বিজেপির প্রার্থী তালিকায় মুসলিম প্রার্থীর সংখ্যা:
২০১৯এ ছিল ৬,
২০২৪এ দাঁড়িয়েছে ১।
২০১৯এ ছয় জনের মধ্যে চারজনই ছিল ৯০% মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে - কাশ্মীর উপত্যকায় তিন, আর লক্ষদ্বীপে এক। এর বাইরে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গে পরীক্ষামূলক ভাবে দুজন মুসলিম প্রার্থী ওরা দাঁড় করিয়েছিল।
এবার কাশ্মীরে ওরা কোনো প্রার্থী দেয়নি, জোটসঙ্গীও নেই। লক্ষদ্বীপ ছেড়ে দিয়েছে জোটসঙ্গীকে। পশ্চিমবঙ্গে ওরা বুঝে গেছে মুসলিম প্রার্থী দিলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি। খালি কেরলে একজন মুসলিম প্রার্থী দিয়েছে।
আগের বার জোটসঙ্গীরা সারাদেশে তিনজন মুসলিম প্রার্থী দিয়েছিল, এবারও সংখ্যাটা তিনেই সীমিত। আগেরবার একমাত্র এলজেপি থেকে একজন মুসলিম প্রার্থী জিতেছিল। এনডিএর সেই একমাত্র মুসলিম সাংসদ এখন বিরোধীপক্ষে যোগ দিয়েছে।
বিজেপির এই মুসলিমশূন্য বা প্রায়-মুসলিমশূন্য প্রার্থীতালিকার কৌশল এতদিন সফল হয়ে এসেছে, তাই তারই পুনরাবৃত্তি ওরা করছে। এর সাফল্যের দুটো কারণ-
এক, মাত্র একজন মুসলিম প্রার্থী দিলেও সেই রাজ্যের বিজেপি সমর্থকদের কাছে ভুল বার্তা যায় যে বিজেপি মুসলিম সহনশীলতা দেখানো শুরু করেছে।
দুই, মুসলিমদের টিকিট না দিলে সেই জায়গাটা ব্যবহার করে বিভিন্ন হিন্দু কাস্টের প্রতিনিধিত্ব ভালভাবে করা যায়, যার ফলে দলিত ও ট্রাইবালদেরকে অসংরক্ষিত সিটেও টিকিট দেয়া যায় এবং প্রান্তিক ওবিসিদের (যাদের সংরক্ষণ নেই) প্রতিনিধিত্বও ভালভাবে করা যায়- যেটা কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধীরা করতে পারে না। যেরকম মালদা উত্তরের মত মুসলিম আসনেও বিজেপি হিন্দুকে জেতাতে পেরেছিল একজন প্রাক্তন বামপন্থী ট্রাইবাল নেতাকে টিকিট দিয়ে। এই ধরনের অসংরক্ষিত আসনে অন্য দলগুলো দলিত বা এসটি প্রার্থী সাধারণতঃ দেয় না।
এই কৌশল স্বাভাবিকভাবেই বিজেপিকে ওবিসি, দলিত এবং ট্রাইবাল ভোটব্যাঙ্ক গড়তে সাহায্য করেছে। কিন্তু এবারের উত্তর প্রদেশের টিকিট বণ্টনে দেখা গেছে অনেক কাস্টই বিজেপির উপর অসন্তুষ্ট।
বিজেপি কিছুটা নিজের জালেই ফেঁসে গেছে। দেশে কয়েক হাজার কাস্ট- সবার প্রতিনিধিত্ব কোনো দলের পক্ষেই সম্ভব নয়। ফলে উপরিউক্ত দুই নম্বর কারণ থেকে বিজেপি যে সুবিধা পাচ্ছিল সেটা একটা লিমিটের বেশি পাওয়া সম্ভব নয়। উত্তর প্রদেশে প্রথম তিন দফায় কম ভোট পড়ার কারণ মনে করা হয় যে তিনটি জাতির লোক- রাজপুত, ত্যাগী আর সৈনীরা ভোটদান থেকে বিরত থেকেছে। এরা প্রত্যেকেই বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক, কিন্তু বিজেপি এই জাতিগুলো থেকে যথেষ্ট প্রার্থী দেয়নি বলে চটে আছে।
একটা জাতি থেকে কতজন প্রার্থী হলে "যথেষ্ট" প্রার্থী হয়? সব জাতের মানুষই ভাবে তাদের প্রতিনিধিত্বটা মনে হয় কম পরিমাণে হচ্ছে। এছাড়া ব্রড কাস্ট গ্ৰুপিং অনেক সময় সাব-কাস্ট গ্ৰুপগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে না। উদাহরণ - ত্যাগীরা ব্রাহ্মণ, তবে তুলনামূলকভাবে প্রান্তিক গোষ্ঠীর ব্রাহ্মণ। বিজেপি প্রচুর ব্রাহ্মণ প্রার্থী দিয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে ত্যাগী ব্রাহ্মণ যথেষ্ট না হওয়ায় ত্যাগীরা অসন্তুষ্ট।
দেখা যাক বিভিন্ন হিন্দু জাতিগুলোর এই ছোট ছোট অসন্তোষগুলো নির্বাচনে কী প্রভাব পড়ে। বিজেপি যতই "বিরাট" হিন্দু জাতির গল্প বানাক না কেন, যখন সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্ন আসে- প্রত্যেকটা জাতিই বুঝতে পারে তারা আলাদা আলাদা একেকটা জাতি।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।