গতকাল সন্ধ্যায় চাঁদ থেকে সরে যাওয়া ফুটকি (আনন্দবাজারের খবর অনুযায়ী-চাঁদ এর শুক্র গ্ৰহকে ঢেকে ফেলা, এবং গ্ৰহণ শেষে দূরত্ব বাড়লে তৈরী হওয়া আলো) দেখতে দেখতে বাড়ি ফেরবার পথে; রাস্তার চা-এর দোকান থেকে অটো স্ট্যান্ডের মোড় গুলিতে গুটি কয়েক মানুষের মুখে রাহুল গান্ধী নিয়ে আলোচনা শুনছি। ঠিক বুঝতে পারছি না, সঠিক কী কেস হয়েছে। কেউ রাহুল গান্ধী’কে মোদী সাহেবের সাথে জুড়েই গালিগালাজ করছে। আবার কেউ কেউ রাহুল গান্ধী প্রসঙ্গে মোদী সাহেবের – গরিবী’র বদলে ‘গরীব’ হটানোর কাজবাজ গুলোও একে অপরের কাছে তুলে ধরছে। বলছে, “ওদের সাথে আমাদের মতন সাধারণ মানুষের লেনাদেনা কী! জেল হলেও কিচ্ছু হবেনা ওদের।’’ কিন্তু সেসব শুনে আমি তখন কিছুই আঁচ করতে পারি নি। অবশেষে বাড়ি ফিরে নেট চালু করে মোবাইল ঘাঁটতেই দেখি, রাহুল গান্ধী’কে সংসদ থেকে ছাঁটাই করেছে মোদী সাহেব এবং তার নামে ‘অপরাধ মূলক মানহানির’ মামলা ঠুকেছে বিজেপি। আরেকটু ঘাঁটাঘাঁটি করতেই দেখি, 'পরিণত' কংগ্রেসী নেতা রাহুল গান্ধী –মোদী সাহেব’কে তাঁর ‘পদবী’ ধরে যা নয় তাই বলেছে। আমাদের সমাজে যেমনটা ঠিক বিয়ের পর পণের পুরো টাকা না পেলে স্বামী তার ‘স্ত্রী’কে বলে থাকে, অনেকটা সেইরকম’ই। তারপর, টুকুস করে ফেসবুক খুলতেই দেখতে পেলুম কালো আকাশে সাদা চাঁদ ও চাঁদের গ্রাস থেকে সদ্য মুক্তি পাওয়া ফুটকি(শুক্র গ্ৰহের) ছবি। তারপর দেখলাম বিজেপি-ফ্যাসিবাদ বিরোধী ব্যক্তিবর্গের ‘গণতন্ত্র’ বাঁচানোর তাগিদা। একের পর এক পোস্ট রাহুল গান্ধী’র পক্ষে। প্রতিটা পোস্টে ফ্যাসিবাদ কে সপাটে চড় মারা হয়েছে। কেউ রাহুল কে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ‘পরিণত’ নেতা বানিয়েছেন আবার কেউ কেউ তো আরো কয়েক লাফ উপরে উঠে বানিয়ে ফেলেছেন ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী –দেশে গণতন্ত্র ফেরানোর কান্ডারী –কর্পোরেট পুঁজির বিপক্ষে রাহুল গান্ধী- ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু সে যাইহোক, আমার অবশ্য এই চাঁদ থেকে মুক্তি পাওয়া শুক্র গ্রহের(ফুটকি) ছবি দেখে বেশ ভালো লেগেছে। মনে হয়েছে, ওই কালো আকাশ টা হলো আমাদের দেশ; আর ফর্সা চমকানো চাঁদটি হলো -সংসদ। যেখানে রয়েছে সমস্ত আলো। আর তলার ছোট্ট ফুটকি’টি হলো –গণতন্ত্র। যা সদ্য মুক্তি পেয়েছে সংসদীয় ‘গ্রাস’ থেকে। এবার সে আমাদের - অন্ধকারাচ্ছন্ন কালো দেশে আসবেই।
রাহুল গান্ধী’কে বহু বছর যাবত এক পক্ত নেতা বানাবার চেষ্টা চলছে। প্রথমে তাঁর দাড়ি বাড়িয়ে ‘দার্শনিক’ দেবতা বানানো হয়েছে। তারপর সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের মন রাখতে এবং বিজেপির থেকে রাহুল যে বেশি ‘হিন্দু’ প্রেমী সেটা দেখাতে মন্দিরে মন্দিরে পুরোহিত হয়ে ঘণ্টা বাজিয়েছে। তারপর সে, মানুষের সাথে মিশতে “ভারত জড়ো” যাত্রার যাত্রী হিসেবে পাহাড় থেকে সাগর ঘুরে বেড়িয়েছে। এতকিছুর মধ্য দিয়ে রাহুল গান্ধী ষোল কলা পূর্ণ করেও একজন পরিণত নেতা হয়ে উঠতে পারেন নি। রাহুল গান্ধীর এই যাত্রা সময় জুড়ে ছত্তিশগড়ে কংগ্রেস সরকার কেন্দ্রের বিজেপি'র সাথে মিলে আদিবাসীদের জল-জঙ্গল-জমিন লুটতে আকাশবোমা বর্ষণ করেছে। হাজারো হাজারো আদিবাসী মানুষকে মিথ্যে মামলায় “মাওবাদী” দাগিয়ে কালাআইনে হাজতে পুড়েছে। এমনকি দেশের মানুষের মনে ‘জঙ্গি’বাদী ভয়-উন্মাদনা ও সংখ্যাগুরু’দের মনের ভেতরকার মুসলমান বিদ্বেষ চাগিয়ে তুলতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের গরীব খেটেখাওয়া মানুষকে মিথ্যে মামলায় কালাআইন ইউএপিএ’তে কাতারে কাতারে বন্দী করে বিজেপি সরকার - তাঁদের জায়গা-জমি, টাকা-পয়সা দখল করে তুলে দিচ্ছে উন্নয়নের নামে বৃহৎ পুঁজির হাতেই। পুলিশ দিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে শ্রমিক’দের একের পর এক বিক্ষোভ। আরএসএস-বিজেপির এই সমস্ত হিন্দুত্ব ফ্যাসিবাদী কাজবাজের বিরুদ্ধে রাহুল গান্ধী সেইসময় জুড়ে কিচ্ছুটি বলেননি। উল্টে সংবাদমাধ্যম এই বিষয়ে তাঁর কাছে জানতে চাইলে বার বার বলেছেন – “আমি দেশ বিরোধী সমস্ত শক্তির বিপক্ষেই”। যার মানে দাঁড়ায় এদেশে শ্রমিক, আদিবাসী কৃষক, খেটখাওয়া মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষগুলি সবাই - দেশ বিরোধী। কেবল দেশপ্রেমী শাসকশ্রেণী।
রাহুল গান্ধী ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী হবেন কিনা সেটা দালাল পুঁজির ভবিষ্যত’ই ঠিক করবে। সেই নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই কিন্তু তিনি যে এই সময় দাঁড়িয়ে দালাল পুঁজির অন্তর্দ্বন্দ্বে নেতা হয়ে উঠছেন এবং দেশের খেটেখাওয়া মানুষের সর্বস্ব লুটতে সরাসরি দালাল পুঁজির পক্ষ নিচ্ছেন তা এসবের মধ্য দিয়েই স্পষ্ট হয়ে আসছে বারেবারে। অর্থাৎ তাহলে এও বোঝা যায় রাহুল গান্ধী কখনোই আর যাইহোক “পুঁজি” বিপক্ষে নয় একদমই কেবল ক্ষমতার পক্ষে। সেও গদি চায় আর চায় দালালির মাপকাঠির শ্রেষ্ঠত্বের জায়গাটি।
এতকিছু পরেও ‘পরিণত’ নেতা হয়ে উঠতে পারলেন না রাহুল গান্ধী। একটু আধটু কাজবাজ করতে করতেই মোদী সাহেব'কে ফের আলটপকা মন্তব্য করে বসলেন। আর একথা সত্যিই ভারতে জাত-পাত ব্যবস্থা, সেন্টিমেন্ট এতটাই প্রকট যে কারোর ‘পদবী’ ধরে বলা মানেই আক্ষরিক অর্থে সেটা হয়ে দাঁড়ায় গোটা সম্প্রদায়’টা কে ধরে বলাই। আবার মোদী সাহেব “ওবিসি” সম্প্রদায়ের মানুষ। অথচ এই মুহূর্তে জাতীয় রাজনীতিতে রয়েছে কত গুরুত্বপূর্ন প্রসঙ্গ; যেগুলি বাতিল করানো জরুরি। যেমন – জাতীয় শিক্ষা নীতি, শ্রমকোড, NPR-NRC ইত্যাদি ইত্যাদি। এত বড় বড় ইতিহাস, এতবড় জাতীয় দলের নেতা রাহুল গান্ধী, তারপরেও কেন এইসব গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে সংসদে আলোচনা করেন না তিনি? কেনো রাস্তায় এসবের বিরুদ্ধে একটিও মিছিল বের করেন না, তিনি? এবিষয়ে জানতে গেলে অবশ্য আমাদের যেতে হবে কংগ্রেসের ইতিহাসে; মনমোহন সিংয়ের আমলে। যিনি অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন ভারতে উদারীকরণ-বেসরকারিকরণ-বিশ্বায়ন তথা সাম্রাজ্যবাদী শোষণের যাবতীয় এজেন্ডার রাস্তা মসৃণ করেছিলেন। ২০০৯ সালের নন্দীগ্রাম-লালগড় আন্দোলনের পর 'সেজ আইন' পরিবর্তনের নামে দিয়েছিলেন ভাঁওতাবাজি। তারপর তো তার করা কাজ এগিয়ে নিয়ে গেছিলেন - অটল বিহারী বাজপেয়ী সাহেব ও এখন সেইসবের আরো নিখুঁত ব্যবহার করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, বিজেপি’র মোদী সাহেব। তাই তো, মোদী সরকার ও তাঁর দলের বহু নেতা মন্ত্রীর মুখে জোর গলায় বারবার শুনে থাকি – আমরা কংগ্রেসের কাজ’ই এগিয়ে নিয়ে চলেছি।
বস্তুত: "বড়লোক'দের গরীব হয়ে যাওয়া" – ফলে নেতামন্ত্রীদের চুরি ডাকাতি, তাঁদের সশস্ত্র উন্মাদ বাহিনীদের তাণ্ডবলীলা; বিচার ব্যবস্থার পুরোপুরি কুপোকাত হওয়া -এই সময় দাড়িয়ে রাহুল গান্ধী’র মত কম বয়সী একজন নেতৃত্বে দরকার। কারণ, অন্যায়-অবিচার শোষণ-নিপীড়ন সইতে সইতে ক্রমে ক্রমে ব্যাপক সাধারণ মানুষের মধ্যে থেকে সংসদীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার উপর আস্থা উঠে যেতে শুরু করেছে। যারা আজকের দিনে সংসদীয় রাজনৈতিক দলগুলির রাজনীতি করতে আসছে, তারা সবকটাই ছাগলছানা; নয়তো হিংস্র ভল্লুক। কেউ আসছে কাজের লোভে লেজুড় হতে। আর কেউ আসছে হিংসার মোহে আজীবন সমাজে হিংসা ছড়াবে বলে। যা দিয়ে পুঁজির কোন সুখ্কর লাভবান ভবিষ্যতের গতি নেই। ফলত, এই ব্যবস্থা ভবিষ্যতে টিকিয়ে রাখতে চাই জাতীয় স্তরে একজন কমবয়সী শিক্ষিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ফুটফুটে নেতা। যার আছে মানুষের মন ভুলিয়ে টিকে থাকবার ক্ষমতা। যাকে দেখে আগ্রহ জন্মাবে ছাত্র-যুব’র সংসদীয় রাজনীতির প্রতি। যারজন্য দাড়ি ওয়ালা রাহুল গাান্ধী ছাড়া জাতীয় স্তরে আর কেউ নেই। আমাদের বাংলার রাজনীতিতে যে জায়গা করছে কিংবা করবার চেষ্টা চালাচ্ছে -নওশাদ সিদ্দিকীর হাত দিয়েই। কিন্তু কী আর করা যাবে! নয়া উদারবাদের নেতিবাচক দিকের প্রকোপ পড়েছে শাসকশ্রেণীর উপরেও। মূলত, যে শ্রেণীর ছাত্রযুব সংসদীয় রাজনীতির প্রতি আগ্রহ দেখাত, তারাই এখন, মোবাইলে ফ্রী ফায়ার খেলতে ও ফেসবুকে রিল বানাতে ব্যস্ত। নয়া উদারবাদী সংস্কৃতির -ভোগবাদী সংস্কৃতিতে মত্ত। আর তাছাড়াও এদের মনেও চাকরি-বাকরি না পাওয়ার টেনশন তো রয়েছেই। যারফলে এঁদের মধ্যে সংসদীয় রাজনীতির প্রতি বিন্দুমাত্র আগ্রহ টুকুও জন্মায় নি। উল্টে জন্মিয়েছে এই রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলের নেতামন্ত্রী’দের প্রতি ঘৃনা, রাগ-ক্ষোভ এবং এই নেতাদের নিয়ে হাসি-মস্করা করবার মতন আগ্রহ। ফলত, সংসদীয় রাজনীতির ভবিষ্যত আজ দাঁড়িয়ে প্রশ্নের মুখে।
রাহুল গান্ধী’র বক্তব্যের প্রেক্ষিত, তাঁর উপরে মোদী সরকারের কেস ও সংসদ থেকে বহিস্কার এরও দুই দিক রয়েছে। এক, রাজপথে ফ্যাসিবাদের চরমে যাওয়ার লক্ষণের আঁচ; দুই, উত্তর-আধুনিক তত্ত্ব অনুযায়ী রাহুল গান্ধী'কে আক্রান্ত বানিয়ে বড় নেতা হিসেবে দাঁড় করানো(যেমন - বিধানসভা ভোটের আগে পা ভেঙে ক্ষমতায় থেকেও মমতা ব্যানার্জি সেজেছিল বিজেপির প্রধান বিরোধী) এবং “কাস্ট” বিষয়ক বক্তব্য ধরে জনগণের মধ্যে আইডেন্টিটি বাইনারী ভাগের রাজনীতি। যারফলে হবে শাসকশ্রেণীর দুটি কাজ হাসিল। (ক)আসছে লোকসভা ভোটে বর্তমান শাসকের মনের মত বিরোধী; (খ) রুজিরুটির প্রশ্ন উধাও করে, জাত-ধর্মের বিভাজনে খেটেখাওয়া মানুষের আন্দোলন গুলিকে ভেতর দিয়ে ভাঙন ধরিয়ে ও মিডিয়ার সামনে সারা দেশের মানুষের চোখে রাহুল গান্ধীর সংসদ পদ বাতিলের খবর মূখ্যে তুলে ধরে তলায় চলমান আন্দোলনগুলির আন্দোলনকারী’দের উপর নামানো আরো ভয়ানক দমন।
তাছাড়াও, রাহুল গান্ধী –মোদী সাহেবের আদানীপ্রেম ধরে যা যা বলছেন সেকথা যেমন সত্যি তেমন মোদী বিরোধী বাকি রাজনৈতিক দলগুলিরও আদানী প্রেমের কমতি নেই, এই কথাও আজ আর কারোর অস্বীকার করবার জায়গা নেই। যাদের মধ্যে অন্যতম –এ রাজ্যে ফ্যাসিবাদী নায়িকা সন্মানীয় মমতা ব্যানার্জি এবং কেরালা ফ্যাসিবাদী নায়ক পিনারাই বিজয়ন জী। একথায় বলতে গেলে, বর্তমানে প্রতিটা রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা শাসক দলের’ই শক্ত মনের আদনী প্রেম প্রশংসনীয়। আর সংসদ-এর নোংরামি; ইতিহাস ধরে এর ফিরিস্তি দিতে বসলে শেষ হবে না। এসবের কাজ শুরুই করে গিয়েছিলেন, জরুরি অবস্থা জারি নেত্রী স্বয়ং - ইন্দিরা গান্ধী।
আমাদের আজ সহজ সরল ভাষায় বোঝা দরকার; ফ্যাসিবাদ তখনি প্রতিষ্ঠিত হয় – যখন শাসকশ্রেণী আর আগের পদ্ধতি গত কায়দায় জনগণ কে শোষণ করে আর পোষাতে পারেনা। এবং শোষিত জনগণও শাসকশ্রেণীর শোষণ আর মেনে নিতে পারে। তখনি আবির্ভাব ঘটে আদানী-আম্বানি’দের মতন ভয়ংকর সন্ত্রাসী একচেটিয়া লগ্নিপুজি গোষ্ঠীর। নতুন সন্ত্রাসী কায়দার শোষণের। আর, ভারতের মতন পিছিয়ে পড়া, বহু জাতি-ধর্ম-ভাষার সম্প্রদায়ের মানুষের অসম বিকাশের দেশে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ফ্যাসিবাদ -কখনোই এক জাতি -পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের মতন হবে না। যেখানে রাহুল গান্ধী'র ফ্যাসিবাদ বিরোধী নেতা হয়ে উঠবারও কোন প্রশ্ন নেই। এই অবস্থায় টেনেটুনে রাহুল গান্ধী দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেলেও দেশের আশঙ্কাজনক অবস্থা পরিবর্তনের কোন লক্ষণও নেই। একবার কালার টিভি দেখবার অভ্যাস হয়ে গেলে আর সাদাকালো টিভি'তে ফেরা যায় নাকি? বর্তমানে মোদী সাহেব দেখাচ্ছেন কালার টিভি। তার জায়গায় যে কেউ এলেই যা আর ফিরবে না কখনোই আগের কালোসাদা টিভি'তে। এতে ফিরতে গেলে পুঁজিরও লোকসান হবে এবং জনগণেরও মন রাখা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।
এখানে ফ্যাসিবাদের উৎসস্থল এবং বিকাশমান পথ হলো আধা সামন্ততান্ত্রিক চক্র ও মুৎসুদ্দি দালাল পুঁজির আঁতাত কেন্দ্রগুলি (পুলিশ-পার্টি-পঞ্চায়েত-সমবায়)। প্রতিটা জায়গা কিংবা অঞ্চলের ফ্যাসিবাদের রূপ, বৈশিষ্ট্য-চরিত্র এক নয় কখনোই। ফ্যাসিবাদ রয়েছে মাঠে-ঘাটে, কল-কারখানা তথা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন থাকবার জায়গা গুলিতে। যেখানকার মানুষের সংসদের সাথে কোন লেনাদেনা নেই। সংসদীয় রাজনৈতিক মন্ত্রী'দের সাথে যেই অঞ্চলের মানুষ গুলির জীবনমান উন্নতির স্বার্থে বিন্দুমাত্র কোন সু-সম্পর্ক নেই। তাই একই ভাবেই ফ্যাসিবাদকে নিশ্চিহ্ন করে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলেও হবে– জনগণের মলশোধনীর জায়গা তথা সংসদের মধ্যে দিয়ে নয়, কিংবা সংসদীয় নেতা-মন্ত্রী'দের হাত ধরে নয় বরং জনগণের থাকবার এক একটি অঞ্চল গুলি একে একে ধরে; খেটেখাওয়া মানুষের রক্তঘাম মিশ্রিত নেতৃত্বের অক্লান্ত লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই।
তবেই ফর্সা চমকানো চাঁদের(সংসদ) গ্রাস থেকে মুক্তি পাওয়া ফুটকি’টি(গণতন্ত্র) আলো নিয়ে আসবে আমাদের কালো অন্ধকারাচ্ছন্ন এই দেশেতে।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।