত্য, যদিও অনেক ক্ষেত্রেই তা  এখনও স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান নয়। বিষয়টাকে যদি খুঁটিয়ে নজর করা হয়, তাহলে এমন অনেক কিছুই হয়ত জানা যাবে, যে ব্যাপারে আমরা আগে সচেতন ছিলাম না। যেমন, ইরান-ইরাক-আফগানিস্তান যেভাবে ধর্মনিরপেক্ষ থেকে ধর্মীয় রাষ্ট্র হয়ে গেল, এবং যেভাবে তুর্কি দেশটিতে ক্রমেই শক্ত হচ্ছে মৌলবাদের মুঠি আর টলমল করছে ধর্মনিরপেক্ষতার আসন, সে নিয়ে আমরা প্রায়শই দুশ্চিন্তিত হই। ঠিকই করি। কিন্তু, আমরা কখনই খেয়াল করে দেখিনা যে, এই ধরাধামে একান্নটি মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মধ্যে একুশটিতে কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ সরকারই চলছে (সে ধর্মনিরপেক্ষতার দশা প্রায়শই আমাদের চেয়ে খুব একটা ভাল নয় যদিও, তবে সেটা তো অন্য চর্চা)। এবং, ধর্মনিরপেক্ষীকরণের প্রক্রিয়া এখনও চালু, সে তালিকায় এই সেদিনও যুক্ত হয়েছে সুদান।

    তবুও প্রশ্ন আসতেই পারে, এবং আসবেও, জানা কথা। ওপরে উদ্ধৃত আমার তরুণ বন্ধুর ভাষায়, সে প্রশ্নটা এ রকম --- “আর কোন ধর্মে আইসিস, তালিবান, বোকোহারামের মত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আছে?”। সত্যিই তো, প্রশ্ন হতেই পারে। ওপরে ব্যাখ্যা করেছি (এবং পূর্ববর্তী পর্বগুলোতেও), মৌলবাদী উত্থান সব ধর্মেই হয়েছে, শুধু ইসলামে নয়। এবং, জঙ্গি ক্রিয়াকলাপও কম বেশি হয়েছে সব ধর্মের তরফেই। সেই সত্যে ভর করে আমি হয়ত তর্ক করতে পারতাম, অন্যান্য ধর্মের মৌলবাদের সঙ্গে ইসলামের তফাতটা তাহলে গুণগত নয়, নিছকই পরিমাণগত। এরা কম, ওরা কিছু বেশি, এটুকুই মাত্র। কিন্তু, এ তর্ক শেষতক দাঁড়াবে না। পাথরের নুড়ির সঙ্গে পাথরের টিলার গুণগত পার্থক্যকে স্রেফ পরিমাণের দোহাই দিয়ে নস্যাৎ করাটা বোধহয় খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ইসলামীয় জঙ্গিপনার নিবিড়তা, ঘনত্ব, প্রচণ্ডতা এবং আন্তর্জাতিকতা, এ সবকে নিছক কম-বেশির ব্যাপার বলে উড়িয়ে দেওয়া অসম্ভব। যদি বলি, মধ্যপ্রাচ্যে একাধিক আধুনিক রাষ্ট্র থেকে খামচে নিয়ে একটা গোটা এবং আনকোরা নতুন ধর্মীয় রাষ্ট্র বানিয়ে তোলা, অনেকগুলো দেশে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার উল্টে দিয়ে মৌলবাদী রাজত্ব কায়েম করা, প্রায় সবকটি মহাদেশে বড়সড় নাশকতা চালানোর মত সংগঠন তৈরি করতে পারা --- এত সব শুধুই জঙ্গিপনার কম-বেশির ব্যাপার, তার মধ্যে আলাদা করে বলার মত গুরুত্বপূর্ণ গুণগত বৈশিষ্ট্য কিছুই নেই --- তাহলে অবশ্যই বোকামি হবে, বাস্তবকে অস্বীকার করার বোকামি। কাজেই, জঙ্গিপনার এই ভয়ঙ্কর নিবিড়তা আর ব্যাপকতাকে ইসলামীয় মৌলবাদের একটি স্বতন্ত্র গুণগত বৈশিষ্ট্য বলে স্বীকার করে নেওয়াই ভাল। কিন্তু মুশকিলটা হচ্ছে, সেটা মেনে নিলেও আসল সমস্যাটা রয়েই যায়। সব মুসলমানই তো আর মৌলবাদী জঙ্গি নন, তার এক অতি ক্ষুদ্র অংশই কেবল মৌলবাদী জঙ্গি। কাজেই, এই জঙ্গিপনাকে ইসলামীয় মৌলবাদের একটি স্বতন্ত্র গুণগত বৈশিষ্ট্য বলে মেনে নিলেও প্রশ্ন থাকে, ‘ইসলাম’ নামক ধর্মটির কোনও মৌল উপাদান থেকেই কি এই বৈশিষ্ট্যটি উৎসারিত হচ্ছে, নাকি, মুসলমান অধ্যুষিত সমাজ তথা রাষ্ট্রগুলোর  কোনও বিশেষ ঐতিহাসিক পরিস্থিতিই এ বৈশিষ্ট্যের নির্মাতা?
     
    কেউ কেউ এ প্রশ্নের উত্তর খুব দ্রুত দিয়ে ফেলতে ভালবাসেন। তাঁরা বলেন, এ বৈশিষ্ট্য অবশ্যই ‘ইসলাম’ নামক ধর্মটিরই মৌল উপাদান থেকে নিঃসৃত, কারণ, ইসলামীয় ধর্মশাস্ত্রে হিংসার অনুমোদন আছে। এ যুক্তিটি যে ভুল, সে আলোচনা ওপরে করেছি। কিন্তু কথা হচ্ছে, এ প্রশ্নের উত্তর তবে কীভাবে খোঁজা যায়? আজকের দিনে বিজ্ঞানে, বিশেষত সমাজবিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে, এ ধরনের প্রশ্নের সমাধানের জন্য যা করা হয় তাকে বলে ‘কন্ট্রোল্‌ড্‌ এক্সপেরিমেন্ট’। সমাজের ওপর তো আর পরীক্ষা চলবে না, অতএব সেখানে দরকার ‘কন্ট্রোল্‌ড্‌ অবজার্ভেশন’ বা সুনিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণ। অর্থাৎ, পুরোপুরি একই রকম করে তৈরি (বা সংগ্রহ) করে রাখা দুটি ক্ষেত্রের মধ্যে একটিতে একটি সুনির্দিষ্ট নির্ধারক উপাদান যোগ করে (বা একটি সুনির্দিষ্ট নির্ধারক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে), এবং অপরটিতে তা না করে, শুধুমাত্র প্রথম ক্ষেত্রটিতে কোনও এক নির্দিষ্ট প্রত্যাশিত ফলাফল এলো কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা, যাতে ওই নির্দিষ্ট উপাদানটির (বা প্রক্রিয়াটির) সঙ্গে ওই ফলাফলটির কার্যকারণ সম্পর্ক সন্দেহাতীতভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়। কোনও ওষুধের কার্যকারিতা প্রমাণের জন্য যেমন একই ধরনের দু দল রুগির মধ্যে একদলকে সে ওষুধ দিয়ে এবং অন্যদলকে তা না দিয়ে পরীক্ষা করা হয় যে দ্বিতীয় দলের তুলনায় প্রথম দলের কিছু বেশি উপকার হল কিনা, এও তেমনি। মনে করুন প্রশ্ন উঠল যে, মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামের যে মৌলবাদী উত্থান দেখা গেল, ইরাকের খনিজ তেল এবং আফগানিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থানগত সামরিক গুরুত্ব না থাকলেও কি তা ঘটতে পারত, শুধুমাত্র ইসলামীয় শাস্ত্র, সমাজ ও সংস্কৃতির একান্ত নিজস্ব আভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যের কারণেই? এ প্রশ্নের বিজ্ঞানসম্মত ও বস্তুনিষ্ঠ উত্তর বেরিয়ে আসতে পারে একমাত্র সেই ধরনের পদ্ধতিতেই, অর্থাৎ, ‘কন্ট্রোল্‌ড্‌ অবজার্ভেশন’ বা সুনিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। যেখানে ইসলামের প্রবল প্রভাব আছে অথচ কোনও বড়সড় অর্থনৈতিক বা সামরিক লাভালাভের পরিস্থিতি নেই, সে রকম সমস্ত জায়গাতেও কি মৌলবাদী জঙ্গিপনার উদ্ভব ঘটেছে? আবার, যেখানে ওই ধরনের পরিস্থিতি আছে অথচ ইসলাম নেই, সে রকম কোনও জায়গাতেই কি জঙ্গি আন্দোলনের উদ্ভব ঘটেনি? এই ধরনের অনুসন্ধান হয়ত আমাদেরকে এ ধরনের প্রশ্নের বস্তুনিষ্ঠ উত্তরের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারত। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ প্রসঙ্গে এ রকম গবেষণার কথা আমাদের জানা নেই।
     
    এই যে মুসলমান মৌলবাদের অস্তিত্বের কারণ হিসেবে ইসলামের আভ্যন্তরীণ কারণকে পুরোপুরিই দায়ী করা, ওপরের দুই অনুচ্ছেদে যার কথা বললাম, এর ঠিক উল্টো প্রবণতাটা হচ্ছে এর পেছনে ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ’ (বা আরও সাধারণভাবে ‘পশ্চিমী চক্রান্ত’) বা ওই জাতীয় ইসলাম-বহির্ভূত কোনও কিছুকে পুরোপুরি দায়ী করা (এবং সেইহেতু ইসলামীয় সমাজ ও সংস্কৃতির আভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যগুলোকে এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক বলে সাব্যস্ত করা)। মুসলিম মৌলবাদের উত্থানের পেছনে পাশ্চাত্য শক্তি, বিশেষত আমেরিকার ভুমিকা অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্বের সাথেই আলোচনা করা উচিত। কিন্তু, বিশ শতকের পৃথিবীর ইতিহাসের সমস্ত ঘটনাই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অঙ্গুলিহেলনে ঘটছে, চোখ বুজে এইটা বলে দিলে আপাতদৃষ্টিতে হয়ত তাকে নিন্দা করা হয়, কিন্তু আসলে শেষ বিচারে তার ক্ষমতাকে অনেকখানি বাড়িয়ে দেখা হয়। আমেরিকা (বা সাধারণভাবে ‘পশ্চিম’) মুসলমান দেশগুলোর আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল, শুধু এটুকু বললে প্রায় কিছুই বলা হয় না --- আসল প্রশ্ন হচ্ছে তারা তা পারল কী করে --- পৃথিবীর সব জায়গাতেই যে তারা যা চেয়েছে তাইই পেরেছে এমন তো আর নয়। মুসলমান সমাজ ও দেশগুলোর সুনির্দিষ্ট বিন্যাস ও ঐতিহাসিক পরিস্থিতি, বিকাশের সুনির্দিষ্ট অবস্থা, তাদের সামাজিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা, অন্তর্দ্বন্দ্ব, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সংশ্লিষ্ট সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্তাদের তরফে নানা মতাদর্শ ও গোষ্ঠী-পরিচিতি নির্মাণের খেলা, এবং কখন ঠিক কোন তাড়নায় তারা কোন বৃহৎ শক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব বা শত্রুতার সম্পর্কে আবদ্ধ হচ্ছে, আর কোন বৃহৎ শক্তিই বা তাদেরকে সামলানো বা ব্যবহার করার জন্য ঠিক কী চাল চালছে --- এই সবের ভাল বিশ্লেষণ ছাড়া বিষয়টা ঠিকভাবে বোঝাই যাবে না। তাছাড়া, এই দেশগুলোতে 'সেক্যুলার' শাসন প্রতিষ্ঠিত হবার পরেও প্রায়শই শাসকরা স্বৈরাচারি এবং দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে কেন, এবং, কেনই বা মৌলবাদীরা বারবার তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জনগণের পাশে থাকার ভাণ করতে পারে, এটাও এ প্রসঙ্গে গভীরভাবে বোঝার বিষয়।  

    বলা বাহুল্য, এ সব প্রশ্নে যথার্থ ও যথেষ্ট বিশ্লেষণ এবং নিষ্পত্তিমূলক উত্তর এখনও আসেনি সমাজবিজ্ঞানীদের তরফ থেকে। যতদিন তা না আসে, ততদিন আমরা কী করতে পারি? ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে পারি, বিষয়টি সম্পর্কে ইতিমধ্যে যা জানা গেছে সে সব জানার চেষ্টা করতে পারি, যুক্তিসম্মত ও বস্তুনিষ্ঠ চিন্তার অভ্যাস করতে পারি …………… আর কিছু পারি কি?

    হ্যাঁ, পারি বোধহয়। মন থেকে অকারণ সন্দেহ ঘৃণা হিংসা বিদ্বেষ এইসব চিহ্নিত করে তা বর্জন করার অনুশীলনটা চালিয়ে যেতে পারি।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ | ৬০৪৬৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • আধুনিকতার খোঁজে  | 45.25.***.*** | ২০ জানুয়ারি ২০২৩ ২৩:০৭515573
  • দেবাশিসবাবু 
    দেরির জন্য দু;খিত। আমি একটু পরেই দিচ্ছি। 
  • আধুনিকতার খোঁজে  | 45.25.***.*** | ২০ জানুয়ারি ২০২৩ ২৩:১০515574
  • এই বিরোহীর নতুন এপিসোডটা দেখেই লিখে ফেলছি। 
     
  • Debasis Bhattacharya | ২০ জানুয়ারি ২০২৩ ২৩:১১515575
  • আধুনিকতার খোঁজে,
     
    জাস্ট একটা ডাইভারশন থেকে ঠিকঠাক আলোচনায় ফেরার বার্তা দেবার জন্য কথাটা বলেছি। সময় নিন, সমস্যা নেই।
  • :-( | 117.214.***.*** | ২০ জানুয়ারি ২০২৩ ২৩:৩৮515576
  • কোন শালা মনসেন্টো ফুৎকারে উড়িয়ে দিল, যাঃ ভ্যানিস করে দিলুম তোর দশ হাজার বছরের জ্ঞান, মানি না।
    আগামি বছর থেকে কলমকাঠি মালতু ঝুলুর ধান চাষ করবো। - হিরণ্ময় গঙ্গোপাধ্যায়
     
    ভারতে বা অবিভক্ত বাংলায় আর পশ্চিম বঙ্গে ঠিক কতগুলো ধানের জাত ছিল, সেসব নিয়ে ---------
     
    ১৯৭০ সাল পর্যন্ত গোটা ভারতে ছিল ১,১০,০০০। ১৯৬০ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে ছিল ৫৫৬০।
    বর্তমানে গোটা ভারতে ৬০০০-এর বেশি অবশিষ্ট নেই। আমি নিজে প্রতি বছর ১৪৬০ জাতের ধান, জেনেটিক বিশুদ্ধতা বজায় রেখে, চাষ করি, চাষীদের বীজ বিলিয়ে দিই, বিগত ২৬ বছর ধরে। বাংলার ধান বর্তমানে অনধিক ২৫০ জাত অবশিষ্ট, আমার জমিতে ৫০৬টি পঃ বাংলার + ৫৭টি বাংলাদেশের ধান এখনো চাষ করছি। - দেবল দেব (https://www.facebook.com/debdebal)

    আরো লিখেছেন :
    বিবেকানন্দর জন্মদিনে অনেক যুক্তিবাদী তাঁর কিছু কথাকে আর-এস-এসের বাণী ব'লে চিহ্নিত ক'রে ফেলেছেন। বিশেষত তাঁর "বর্ণব্যবস্থার উপযোগিতা" নিয়ে জনৈক গুরুভাইকে বলা একটা মন্তব্যকে ধ'রে যুক্তিবাদীরা তাঁকে তো মনুবাদী বামুন-পর্যায়েই ফেলে দিয়েছেন। বর্ণ আর জাতি (caste) যে এক না, বর্ণব্যবস্থা যে আদিতে বংশানুক্রমিক ছিল না, কর্ম-/ পেশা-ভিত্তিক পরিবর্তনশীল বর্ণব্যবস্থা থাকলে যে বিশেষ বিশেষ কাজের উৎকর্ষ দেখা যায়, সেগুলো এঁরা আদৌ অবহিত ন'ন মনে হয়। কৈলাস মালহোত্রা আর মাধব গডগিলের সঙ্গে কিছু কাজের সুবাদে, এবং নিজস্ব ক্ষেত্রগবেষণার ভিত্তিতে আমিও তাঁদের মতোই মনে করি, বর্ণবিভাজনের ফলে এদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ হাজার হাজার বছর ধ'রে সংরক্ষিত হয়েছে।
    যে ধীবর জাতের মানুষদের কৃষ্টি ও মাছ ধরবার পদ্ধতি যুগ-যুগ ধ'রে জলজ প্রাণীদের একটাকেও লুপ্ত হতে দেয় নি, আজ স্রেফ টাকার জোরে বামুন কায়েতরা প্রচুর টাকা, ট্রলার আর নাইলন জাল নিয়ে মৎস্যজীবিকায় ঢুকে অজস্র মাছের প্রজাতিকে ক'রে দিচ্ছে বিলুপ্তপ্রায়। "সিকখিতো" আধুনিক এই নতুন উচ্চ-'জাতের' লোকগুলো মাছের ব্যবসায় লাভের হিসেব জানে নিউটনের চেয়ে অনেক বেশি, কিন্তু নদী বা সাগরের ইকোলজি, আর জলজ প্রাণীদের স্থায়িত্ব কেমন করে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বজায় রাখা যায়, সে ব্যাপারে একটা ভেড়ার চেয়ে বেশি কিছু জানে না। দরকারও পড়ে না।
    এসব দেখে বুঝি, বিবেকানন্দ কেন জীবনের শেষদিকে বর্ণপ্রথার উপযোগিতা নিয়ে ওরকম একটা মন্তব্য করেছিলেন। উনি তো সারা ভারত ঘুরেছিলেন, বিশেষত দঃ ভারতে "নিচু-জাতের" প্রচুর মানুষের সঙ্গে মিশেছিলেন, ভাঙড়দের সঙ্গেও তামাক খেতেন, তাই বর্ণপ্রথার এই দিকটা যুক্তিবাদীদের চেয়ে অনেক ভাল ক'রে বুঝেছিলেন, মনে হয়। এই উপলব্ধি থেকে গত বছর এটা পোস্ট করেছিলাম। আবার করছি। এবার বোধহয় আমিও আর-এস-এস বা মনুবাদী "পোতিক্কিয়াসীল" তকমা পেয়ে যাবো। (গডগিলকেও তো অনেকে তাই মনে করেন।)
    ------------------------------------------------
    সঙ্গে থাকল এই সম্পর্কিত তাঁর একটি পুরনো লেখা :
    অধ্যাপক Madhav Gadgil মাধব গডগিল আর অধ্যাপক কৈলাস মালহোত্রার caste সম্পর্কিত গবেষণার সঙ্গে বহুবছর ব্যাপৃত ছিলাম। বর্ণকর্ম (caste occupation) বিষয়ে নিজের গবেষণাপত্রও প্রকাশ করেছি। বেদানুসারী কর্মভিত্তিক বর্ণবিভাজন যে দেশের জৈবসম্পদ্ সংরক্ষণ করে গেছে অন্তত ২ হাজার বছর ধরে, তা নিয়ে আমার কোনও সন্দেহ নেই। এই কারণে, ব্রাহ্মণ্য জাতিভেদপ্রথার বিরুদ্ধে বজ্রনির্ঘোষের পরেও বিবেকানন্দের সেই একান্ত আলাপচারিতায় - "জাতিভেদ প্রথার উপযোগিতা ক্রমে বুঝতে পারছি" - মন্তব্যটির তাৎপর্য আমার কাছে পরিষ্কার - যতটা গডগিল ও মালহোত্রার গবেষণায় পরিস্ফূট। বিবেকানন্দের পরিব্রাজন-লব্ধ অভিজ্ঞতা তো অনেক দূরের কথা, আমার নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা যতটুকু আছে, সেটুকুও এই পল্লবগ্রাহী বিপ্লবীদের নেই ব'লেই, বিবেকানন্দর একটা বিক্ষিপ্ত মন্তব্যকে ধরে, তাঁর সারা জীবনের কাজকে নস্যাৎ করতে চেষ্টা করে।
    কর্মভিত্তিক বর্ণ যেদিন থেকে বংশানুক্রমিক "জাত" (hereditary caste)- এ পরিণত হলো, সমস্ত সামাজিক অসাম্য ও অন্যায়ের পাহাড় উঠতে শুরু করলো সেদিন থেকেই। বিদ্যাসাগর-বিবেকানন্দ-রবীন্দ্রনাথ- আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র থেকে আম্বেদকর পর্যন্ত সব মনীষীরা এটা বুঝতে ভুল করেন নি। যত মুশকিল অর্ধশিক্ষিত "বাম" মনস্ক পণ্ডিতম্মন্যদের নিয়ে, যারা occupational (fluid) caste আর hereditary (rigid) caste দুটোর তফাৎ বোঝে না।
     
    --------------------------------------
    ফেসবুক থেকে অন্য আলোচনার দুটো রেফারেন্স দিলাম উপরে। আধুনিকতা ও ঐতিহ্যগত জ্ঞানের খুন বিষয়ে। প্রজাতির খুন বিষয়ে - উদ্ভিদ ও প্রাণী। অসংখ্য এরকম। এর প্রতিরোধ, প্রতিশোধ মৌলবাদে গিয়ে পড়ছে, মৌলবাদের মাধ্যমে পথ খুঁজছে, যা হতাশার। এর কারণ হিসেবে আবিশ্ব প্রাণমণ্ডলের, প্রজন্মান্তরে সঞ্চিত জ্ঞানভাণ্ডার রক্ষার দার্শনিকতা ও সেই দর্শন আশ্রিত লাগামের অভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি লাভ ও স্বার্থের ঘোড়ার নিয়ন্ত্রণবিহীন দৌড় - সেই দৌড় থেকে লাভবান ক্ষমতাবান হওয়ার এক-জীবন স্বার্থপর নেশায় মাতাল কিছু মানুষ - ক্ষোভ দ্বেষ হতাশার লক্ষ তো নির্দিষ্ট - এইরকমই কিছু বিশেষ প্রবণতা।
     
    সময়ের সাথে এনট্রপি বাড়বেই। অর্থাৎ ক্যাওসও। বাইরে থেকে শক্তি প্রয়োগ করে, নিয়ম কানুন নির্দিষ্ট করে স্বেচ্ছাচারিতায় রাশ টেনে তবেই এদের বাড়ার হার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রবল লাভজনক হলেও কিছু কিছু ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করতেই হবে প্রাণের স্বার্থে জীবনের স্বার্থে ভবিষ্যতের স্বার্থে।
  • Debasis Bhattacharya | ২০ জানুয়ারি ২০২৩ ২৩:৪৫515577
  • 'অর্ধশিক্ষিত', ''পণ্ডিতম্মন্য' --- এইসব কড়া কড়া কথাবার্তা দেখলাম। তা, এখন আধুনিকতাবাদীদের তরফেও যদি দু-একটা কড়া কথা বলা হয়, কেউ রাগ করবেন না তো?
  • :-( | 117.214.***.*** | ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ০১:০৭515578
  • https://ensia.com/features/indigenous-knowledge-biodiversity/
     
     
    On every New Year's Day, the privileged urban civilized people celebrate their comforts obtained from what we call 'civilization' at the cost of the exhaustion of vital resources of the Earth, and of the integrity of indigenous societies who had built the foundation of Human Civilization. Thus, from the past decades to all the years during and after every 'new year', the race to deplete and destroy our vital resources and our cultural heritage continues with renewed vigour, with all pomp and circuses, filling the air with DJ sound, filling the homes with glitzy gizmos, choking the waterways with plastics, and peopling the society with cadavers of culture...
    Rather than celebrating the plasticity of this 'civilisation', perhaps remembering the past Civilization of the "uncivilized" indigenous people would be a genuine preparation for a better New Year. Remembering, for instance, by reading a piece by my fav journalist, John Vidal.
    -- দেবল দেব
     
    --------------------------
     
    ব্যালেন্স জিনিসটাকে ভুলতে থাকা উচিত নয়। এক মতের অ্যাকটিভিস্টরা অন্য মতের অ্যাকটিভিস্টদের কার্যকলাপ সবসময় সম্মান দেবেন না হয়তো, তবে একেবারে উড়িয়ে দেবেন না সে আশা করা যেতে পারে।
  • Debasis Bhattacharya | ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ০১:৩৪515579
  • ঠিকঠাক যুক্তি না দিলে উড়ে যাবেন, আর ঠিকঠাক সম্মান না দিলে অসম্মান পাবেন। একদম সোজা সরল হিসেব, তাই না?
  • আধুনিকতার খোঁজে  | 45.25.***.*** | ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৩:৫০515580
  • দেবাশিসবাবু 
    যতটা সম্ভব সংক্ষেপে বলছি। এবং যুক্তির রাস্তায়-ই বলার চেষ্টা করছি।  

    (১) আধুনিকতা (বিশেষত যুক্তিবাদ) হচ্ছে কেঠো রসকষহীন ব্যাপার, এবং রোমান্টিকতার বিরোধী। যুক্তিবাদ মাঝেমধ্যেই রসকষবিহীন হয়ে পড়ে বৈকি। :)) কিন্তু রোমান্টিকতার বিরোধী এটা বোধহয় বলিনি। একটি মন্তব্যে আপনার করা 'তাই, আধুনিকতার যে রোমান্টিক সমালোচনাগুলো এখানে এসেছে, সে সব নিয়ে ভাল করে কথা হয়ে যাক আগে।' এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতেই আমি বলেছি আমার নিজেকে রোম্যান্টিক ভাবতে ভালোই লাগে। (খানিক মজা করেই, আপনি এবার বস্তুবাদী যুক্তি দিয়ে রোমান্টিকতাকে খণ্ডন করবেন, সেটা বুঝেই) সেটা কি আধুনিকতা রোম্যান্টিকতার বিরোধী বলা হল? আর রোমান্টিসিজম তো নিজেই একটা মডার্ন সাবজেক্ট।   
     
    (২) আধুনিকতা (বিশেষত যুক্তিবাদ) হচ্ছে একটা 'বাইনারি' ব্যাপার, যাতে সব কিছুকেই 'হয় এটা নয় ওটা' পদ্ধতিতে ভাবা হয়। কোনোকিছুই তো বাইনারি নয়, তাহলে আধুনিকতা বা যুক্তিবাদকেই বাইনারি বলব কীভাবে? আমার কথাটার ভুল মানে হয়েছে সম্ভবত। আমি বলেছিলাম আধুনিকতার যাঁরা প্রবল সমর্থক তাঁদের মধ্যে অনেকেই (আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা) আধুনিকতার বিরুদ্ধে যায় এমন যুক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে গিয়ে এই বাইনারির অবতারণা করেন। এও বলেছিলাম যে তাঁরা যে ডায়ালেক্টিক্স বোঝেন না এমন নয়। কিন্তু তার প্রয়োগ কি ঘটে? একদিক থেকে অবশ্য এটা শুধু ব্যক্তিক বিষয় নয়। খেয়াল করলে দেখা যাবে এটা আসলে এমন একটি প্রবণতা যা পেরিফেরির সংস্কৃতির ওপর ইউরোসেন্ট্রিক আধুনিকতার সর্বমান্যতার হেজিমনিটি প্রশ্নহীন ভাবে চাপিয়ে দেওয়ার ইতিহাসের মধ্যেই নিহিত থাকে। সেই অর্থে আধুনিক কোরের এই হেজেমনির, পেরিফেরির যাবতীয় জ্ঞান-দর্শন-যুক্তি-সংস্কৃতিকে বাইনারিতে পারসিভ করার প্রবণতা থেকেই যায়। এই প্রবণতাটির কাছে, আমি অধুনিকতাকে প্রশ্ন করছি মানেই আমি যে ক্যানিবাল নই, সেটা বোঝানো প্রানান্ত হয়ে ওঠে। 
     
    (৩) আধুনিকতা (বিশেষত যুক্তিবাদ) মানে মুনাফা এবং ভোগের জন্য প্রকৃতির ধ্বংস সাধন । আমার সংযোজন: আধুনিকতাকে ক্যাপিটালিজম ও কলোনিয়ালিজম ​​​​​​​থেকে ​​​​​​​আলাদা করে ​​​​​​​দেখা ​​​​​​​আদৌ ঐতিহাসিকভাবেই ​​​​​​​সম্ভব ​​​​​​​নয়। মার্ক্স ​​​​​​​আধুনিক ​​​​​​​সমাজকে পুঁজিবাদী ​​​​​​​সমাজ ​​​​​​​হিসেবেই ​​​​​​​দেখেছেন। আর আদিম পুঁজির সঞ্চয়ন যে কলোনিয়ালিজমের মাধ্যমেই আহৃত হয়েছিল তাও দ্বর্থহীন ভাষায় বলেছিলেন। আর এই পুঁজির ইউনিভার্সালিজম, যা সমস্তরকম সামাজিক পার্টিকুলারিজমকে ধ্বংস করে এবং সেই হিসেবে মার্ক্স আর এঙ্গেলস প্রাথমিক ভাবে ভেবেছিলেন যে কুসংস্কার নয়, যুক্তির ওপর ভর দিয়ে এক ইউনিভার্সাল মানবসমাজ বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে ​​​​​​​পারে। ​​​​​​​কিন্তু ​​​​​​​ক্যাপিটালিজম ​​​​​​​কোনোমতেই ​​​​​​​সেই ​​​​​​​মানবসমাজ ​​​​​​​নয়। ​​​​​​​এবং ​​​​​​​যুক্তির শক্তিতে ​​​​​​​নয়, ক্যাপিটালিজম চলে 'মানি' অর্থাৎ ​​​​​​​টাকায় ভর করে, যা সমস্ত ট্রাডিশনাল-সোশ্যাল-মরাল বিন্যাসগুলিকে ধ্বংস করে। অর্থশক্তি কোনো মানবিক যুক্তির অভিব্যক্তি হতে পারে না। বরং তা একটি অটোনোমাস সমাজিক শক্তি যা মানবসত্তাকে তার শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন সামাজিক শ্রমে পরিণত করে। 
    Capitalism is accordingly marked by a growing polarisation between human need and the means to the realisation of human need, as the social character of the individual is developed not in the form of the ‘rational community’, but is imposed on the individual as an external constraint in the form of money. This is the source of the fundamental irrationality of capitalism. Capitalism does not submit society to the rule of human reason, but to the anarchy of capitalist production and the universality of class conflict. 
     
    আধুনিকতা যাদের ​​​​​​​হাত ​​​​​​​ধরে ​​​​​​​আজকের ​​​​​​​শেপ ​​​​​​​পেয়েছে ​​​​​​​তাঁদের ​​​​​​​মধ্যে ফ্রান্সিস ​​​​​​​বেকন একজন। ​​​​​​​আমি ​​​​​​​একটু ​​​​​​​বেকনকে ​​​​​​​উদ্ধৃত ​​​​​​​করতে চাইবো। 
    Therefore, no doubt, the sovereignty of man lieth hid in knowledge; wherein many things are reserved, which kings with their treasure cannot buy, nor with their force command; their spials and intelligencers can give no news of them, their seamen and discoverers cannot sail where they grow: now we govern nature in opinions, but we are thrall unto her in necessity: but if we would be led by her in invention, we should command her by action. 
    বেকনসাহেবের এই উদ্ধৃতিটি প্রকৃতি সম্পর্কে আধুনিকতার দৃষ্টিভঙ্গি বোঝানোর জন্য যথেষ্ট। প্রকৃতিকে শাসন ​​​​​​​করার ​​​​​​​এই উন্মত্ততা ​​​​​​​(আমি উন্মত্ততাই বলবো) থেকেই ​​​​​​​মানুষ ​​​​​​​প্রকৃতির ​​​​​​​সঙ্গে ​​​​​​​স্বাভাবিক ​​​​​​​সহাবস্থান-মিথস্ক্রিয়া ​​​​​​​থেকে ​​​​​​​বিচ্ছিন্ন ​​​​​​​হয়ে ​​​​​​​পড়েছে। আর ক্যাপিটালিজমের চোখ দিয়ে প্রকৃতিকে ​​​​​​​কেবলমাত্র ​​​​​​​ম্যাটার ​​​​​​​হিসেবে ​​​​​​​দেখার ​​​​​​​ফলাফল ​​​​​​​হচ্ছে ​​​​​​​আজকের বিপন্ন ​​​​​​​জলবায়ু-প্রকৃতি-বাস্তুতন্ত্র। প্রকৃতিকে ম্যাটারের রিসোর্স হিসেবে মুনাফার এই ইররাশনাল শোষণে মানুষের অস্তিত্বই তো আজ বিপন্ন। কেননা প্রকৃতি তো মানুষকে নিয়েই। মানুষ আসলে তো প্রকৃতিরই সন্তান। মার্ক্স সমস্ত প্রাকৃতিক অভিব্যক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন হোমোজেনাইজড মানবসমাজ কখনোই চাননি। জার্মান আইডিওলজিতে তিনি ফিলোসফিক্যাল মেটিরিয়ালিজমের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। থিসিস ও ফয়েরবাখে মার্ক্স বারবার 'হিউম্যান সেন্সুয়াস একটিভিটি' ও 'হিউম্যান সোসাইটি' বা সোশালাইজড হিউম্যানিটি'-র কথা বলেছেন। মেটিরিয়ালিজমের থেকেও তিনি নিজেকে বেশি করে দেখেছেন হিউম্যানিস্ট নাচারালিজমের মধ্যে। 
    ‘Consistent naturalism or humanism is distinct from both idealism and materialism, and constitutes at the same time the unifying truth of both’ (Collected Works (CW), 3, p.336) 
     
    কার্ল মার্ক্সকে এতবার টেনে আনার উদ্দেশ্যটি পরিষ্কার করে দিই। মার্ক্সই প্রথম আধুনিকতার ডায়ালেক্টিকাল বিরোধিতা করেন। কেউ কেউ বলবেন মার্ক্স তো আধুনিকতারই সন্তান। হ্যাঁ তা ঠিকই। এক প্রবল আস্তিক দম্পতির সন্তান যদি প্রবল নাস্তিক হয়ে ওঠে তবে যে অর্থে সে তার আস্তিক পিতামাতার সন্তান, মার্ক্স এবং আধুনিকতার সম্পর্কটাও ঠিক তেমনি। সংযোজনটা বোধহয় বড় হয়ে গেল। দু;খিত। আজ এই অবধি লিখতে পারলাম। বাকি কাল দেব। প্লিজ।  
     
    একটা ব্যাপার বুঝিনি। আপনি বারবার কেন বিশেষত যূক্তিবাদ বলেচেন। 
  • &/ | 151.14.***.*** | ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৪:৫০515581
  • @দেবাশিস বাবু ,এই দেখুন আর একটা কল্পবিজ্ঞান । পরবাস এ। 
  • &/ | 151.14.***.*** | ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৫:০৩515582
  • দেবাশিসবাবু, তৃণার গল্পটা আবার পড়লাম। গল্পটা একটি কিশোরী মেয়ের চোখে দেখা তার দুনিয়া। সেখানে খুব ডিটেলে তাদের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কথা এলে ইনফোডাম্পিং হয়ে যেত হয়তো। বিশেষত সেটা তাদের অতীতের ব্যাপার, তাদের কাছে ওটা ইতিহাস। যা হয়ে গেছে তা হয়ে গেছে, এরকম একটা ব্যাপার। তাদের সমকালীন সমস্যাগুলো অন্য, যেমন একটা বিশাল সেন্ট্রালাইজড সিস্টেম যারা শিশুদের শিক্ষা কোথায় হবে, কোথায় কার কী চিকিৎসা হবে , কীভাবে হবে-সব ঠিক করে দেয়। কারুর সেসব অমান্য করার উপায় নেই। কাহিনিটা পড়তে পড়তে আমার এই চাপা টেনশনের ব্যাপারটাই উপলব্ধি হয়েছে। আনরোমান্টিক বলে স্বপ্ন মুছে দিচ্ছে তা নয়, ওরা ওই ব্যাপারটাকে মানসিক অসুখ বলে দেখছে(সবাই যে স্বপ্ন দ্যাখে তাও তো না, কোনো কোনো বাচ্চা অন্য কিছু করে যা কিনা 'ফিট' করে না তৎকালীন ব্যবস্থায় ), তাদের সরিয়ে দিচ্ছে রিহ্যাবে । এই ব্যাপারটাই মনে হল পড়তে পড়তে।
  • &/ | 151.14.***.*** | ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৫:২৪515583
  • আর একটা কল্পবিজ্ঞান, এটা পেলাম আর এক ওয়েবজিনে।
    https://www.galpopath.com/2014/08/blog-post_77.html
  • Debasis Bhattacharya | ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:০২515587
  • গল্প পরে পড়ছি, 'আধুনিকতার খোঁজে'-র জবাবও পরে দিচ্ছি। আগে বিবেকানন্দ এবং বর্ণভেদ।
  • guru | 160.238.***.*** | ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৩:২৪515588
  • "আধুনিক রাষ্ট্র নানা বিচিত্র স্বার্থে ধর্মের সাথে আপোস করে থাকে, এবং ধর্মকে ব্যবহারও করে থাকে। এক্ষেত্রেও যদি তেমন দরকার পড়ে, করতে পারে না তা নয়। তবে, তেমন দরকার পড়বার কথা না। ধর্মের দোহাই না দিলে জন্মহার বাড়ানো যাবে না, অবস্থা বোধহয় এতটা খারাপ নয়। অন্তত, সব জায়গায় নয়।"
     
    আমি খুব খুশি হবো যদি আপনি একটি উন্নত আধুনিক দেশের উদাহরণ দিতে পারেন যেইখানে ধর্মের সাহায্য না নিয়ে জন্মহার বাড়ানো হয়েছে | আমার সামনে ইসরায়েলের উদাহরণ আছে যেখানে ধর্মবিশ্বাস বেশি থাকার কারণে এখনো জন্মহার ইউরোপীয় দেশগুলোর থেকে অনেক বেশী |  আপনি যদি অন্য কোনো উদাহরণ দেখতে পারেন যেখানে কোনো সেক্যুলার দেশ ধর্মকে ব্যবহার না করে জন্মহার বাড়াতে পেরেছে আমি খুবই খুশি হবো |
     
     
     
     
  • guru | 160.238.***.*** | ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৩:৫৬515589
  • @দেবাশীষ বাবু 
     
                        বাঘের উপমাটি দিয়ে আপনি একটি আকর্ষণীয় ডিবেট "হিন্দুত্ব কি আধুনিকতার ফল নাকি প্রতিক্রিয়া " বন্ধ করে দিলেন | আমার মনে হয় বর্তমানে এইরকম একটি ডিবেট বেশ প্রাসঙ্গিক হতো | আমার মনে হয় আপনি হিন্দুত্বের ব্যাপারে একটু বেশি আবেগী হয়ে পড়েছেন এতক্ষন যেমন সুন্দর যুক্তি তথ্য দিচ্ছিলেন হটাৎ এইখানে কি হলো ?
     
    পুনশ্চ আপনার পাঠানো সবকটি গল্পই খুবই ভালো | আরো এইরকম পাঠাতে থাকুন প্লিজ 
  • বিবেকানন্দ | 2409:4060:2d88:1cbe::c9cb:***:*** | ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:৫৪515590
  • বলেছিলুম সাঁকো নাড়াসনি কো 
  • Debasis Bhattacharya | ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:০৮515591
  • যাঃ, বিবেকানন্দ ও বর্ণভেদ সম্পর্কে একটা হাজার শব্দের মন্তব্য বেমালুম উড়ে গেল, হঠাৎ আপনা থেকেই পেজ রিফ্রেশ হয়ে। কেন, বুঝলাম না। খুব হতাশ। যাকগে, পরে দেখছি।
  • :-( | 43.25.***.*** | ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:১০515592
  • বিবেকানন্দও বর্ণভেদ নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই। যুক্তিবাদের সাথে বিবেকানন্দ বিষয়ে পাঁচ ছটা টইতে আদান প্রদান করে অবসৃত, বিশেষত অভিজিৎ রায়-এর মৃত্যুর পর। সে বিষয়ে অ্যাকটিভিজম প্রয়োজনে দেবল দেব এর ওয়ালে করাই বিধেয়।
    ফেসবুক থেকে বিষয় দুটি নিয়ে কথাবার্তা কোট করার কারণ - ১) বিবিধ প্রকার ধানের (তথা উদ্ভিদের) প্রজাতি লোপ পাওয়া এবং ২) বিবিধ মাছ ও জলজ প্রাণীর লোপ পাওয়া, ইকোসিস্টেমের ব্যালেন্স গোলমাল হয়ে যাওয়া - এই দুটো প্রসঙ্গকে আলোচনার অন্তর্ভুক্ত করা্র ইচ্ছা। 
    যথেষ্ট অর্থ থাকলে টেকস্যাভি মানুষ সপরিবারে একটা ফ্ল্যাটের মধ্যেই কয়েক বছর কাটিয়ে দিতে পারে একথা ডিমানিটাইজেশন, কোভিড, লকডাউন, ওয়ার্ক ফ্রম হোম, অনলাইন ক্লাস, অনলাইন চিকিৎসা ইত্যাদি প্রমাণ করেছে। সারাজীবন ও পারে নিশ্চয়। তার কাছে পৃথিবীর কোন প্রাণী, কোন উদ্ভিদ এর কোন কোন প্রজাতি থাকল না গেল কিছুই ম্যাটার করে না। অন্তত নিজের জীবন বা সন্ততির জীবনকাল ব্যাপী। সে কেন নিজে সপরিবারে আরো আরো ভালো থাকার জন্যে যাবতীয় টেকনোলজির স্বার্থপর ব্যবহারে আগ্রহী হবে না? কেন অসৎ হবে না? কেন আর সকলকে বঞ্চিত করেও নিজে সবটুকু সুবিধে সাইফন করে নিতে চাইবে না? নির্দিষ্ট দর্শন ছাড়া আধুনিকতা, উত্তরাধুনিকতা, পুঁজিবাদ, যোগ্যতমের উদবর্তন কারোর কাছেই এর কোনো সদুত্তর নেই - এটুকুই বলার ছিল। বিবেকানন্দ বা বর্ণভেদ নিয়ে কোনো বক্তব্যই ছিল না।
  • Debasis Bhattacharya | ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:৪৪515593
  • স্বার্থপর টেকস্যাভি-দেরকে ধিক্কার দিতে চাইলে, তাতে সমস্যাটা তত বেশি না। সমস্যাটা হচ্ছে টেকস্যাভিত্বের সঙ্গে স্বার্থপরতার সমীকরণ করলে, এবং, প্রাগাধুনিককালের অটেকস্যাভিরা সবাই অস্বার্থপর ছিল এমন ইঙ্গিত করতে চাইলে।
  • রাধার কানাই | 42.***.*** | ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ২৩:৫৩515595
  • বিবেকানন্দের বিভিন্ন রিগ্রেসিভ মন্তব্যকে বিবেকানন্দ অনুরাগী অনেকেই বিভিন্নভাবে জাস্টিফাই করেন,সে তাদের ব্যাপার। কিন্তু দেবল দেব মহাশয়ের মত শ্রদ্ধেয় মানুষ বিবেকানন্দের এই মন্তব্যটাকে জাস্টিফাই করলেন, এতে অবাক হলাম। সঙ্গে আবিষ্কার করলাম,ইতোমধ্যে উনি আমাকে ব্লকও করেছেন!  না আমি ওঁকে চিনি,না উনি আমাকে, না আমার সাথে ওঁর কোন ফেবু বাক্যালাপ হয়েছে।যাইহোক,কাজের কাজই করেছেন। 
  • Debasis Bhattacharya | ২২ জানুয়ারি ২০২৩ ০০:২৯515596
  • ব্লক করেছেন, সত্যি? কারণ কী? কোনও বিরুদ্ধ মন্তব্য বা পোস্ট কিছুই ছিল না?
  • রাধার কানাই | 42.***.*** | ২২ জানুয়ারি ২০২৩ ০০:৩৯515597
  • না না কিছুই ছিল না।আমি ওঁর ফ্রেন্ডলিস্টেও নেই। ওঁর সঙ্গে আমার কখনও কমেন্ট বিনিময়ও হয়নি ( ফেসবুক সূত্রে) আর এখন ফেসবুকে কোন বাকবিতন্ডায় তো একেবারেই জড়াই না।তো আজ হঠাৎ পোস্টটা পড়তে গিয়ে দেখলাম ব্লক করেছেন। 
     
     
    সেটা ভালোই করেছেন। প্রশ্ন হল,ওঁর মত ব্যক্তির বিবেকানন্দের এই মতটাকে জাস্টিফাই করার প্রচেষ্টা 
  • Debasis Bhattacharya | ২২ জানুয়ারি ২০২৩ ০২:৪৭515598
  • একবার এক বড়সড় মন্তব্য উড়ে যাওয়ায় খুবই হতাশ, তবু আরেকবার বলি। 'প্রাকৃতিক সম্পদ' রক্ষার নামে বর্ণভেদ সমর্থন করবার এই কুৎসিত চালাকি নিয়ে দু-এক কথা না বললেই নয়। 
     
    বর্ণভেদ হিন্দুধর্মের এক মৌলিক, অবিচ্ছেদ্য ও সর্বজনীন দেয়বৈশিষ্ট্য। এ সত্যকে অস্বীকার করার উদ্দেশ্যে নির্মিত যে কোনও অজুহাত এবং কায়দাবাজিই আসলে প্রতারণার সামিল। এবং, বিবেকানন্দের মত হিন্দু পুনরুত্থানবাদী ধর্ম-নেতা বর্ণভেদের অসমর্থন বা সমালোচনা করবেন, এ ধরনের কোনও সম্ভাবনা কোনও কালেই ছিল না। তিনি বর্ণভেদকে সমর্থন করেছেন — শুধু এইটুকু বললে কিছুই বলা হয়না। আসলে, যাবতীয় অন্যায়সহ এই হিন্দুধর্মকে গৌরবান্বিত করার দায়িত্বটাই তিনি স্বস্কন্ধে নিয়েছিলেন।
     
    দেবল দেব 'পরিবর্তনশীল বর্ণব্যবস্থা' বলে একটি আশ্চর্য শব্দবন্ধ নির্মাণ করেছেন দেখলাম। নির্মাণটি প্রতারণামূলক, কারণ ওরকম কিছুর অস্তিত্ব নেই, এবং অস্তিত্ব থাকাটা অসম্ভব। বর্ণব্যবস্থা যদি 'পরিবর্তনশীল' হত, তবে আর তা 'বর্ণব্যবস্থা' থাকত না। মানুষ যাতে তার পেশা ও সামাজিক অবস্থানটা চাইলেই পাল্টাতে না পারে, সেইজন্যেই তো প্রতিটি মানুষকে তার জন্মগত পরিচয়ের খোপে ঢোকানো। তার মধ্যে আবার 'পরিবর্তন' কীসের?
     
    বর্ণব্যবস্থা প্রথমে বংশগত ছিল না — এ যুক্তিও হাস্যকর। ঠিক কবে থেকে কোথায় বর্ণভেদের উৎপত্তি হল এবং তার আগেই বা ঠিক কী ছিল — এটা ঠিকঠাক কেউই জানেন না, খুব সম্ভবত দেবল দেবও জানেন না। কিন্তু তার চেয়েও যেটা দরকারি কথা সেটা হচ্ছে এই যে, শুধু বর্ণব্যবস্থা কেন, এ ধরাধামে কোনও কিছুই তো চিরকাল ছিল না। চুরি চিরকাল ছিল না, ডাকাতি চিরকাল ছিল না, বিছে চিরকাল ছিল না, করোনা ভাইরাসও চিরকাল ছিল না। তাই বলে চুরি ডাকাতির সমর্থনে নামতে হবে, এ কী রকম আবদার?
     
    বর্ণব্যবস্থা হাজার হাজার বছর ধরে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করেছে, এ দাবির মধ্যে দ্বিস্তরীয় প্রতারণা আছে। প্রথমত, প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের জন্য মোটেই জাতপাত লাগে না। পৃথিবীর সব দেশে সব গোষ্ঠীই তাদের মত করে সম্পদ সংরক্ষণ করেছে হাজার হাজার বছর ধরে, অথচ জাতপাত ব্যবস্থা আছে শুধু হিন্দুধর্মেই। দ্বিতীয়ত, বর্ণব্যবস্থা প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করে কিনা এ প্রসঙ্গটিই এখানে সম্পূর্ণ অবান্তর। বর্ণব্যবস্থাকে যে সমালোচনা করা হয়, তার কারণ হল, এখানে প্রতিটি ব্যক্তি-মানুষের এক মিথ্যে অযৌক্তিক এবং অপমানজনক পরিচয় বানানো হয়, এবং সেই পরিচয়ের খোপে তাকে সারাজীবন আটকে রাখা হয়, তার মানুষী সত্তা ও সম্ভাবনাকে পঙ্গু করে রাখা হয়, তার উন্নতির পথ রুদ্ধ করা হয়। যিনি প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের অজুহাতে এই কুৎসিত প্রথাকে সমর্থন করেন, তাঁকে যে কে এই পৃথিবীর যাবতীয় সম্পদ সংরক্ষণের দায়ভার অর্পণ করল, সে এক প্রবল দুশ্চিন্তার বিষয়। 
     
    দেবল দেব বলেছেন, এটি বিবেকানন্দের বিচ্ছিন্ন উক্তি। না, এও মিথ্যে কথা। হিন্দুধর্মের প্রতিটি অন্যায় প্রথাকেই বিবেকানন্দ কখনও না কখনও সমর্থন করেছেন, এবং জাতপাত কেন যে ব্যতিক্রম হবে, তার কোনও কারণ নেই। তিনি সতীদাহ সমর্থন করেছেন, বাল্যবিবাহ সমর্থন করেছেন এবং আধুনিক শিক্ষা ও বিধবাবিবাহের বিরোধিতা করেছেন। বস্তুত, তাঁর ইতিহাস-নির্দিষ্ট কর্তব্য বলতে তো ওটাই!
     
    দেব মহাশয়ের লেখায় একটি আশ্চর্য তথ্য দেখলাম। মাছ ধরার ট্রলারের মালিক যত আছে, তারা নাকি সব বামুন এবং কায়েত। এমনিতে, এর মধ্যে অসম্ভব কিছুই নেই। কারুর হাতে যদি পয়সা থাকে, এবং সে যদি ট্রলারের ব্যবসায় লাভের সম্ভাবনা দেখে, তো আগ্রহী হতেই পারে, তার 'জাত' যা-ই হোক। কিন্তু, সে ব্যবসা করতে গেলে সমুদ্রতীর চাই, পশ্চিমবঙ্গে সে অতি সামান্য। বেশির ভাগটাই উড়িষ্যা, অন্ধ্র, তামিলনাড়ু, কেরালা, মহারাষ্ট্র। তো, ট্রলারের ব্যবসা তো তাহলে ওসব জায়গাতেই বেশি হবে। কিন্তু, সেখানে 'কায়েত' কোথায় পেলেন তিনি?
     
    ওই লেখাতেই প্রকাশ, তিনি বর্ণব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা করেছেন, এবং গবেষণার প্রয়োজনে নাকি ক্ষেত্রসমীক্ষাও করেছেন। হায় গবেষণা!
     
     
  • ওরে থাম | 2a03:e600:100::***:*** | ২২ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:০৫515599
  • ভাইটু তুই না বুঝিস বর্ণব্যবস্থা না বুঝিস বিবেকানন্দ না বুঝিস দেবল দেব না বুঝিস ক্ষেত্র গবেষণা। অশিক্ষার ঢাক নাই বা পেটালি।
  • Debasis Bhattacharya | ২২ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:২৮515602
  • সত্যি, শিক্ষার ঢাক থাকতে অশিক্ষার ঢাক পেটানো উচিত হবেনা। বর্ণব্যবস্থার নির্লজ্জ সমর্থন। মিথ্যে তথ্য। পাল্টা যুক্তি দেওয়া ক্ষমতায় না কুলোলে অপরিচিত প্রাপ্তবয়স্ককে তুই-তোকারি। আপনার শিক্ষার ঢাকটি চমৎকার। 
     
    একেবারে শিক্ষাদীক্ষা শুরুর বয়েসেই আপনার বাবা-মা আপনাকে ওটি কিনে দিয়েছিলেন, তাই না?
     
     
  • &/ | 107.77.***.*** | ২২ জানুয়ারি ২০২৩ ২৩:০১515608
  • দেবাশিসবাবু ,এইসব উটকো ড্যাশগুলিকে পাত্তা দেবেন না। আপনার লেখা লিখে যান ,আমরা মনোযোগ সহকারে শুনছি .
  • Debasis Bhattacharya | ২২ জানুয়ারি ২০২৩ ২৩:৫৬515609
  • না, পাত্তা দিচ্ছি না। পাত্তা দিলে যাঁরা এত আগ্রহ, মেধা, প্রশ্ন নিয়ে এ থ্রেডে সময় ব্যয় করছেন তাঁদেরকে অপমান করা হবে। কিন্তু, দ্রুত সাড়াও যে দিতে পারছি না, এটাও তো ঘটনা। আসলে, বইমেলার ঠিক প্রাক্কালে নানা জরুরি কাজ ঘাড়ে এসে পড়ে, সেইসবের কারণে এখানে সাড়া দিতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। সবাই মাফ করে দেবেন। 
  • Debasis Bhattacharya | ২২ জানুয়ারি ২০২৩ ২৩:৫৯515610
  • অন্যদের জবাব পরে দিচ্ছি, 'আধুনিকতার খোঁজে' যা বলেছেন সেটা নিয়ে কিছু বলি আগে। আজ সারাদিনই প্রেসে ছিলাম, প্রুফ দেখার কাজে। 
  • আধুনিকতার খোঁজে   | 27.13.***.*** | ২৩ জানুয়ারি ২০২৩ ০১:২৮515612
  • @দেবাশিসবাবু 
     
    এই পয়েন্টটাও যদি যোগ করে নেন তাহলে ভালো হয়। কোনো তাড়া নেই। ক্ষুন্নিবৃত্তির দুর্বিপাকে আমিও সময় করে উঠতে পাচ্ছি না। বাকিরাও আরো অংশ নিলে ভালো। আপনি আগে ছাপার কাজটা ঠিক করে শেষ করুন। আপনার/আপনাদের বইয়ের জন্য আগাম শুভেচ্ছা। 
     
    (৪) আধুনিকতা (বিশেষত যুক্তিবাদ) মানে যুদ্ধ, নিষ্ঠুরতা, গণহত্যা। সংযোজন : পশ্চিমি আধুনিকতার ​​​​​​​মধ্যেই অন্তর্নিহিত ​​​​​​​রয়েছে ​​​​​​​হিংসা। ​​​​​​​​​​​​​​আধুনিকতা ​​​​​​​বস্তুত ​​​​​​​হল ​​​​​​​ভিশন ​​​​​​​অফ কনকোয়েস্ট। আধুনিকতা​​​​​র ​​​​​​​মধ্যেই ​​​​​​​অন্তর্নিহিত ​​​​​​​রয়েছে ​​​​​​​সাম্রাজ্যবাদ। সাম্রাজ্যবাদ ​​​​​​​শুধুমাত্র পুঁজিবাদের যুক্তি নয়, তা মডার্ন সায়েন্সএর চার্টার। (মডার্ণ সায়েন্স বলতে আমি গ্যালিলিওর সময় থেকে যে আজ পর্যন্ত চালু যে পশ্চিমি বিজ্ঞান, যা আমাদের ওপর একমাত্র বিজ্ঞান বলে চাপানো হয়, তার কথা বলছি।) যে যুক্তিবাদ এই মডার্ন সায়েন্সের ওপর দাঁড়িয়ে , সেও এই অন্তর্নিহিত হিংসার দায় এড়াতে পারে না। 
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন