এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  সিনেমা

  • অ্যালফ্রেড হিচককের ছবি – অপরাধের অন্তরাল

    শুভদীপ ঘোষ
    আলোচনা | সিনেমা | ২২ আগস্ট ২০২২ | ২৫৫৭ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৬ জন)

  • ফিল্ম আর্কাইভের প্রতিশ্রুতি থাকতো প্রত্যেক বুধবার করে। প্রত্যেক বুধবার সন্ধ্যা ছ-টায় দেখানো হত ওয়ার্ল্ড ক্লাসিক, নন্দন তিন-এ। তবে সব বুধবার হত না। আর্কাইভের একটা ফোন নম্বর জোগাড় করেছিলাম আমরা। বুধবার শো-য়ের ঘণ্টা তিনেক আগে ফোন করে কি ছবি এবং তার থেকেও বড় হল আজ দেখানো হবে কিনা সেটা নিশ্চিত করে নেওয়া হত। ৯৮-৯৯ সাল ও শূন্য দশকের শুরুর দিকে নন্দনের অধিকর্তা ছিলেন অংশু শূর। কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব, সিনে সেন্ট্রাল, আইজেন্সটাইন সিনে ক্লাব, আর্কাইভের শো ও আরো অনেক ফিল্ম সোসাইটি - এসব মিলিয়েও আমরা পরিমিত আহার পাচ্ছি না মনে করেই সম্ভবত নন্দনে শুরু হল মাসিক রেট্রোস্পেক্টিভ! নন্দনের অধিকর্তা বদলে গিয়ে তখন নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। প্রত্যেক মাসে না হলেও মোটামুটি নিয়মিতভাবেই মাসের শেষে নির্দিষ্ট পরিচালকের এক-গুচ্ছ ছবি দেখানো হত। নন্দনের মূল গেট দিয়ে ঢোকার আগে বাঁ-দিকের কাঁচের শোকেসে নতুবা ডান দিকে দাঁড় করানো স্ট্যান্ডে আটকানো থাকতো এই কর্মসূচির কাগজ। ছবিগুলি দেখানো হবে নন্দন দুই-এ। যারা দেখতে ইচ্ছুক তাদের উদ্দেশ্যে নির্দেশ থাকত নন্দনের লাইব্রেরি থেকে বিনি পয়সার পাস জোগাড় করে নেওয়ার! প্রথম রেট্রোস্পেক্টিভ দেখানো হয় অ্যালফ্রেড হিচককের (১৮৯৯-১৯৮০)! চারটি ছবির কথা পরিষ্কার মনে আছে, 'রোপ'(১৯৪৮), 'রিয়ার উইন্ডো'(১৯৫৪), 'সাইকো'(১৯৬০) এবং 'দা বার্ডস'(১৯৬৩)!

    'নাম্বার থার্টিন'(১৯২২) বা 'অলওয়েজ টেল ইওর ওয়াইফ'(১৯২৩)-এর কথা বলা হলেও, সঠিক অর্থে হিচককের প্রথম ছবি 'দা লজার'(১৯২৭)। এই ছবি সম্পাদনা করেছিলেন বিখ্যাত চিত্রতাত্ত্বিক, বামপন্থী কর্মী, রাশিয়ার চর হিসেবে পরিচিত ইভর মন্টাগু (১৯০৪-১৯৮৪)! শুরুর ছবি থেকে ১৯৪০ পর্যন্ত নির্বাক-সবাক মিলিয়ে কমবেশি মোট তেইশটি ছবি হিচকক করেছিলেন ইংল্যান্ডে, তাঁর জন্মভূমিতে। বিখ্যাত ব্রিটিশ উপন্যাসিক ড্যাফনে ডু মরিয়ারের (১৯০৭-১৯৮৯) 'দা রেবেকা নোটবুক' থেকে ১৯৪০-এ করা 'রেবেকা' হিচককের হলিউডে করা প্রথম ছবি। 'দা লজার'-এর সময় থেকেই তাঁর জনপ্রিয়তার পারদ ঊর্ধমুখী, হলিউডে আসার পর বলা বাহুল্য মর্যাদার বিচারে তাঁর স্থান চ্যাপলিনের সঙ্গে বিবেচিত হতে শুরু করে! ইংল্যান্ড ও চলচ্চিত্র যেন পরস্পর বিরোধী! ইংল্যান্ড পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নাট্যকারের দেশ, বিশাল মাপের সমস্ত কবি-সাহিত্যিকের দেশও, কিন্তু সিনেমার এত বছরের ইতিহাসে দুজন মাত্র চিত্রপরিচালক কালজয়ী হতে পেরেছেন, একজন চ্যাপলিন ও অন্যজন হিচকক! ১৯২৫ পর্যন্ত ইংল্যান্ডে সিনেমার নামে যা হত তা খুবই নিম্নমানের ব্যাপার। ১৯২৫-২৬ নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র ফরাসি চলচ্চিত্রকার রেনে ক্লেয়ারের(১৮৯৮-১৯৮১) ছবি ও রাশিয়ান কিছু ছবি দেখে সিনেমার প্রতি উৎসাহী হয়। এদের থেকেই জন্ম হয় লন্ডন ফিল্ম সোসাইটির। আমেরিকার চিত্রপরিচালক ডি ডব্লিউ গ্রিফিতের(১৮৭৫-১৯৪৮) 'বার্থ অফ এ নেশন', 'ইন্টলারেন্স' ইত্যাদি ছবি গুলি হিচককের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। নির্বাক চলচ্চিত্রে টাইটেল কার্ড লেখার কাজ দিয়ে তাঁর সিনেমায় হাতেখড়ি! দেহের অঙ্গভঙ্গিতে অতিরিক্ত অর্থের সঞ্চার করা কিংবা গল্পের একটি মুহূর্তকে বিশেষ হিসেবে সূচিত করার ব্যাপারে এই টাইটেল কার্ডগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল । হিচকক এগুলির মধ্যে নানারকম নতুনত্ব নিয়ে আসেন ও এগুলিকে করে তোলেন আরও চিত্তাকর্ষক! ইংল্যান্ডে কর্ম জীবনের শুরু থেকেই তিনি লক্ষ্য করতেন ব্যবহৃত ক্যামেরাগুলো আমেরিকান, যে ফিল্মে ছবি তুলছেন সেটা কোডাক, লাইটগুলোও আমেরিকান। নিউইয়র্কের ভূগোলও ছিল তাঁর নখদর্পণে! ইংল্যান্ডে পরিচালনার কাজ করার সময় থেকেই তাঁর ইচ্ছে করত আমেরিকান কায়দায় ছবি করতে, ফলত হলিউডে ছবি করতে এসে তিনি ব্রিটিশ ধারাটি সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করেন।

    হিচকককে বলা হয় 'দা মাস্টার অফ সাসপেন্স'। এসব সিনেমার চারু-শিল্পে উপনীত হওয়ার ঊষালগ্নের কথা। এ কাজে সচেতনভাবে বা নিখাদ ভালোলাগার জায়গা থেকে যারা ব্রতী হয়েছিলেন হিচকক ছিলেন তাদের মধ্যে একজন। এডগার আল্যান পো-য়ের বিচরণ ক্ষেত্র ছিল ভীতি ও উৎকণ্ঠা উদ্রেককারী গল্পের জগত। কিন্তু সেই জন্য যেমন সেরা ও অগ্রগামী ছোট-গল্পকার দের একজন হিসেবে তাঁর কৃতিত্ব কিছুমাত্র কমে না, হিচককের ক্ষেত্রেও তাই। উৎকণ্ঠা ও রহস্য-রোমাঞ্চের পরিধির মধ্যেই কেবল আবর্তিত হয়েছে তাঁর ছবি! ছোট বয়সের অপরিপক্ব মনে আঘাত হানা ঘটনা নির্জ্ঞান মনে বিলুপ্ত থেকে আজীবন নিয়ন্ত্রণ করে যায় মানুষের ভাবনাকে – সিগমুন্ড ফ্রয়েড(১৮৫৬-১৯৩৯) এরকম মত পোষণ করতেন। পাঁচ বছর বয়সের একটি শিশুকে তাঁর বাবা একবার একটি চিরকুট হাতে দিয়ে পাঠিয়েছিলেন স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে! সার্জেন্ট ভদ্রলোক ছিলেন বাবার বন্ধু। চিরকুটটি পড়ে তিনি শিশুটিকে গারদে বন্দি করে বাইরে থেকে তালা দিয়ে দেন। কয়েদিদের সঙ্গে দশ মিনিট থাকার অভিজ্ঞতা হয়েছিল শিশুটির! দশ মিনিট পরে ছেলেটিকে মুক্তি দিয়ে সার্জেন্ট বলেছিলেন, 'মনে রেখো, অবাধ্য ছেলেদের আমরা এইভাবে বন্দি করে রাখি'! শিশুটির নাম - অ্যালফ্রেড হিচকক। অন্যায়ভাবে অবরুদ্ধ করে রাখার এই অভিজ্ঞতা সে সারা জীবনেও ভোলেনি। নিরপরাধ মানুষের ফেঁসে যাওয়ার ভীতি তাঁর ছবিতে বারবার এসেছে। অপরাধীর সঙ্গে মানুষ একাত্মতা বোধ করে না । বরং একজন নিরপরাধ, দর্শক জানে সেটা, কিন্তু সে ফেঁসে যাচ্ছে, এতে চরিত্রটির উৎকণ্ঠা দর্শক নিজের মধ্যে টের পায়। উদ্বেগ ও ভীতিকে এতে আরো গাঢ় করে তোলা যায়। প্রকৃত অপরাধীর হাতকড়া পড়ে গারদ-গমনের দৃশ্যও তাঁর ছবিতে ফিরে ফিরে এসেছে। 'দা লজার'-এও হাতকড়া পড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য আছে। হিচকক দেখেছেন হাতকড়া পড়িয়ে কাউকে জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এই ছবি খবরের কাগজ-ওয়ালারা ছাপতে যতটা ভালোবাসে পাঠক সেই ছবি দেখতে ও তৎসংলগ্ন ঘটনা জানতে তার চাইতেও বেশি আগ্রহী।

    একটি শট-কে চলচ্চিত্রে কতটা প্রলম্বিত করা যায়? রাশিয়ার প্রখ্যাত পরিচালক আলেক্সান্ডার সকুরভের(১৯৫১-) কাজের সঙ্গে যারা পরিচিত তারা জানেন একটি শটেই একটা গোটা ছবি তৈরি হতে পারে! হ্যাঁ, সকুরভের 'রাশিয়ান আর্ক' ছবিটি একটি শটে নির্মিত! 'রাশিয়ান আর্ক' (২০০২) প্রকৃত প্রস্তাবে ইতিহাস নামক প্রতি-মুহূর্তে বিলীয়মান সময়ের অন্দরে দীর্ঘকাল ডুবে থাকার গল্প। জার্মান পরিচালক সেবাস্তিয়ান শিপারের (১৯৬৮-) ২০১৫ সালে নির্মিত 'ভিক্টোরিয়া' একটি রুদ্ধশ্বাস ক্রাইম-থ্রিলার, এ ছবিও একটি শটে নির্মিত। হাঙ্গেরির প্রখ্যাত পরিচালক বেলা টারের(১৯৫৫-) কাজের সঙ্গে যারা পরিচিত তারা জানেন প্রলম্বিত শট গুলির নান্দনিক সৌন্দর্যের জন্যই তিনি ভুবন-বিখ্যাত। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘস্থায়ী শটের এই আইডিয়ার উৎসে গেলে আমরা কিন্তু গিয়ে পৌঁছবো হিচককের 'রোপ' ছবিটিতে। প্যাট্রিক হ্যামিল্টনের(১৯০৪-১৯৬২) একই নামের একটি নাটক থেকে মোট এগারোটি দীর্ঘস্থায়ী শটে নির্মিত হয়েছিল গোটা ছবিটি। চলচ্চিত্রে ঘটনাক্রমে বা গল্পের নির্মিতিতে দৃশ্যকে কাটা অর্থাৎ সম্পাদনা ও মন্তাজের যে গুরুত্ব হিচককের নিজের কাজেই স্বীকৃত এ ছবিতে তিনি হেঁটেছেন সম্পূর্ণ উল্টো রাস্তায়। এটি তাঁর প্রথম রঙিন ছবি এবং নিজের প্রযোজনায় নির্মিত প্রথম ছবিও। চলচ্চিত্রের মত ফিজিক্যাল মাধ্যমে নানাবিধ গিমিকের হাতছানি থাকে। গিমিক সর্বস্ব ছবির সংখ্যাও নেহাত কম নয়। কিন্তু ‘রোপ’ যেহেতু একটি নাটক, তাই হিচকক চেয়েছিলেন নাটকের মঞ্চ-মায়াকে চলচ্চিত্রের মত সর্বভুক মাধ্যমে অঙ্গীভূত করতে। দ্বিতীয়ত মন্তাজের প্রতি প্রস্তাব হিসেবে নিরবধি কালের ভিতর দিয়ে ক্যামেরার যাত্রার যে চরম ব্যবহার আমরা আন্দ্রেই তারকভস্কির(১৯৩২-১৯৮৬) মত পরিচালকের ছবিতে পরবর্তী কালে দেখেছি তারও পদধ্বনি যেন হিচককের এই ছবিতে পাওয়া যায়। নিউইয়র্ক শহরে দ্বিপ্রহর, প্রথম শটে ক্যামেরা বাহিরমহল থেকে অন্দরমহলে আসে একটি প্রথাগত কাটের মাধ্যমে। ব্যাস, এরপর আর এরকম কাট নেই! অন্যভাবে আছে। দুজন শিল্প বোদ্ধা যাদের এককালে aesthetes বলা হত, তাঁরা গলায় ফাঁস দিয়ে তাদেরই এক বন্ধুকে হত্যা করে শুধুমাত্র এটা প্রমাণ করার জন্য যে এই নির্ভুল হত্যা-কর্মটি আসলে একটি শিল্পকর্ম। এই শিল্পকর্ম মানুষ হিসেবে তাদের শ্রেষ্ঠতর প্রতিপন্ন করবে! ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ফ্রান্সের থিওফিল গুইতাররা (১৮১১-১৮৭২) l'art pour l'art (art for art’s sake) বা শিল্পের জন্য শিল্পের কথা বলতেন। এই নিয়ে আজও অমীমাংসিত তর্ক-বিতর্ক আছে। নীতি, নৈতিকতা, রাজনীতি, উপযোগিতা ইত্যাদিকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে বা বলা ভাল এগুলি থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে শিল্পের জন্য শিল্প আসলে ধর্মতত্ত্বের লক্ষণ কিনা ‘রোপ’ সেই প্রশ্ন পুনরায় উত্থাপন করে। উদ্বেগে উৎকণ্ঠায় ভরা টান টান এই ছবিতে কোনো ফেড বা ডিসল্ভ নেই। মঞ্চের উপর অতিরিক্ত দর্শকের মত ক্যামেরা চরিত্রগুলিকে অনুসরণ করে চলে শুধু। দীর্ঘস্থায়ী শটের ব্যবধানে কাট আসে কিন্তু কাট করা হয় কোনো না কোনো ডার্ক অবজেক্টের উপর! প্রথম কাটের পরে যেমন প্রায় দশ মিনিটের ব্যবধানে ব্র্যান্ডনের (দু'জন খুনির একজন, জন ডাল অভিনীত) গাঢ় নীল কোটের পিছনে দ্বিতীয় কাটটি হয়! ডার্ক অবজেক্টের উপর কাট করা ও পরের শটটিও ঐ ডার্ক অবজেক্টের উপর থেকেই শুরু করা, এই পদ্ধতিতে গোটা ছবিটি নির্মিত হওয়ায় একটিই শটে সবটা হচ্ছে এরকম একটা বিভ্রম তৈরি হয় দর্শকের মধ্যে! এই উদ্ভাবন সে যুগের নিরিখে তারিফ যোগ্য মানতেই হবে। রি-টেক এক্ষেত্রে ব্যয়বহুল ও পরিশ্রম সাপেক্ষ, তাই মঞ্চে অভিনয়ের মত করে অভিনেতাদের মহড়া দেওয়ানো হয়। মোট আঠেরো দিনে ছবির শুটিং শেষ হয়। নিউইয়র্কের উঁচু অট্টালিকা ছবির সেট, পিছনের দেওয়াল জোড়া জানালা দিয়ে বাইরে শহরটা দেখা যাচ্ছে। দ্বিপ্রহরিক আলোয় শুরু হয়ে সন্ধ্যা পেরোনো অন্ধকারে ছবিটি শেষ হয়। শেষের চার-পাঁচটি রিলে সূর্যাস্তের রঙে কমলা আভাটা এত চড়া লাগে যে ঐ পাঁচটি রিল আবার তুলতে হয়েছিল।


    ‘রোপ’ ছবির সেট


    মনে পড়ে মাথায় পাগড়ি পরনে কুর্তা-পাজামা বা কুর্তা-তাম্বা - এক ভদ্রলোক ছবি দেখতে আসতেন। বুধবারের আর্কাইভের শো-তেও দেখেছি, রেট্রোস্পেক্টিভ গুলিতেও দেখেছি । অস্বীকার করে লাভ নেই, স্ব-ঘোষিত বিপ্লবী, প্রতি-বিপ্লবী, শোধনবাদি, অধিকাংশ বাম ও বাকি অ-বাম অতি পাকা নাকউঁচু বাঙালি সিনে-আঁতেলদের কাছে ইনি ছিলেন রীতিমত কমিক রিলিফ। ছবি শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে এই আঁতেলদের অনেককেই হলের অন্ধকারে চম্পট দিতে দেখেছি, কিন্তু ঐ ভদ্রলোকের মত সিরিয়াস সিনেমার দর্শক দুটি দেখিনি। 'রিয়ার উইন্ডো'-র অভিনেত্রী গ্রেস কেলিকে দেখে হিন্দিতে যা বলেছিলেন তার বাংলা করলে দাড়ায় ‘রূপকথার পরী’! বাস্তবিকই তাই, অন্তত লিসার (গ্রেস কেলি অভিনীত) প্রথম আগমন যে ভাবে ঘটে। জেফের (জেমস স্টুয়ার্ট অভিনীত) তন্দ্রাছন্ন অবস্থার মধ্যে লিসার আগমন যেন স্বপ্ন থেকে বাস্তবে উঠে এলো লিসা! জেন রাসেল, মারলিন মনরো, ব্রিজিৎ বার্দো বা সোফিয় লোরেনের মত লাস্যময়ী ডাকসাইটে অভিনেত্রীদের মধ্যে যেটা নেই সেটাই হিচককের পছন্দ! অর্থাৎ ধ্রুপদী সৌন্দর্য, তাই গ্রেস কেলি। গাড়ি দুর্ঘটনায় পা ভেঙ্গে ফটোগ্রাফার জেফ গৃহবন্দি। স্থান ম্যানহাটনের গ্রিনউইচ ভিলেজ। নিজের এপার্টমেন্টের জানালা দিয়ে উল্টো দিকের বাড়িগুলির দিকে তাকিয়ে থেকে তার দিন কাটে। এক জানালায় নব-বিবাহিত দম্পতি সেই যে দরজা-জানালা বন্ধ করলো আর খোলার নামই নেই, আরেক জানালায় নিঃসঙ্গ মিউজিশিয়ান সারাদিন ধরে মদ খেয়ে চলেছে, আরেক জানালায় অর্ধ-উলঙ্গ এক যুবতি ব্যায়াম করছে নানান শারীরিক কসরত করছে। জেফ ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এদের দেখে, কখনো দূরবীন দিয়ে দেখে, আর পর মুহূর্তে আমরা দেখতে পাই জেফের প্রতিক্রিয়া। পুরো ব্যাপারটা অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে নির্মাণ করা না গেলে দৃশ্যগুলির সম্পূর্ণ অন্য মানে হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে। এমন দুটি অংশ যে ছবিতে থাকে সেই ছবিকেই যে একজন প্রতিভাবান পরিচালক তার কারিকুরির সবচেয়ে উপযুক্ত জমি হিসেবে বেছে নেবে তা বলাই বাহুল্য। অবিচলিত ভঙ্গী, দৃশ্যগত ঐক্য, অজস্র জটিল পারম্পর্য, প্রত্যেকটি শটের প্রতিটি কোণার উপর দার্ঢ্য নিয়ন্ত্রণ – বোঝা যায় পরিচালক রয়েছেন এই মুহূর্তে ক্ষমতার শীর্ষে! এসবের মধ্যেই জেফ সন্দেহ করে একটি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে! এ হল বিষয়-নির্মাণশৈলীর দিক। অন্য দিকে ভয়ারিজাম এ-ছবির মনোজগৎ। ভয়ারিজাম সিনেমার পরিভাষার একটি হাতিয়ার। বিখ্যাত পোলিশ চলচ্চিত্রকার ক্রিসচফ কিসলোস্কির(১৯৪১-১৯৯৬) ছবি ‘এ সর্ট ফিল্ম অ্যাবাউট লাভ’-এর কথা মনে পড়তে বাধ্য। বহু চিন্তাবিদ ও তাত্ত্বিক ‘এ সর্ট ফিল্ম অ্যাবাউট লাভ’-এর মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন রাষ্ট্রিক নিয়ন্ত্রণের ব্যঞ্জনা! প্রত্যেক কালে প্রতিটি রাষ্ট্র-ব্যবস্থার প্যান-অপ্টিকনের ন্যায় একটা এজেন্ডা থাকে। তার চেহারা বদলায়, কিন্তু রাষ্ট্র কখনো তার জনগণের উপর থেকে নজর ও নিয়ন্ত্রণ সরায় না। সে সাম্যবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থাই হোক আর আধুনিক পুঁজিবাদী কল্যাণমূলক রাষ্ট্র-ব্যবস্থাই হোক। উপরন্তু আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা এমন একটা আবহ তৈরি করে যেন রাষ্ট্র তার জনগণের প্রেমে পাগল। এই ছলনে শেষ অব্ধি জনগণও ভোলে, সেও প্রেমে পড়ে রাষ্ট্রের! ‘এ সর্ট ফিল্ম এবাউট লাভ’-এ ক্যামেরা হাতে বাচ্চা টোমেক ও যুবতী মাগদার রসায়নকে অনেক তাত্ত্বিক এই রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে থাকা জনগণের রূপকে দেখেছেন! ৪০ ও ৫০-র দশক হল আমেরিকায় ম্যাককার্থিজমের দশক। ১৯৫৪ সালের ছবি 'রিয়ার উইন্ডো'-কে ম্যাককার্থিজমের নিগড়ে কেউ দেখতে চাইলে তাতে আপত্তির কিছু নেই।


    ‘রিয়ার উইন্ডো’ ছবির বিভিন্ন দৃশ্য


    ছাত্রাবস্থায় সিনেমার উপর দামি ইংরেজি বই কেনা যখন অসম্ভব ছিল তখন ধীমান দাশগুপ্তর বাংলা বইগুলিই ছিল আমাদের একমাত্র সম্বল। ধীমান দাশগুপ্তর ‘অনন্ত চতুর্দশী’ উপন্যাসটি পড়েও আমরা চমকে উঠেছিলাম। এই ধীমানদা মনে পড়ে ‘সাইকো’ দেখানোর আগে একটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন। গোটা ‘সাইকো’-কে তিনি নাজী জার্মানির প্রতীকে পড়েছিলেন! ‘সাইকো’ নিয়ে সারা পৃথিবীতে এত ব্যাখ্যা হয়েছে যে ব্যক্তিগত ভাবে শোনা এই অভিনব প্রয়াসটির কথাই সবার আগে মনে পড়ল। নির্মিতির বিশেষ গুণের জন্য ‘সাইকো’-র শুরুর দৃশ্যটির কথা আজও মনে পড়ে। ‘রোপ’-এর মত এছবিও শুরু হয় বাহিরমহল থেকে। ক্যামেরা শহর জুড়ে প্যান করতে থাকে, স্ক্রিনের উপর পরপর তিনটি লেখা ভেসে ওঠে, ১) ফনিক্স, অ্যারিজোনা, ২) ফ্রাইডে, ডিসেম্বর দা ইলেভেন্থ, ৩) টু ফর্টি থ্রি পি.এম.। যেন ইঙ্গিত করা হয় সপ্তাহান্তের এই সময়ে ক্যামেরা অন্দরমহলে প্রবেশ করলে যে নারী-পুরুষটিকে দেখা যাবে তারা স্বামী-স্ত্রী হতেই পারে না! গোটা ছবির গঠন ভঙ্গিটাই অভিনব। পঁয়তাল্লিশ সেকেন্ডের বিখ্যাত ছুড়ি মারার দৃশ্যটি তুলতে সময় লেগেছিল সাত দিন, সত্তরটির মত ক্যামেরা সেটআপ ছিল। কোনো বানী নয় শুধুমাত্র চলচ্চিত্রীয় গুণের জন্যই মানুষ সচকিত হয়ে আবিষ্কার করে তারই কোনো সহনাগরিকের অন্য এক চেহারা! হিচকক জনপ্রিয় ও অত্যন্ত কুশলী পরিচালক, কিন্তু বিশুদ্ধ চলচ্চিত্রের নির্মাতা হিসেবে হিচকককে কুলীন করে তোলে ফ্রান্সের ‘কাইয়ে দু সিনেমা’ গোষ্ঠী। ১৯৫১ সালে আন্দ্রে বাঁজার(১৯১৮-১৯৫৮) মত চিত্র-তাত্ত্বিকের হাতে এই পত্রিকার জন্ম হলেও এর নাম বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে ১৯৫৭ সালে পত্রিকার সম্পাদনা এরিখ রোহমারের(১৯২০-২০১০) হাতে আসার পর। রোহমার ছাড়াও এই পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করতেন জাঁ লুক গদার(১৯৩০-), জাক রিভেৎ(১৯২৮-২০১৬), ক্লদ শ্যাব্রল(১৯৩০-২০১০) ও ফ্রাসোয়া ত্রুফোর(১৯৩২-১৯৮৪) মত বিশ্ববরেণ্য চলচ্চিত্রকাররা। এরিখ রোহমার ও ক্লদ শ্যাব্রল প্রথম দেখান হিচককের ছবি শুধুমাত্র দেখার জন্য নয়, মস্তিষ্ক দিয়ে অনুধাবন করার জন্য। তাঁর ছবির গঠন অভিনব, বিচ্ছিন্ন প্রতিটি দৃশ্য প্রতিটি ডিটেল সমগ্র ছবির গঠনের সঙ্গে গভীর ভাবে যুক্ত। ১৯৬৭ সালে ত্রুফো-হিচককের দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের একটি বই বেরোয়। রহস্য-রোমাঞ্চ ধর্মী ছবির কুশলী পরিচালক হিসেবে কেবলমাত্র বিচার করে মার্কিন সমালোচকরা এতদিন যা হিচককের কাছে জানতে চায়নি, ত্রুফো সেই সব গূঢ় প্রশ্নই করেছিলেন।


    ‘সাইকো’-র বিখ্যাত ছুড়ি মারার দৃশ্যের গঠন


    শোনা যায় হিচকক নিষ্ঠাবান খ্রিষ্টান ছিলেন। প্রত্যেক রবিবার নিয়ম করে সপরিবারে গির্জায় যেতেন। ঈশ্বরের পৃথিবীতে একি অভাবনীয় বিশৃঙ্খলা! ‘দা বার্ডস’ একেবারেই ব্যতিক্রমী ছবি। মনুষ্যকৃত অপরাধ, নির্দোষ মানুষের ফেঁসে যাওয়া এইসব ছিল এতদিন তাঁর বিষয়। বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর সঙ্গে মানুষ বহু যুগ ধরে সহবস্থান করছে। কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে তার তুলনায় নিম্নতর প্রজাতির প্রাণীর বাঁচা-মড়ার বিধাতা হয়ে উঠেছে মানুষ। ঐ নিম্নস্তরের ইন্দ্রিয়-চেতনা নিয়েই একটি প্রজাতি যদি হঠাৎ সমবেত ভাবে মানুষ নামক সর্বগ্রাসী প্রজাতিটিকে আক্রমণ করে? এই রকম ঘটনা নিয়েই ‘দা বার্ডস’-এর বিস্তার। কাজেই এ ছবিকেও একার্থে মানুষ নামক প্রজাতির বহুযুগ ধরে সংঘটিত অপরাধের পরিণাম হিসেবে ভাবা যেতে পারে! হিচকক অবশ্য এসব কিছুই বলেন নি, তাঁর ইচ্ছে ছিল গ্রেস কেলিকে কাস্ট করে উইন্সটন গ্রাহামের(১৯০৮-২০০৩) উপন্যাস থেকে ‘মার্নি’ ছবিটি আগে করার। কিন্তু গ্রেস কেলি তখন মোনাকোর প্রিন্স রাইনারের স্ত্রী, ছ বছরের বিবাহিত জীবন, দুটি সন্তান। একজন রাজবধূ হিসেবে ক্রিমিনালের ভূমিকায় অভিনয় করা নিয়ে বিতর্ক ছড়ায়, ব্যাপারটা জনগণ একেবারেই মেনে নিতে পারছে না! অগত্যা ‘মার্নি’ স্থগিত রেখে টিভির বিজ্ঞাপনের উচ্চাকাঙ্ক্ষী অভিনেত্রী টিপি হেড্রেনকে কাস্ট করে ড্যাফনে ডু মরিয়ারের ১৯৫২-য় লেখা একটি ছোট গল্প থেকে শুরু হয় ‘দা বার্ডস’-এর শুটিং। ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যাপিটোলা নামক উপকূলবর্তী অঞ্চলে ১৯৬১ সালের আগস্ট মাস নাগাদ নাকি অনুরূপ একটি ঘটনা ঘটেছিল! পরে জানা যায় এর প্রকৃত কারণ ছিল পাখিদের মধ্যে বিষাক্ত শৈবালের সংক্রমণ! হিচকক চেয়েছিলেন ছবিতে আশঙ্কা ও উদ্বেগের পরিবেশটিকে নিপুণ ভাবে নির্মাণ করে দর্শককে বিমূঢ় করে রাখতে। কিছু কিছু ছবির বিশেষ এক ধরণের বৈশিষ্ট্যকে বোঝানোর জন্য আমরা ইংরেজিতে ‘স্লো বার্নিং’ কথাটি ব্যবহার করে থাকি, ‘দা বার্ডস’-ও তাই। একটি পাখি দুটি পাখি করে পাখির সংখ্যার সঙ্গে তাল দিয়ে বেড়েছে মানুষের উপর তাদের আক্রোশ ও আক্রমণের ঝাঁঝ! ক্যালিফোর্নিয়ার বোদেগা বে এই ছবির প্রেক্ষাপট। শেষ দৃশ্যে মেলানি (টিপি হেড্রেন), ব্রেনার (রড টেলার অভিনীত)-সহ গোটা পরিবারটি যখন গাড়িতে করে বোদেগা ত্যাগ করে চলে যায় তখন গোটা স্ত্রিন জুড়ে আমরা দেখতে পাই অগুনতি পাখি শুধু! যতদূর দেখা যায় পাখি আর পাখি! পাখিরা তাড়িয়ে ছেড়েছে মানুষকে, নিজেদের প্রতিস্থাপন করেছে সেখানে। কম করেও বত্রিশটি ভিন্ন ভিন্ন টুকরো জোড়া লাগিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল এই দৃশ্যটি। দৃশ্যটি আতঙ্কের সন্দেহ নেই। কিন্তু অন্য-প্রজাতি নিধনকারী ও মর্ত্যুকামী মানুষ যদি কোনো অঞ্চল পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয় তাহলে বাকি প্রজাতিকুলের কাছে সে কি বড় সুখের সময় নয়? মনে হতে পারে হিচককের ছবি নিয়ে এত বড় করে ভাবার কোনো মানে হয় না। কাফকার ‘মেটামরফোসিস’ নিয়ে দিস্তের পর দিস্তে লেখা হয়েছে, সত্যজিৎ রায়ের ‘খগম’ নিয়ে কি আমরা সে ভাবে ভাবি? নিখাদ ভয় উদ্বেগের পরিবেশ তৈরি করা ছাড়া ‘খগম’-এর আর কোনো উদ্দেশ্য চোখে পরে কি আমাদের? একজন সমালোচক ‘দা বার্ডস’ সংক্রান্ত রচনার পরিসমাপ্তিতে বলেছিলেন, ‘’দা বার্ডস’ কে যদি একটা ডুমসডে ফ্যান্টাসি হিসেবে বিবেচনা করাই পরিচালকের প্রকৃত উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, আমরা বলতেই পারি এ তাতে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ’। অন্যদিকে ‘কাইয়ে দু সিনেমা’ গোষ্ঠী ছবিটিকে ১৯৬৩ সালের সেরা দশটি ছবির তালিকায় দু নম্বরে স্থান দেয়, এক নম্বরে ছিল জা লুক গদারের ছবি ‘কনটেম্পট’ ও তিন নম্বরে ছিল লুই বুনুয়েলের(১৯০০-১৯৮৩) ‘দি এক্সটারমিনেটিং অ্যাঞ্জেল’!


    ‘দা বার্ডস’ ছবির অন্তিম দৃশ্য


    ছবির শুরুর দৃশ্যে মেলানিকে আমরা দেখতে পাই ‘ডেভিডসন্স পেট হাউস’-এ ঢুকতে, সেখানেই মোটাসোটা এক ভদ্রলোককে দেখি চেনে বাধা দুটি কুকুর নিয়ে বেরিয়ে যেতে। ইনিই অ্যালফ্রেড হিচকক! বিশেষ কোনো ব্যক্তি বা ছবির পরিচালকদের এই ধরণের তাৎপর্যহীন অথচ মজার উপস্থিতিকে সিনেমায় ক্যামিও বলে। হিচকক এ-ব্যাপারে পথিকৃৎ ও ওস্তাদ। এ অনেকটা আমাদের দেশের স্বভাব কবিদের ভণিতার মত! ভাবনার খোঁড়াক নিয়ে যত তর্ক-বিতর্কই থাকুক, তাঁর চলচ্চিত্রকে কিন্তু দেখলেই চিনেতে পারা যায়। বড় মাপের শিল্পীদের যে নিজস্বতা থাকে তা হিচককেরও ছিল।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২২ আগস্ট ২০২২ | ২৫৫৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ইন্দ্রাণী | ২৪ আগস্ট ২০২২ ০৩:২৭511305
  • ফিল্ম নিয়ে এই লেখকের সমস্ত লেখাই ভালো লাগে খুব। হিচককিয়ান স্টাইল সম্বন্ধে কিছু জানা ছিল। তবে , এই যে শট ধরে ,বৈশিষ্ট্য দেখিয়ে দেওয়া (উদাঃ রোপ চলচ্চিত্রে ডার্ক অবজেক্টের ওপর কাট হচ্ছে), পাশে বসে, শান্ত নম্র স্বরে শিক্ষার্থীকে হাতে ধরে শেখানোর মত। লেখকের এই বৈশিষ্ট্য সব লেখাতেই দেখেছি। পাঠকের/ শিক্ষার্থীর আরো জানার, পড়ার, বোঝার ইচ্ছা জাগে এইভাবেই।
    এই লেখাতে বেশ কিছু র , ড়, ন , ণ এর গোলযোগ পীড়াদায়ক। কিছু টাইপো-ও দেখলাম।
    সম্ভব হলে , ঠিক করে দেবেন।
  • Ranjan Roy | ২৪ আগস্ট ২০২২ ১৯:০৯511317
  •  আপনার  লেখা গোগ্রাসে গিলতে থাকি। ইন্দ্রাণী যা বলেছেন সেই একই কারণে।  এ ধরণের লেখা আজকাল বিশেষ চোখে পড়েনি। 
    The Birds অনলাইনে কোথায় দেখা যাবে?
     
    Dhiman Dasgupta আমাদের প্রজন্মের।  পণ্ডিত মানুষ।  বাণী শিল্প থেকে प्रकाशित ওনার দু'টি বই,  পড়েছিলাম।  
    কিন্তু বড্ড গম্ভীর মানুষ,  কখনো হাসেন না। একসময় ওনার সোনারপুর বাড়িতে গেছি  ।
    কিন্তু আমি বড্ড ইয়ারবাজ  পি জে শুনে দাঁত বের করা পাবলিক।  কাজেই জমে নি। 
     
    লোকসান আমারই ।
  • dc | 2401:4900:1cd0:1bb4:f805:76f3:1a94:***:*** | ২৪ আগস্ট ২০২২ ২০:১৩511320
  • রঞ্জনদার জন্য একবাক্স পাখিঃ 
     
  • বিপ্লব রহমান | ২৫ আগস্ট ২০২২ ০৬:৫০511329
  • "সাইকো" এবং "বার্ডস" দেখেছি। এরমধ্যে "বার্ডস" প্রথম দেখি আটের দশকে স্কুলে পড়ার সময় বিটিভিতে। 
     
    আর পরে বিটিভিতেই "হিচকক আওয়ার"। তখনও সাদাকালো টিভির যুগ, ছবিও তাই। 
     
    সারা জীবন মনে রাখার মতো একেকটি  ছবি। 
     
    "বার্ডস" ছবিতে হাজার হাজার পাখির বিদ্রোহ, পাখিদের দিয়ে অভিনয় করানো ইত্যাদি ভাবলে আশ্চর্য লাগে! যেমন গল্প, তেমন চলচ্চিত্র! সেল্যুট yes
  • Ranjan Roy | ২৫ আগস্ট ২০২২ ১৩:৪৪511338
  • ডিসি
    দেখলাম।  অনেক ধন্যবাদ। 
    আচ্ছা,  vimeo তে কি সব ক্লাসিক সিনেমা দেখা যাচ্ছে? পেমেন্ট করে মেম্বার হতে হয়? যেমন Nanuk of  the  North, বা সিটিজেন কেন  দেখতে চাইলে?
  • অপ্রতিম রায় | 223.223.***.*** | ২৫ আগস্ট ২০২২ ২২:২৪511347
  • নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা আপনার সিনেমা সম্পর্কে ধারণা ও আপনার পড়াশুনা মুগ্ধ করে প্রত্যেকবার। হিচককের ছবিগুলি আবার দেখবো। 
  • Ranjan Roy | ২৫ আগস্ট ২০২২ ২২:৪১511351
  • ডিসি
     ভার্টিগো দেখতে কি ভিমিওতে হবে? কী করে খুঁজতে হবে?
  • dc | 2401:4900:1f2b:62b4:10b0:ad4:bdda:***:*** | ২৬ আগস্ট ২০২২ ০৮:১২511369
  • রঞ্জনদা, ভর্টিগো এখানে দেখতে পাবেনঃ
     
  • dc | 2401:4900:1f2b:62b4:10b0:ad4:bdda:***:*** | ২৬ আগস্ট ২০২২ ০৮:২০511371
  • এই সাইটটায় আরও ক্লাসিক মুভিস খুঁজে দেখতে পারেন। তবে ক্লাসিক হলিউড পুরো পাওয়া যায়, এরকম বোধায় কোন সাইট নেই। নেট্ফ্লিক্স, প্রাইম ইত্যাদি যেসব পেড সাইট আছে সেগুলো জঘন্য। একমাত্র উপায় হলো টরেন্টে এক এক করে নামানো। আমি পাঁচ ছ বছর আগে প্রায় এক হাজারটা সিনেমা ডাউনলোড করেছিলাম, ক্লাসিক হলিউড প্রায় পুরোটা। দুটো হার্ড ড্রাইভ ভর্তি করে ফেলেছিলাম, তারপর সে দুটোই ক্র‌্যাশ করে গেছিল। আমার লাইফের সবচেয়ে বড়ো লস :-((
  • সংবরণ সরকার | 2409:4061:2d0b:41b2::2c08:***:*** | ২৬ আগস্ট ২০২২ ১৩:০৫511375
  • অনবদ্য লেখা শুভ। নানা স্মৃতি ভেসে উঠছে।
  • শঙ্খ | 223.223.***.*** | ২৬ আগস্ট ২০২২ ২৩:০৩511382
  • আপনার প্রতিটি লেখা পড়ি ও সমৃদ্ধ হই। গুরুতে  এযাবৎ প্রকাশিত লেখাগুলি একত্রে বই আকারে পাবো আশা করছি।
  • ‌রোহন দত্ত | 223.223.***.*** | ২৮ আগস্ট ২০২২ ২১:৩৬511462
  • আরেকটি অসামান্য আলোচনা। আপনার প্রতিটি লেখার অপেক্ষায় থাকি। 
  • Subhadeep Ghosh | ৩০ আগস্ট ২০২২ ১৩:০৬511515
  • সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ মতামত জানানোর জন্য।
  • শঙ্খ | 2402:3a80:1cd3:fad7:1986:f4fa:eeae:***:*** | ৩১ আগস্ট ২০২২ ০৯:৩৮511528
  • ২৬ আগস্ট ২৩ঃ০৩, শঙ্খ কে অনুরোধ আরেকটি কোনো নিক নিতে পারলে ভালো হয়, কারণ এই নিকটি আমি বহুদিন ধরে ব্যবহার করি গুরুতে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন