এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  রাজনীতি

  • আরজি কর কাণ্ড  - চার্জশিটে কী আছে পুরোটা পড়ুন 

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | রাজনীতি | ০৯ অক্টোবর ২০২৪ | ১১৮৬০ বার পঠিত | রেটিং ৪.৮ (৪ জন)
  • যে চার্জশিট সিবিআই এর তরফ থেকে দাখিল করা হয়েছে, এটা তার সহজবোধ্য সারসংক্ষেপ। পরিশিষ্টে বাজেয়াপ্ত জিনিস ইত্যাদির বহু তালিকা থাকে, সেটা বাদ দেওয়া হয়েছে। ভূমিকাতেও একই রকম নানা নাম ইত্যাদি থাকে, তাও বাদ। মাঝের অংশটুকু, যেখানে আসল বিবৃতি আছে, সেটা পুরোটাই আছে। কিন্তু হুবহু না। পয়েন্টগুলো হুবহু আছে, যদিও ক্রমিক সংখ্যাটা আসল চার্জশিটে ১৬ থেকে শুরু, এখানে সেটা ১। এছাড়াও লোকজনের লম্বা পদমর্যাদা  ইত্যাদির বিবরণ বাদ। আইনী ধারা গুলো বাদ। পড়তে যাতে সুবিধে হয়। লম্বা প্যারাগ্রাফের সারসংক্ষেপও করা হয়েছে। মোট কথা হচ্ছে, পড়ে বুঝবেন ঠিকই, কিন্তু আসল আইনী পরিভাষা দেখতে গেলে এবং সঠিকভাবে পুরোটা জানতে গেলে আসল নথিটা দেখতে হবে। সেটাও পরে এর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হবে। পড়তে গিয়ে কিছু তথ্যপ্রমাদ নজরে পড়েছে। সঞ্জয় রায়ের জন্মসাল দু জায়গায় দুরকম আছে। একজন ডাক্তারের নামের বানান ভুল আছে। ব্যাকরণ ভুল ধরছিনা। কিন্তু এই দুটো জরুরি বিষয়ে অমনোযোগের চিহ্ন।  

    চার্জশিট (১৬.১ থেকে)  
    .....
    ১।  হাইকোর্টের আদেশে এই তদন্ত হচ্ছে। 
     
    ২। নির্যাতিতা  ৮ তারিখ রাত্রে ২৪ ঘন্টার অনকল নাইট ডিউটিতে হাসপাতালে ছিলেন। রাত ১১ঃ১৫ তে তাঁর মায়ের সঙ্গে ফোনে শেষ কথা হয়। পরদিন ৯ তারিখ সকাল ১১ঃ১৫ নাগাদ নির্যাতিতার বাবা হাসপাতাল থেকে ফোন পান, মেয়ে অসুস্থ বলে। তিনি দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছন এবং তারপর তাঁকে তিন তলার সেমিনার হলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নানা পুলিশ অফিসার, ডাক্তাররা ছিলেন। তিনি দেখেন রক্তের মধ্যে মেয়ের মৃতদেহ পড়ে আছে। নিম্নাঙ্গের পোশাক পাশে পড়ে। মুখ থেকে রক্ত বেরিয়ে গলায় পড়েছে। চোখে রক্ত এবং ক্ষত ছিল। ঘাড়ে, গালে ক্ষত ছিল। নিম্নাঙ্গে রক্ত দেখা যাচ্ছিল। তিনি তদন্ত চান এবং সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী করেন। 
     
    ৩। হাইকোর্টের নির্দেশানুসারে, ১৩ তারিখে পুলিশ কিছু নথি সিবিআইকে দেয়। ১৪ তারিখ সঞ্জয় রায়কে এবং বাকি সমস্ত জিনিস সিবিআইকে দেওয়া হয়। সেগুলো খুঁটিয়ে দেখে যা পাওয়া গেছেঃ 
    ক। টালা থানা ৯ তারিখে সেনিমার রুমে অচৈতন্য অবস্থায় একটি অর্ধনগ্ন দেহ পড়ে থাকার খবর পায়। পুলিশ টিম তদন্তের জন্য ক্রাইম সিনে যায়। 
    খ। ডাঃ পলি সমাদ্দার "মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে" ঘোষণা করেন এবং ময়নাতদন্তের জন্য রেফার করেন। ডেথ সার্টিফেকেটও তিনিই দেন। 
    গ। শিয়ালদহ কোর্টের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪ঃ২০ থেকে ৪ঃ৪০ পর্যন্ত ভিডিওগ্রাফি সহ সুরতহাল করেন। 
    ঘ। ডাক্তারদের একটি বোর্ড, ভিডিওগ্রাফি সহ ময়নাতদন্ত করে। 
    ঙ। মৃতার বাবা টালা থানায় জিডি করেন। 
    চ। পরের দিন, ১০ তারিখ, সকাল ১০ টায় সঞ্জয় রায়কে গ্রেপ্তার করা হয়। 
    ছ। ভিসেরা, রক্ত ইত্যাদি কলকাতার সেন্ট্রাল ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয় ১৩ তারিখ। বাকিগুলো পাঠানো হয় ১৪ তারিখ। 

     
    সিবিআই এর তদন্ত। 

    ৪। নির্যাতিতা বাবা-মার একমাত্র সন্তান। তিনি দ্বিতীয় বর্ষের পিজি কোর্সে ছিলেন। এমডি করছিলেন ডাঃ সুমিত রায় তপাদারের কাছে। 
     
    ৫। নির্যাতিতা ৮ তারিখ সকাল ৮ঃ১০ এ নিজের গাড়িতে, ড্রাইভার স্নেহাশিস ঘোষের সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরোন। পরের দিন পর্যন্ত ডিউটি ছিল। দিনের বেলা ওপিডি এবং এমার্জেন্সি ডিউটি করেন। রাত ১০ঃ১৫ তে তিনি পাঁচজনের জন্য জোমাটোতে খাবার অর্ডার করেন। ডাঃ সৌমিত্র, ডাঃ অর্ক সেন, ডাঃ শুভদীপ, ডাঃ গোলাম আজম। এঁরা নির্যাতিতার মোবাইলে অলিম্পিকের জ্যাভেলিন থ্রো দেখতে দেখতে সেমিনার রুমের ডায়াসে বসে ডিনার করেন রাত ১২ঃ০০ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত ( তখন ৯ তারিখ হয়ে গেছে)। খাওয়া শেষ হলে বাকিরা কাজে চলে যান, নির্যাতিতা ডায়াসে রাখা গদিতে বিশ্রাম নেবেন বলে থেকে যান। তারপর ডাঃ সৌমিত্র এবং ডাঃ অর্ক সেন স্টাডি বা স্লিপ রুমে বিশ্রাম নেন। ইনটার্ন শুভদীপ মহাপাত্র ইন্টার্ন রুমে ঘুমোন। ডাঃ গোলাম আজম ইমার্জেন্সি ডিউটির জন্য ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে চলে যান। 
     
    ৬। ৯ তারিখ সকাল ৯ঃ৩০-৩৫ নাগাদ ডাঃ সৌমিত্র রায় ডিউটিতে দেখতে না পেয়ে নির্যাতিতাকে খুঁজতে সেমিনার হলে যান। ঢুকে দেখেন নির্যাতিতা খুবই অদ্ভুতভাবে নগ্ন পায়ে গদির উপর শুয়ে। বেরিয়ে এসে তিনি ডাঃ অর্ক সেনকে জানান। দেহ দেখে আরও কিছু মহিলা পিজিটি, ডাঃ প্রিয়া, ডাঃ ভেনিলা, যাঁরা সেসময় ছিলেন, তাঁদের জানানো হয়, কী হয়েছে দেখার জন্য। দেখে, এই দুজন ডাঃ সুমিত রায় তপাদারকে জানান। তিনি ছুটে আসেন এবং দেখেন নির্যাতিত মারা গেছেন, কারণ চোখ আধখান খোলা ছিল, ডায়ালেটেড এবং স্থির হয়ে গিয়েছিল। তাঁর নির্দেশে ডাঃ পূজা বেডশিট দিয়ে শরীর ঢেকে দেন। তিনি তৎক্ষণাৎ প্রিন্সিপাল সহ কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় পুলিশকে জানান। আউটপোস্টের এএসআই বাসুদেব কুন্ডু ক্রাইম সিনে আসেন। টালা থানাকে জানান। তারপর টালা থানার অফিসাররা ঘটনাস্থলে পৌঁছন। 
     
    ৭। অ্যাসিস্টেন্ট সুপার সুচরিতা সরকারের কাছ থেকে খবর পেয়ে বাবা-মা বাড়ি থেকে বেরোন, নিজেদের গাড়িতে, ড্রাইভার স্নেহাশিস ঘোষকে নিয়ে। হাসপাতালে পৌঁছন ১২ঃ১৫ নাগাদ। ততক্ষণে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ এবং সায়েন্টিফিক উইং ফিঙ্গারপ্রিন্ট এক্সপার্ট, ফোটোগ্রাফার সহ পৌঁছে গেছে। 
     
    ৮। ডাঃ পলি সমাদ্দার দেহের পেরিফেরাল ইনস্পেকশন করেন। ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি করেন ১২ঃ৪৪ এ। ইনজুরি রিপোর্ট বানান ১ঃ ৪৭ এ। টালা থানার এসআই এসকে ঝাকে দেওয়া হয় ১ঃ৫০ নাগাদ। সার্টিফিকেটে মৃত্যুর চিহ্নগুলি লেখা আছে, যেমন হার্টবিট বন্ধ, চোখ ডায়ালেটেড, ইত্যাদি। 
     
    ৯। বাবা-মা এবং প্রতিবাদকারী ছাত্রদের অনুরোধে টালা থানার এসআই অভিজিৎ মন্ডল এসিজেএম শিয়ালদহের কাছে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে সুরতহালের জন্য একটি চিঠি পাঠান। চিটিটি তৈরি করেছিলেন এস কে ঝা। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুরতহাল করেন ৪ঃ২০ থেকে ৪ঃ৪০ পর্যন্ত। উপস্থিত ছিলেন ডাঃ দিয়াসিনী রায়, ডাঃ অন্তরা বর্মন, এবং নির্যাতিতার মা। রিপোর্টে যে ক্ষত গুলি লেখা হয়েছেঃ "১। দুই চোখ থেকে রক্তপাত। ২। মুখ থেকে রক্তপাত। ৩। মুখ এবং নখে আঘাত। ৪। যোনি থেকে রক্তপাত। ৫। বাঁ পায়ে আঘাত। ৬। পেটে আঘাত। ৭। বাঁ গোড়ালিতে আঘাত। ৮। ঘাড়ে আঘাত। ৯। ডান হাতের অনামিকায় আঘাত। ১০। ঠোঁটের উপর আঘাত।" 
     
    ১০। ডাঃ অপূর্ব বিশ্বাস, ডাঃ মলি মুখার্জি এবং ডাঃ রিনা দাসের মেডিকাল বোর্ড ৬ঃ১০ থেকে ৭ঃ১০ পর্যন্ত ভিডিওগ্রাফি সহ ময়নাতদন্ত করে। রিপোর্ট অনুযায়ী, হাইমেনের ছিঁড়ে যাওয়া, রক্তপাত সহ, শরীরের নানা অংশের আঘাত মৃত্যু পূর্ববর্তী। আরও বলা হয়,  "Death was due to effects of manual strangulation assosiated with smoothering as noted above, Manner of death - Homicidal. There is medical evidence of forceful penetration/insertion, in her genetalia - possibility of sexual assult. " ময়নাতদন্তের সময় ভিসেরা, রক্ত, যোনি সোয়াব, নখ, চুল স্তনবৃন্ত ইত্যাদি নানা জায়গার সোয়াব নেওয়া হয়েছে এবং পুলিশ আধিকারিকদের হাতে দেওয়া হয়। 
     
    ১১। এফএসএল মোবাইল ইউনিটও ঘ্টনাস্থল পরিদর্শন করে। কী কী সিজ করতে হবে চিহ্নিত করে। সিজার মেমো বানায় রাত ৮ঃ৩০ থেকে ১০ঃ৪৫ পর্যন্ত। এসআই সুব্রত চ্যাটার্জি টালা থানায় ফেরেন ১১ঃ৩০ এ। মালখানায় সিজ কর জিনিস জমা দেন। ইউডি কেস ৮৬১ রেজিস্টার করেন এবং রিপোর্ট জমা দেন।
     
    ১২। কলকাতা পুলিশের সিট তৈরি করা হয়, তারা ৯ তারিখ রাত্রেই দায়িত্ব নেয়। 
     
    ১৩। ৯ তারিখ রাত ১১ঃ৩০ নাগাদ সঞ্জয় রায়কে ডাকা হয়। পরে তাকে লালবাজারের ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের উইমেন্স গ্রিভান্স সেলে নিয়ে যাওয়া হয়, পরের দিন সকাল ৮ঃ০০ টায় জেরা করা হবে বলে। পরদিন ১০ তারিখ সকাল ১০ঃ০০ টায় তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সার্চ করা হয়। মোবাইল সিজ করা হয়। ১০ঃ৩৯ এ এসএসকেএমএ ডাক্তারি পরীক্ষা হয়। শরীর থেকে নানা স্যাম্পল নেওয়া হয়। আদালতে তোলা হয়, ২৩ তারিখ পর্যন্ত হেফাজতে নেওয়া হয়। পরার জিনিস এবং পায়ে পরার জিনিসও তার বাসস্থান থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়। 
     
    ১৪। ডাঃ বিশ্বনাথ সরেন তাঁর মেডিকাল রিপোর্টে জানান, শরীরে ৫ টা আঘাতের চিহ্ন আছে। সেগুলো ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা আগের (পরীক্ষার সময় ১২ঃ০০, তারিখ ১০)। অভিযুক্ত যৌন সংসর্গে  অক্ষম, এরকম কিছুও পাওয়া যায়নি। 
     
    ১৫। অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় শভূনাথ পণ্ডিত রোডের স্থায়ী বাসিন্দা। তিনবার বিয়ে করেছেন। দুজন ছেড়ে চলে গেছে, তৃতীয়জন ক্যান্সারে মারা যান। সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপে কাজ করেছেন। তারপর বডিগার্ড লাইনে। বক্সিং অ্যাসোসিয়েশনের দুটো সার্টিফিকেট আছে। 
     
    ১৬। তদন্তে আরও দেখা গেছে, অভিযুক্ত সল্টলেকের ক্যাপ ক্যাম্পের ব্যারাকে থাকতেন। পুলিশ এবং তাঁদের পরিবারের সুবিধের জন্য আরজিকরে তাঁকে নিয়োগ করা হয়েছিল। তাঁকে একট মোটর সাইকেলও দেওয়া হয়েছিল, যেটা লালবাজারের ঠিকানায় পুলিশ কমিশনারের নামে, এবং দেওয়া হয়েছিল ওয়েলফেয়ার সেলকে। তিনি রিপোর্ট করতেন এএসআই অনুপ দত্তকে। 
     
    ১৭। ৮ তারিখ, ঘটনার দিন সঞ্জয় রায়, আরেকজন সিভিক ভলান্টিয়ার সৌরভ ভট্টাচার্যর সঙ্গে ওই মোটর সাইকেলে চড়ে ব্যারাক থেকে বেরোন। উদ্দেশ্য ছিল সৌরভের তুতো-ভাই সাগর ভট্টাচার্যর চিকিৎসায় সাহায্য করা, যিনি আরজি করে ভর্তি ছিলেন। তারপর তাঁরা দুপুর ২ঃ৪৫ এ শোভাবাজারের এলাহাবাদ ব্যাঙ্কে যান, অনুপ দত্তের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিতে। ব্যাংক বন্ধ ছিল। টাকা জমা দেওয়া যায়নি। তারপর তাঁরা মদ কেনেন এবং খান। সঞ্জয় আরজিকরে এবং সৌরভ ব্যারাকে ফিরে যান। সৌরভ আবার আরজি করে আসেন রাত ১০ঃ৪৫ নাগাদ, সঞ্জয়ের অনুরোধে। তারপর তাঁরা দুজনেই হাসপাতাল থেকে বেরোন, খাবার এবং মদ খান, চেতলার পতিতাপল্লীতে যান। সৌরভ এক যৌনকর্মীর ঘরে ঢোকেন। কিন্তু সঞ্জয় যৌনতায় লিপ্ত হননি, শুধু বিয়ার খান। দুজনেই ৩ঃ২০ ( ৯ তারিখ ভোর) নাগাদ আরজি করে পৌঁছন। সৌরভ ব্যারাকে ফিরে যান। সঞ্জয় জনৈক শুভ দের অপারেশনের ব্যাপারে খোঁজ নিতে দোতলায় যান। কিন্তু তাঁর পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। সঞ্জয় তখন ইমার্জেন্সি বিল্ডিং এর পাঁচ তলায় যান। তারপর ৪ তলায় পৌঁছন সকাল ৪ঃ০৩ এ, এবং সেমিনার রুমে ঢোকেন, যেখানে নির্যাতিতা একা ঘুমোচ্ছিলেন। সঞ্জয় সেখানেই খুন এবং ধর্ষণ করেন, এবং ৪ তলা থেকে বেরিয়ে আসেন ৪ঃ৩২ এ। 
     
    ১৮। আরজিকরে ঢোকার আগে সঞ্জয়ের গতিবিধি দেখার জন্য কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের কাছ থেকে বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে ব্যাপারটা নিশ্চিত করা হয়েছে। 
    ১৯-২০। আরজি করের বিভিন্ন জায়গার সিসিটিভি ফুটেজে সঞ্জয়ের উপস্থিতি চিহ্নিত করা গেছে। তার বিস্তারিত বিবরণ আছে। সেমিনার রুমের দিকে যাবার সময় সঞ্জয়ের গলায় একটা ব্লুটুথ নেকব্যান্ড ছিল। বেরোনোর সময় ছিলনা। পুলিশ একটা অনুরূপ নেকব্যান্ড ক্রাইম সিনে উদ্ধার করে ওইদিন ( ৯ তারিখ)। 
     
    ২১। সঞ্জয়ের মোবাইল ফোনের সিএএফ এবং সিডিআর সংগ্রহ করা হয়েছে। বিশ্লেষণের পর দেখা গেছে, হাসপাতালে উপস্থিতির তথ্য তার সঙ্গেও মিলে যাচ্ছে। 
     
    ২২। তদন্তের সময় সিএফএসল, এইমস, নিউ দিল্লি, সিপিডাব্লুডির প্রযুক্তিবিদ এদের নিয়ে একটি সিবিআই টিম ঘটনাস্থলে যায় ১৪ তারিখে। ভিডিওগ্রাফি করা হয়। ডাঃ  সুমিত রায় তপাদারের দেখানো অনুসরণ করে ক্রাইম সিন, এমার্জেন্সি বিল্ডিং এর থ্রিডি ভিডিওগ্রাফিও করা হয়।
     
    ২৩। ১৪ তারিখে ক্রাইম সিন থেকে নেওয়া তথ্য, আরজিকরের নানা জায়গার ডিভিআর, অভিযুক্তর ফ্রেশ নানা স্যাম্পল, ময়নাতনন্তের সময় নেওয়া নির্যাতিতার নানা নমুনা, নির্যাতিতার মোবাইল ল্যাপটপ, অভিযুক্তের মোবাইল, পুলিশের বাজেয়াপ্ত করা ব্লুটুথ নেকব্যান্ড,  সবই সিএফএসএল কলকাতা, দিল্লি এবং চণ্ডীপড়ে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। তাতে যা ফলাফল পাওয়া যায়, সংক্ষেপেঃ 
    ক। অভিযুক্তর মূত্রনালীতে বীর্য আছে। সেটা অভিযুক্তের। 
    খ। স্তনবৃন্তে লালা আছে। সেটা অভিযুক্তর। 
    গ। ক্রাইম সিন থেকে পাওয় চুল। অভিযুক্তর। 
    ঘ। অভিযুক্তর মোবাইল এবং ঘটনাস্থলের ব্লু টুথ। পেয়ারিং হয়েছে। 
    ( আরও কয়েকটা আছে। কিন্তু সেগুলো জোর করার প্রমাণ, তাই বাদ দিলাম) 
     
    ২৪। তদন্তের সময় এইমস কল্যাণীর এফমটি হেড এবং বিশেষজ্ঞ বোর্ড তৈরি করেছিলেন, যারা সুরতহাল এবং ময়নাতদন্তের সময়ের ভিডিওগ্রাফি পরীক্ষা করে দেখবেন এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ভিডিওগ্রাফির সঙ্গে মিলছে কিনা এই নিয়ে মতামত দেবেন। তাঁদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, "দেখা গেছে, উল্লিখিত সুরতহাল প্রক্রিয়া এবং ময়নাতন্তের সময়ের ভিডিওগ্রাফি ময়নাতদন্তের রিপোর্টের সঙ্গে সুসমঞ্জস" । 
     
    ২৫। সিবিআই এর অনুরোধে ডিরেক্টর জেনারাল অফ হেলথ সার্ভিস মেডিকো-লিগাল মতামত দেবার জন্য, অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ মেডিকাল বোর্ড গঠন করেন, যাতে এইমস দিল্লি, রামম্নোহর লোহিয়া, সফদরজঙ সহ দিল্লির অনেকগুলি প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞরা আছেন। এইমসের ফরেনসিক মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডাঃ আদর্শ কুমার এর চেয়ারম্যান। এঁরা একটি অন্তর্বর্তীকালীন রিপোর্ট দিয়েছেন। তাতে যা আছে, সংক্ষেপেঃ 
    ক। মৃত্যুর কারণ বলপ্রয়োগে শ্বাসরোধ ( অ্যাসফিক্সিয়া অ্যাজ আ কম্বাইনড এফেক্ট অফ থ্রটলিং - ম্যানুয়াল স্ট্র‌্যাঙ্গুলেশন )। 
    খ। সারা শরীরে রিগর মরটিস ছিল। তার অর্থ ময়নাতদন্তের ১২ থেকে ১৮ ঘন্টা আগে মৃত্যু হয়েছে। 
    গ। হাইমেনের আঘাত দেখাচ্ছে, যে নির্যাতিতার উপর বলপূর্বক যৌন নির্যাতন এবং অনুপ্রবেশ হয়েছিল। এবং স্তনবৃন্তের সোয়াব দেখাচ্ছে লালার উপস্থিতি। ডিএনএ প্রোফাইলিং এ যেটা সঞ্জয় রাইয়ের বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। 
    ঘ। সঞ্জয় রায়ের শরীরের পাঁচটি ক্ষতই মৃতার প্রতিরোধের সম্ভাবনার সঙ্গে সুসমঞ্জস। 
    ঙ। সুরতহাল ময়নাতদন্তের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। 
    ২৬। সঞ্জয় রায় ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে নারকো টেস্টে সম্মতি দেননি। 
    ২৭। এই সমস্ত তথ্যের  ভিত্তিতে সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে যা সাক্ষ্যপ্রমাণ আছে, সংক্ষেপেঃ 
    ক। ঘটনাস্থলের রাতে তাঁর উপস্থিতি সিসিটিভি ফুটেজ দিয়ে প্রমাণিত। 
    খ। আরজিকরে তাঁর উপস্থিতি  মোবাইল লোকেশনের ভিত্তিতেও প্রমাণিত। 
    গ। তাঁর ডিএনএ নির্যাতিতার মৃতদেহে পাওয়া গেছে। 
    ঘ। অভিযুক্তের জিন্স এবং জুতোতে নির্যাতিতার রক্ত পাওয়া গেছে। 
    ঙ। ঘটনাস্থলে পাওয়া ছোটো চুল অভিযুক্তের সঙ্গে মেলে। 
    চ। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ব্লুটুথ ডিভাইস অভিযুক্তর মোবাইলের সঙ্গে পেয়ার করে। ব্লুটুথ নিয়ে অভিযুক্তকে সিসিটিভিতে ঢুকতে দেখা গিয়েছিল, বেরিয়েছিলেন ব্লু টুথ ছাড়া। 
    ছ। অভিযুক্তর শরীরে যে ক্ষত আছে, ডাক্তারি পরীক্ষানুযায়ী তা নির্যাতিতার মৃত্যুর সময়ে হতে কোনো বাধা নেই।
    জ। এই আঘাতগুলি নির্যাতিতার প্রতিরোধ বা প্রত্যাঘাতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। 
    ঝ। মেডিকাল রিপোর্ট অনুযায়ী অভিযুক্তর যৌন সংসর্গে কোনো সমস্যা জানা যায়নি। 
    ঞ। নির্যাতিতার প্যান্টিতে যে সেলাই ছিঁড়ে গেছে, সেটা জোর করে নামানোর জন্য হতে পারে ( ফরেনসিক রিপোর্ট অনুযায়ী) 
    ট। কুর্তির ক্ষেত্রেও একই রকম দেখা যাচ্ছে। 
     
    ২৮। তাই, এই অপরাধ ঘটানোয় সঞ্জয় রায়ের জড়িত থাকা খুব স্পষ্ট করে দেখা যাচ্ছে। 

    ২৯। অভিজিৎ মণ্ডল এবং সন্দীপ ঘোষের ক্ষেত্রে, ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া বা সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাটের জন্য কিছু করা বা কিছু না-করা  সামনে এসেছে। দুজনকেই প্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বিচারবিভাগীয় হেফাজতে আছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে থাকার বিষয়ে তদন্ত, যার সঙ্গে এই অপরাধের ব্যাপারে অন্য যদি আদৌ আর কেউ থেকে থাকে, সেই ব্যাপারে গভীর তদন্তও জড়িত, সে তদন্ত চলছে। 

    ৩০। তাই, অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে এই অপরাধ ঘটানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং আইনানুযায়ী বিচার করা হোক।  
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ০৯ অক্টোবর ২০২৪ | ১১৮৬০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:b4de:5c94:66a4:***:*** | ০৯ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:০৬538334
  • পুরোটা পড়লাম। সৈকতবাবুকে ধন্যবাদ। 
     
    আর এই পুরো উদ্যোগটার জন্যও ধন্যবাদ, বিশেষ করে যেভাবে গুজব ছড়ানো হয়েছে আর হচ্ছে তার বিরুদ্ধে এই টই এর সিরিজটা খুব ভালো একটা কাজ হচ্ছে। পরে কেউ চাইলে এটা নিয়ে কেস স্টাডিও করতে পারেন :-)
  • চন্দন চক্রবর্তী | 2409:4061:2dc4:3f77::5aca:***:*** | ০৯ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:৩৮538335
    • সুন্দর 
  • অমিতাভ সেন | 203.163.***.*** | ০৯ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:৫১538336
  • সত্যি সত্যি আপনি দারুন একটা কাজ করে চলেছেন।
  • সমিত ভট্টাচার্য। | 103.***.*** | ০৯ অক্টোবর ২০২৪ ১১:২০538341
  •  অনেক ভুল ভাবনার অবসান হল........ 
  • শিবাজী | 2409:40e1:10c3:4521:b4ee:7eff:fe64:***:*** | ০৯ অক্টোবর ২০২৪ ১১:৩৩538342
  • খুব সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
    ধন্যবাদ আপনাকে জানাই 
  • তিমির দাশগুপ্ত | 2405:201:8015:f097:48a5:da3d:4d75:***:*** | ০৯ অক্টোবর ২০২৪ ১১:৪৭538343
  • খুব প্রাঞ্জল ভাবে বোঝানোর জন্য ধন্যবাদ। 
  • Anurag | 2402:3a80:437c:408f:11b5:11ed:1b37:***:*** | ০৯ অক্টোবর ২০২৪ ১১:৫৮538344
  • প্রশ্ন যে এতবড়ো একটা ব্লুটুথ উদ্ধারে এতো সময় লেগেছিলো কেন পুলিশের??? 
    এতজন মিলে ক্রাইম সীনে ঢুকেপড়লে ​​​​​​​ফুটপ্রিন্ট ​​​​​​​তো ​​​​​​​সব ​​​​​​​উড়েগেলো ​​​​​​​?
  • ওয়াসিম ইউনুস মল্লিক | 2409:40e1:1006:72f1:1b1e:95ac:31db:***:*** | ০৯ অক্টোবর ২০২৪ ১২:০১538345
  • অনুবাদের জন্য ধন্যবাদ ।
    সুন্দর বিশ্লেষণও করেন আপনি।
  • পলাশ সেন | 103.52.***.*** | ০৯ অক্টোবর ২০২৪ ১৪:১২538350
  • লেখাটা পড়ে অনেক ধাঁধার সমাধান হলো। সহজ ভাষায় উপস্থাপন করার জন্য ধন্যবাদ। অনেক গুজব আসল সত্য ঢেকে দিচ্ছিল গত কয়েকদিন ধরে।
  • Jamir Hossain | 2402:3a80:199e:62eb:8bd0:dc8:9546:***:*** | ০৯ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:০৫538352
  • আরজি কর কাণ্ড  - সিবিআইয়ের চার্জশিট টা সঠিক এবং সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এটাই হবে সেটা অনেক আগেই বুঝেছিলাম আর যারা ফেক নিউজ প্রচার ও প্রসার করেছে তাদের মুখে ঝামা ঘসে দিলো সিবিআইয়ের এই চার্জশিট।দ্রুত অপরাধী সঞ্জয় রাইয়ের শাস্তি চাই। কলকাতা পুলিশ কে অসংখ্য ধন্যবাদ। আন্দোলনকারীদের কুর্নিশ জানাই এবং আন্দোলনের নামে বজ্জাতিকারী ফেক আন্দোলনকারীদের ধিক্কার জানাই। ফেক নিউজকারীদের ধিক্কার জানাই।
  • PRABIRJIT SARKAR | ০৯ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:১৮538353
  • এই অংশটা না পড়ে বা না বুঝে কপু ক্লিন চিট পেল? 'অভিজিৎ মণ্ডল এবং সন্দীপ ঘোষের ক্ষেত্রে, ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া বা সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাটের জন্য কিছু করা বা কিছু না-করা  সামনে এসেছে। দুজনকেই প্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বিচারবিভাগীয় হেফাজতে আছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে থাকার বিষয়ে তদন্ত, যার সঙ্গে এই অপরাধের ব্যাপারে অন্য যদি আদৌ আর কেউ থেকে থাকে, সেই ব্যাপারে গভীর তদন্তও জড়িত, সে তদন্ত চলছে।'
  • Subhadeep Ghosh | ০৯ অক্টোবর ২০২৪ ১৭:০২538354
  • এই ভাবে গোটা প্রক্রিয়াটিকে বাংলায় তর্জমা করা এবং পর্যায়ক্রমে সমস্ত ঘটনাবলী নিয়ে লিখে যাওয়া, স্রেফ ভাবা যায় না! খুব জরুরী ও অসামান্য একটি কাজ হচ্ছে এটা। সৈকতদাকে কুর্নিশ। 
  • মৌমিতা দত্ত রায় | 103.172.***.*** | ০৯ অক্টোবর ২০২৪ ১৭:২২538357
  • একা একটা লোক এতকিছু করে গেলো, আর আশেপাশে কেই একটা শব্দ শুনতে পেলো না? কি করে সম্ভব! 
  • Runu Sur | 2409:40e0:22:aa94:8000::***:*** | ০৯ অক্টোবর ২০২৪ ১৮:৩০538360
  • আপনি এতো সহজ করে তর্জমা করলেন বলেই সকলেই সহজে পুরো ঘটনা জানতে পারলো
  • r2h | 165.***.*** | ০৯ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:০৬538361
  • কী বিভৎসঃ(

    কী ভয়াবহ, আতংকজনক, আর তার থেকেও পরিতাপের বিষয়, এরকম, বা এর থেকেও ভয়াবহ ট্রমার মধ্য দিয়ে মানুষ খুন ও নির্যাতিত হচ্ছে প্রতিদিন, প্রতিকারহীন।

    আমার একান্ত আশা, রিক্লেম দ্য নাইট বলে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা গতি পাক, সচেতনতা জাগাক, ফলপ্রসূ হোক।

    খুবই ডিপ্রেসিং। ফ্যাক্ট ফাইন্ডিঙের এই উদ্যোগের জন্য কোন প্রশংসাই যথেষ্ট না, কিন্তু এই উদ্যোগ যে নিতে হলো, এরকম একটা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে - সেটাই অতীব দুঃখের।
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:7469:c976:d94e:***:*** | ০৯ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:৩৩538362
  • "রিক্লেম দ্য নাইট বলে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা গতি পাক, সচেতনতা জাগাক, ফলপ্রসূ হোক" - একদম। ভীষনভাবে চাইছি এই আন্দোলান আস্তে আস্তে বাড়ুক। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন ঠিক আছে, কিন্তু শুধু সেটুকুর মধ্যে আটকে না থেকে অনেক বেশী ছড়িয়ে পড়ুক। 
  • Parimal Tripathy | ০৯ অক্টোবর ২০২৪ ২২:৫২538366
  • খুউব সুন্দর ভাবে তর্জমা করেছেন। এটাই হবে সেটা সিংহভাগ বাংলার মানুষ জানেন। যারা জানেন না তারাও জানেন, কিন্তু হল্লা না করলে রাজনৈতিক ভাবে ভেসে থাকা যাবে না। যাইহোক যারা নোবল প্রফেশনে আছেন, তাদের অনেক কিছুর উর্দ্ধে থাকতে হয়।  চিকিৎসক কুলের একটা অংশ সেটা না করায় কষ্ট হয় বৈকি।
  • @All | 51.159.***.*** | ১০ অক্টোবর ২০২৪ ০১:৪৩538375
  • এই পোস্টে অনুবাদ ও চার্জশিট সংক্রান্ত কিছু ইন্টারেস্টিং অবজার্ভেশন। মূলত কলকাতা পুলিশের সঙ্গে রিলেটেড অংশে মূল রিপোর্টের প্রতি অনুগত থাকা যায়নি। 'অশ্বত্থামা হত, (ইতি গজ)' পদ্ধতিতে সূক্ষ্ম ভাষাগত ম্যানিপুলেশন করা হয়েছে। বাকি অংশে যথাসম্ভব মূলানুগ থাকার চেষ্টা হয়েছে।

    ৩। ঙ) চার্জশিটে লেখা আছে -- মৃতার বাবার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে করা ৫৭৭ নং জিডি অনুসারে ৯ তারিখ রাত পৌনে বারোটায় টালা পুলিশ FIR 52/2024 রেজিস্টার করে। 

    --- সকাল সাড়ে ন-টাএ মৃত্যুসংবাদ পেয়ে, দুপুর পৌনে দুটোয় ইনজুরি সার্টিফিকেট ও ডেথ সার্টিফিকেট হাতে পাওয়ার পর রাত পৌনে বারোটায় এফআইআর হয়েছে দেখে আগেও আদালতের তরফে কলকাতা পুলিশকে ভর্ৎসনা করা হয়। অনুবাদ করার সময় এই অংশে পুরো জিনিসটা এড়িয়ে শুধু লেখা হয়েছে, "ঙ। মৃতার বাবা টালা থানায় জিডি করেন।"

    ৩। ছ)  চার্জশিটে লেখা আছে -- ৯ তারিখ পোস্ট মর্টেমের সময় / অটপ্সিকালীন যে সমস্ত এক্সহিবিট প্রিজার্ভ করা হয়েছিল, ভিসেরা ও PMR ব্লাড বাদে বাকিসব অন্যান্য আরো কিছু  সিজ করা জিনিস সহ সেন্ট্রাল ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয় ১৩ তারিখ। ভিসেরা, ব্লাড ও আরো অন্য কিছু এক্সহিবিট সিবিয়াই কেস হাতে নেওয়ার পরে (কলকাতা পুলিশের থেকে হ্যান্ড ওভার নিয়ে বা নিজেরা বাকিটা সংগ্রহ করে) ল্যাবে পাঠায় ১৪ তারিখ। 

    --- অনুবাদে এখানে সরাসরি ভুল করা হয়েছে বা মিথ্যা লেখা হয়েছে ("ভিসেরা, রক্ত ইত্যাদি কলকাতার সেন্ট্রাল ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয় ১৩ তারিখ। বাকিগুলো পাঠানো হয় ১৪ তারিখ।")। মূল চার্জশিট নাকি এখানে লেকজ জুড়ে দেওয়া হবে, সেটা হলে সকলেই মিলিয়ে দেখতে পারেন।

    এটা গুরুত্বপূর্ণ। জনস্বার্থ মামলা হিসেবে এবং মৃতার পরিবারের তরফে কোর্টে কেস ওঠা, হাইকোর্টের তরফে গালি দেওয়া এবং সিবিয়াইকে হ্যান্ড ওভারের নির্দেশ দেওয়া পর্যন্ত কোনো কিছু ল্যাবে না পাঠিয়ে কলকাতা পুলিশ ফেলে রেখেছিল। এগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, ৯ তারিখ তো অবশ্যই, একান্তই না হলে ১০ তারিখ তো ল্যাবে পাঠানোই আবশ্যক ছিল। তারা এমনকি ভিসেরা আর ব্লাডও শেষ অবধি ল্যাবে পাঠায়নি, সেটা সিবিআই পাঠিয়েছে।

    The solid abdominal viscera (singular: viscus) is a collective term for those internal organs of the upper abdomen that are primarily solid in nature, namely the liver, pancreas, spleen, adrenals, and kidneys. This examination is conducted to determine the cause of death or to detect the presence of any substances, such as drugs or poisons, in the deceased person's body.

    Postmortem redistribution (PMR) : The interpretation of postmortem toxicology results is challenging, owing to changes that occur within the body after death. Significant alterations in blood drug concentrations can occur due to postmortem drug movement and instability.

    The Calcutta High Court on Tuesday (August 13, 2024) transferred the investigation in the rape and murder of a doctor at R.G. Kar Medical College and Hospital to the Central Bureau of Investigation.
    A division bench of Chief Justice T.S. Sivagnanam and Justice Hiranmay Bhattacharyya said that prima facie there has been no significant progress has been made in the investigation in the case and the place of occurrence of crime assumes extraordinary importance.

    অথচ পূর্ববর্তী নানা পোস্টে বর্তমান লেখক কলকাতা পুলিশের SIT এর হাত থেকে তদন্ত সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়াকে অপ্রয়োজনীয় বলতে চেয়েছেন।

    ৮। নং-এ আরজিকর-এ ডঃ পলি সমাদ্দারের দেওয়া ইনজুরি সার্টিফিকেটে কী লেখা ছিল তা সিবিয়াই উদ্ধৃত করেছে। সেখানে শুধু মৃত্যুলক্ষণ নোট করা। জুনিয়ার ডাক্তারদের চাপে ম্যাজিস্ট্রেট-এর সুরতহাল করায় সেই রিপোর্টে (৯। নং-এ)  প্রথম ক্ষতচিহ্নগুলি অফিশিয়ালি উল্লেখ হল। দেখাই যাচ্ছে হাসপাতালের তরফে ডেথ সার্টিফিকেটের সঙ্গে দেওয়া ইনজুরি সার্টিফিকেটে বেসিক ইনজুরির কোনো উল্লেখই নেই। প্রতিবাদরত জুনিয়ার ডাক্তাররা চেপে না ধরলে ওইভাবেই বিষয়টা ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছিল।

    ১০। উল্লেখযোগ্য, পোস্টমর্টেমকারী দুজন ডাক্তার আর জি করের ফরেনসিক মেডিসিন ও টক্সিকোলজির এবং একজন এনআরেস-এর ফরেনসিক মেডিসিন ডিপার্টমেন্টের। কোথাও পড়েছিলাম বা শুনেছিলাম আরজিকর-এই পোস্ট মর্টেম হলে বাইরের একজন ডাক্তারের উপস্থিতি চাওয়া হয়েছিল বিক্ষোভকারী ডাক্তারদের তরফেই।

    সরকারী হাসপাতালের পরিকাঠামো ও সুরক্ষাব্যবস্থা এতই তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে যে ডাক্তার, রুগী, নার্স, পেশেন্ট পার্টি ঠাসা হাসপাতালের ওয়ার্ডের মধ্যের ঘরে ডিউটিরত ডাক্তার সকাল চারটে থেকে সাড়ে চারটের মধ্যে বহিরাগত একজনের হাতে নির্মমভাবে ধর্ষিত ও  খুন হয়ে যায়, লোকে জানতে জানতে সকাল সাড়ে ন'টা বেজে যায়, এমনকি অব্যবস্থাও এতই চরম, সংরক্ষণ বরফ ইত্যাদি দূরে থাক, পোস্ট মর্টেম হতে হতে রিগার মর্টিস সেট ইন করে যায়, তারপরেও স্বাস্থ্যসচিবের পদত্যাগ দাবি করা অযৌক্তিক বা অবান্তর !!

    ১৩। ৯ তারিখ রাতে সঞ্জয়কে থানায় ডেকে নেওয়া হয় কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ১০ তারিখ এবং ১০ তারিখ সকালেই গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু জামাকাপড় জুতো বাসস্থান থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয় ১২ তারিখ ! তাছাড়া ৯ তারিখ সারারাত তাকে থানায় কী জামাই আদর করা হচ্ছিল?

    ১৪-১৫-১৬। জন্ম ১৯৮৯ বা ১৯৯১ তে যখনই হোক, বক্সিং-এর ২০০৩/৪ সালের সার্টিফিকেট দুটি ১২ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে পাওয়া। সিভিক পুলিশ হিসেবে চাকরির বেসিস নিশ্চয় সেটা হতে পারে না। যাই হোক, ডেপুটি কমিশনারের অর্ডারে বডিগার্ড লাইনের সিভিক ভলান্টিয়ার হওয়া লোক, যে ASI-কে রিপোর্ট করে পুলিশ ও তাদের পরিবারের মেডিকাল ট্রীটমেন্ট ফেসিলিটেট করে, সাধারণের কাছে সে তো পুলিশই বটে। পুলিশ কমিশনারের নামে ইস্যু করা আরসি কার্ডের "কপু" লেখা মোটর বাইকে চড়ে বেড়ানো, মদ খেয়ে বাইক চালানো, পুলিশ পরিচয়ে যখন খুশি হাসপাতালের যেকোনো অংশে (যৌনপল্লী না ধরেও) অবাধে বিচরণকারী লোক এরকম নৃশংস রেপ ও মার্ডারে অভিযুক্ত হলে, দায় স্বীকার করে পুলিস কমিশনারের পদত্যাগ/অপসারণের দাবি অযৌক্তিক বা অবান্তর কী করে হয় !!

    ১৭। ৮ তারিখ রবিবার দুপুরে ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিতে যাওয়ার কথা ভাবার তথ্যও ইন্টারেস্টিং। ঊর্ধতন  অফিসারের অ্যাকাউন্টে রিপোর্টিং সিভিক ভলান্টিয়াররা টাকা জমা করে, তাও হাসপাতালে লোকজনে ভর্তি ও চিকিৎসার কাজে ""সাহায্য"" করার পরে, এটাও ইন্টারেস্টিং।

    ২০। টেবিলের ২ নং এন্ট্রি ইন্টারেস্টিং। অন্য সব এন্ট্রিতে হেলমেট ও নেকব্যান্ড ইয়ারফোন আছে কি নেই তার উল্লেখ আছে। কিন্তু ৪:৩১ এ সঞ্জয়  যখন ক্রাইম সিন থেকে প্রথমবার বেরিয়ে আসছে তখন সেদুটো আছে কি নেই সে উল্লেখটুকুও নেই। সে আবার ফিরে গেল ওয়ার্ডে / সেমিনার রুমে। আধ মিনিট পরে আবার যখন বেরিয়ে আসছে তখন আবার তার হেলমেট ও ইয়ারফোন আছে কি নেই তার উল্লেখ রয়েছে। ৪:৩১-এ যদি তার গলায় ইয়ারফোন ও হাতে হেলমেট দেখা যায় তার মানে দাঁড়ায় সে ইয়ারফোনটা ক্রাইম সিন-এ ফেলে আসার জন্যেই ফিরে গেছিল। সেটা কনস্পিরেসি তত্ত্বে হাওয়া দেয়। যদি দেখা যায় হেলমেট আর হেডফোন ছিল না, তাহলে দাঁড়ায় সে ফেলে আসা হেলমেট আনতে ফিরে গেছিল। এই উল্লেখটা জরুরি ছিল।

    ২৩। এই সিরিয়াল নং-এ একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস অনুবাদে মিস হয়েছে, অভিযুক্ত সঞ্জয়ের জিনস ও স্লিপার, যা সে ঘটনার রাতে পরে ছিল, পরে তার বাসা থেকে বাজেয়াপ্ত হয়, তাতে ভিকটিমের রক্ত (পরীক্ষায় প্রমাণিত) পাওয়া গেছে।

    আরেকটা ইন্টারেস্টিং অবজারভেশন, ন-তারিখ ভোর রাতে রেপ করা হল। সে দিন পেরিয়ে পরদিন দশ তারিখ সকালে অভিযুক্তের ইউরিনের মধ্যেও সিমেন পাওয়া গেল, কিন্তু ভিকটিমের শরীরের সেই অংশ, যেখানে সিমেন পাওয়ার কথা ছিল, এবং যা অভিযুক্তের বলে প্রমাণ হওয়ার কথা ছিল, পোস্ট মর্টেমের সময় যা দেহ থেকে আলাদা করা হয়, ওজনও করা হয় তার কোনো উল্লেখ চার্জশিটে নেই। সেখানে সিমেন আছে কিনা, তা একজনের না একাধিক জনের ডিএনএ সম্বলিত তার উল্লেখও নেই। ভিকটিমের দেহে পাওয়া লালাতে অভিযুক্তের ডিএনএ পাওয়া গেছে, কিন্তু ভিকটিমের দেহে কেবলমাত্র একজনের লালাই পাওয়া গেছে কিনা সে উল্লেখও নেই। 
    অর্থাৎ সঞ্জয় সরাসরি ইনভলভড ছিল এটা প্রমাণ করা হয়েছে। আর কেউ সরাসরি ইনভলভড ছিল না, সেটা করা হয়নি। যেমন ৪:০৩ থেকে ৪ঃ৩১ সঞ্জয় ওয়ার্ডে ঢুকেছে এবং বেরিয়েছে সেটা বলা হয়েছে। কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজ থেকে এটা বলা যায়নি, রাত একটায় ডিনারের পর বাকিদের সেমিনার রুম থেকে বেরোতে দেখা গেছে আর ভোর চারটে পর্যন্ত আর কেউ সেমিনার রুমে ঢোকেনি। এটা বলা সম্ভব নয়, কারণ সিসিটিভি সরাসরি সেমিনার রুমএর দরজা দেখায় না। সেটা আছে পালমোনারি মেডিসিনের মেল ওয়ার্ডের দিকে তাক করা। ওতে শুধু ওয়ার্ডের এন্ট্রান্স আর এগজিট বোঝা যায়। ওয়ার্ডের ভিতরদিকে সেমিনার রুমে অন্য দিক থেকে ঢোকা/বেরোনো যায় কিনা, যা এই ক্যামেরার দৃষ্টির অগোচর, সে বিষয়ে কিছু জানা যাচ্ছে না।
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:49ff:7640:9d9f:***:*** | ১০ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:৫২538378
  • "সেখানে সিমেন আছে কিনা, তা একজনের না একাধিক জনের ডিএনএ সম্বলিত তার উল্লেখও নেই। ভিকটিমের দেহে পাওয়া লালাতে অভিযুক্তের ডিএনএ পাওয়া গেছে, কিন্তু ভিকটিমের দেহে কেবলমাত্র একজনের লালাই পাওয়া গেছে কিনা সে উল্লেখও নেই"
     
    এরকম কোন সম্ভাবনা থাকলে কি সেটা সিবিআই এর চার্জশিটে উল্লেখ করা থাকতো না? মানে সিবিআই কি লিখতো না, যে ধৃত ব্যাক্তি ছাড়াও অন্য কোন এক বা একাধিক ব্যাক্তির সিমেন / লালা / ডিএনএ ইত্যাদি পাওয়া গেছে আর সেগুলো শনাক্ত করার জন্য তদন্ত চলছে? তাহলে কি সিবিআই আর কপু হাতে হাত বা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তথ্য+প্রমান লোপাট করে ফেললো? 
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:49ff:7640:9d9f:***:*** | ১০ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:৫৬538379
  • সিবিআই তো প্রথম থেকেই লিক করছে যে শুধুমাত্র একজন ধর্ষন আর খুন করেছে। এখনও অবধি লিক করলো না কেন যে একাধিক ব্যাক্তি করেছে? এ নিয়ে কি সিবিআই দপ্তরের সামনে কোন মিছিল হয়েছে? বা স্যারের কাছে কি দাবী পাঠানো হয়েছে যে একাধিক ব্যাক্তি জড়িত, সিবিআই এর তরফ থেকে এরকম কোন লিক করা হোক? 
  • সিএস | 2405:201:802c:7858:68c7:54b6:aaa8:***:*** | ১০ অক্টোবর ২০২৪ ১২:১৩538384
  • বিকাশবাবু চার্জশীট নিয়ে কিছু বলেছেন বা সিবিআইয়ের কাজ নিয়ে ?

    আর, এখন তো সুপ্রীম কোর্টে সব পক্ষের বাঘা বাঘা উকিল। তারা নিশ্চয় পোস্টমর্টেম করা শিখে গেছেন (এখানে যেমন সবাই শিখেছে), ফলে নিশ্চয় সিবিআইকে সেখানে চেপে ধরবেন।
     
     
  • আইনজ্ঞের সুত্রে পাওয়া | 149.88.***.*** | ১০ অক্টোবর ২০২৪ ১৩:০৩538387
  • যারা গ্যাংরেপ কনসেপ্ট ছেড়ে বেরোতে পারছেন না তারা একটু বিভিন্ন ধরনের রেপ এর ইনজুরি রিপোর্ট​-এর স্টাডি করুন।
    সবচেয়ে কম বডিলি ইনজুরি থাকে প্ল্যান্ড গ্যাংরেপ​-এ****, কারন এক্ষেত্রে একাধিক ব্যাক্তি মিলে হাত পা চেপে ধরে রাখে। আর অভিযুক্তদের শরীরেও তেমন ইনজুরি পাওয়া যায় না।
    আর সবচেয়ে বেশি ইনজুরি থাকে যখন আসামি ও ভিক্টিম ১ টু ১ হ​য়। এক্ষেত্রে প্রচুর ধস্তাধস্তি ভিক্টিমের শরীরে তো থাকেই আসামির শরীরের সামনের ভাগে প্রচুর ইনজুরি পাওয়া যায়।
    গ্যাংরেপের ঘটনাগুলোর হিস্ট্রি গুলো দেখলে দেখা যাবে মুখ কাপ​ড় দিয়ে বন্ধ করা হযেছিলো বেশিরভাগ সম​য়।
    কিন্তু একজন আসামির ক্ষেত্রে অনেক সম​য় দেখা যায় চিৎকার করতে যাতে না পারে তার জন্য যে কোনোরকমে হাত দিয়ে নাকমুখ বন্ধ করে দেওযা, গলা চেপে ধরা।  অনেক সম​য়েই দেখা যায় রেপ চলাকালীন ভিক্টিম অজ্ঞান হ​য়ে গেছে, কোমা স্টেজে চলে গেছে। সেখান থেকে কেউ কেউ পরে বেঁচে উঠেছে, কেউ কেউ কিছু সম​য় পরে মারা গেছে।

    সব শেষে বলি, রেপ (উইথ কনসেন্ট ইন ইন্টক্সিকেশন, কনসেন্ট উইথ ফিয়ার, কনসেন্ট উইথড্রন আফটার সামতাইম ইত্যাদির কথা বলছি না) যেখানে ফুললি আনোয়ান্টেড, কনসেন্ট চাওয়ার কোনো ব্যাপারই নেই, ফুললি ফোর্সড অ্যাপ্লাই করেই সব কিছু করা হ​য়েছে,
    তার সাথে নর্মাল সেক্স এর কোনো সম্পর্কই নেই।
    যে সব পুরুষরা সারাজীবন তার পার্টনার(স্) এর সাথে ভালোবেসে অবেগের সাথে সেক্স করেছে, বা যেসব মহিলাদের পার্টনার(স্) সারাজীবন ভালোবেসে অবেগের সাথে সেক্স করেছে, তাদের হ​য়তো মনে হতে পারে যে একটা লোক একজন মহিলাকে জোর করে সেক্স করতে পারে না,  কিন্তু বাস্তবটা কতটা ভ​য়ঙ্কর হতে পারে তা বিভিন্ন মেডিকাল রিপোর্ট্, আর্গুমেন্ট, জাজমেণ্ট, জীবিত ভিক্টিমের ব​য়ান প​ড়লে জানা যায়।
  • সজল সেনগুপ্ত | 152.58.***.*** | ১০ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:২৬538393
  • কোন অবস্থাতেই একজন এই খুন করতে পারে না। বাকিদের খুঁজে বের করার দায়িত্বও সি, বি, আইর। না পারলে গোয়েন্দাগিরি ছেড়ে শিয়ালদাহ স্টেশনে ঘুঘনি বেচুক।
  • @সজল সেনগুপ্ত | 165.225.***.*** | ১০ অক্টোবর ২০২৪ ১৮:৩২538395
  • "কোন অবস্থাতেই একজন এই খুন করতে পারে না" এরকম দাবী ঠিক কি জন্যে? 
    অন্যান্য অনেকরকম সন্দেহ - যেমন, যদি একজনই ইনভল্ভ থাকে, কিভাবে ধারে পাশে আওয়াজ শোনা গেল না, কিংবা মেডিকাল প্রসিডিংয়ের দেরী - এসব তোলা যায় বা তোলা হচ্ছে, কিন্তু "আইনজ্ঞের সুত্রে পাওয়া" যা বলেছেন, তা তো বেশ যুক্তিসঙ্গতই মনে হচ্ছে। এই যুক্তিতে ডিরেক্ট খুনের দায়ে কেবল একজন্কেই চার্জ দেওয়া যাবে, অন্যেরা ঘরের বাইরে থেকে সাহায্য করলেও।  
    আপনার বক্তব্যের সমর্থনে যুক্তি জানতে ইচ্ছুক। 
  • r2h | 208.127.***.*** | ১০ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:১০538397
  • অনেক সময়ই যৌন হেনস্থার ক্ষেত্রে ভিক্টিমকে প্রথমেই ভয়াবহ আতংক মিশ্রিত বিস্ময় গ্রাস করে - যাতে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াগুলি ব্যাহত হয়। এসব জানেন সবাই, নতুন কিছু না।
    হিন্দি চ্যানেলগুলিতে একটা লব্জ চলে, সনসনি তেজ। তো, মানুষ বাস্তব, বিচার, এইসবের থেকে সনসনি তেজ পছন্দ করে বেশি।

    আরেকটা জিনিস লক্ষ্য করলাম, অপরাধী ভবানীপুর বক্সিং সংস্থার থেকে কাগজ পেয়েছিল। তো, আর পাঁচটা লোকের থেকে বেশি বলশালী, ক্ষিপ্র, আগ্রাসী, লড়াইয়ে পারদর্শী - এমন অনুমান করা যায়।

    এইসব, এরকম ভাবাটা খুবই ডিপ্রেসিং। মনে হয় যেন মাথার মধ্যে ঐ পরিস্থিতির পুনর্নির্মান। আবার না ভাবাকে মনে হয় পালিয়ে থাকা, এম্প্যাথির অভাব।
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:e90c:75d6:f2e1:***:*** | ১০ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:১৮538399
  • তবে সিবিআই কিন্তু শেয়ালদায় ঘুগনি পাউরুটির স্টল দিতেই পারে, নাম দিতে পারেঃ ঘুঘুর বাসায় ঘুগনি  
  • r2h | 208.127.***.*** | ১০ অক্টোবর ২০২৪ ২০:২৭538400
  • জনমত গণ-র পক্ষে, অন্যদিকে সরকার, রাষ্ট্র, পুলিশ, কেন্দ্রীয় - ইত্যাদি কাউকেই ধোতু মনে না করেও কেন জনপ্রিয় মতে সাবস্ক্রাইব করছি না, এই প্রশ্নটা নিজেকে করেছিলাম। তাতে যা উত্তর পেলাম তার মধ্যে অনেকটা 'আমার মনে হয়' ধরনের।
    তবে এই বাজারে লোকজন ফরেনসিক রিপোর্ট থেকে প্রত্যক্ষদর্শী সবেতেই আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে দিচ্ছেন। তো আমার মনে হওয়াটাও লিখেই দিই।

    একে তো একজন হা ক্লান্ত মানুষ যাঁর নাতিদীর্ঘ জীবনকাল পড়াশুনো করেই কেটেছে, তার পক্ষে একজন বক্সিং প্রশিক্ষিত আরক্ষাবাহিনীর গুন্ডার সঙ্গে মল্লযুদ্ধে জেতা সম্ভব না। ঘুমন্ত অবস্থায় আক্রান্ত হয়ে মহাভারতের অবশিষ্ট মহারথীরাও আত্মরক্ষা করতে পারেননি। তবে সেসব সাবজেক্টিভ জিনিস। সবথেকে বড় যেটা মনে হয়, ঘুঘুর বাসার ডাক্তাররা, যতই হোক, তারা তো কেউ পোড় খাওয়া ক্রিমিনাল না। হতে পারে ক্ষমতালোভী, অর্থলোভী, চোর, দুর্নীতিগ্রস্ত। কিন্তু হাসপাতালের ডাক্তাররা, একজন না, এক পাল লোক দল বেঁধে তাদেরই একজন সহকর্মীকে নৃশংস ভাবে পরিকল্পনা করে মেরে ফেললো- 'আমার মনে হয়', পৃথিবী এখনও এত ডিস্টোপিক হয়ে যায়নি।
    সংগঠিত রাজনৈতিক গুন্ডা যেমন বজরং দল ইত্যাদি, বা সেনাবাহিনী - ইত্যাদিরা হয়তো এসব করতে পারে। কিন্তু সরকারী চাকরি করা ডাক্তাররা... যত দুর্নীতিগ্রস্ত ইত্যাদিই হোক, এরকম কিছু করতে পারে বলে বিশ্বাস করি না, দলগত ভাবে।

    এবার হতেই পারে এই সঞ্জয় রায়ের সঙ্গে অন্য দুর্নীতিতে সন্দীপ ঘোষের সাঁট ছিল, তাই একটা লেভেলে আড়াল করার চেষ্টা করেছে, কে জানে। নাও হতে পারে, শুধুই অবহেলা, তাও হতে পারে। সঞ্জয় রায় ওয়েল কানেক্টেড, কপুর মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতো, কর্তব্যরত অবস্থায় মদ্যপান করার প্রমান থাকা সত্বেও চাকরি যায়নি- এইসব গ্রাউন্ডেই ব্যাপক তদন্ত ও দু'দশজনের জেল জরিমানা চাকরি যাওয়া উচিত।

    তবে আবারও, ডিসক্লেমার দিয়েই দিলাম, এই সবই মনে হওয়া। স্বগতোক্তিও ধরে নেওয়া যায়, গুরুত্ব দেওয়ার দরকার নেই।

    কিন্তু মুশকিল হল বিপুল জনগন তাদের মনে হওয়াটুকু সম্বল করে গণ্ডা গণ্ডা মিথ্যে ও অর্ধসত্য ছড়াচ্ছেন। তাতে করে মহান কোন লাভ হলে ঠিক আছে, তবে তার সম্ভাবনা বিষয়ে আমার 'মনে হওয়া' আলাদা, এই যা।
  • Ranjan Roy | ১০ অক্টোবর ২০২৪ ২২:৩৪538407
  • শেষরাতে চারতলার একটা নির্জন করে একটা বলশালী গুণ্ডা একটি ঘুমন্ত মেয়েকে চেপে ধরেছে, মুখ বন্ধের চেষ্টা চালাচ্ছে।
    সেই অবস্থায় কতটুকু আওয়াজ নীচে যাবে? 
  • s gayen | 2401:4900:16c9:e9b5:1:2:f6b7:***:*** | ১৪ অক্টোবর ২০২৪ ১২:৪৯538514
  • নির্বাচিত পক্ষপাতমূলক মন্তব্যই এখানে অনুমোদন করা হয় পাঠকদের জন্য। কিছু সমালোচনার অনুমোদন দেওয়া হয় আপাত স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার ভন্ডামি দেখানোর জন্য। তাই আমার আশা এ মন্তব্য অনুমোদন পাবে
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ১৪ অক্টোবর ২০২৪ ১৩:০৯538515
  • গুরুতে মন্তব্য আবার নাকি অনুমোদন সাপেক্ষে প্রকাশ পায়, এই ব্যাপারটাই প্রথমবার শুনলাম। আজ অব্দি কোনো টই বা লেখার কমেন্টে এরকম হতে দেখিনি গায়েন বাবু, আপনি নিজের ইচ্ছে মতো লিখতে পারেন শুধু তা স্প্যাম, ধর্মীয় মেরুকরণ, হিংসায় উস্কানি, মিথ্যে গুজব - ইত্যাদি বিবর্জিত হলেই হলো।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন