অন্যরকম কথা একটু বলি। অনেকেই জানতে চায়।
আমার অতীত ইতিহাস যারা জানে, তারা জানে কী প্রচণ্ডভাবে আমি আরএসএস করেছি -- সেই ছ বছরের শিশু থেকে প্রায় পঁচিশ বছরের যুবক পর্যন্ত।
ট্রাকের ওপর উঠে মিছিলে যাচ্ছি। দিল্লি যাচ্ছি ওদের প্রতিনিধি হয়ে। এয়ারপোর্টে যাবার পথে আওয়াজ উঠেছে, তোমার প্রিয় আমার প্রিয় পার্থদা যুগ যুগ জীও। প্রিয়দা নয়, পার্থদা। প্রতিদিন নিয়ম করে সেই শাখায় যাওয়া। নকশাল আমলে যখন ভয়ে কেউ আসেনা মাঠে, তখন মাসের পর মাস একা একা কাজ চালিয়ে যাওয়া। জরুরী অবস্থার সময়ে আত্মগোপন করে প্রচার চালিয়ে যাওয়া।
সবই সত্যি। যারা জানে, তাদের জিজ্ঞেস করে দেখবেন।
কিন্তু, "আজ যখন পশ্চিম দিগন্তে প্রদোষকাল ঝঞ্ঝাবাতাসে রুদ্ধশ্বাস, যখন গুপ্ত গহ্বর থেকে পশুরা বেরিয়ে এলো, অশুভ ইঙ্গিতে ঘোষণা করলো দিনের অন্তিমকাল," তখন পিছন ফিরে দেখি, আর মনে হয়, একটা ফ্যাসিস্ট, প্রাগৈতিহাসিক সংগঠনে জীবনের এতগুলো বছর নষ্ট করলাম? একটাই তো জীবন। বাংলার মাটির গন্ধ বুকে না মেখে, বাংলার আকাশের আলোর ঠিকানা না খুঁজে সেই গুপ্ত গহ্বরের পশু হয়ে এই একটামাত্র জীবনের এতো মূল্যবান দিনগুলো হারালাম? ঈশ্বরের দেওয়া সেই দিনগুলো আর তো কখনো ফিরে আসবে না!
_________
এসব কথা শুনে প্রশ্ন করেন শুভানুধ্যায়ীরা।
প্রশ্ন করেন "বার বার আপনি বলেন আপনি আরএসএস করেছেন। আমার প্রশ্ন তখন কি ওদের নীতি ভালো ছিল? কোনো শিক্ষিত, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ ওদের কর্মী হতে পারে ভাবতেই পারিনা!"
এক কথায় উত্তর দেওয়া মুশকিল। কেন আরএসএস ছেড়ে বেরিয়ে চলে এলাম তার উত্তরও এক কথায় দেওয়া যাবেনা। অনেক লিখেছি অনেক আলোচনা করেছি এই নিয়ে।
আমি তো নীতি জানতাম না। বাবা জিতেন্দ্রনাথ আরএসএসের বিরাট নেতা। সর্বত্যাগী প্রচারক। বাজপেয়ী আদভানির কাছের মানুষ। গোলওয়ালকার দেওরাস নানাজী দেশমুখ আমাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন। স্নেহ করেন। কী বিরাট প্রভাব সেই ছোটবেলা থেকে! তার থেকে বেরিয়ে আসা যে কী কঠিন, আপনারা ভাবতেই পারবেন না।
একটা বাঙালি পরিবারে বাবার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ছত্রছায়ায় সর্বত্র যাওয়া। পাঁচ বছর বয়স থেকে জনসংঘের মিটিঙে বাবা নিয়ে গেছেন। সেই ছবি এখনো আমার কাছে আছে। সবাই জানতো এই ছেলেটা বাঁচলে পরে একটা কিছু হবে। হতামও।
ভাগ্যিল হইনি!
তবে তখন ওদের লোকেরা (বিশেষ করে বিজেপি-জনসঙ্ঘ) এখনকার মতো এতো অসৎ, মিথ্যাচারী আর লোভী হয়ে যায়নি। অনেক অন্যরকম ছিল।
অনেক লিখেছি সেসব দিন নিয়ে। যাঁরা সাত্যিই জানতে চান তাঁরা আমার স্মৃতিকথা ঘটিকাহিনি পড়ুন। বুঝতে পারবেন সেসব দিন কেমন ছিল।
এই আরএসএস বিজেপি আর সেই আরএসএস?
অকল্পনীয়!
ভালো থাকুন সবাই। যতদিন পারেন।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।