এ সমস্ত ঐতিহাসিক মতাদর্শগত নৈতিক অবস্থানের জায়গা থেকেই বিজেপি দলটি দেশের ঘটে চলা ক্রমবর্ধমান ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুত্বপূর্ণ জাতি হিংসা এবং ব্রাহ্মণ্যবাদী-পিতৃতান্ত্রিক নারী হিংসা ও ধর্ষণের পক্ষ নেয়। এমন অবস্থান তারা নিজেদের দলের ভেতরেও অনুশীলনের ক্ষেত্রে যথাযথ ভাবে প্রয়োগ করে। এর ফলে রাজ্য বিজেপি দলটির ভেতরেও নারী নেত্রী, কর্মীর আত্মহত্যা খবর সমাজের বুকে উঠে এসেছে। এখন এরাই রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতির অসহায়তার সুযোগে, ফাঁক তালে এ রাজ্যে ক্ষমতা দখলে আর.জি.করের মর্মান্তিক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার রাজনৈতিক সৎকার করতে চাইছে। এ কী রাজ্যের নারী সমাজের অপমান বলে গণ্য হবে, নাকি বিজেপির ঐতিহাসিক মতাদর্শগত নৈতিকতার সন্মানের পুরস্কার হিসেবে স্বীকৃতি পাবে? ... ...
অবশ্যই রাস্তা পরিষ্কার রাখবার প্রয়োজন। শহর থেকে রাজ্য তথা দেশকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবার, আধুনিকীকরণের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু সেই কারণে জনগণের রুজিরুটিতে আঘাত হানলে, তার মানে কী দাঁড়াবে? সরকারের এ কারণ তো সমাজের বুকে নিতান্তই এক অজুহাতে পরিণত হবে এবং লক্ষ্যবস্তু উচ্ছেদ। এ তো কোন সমাধান নয়। এর ফলে বেকারের সংখ্যা বাড়বে। এর থেকে সমাজে হিংসাত্মক চিত্র, চরিত্র বৃদ্ধি পেতে বাধ্য, সমাজ রসাতলের পথেই এগোবে। তাই রাজনৈতিক দলের প্রশ্রয়প্রাপ্ত নেতারা ব্যক্তিগত স্বার্থে, রাজনৈতিক ক্ষমতার আস্ফালনে বুক উঁচিয়ে যেখান সেখানে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া চালাতে পারেন। ফলে সমাজে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছোট ব্যাপারে হিংসার সৃষ্টি হয়, তার থেকে বড় দুর্ঘটনা ঘটে। এ প্রক্রিয়া রাজনৈতিক ভাবে দীর্ঘায়িত হওয়ার ফলে আজ সমাজের গোড়ায় উচ্ছেদপূর্ণ মনোভাব গেঁড়ে বসে আছে। ... ...
বিশ্বায়নের সময় জুড়ে পিছিয়ে পড়া দেশগুলিতে লগ্নি পুঁজির ফাটকা প্রসারের হাত ধরে এবং সামন্তশ্রেনীর অংশের মিলিত বন্ধনে গড়ে উঠেছে নব্য আমলাতান্ত্রিক মুৎসুদ্দী পুঁজিপতিশ্রেনী। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, এদেশের আম্বানি-আদানি গোষ্ঠীদের। যাঁদের দ্বারাই আজ মূলত তৃতীয় বিশ্বে(এ দেশে) সাম্রাজ্যবাদীদের একচেটিয়া লগ্নি পুঁজির লুণ্ঠন অব্যাহত। তবে যেহেতু এই সময় সাম্রাজ্যবাদ স্বল্পমেয়াদি সময়ে একচেটিয়া ফাটকা মুনাফার উপরে বেশি ঝুঁকে পড়ে সেহেতু উৎপাদন - উৎপাদনশীলতা বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে কমতে থাকে যা পুঁজিবাদী উৎপাদন সম্পর্কে মূলে ধাক্কা দেয়(যা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বহু পুঁজিবাদী অর্থনীতিবিদেরা)। ফলে অতি-মুনাফার লোভ, বাজার দখলের প্রয়োজনে পুঁজির বর্ধিত পুনরুৎপাদনের স্বার্থে যুদ্ধ প্রায়শই প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তবে এ পর্বে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি সবসময়ই তৃতীয় বিশ্বের ঘাড়ের উপরে বন্দুক রেখে যুদ্ধ চালাতে চায় এবং নিজেরা সরাসরি সেই যুদ্ধে যুক্ত না হয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অন্যান্য পিছিয়ে পড়া দেশের 'পুতুল' সরকারের মাধ্যমে যুদ্ধ পরিচালনা করতেই তদপর হয়ে উঠে। ... ...
এত বছর ধরে ভোটের আগে নেতা-মন্ত্রীদের আশ্বাস, প্রতিশ্রুতি ও ভোটের পরে ন্যূনতম অধিকারগুলি হারানোর গোলক ধাঁধায় চক্কর খেয়ে মানুষ আজ ক্লান্ত। বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলির রাজনৈতিক সাংস্কৃতি, রাজনৈতিক প্রচারের হিসেব-নিকেশ দেখে ভোট দিয়ে পরিবর্তনের আশা ক্রমাগত হারিয়ে ফেলছে মানুষ। তবে এই নির্বাচনে কেবল ভোটের হার কমছে যে, এমনটা নয়। 'নতুন ভারত'-এর অষ্টাদশ লোকসভার সময়ে এসেও গ্রামে বিদ্যুৎ না থাকা, রাস্তা তৈরি না হওয়া, জল না আসায় পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, মালদা জেলার কয়েকটি গ্রামের বহু শ্রমজীবী-কৃষিজীবী মানুষেরা একত্রিত হয়ে এবারের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহন না করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, 'ভোট বয়কটে'র ডাক দিয়েছেন। ... ...
দেশের শ্রমজীবী মানুষের রাজনৈতিক চেতনা বিকাশ ঘটানোর বদলে পরনির্ভরশীল করে তোলার এমন সস্তার রাজনীতির চাষ, শ্রমজীবী মানুষের উন্নত-জীবনের ভাবনাকে আটকে দেওয়ার কাজ যে কতটা ক্ষতিকর তা এখন হারে হারে টের পাওয়া যায়। এর ফলে রাষ্ট্র শ্রমিকের কাজের বোঝা বিনা বিরোধিতায় ক্রমাগত বাড়িয়ে চলে, শ্রমজীবী মানুষকে ধর্মীয় মোহে মাতিয়ে তুলে একের পর এক জনবিরোধী আইনগুলিকে জ্যান্ত করে লগ্নি পুঁজির স্বার্থ রক্ষা করে, একের পর এক স্ব-তান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিজেদের কব্জায় নিতে পারে। ... ...
এই ‘নির্বাচনী বন্ড’ কেবল বিজেপিদলটির দ্বারা নয় বরং গোটা রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর সাহায্যেই নির্মিত হয়েছে, যা বিজেপি-মোদি সরকারের ব্রাহ্মণ্যবাদী সামন্ততান্ত্রিক কায়দার ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রের ঐতিহাসিক দুর্নীতি রূপেই ভবিষ্যতে উল্লেখিত থাকবে। যার ফলে আজ সংসদীয় গণতন্ত্র পুঁজিতান্ত্রিক ট্র্যাজেডিতে পরিণত হয়েছে, জনগণের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার এখানে সম্পূর্ন কমেডি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের এমন বিপন্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে জনগণের বাস্তবিক অবস্থা সব মিলিয়ে মিশিয়ে ট্র্যাজিকমেডি চরিত্রে পরিণতি হয়েছে। যদিও দেশের বিজেপি-বিরোধী দলগুলির দুর্নীতিবাজ নেতাদের দৌলতে, যাঁদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপরে উঠে দাঁড়িয়েই বিজেপি-মোদি সরকার রাষ্ট্রের একেকটি স্তম্ভ কে হাতিয়ার করে, ব্রাহ্মণ্যবাদী সামন্ততান্ত্রিক কায়দার ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রের আবির্ভাব ঘটিয়েছে। তবুও এখন বিজেপি-বিরোধীদলগুলির এই একচেটিয়া লগ্নিপুঁজি-তন্ত্রের বিরোধিতা করে, নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ধীরে ধীরে দেশের নিপীড়িত-শোষিত কৃষক-শ্রমিক-আদিবাসী-সংখ্যালঘু, ছোট-মাঝারি ব্যবসাদারদের দ্বারস্থ হওয়ার ফলে দেশের জন-গণতন্ত্রের ভবিষ্যত ইতিবাচক দিক বহন করতে পারে। ... ...
বইমেলার শেষদিনে পৌরসভার চুক্তিভিত্তিক সাফাইকর্মী’রা জানালেন, বইমেলা শেষে আবার অন্য কোন মেলায় কিংবা অন্য কোথাও তাঁদের কাজ খুঁজতে হবে। কিন্তু পরেরবার তাঁরা পৌরসভার কর্তাদের বলবেন খানিক মজুরি বাড়াতে। কিন্তু এঁদের কথা মানবে কে? সরকারতো সব ব্যাপারেই বলেন বিরোধীরা উস্কিয়েছে এঁদের। আর গিল্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন রাজনীতি করা চলবে না বইমেলা নিয়ে অথবা বইমেলা প্রাঙ্গণের ভেতরে। আর বেশি কিছু করলে, সামনেই উত্তর বিধাননগর থানার পুলিশবাবু’রা আছেন, আশা করা যায় সবটা সামলে নেবেন। এইরকম কয়েকশো উদাহরণ বইমেলার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে সাজানো রয়েছে। ... ...
এ যুদ্ধ ভারত সরকার শুধু দেশের সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে করেছে এমনটা নয়। দেশি-বিদেশি বৃহৎ পুঁজির গোষ্ঠীগুলির স্বার্থে জল-জঙ্গল-জমিন লুটতে আদিবাসী অঞ্চলগুলিতে কেবল বোমা-বারুদ এর ধোঁয়া উড়াচ্ছে এমনটাও নয়। ভারত সরকার আক্রমনকারী বিদেশী সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীগুলির মদতপুষ্ট এদেশের টাটা, বিড়লা – আম্বানি, আদানি, মতন বৃহৎ পুঁজিপতি’দের হাতে দেশের অস্ত্র ভান্ডার গুলিও একে একে তুলে দিয়েছে। ... ...