কয়েকটা অবজারভেশন। নানান আলোচনার মারপ্যাঁচে কিছু কিছু জিনিস ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে।অবজারভেশনে সেসবেরও কিছু কিছু লিখছি।
১) "নির্যাতিতার বিচার চাই"!
"নির্যাতিতা"?
না। নিহত। শুধুই নির্যাতিতা হলে তিনি নিজেই এ মামলার অংশ নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি নি হ ত।
বেশ কিছু লোক যৌন নির্যাতন কে মৃত্যুর চেয়েও ভয়ানক মনে করে। এই মানসিকতার থেকেও অনেকে সমস্যা হতে পারে।
২) হত্যা হয়েছে। ক্রিমিনাল কেস। অর্থাৎ রাষ্ট্র বনাম হত্যাকারী। রাষ্ট্রের তরফে থাকবে পিপি অর্থাৎ পাবলিক প্রসিকিউটার। সেটা রয়েছে। এর বিপরীতে ক্রিমিনালদের জন্য আইনজীবি আছে। এখন হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের নানান কুকর্মে সাহায্যের অভিযোগ রয়েছে রাষ্ট্রেরই বিরুদ্ধে।
এক্ষেত্রে তারা পুলিশ, যারা আইনরক্ষা করা এবং নাগরিকের সুরক্ষার জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক নিযুক্ত বেতনভুক কর্মচারী। তাহলে তো কেসটা রাষ্ট্র বনাম রাষ্ট্র হয়ে গেল। একদল পুলিশের পক্ষ নিয়েছে, অন্যদল নিহতের বিচারের পক্ষে।
৩) একটা গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নির্বাচনে জিতে আসা সরকার যদি ধরনা আন্দোলনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে, পুলিশের সাহায্যেই, তাহলে সে পুলিস স্টেট। সেটা গণতান্ত্রিকত ব্যবস্থার পরিপন্থী।
৪) ডাক্তারেরা কর্মবিরতি করতে পারে না, এর কারণ হিসেবে নানান আইন, নানাভাবে ভয় দেখানো, দলীয় রাজনীতির স্টেনসিলে ফেলে দাগিয়ে দেওয়া, উশকে দেবার যে সব কর্মকাণ্ড চলছে, এবং দুঃখজনকভাবে নিজস্ব রাজনৈতিক ফায়দা তোলার তাগিদেই নানান দল এগুলো করে চলেছে আপাত স্বচ্ছতার মুখোশ পরে।
কিন্তু তারা ভুলে যাচ্ছে যে ( বা ইচ্ছে করেই) ডাক্তারেরা নিজেদের সুরক্ষার ব্যবস্থা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত, এবং সেই চিন্তা সুস্থ চিন্তা। একজন মানুষ তার নিজস্ব নিরাপত্তাকে তুচ্ছ করে কোনও কাজ করতে বাধ্য নয়, তা সে যতই তার পেছনে রাষ্ট্র্রের কত টাকা খরচ হয়ে থাকুক না কেন। অন্ততঃ স্বাধীন দেশের সুস্থ সমাজে এটা অযৌক্তিক।
৫) ডাক্তারদের যারা এখনও চাপ দিয়ে কাজে ফেরাতে চাচ্ছে, তা সে চাপ নানানরকমের, কখনও সাইকোলজিকাল, কখনও প্রত্যক্ষ শাসানি, তারা কিন্তু এটা বুঝতে পারছে না যে তাদের অসুখ বিসুখ জন্ম মৃত্যুতেও এই ডাক্তারদের কাছেই যেতে হবে। অথচ সামান্য একটু ব্যাপার, শুধু স্বাস্থ্যব্যবস্থাটাকে সুস্থ করার দাবি রেখেছিল এই ডাক্তারেরা। কিন্তু শাসক এবং যারা হুমকি টুমকি দিচ্ছে, তারা স্বাস্থ্যব্যবস্থা থেকে দুর্নীতি উচ্ছেদ করতে একদম নারাজ। তারা গোল গোল করে ভয়- পার্টিবাজি-সেন্টু এই পথে ঘুরছে। দুর্নীতি থেকে সরে আসবার শর্তটুকু শাসক মানতে নারাজ।
৬) কেস, মামলা, কতগুলো ধরপাকড়, কতগ্রাম বীর্য, হি সেইড শী সেইড কপচানি, মিথ্যে, গুজব, নিজস্ব স্কোর সেটল করা, ফ্রাস্টেশন ভেন্ট আউট করবার জন্য নানাবিধ আক্রমণ, এসব চক্রবৎ চলবেই, বিশেষ করে বাঙালি বুদ্ধিজীবি সমাজে এগুলোকেই ইন্টেলেকচুয়াল আড্ডা বলা হয়ে থাকে, সেসব বদলাবার নয়, কিন্তু এখন যে আন্দোলনটা হচ্ছে, সেটা দুর্নীতি ও শাসকনিয়ন্ত্রিত ক্রিমিনাল কেসের বিরুদ্ধে।
আরও পয়েন্ট মনে পড়লে আবার লিখব।
একটা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ডেভিলস অ্যাডভোকেট হয়ে মজা দেখা বা যুক্তি সাজানোর আড্ডা যে সমাজে হয়, সেই সমাজ বা জাতি .... থাক, কিছুই বলার নেই।