এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  স্কুলের খাতা

  • শিক্ষা, প্রযুক্তি ও হান্না মারিয়া

    Somnath mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    স্কুলের খাতা | ২৪ জুন ২০২৫ | ৩১১ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • শিক্ষা, প্রযুক্তি ও হান্না মারিয়া….
     
    বেশ কিছুদিন আগের কথা। বছরের একেবারে গোড়ার দিকের ঘটনা। ক্লাস নাইনের ছেলেদের দুটো সাধারণ প্রশ্ন দিয়ে বলেছিলাম বাড়ি থেকে তার উত্তর লিখে আনতে। পরের ক্লাসে এসে খাতা জমা নেব। খুব মামুলি দুটৌ প্রশ্ন – ১. আমার ভূগোল পড়তে ভালো লাগে না । আর ২. হিমালয় পর্বত যদি তার জায়গায় না থাকতো ? খুব কঠিন প্রশ্ন এমন একদম নয়, তবে মগজ খাটাতে হবে,এই যা। নির্দিষ্ট দিনে ক্লাসে গিয়েই বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার সামনে পড়তে হলো। সেগুলোর কথা আগে একটু বলি। ক্লাস নাইনের এক একটা ক্লাসে জনা ৪৫ ছাত্র। এদের মধ্যে আজকে হাজির হয়েছে জনা ৪০। বাকিরা গরহাজির। বছরের মাঝামাঝি থেকেই এটা নেমে আসবে ৩৫ এ। পুজোর আগে হাজিরা আরও নেমে আসবে জানি। এমনটাই দস্তুর। এসব জটিল হিসেবনিকেশের গ্যাঁড়াকলে জড়িয়ে না পড়ে বরং প্রশ্নের উত্তর প্রসঙ্গে ফিরি। 

    আমি ক্লাসে ঢোকার আগেই মনিটর ছেলেদের উত্তর লেখা খাতাগুলো এনে টেবিলে সাজিয়ে রেখেছে। সেদিকে নজর বুলিয়ে আমার প্রথম প্রশ্ন – কারা কারা খাতা জমা দাওনি? মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা অঙ্কুরের মতো বেশ কিছু ছাত্র সটান দাঁড়িয়ে পড়লো। খাতা না আনার কারণ জানতে চাইলে নিষ্পাপ সারল্যে উত্তর দিল – “লিখেছি কিন্তু আনতে ভুলে গেছি”। “যা লিখেছো তা মুখে বলো।”-- একথা বলতেই মুখের তালা সেই যে এঁটে গেল,তা আর খোলে না । একজন স্পষ্টবাদী ছাত্র জানালো – “কোচিং সেন্টারের স্যার বলেছেন,এমন প্রশ্ন মাধ্যমিক পরীক্ষায় কখনোই তাঁদের আসবে না।” সুতরাং অমন বেয়ারা প্রশ্নের উত্তর সে লেখেনি। এরপর কিছু বলতে গেলে গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই চুপ করে যাই। এ গল্পটির শেষাংশ এখনও বাকি আছে। এই লেখার শেষে তার জবাব দেবো।**
     
    আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ছেলেপিলেদের মগজ খাটিয়ে উত্তর লেখার পাট কি তাহলে বরাবরের মতো চুকে যাবে ? নোটবুক, টিউটর, নেটওয়ার্ক লার্নিংএর পর্ব পার হয়ে এখন আমাদের শিক্ষার্থীরা AI কিংবা Chat GPT র যুগে প্রবেশ করেছে। এখন তাদের মগজ খাটিয়ে উত্তর আর প্রয়োজন নেই। প্রশ্নটিকে AI tools এর সামনে মেলে ধরলে নিমেষেই মিলে যাবে উত্তর । এমন‌ই যদি ব্যবস্থা হয় তাহলে মগজ খাটিয়ে উত্তর লেখার আগ্রহ দেখাবে কোন্ আহম্মক? প্রযুক্তি মোহে সবাই আজ আচ্ছন্ন। অপার তার মহিমা। প্রযুক্তি নিয়ে এমন‌ আশঙ্কাই একদা প্রকাশ করেছিলেন বিখ্যাত ইংরেজ লেখক E.M.Forster সেই ১৯২৮ সালে তাঁর লেখা এক ছোট গল্পে, নাম The Machine Stops – মেশিন থেমে গেছে। গল্পটি নিশ্চয়ই খুব বেশি পাঠকের পড়া নেই, তাই আগে গল্পটা ছোট করে বলে নিই।
     
    মেশিন থেমে গেছে – একটি সায়েন্স ফিকশন। একসময় মানুষ তাঁর মস্তিষ্ককেই সর্বোত্তম সম্পদ বলে মনে করেছে, আর আজ সেই জায়গা দখল করেছে তাঁর‌ই আবিষ্কৃত বিভিন্ন যন্ত্র। মানুষের এই যন্ত্র নির্ভরতার বিষয়টি যদি কেবলমাত্র তাঁর দৈহিক বা বা কায়িক শ্রম লাঘবের জন্যই ব্যবহারে সীমাবদ্ধ থাকতো তাহলে হয়তো এতো চিন্তার কিছু থাকতো না। কিন্তু এখন যন্ত্র , মানুষের মানসলোকের‌‌ দখলদারিতে নেমেছে। উদ্বেগের সূচনা এখানেই । যন্ত্রের ওপর মানুষের নির্ভরতা একালে এতোটাই বেড়েছে যে অনেকেই আমরা মনে করছি যন্ত্র‌ই দেবতা, The Machine is God। যন্ত্র থেমে গেছে গল্পে ফস্টার সাহেব এমন‌ই এক পৃথিবীর কথা বলেছেন যেখানে মানুষেরা পৃথিবীর ওপরের অংশ ছেড়ে মাটির নিচে পরস্পর বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করে। এই দুনিয়ায় মানুষের সমস্ত চাওয়া পাওয়া পূরণ করে বিচিত্র সব যন্ত্র। এমন পৃথিবীতে মানুষের সমস্ত জৈবিক ও মানসিক চাহিদা পূরণ করা হয় যন্ত্র পরিসেবার মাধ্যমে। মুখে কথা নেই,
    স্বজনদের মনের উত্তাপ, আনন্দ বেদনা,হাসি কান্নার অভিব্যক্তির হদিশ জানার আকুতি নেই। সব ওই যন্ত্রের মাধ্যমেই সেরে ফেলা যায়।‍ 
     
    এমন‌ই এক পটভূমিতে হাজির রয়েছে গল্পের দুই প্রধান চরিত্র – ভাস্তি এবং কুনো, মা ও ছেলে। সম্পর্কের বাঁধন যত‌ই নিকট, নিবিড় হোক না কেন মা ও ছেলে আসলে দুই ভিন্ন মানস লোকের বাসিন্দা। ভাস্তি তার একালের যন্ত্র পরিষেবায় প্রবল ভাবে তুষ্ট।এর বিকল্প জীবনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে একদমই মনে করেনা সে। ভাস্তির কাছে এই যন্ত্রময়তা অসহনীয় নয় বরং পরম আদরণীয়। অন্যদিকে ভাস্তির বিপরীত মানসলোকে অবস্থান করে পুত্র কুনো।সে খানিকটা ইন্দ্রিয়বাদী এবং মনে মনে বিদ্রোহী। কুনো এই যন্ত্রে বাঁধা জীবনের বেড়া ভেঙে বেরোতে চায়। পৃথিবীর যে সব মানুষ এখনো পর্যন্ত অতটা যন্ত্রনির্ভর নয় তাঁদের খোলামেলা জীবনের প্রতি তীব্র আকর্ষণ বোধ করে কুনো। তার মা এতে সায় দেয়না। ভাস্তি মনে করে পুত্র কুনোর এমন ইচ্ছা নিছকই বিপদজ্জনক উন্মাদনা। 
     
    সময় গড়িয়ে যায়। ভাস্তি নিজেকে সম্পূর্ণরূপে যন্ত্রের হাতে সমর্পণ করে। সে যন্ত্রের ঘেরাটোপে থাকা এমন জীবনকে অস্বীকার করার কথা ভাবতেই পারেনা। এমন সময় দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। ১.) যন্ত্র প্রশাসন পৃথিবীতে ভ্রমণের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবহারের ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। অধিকাংশ মানুষই এমন ঘোষণার সঙ্গে সহমত পোষণ করে। তারা প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায় কেননা তারা মনে করে যন্ত্র তাদের অন্যান্য প্রয়োজনের মতো এই প্রয়োজনকেও পূরণ করবে। ২.) যন্ত্রকেই সমস্ত শক্তির আধার মনে করে “যান্ত্রিকতা” কেই অবশ্য পালনীয় ধর্ম হিসেবে মান্যতা দেয়। যন্ত্রকেই স্থান দেয় একমাত্র উপাস্য হিসেবে। মানুষ ভুলে যায় যে যন্ত্র মানুষের তৈরি। যন্ত্রকে একটি রহস্যময় দৈবী সত্তা হিসেবে মান্যতা দেওয়া হলে তা হবে একটি বড়ো মাপের ভুল। যন্ত্র কখনোই মানুষের জীবনের নিয়ামক শক্তি হতে পারে না।
     
    ভাস্তির বিচারে তার আপন সন্তান কুনো অযান্ত্রিক, কেননা সে যন্ত্রের সর্বময় ক্ষমতাকে মানতে রাজি নয়। যন্ত্র প্রশাসন এমন বেয়াদবি স‌ইবে কেন? তাই মগজ ধোলাই যন্ত্রের কাছে তাকে পাঠানো হয়। কিন্তু যন্ত্র বিকল হয়ে পড়ায় সেই কাজ আর করে ওঠা হয়না। ভিস্তার মতো মানুষজন, যারা যন্ত্রের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্বে আস্থাবান তারা বিষয়টিকে যন্ত্র ভগবানের লীলা বলেই মনে করে। এদিকে যন্ত্র আরও বিকল হয়ে পড়ে, কিন্তু তাকে মেরামত করে আবার সচল করে তোলা সম্ভব হয় না, কেননা যন্ত্র মেরামতের কায়দা কানুন বিষয়ে তারা আর ওয়াকিবহাল নয়। সেই মেরামতির দক্ষতা বহুদিন হলো লোপাট হয়ে গেছে।
     
    অবশেষে যন্ত্রটি ভেঙে পড়ে। এক‌ই সঙ্গে ভেঙে চুরমার হয়ে যায় একান্ত ভাবেই যন্ত্রের ওপর ভরসা করে গড়ে তোলা যন্ত্রদর্পী সভ্যতা।
    এই ঘটনায় ভিস্তা ও কুনো গভীরভাবে ভেঙে পড়ে। তারা উপলব্ধি করে যে মানবতা ও প্রকৃতি বিচ্ছিন্ন কোনো সভ্যতাই স্থায়ী হতে পারে না। যন্ত্র মানুষের বিকল্প নয়।
    ভাস্তি আর কুনোর এই অন্তিম উপলব্ধি দিয়েই শেষ হয় এই কাহিনি। E.M. Forster এর লেখা কাহিনি – The Machine Stops – যন্ত্র থেমে গেছে।
     
    গল্পটা পুরোটা বলার লোভ সংবরণ করতে পারলাম না। আসলে আমরা, আমাদের জীবন এক যন্ত্রময়তায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই আজ মেশিনের দাপিদাপি। মোল্লার দৌড় নাকি মসজিদ অবধিই সীমায়িত । আমার অবস্থাও তথৈবচ। শিক্ষকতা করার সুবাদে এই ব্যবস্থাটিকে খানিকটা কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। আর তার ফলে এই ব্যাপারে দু একটি কথা লেখার ইচ্ছেটা আমাকে তাড়িয়ে ফেরে।
    একালের পঠনপাঠন আর সাবেকি চক ডাস্টার ব্ল্যাকবোর্ড আর গুরুমশাইদের গুরুগম্ভীর ভাষণে আটকে নেই। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ হুড়মুড়িয়ে বাড়ছে আমাদের শিক্ষার আঙিনায়। আমার একান্ত ব্যক্তিগত এক অভিজ্ঞতার কথা বলি। এও বেশ কিছু বছর আগের কথা। এক শিক্ষা সেমিনারে গিয়েছি স্কুলের মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে। কলকাতার এক অভিজাত হোটেলে হয়েছে তার আয়োজন। 
    ঝাঁ চকচকে মঞ্চ আলোকিত করে বসে রয়েছেন সব আমন্ত্রিত বক্তারা। সব দিকপাল দিগদর্শক। সুচনার বক্তৃতা শুরু হয় –
     
    “আগামী দিনের শিক্ষা কেমন হবে? টুমরো মিনস ফিউচার। বর্তমানের প্লাটফর্মে দাঁড়িয়েই আমাদের আগামীর দিনগুলো নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করতে হবে। আমি দেখতে পাচ্ছি আগামীদিনে ভীষণ ভাবে বদলে যাবে পৃথিবীর এডুকেশন সিস্টেম। ….. সেই ব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে আমাদের। চলতি এডুকেশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার বদলাতে হবে, বদলাতে হবে আমাদের বস্তাপচা সাবেকি মাইন্ড সেট।…. We need to adopt a wholly market oriented education system. …We should incorporate a broad global visionary…….।. লিটারেচার, ল্যাঙ্গুয়েজ,হিস্ট্রি, ফিলোসফি, ….. এমন সব বিষয়কে নিয়ে এগোলে হবেনা। আমাদের চাই টেকনোলজি, স্কিল ডেভেলপমেন্ট….. আর এসবের জন্য চাই ফুললি টেকনোলজি বেসড এডুকেশন। আমাদের পুরনো চক, ডাস্টারকে দূরে সরিয়ে রেখে থ্রী ডি প্রোজেকশন সিস্টেম, ইন্টার এ্যাক্টিভ স্মার্ট বোর্ড, থ্রিডি প্রিন্টার,অগমেন্টেড রিয়ালিটি গ্লাস ……এসব ব্যবহার করতে হবে…..
    এগুলো সম্পর্কে হয়তো আপনারা অনেকেই প্রথম শুনেছেন। But you need not to worry. এগুলো সবই বাইরের হলে ডিসপ্লের ব্যবস্থা করা হয়েছে। I welcome you all there.”
     
    বক্তৃতা চলতে থাকে। কেমন ঘোর লাগানো কথাবার্তা। 
    তবে সব কথা কান অবধি পৌঁছলেও মনে সেভাবে বোধহয় ঢোকাতে পারিনি হয়তো খানিকটা সেকেলে, পুরনো জমানার মানুষ বলে। 
     
    খুব সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার কথা বলি। এক তরুণী শিক্ষিকা, Hannah Maria, তাঁর শিক্ষকতার চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। না, তাঁর ওপর কর্তৃপক্ষের কোনো চাপ ছিলনা। চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত একান্তই তাঁর নিজস্ব সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন Hannah। তাঁর বিদায়ী ফেয়ার ওয়েল মেসেজে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন – “এখন সকলকে শিক্ষাক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যথেচ্ছ ব্যবহার সম্পর্কে সতর্ক হতে হবে। AI, Chat GPT র মতো প্রযুক্তি আমাদের শিক্ষার্থীদের critical thinking বা গভীর মুক্ত চিন্তনের ক্ষমতাকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। আমার ছাত্র ছাত্রীরা আমাকে জিজ্ঞাসা করছে ম্যাম আমরা কেন আপনার কথা শুনে পড়বো, লিখবো, প্রশ্ন নিয়ে গভীরভাবে ভাববো? প্রযুক্তি নিমেষেই সব সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছে আমাদের হয়ে। আমি ওদের হাজারো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য নিজেকে সর্বতোভাবে প্রস্তুত রাখতে পারি কিন্তু ক্লাস নাইন বা টেনের শিক্ষার্থীদের এমন অদ্ভুত প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই – আমি কেন পড়বো? আমার বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে যে এদের অনেকেই ঠিকমতো ব‌ইয়ের অক্ষরগুলো পড়তেই পারে না। প্রশ্ন করলে অসহায়ভাবে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। না পারার দুঃখ ওদের কোনোভাবেই ছুঁয়ে যায় না। এ এক অসহনীয় পরিস্থিতি! যন্ত্রই যদি শিক্ষার্থীদের সব জিজ্ঞাসা মেটাতে সক্ষম হয়, তাহলে আমাদের মতো শিক্ষক শিক্ষিকাদের আর প্রয়োজন কোথায়? প্রশ্নহীন মানুষ দেশ ও দশের কোন্ কল্যাণে আসবে? নিজের সঙ্গে লড়াই করতে করতে আমি হান্না মারিয়া, আজ ক্লান্ত, নিঃশেষিত। তাই আমি আমার শিক্ষিকার পদ থেকে পদত্যাগ করলাম। যাবার আগে সকলের উদ্দেশ্যে আমার একটাই আবেদন - অবিলম্বে আমাদের শিক্ষার্থীদের এই যন্ত্রপাশ থেকে মুক্ত করুন। বন্ধ করুন শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির ব্যবহার। না হলে……….।”
     
    হান্না তাঁর বিদায়ী ভাষণ শেষ করার আগেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। একজন সংবেদনশীল শিক্ষক বা শিক্ষিকার পক্ষে এমন পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নেওয়া মোটেই সহজ নয়। হান্না মারিয়া বলছেন – “আমি আমার ছাত্র ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নির্মিতির কথা ভেবে রীতিমতো হতাশ। আমি ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষিকা। একটা প্রাযুক্তিক ব্যবস্থা কখনো সাহিত্যের রসোপলব্ধির সহায়ক হতে পারে? জানিনা। এর উত্তর আমার কাছে নেই। ওঁরা একটা সঠিক বাক্য‌ও তৈরি করতে পারছেনা। এমন গভীরভাবে আসক্ত হয়ে পড়ছে তারা। কলেজে ঢোকার আগেই স্কুল স্তরের পড়াশোনার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হোক। ওদের আবার নতুন করে ভাবার অবকাশ তৈরি করে দেওয়া হোক। নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শেখানো হোক। নিজেদের হাতে কলম বাগিয়ে ধরে নিজেদের চিন্তা, ভাবনা, ভালোবাসাকে প্রকাশ করতে শেখানো হোক। একজন শিক্ষিকা হিসেবে এ কোন্ ভাবী পৃথিবীর বুনিয়াদ গড়ার দায়িত্ব নিয়েছি আমরা? স্বপ্নহীন, আবেগহীন, সহমর্মিতা হীন এক যান্ত্রিক প্রজন্ম গড়ে তোলার পেছনে এতো অর্থ শ্রম সংবেদন ব্যয় কেন করছি আমরা? আমার ছাত্র ছাত্রীদের যখন নতুন কিছু লিখতে বলেছি তখনই তারা প্রশ্ন তুলে বলছে – ম্যাম, এসব লিখলে আমার গ্রেড পয়েন্ট কতটা বাড়বে? আমি নিজের রাগ আর হতাশা চেপে রেখে মনে মনে বলেছি – হে ধরণী দ্বিধা হ‌ও। ওদের সামনে এক বিস্তির্ণ জীবন পরিসর পড়ে রয়েছে, অথচ স্বপ্নডানায় ভর করে সেই আকাশে পাড়ি দেবার ইচ্ছেটাই নেই।”-- পোডিয়ামে নির্বাক হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে হান্না।
    সুতীব্র হতাশায় কন্ঠস্বর অবরুদ্ধ হয়ে আসে। ক্ষণিকের বিরতিতে নিজেকে কিছুটা সামলে নেয় সে। তারপর অভিভাবকদের উদ্দেশ্য করে বলে –
    “ আমি প্রযুক্তি বিরোধী ন‌ই । মানুষের সভ্যতার অগ্রগতির পেছনে বিজ্ঞান– প্রযুক্তির প্রয়োগ ও প্রভাবকে অস্বীকার করবো কী করে? জীবনের যে সময়টাতে নিজেদের ইন্দ্রিয়গুলোকে সক্রিয় করে তোলার সময়, সেই সময়টা ওরা কাটাচ্ছে ইন্টারনেট, স্মার্টফোন কম্পিউটার কিংবা ট্যাবলেটের মতো কতগুলো যন্ত্রের সাথে। ফলে ওরা নিজেদের মতো করে ভাবতে পারছে না, অর্থময় করে তুলতে পারছে না নিজেদের চিন্তাকে কেননা ওরা চিন্তাই করতে পারছে না। নিজেরা চিন্তা করার থেকে AI এর কাছে সাহায্য চাইছে। আপনারা সচেতন হোন, কেননা এই কথাগুলো বলার জন্য আমি হান্না মারিয়া আর আপনাদের কাছে আসবো না। আপনাদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।”
    স্কুলের এসেম্বলি হলের ডায়াসের ওপর রাখা পোডিয়ামের সামনে থেকে শেষবারের মতো সরে যায় FMR High School এর ইংরেজির শিক্ষিকা হান্না মারিয়া।
     
    হান্নার গল্প এখানেই শেষ,আর আমাদের ভাবনার শুরুও ঠিক এখানেই। ভাবা বা না ভাবা সবটাই অবশ্য আমাদের ওপর নির্ভর করবে। ফিনল্যান্ড পৃথিবীর তাবড় তাবড় দেশের থেকে দশ পা এগিয়ে গিয়ে শেষে পনের পা উল্টো মুখে পিছিয়ে এসেছে। সেই দেশের শিক্ষার্থীরা সবরকম প্রযুক্তি ছেড়ে আবার ব‌ইয়ের শব্দ বন্ধে বাঁধা পড়েছে। অস্ট্রেলিয়াও এই পথে হাঁটতে শুরু করেছে। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক প্রদেশের স্কুল স্তরের পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি উপকরণের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই এখন ঘরে ফেরার পালা শুরু হয়েছে। শিক্ষায়তনে প্রযুক্তির যথেচ্ছ ব্যবহার কখনোই কাম্য হতে পারে না। খেলনা নিয়ে ব্যস্ত থাকলে মননের চর্চা করবে কবে? বেলা যে বয়ে যায়!
     
    বিধিসম্মত সতর্কীকরণ 
     
    মাননীয় পাঠক, আপনারা যাঁরা এতক্ষণ ধৈর্য্য ধরে এই নিবন্ধটি পড়লেন তাঁদের ধন্যবাদ জানাই। হান্নার কথা শুনে যদি আপনারা মনে করেন যে আমাদের শিক্ষার্থীরা এই অভিশাপ থেকে মুক্ত তাহলে আর সামান্য কিছু কথা আপনাদের শোনাবো। ব্যাঙ্গালুরুর ক্রিয়েটিভ রাইটিং এর অধ্যাপক Pranav V. S.কলেজের ছাত্রদের ধন্যবাদ জানিয়ে একটি চিঠি লিখেছিলেন।চিঠিটি পাঠানোর পর তিনি যে প্রত্যুত্তর পেয়েছিলেন তা পড়ে তিনি হান্নার মতোই হতাশ হন। কী ছিল ঐ চিঠিতে? আসুন পড়ে দেখুন 
    “ You can express your gratitude with a simple note or message. Here's a suggestion : Thank you so much, Sir, for your kind words….’
     His heart sank.
     
    একটা সাধারণ ধন্যবাদ সূচক চিঠি লিখতেও আমাদের শিক্ষার্থীদের এখন AI tools এর সাহায্য নিতে হচ্ছে? অন্ধকার ঘনায়মান। এখানেও।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • স্কুলের খাতা | ২৪ জুন ২০২৫ | ৩১১ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    লাল রঙ - Nirmalya Nag
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • অরিন | 122.56.***.*** | ২৫ জুন ২০২৫ ০৫:৩৩732171
  • আমি নিজে একজন শিক্ষক আজ বেশ কয়েক দশক হয়ে গেল। আপনার অভিব‍্যক্তি আমার কাছে স্পষ্ট শুধু নয়, আমি আপনার সহমর্মী এবং সমব‍্যাথী। আপনার লেখার আরেকটু দীর্ঘ উত্তর পরে রাখছি, তার আগে একটা লিঙ্ক শেয়ার করি। 
    আন্দ্রে কার্প‍্যাথি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগতে সুপরিচিত নাম, তো তিনি ২০২৩ এ একটি টুইট করেন, টুইটটি সে সময় পড়ে অনেকে চমকে গেছিলেন, সেখানে তাঁর বক্তব‍্য ছিল আগামী দিনগুলোতে "the hottest programming language is English", এখন সেইটা ইংরাজি কেন, যে কোন ভাষার ক্ষেত্রেই খাটে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে গভীর, ক্রিটিকাল চিন্তার প্রয়োজন আগের চেয়ে অনেক বেশী, কিন্তু তার পঠনপাঠনের পথ টেকনোলজি দিয়ে হবে না। বরং খাতা পেনসিল ধরুন। 
     
    এই আপ্ত সত‍্য রপ্ত না করলে হবে না। পরে লিখছি কেন বললাম। 
  • Somnath mukhopadhyay | ২৫ জুন ২০২৫ ২০:০২732181
  • অরিন বাবু, প্রথম মতামত জানানোর জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। এই বাজারে একজন সহমর্মী ও সমব্যথীকে পাশে পাওয়া কম কথা নয়। আমার অভিজ্ঞতা বলে এই মুহূর্তে গোটা পঠনপাঠনের বিষয়টি, বিশেষ করে কর্পোরেট হাউজ পরিচালিত স্কুলগুলোতে পঠনপাঠন এখন প্রযুক্তি নির্ভরতার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। সরকার পরিপোষিত স্কুলগুলোতে এমন ব্যবস্থা কায়েম করা সম্ভব নয়, প্রয়োজন‌ও বোধহয় নেই কেননা ইতোমধ্যেই সুইডেন ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ পঠনপাঠন ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জামের প্রয়োগ ও ব্যবহার বাতিল করে দিয়েছে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ক্রিটিক্যাল চিন্তার অবকাশ কখনোই সেভাবে তৈরি করা হয় নি। আজ ইউ টার্ন নিয়ে অন্যদিকে ছোটা খুব সহজ হয়তো হবেনা। মন্থন চলুক যদিও শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করার জন্য আগ্রহী মানুষের সংখ্যা খুব বেশি হয়তো নয়।
     
    ভালো থাকবেন সবসময়। 
  • সৌমেন রায় | 2409:40e1:100f:ae58:8000::***:*** | ২৫ জুন ২০২৫ ২১:৩৭732182
  • সত্যিই তো প্রশ্ন করতে না শিখলে  চিন্তা করতে না শিখলে, কল্পনা করতে না পারলে শিক্ষার আর রইল টা কি? শিক্ষকই বা করবেন কি ?   যন্ত্র নির্ভরতার পাশাপাশি পুরানো একটি ব্যাধি তো আছেই।নম্বর সর্বস্ব ব্যবস্থায় অভিভাবক , শিক্ষার্থী এবং বেশ কিছু শিক্ষকও পড়ার আগেই প্রথম চিন্তাটা করেন পড়ে তাৎক্ষণিক লাভ হবে কতটা ।আমাদের বিপুল জনসংখ্যার দেশে  বিপুল কম্পিটিশনের চাপ যতদিন থাকবে অর্থাৎ বিকল্প কর্মসংস্থান গুলি যতদিন না চাঙ্গা হবে ততদিন এই অবস্থার সংশোধন কোনভাবেই হবে না।তবে সরকারি বিদ্যালয়গুলিতে এখনো যন্ত্র  নির্ভর হয়ে ওঠেনি ।সেখানে অবশ্য শিক্ষাটাই ছাগলের তৃতীয় ছানা।যন্ত্র নির্ভর শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই। মাত্রাতিরিক্ত টি এল এম এর ব্যবহারও  চিন্তার গভীরতাকে খানিক ব্যাহত করে বলে মনে করি।
     
    লেখক ক্রমাগত নতুন চিন্তার খোরাক  যোগান দিয়ে যাচ্ছেন। সেজন্য তাকে অশেষ ধন্যবাদ।
  • শর্মিষ্ঠা লাহিড়ী | 2405:201:8016:d5:80ac:611c:38b3:***:*** | ২৬ জুন ২০২৫ ১৭:২৮732190
  • এতো দ্রুত পরিবর্তন শীল দুনিয়ায় প্রতিনিয়ত যে নতুন নতুন উদ্ভাবন তার সাথে তালমিল করে শিক্ষন পদ্ধতিতে ও  প্রতিনিয়ত নানারূপ পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। যদিও এই জগতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এখন আর যোগাযোগ নেই। তবুও মনে হয় শিক্ষা তো জাতির ভবিষ্যতের ভিত্তি। সেখানে উন্মুক্ত চিন্তা র অবকাশ কে কখন ই সংকুচিত করে তার চিন্ন্তন শক্তি কে যন্ত্র নির্ভর করা উচিত নয়।  এই নতুন নতুন বিষয় গুলিকে আলোক পাতের মাধ্যমে লেখক আমাদের চিন্তার পরিসর বহুগুণ বৃদ্ধি করেন। লেখক কে ধন্যবাদ।
  • অরিন | 2404:4404:4405:700:9048:7aa9:f281:***:*** | ২৮ জুন ২০২৫ ০৩:৪২732206
  • "বদলাতে হবে আমাদের বস্তাপচা সাবেকি মাইন্ড সেট।…. We need to adopt a wholly market oriented education system. …We should incorporate a broad global visionary…….।. লিটারেচার, ল্যাঙ্গুয়েজ,হিস্ট্রি, ফিলোসফি, ….. এমন সব বিষয়কে নিয়ে এগোলে হবেনা। আমাদের চাই টেকনোলজি, স্কিল ডেভেলপমেন্ট….. আর এসবের জন্য চাই ফুললি টেকনোলজি বেসড এডুকেশন।"
     
    আসলে আপনি বা আপনারা বা আমরা যা শেখাব তারই ওপর যদি পরীক্ষা নিই, তাহলে পঠনপাঠন ও পরীক্ষার ধরণও বদলাবে। যেমন ধরুণ মাল্টিপল চয়েস প্রশ্ন তৈরী করা যেমন ভীষণ কঠিন ব‍্যাপার বলে আমার মনে হয় (চারটে ভুল উত্তর আর একটা ঠিক উত্তর এমনভাবে লুকিয়ে রাখতে হবে যে জানে সে-ই ঠিক উত্তর বাছতে পারবে)। এখন প্রযুক্তির সঙ্গে শিক্ষকতাকেও তো সত‍্যি তাল মেলাতে হবে । 
    এবং সেইটা করতে গেলে আপনার প্রবন্ধের শুরুতে দেওয়া প্রশ্নের মত করে ছাত্রদের ভাবনাকে না উস্কে দিতে পারলে কিন্তু শিক্ষাদান না করাই ভাল। তাতে কোন ছাত্র খুশী হল বা হল না, কে ভাবল যে পরীক্ষায় আসবে না বলে তৈরী করব না, ভেবে লাভ নেই, তবে এই শ্রেণীর ছাত্রও কালক্রমে লাইনে আসবে।  
    আজকালকার দিনে vibe coding বলে একটা ব‍্যাপার চালু হয়েছে, তাতে আপনি মেশিনকে হুকুম করলে সে আপনাকে কোড লিখে দেবে। এতে করে আগেকারদিনে যেমন কম্পিউটার প্রোগ্রাম লিখতে পারা লোকেরা দুপয়সা করতে পারত তার সুযোগ কমছে। এখন যারা "ভাবতে" পটু, অমন লোকের চাহিদা দুনিয়া জুড়ে বাড়তে চলেছে। অতএব টেকনোলজির ওপর জোর না দিয়ে বরং তার অন্তরনিহিত বিজ্ঞানের ওপর জোর দেওয়াটাই সঙ্গত বলে আমার মনে হয়। 
  • অরিনের ছাত্তর | 51.158.***.*** | ২৮ জুন ২০২৫ ১৯:৩৩732219
  • হ্যা অরিনদা ক্লাসে আমাদের হাবিজাবি নানারকম হ্যাজ দেন বটে, তবে সেসব আমরা কাটিয়ে দিই। ওসব শুনলে গ্র্যাজুয়েশনের পর লামা সেজে নিউজিল্যান্ডের দ্বীপে দ্বীপে কিউই পাখি চড়াতে হোবে কিংবা বিপাসনার আশ্রম খুলতে হোবে। লেখাটায় বুড়োহাবরাদের বিলাপ ছাড়া পাতি ভুল আছে অনেক। যেমন মাস্টারমশাইকে বলার E. M. Foster বলে কেউ নেই, লেখকের নাম E. M. Forster. এইজন্যই আমাদের অরিন্দা দক্ষিণ লন্ডনের ইংরিজি শেখার ওপর জোর দেন। শিখে নেবেন'খন।
  • Somnath mukhopadhyay | ২৮ জুন ২০২৫ ১৯:৫২732220
  • মেরেছো কলসি কানা তাই বলে কি....
  • #+: | 2405:201:8000:b11b:fc4e:984b:5233:***:*** | ২৮ জুন ২০২৫ ২১:১৯732222
  • লেখাটা পড়লাম। যদি ভুল না বলি তাহলে এই লেখাটি শিক্ষা নিয়ে লেখকের পর্যায়ক্রমে তৃতীয় লেখা। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয় সমাজকে, শিক্ষা সেই নিয়মের ব্যতিক্রম নয়। পড়াশোনা ও শিক্ষা কখনোই এক নয়। পড়াশোনা হলো প্রক্রিয়া,আর শিক্ষা হলো তার ফল যা মানুষের চিরন্তন সম্পদ। E.M. Forster এর মতো লেখকেরা প্রাগদর্শী। নিজেদের সময়ের বৃত্তে বসেই তাঁরা আগামী সময়ের সমাজের চলনগতি অনুধাবন করতে পারেন। সুতরাং তাঁর লেখার সারবত্তা আছে বৈকি। প্রযুক্তি একটা প্রকৌশল মাত্র যা বোঝাবুঝির বিষয়টিকে সাহায্য করে একটা স্তর পর্যন্ত। সবটাই যদি প্রযুক্তির পক্ষীরাজের পিঠে চড়ে পার হতে হয় তাহলে চরণস্খলনের সম্ভাবনা থেকেই যায়। শিক্ষাকে যন্ত্রশিল্পে পরিবর্তন করলে শ্রমণের কাজটুকুও জুটবে না।
    এমন লেখা আরও চাই।
  • Sugata Bhattacharjee | ৩০ জুন ২০২৫ ০২:৩০732239
  • সত্যিই খুব চিন্তার বিষয়। স্কুলজীবনে মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে, নিউরনগুলোর মধ্যে নতুন সংযোগ গড়ে ওঠে। আর তার ফলে চিন্তা, বুদ্ধি, প্রয়োগ এর ক্ষমতা বাড়ে। অতিরিক্ত প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়লে স্বাভাবিক বিকাশ অবরুদ্ধ হবে। এই বিষয়ে ইদানিং গবেষণায়ও শুরু হয়েছে। তাই স্কুল এর শিক্ষক শিক্ষিকা আর অভিভাবক উভয় পক্ষকে দায়িত্বশীল হতে হবে, পড়ুয়ারা যাতে মোবাইল বা প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে না পড়ে টা নিশ্চিত করতে হবে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন