ক্ষমতায় বসে কিংবা সংসদে পা রেখেই হাতেখড়ি হয় দুর্নীতির অথবা দুর্নীতিতে পারদর্শী হয়ে উঠবার সাথে সাথে ঠাঁই হয় সংসদে। তারপর ধীরে ধীরে হাত পেকে যায়। কোন রাজনৈতিকদলই বাদ নেই এতে। এটা সংসদীয় গণতন্ত্রের একপ্রকার ট্র্যাজেডি। এর ফলে দেশের অর্থনীতি ক্রমশ গুটিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু তারপর আসে ভয়ানক সময়; পালা বদল হয়, ক্ষমতায় বসে দুর্নীতি ‘বিরোধী’ শক্তিশালী শাসক। তখন সমাজ পরিণত হয় দুর্নীতির-কমেডিতে। এই কমেডি ক্রমেই ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রের আবির্ভাবের সহায়ক হয়ে উঠে। জনগণের পরিণতি হয় ট্র্যাজিকমেডি চরিত্রে। সেই ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রের আবির্ভাবের খাতিরে তৈরি হয় ‘নয়া ভারত’-এ স্বচ্ছতার মান বজায় রাখতে ‘নির্বাচনী বন্ড’। যা আসলে একটি ঐতিহাসিক দুর্নীতি ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রের। কেন?
দুর্নীতি দেশ ভাগের পর থেকেই শুরু হয়েছিল এ ভারতে, ১৯৪৮ সালে ‘জিপ কেলেঙ্কারির’ মাধ্যমে। তা শেষ কংগ্রেস আমলে কয়লা কেলেঙ্কারি, টুজি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি, কমনওয়েলথ গেমস কেলেঙ্কারিতে গিয়ে ঠেকে ২০১৪ সালে। এছাড়াও রাজ্যসরকারগুলির আঞ্চলিক স্তরে তো দুর্নীতি সর্বত্রই চলতে থাকে, প্রতিটা শাসকের আমলে। ২০০৫ সালে ‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল’ দ্বারা পরিচালিত একটি সমীক্ষা রেকর্ড প্রকাশিত হয়, তাতে দেখা যায়, ৬২ শতাংশের বেশি ভারতীয় কোনো না কোনো সময়ে একজন সরকারি কর্মকর্তাকে চাকরির জন্য ঘুষ দিয়ে থাকে। ২০০৮ সালে, অন্য আরেকটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রায় ৫০ শতাংশ ভারতীয়দের শাসককে ঘুষ দেওয়ার মাধ্যমে সরকারি অফিসের পরিষেবা পেতে হয়। আর এখন তো আমরা দেখতে পাচ্ছি, দূর্নীতির স্বর্গ ভূমি-কে।
২০১৪ সালে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসবার পর থেকে এ সমস্ত কিছুর বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশকে দুর্নীতি মুক্ত করবেন বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন বিজেপির-মোদি সরকার। এই প্রসঙ্গে গতবছরের শুরুর দিকে বিরোধী দলগুলিকে কটাক্ষ করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, “দেশে ভ্রষ্টাচারী বাঁচাও আন্দোলন চলছে।” অবশ্য তার পরের ‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল’-এর ২০২৩ সালের রিপোর্ট অন্য কথা বলে; তাতে দেখা গেছে, ভারত ৩৯ নম্বর পেয়ে ১৮০টি দেশের মধ্যে ৯৩তম স্থানে রয়েছে, যাতে ২০২২ সালে ৮৫ তম স্থানে ছিল ভারত। অর্থাৎ মোদি সরকারের কঠোর দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন চলবার পরেও ভারতরাষ্ট্র গত এক বছরে(২০২২-২৩) দুর্নীতিতে কয়েক ধাপ এগিয়েছে।
ভারতের প্রতিটা রাজনৈতিকদলের দুর্নীতি করবার অন্যতম প্রধান জায়গা হল, নির্বাচন। এ বিষয় কে না জানে যে, এই নির্বাচনের মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি কালো টাকা উড়ে ভারতীয় বাতাসে। তাই মোদি সরকার সমস্ত ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং দুর্নীতিবাজদের শায়েস্তা করতে প্রথমে করলেন নোট বদলি, জিএসটি। তারপর বিজেপি-মোদি সরকারের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন ২০১৮ সালে প্রয়াত অরুণ জেটলি ‘নির্বাচনী বন্ডে’-র কথা ঘোষণা করলেন। ২০১৭-র অর্থ বিলের মাধ্যমে আইনে একগুচ্ছ সংশোধনী এনে বিজেপি-মোদি সরকার ২০১৮ থেকে ‘নির্বাচনী বন্ড’ চালু করলেন। এটি চালু করবার পেছনে তাঁদের প্রধান যুক্তি ছিল, স্বচ্ছ ভারত স্বচ্ছ নির্বাচন। কিন্তু তখন থেকেই এর পেছনে লেগে পড়লেন নীতিন শেট নামে এক বিশিষ্ট সাংবাদিক, কয়েকজন বিচারপতি এবং হাতে গোনা কিছু রাজনৈতিক নেতারা। তাঁদের প্রথম থেকে অভিযোগ, এই বন্ড অ-সাংবিধানিক এবং সব থেকে বড় দুর্নীতি বিজেপি সরকারের। তা ২০১৮-১৯ সালে খাতা কলমে কষেও দেখালেন, সাংবাদিক নীতিন শেট। কেস হল নির্বাচনী বন্ডের বিরুদ্ধে। কিন্তু কে কার কথা শোনে? দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধতার কথা মতন বিজেপি-মোদি সরকার এরই মাঝে ইডি-সিবিআই দিয়ে বিরোধীদলের দুর্নীতিবাজদের শায়েস্তা করতে লাগলেন। শুরু হল তদন্ত, ধরা পড়লো বিরোধীদলের তাবড়-তাবড় দুর্নীতিবাজ নেতারা। এরই মধ্য দিয়ে ও সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘হিন্দু’দের ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুত্বের মোহে ডুবিয়ে মোদি সরকার নিজের রাজনৈতিক ক্ষমতার খুঁটিগুলি পোক্ত করলেন এবং তার সাথে বিভিন্ন ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুত্ব সামন্ততান্ত্রিক কায়দায় চলা বিভিন্ন শক্তিগুলির দ্বারা নির্মিত মুসলমান-দলিত-আদিবাসী বিদ্বেষী সশস্ত্র পান্ডাদের ধরে সারা দেশজুড়ে অঞ্চলে অঞ্চলে ব্রাহ্মণ্যবাদী সামন্ততান্ত্রিক কায়দায় ফ্যাসিবাদী গণ-আন্দোলনের উত্থান ঘটালেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার জোরে – এই ছিল প্রধানত অন্যতম বিজেপি-মোদি সরকারের ফ্যাসিবাদ কায়েম করবার প্রধান দুই রাজনৈতিক অঙ্ক।
এই গোটা সময় জুড়ে অর্থাৎ ২০১৭ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সংসদে হয়ে গেল বিশেষ কিছু আইন পাশ; একতরফা ভাবে লগ্নিপুঁজির স্বার্থে। যেমন – কৃষি আইন, শ্রমকোড, বনাধিকার আইন ইত্যাদি। এগুলোকে সংসদে পাশ করানো পর বাস্তবের মাটিতে লাগু করবার স্বার্থে শুরু করলেন, একচ্ছত্র ভাবে রাষ্ট্রীয় সেনাবল, কেন্দ্রীয় এজেন্সি এনআইএ-এর সর্বাত্মক ব্যবহার দেশের কৃষক-শ্রমিক-আদিবাসী-সংখ্যালঘু জনগণের উপরে। তাঁদের কখনো মাওবাদী, কখনো ইসলামিক সন্ত্রাসীবাদী দাগিয়ে, দেশের সেনাবাহিনীকে উগ্র দেশাত্মবোধক-ব্রাহ্মণ্যবাদী সামন্ততান্ত্রিক কায়দার চেতনায় মাতিয়ে। এই করে এতদিনে মূলত, দুই অংশের কাছে নাম কামিয়ে ফেললেন মোদি সরকার; যাঁদের মধ্যে (প্রথম) অংশ লগ্নিপুঁজি, এর দ্বারা পরিচালিত এদেশের বৃহৎ পুঁজি-তন্ত্র। এঁদের, বিভিন্ন আইন পাশ ও সেনাবাহিনী, এনআইএ-এর বিভিন্ন তাক লাগানো অপারেশনের মাধ্যেমে বার্তা দিতে চাইলেন, ভারতের মাটিতে লগ্নিপুঁজি অবাধ প্রসারের পথ প্রশস্ত হয়েছে/হচ্ছে। আর (দ্বিতীয়) অংশ হিন্দুত্বের মোহে মানসিক সমস্যায় ভুগতে থাকা এক অংশের উচ্চমধ্যবিত্ত-মধ্যবিত্ত ও কয়েক শতাংশ শ্রমজীবী মানুষ। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ মোদি সরকারকে নিজেদের ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক ক্ষমতার ব্যবহারের স্বার্থের শ্রেষ্ঠ নেতা বলে মনে করেন। আবার, কয়েক শতাংশ শ্রমজীবী মানুষ প্রধানত বিভিন্ন ব্রাহ্মণ্যবাদী-সামন্ততান্ত্রিক কায়দায় চলা ফ্যাসিবাদী অপপ্রচারের শিকার হয়ে মনে করেন, মোদি সরকার হিন্দুত্ব তথা দেশ-বিকাশের প্রকৃত নায়ক(কলিযুগের অবতার)।
অবশেষে দুর্নীতি বিরোধী, দেশপ্রেমী মোদি সরকারের গোপন রহস্য প্রকাশ্যে এলো ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সালে। যে সুপ্রিম কোর্ট এতদিন মুখ বুঝে মোদি সরকারের হয়ে(অভিযোগ মতন) কাজ করে যাচ্ছিলেন তাঁরাই জানালেন, ‘নির্বাচনী বন্ড’ জনগণের সমান-অধিকার আইন(অনুচ্ছেদ ১৪) ও তথ্য-অধিকার আইন এবং সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৯(১)(এ)কে লঙ্ঘন করে, এটি অসাংবিধানিক। ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস’(এডিআর)-এর রিপোর্ট অনুসারে এই বন্ডের মারফত বিজেপি ২০২২-২০২৩ সালে দেশী-বিদেশী বৃহৎ পুঁজিপতিদের থেকে চাঁদার ৯০ শতাংশ পেয়েছে। ২০২২-২০২৩ সালে, এই বন্ডের মাধ্যমে জাতীয় দলগুলি চাঁদা হিসাবে মোট ৮৫০.৪৩৮ কোটি টাকা পেয়েছে। এর মধ্যে, বিজেপি পেয়েছে ৭১৯.৮৫ কোটি টাকা এবং কংগ্রেস পেয়েছে ৭৯.৯২ কোটি টাকা। সামান্য কিছু পেয়েছে তৃণমূল-সহ আরো কিছু রাজনৈতিকদলগুলি। ২০১৭-১৮ থেকে ২০২২-২৩-এর মধ্যে মোট ১৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বন্ড বিক্রি হয়েছে। চাঁদা প্রাপ্তির তালিকায় শীর্ষে বিজেপি। যদিও এত চাঁদা পেতে প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে বিজেপি-মোদি সরকারকে। আরবিআই আইন(১৯৩৪)-এর সংস্কার আনতে হয়েছে, ২০১৭ সালে। এর সাথে বৃহৎ পুঁজিপতিদের কোম্পানি আইনের(২০১৩ ফিন্যান্স ক্যাপ) সংস্কার করতে হয়েছে। এই আইনি সংস্কারগুলির মধ্যে দিয়েই সংসদীয় রাজনৈতিক দলগুলিকে দেশী-বিদেশী পুঁজিপতিদের একশো শতাংশ চাঁদা দেওয়ার সুযোগ এবং তার বদলে দেশী-বিদেশী পুঁজিপতিদের ব্যবসায়িক স্বার্থে একশো শতাংশ সুযোগ-সুবিধা, ছাড়ের পথ তৈরি করে দেয় বিজেপি-মোদি সরকার। অতএব, লগ্নিপুঁজি ভারতরাষ্ট্রের রাজনৈতিকদলগুলিকে এই চাঁদা দিয়ে আসলে বিনিয়োগ করেছে আর ভারতীয় শাসক তার পরিবর্তে দেশী-বিদেশী পুঁজিপতিদের ভারত থেকে অতিরিক্ত মাত্রার মুনাফা উঠিয়ে নিতে সব রকম ছাড়, সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। যার পরিনামে দেশী-বিদেশী পুঁজিপতিদের একশো শতাংশ স্বার্থের একের পর এক জনবিরোধী আইন সংসদ থেকে পাশ হয়ে বেরিয়েছে, জনগণের উদ্বৃত্ত লুট করে বিজয় মাল্য, নীরব মোদি-রা বিদেশে পালাতে পেরেছে।
বলে রাখা ভালো, এই ‘নির্বাচনী বন্ড’ কেবল ‘স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া’ রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দেওয়ার জন্য ইস্যু করতে পারে। এই ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট রয়েছে এবং কেওয়াইসি করা আছে, এমন ব্যক্তি/সংস্থা ওই বন্ড কিনতে পারে৷ কিন্তু মজার বিষয় যিনি এই বন্ডে চাঁদা দিচ্ছেন তার নাম গোপন থাকে। যার অর্থ, বন্ড কিনে যেই চাঁদা দেওয়া হয়েছে, খালি সেই(ব্যক্তি, সংস্থা) এবং ভারত সরকার(বিজেপি) ছাড়া আর কেউ জানতে পারে না কিংবা কোন রাজনৈতিকদলের-ও জানার অধিকার ছিলনা। এই বন্ড এতদিন ‘ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্কে’র নির্দিষ্ট শাখা থেকে এক হাজার, দশ হাজার, এক লক্ষ, দশ লক্ষ এবং এক কোটি টাকার মধ্যে যে কোনও মূল্যের নির্বাচনী বন্ড কেনা যেত। যার মেয়াদ ছিল মাত্র ১৫ দিন। এখন গোটা পাঁচ বছর বাদে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের গোঁড়ায় এসে, এ বিষয়ে ‘ভারতীয় স্টেট ব্যাংক’-কে সুপ্রিমকোর্ট নির্দেশ করলেন - যাঁরা নির্বাচনী বন্ড কিনেছেন, ৬ মার্চের মধ্যে তাঁদের নাম ও বন্ড কেনার তারিখ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জমা দিতে হবে নির্বাচন কমিশনের কাছে। জমা দিতে হবে, যেসব রাজনৈতিক দল নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে চাঁদা পেয়েছে তাদের বিস্তারিত বিবরণ। এই বিষয়ে দেশের নির্বাচন কমিশনকেও নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বলেছেন, 'নির্বাচনী বন্ডে'র মাধ্যমে রাজনৈতিকদলগুলি যে অনুদান নিয়েছে তার বিস্তারিত তথ্য কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে ১৩ মার্চের মধ্যে। যা নিয়ে আবার ভারত সরকারের(বিজেপি) আইনি উপদেষ্টার প্রধান বলেছেন, যুক্তিসঙ্গত বিধিনিষেধের অধীন না হয়েও নাগরিকদের সমস্ত কিছু জানার অধিকার থাকতে পারে না। অর্থাৎ বিজেপি-মোদি সরকারের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার জোরে উত্তরোত্তর বাড়তে থাকা রাষ্ট্রীয় ব্রাহ্মণ্যবাদী সামন্ততান্ত্রিক কায়দার ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক ঘটনাবলী দেখে এও আশঙ্কা করা যেতে পারে, বন্ডের দ্বারা সব থেকে বেশি লাভবান বিজেপি-মোদি সরকার নিজেদের চাঁদা উঠিয়ে নিয়ে লোকসভা ভোটের একদম মুখে দাঁড়িয়ে এর ব্যবহার বন্ধ করালেন। যাতে বিরোধীদের ভোটের প্রচারের ঘাটতি বারে। তাই এই মুহূর্তে আয়কর দফতরের অভিযানে বিরোধীদের পার্টি অফিসের একাউন্টগুলি ‘ফ্রিজ’ করা হচ্ছে, নেতা-দলের ব্যাংক একাউন্টগুলিও বন্ধ করা হচ্ছে। নইলে সুপ্রিমকোর্ট এইরকম একটা গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে এত ঢিলেমি কেন করবে? কেনই বা পাঁচ বছরে শেষে ভোটের মুখে এসে এ রায় দেবে? যেখানে গত বছরের নভেম্বর মাসে বিচারপতিদের কাছে এই বন্ড সমন্ধে খোলসা হয়ে গিয়েছিল।
এই ‘নির্বাচনী বন্ড’ কেবল বিজেপিদলটির দ্বারা নয় বরং গোটা রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর সাহায্যেই নির্মিত হয়েছে, যা বিজেপি-মোদি সরকারের ব্রাহ্মণ্যবাদী সামন্ততান্ত্রিক কায়দার ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রের ঐতিহাসিক দুর্নীতি রূপেই ভবিষ্যতে উল্লেখিত থাকবে। যার ফলে আজ সংসদীয় গণতন্ত্র পুঁজিতান্ত্রিক ট্র্যাজেডিতে পরিণত হয়েছে, জনগণের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার এখানে সম্পূর্ন কমেডি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের এমন বিপন্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে জনগণের বাস্তবিক অবস্থা সব মিলিয়ে মিশিয়ে ট্র্যাজিকমেডি চরিত্রে পরিণতি হয়েছে। যদিও দেশের বিজেপি-বিরোধী দলগুলির দুর্নীতিবাজ নেতাদের দৌলতে, যাঁদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপরে উঠে দাঁড়িয়েই বিজেপি-মোদি সরকার রাষ্ট্রের একেকটি স্তম্ভ কে হাতিয়ার করে, ব্রাহ্মণ্যবাদী সামন্ততান্ত্রিক কায়দার ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রের আবির্ভাব ঘটিয়েছে। তবুও এখন বিজেপি-বিরোধীদলগুলির এই একচেটিয়া লগ্নিপুঁজি-তন্ত্রের বিরোধিতা করে, নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ধীরে ধীরে দেশের নিপীড়িত-শোষিত কৃষক-শ্রমিক-আদিবাসী-সংখ্যালঘু, ছোট-মাঝারি ব্যবসাদারদের দ্বারস্থ হওয়ার ফলে দেশের জন-গণতন্ত্রের ভবিষ্যত ইতিবাচক দিক বহন করতে পারে।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।