ব্যাপক লেখা ! মুগ্ধ হয়ে গেলাম।
দারুণ লেখা।
তোমার লেখা পড়ি আর মনে হয় এখন না অন্য কোনো সময়ে চলে গেছি। অপূর্ব
খুব ভালো লাগলো। সুতোকাটুনিয়াদের মত পরিশ্রম করে তথ্য সংগ্রহ আর মসলিনের মত মিহি পরিবেশন। সাথে একটা প্রকৃত সত্যের মুখোমুখি বসিয়ে দেওয়া-উপনিবেশবাদ নয়, নারী অর্থনীতির অবমূল্যায়নে আসল হাত আমাদের নিজস্ব সমাজ ব্যবস্থার শোষণ পদ্ধতিতে।
অতি চমৎকার লেখা। সর্বাঙ্গে পরিশ্রমের স্বাদ।
" তাই আমরা ব্যক্তির দুঃখে দুঃখিত হই, কিন্তু সামগ্রিক ভাবে বিজ্ঞানের অগ্রগতির জয়গান গাইব নাকি মেয়েদের আয়-হরণের দুঃখে কাতর হব ,না হয় সে আয় তিল পরিমাণই ,তা ঠিক বুঝে উঠি না।" - এইটা হক কথা। কন্তু শুধু কি বিজ্ঞানের অগ্রগতি? তার সঙ্গে সুতো আর কাপড়ের দাম কমায় ডিম্যান্ড-সাইড ইকনমির সুবিধে হল না কি? তার ওপর সুতোর দাম কমায়, নতুন কোন জীবিকা তৈরি হল কি?
প্রথমেই এমন একটা বিষয় নিয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ। তারপর এমন অসাধারণ তথ্যসমৃদ্ধ লেখার জন্য আবার ধন্যবাদ। এবার আমি ভাবছি আর অবাক হচ্ছি এটা লিখতে কি পরিমান পরিশ্রম আর নিষ্ঠা লাগছে।
যাঁরা পড়লেন, তাঁদের অনেক ধন্যবাদ।
@সম্বিৎ, ডিমান্ড সাইড ইকনমির হিসেবটা একটু গোলমেলে। বিশ্ববাজারের দিক দিয়ে দেখলে, লাভের গুড় খেয়ে নিয়েছে ইংল্যন্ড আর আমেরিকা। বাংলার ব্যাপারটা একটু অন্য রকম। ১৮১০ নাগাদ বুকানন যে আর্থিক শ্রেণিবিভাগগুলোর কথা বলেছেন, তাঁদের মধ্যে শেষ দুটো শ্রেণি ছিল নেহাতই ছোট চাষি, ব্যাপারী, তাঁতি প্রমুখেরা। এঁদের মাথাপিছু কাপড়ের বাবদে বার্ষিক খরচ হল এক টাকা। কাজেই এঁদের তো দাম কমায় খুবই সুবিধা হওয়ার কথা। তবে কলের কাপড় কম টেঁকসই (আর বহরে বড়ও হত) বলে গরীবগুর্বোরা অনেক দিন দেশি সুতোর দেশি তাঁতে বোনা খেটো কাপড় পড়েছে। তারপর অবশ্য দাম আরও কমাতে ধীরে ধীরে সেই শ্রেণিটাও কলের কাপড়ে শিফট করে।
আর ১৮৫৪ থেকে তো বোম্বেতে দেশি কলই চালু হয়ে গেল। বোম্বে গুজরাট দেশের ভিতরের ব্যবসা প্রায় একচেটিয়া করে ফেলল। বাংলা শুধু চাষজাত জিনিস এক্সপোর্টে মন দিল। তারপর অবশ্য এখানেই কল খুলল। কিন্তু সেখানে আর মেয়েদের জায়গা হয় নি। অথচ সেই সময় চাষের মাঠে মেয়েরা খাটছে দেদার। চা এক্সপোর্ট হয়, সেখানে কামিনরা কাজ করে দলে দলে। প্রোডাকশন কস্ট কমানোর জন্য কি? আরও ইনটারেস্টিং দেখ, খাদি দিয়ে যখন ইংরেজ তাড়ানর কথা হচ্ছে ততদিনে কিন্তু আমরা শুধু শুনছি, মায়ের দেওয়া “মোটা কাপড়” মাথায় তুলে নে রে ভাই। খাদি ফ্যাশন হচ্ছে কিন্তু মিহি শান্তিপুরী তাঁতের কাপড় বর্জন হচ্ছে কলের সুতোয় বোনা বলে। বাংলার ঘরে ঘরে যে গান্ধীবাদী মহিলারা ফের চরকা কাটতে শুরু করলেন, তারা কেন তকলিতে ফিরে গেলেন না, মিহি সুতো কাটতে শুরু করলেন না?
তবে এই বস্ত্রশিল্প বাবদে মেয়েদের একটা কাজের খবর পেয়েছি। শান্তিপুরে নাকি মিলের কাপড় কিনে এনে মেয়েদের দিয়ে তার পাড় সেলাই করান হত। পাড় সেলাই করা ব্যাপারটা খুব ভাল বুঝি নি যদিও। সেটা বোধহয় খুব লোকালাইজড কাজ। সব জায়গায় ছিল না।
"বহরে বড় হত" শুনে মুজতবার দেশে-বিদেশের এই অংশটা মনে পড়ল।
"জিজ্ঞাসা করলুম, ‘সর্দারজী শিলওয়ার বানাতে ক’গজ কাপড় লাগে?
বললেন, ‘দিল্লীতে সাড়ে তিন, জলন্ধরে সাড়ে চার, লাহোরে সাড়ে পাঁচ, লালামুসায় সাড়ে ছয়, রাওলপিণ্ডিতে সাড়ে সাত, তারপর পেশাওয়ারে এক লক্ষে সাড়ে দশ, খাস পাঠানমুল্লুক কোহাট খাইবারে পুরো থান।
‘বিশ গজ!’
‘হ্যাঁ, তাও আবার খাকী শার্টিঙ দিয়ে বানানো।’
আমি বললুম, ‘এ রকম একবস্তা কাপড় গায়ে জড়িয়ে চলাফেরা করে কি করে? মারপিট, খুনরাহাজানির কথা বাদ দিন।‘
সর্দারজী বললেন, আপনি বুঝি কখনো বায়স্কোপে যান না? আমি এই বুড়োবয়সেও মাঝে মাঝে যাই। না গেলে ছেলেছোকরাদের মতিগতি বোঝবার উপায় নেই আমার আবার একপাল নাতি-নাত্নী। এই সেদিন দেখলুম, দু’শশা বছরের পুরোনো গল্পে এক মেমসায়েব ফ্রকের পর ফ্রক পরেই যাচ্ছেন, পরেই যাচ্ছেনমনে নেই, দশখানা না বানোখানা। তাতে নিদেনপক্ষে চল্লিশ গজ কাপড় লাগার কথা। সেই পরে যদি মেমরা নেচেকুঁদে থাকতে পারেন, তবে মদ্দা পাঠান বিশগজী শিলওয়ার পরে মারপিট করতে পারবে না কেন?
আমি খানিকটা ভেবে বললুম, ‘হক কথা; তবে কিনা বাজে খর্চা।
সর্দারজী তাতেও খুশী নন। বললেন, ‘সে হল উনিশবিশের কথা। মাদ্ৰাজী ধুতি সাত হাত, জোর আট; অথচ আপনারা দশ হাত পরেন।
আমি বললুম, দশ হাত টেকে বেশী দিন, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরা যায়।"
তো বহরে বেশি হলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরা যায়, টেঁকে বেশিদিন। কাজেই পাতলা হলেও দামে কম, টেঁকে বেশিদিন - এই যদি গল্প হয় তাহলে ডিম্যান্ড-সাইডে সব মিলিয়ে উবগারই হবার কথা।
তবে এই নাটক আবহমান কাল ধরে নানা থিয়েটারে অভিনয় হয়ে চলেছে আজও। নতুন টেকনোলজি এসে সাবেক ইন্ডাস্ট্রিকে ডিসরাপ্ট করা। এখনও শুনি বয়নশিল্পে এই ডিসরাপশন চলছে। বালুচরী শাড়ির কাজ আগে হাতে করা হত। বছর দশ-বারো আগে কম্পিউটার কন্ট্রোলড মেশিনে হচ্ছে। নির্ঘাত বহু তাঁতির ভাতে টান পড়েছে।
দুর্দান্ত লেখা হয়েছে। খুব ভালো লাগলো।
খেটেখুটে দারুণ নেমেছে লেখাটি। ছুরিকলাঁ গাাঁয়়ে থাকার সময়ে দেখলাম তকলিতে সূূূূতো কাটার বা ককুন থেকে তসরের সূতো বের করার এবং মশলা মাখানোর সময় পরিিবারের মেয়েদের শ্রম। এদের জন্য কেউ বলেননি। আরো লিখবেন।
খুব ভালো লাগলো পড়ে।