এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  রাজনীতি

  • খরচ কম হবে; আনন্দ গৌরবে 

    রানা সরকার লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | রাজনীতি | ১৯ জুলাই ২০২৫ | ৪৪০ বার পঠিত
  • শারদোৎসব বা দুর্গাপুজা হল আপামর বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। আপামর। যদি এই আপামর বাঙালি বই পড়ত, সমস্ত ধরণের বই, প্রায় প্রতিদিন যদি ঘটত তার বইয়ের সঙ্গে সহবাস, তাহলে হয়ত বইমেলাই হয়ে উঠত বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব।

    যাইহোক, উৎসব অর্থনীতির পরিপূরক নাকি অর্থনীতি উৎসবের পরিপূরক সেই নিয়ে তর্ক হতেই পারে। তর্ক হতেই পারে যেখানে রাজ্য সরকার কেন্দ্রের থেকে প্রাপ্য টাকা পাচ্ছেন না বলে যে অভিযোগ কাগজে বারবার দেখি, যেখানে নানান সরকারি প্রকল্পের দ্বারা মানুষের প্রভূত উন্নতি সাধনের মহান যজ্ঞ রাজ্য সরকার তাঁদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন এবং তার ব্যায়ভার, যেখানে আরও অনেক নতুন প্রকল্প শুরুই করা যায় নি অর্থের জন্য, যেখানে আরও অনেক সরকারি পদ রাজ্যের অর্থ মন্ত্রকের সবুজ সিগন্যাল পায় নি, যেখানে অনেক স্কুল অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ, সেখানে রাজ্যের সমস্ত ক্লাবগুলোকে ধরে ধরে এই শারদীয়া অনুদান প্রদান ঠিক কতখানি জায়েজ বা গ্রহণযোগ্য? ইমাম ভাতা? পুরোহিত ভাতা? কতখানি জায়েজ? 

    ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। কিন্তু আমি বলি ধর্ম বলুন বা উৎসব – সেটা আসলে সবার।

    ধর্ম আসলে কী?

    সুশিক্ষিত হওয়াই হল ধর্ম। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া হল ধর্ম। নিজের চারপাশে বাসযোগ্য পরিবেশ তৈরি করাই হল ধর্ম। সবার জন্য কর্মসংস্থান হল ধর্ম। সবার জন্য ন্যায় বিচার হল ধর্ম। আর কৃষ্টিশীল এবং সাংস্কৃতিক হওয়া হল ধর্ম। আরও আরও বেশি মানবিক হওয়া হল ধর্ম। নিজেদের সন্তানদের জন্য উপযুক্ত পৃথিবী রেখে যাওয়া হল ধর্ম। 

    রবীন্দ্রনাথ তাঁর মানুষের ধর্ম প্রবন্ধে ধর্ম বলতে বলেছেন ন্যায় বিচারের কথা; ধর্ম বলতে বলেছেন Property.

    মন্দির মসজিদ তৈরি করে কি একটা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয় নাকি কৃষি ও শিল্পের উন্নয়ন করে?

    গত ৩০ বছর ধরেই দেখছি, হয়তো বা তার আগে থাকতেই ঘটছিল অল্প অল্প করে, যে বহুফসলি চাষের জমিতে কারখানা আর বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানার জমিতে ফেলাট! আর এরই নাম নাকি উন্নয়ন! বাংলার উন্নয়ন! বাঙালির উন্নয়ন! দেশের অন্য রাজ্যেও এসব হচ্ছে। পরিবেশ ধ্বংস করে দেদার উন্নয়ন(!) হচ্ছে।     

    আর বহুদিন ধরেই দেশের বিভিন্ন জায়গার মতো এলাকায় এলাকায় ল্যাজওয়ালা ফুটো মাতব্বরদের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে যারা রাতদিন ধরে কে আগে কত বেশি উন্নয়ন করবেন, সেই নিয়ে নিজেদের মধ্যে দেদার মারপিট করছেন আর কাদা ছোঁড়াছুড়ি করছেন। আহা! সবার আগে উন্নয়ন করবার কী সাধ! কাউকে উন্নয়ন করতে দেওয়া হবে না। শুধু আমিই উন্নয়ন করবো। আর এই উন্নয়নে উন্নয়নে চলছে মারপিট আর কাদা ছোঁড়াছুড়ি।

    আসলে উন্নয়ন কাকে বলে?
           
    উত্তরটা না হয় এলাকার স্থানীয় স্তর থেকে ব্লক, মহকুমা, জেলা ও রাজ্য স্তরের নানান বিজ্ঞজন, বিদ্ব্জ্জন রয়েছেন, প্রশ্নের উত্তর বা আলোচনার ভার তাঁদের ওপর ছেড়ে দিলাম।

    তবে যদি কেউ মনে করেন যে শারদোৎসব-এর মন্ডপ সংখ্যা বেড়ে গেলেই রাজ্যের প্রভূত অর্থনৈতিক উন্নতি হবে, বা অনুদান দিলেই অর্থনৈতিক উন্নতি হবে, তাহলে সেটি হবে ফেকুজী ওরফে উনিজীর মস্তিস্কপ্রসুত দেশে বিবাহের সংখ্যা বাড়িয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের হাস্যকর প্রচেষ্টার মতো।

    উৎসব কী?

    উৎসব নিয়ে আমাদের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনেক গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলে গেছেন। তিনি লিখে গেছেন – ‘সংসারে প্রতিদিন আমরা যে সত্যকে স্বার্থের বিক্ষিপ্ততায় ভুলিয়া থাকি উৎসবের বিশেষ দিনে সেই অখন্ড সত্যকে স্বীকার করিবার দিন – এইজন্য উৎসবের মধ্যে মিলন চাই। একলার উৎসব হইলে চলে না। বন্ধু-বান্ধব, পাড়া প্রতিবেশী, পরিবারের সাথে ভাগাভাগি করলে আনন্দ বহুগুণ বৃদ্ধি পায়’।

    শুধু বন্ধু-বান্ধব, পাড়া প্রতিবেশী, পরিবার কেন একটা গোটা মিউনিসিপ্যালিটি, পঞ্চায়েত, ব্লক, মহকুমা, জেলা, রাজ্য ও দেশ জুড়ে পালিত হতে পারে উৎসব।

    উৎসব হতে পারে সবার যদি তার মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের আঁশটে গন্ধ না থাকে।  

    আর সেই উৎসবের বিশেষ দিনগুলোতে রবীন্দ্রনাথ এক অখন্ড সত্যকে স্বীকার করতে বলেছেন। কী সেই অখন্ড সত্য? মানুষ থেকে মানব হওয়া। অনেক থেকে এক হওয়া; জড় হওয়া।

    কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, দেখা যাচ্ছে আমরা, বাঙালিরা ক্রমশ আলাদা হয়ে চলেছি। আর কোণঠাসা হয়ে পড়ছি। ধর্ম নিয়ে আলাদা, জাত-পাত নিয়ে আলাদা, রাজনীতি নিয়ে আলাদা; বিত্ত নিয়ে আলাদা। আরও আলাদা হয়ে যাচ্ছি যখন আমরা নিজেদের ইগোর সমস্যায় একটা ক্লাব ভেঙে আরও আরও ক্লাব তৈরি করছি।

    আচ্ছা, স্বাধীনতা সংগ্রামে কত বাঙালি তাঁদের মহাপ্রাণ দান করেছিলেন? কতশত হাজার হাজার বাঙালির ঘরবাড়ি, দেশ, জন্মস্থান ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছিল? হিসেব আছে?

    ব্রিটিশদের চক্রান্তে কীভাবে বাঙালি বণিক তাঁদের সম্পদ হারিয়ে উঞ্ছবৃত্তি করতে, গুজরাটি আর মাড়োয়ারিদের চাকরগিরি করতে বাধ্য হয়েছিলেন তার কিছুটা ইশারা কক্ষপথ ওয়েবজিনের ‘হে বঙ্গ ভান্ডারে তব’ লেখায় উল্লেখ করেছিলাম।

    ঠিক কীভাবে বাঙালি বনিকদের থেকে বড়বাজার সহ কলকাতার ঘরবাড়ি কায়দা করে ধান্দাবাজি আইনের বগলের তলা দিয়ে গুজরাটি আর মাড়োয়ারিদের হস্তগত হয়েছিল, তারও কিছুটা ইশারা কক্ষপথের ‘হে বঙ্গ ভান্ডারে তব’ লেখায় উল্লেখ করেছিলাম।

    বাঙালি একদিন গোলিয়াথ ছিল। হ্যাঁ। বাঙালি একদিন গোলিয়াথ ছিল। তার চিন্তাভাবনা, তার কৃষ্টি, তার সম্পদ, তার সিংহ বিক্রম, তার সাহস, তার বুদ্ধিবল, তার জ্ঞান-বিজ্ঞান, তার শিক্ষা, তার আধুনিকতা, তার পরিবেশ চিন্তা – সব কিছুতে ছিল সে গোলিয়াথ। 

    কিন্তু দেশকে ভালোবাসতে গিয়ে, দেশকে স্বাধীন করতে গিয়ে একদিকে তাকে হারাতে হয়েছিল তাঁর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের, অপরদিকে তার ব্যবসা, তার সম্পদ লুঠ করে, তার জনসম্পদ ভাগ ইত্যাদি করে, তাকে করে ফেলা হয়েছিল লিলিপুট। কী অপরিসীম দুঃখ, কষ্ট, অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছিল বাঙালিকে সে কথা কি এই প্রজন্ম জানে? অনুভব করতে পারে? কারণ একটা দল কিন্তু ক্রমাগত ইতিহাস বিকৃত করে চলেছে। করে চলেছে বিভাজনের রাজনীতি।

    আর দেশভাগের পর থেকেই কিন্তু বাঙালি যতদিন গেছে ততো আরও লিলিপুট হয়ে গেছে। আর তাতেই বাঙালির কী মজা!  

    এই যে শারদোৎসব-এর যারা যারা উদ্যোক্তা তারা কি বাঙালির সেই ইতিহাস জানেন? যারা যারা কোটি কোটি টাকা মন্ডপ সজ্জায় খরচ করেন, মুম্বাই থেকে কাদের যেন আনিয়ে উৎসব উদ্বোধন করেন, তারা কি বাঙালির ইতিহাস জানেন?

    আর এই উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যত রাজনৈতিক ‘দ্দ্যোক্তারা’ উদবোধনের নামে দাঁত বের করে হাউ হাউ করে চাড্ডি আবোলতাবোল বক্তব্য রাখেন, তারাও কি জানেন?

    আসলে এই রাজনৈতিক ‘দ্দ্যোক্তাদের’ উদ্দেশ্য হল পাবলিসিটি আর উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্য হল রাজনৈতিক ‘দ্দ্যোক্তাদের’ থেকে যতটা পারা যায় সুবিধা আদায় করে নেওয়া। আর নিজেদের ক্ষমতা জাহির করা।  
                
    এই উদ্যোক্তাগণ মনে করেন যে শারদোৎসবটি সুসম্পন্ন করলেই বুঝি বাঙালি আবার শিক্ষায়, স্বাস্থ্যে, কর্মসংস্থানে, বিদ্যায় বুদ্ধিতে, কৃষ্টিতে, ব্যবসায়, সম্পদে, ন্যায় বিচারে, বাসযোগ্য পরিবেশে জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন নিয়ে নেবেন!

    অশিক্ষার গজদন্তমিনারে বসে ভাবলে এইরকমই মনে হয় বইকি।

    তারপর আগে বাঙালি খেতো ‘থিন এরারুট বিস্কুট’। তারপর দেখলাম খাচ্ছে ‘থিম এরারুট বিস্কুট’। থিমে থিমে একেবারে ‘থিমথিমে’ অবস্থা! এই লোক সংস্কৃতি, সেই লোক সংস্কৃতি, লোক গান, এর আদল তার আদল, লাইটিং টাইটিং – ব্যাস, তারপর ভোঁ ভা। আর কিছু জানি না।

    আর সঙ্গে তার জৌলুস। উদ্যোক্তাদের উদ্যোক্তাদের মধ্যেকার প্রতিযোগিতা। এ বলে আমায় দ্যাখ তো সে বলে আমায় দ্যাখ! কার মোচ্ছব বেশি; কার জৌলস বেশি। কার চমক বেশি! বাঃ রে বাঙালি!

    শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্ম সংস্থান, ন্যায় বিচার, বাসযোগ্য পরিবেশ রইলো পড়ে, তবু উদ্যোক্তাদের ফুটানির শেষ নেই। 

    পারবে? কোনও রাজনৈতিক দল বাঙালিকে একদিন তাঁর থেকে বেআইনি ভাবে কেড়ে নেওয়া বড়বাজার ফিরিয়ে দিতে পারবে? নিউমার্কেট ফিরিয়ে দিতে পারবে? যে যে জুটমিলগুলো শুধুমাত্র সঙ্গে থাকা জমির লোভে মাড়োয়াড়ি গুজরাটিরা নাম মাত্র মূল্যে কিনে নিয়েছিল তাদের আবার বাঙালির হাতে ফিরিয়ে দিতে পারবে? যেখান যেখান থেকে বাঙালিকে খেদানো হয়েছে পারবে আবার সেখানে সেখানে সসন্মানে তাঁদেরকে অধিষ্ঠিত করতে?

    পারবে? কোনও রাজনৈতিক দল বাঙালিকে একদিন হারিয়ে যাওয়া বাঙালির হৃতগৌরবকে ফিরিয়ে দিতে?

    না। এই গৌরব বাঙালিকেই করতে হবে উদ্ধার। “কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ”। গুঁড়িয়ে দিতে হবে সমস্ত রকমের ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ এবং একচেটিয়ার কারবারিদের বাস্তিল দূর্গ।   

    জানি বাঙালি বলবে যে সে সবাইকে আপন করে নিতে চায়। আর সবাই চায় তাকেই লাথি মেরে মেরে তাদের রাজ্য থেকে তাড়িয়ে দিতে! বাঃ রে বাঙালি! আজ বাঙালি গরীব গুর্বোদের গায়ে হাত উঠেছে, কাল বাঙালি হোয়াইট কলারদের গায়েও যে হাত উঠবে না কে বলতে পারে?

    পারলে দেখে নিন যে যে দেশের সঙ্গে ভারতের বিপুল ব্যবসা হয় সেই সেই দেশের চেম্বার অফ কমার্সে কারা আলো করে বসে আছে। ইন্দো অ্যামেরিকান চেম্বার অফ কর্মাসের সমস্ত পদে কারা বসে আছে? কেন? সেখানে বাঙালি ব্যবসায়ী নেই কেন? কেন পশ্চিমবাংলার বেশীরভাগ লাভজনক ব্যবসা অবাঙালিদের হাতে? প্রশ্ন করেছেন? 

    তবে আছে। আলো আছে। আমি এমন কিছু বাঙালির সন্ধান পেয়েছি যারা আমি শুধুমাত্র বাঙালি বলেই রাজি হয়ে গেছেন সাহায্য করতে। না। তাঁরা আমার থেকে তোলা বা কাটমানি যেমন চাননি, তেমনই বলেন নি যে আমাকে ফেকুজীরদলে নাম লেখাতে হবে।        

    তবে আমি রাজ্যে কিন্তু হীন, নীচ, ছোটলোক বাঙালি দেখেছি, যারা কাঁকড়ার মতো নিজেদের মধ্যে কামড়াকামড়ি করে চলেছেন।

    কী লজ্জা কথা যে এখনও বাঙালিকে চিকিৎসা করাতে ভেলোর যেতে হচ্ছে; উচ্চশিক্ষা ও চাকরির জন্য যেতে হচ্ছে ব্যাঙ্গালোর, পুনে, হায়দ্রাবাদ। বাসযোগ্য পরিবেশ নিয়ে আন্দোলন করলে জুটছে নিগ্রহ; মার। ন্যায় বিচার পাওয়া যাচ্ছে না।

    এর দায় গত ৭৫ বছর ধরে যারা বাংলাকে শাসন করেছেন, তাদের সকলের। বাঙালি কীভাবে ভুলে গেল যে দেশের সেরা সেরা প্রতিষ্ঠান আগে পশ্চিম বাংলায় থাকলেও কীভাবে একে একে তারা চলে গেল মুম্বাই, ব্যাঙ্গালোর, দিল্লী, পুনে, হায়দরাবাদে।    

    ফিরে আসি শারদোৎসব-এ।
            
    ধরা যাক, এই মুহুর্তে কোনও একটি মিউনিসিপ্যালিটির কোনও চারটি ওয়ার্ডে বা কোনও একটি পঞ্চায়েতে দশটি ক্লাবে শারদোৎসব পালন করা হয়। ধরা যাক ক্লাবগুলির নাম হল – ক, খ, গ, ঘ, ঙ, চ, ছ, জ, ঝ, ঞ।

    এখন শারদোৎসব চলাকালীন বিভিন্ন ক্লাব অনুযায়ী মানুষ বিভক্ত হয়ে থাকছেন। একদল বলছেন যে আমার ক্লাবের অমুক ভালো, তো আরেকজন বলছেন যে আমার ক্লাবের তমুক সেরা। একজন বলছেন যে আমার অমুকটা দেখেছিস? তো আরেক দল বলছেন যে কেমন চমকে দিলাম!

    মানে? একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতার বাতাবরণ তৈরি হচ্ছে। স্বার্থ তৈরি হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে বিভেদ।

    যদি এইরকম করা যেত তাহলে কেমন হত?

    যদি একটি মিউনিসিপ্যালিটির কোনও চার-পাঁচটি ওয়ার্ডে বা কোনও একটি পঞ্চায়েতে যে কটি ক্লাব আছে সেখানে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শারদোৎসব পালন করা হত, তাহলে?

    মানে, এক বছর শারদোৎসব হল ক ক্লাবে। তার পরের বছর হল খ ক্লাবে। এইভাবে গ, ঘ, ঙ, চ, ছ, জ, ঝ, ঞ করতে করতে দশ বছর বাদে আবার ক ক্লাবে।

    এর ফলে

    ১) একটা মিউনিসিপ্যালিটির কোনও চারপাঁচটি ওয়ার্ডের সমস্ত মানুষ বা কোনও একটি পঞ্চায়েতের সমস্ত মানুষ একত্রিত হতে পারতেন। তাঁদের সবার দেখাসাক্ষ্যাত ঘটত। মতের আদানপ্রদান ঘটত। তারা যে আসলে ‘এক’ এইটা অনুভব করতে পারতেন। প্রতিযোগিতার বাতাবরণের জায়গায় ফুটে উঠত একতার মালা। সবাই গেয়ে উঠতেন একতার গান; অখন্ডতার সত্য - যার কথা রবীন্দ্রনাথ বলে গেছেন।    

    ২) এর ফলে শারদোৎসব-এর সংখ্যা কমবার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাক্তি মানুষ ও সরকারের সমস্ত রকমের খরচ কমত। ইলেকট্রিক, পৌরসভা, চাঁদার খরচ ইত্যাদি। সরকারকে আর অনুদান দিতে হত না ফলে সেই অর্থ অন্য কোনও মানবিক প্রকল্পে ব্যয় করা যেত।   

    ৩) বহুমানুষ একত্রিত হওয়ার ফলে একসঙ্গে মিলেমিশে অনেক কাজ করা যেত। আরও বেশি বেশি কাজ করা যেত। প্লেটো বলে গেছেন যে মানুষ হল একটি রাজনৈতিক জীব। আমি মনে করি মানুষ হলেন যুক্তিশীল সামাজিক জীব আর এই সমাজবদ্ধ জীবের একটি চরিত্র হল তার সংস্কৃতি।

    ৪) এই একত্রিত হওয়ার ফলে শারদোৎসব চলার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন বয়সী মানুষদের নিয়ে গান, নাটক, কবিতা পাঠ, কবিতা আবৃত্তি, স্মৃতি রোমন্থন, এলাকার স্থানীয় ইতিহাসের আলোচনা, আড্ডা ইত্যাদি করা যায়।

    ৫) কেউ কেউ এসে পাঠ করতে পারেন বাঙালির ইতিহাস। যে গৌরবময় ইতিহাস হয়তো আজকের তরুণ প্রজন্ম অনেকেই জানেন না। নিজের ভাষার মানুষের ইতিহাস, সাহিত্য, বিজ্ঞান, কৃতিত্ত্ব ইত্যাদি জানতে পারলে নিজেদের মধ্যে সেই অস্মিতা যেমন বজায় থাকে; তেমনি নিজেদের মধ্যেকার হীন্মন্যতা দূর হয়। আবার তেমনই অন্যভাষা এবং অন্য ভাষার আচার আচরণ চেপে বসতে পারে না; পারে না ফ্যাসিবাদি শক্তি এসে বাঙালির গৌরবময় ইতিহাসকে কলঙ্কিত করতে।

    ৬) সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় প্রতিভার বিকাশ ঘটবার একটা সম্ভাবনা দেখা দেয়। সমাজ, অর্থনীতি, ন্যায় বিচার, জ্ঞানবিজ্ঞান, পল্লীপ্রকৃতি, পরিবেশ উন্নয়ন ইত্যাদি নিয়ে আমাদের পূর্বপুরুষেরা কী কী ভাবনার মালা গেঁথে গেছেন আমরা চর্চার মাধ্যমে জানতে পারতাম। কারণ চর্চা করলেই তবে খর্চা করতে পারব।
            
    ৭) পুজোর সংখ্যা কম হওয়ার ফলে রাস্তাঘাটে ট্র্যাফিক সঞ্চালনার কাজেও কম ব্যাস্ততা দেখা দিত। আইনকানুন রক্ষাকারীরাও একটা মাত্রায় ফুরসৎ পেতেন। ফলে যারা শারদোৎসব-এর সময় এতোদিন খালি কাজই করে গেছেন বা করেছেন, তাঁরাও একদিন দুদিন তাঁদের পরিবার সমেত ঘুরে ঘুরে আস্বাদ গ্রহণ করতে পারতেন এই আনন্দ উৎসবের।
                     
    ৬) শারদোৎসব-এর সংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে সার্বিক পরিবেশের সুস্থতা আরও বেশি বেশি করে বজায় থাকত। পরিবেশ রক্ষা নিয়ে মানুষ আরও উঠেপড়ে লাগতে পারত। দূষণ কম হত। শব্দ দূষণ কম হত। ফলে বাড়ির বৃদ্ধ, বৃদ্ধা থেকে অসুস্থ রোগীরা আরাম পেতেন।
     
    ৭) ক’টা দিন একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া হইহুল্লোড় এর সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেক অনেক অসহায় মানুষের পাশে একসঙ্গে দাঁড়ানো যেত। বস্ত্র, কম্বল, বইপত্র ইত্যাদি দানের মধ্যে দিয়ে আলোয় আলোকময় হয়ে উঠত বাঙালির উৎসব।

    ৮) যারা প্রবাসে (বাইরের রাজ্যে বা বিদেশে) আছেন, তাঁদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সিং করে হইহই করে তাঁদের কাছেও পৌচ্ছে দিতে পারা যেত গ্রামবাংলার শারদোৎসব-এর উত্তাপ। কলকাতা ও মফঃস্বলের শারদোৎসব-এর মেজাজ।

    একটা বিষয় আমরা সকলেই হয়তো জানি বা জানতাম। অতি ব্যাস্ততায় ভুলে গেছি। যে একটি জাতির উৎকর্ষতার পরিমাপের জন্য বিভিন্ন উপাদান বিবেচনা করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক সম্বৃদ্ধি, সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষা স্বাস্থ্য পরিবেশগত অবস্থা, ন্যায় বিচার, বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উন্নতি এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।

    তাহলে আসুন আমরা ডেটা ধরে ধরে পরিমাপ করি যে আজ থেকে ১৫০, ১০০, ৭৫ বছর বা ৫০ বছর আগে এই উপাদানগুলি কেমন ছিল আর আজ কেমন আছে।

    আমরা কি কখনো ভেবেছি যে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ঠিক কেমন বাংলা আমরা রেখে যাচ্ছি? নাকি নিজেরাই সব ছিবড়ে করে খেয়ে দেয়ে চলে যাব?

    কারণ একদিকে যেমন পশ্চিমবঙ্গ সমেত ভারতবর্ষে ছোবল মারছে ওয়াশিং মেশিং, মন কী আলিয়া ভাট, ফেক প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ওয়ালা ফ্যাশিস্ত দল, তেমনি পাশের বাংলাদেশ ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে মুসলিম মৌলবাদীরা। পাকিস্তানেও রয়েছে মুসলিম মৌলবাদী। মুসলিম মৌলবাদী আমাদের এদিকেও আছে; হ্যাঁ, আছে।

    সেই ইসলাম মৌলবাদকে ধিক্কার জানান, অবশ্যই জানান, কিন্তু তা বলে হিন্দু মৌলবাদের হাত ধরতে হবে কেন? সেই ইসলাম মৌলবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে করুন, কিন্তু তা বলে হিন্দু মৌলবাদী সাজতে হবে কেন?

    ধিক্কার সেই সব বাঙালি গোদী মিডিয়া আর হিন্দু মৌলবাদীদের যাঁরা তাদের বাঙালিত্ব ছেড়ে, যাঁরা তাদের পূর্বপুরুষের পরম প্রবল পরাক্রান্ত ইতিহাস ভুলে গিয়ে এক সময়ের ব্রিটিশদের দালালদের সঙ্গে ভিড়ে গেছেন।
     
    আর যদি ফেকুজীর দলে নাম লেখানো বাঙালিরা উন্নয়নের কথা বলেন, প্রশ্ন তোলেন, তাহলে ফেকুজীর দলে নাম লেখানো সেইসব বাঙালিদের আমি প্রশ্ন করবো। প্রশ্ন করবো যে যে রাজ্যে ডবল ইঞ্জিন সরকার চলছে সেখানে সেখানে উন্নয়ন কেমন হচ্ছে সেটা কিন্তু আমরা জানি। আপনারা সেখানকার অন্যায় অবিচার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ন্যায় বিচার, বাসযোগ্য পরিবেশ ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন তুলুন। সেখানকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলুন। কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৪ থেকে কেমন চলছে সেটাও কিন্তু আমাদের অজানা নয়।

    আর রাজ্যের শাসক দলের সমালোচনা করবার জন্য, রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলবার জন্য আপনাদের ফেকুজীর দলে নাম লেখাতে হল কেন? আর কোনও দল ছিল না? নিজেরা কোনও নতুন দল তৈরি করতে পারলেন না?

    ভাবলেন যে আবার এতো কষ্ট করবো কেন? একেই তো কেন্দ্রে সরকার তৈরি হয়ে গেছে আর দেশে একটা হিন্দু মৌলবাদের হাওয়া বইছে, এবার সেই হাওয়ায় ভর করে যদি ক্ষমতাও পাওয়া যায়, তাহলে সোনায় শুধু হাগা নয়, সোনার সো-হাগা।
       
    ভাবা যায়, যে বাংলা ভাষার কবি নোবেল আনলেন, যে বাংলা ভাষার অর্থনীতিবিদ নোবেল আনলেন, যে বাংলা ভাষায় সিনেমা করে সত্যজিতবাবু আনলেন অস্কার, সেখানে কোথাকার কোন দুদিনের কয়েকটা বৈরাগী বলছে বাংলায় কথা বললেই নাকি ডিটেনশন ক্যাম্প! ভাবা যায়!

    সমস্যা যদি কিছু থাকে, তবে সেটা বন্ধুত্বপূর্ণভাবে, সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে স্বস্নেহে আলোচনার মাধ্যমে মেটানো যায়। দেশে আইন আছে; আদালত আছে আর সবার ওপরে আছেন মানুষ।

    আর কে বহিরাগত? দেশভাগের সময় আপনারা বাংলাদেশে বাঙালি হিন্দু মুসলিম আর পাঞ্জাবে শিখ, হিন্দু আর মুসলিমদের জান ও মালের দায়িত্ব নিয়েছিলেন? না। নেন নি। তাঁদেরকে নিজেদের ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়ে সব মজা লুটছিলেন। আর সেইসব অসহায় মানুষ তাদের সর্বস্ব খুইয়ে হয়ে গেছিল সর্বহারা। যে লাঞ্ছনা, অত্যাচার, অন্যায়, অবিচারের দগদগে রক্তের দাগ তাঁদের ক্ষতবিক্ষত করেছিল সেই দাগ কিন্তু এখনও লেগে আছে তাদের উত্তরপুরুষদের মাথায়। উত্তরপুরুষদের শিরায় শিরায়। 

    তাই আবার চাই বাঙালি অস্মিতার জাগরণ। রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে মাস্টারদা সূর্য সেন, রাসবিহারী বসু, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, যতীন্দ্রনাথ ওরফে বাঘা যতীন, বিপিন চন্দ্র পাল, সুভাষচন্দ্র বোস, বিনয়-বাদল-দীনেশ, শহীদুল্লাহ, প্রীতিলতা, কল্পনা, মৌলানা আজাদ, কাজী নজরুল ইসলাম, রেজাউল করিম,মাতঙ্গিনী হাজরা এবং আরও আরও অনেক শ্রদ্ধেয় মনীষী সঞ্জাত যে চেতনা একদিন ছড়িয়ে পড়েছিল বাংলা থেকে পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্রে।

    তারপর সেখান থেকে সারা দেশে। আমরা পেয়েছিলাম মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, খান আব্দুল গফফর খান, আম্মেদকর, লালা লাজপত রাঈ, ভগত সিং, রাজগুরু, সুখদেও, চাপেকর ভাই, জোতিবা ফুলে, সাবিত্রিবাঈ ফুলে, জয়প্রকাশ নারায়ণ এবং এইরকম অনেক অনেক শ্রদ্ধেয় মনীষীদের, যারা বলে গেছেন মানবতার কথা; ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা; সমাজতন্ত্রের কথা। গণতন্ত্রের কথা। উন্নয়নের কথা। আমরা পেয়েছি সুন্দরলাল বহুগূনা, মেধা পাটেকর, সলিম আলি, সুমাইরা আব্দুল আলি, চন্ডী প্রসাদ ভাট, সালুমারাডা থিমাক্কা প্রমূখ ব্যাক্তিত্বকে।    আমরা দেখেছি এতো বড় এবং অহিংস যে কৃষক আন্দোলন সংগঠিত হল তার অন্যতম নেতা ছিলেন হান্নান মোল্লা। 

    আজ আবার সেই চেতনার বিচ্ছুরনের দিন সমাগত। ঘরে ঘরে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে বাঙালিদের অবদানের কথা পড়ানো হোক। বাঙালিদের আত্মবলিদানের কথা পড়ানো হোক। পড়ানো হোক কীভাবে প্রথমে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানিকে টাকা না দিতে চাওয়ায় এবং পরে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলনে বাঙালি আন্দোলনকারীদের সমর্থন করায়, বাঙালিদের বিপুল ব্যবসা, বাঙালির বিপুল সম্পদ বেআইনিভাবে কেমন করে মাড়োয়ারি গুজরাটিদের হাতে তুলে দেওয়া হল। বাঙালিদের কেমন করে ভাগ করে দেওয়া হল। কীভাবে রাজনৈতিকভাবে অর্থনৈতিকভাবে বাঙালিকে পঙ্গু করে দেওয়া হল। কীভাবে বাঙালি বাংলার মনিব থেকে পরিণত করা হল চাকরে! কীভাবে গোলিয়াথ থেকে পরিণত বাঙালি পরিণত হল লিলিপুটে। পড়ানো হোক।    

    আসুন, চেষ্টা করি বাংলার হৃত গৌবর ফিরিয়ে আনবার; তবে আলাদা আলাদা হয়ে নয়; একসঙ্গে। মিলিতভাবে। তবেই ঘটবে বাঙালির বোধন; আর তবেই সম্পূর্ণতা পাবে আমাদের শারদোৎসব। তবেই আলো ছড়িয়ে পড়বে সারা বাংলাদেশে। আর ঘটবে অখন্ড সত্যের উদ্ভাস। যে সত্যের কথা বলে গেছেন আমাদের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি আরও বলে গেছেন - ‘কারণ উৎসব একলার নহে। মিলনের মধ্যেই সত্যের প্রকাশ। আর সেই মিলনের মধ্যেই সত্যকে অনুভব করা উৎসবের সম্পূর্ণতা’।

    আর সেই সত্যের চেতনা ছড়িয়ে পড়ুক পশ্চিমবাংলা থেকে ভারতের অন্যান্য রাজ্যে, বাংলাদেশে এবং আরও অনেক অনেক দেশে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ১৯ জুলাই ২০২৫ | ৪৪০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • মণিপদ্ম দত্ত | 2401:4900:8844:41c0:c908:7354:74db:***:*** | ১৯ জুলাই ২০২৫ ১১:৪৩732563
  • অবশ্যই ভালো ও সময়োপযোগী লেখা। অবাস্তব হলেও। লেখকের প্রস্তাব তো যথেষ্ট সুচিন্তিত উৎসব পালন নিয়ে। তবে মূল প্রতিপাদ্য যদি বাঙালি অস্থিরতার পুনর্জাগরণ হয়, সেটি অতি সরলীকরণ। এতে সংকীর্ণতার রাজনীতিই পরিপুষ্ট হবে। তাতে লাভ কার লেখক সম্যক ভাবেই জানেন নিশ্চয়ই। এবং যে রবীন্দ্রনাথের দর্শন উদ্ধৃত করেছেন তাঁর বিপরীত পথে চলা শুরু হবে। বাঙালির স্বর্ণ যুগ একটি মুৎসুদ্দি মিথ। ওতে বামুন কায়েতদের সাম্রাজ্যীকরণ হয়েছে। নিম্নবর্ণের মানুষের ঘণ্টা হয়েছে। বাংলার সাম্যবাদী দলগুলোতেও বর্ণ হিঁদুরাই ছড়ি ঘোরানো। সুশোভন সরকার থেকে সমস্ত ঋদ্ধ ইতিহাসকারের লেখাতেই তার প্রমাণ বিদ্যমান। বদরুদ্দীন উমর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের গ্যাঁড়াকলের চূড়ান্ত বিধ্বংসী ফল দেখিয়ে দিয়েছেন। তার ফল এখনও সর্বত্র। রণজিৎ রায় দ্য অ্যাগনি ওফ বেঙ্গল এ এর রাজনৈতিক দিকটিও বহু আগেই দর্শিয়েছেন। 
    লেখকের আবেগকে সম্মান জানিয়েই বলছি, ভুল জায়গায় ঘোরাফেরা করে সমস্যা বাড়িয়ে লাভ নেই। বরং ক্ষত ও ক্ষতি বৃদ্ধি পাবে।
  • রানা সরকার | ১৯ জুলাই ২০২৫ ১২:০৯732564
  • ধন্যবাদ।  আপনি যে নিন্মবিত্তের বা নিম্নবর্গের মানুষের কথা বলেছেন সেটা অন্য একটা বিতর্ক। এই নিম্নবর্গ উচ্চ বর্গের দ্বন্দ্বটি আমি আপনার ওপর ছেড়ে দিলাম। আপনাকে অনুরোধ করছি যে এই দ্বন্দ্ব নিয়ে আপনি আপনার লেখা দ্বারা আমাদের সমৃদ্ধ করুন।  এবং এখানে যে সকল মনীষাদের নাম আমি নিয়েছি তাঁরা কিন্তু সবাই বাঙালি নন। আর বাঙালির জাগরণ তথা ভারতের জাগরণ যাতে সুস্থির ভাবে হয় সেটাই কিন্তু আমার কাম্য। আর অবাস্তব কীনা সেটা সময় আর মানুষ বলবে। মানুষ চাইলে অনেক কিছু হতে পারে। অবাস্তব বাস্তব হতে পারে।  
  • রানা সরকার | ১৯ জুলাই ২০২৫ ১২:৩৭732565
  • যে কোনো চেতনার আলো এক জায়গা থেকেই বিচ্ছুরিত হয়। তারপর কে বা কারা সেই চেতনাকে ধারণ করবেন, তারা উচ্চ বর্গের হবেন নাকি নিম্নবর্গের হবেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার।  যেমন ইওরোপে সবচেয়ে বেশি চেতনার বিচ্ছুরণ হয়েছে ফরাসি দেশে। তারপর তা ছড়িয়ে পড়েছিল সমগ্র ইওরোপে ; আমেরিকায়। আমি মনে করি ভারতের বাঙালি হলেন আসলে ইওরোপের।ফরাসি।  
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন