বড় ব্রিজটা থেকে কয়েক হাত দূরে এসে আটকে গেল তাদের বাইক। আকাশ ছিল মেঘের ভারে থমথমে, তাই যেন উড়ে চলছিল বাইকচালক সেলিম। কিন্তু ব্রীজের উপর শ’য়ে শ’য়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ব্রেককেও দাঁড়িয়ে পড়তে হল। আর তারপরেই যখন ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামল, তখন পিছিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়ার সুযোগও থাকলো না, কারণ আরো অনেক হতভাগা যানকে একইরকম থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে পড়তে হয়েছে।
পুলসিরাত পার হয়ে যখন শেষমেষ তারা ঢুকলো অফিসটাতে, তখন দেখা গেল সেলিম ভিজলেও তার বসের মত কাকভেজা হয়নি, ফ্যানের বাতাসে একটুখানি বসলেই চলছে। ওদিকে বসের সামনে মেলে ধরা হয়েছে দীপুর টি-শার্টটা। কিছুক্ষণ চেয়ে থাকার পর এক সময় বস যখন গায়ে গলিয়েই ফেললেন বস্তুটাকে, তখন সহকর্মীদের মধ্যে কলরব উঠল - বসের বয়স এক ধাক্কাতেই দশ বছর কমে গেছে!
তবে ব্যতিক্রম ছিল সহকর্মী সেলিম; সে মুখ ভার করে থাকল বাইরের মেঘের মত করেই! একে তো চতুর্থ শ্রেণী, তার উপর আবার একজন বিধর্মী, সেই দীপুর পোশাক বসের গায়ে! কে জানে, এ টি-শার্ট পরেই পুজো দিয়ে তবে অফিসে এসেছে কিনা!
সেদিন নির্ধারিত সময়ের আগে অনেকটা তাড়া করে নামাযের ডাক এল সেলিমের কাছ থেকে। অফিসের নির্ধারিত কাজের পাশাপাশি ইমামতির অনির্ধারিত কাজটিও তাকে করতে হয়। যদিও কোন অতিরিক্ত মাইনে মেলে না এজন্য, কিন্তু সেলিম জানে, অনেক অনেক মাইনে জমা হয়ে থাকছে তার জন্য মাসে মাসে সাত আসমানের মালিকের তরফে।
আজ যেন বসের পাশাপাশি টি-শার্টটাকেও বিশুদ্ধ করে সেই সঞ্চিত মাইনেটাই বাড়িয়ে নিতে চাইছিল সে! তবে বস যখন নামায শেষে দীপুকে টি-শার্টটা ফিরিয়ে দিতে গেলেন, সেলিমের দ্বিতীয়বারের মত মুখ ভার করল, আর সেখানে ভেসে বেড়াতে লাগল আগের থেকেও কালো সব মেঘ! তার কেবলই মনে হতে লাগল, বিশুদ্ধ একটা জিনিস আবার অপবিত্র হতে চলেছে!
এদিকে টি-শার্টটা অবশ্য দীপুর হাতে পৌঁছুতে পারার আগেই অফিসে আগত এক অতিথির গায়ে চেপে বসল। ভদ্রলোককে বাইরে থেকে ঢুকতে দেখে বসই ছুটে গিয়েছিলেন। সেলিম অনেকক্ষণ চেয়ে থেকেও যখন চিনতে পারল না লোকটিকে, হাল ছেড়ে দিয়ে নিজের ডেস্কে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
অফিসের বাইরে তখন আবারো ঝমঝমিয়ে নেমেছে বৃষ্টি, আর ভেতরে একটি টিশার্ট ওম দিয়ে যাচ্ছে নাম-পরিচয়বিহীন নতুন একটা কাকভেজা শরীরকে!
(সমাপ্ত)
……………………………………………………………………………………………………………..
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।