এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  অপার বাংলা

  • সেই দেশ আমার, আমি সেই দেশের না

    দীপঙ্কর সেনগুপ্ত লেখকের গ্রাহক হোন
    অপার বাংলা | ২৪ জুলাই ২০১৯ | ৩০৬১ বার পঠিত
  • আমার গুরু নাই গোসাই নাই

    আমার কুনু গুরু নাই
    আমার কুনু গোসাই নাই
    গলা আসে সুর নাই
    তুমার সুর চুরি করলাম
    মাফ কইরো লাল ভাই
    আমার কুনু গুরু নাই , গোসাই নাই
    ভোট থাকলেও দাবী নাই
    ট্রাইবুনালের ভয় নাই
    সুপ্রিম কোর্টের রায় নাই
    পার্লামেন্টে বাজন নাই
    ইউএনও-তে ফুফা নাই

    আমার গুরু নাই গোসাই নাই
    জঙ্গলে আমার নাই নাই
    মইস নাই পিয়াইজ নাই
    থালিতে পান্তা নাই
    পুকুরে পানি নাই
    কেদার মধ্যে চেঙ নাই
    বেঙ নাই কাকরা নাই
    খাইবার একটা হামুক নাই

    আইলে আমার ঘাস নাই
    মরবার লেইগ্যা ফাস নাই

    আমার গুরু নাই গোসাই নাই
    আমার কুনু গুরু নাই , গোসাই নাই
    ভোট থাকলেও দাবী নাই
    ট্রাইবুনালের ভয় নাই
    সুপ্রিম কোর্টের রায় নাই
    পার্লামেন্টে বাজন নাই
    ইউএনও-তে ফুফা নাই

    আমার গুরু নাই গোসাই নাই
    নেইল্লিতে তে বইন নাই
    তিন হাজার নিয়া শুরু হৈল
    হেই মরার কি শেষ নাই
    চৌরাশিতে লাল করল
    রাজধানী কেরা ভাই ?
    গুজরাতে চিক্কির হয়না
    কত করুম হায় রে হায় ?
    আধা হৈলেও সন্মান চাই
    আগুনের মইদ্যে আফস্পা ঢালা
    কুন মহাপুরুষের রায় ?

    আমার কুনু গুরু নাই , গোসাই নাই
    ভোট থাকলেও দাবী নাই
    ট্রাইবুনালের ভয় নাই
    সুপ্রিম কোর্টের রায় নাই
    পার্লামেন্টে বাজন নাই
    ইউএনও-তে ফুফা নাই
    দেশে আসে আইনের মন্দির
    দেশে আসে রাইজ্যের মন্দির
    মন্দিরের আগে লক্ষীরে
    কেরা করল নেংটা ভাই ?
    ভোপালে মারা
    বিশ্বনাথে মারা
    হাজার আত্মার মুক্তি চাই
    ইসরাত হৈল আমার বইন
    রোহিত মায়ের পেডের ভাই

    আমার কুনু গুরু নাই , গোসাই নাই
    ভোট থাকলেও দাবী নাই
    ট্রাইবুনালের ভয় নাই
    সুপ্রিম কোর্টের রায় নাই
    পার্লামেন্টে বাজন নাই
    ইউএনও-তে ফুফা নাই
    আমার কুনু গুরু নাই
    আমার কুনু গোসাই নাই
    আমরা হৈলাম বইয়ের সংখ্যা
    সংখ্যার কুনু নাম নাই
    অন্তর নাই অঙ্গ নাই
    সংখ্যার নাই পূব পশ্চিম
    সংখ্যার উত্তর দক্ষিন নাই
    সংখ্যার নাই বেটা বেটি
    সংখ্যার কুনু ভীতি নাই
    সংখ্যার আসে জাত ধর্ম
    সংখ্যার মানুষ্যত্ব নাই

    আমার কুনু গুরু নাই , গোসাই নাই
    ভোট থাকলেও দাবী নাই
    ট্রাইবুনালের ভয় নাই
    সুপ্রিম কোর্টের রায় নাই
    পার্লামেন্টে বাজন নাই
    ইউএনও-তে ফুফা নাই

    (আমার কুনু গুরু নাই , গোসাই নাই - সেলিম হুসেন )


    জবাব বাতাসে উড়ে

    আর কত মুলুক ঘুরাইবা ভাই
    মানুষ বইল্যা মানার আগে
    আর কত্ত নদী হাতরাইবা ভাই
    টাস্কি খাইয়া পরার আগে
    আর কত ফর্টিসেভেনের গুরুম হুনাইবা
    কইলজা ফাইট্টা জাওয়ার আগে
    জবাব ত ভাই বাতাসে উড়ে
    জবাব বাতাসে উড়ে

    আর কত বসর পাহাড় হৈয়া থাক্বা
    আমার নদীর বানের আগে
    আর কত রক্তর রঙ দেহাইবা
    আর রক্ত জমার আগে
    আর কত বন বিলার মতন
    পলাইবা আলোর আগে

    জবাব ত ভাই বাতাসে উড়ে
    জবাব বাতাসে উড়ে

    আর কত পট্টি বান্দা চোখে
    আকাশ দেহার আগে
    আর কত গলা ফাইট্টা চিল্লাইয়াম
    কানে বাতাস পরার আগে

    জবাব ত ভাই বাতাসে উড়ে
    জবাব বাতাসে উড়ে

    (জবাব বাতাসে উড়ে/আবুল কালাম আজাদ / সেলিম হুসেন )


    আমাগো বিপ্লব
    রেজোয়ান হুসেন

    আমাগো তুমরা গালি পারো
    নাঙলে লাত্থিও মারো
    নীরবে কিন্তু আমরা তুমাগো
    অট্টালিকা রাস্তা দালাঙ বানাইতে থাকুম
    তুমাগো অস্থির , ঘামে ভিজা, চর্বিযুক্ত
    শরিল্ডারে আমরা কিন্তু রিক্সায় টান্তেই থাকুম
    তুমাগো ঘরের কালা মার্বাল ঘইস্যা চকচকা বানামু
    কালা কাপড় আসরাইয়া বগা করুম
    তুমাগো তাজা সব্জি, ফলমূল খিলামু
    তাপাজুলি চরের গাক্ষির কি, তাও খিলামু

    আইজকাউ তুম্রা আমাগো গালি পারো
    আইজকাউ জে আম্রা তুমাগো চোখের কাটা

    কিন্তু কতায় কতায় যে কয় সইয্যেরও সীমা আসে
    ভাঙা হামুকেও পাও কাডে
    তা ত তুম্রাও জানো
    আম্রাও কিন্তু বিপ্লবী অইতারি
    আমাগো বিপ্লবে বন্দুক লাগ্বনা
    বুমা বারুদ লাগ্বনা
    আমাগো বিপ্লব টিবিতেও দেহাবনা
    খবরেও সাফাবনা
    কুনু উয়ালেও দেখপানা লাল নীল রঙের আকা
    আমাগো মুষ্টিবদ্ধ হাত
    আগামো বিপ্লব তুমাগো অন্তর জ্বালাবো, পুরাবো
    পুইরা সার-খার কইরা হালাব

    (আমাগো বিপ্লব /রেজোয়ান হুসেন )


    এই বিপ্লব টিভিতে দেহাবনা

    এই বিপ্লব টিভিতে দেহাবনা
    রিমটের নতুন ব্যাটারি ভৈরা , বারে বারে চেনেল চেইঞ্জ করিনা
    তুমি আর পলায়া হার্বা না
    পলিথিন ডেন্ড্রাইট হুংবার বা
    এডভার্টাইস্মেন্টের টাইমে
    কফ সিরাপ খাবার নিগা আর পলায়া হার্বানা
    কারণ এই বিপ্লব টিভিতে দেহাবনা

    এই বিপ্লব টিভিতে দেহাবনা
    এই বিপ্লব চাইর এপিসোডের সিরিয়াল হবনা
    এই বিপ্লব পেপ্সি বা কোকাকোলায় স্পনসর কর্বনা
    এই বিপ্লবে দেহাবনা মন্ত্রীর মাথায় পাগুরি
    গরিবের মাইঝে রাজকুমার,হুকনা খেতের মাইঝে মডেলের মডেলিং
    এই বিপ্লব টিভিতে দেহাবনা

    এই বিপ্লব হবনা স্টার জলসার পইলা বৈশাখের স্টেইজে
    এই বিপ্লবে এক্টিং কর্বনা সানিদুল, কেট্রিনা বা অমিতাব বচ্চন
    এই বিপ্লবে তুমার মুহে লিবিস্টিক ঘসবনা
    পায়ের কড়া ঠিক কর্বনা
    উজন বারানের বা কমানের উপায় দিবনা
    কারণ এই বিপ্লব টিভিতে দেহাব না গো

    হাইওয়েতে সুয়ারের বাচ্চার লাঠি চালানের ফটো
    বার বার নিউজ ফ্লেসে দেহাবনা
    হাইওয়েতে সুয়ারের বাচ্চার লাঠি চালানের ফটো
    বার বার নিউজ ফ্লেসে দেহাবনা
    বার বার ধান খেতের মইদ্যে গুদা গেদাগেদির লাশের
    ফটো দেহাবনা, বেলুনের মত অগঅ
    ফুলা পেট দেহাবনা
    কারণ এই বিপ্লব টিভিতে দেহাবনা

    বোজেনা সে বোজেনা, টাপুর টুপুর , শ্বশুরাল সীমার কা -তে
    কী হয় কী না হয় কেউ মাথা মারাব না , আর মেয়েরা কিরণমালা
    আর রাজকুমার পৃথ্বিরাজ-এর প্রেমের কথা ভুলব, কারণ
    মিঞারা সব থাক্বো রাস্তায় নতুন দিনের পহরের তালাসে
    এই বিপ্লব টিভিতে দেহাব না

    (এই বিপ্লব টিভিতে দেহাবনা /সেলিম হুসেন)


    হেই দ্যাশ আমার আমি হেই দ্যাশের না

    যে দ্যাশ আমার বাবারে বিদেশি বানায়
    যে দ্যাশে আমার ভাইরে গুলি কইরা মারে
    যে দ্যাশে আমার বইন মরে গণ ধর্ষনে
    যে দ্যাশে আমার মা বুকে আগুন চাইপ্যা রাহে
    হেই দ্যাশ আমার
    আমি হেই দ্যাশের না
    যে দ্যাশে লুঙ্গি পিন্ধার অধিকার নাই
    যে দ্যাশে কান্দা হুনবার মানুষ নাই
    যে দ্যাশে হক কইলে ভুতে কিলায়
    যে দ্যাশ আমাগো আজীবন দাসত্ব চায়
    হেই দ্যাশ আমার অস্তিত্বের বাতিল করা হয়
    যে দ্যাশে আমারে আন্ধারে রাহার ষড়যন্ত্র চালায়
    যে দ্যাশে আমার থালিত পান্তার বদলে পাতর ডালবার চায়
    হেই দ্যাশ আমার
    আমি হেই দ্যাশের না
    যে দ্যাশে আমি গলা ফাইড়া চিল্লাইলেও কেউ হুনে না
    যে দ্যাশে আমার খুনের জন্যে কেউ দায়ী না
    যে দ্যাশে আমার পুলার কফিন নিয়া রাজনীতি চলে
    যে দ্যাশে আমার মেয়ার ইজ্জত নিয়া ছিনিমিনি খেলায়
    যে দ্যাশে আমি জানোয়ারের মত বাইচ্চা থাহি
    হেই দ্যাশ আমার
    আমি হেই দ্যাশের না

    (হেই দ্যাশ আমার আমি হেই দ্যাশের না /কাজী নীল )


    কব্বর খুইদ্যা আমি আমার

    কব্বর খুইদ্যা আমি আমার
    পুর্ব জন্মের ফসিল বাইর কইরা আনি
    দেহি দুইশ বসরের গুলামিতে
    বেহা অইয়া গেসে আমার মেরুদন্ড

    দেহি আমার বুকের ভিতরে মাটির ভিজা গন্ধ
    হাতের মুঠায় নাঙগলের ভগ্নাংশ

    কব্বর খুইদ্যা আমি
    বাইর কইরা আনি আমার অন্ধকার অতীত

    দেহি সবেরই এক একটা ভ্রমণের ইতিহাস আছে
    মাথ নিইচ্চা কইরা হাইট্টা যায় নিরন্ন মানুষের মিসিল
    সবেরই একটা কাহিনী আছে ভাইস্যা যাওয়ার
    কব্বর খুদলে আমি রক্তাক্ত নদী পাই
    দেহি অথাই পানীত ভাসতাছে আমার গুলিবিদ্ধ লাশ

    কব্বর খুদলে
    আগুন কি না আমি জানিনা
    একটা লাল টকটক উত্তেজনা পাই

    কব্বর খুইদ্যা আমি নিজেই নিজের লাশ নিয়া
    পৌছাইয়া যাই গোরস্থানে

    ওরা আমারে শহীদ ঘোষণা করুইক আর নাই করুইক
    এই জমিন বেচা যাওয়ার আগে বাতাস ফুরাইয়া যাওয়ার
    আগে এইসব নদী বিষাক্ত হওয়ার আগে
    একবার অন্তত একবার আমি তুমুল যুদ্ধে বিধস্ত অইবার চাই

    (কব্বর খুইদ্যা আমি আমার /কাজী নীল)


    মিঞা পোয়েট্রি নামে চিহ্নিত কবিতার উদাহরণগুলি পড়ে আসতে আসতে  বিবৃতি দাঁড়াল, জীবন সুবিধাজনক অবস্থানে নেই, এবং এই  অসুবিধাজনক  পরিস্থিতি এইমাত্র তৈরি হওয়া কোনও ব্যাতিক্রম নয়। শোষনের কথা। কথাটি বহুদিনের।

     (এবং কথাটি ভূগোল নিরপেক্ষ ঐতিহাসিক। নমুনা এক--- সমান্তরাল, জায়গা বদলে চরিত্রের ডাকনাম পার্থক্য ।  )

    শোষনের মুখ চেনা নিয়ে এই সিদ্ধান্ত রেখে ‘সেই দেশ আমার, আমি সেই দেশের না’ শিরোনাম ধরে যাচ্ছে এই লেখা। মিঞা পোয়েট্রি’র কবিদের বাড়ি, তাদের বেড়ে উঠার জায়গাটির নাম না জানলে, কবিতা যেগুলি এখানে আছে, তার সাথে কোনও জায়গা নির্দিষ্ট শোষনের ডাকনামটি মিলিয়ে না নিলেও কোনও সমস্যা হয় না,সমস্যার উপস্থিতি টের পেতে। শোষনের নমুনাটি  পরিস্কার, ঠিক এই কারণেই মিঞা পোয়েট্রির বক্তব্য আলাদা করে দেখা যাচ্ছে না। সেই সাথেই নাকচ হয়, এই কবিতা নিয়ে স্থানীয় গা-জ্বালা, অতি বৌদ্ধিক হিসেব-নিকেশ, ভাষার ব্যবহার, সমর্থনের কুশল শর্ত এবং তা দিয়ে সামগ্রকিতার নামে  তার খোলসের ভেতরে বিষয়টিকে পুরে দিয়ে  এই কবিতাবৃত্তকে আলাদা করে দেয়ার চেষ্টা, ঢেঁকি ইনক্লুসিভনেসের  মায়াচারে ফেলে দেয়া, যেন দাঁড় করানো যায় শোষণের চরিত্রটি আলাদা এই কবিতাগুলির বক্তব্য থেকে, এই কবিতাগুলিই অন্যকিছু, কৃত্রিম এবং ষড়যন্ত্রমুলক। 

    বছর তিনেক আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা  কিছু কবিতা মিঞা পোয়েট্রি নামে পরিচিতি পেয়ে যায়। এই কবিরা বলছেন, কবিতায় সরাসরি ‘মিয়া’ শব্দটি ব্যবহার না হলেও, এই কবিতার ধারা ১৯৩৯ থেকেই শুরু। আশির দশকের একটি কবিতায় ‘মিয়া’ শব্দটি লেখা হয়। ‘মিয়া’ কবিরা বলছেন, এখন যেসব কবিতা মিঞা পোয়েট্রি , সেগুলি আসলে দ্বিতীয় পর্যায়ের ‘মিয়া’ কবিতা।

    দ্বিতীয় পর্যায় হতে পারে কবিদের বিচারে, তবে ‘মিঞা পোয়েট্রি’ শব্দবন্ধ বছর তিনেক আগেই শুরু হয়, এবং এই রকমের কবিতা বিশেষভাবে পরিচিত হতে শুরু করে। 

    দ্বিতীয় পর্যায়ের কবিদের মধ্যে হাফিজ আহমেদ, সেলিম হুসেন, কাজী নীল, আব্দুল কালাম আজাদ, রেজোয়ান হুসেন, রেহানা সুলতানা,আশরাফুল হুসেন, প্রমুখ রয়েছেন।

    ‘মিয়া’ শব্দের অর্থ হতে পারে, জ্ঞানী, ভদ্রলোক, মহাশয়, এইরকম। কিন্তু মিঞা পয়েট্রি যাঁদের কথা বলে, তাঁদের ‘মিয়া’ বলে তাচ্ছিল্য করা হয়। অপাক্তেয় যেন। তাঁদের অস্তিত্বই যেন অবাঞ্ছিত । সেই তাচ্ছিল্যকেই হাতিয়ার করে, তাচ্ছিল্যের অপসংস্কৃতিকে বৌদ্ধিক স্তরে  চিহ্নিত করে দেয়ার থেকেই নিজেদের ‘মিয়া’ বলে ঘোষণা করে দেয়ার কবিতাই মিঞা পয়েট্রি। নিজেদের কথাটি সংগবদ্ধ করে মিঞা’র আসল অর্থও জানিয়ে দেয়া।

    এই ‘মিয়ারা’ মূলত এখন নদীর চরের বাসিন্দা বহু দশক ধরে। (চরের কারণে তাদের সংস্কৃতিকে, বা কবিতাকে ‘চর-চাপরি’ সংস্কৃতি, কবিতা বলা হয়। ‘মিয়া’ কবিতা চর-চাপরি কবিতার এক্সটেনসন , বলেন ‘মিয়া’ কবিরা।) অনেক প্রজন্ম পেরিয়ে গেছে। ‘মিয়াদের’ থেকে কিছু মানুষ পড়াশোনায় যথেষ্ট এগিয়ে গেলেও, অধিকাংশ মানুষেরই সেই অবস্থা না।গরীব, অন্যদের জন্য খাবার ফলান, নিজেদের ব্যবস্থা করতে পারেন না। মজুর খাটেন, রিক্সা চালান, ইত্যাদি। মজুর খেটে মর্যাদার জীবন কাটাতে পারলে, কোনও কথা উঠত না। মজুরের জীবন কীরকম , সেটা নতুন বলার কিছু না। পেটে ক্ষুধা নিয়ে তাচ্ছিল্যের মোড়কে শ্বাস ফেলে যাওয়া। এইখানে শোষনের মুখ সমান্তরালে দেখায় যেকোনও নিপড়িত মানুষের চেহারা।  

     মিঞা কবিদের প্রত্যেকেই উচ্চশিক্ষিত। দেশের নামকাড়া প্রতিষ্ঠানে পড়েছেন।ফলে তাঁরা পরিস্কার ভাবে বলতে পারছেন, বঞ্চনার ইতিহাসটি। উচ্চশিক্ষিত এই কবিকূল বাকীদের ফেলে দিয়ে মিশে যেতে পারতেন ‘উচ্চমহলে’ , মধ্যবিত্ত বুদ্ধীজীবী আস্তানায়। সেটিই ‘স্বাভাবিক’ পথ। তাঁরা আপাত অস্বাভাবিক রাস্তায় এসেছেন, দ্বিতীয় পর্যায়ের মিঞা পোয়েট্রি তারই ফসল।

    ‘মিয়ারা’ যে ভাষায় কথা বলেন বাড়িতে, যা তাঁদের প্রাণের ভাষা, যা তাঁদের মা’র ভাষা, পূর্বজের ভাষা সেটি তাদের সরকারিভাবে ঘোষিত ‘মাদার টাঙ’ নয়। ১৯৫১  সালের গণনায় তাঁরা নিজেদের ভাষা হিসেবে ঘোষণা করেন, তাঁদের অঞ্চলের  যে ভাষাটি প্রধান বলে পরিচিত, সেটি। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সেটি হলেও, নিজেদের ভাষাটি তাঁদের মরে যায়নি, সেটি বেঁচে আছে, এবং সেই ভাষাতে এখন লেখালেখি করার জন্য তাঁদের লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে। সেই ভাষাটি দিয়ে তাঁরা ‘মিয়া’ কবিতা লিখছেন। ‘মিয়া কবিতা যে তাঁরা শুধু সেই ভাষাতেই লেখেন তা নয়, তাদের সরকারিভাবে ঘোষিত মাদার টাঙেও লেখেন, বহু বহু চর-চাপরি কবিতা  এই ভাষাতে আছে,  লেখেন অন্যান্য ভাষায়ও। ‘মিয়া’ কবিরা প্রেমের কবিতাও লেখেন বৈকি ।

    নিজেদের জীবিত ভাষাটি ছেড়ে , অন্য একটি ভাষাকে নিজের ভাষা এবং সেই ভাষানুসারী গোষ্ঠী হিসেবে নিজদের পরিচয় দেবার ব্যাপারটি যথেষ্ট কৃত্রিম। অন্তত স্বাবাভিকভাবে তা আসতে পারে না। এক ভাষার কোনও মানুষ নিজদের জায়গা ছেড়ে অন্য দেশে যাবার পর, কয়েক প্রজন্ম পর দেখা যেতে পারে নাম কিংবা পদবী ছাড়া সেই ভাষাটির অস্তিত্ব আর মুখের কথায় নেই, কিংবা সেই পুরানো সংস্কৃতি আর কিছুই নেই নিজের কাছে । নতুন জায়গার ভাষাই নিজেদের ভাষা হয়ে গেছে। তখন সেই পুরানো ভাষাটির নাম কাগজে-কলমে শুধু লিখে নিজেকে সেই ভাষার লোক বলে পরিচয় দেয়া যেমন জোর করা, তেমনি নিজের জীবিত ভাষাটিকে বাদ দিয়ে অন্যকিছু বলাও স্বাভাবিক হতে পারে না। আরেকটি ভাষার প্রতি চূড়ান্ত টান বা আবেগে একটি গোটা জনগোষ্ঠী ভাষার নাম বদলে ফেলার মত উদাহরণে নেই। যদি তাই হত, ‘মিয়া’ ভাষা মুখ থেকেই হারিয়ে যেত। ধর্মের ব্যাপারে তারা এই পথে যাননি। ধর্ম কথাটি এই কারণেই উল্লেখ করা যে তাঁদের উল্লেখ করতে  প্রায়সই তাদের ধর্মীয় পরিচয় আনা হয়, তারা নিজেরাও আনেন। আর নিজেদের এই আনাটা অস্বাভাবিক না, কারণ তাঁদের ধর্মীয় পরিচয়ও তাঁদের জন্য  ‘অসুবিধা’-র নয়, তেমন না।

    নিজের ভাষা সরকারি খাতায় নিজেই  পালটে দেয়া বেঁচে থাকার কৌশল, আপোস এবং  সেই কৌশলের জন্য দায়ি কোনও চাপ, বা সেই জায়গায় বহুদিন ধরে চলা ‘ক্ষমতাধরদের’ ভাষিক আধিপত্যের চেষ্টা, অথবা ভাষার নামে ক্ষমতা ভোগদখলের কৌশল, আবেগকে  সুরসুরি দিয়ে জীইয়ে রাখার ছুতো হিসেবে ভাষার নামকে ব্যবহার করা, ইত্যাদি  বিষয় আসবেই এই অসম-স্বাভাবিকতার প্রেক্ষিতে। বিষয়টি যে এসেই যায়। কবি সেলিম হুসেন সামাজিক মাধ্যমে জবাব দিতে গিয়ে বলেছেন, ভাষাটিকে ( ‘মিয়া’ ) স্থানীয় কথ্য ভাষা হিসেবেই বলছি আমরা। তারপর দুই ভাষার নাম নিয়ে বলেছেন, এই কথ্যকে ওই দুয়ের কোনটা হিসেবেই বলা হচ্ছে না, কারণ তাঁরা ওই দুই ভাষা নিয়ে বিতর্কে পড়তে চান না।

    তাতে, ভাষা বদলের বিষয়টি স্বাভাবিক ছিল না, আরেকটি ভষা নিয়ে অ্যাট-পার হওয়ার চেষ্টা বলে কথা তোলাই যায়। আর সেই দিয়েই তাচ্ছিল্য, আধিপত্য, দমন, ইত্যাদি প্রসঙ্গ আসতেই থাকে। আধিপত্যের ধরন এবং তাতে স্বার্থ রক্ষার ব্যাপার থাকেই। ১৯৫১ সাল পেরিয়ে এসে ১৯৫৬ সালের রাজ্য পুনর্গঠনের ঘটনা , এই প্রসঙ্গ ধরে কেউ গবেষণা করে দেখতে পারেন।

     কাজী নীল লিখেছেন ( একটি বড় লেখা থেকে নিচ্ছি, চেরি-পিকিং যেন কেউ না বলেন ) যে এই জনগোষ্ঠী  এমনকী নিজের সাংস্কৃতিক পরিচয় জ্বলাঞ্জলি দিয়েছে (.........”আনকি নিজর.........লৈছে) । গণতান্ত্রিকভাবে  এই জনগোষ্ঠীর নিজের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অনুশীলন করতে দেয়ার প্রয়োজন আছে। আজ এই জনগোষ্ঠীর লোকেদের সংস্কৃতির মূলসূত্রটাই থাকছে না। এটাও  একধরনে অবদমন। যখনই এই মানুষেরা নিজের অস্তিত্বের কথা , কিংবা সংস্কৃতির কথা বলেছেন, তখনই তাঁদের বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে অভিহিত করা হয়েছে।

    “ আমি কি ভাষায় লেকুম
    কি নিয়া লেকুম
    কার নিগা লেকুম, 

    সব কি ওরা ঠিক করব, নাহি ?
    আর যদি ওরাই ঠিক করবার চায়
    তাইলে যে জন্য আমি লেকি হেই উদ্দেশ্য সফল।

    .....

    আমার আদিবাসী ভাইয়েরা যে ভাষায় কতা কয় হেইডা
    আমারই ভাষা।
    আমার অসমীয়া প্রেমিকা যে ভাষায় আমার নিগা পদ্য
    লেকে হেইডাও আমার ভাষা।

    .....

    সোমালিয়ায় না খাইয়া থাকা পোলাহানরা যে ভাষায়
    চিক্কির পারে সেইডা আমার ভাষা।“-----কাজী নীল

    বুদ্ধিজীবী হিসেবে স্বীকৃত বিখ্যাত কেউ, এবং আরও কেউ কেউ বলছেন, তাঁরা ওই ভাষায় লিখেছেন কেন! প্রমিত ভাষায় ( যে ভাষাকে ‘মিয়ারা’  সরকারি খাতায় নিজের ভাষা করেছেন) নয় কেন ! প্রমিত ভাষাটিকে দুর্বল করে দেয়ার পাঁয়তারা।  তাঁরা কারও নিজের ভাষায় লেখাকে স্বাভাবিক বলে নিচ্ছেন না। নিজের ভাষা ছেড়ে আরেকটি ভাষাকে স্বীকার করে নেয়া তাদের অস্বাভাবিক লেগেছে বলে জানা নেই। কারও কারও বোধ হচ্ছে, এই মিঞা পয়েট্রিতে  যে জায়গায় তাঁরা থাকেন, সেই রাজ্যের বদনাম হচ্ছে, বাইরে তাঁদেরকে বিদ্বেষী বলে পরিচয় করিয়ে দেয়া হচ্ছে। জাতীয়, বা আন্তজার্তিক পাঠককে টানা হচ্ছে কিন্তু স্থানীয়দের  ( রাজ্য স্তরের ) উপেক্ষা করে তা হচ্ছে। কারও পরামর্শ, এখন সময় ঠিক নয়, এসব লেখার, বা রাজনীতির সম্ভবপর উপায় দেখা উচিত। 

    তাঁদের সূত্রটি প্রয়োগে তাহলে এমন দাঁড়ায়, কেউ দাঁড় করিয়ে দিতে পারেন, এম এস নইপল ইংরাজিতে লিখে মালগুড়ির ভাষাকে দুর্বল করে দিয়েছেন, কমলা দাস মালয়ালি দুর্বল করেছেন।বিদ্যাসাগর নিজের ভাষা বাংলা লিখে সংস্কৃতের বারোটা বাজিয়েছেন। ‘নোবেলজয়ী’ রবীন্দ্রনাথ প্রচুর বাংলা লিখে হিন্দিকে মেরে দিয়েছেন। নাথান ব্রাউন নিজের ইংরাজি ছেড়ে অসমীয়া ভাষার ব্যাকরণ লিখেছিলেন, ফলে ইংরাজির সর্বনাশ হয়েছে। নেলসন ম্যান্ডেলা যেহেতু নিজের দেশে চলতে থাকা বর্ণ বিদ্বেষ নিয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন , আন্তর্জাতিক কম্যুনিটির নজর টেনে ছিলেন, তিনি দক্ষিন আফ্রিকাকে বদনাম করেছিলেন।

    বছর তিনেক আগের এক এপ্রিলে হাফিজ আহমেদ একটি কবিতা লেখেন। সামাজিক মাধ্যমে প্রায় সাথে সাথেই কয়েকজন সেই কবিতাতে সাড়া দিয়ে পর পর কবিতা পোস্ট করেছিলেন। এই কবিতাগুলি থেকেই মিঞা পোয়েট্রি কথাটি চালু হয়ে যায়। হাফিজ আহমেদের কবিতার পাশে প্রথম লেখেন সেলিম এম হুসেন। আমন ওয়াদুদ, শাহজাহান আলি আহমেদ, সুলতান মাহমুদ মৃদ্ধা সেই সাড়ায় লিখে ফেলেন।

    হাফিজ লিখেছিলেনঃ

    Write
    write Down
    I am a Miya
    My serial number in NRC is 200543
    I have two children
    Another is coming
    In the next summer,
    would you hate him
    As you hate me?
    write
    I am a Miya
    I turned waste,Marshy land,
    To green paddy field,
    To feed you,
    I carry brick
    To build your building,
    Drive your car
    For your comfort,
    I clean your drain,
    To keep you healthy.
    I have always been
    In your service
    Even then
    you are dissatisfied!
    write Down
    I am a Miya,

    A citizen of a democratic,secular,Republic
    Without any right,
    My mother has been made a D voter,
    Though her parents are Indian,
    If you wish you can kill me,drive me away from my village,
    Snatch away my green field,
    The Roller of you
    Can roll over me,
    Your bullets
    Can shatter my breast,
    Without any punishment.
    write
    I am a Miya
    living on the Brahamaputra
    Tolerating your torture,
    My body has turned black,
    My eyes red with fire.

    Be Aware!

    I have nothing but anger in stock.
    keep away!
    Or
    Turn to Ashes

    der than ever
    I am Miya!

    আশির দশকে খবির আহমেদ লিখেছিলেন, ...আমি ঘৃণিত মিয়া। সে বাদে, এই তারপর ‘মিয়া’ তাচ্ছিল্যের ভাষ্য ছেড়ে ব্যবহৃত হতে শুরু হল, তাচ্ছিল্যের শিকারদের তরফ থেকে।

    সেলিম লেখেনঃ

    নানা আমি লেখছি গো,
    এটেস্টো করাইছি, কাউন্টারছাইনো করাইছি
    পাব্লিক নটারীয়ে ভেরিফাই করছে
    যে আমি আসলেই একজন মিয়া॥

    এহন আমারে উঠতে দেহুইন
    বানের পানীর থিকা
    ভূমিস্খলনের উপরে ভাশতে দেহুইন
    কেদা ভাইঙ্গা, বালু ভাইঙ্গা, সাপ ভাইঙ্গা আটতে দেহুইন
    জমিনের চাপা জাইতা মারতে দেহুইন
    কোদাল দিয়া আইল কাটতে দেহুইন
    আর দেহুইন আমারে ধানের মইধ্যে, ডায়েরীয়ার মইধ্যে, কুইশালের মইধ্যে
    হাইফ্ৰা পারতে ১০ শতাংশ সাক্ষরতা হারের মইধ্যে
    আমারে আমার মাথা ঠিক করতে দেহুইন, চূল সিতি করতে দেহুইন
    দুই শাইর পদ্য, একটা গণিতের ফৰ্মূলা পঢ়তে দেহুইন
    দেহুইন আমার কপালে চিন্তা যেশুম শালাৰা কয় তুই বাংলাদেশী
    আর আমার বিপ্লৱী বুকটারে কইতে দেহুইন যে হায় রে,
    তুই জানশ যে তুই মিয়া॥

    দুই কদম আইগাইতে
    আমারি পাৰ্লাইমেন্টে, ছুপ্ৰীম কোৰ্টে, আমারি কনাট প্লেচে
    আমারি এমপি রে, জজবাবুরে আর জনপথে
    যে টুকটাক আর মায়া বেচে, হেই গেদীরেউ
    কইতে দেহুইন
    যে আমিতো মিয়া॥

    কলকাতায় আমারে লগ ধরবার আহুইন, বাঙ্গালুরে আহুইন,
    সীমাপুরীর ঝোপর পট্টিতে আহুইন
    দেহুইন আমারে শুট-কোট পিন্ধ্যা ছিলিকন ভেলীতে, কোট -বুট পিন্ধ্যা মেকডনাল্ডছে
    আমার বাল্যকাল বন্দী শ্ৰীনগরে,
    আমার নারীত্ব বেচা-কিনি হারিয়ানার মেয়াতে
    আমার পুলাপানীর কাফন কাপড়ে রক্ত দেহুইন
    আমার পিএইছডি ছাৰ্টিফিকেট, সোনার মেডেল দেহুইন
    তার পরে আমারে ডাহুইন ছালমা বুইলা, আমান, আব্দুল, বাহাতন নেছা বুইলা
    বা খালী গুলাম বুইলা॥

    আমারে প্লেন ধরতে দেহুইন
    ভিসা পাইতে দেহুইন
    বুলেট ট্ৰেন ধরতে দেহুইন
    রকেট ধরতে দেহুইন
    মহাকাশে আমার লুংগী দেহুইন 
    আর যেনে আমার ডাক কেউ হুনা না হারে
    হেনে আমারে চিল্লাইতে দেহুইন
    যে আমি মিয়া
    আমি গৰ্বিত॥

    (এই সিরিজ নিয়ে Abdul Kalam Azad তার ফেসবুকে ২০১৬-র মে মাসে লিখেছেন। সেখানে পুরো সিরিজটি পাওয়া যাবে। মিঞা পোয়েট্রিজ itamugur  নামে ফেসবুক পেজে আছে।)

    এই ‘মিয়া’ কবিতা  অস্বীকার করার কোনও সঙ্গত কারণ থাকতে পারে না।

    মিঞা কবিতার কোনও গেট-কীপার নেই, ,মানে এই কবিতা লেখকদের কোনও ঘোষিত মুখপাত্র নেই, বা স্থির করা নিয়মে লেখা নেই।  ‘মিয়া’ কবিতা নিয়ে যেকোনও মিঞা কবি তা নিয়ে বিবৃতি দিতে পারেন। সেলিম তাই বলেছেন। সেটা ঘোষিতভাবে না থাকলেও পোয়েটিক এফিনিটি, লেখার সামঞ্জস্যতা, এবং এভাবেই কিছু অলিখিত ধারাও তৈরি হয়। ঠিক যেমন, মিঞা কবিতায় কখনই কোনও গোষ্ঠী,ব্যাক্তিকে ‘জেনোফবিক’ বলে দেয়া হয়নি।

    কোনও মুখপাত্র না থাকলেও, দশ ‘মিয়া’ কবির নামে মামলা হয়েছে একসাথে, একটি কবিতার দায়ে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগে, ‘জেনোফবিক’ বলে তুলে ধরার অভিযোগও আছে। ‘রাইট ডাউন’ মিঞা কবিতাটি ২০১৬ সালে লেখা। সেই নিয়ে মামলা ২০১৯ সালের জুলাই মাসে। মামলা হওয়ার কিছুদিন আগে থেকেই মাঠ গরম হয়েছে, মামলার নাম ভূমিকা তৈরি হয়েছে।

    স্বাধীন রাষ্ট্রের ব্যবস্থাপনা সেই অভিযোগ নিয়ে কবির বিরুদ্ধে মামলা করেছে।পুলিশে সরাসরি অভিযোগকারী ‘গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ’-র সৈনিক। রাষ্ট্র  তদন্ত চালিয়েছে। সংবাদ মাধ্যমের কথা অনুযায়ী, গুরুতর বিষয় হিসেবেই তা দেখা হচ্ছে, এবং অভিযুক্ত দশের মধ্যে নাকি দু’জনকে আগেই নজরে রাখা হয়েছে আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্য।

     এখানে এসে  দান চেনা ছকে পড়ে যায়।

    এসব কথা অরাজনৈতিক নয়, রাজনৈতিক অবশ্যই।  রাজনীতি আছে কিনা,সব কিছুতেই রাজনীতি থাকবে কিনা, রাজনীতিকে আনা হবে কিনা,  প্রশ্নটাই  রাজনৈতিক, এবং রাষ্ট্রে জারি ব্যবস্থার তৈরি করে দেয়া প্রশ্ন, পছন্দের রাজনীতির পক্ষের সাওয়াল, কৌশল। অতিরাজনৈতিক দানে অভ্যস্থ করে দেয়া সমাজের মুখকে অরাজনৈতিক দেখিয়ে ভ্যাবাচ্যাকার বোড়েতে  ৬৪ ঘর দখলে রাখার যদি না অন্য কিছু বলা থাকের আড়াই চাল, নির্দেশ। 

    কবিতাতে রাজনীতি জরুরী। কবিতাকে রাজনৈতিকতার মধ্যেই থাকতে হবে। যদি তা না থাকে, তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবেই। গণতন্ত্রের চতুর্থ ভানুমতির খেলোয়াড়ের দাঁতের ফাঁকে বুলেট আটকে দেয়ার গোছানো এক্সিবিসন--নির্দেশিত ভঙ্গিকার, এসব চিহ্নিত হতেই থাকে। ছক চেনা হয়ে যায়।  দালাল হওয়ার  বদলে প্রতিনিধি হওয়াই জরুরী এই যে সময়ে , সেখানে ‘বুদ্ধজীবীয়’ স্বীকৃতির বিশেষ কিছু করার নেই, স্বীকৃতি সেখানে কাঠগড়ায় দাঁড়ানোই। ফ্ল্যাস লাইট আলোর নয়, তার পেছনের অন্ধকারের গানই তিনি গাইবেন আলো ছিনিয়ে নিতে, অন্ধকারে আলাল-দুলালের ভেদাভেদ নেই, অন্ধকার কেটে গেলেও খাটো হয়ে যাওয়ার ফাঁদ নেই।  আই হেট পলিটিক্সের হেটারদেরও প্রতি প্রস্তাব, কাঠগড়ায় দাঁড়ানো এইসব প্রতিনিধিরা অবশ্যই মাথা উঁচু করেই আছেন, আছেন বলেই অরাজনৈতিকতার ভান করার ফুসরত।

    হাফিজ আহমেদদের বিরুদ্ধে কোনও জাতিগোষ্ঠীকে বদনাম করার, আইনী পথে না গিয়ে কবিতা লেখার, নিজের স্বপ্ন দেখার ভাষায় লেখার অভিযোগ।

     পক্ষান্তরে নির্দেশ, নির্দেশ ক্ষমতাধরের আস্তিনের ভাঁজ ঠিক রাখার। অথচ এই হাফিজ আহমেদ সেই ভাষার পক্ষে দাঁড়িয়ে, যে ভাষা দুর্বল করে দেয়ার অভি্যোগ, সে ভাষার প্রসার করতে গিয়ে জীবনের অনেক সময় দিয়েছেন। সেই ভাষাতেই মূলত লেখালেখি করেছেন। নিজের ভাষা বলে পূর্বজদের স্বীকার করে নেয়া ভাষাকে প্রাণের সাথেই বেঁধেছেন। যে দশ জনের বিরুদ্ধে মামলা, তাদের মধ্যে একাধিকের পি এইচডি সেই ভাষা, সংস্কৃতি নিয়ে, যে ভাষা তাঁরা ‘দুর্বল করে দিচ্ছেন’।

    “তুমি আঙ্গ মা
    তোমার কোলেই জন্ম আমার
    তোমার কোলেই আঙ্গ বাবা-দাদার
    মা,
    তাও তুমি কও আমি তোমার আপোন না
    আমি তোমার কেউ না

    .....

    মা,
    তুমি আমারে বিশ্বাস করো না
    কারণ আমার মুকে দিগলা দাড়ি
    আমার পিন্ধনে লুঙ্গি
    মা আমি তোমার কাছে
    আমার পরিচয় দিতি দিতি
    ব্যাকুল ঐয়া যায়”

    ( আমি মিঞা/ রেহানা সুলতানা) 

    এইরকম কবিতার বিরুদ্ধেই অভিযোগ, বদনাম করার, আন্তর্জাতিক স্তরে এটেনসন সিক করার ! 

    বার বার,  প্রজন্মের পর প্রজন্মকে  প্রমাণেই ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে, প্রমাণ নিজের অস্তিত্বের। তবু প্রমাণ হয় না নগদে।  

    ছকটি প্রমাণেরই না। এই ছকই প্রকট সবখানেই। অধিকার দেয়াকে আটকে দেয়ার,  অধিকার আদায়কে কানা করে দেয়ার। ছকটি শোষণের। এই ছক তৈরি করে, তা রোপন করে, মতামতও তৈরি করা হয়। কাণা গলির ঐকমত্য বানিয়ে নেয়া হয়।সেই জোরে এই ছক চলেতে থাকে, ক্ষমতার চেয়ার ভর্তি হয়, ডাকনামে পার্থক্যই শুধু পার্থক্য। ফাঁদ থেকে অতি সাধারণেরা বেরিয়ে আসেন, বা আসতে চান তখন যখন নিজেরাই যে শিকার, এবং শিকার মাত্রেই একই ফাঁদে পড়া , সেটা বুঝে নিলেই।

     বোঝাবুঝির এই সমীকরণ শোষনমূলক ব্যবস্থার ও তার আওতাধীন শোষিতের।শোষক ছাড়া  সবার  জন্যই এই সমীকরণ-সমাধান জরুরী। এটি অসীমান্তিক সত্য।  ব্যবস্থাটাই পাল্টাতেই দরকার সলিডারিটির। সেই সলডারিটির শর্ত, একই ফ্রেমে ছবি হওয়া। 

     “প্রয়োজনে সেটি কবিতা না হোক। রাজনৈতিক স্লোগানই হোক। আমার অধিকার আছে , শোষণ, অবদমন, বঞ্চনা-র বিরুদ্ধে লেখার। আমার বাবা একজন ভারতীয় নাগরিক। সরকারী কর্মচারী। নিষ্ঠাবান শিক্ষক। কিন্তু তাঁর নাগরিকত্ব সন্দেহের আবর্তে। আমার একজনের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হয়েছে। তার ফলে আমার  পরিবারের অসহ্য জ্বালা-যন্ত্রনার কথা লিখে আমি কোনও ভুল করিনি।“  (কাজী নীল)


    ( এইসব মিঞাদের ঘর আসামের নদী চর এলাকায়। বৃটিশ ভারতে তাঁদের পূর্বজরা এখনকার বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন আসামে। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ, পাবনা, ইত্যাদি নানা জায়গা থেকে তাঁরা এসেছিলেন। তাঁদের লেখা কবিতায় ব্যবহৃত জোরালো কথ্যরূপটি প্রায় ময়নসিংহি। স্বাভাবিকভাবেই অনেক বছরে তাতে অনান্য নানা কিছু মিশে গেছে। ভাষা গতিশীল, তাতে পলি জমে থাকে না। সেলিম হুসেনের কথায় কেন তাঁরা বাংলা, ইত্যাদি বলেছেন না তাকে সেটা লেখা হয়েছে। তাঁরা নিজেদের বেঙ্গল-অরিজিন মুসলিম বলেন, বেঙ্গলি মুসলিম নয়। সেলিম এক জায়গায় বলেছেন, তাঁরা তাঁদের বাংলার শিকড়কে স্বীকার করেন, স্বীকার করেন বাঙালী সংস্কৃতির সাথে তাঁদের মিলের কথা। কিন্তু এত বছর ধরে একসাথে থাকা গোষ্ঠীগুলির সাথেও তাদের মিল আছে।

    তাঁদেরকে ‘ময়নসিংহের নতুন অসমীয়া’ বলেও সম্বোধন করা হয়েছে। বিষয়টি কৃত্রিম বলে মনে হতে পারে।

    ১৯৫১ সালে অন্যভাষাকে নিজের  বলে নেয়াকে আবার পালটে নেয়ার স্লোগানও উঠেছে, চল পাল্টাই । এটা এই কবিদের স্লোগান নয়। ‘মিয়া’ধরে নাম নিয়ে নানা সংস্থা  গড়ে উঠেছে। সবাই সবার সাথে যুক্ত এমন নয়। বরঞ্চ সেলিম বলেছেন, তাঁরা বাংলাকে মাতৃভাষা হিসেবে লিখছেন না, বা লিখবেন না। অতীত চমৎকার, তবে অতীত , অতীতই ।

    নিজেদের ভাষা, যে নমুনাটি অন্য জায়গায় একটি নির্দিষ্ট নামে, পরিচিত নামে   পরিচিত, তাকে কীভাবে ‘স্থানীয় কথ্য’ বলা যায়, সেটি নিয়ে কথা চলতে পারে। আবার একদিন হয়ত এটিই একটি আলাদা ভাষা হয়ে স্বীকৃতি নিতে  পারে। ‘ কথ্য ভাষা’ বলে একটি বিতর্ক এড়ানো যেতে পারে আপাতত, বা বিতর্কে আরও আনুষ্ঠানিক প্যাঁচ আটকানো যেতে পারে হয়ত। তবে তাতে লাভালাভের, অথবা সুবিধার হিসেব যে পাটিগ্ণিতের ঝকঝকা নয়, তা বলাই যায়।

    মিঞা পয়েট্রিজ ‘মিয়ারা’ বাদে আসামে সবাই বিরোধিতা করছেন , তা নয়। সহমত, সমর্থন অনেক আছে।  সেসব হয়ত ‘পাওয়ারফুল’ রিসোর্সের নয় ! সেসব সমর্থন কবিদের ফেসবুকের পাতাও। আসামের বিখ্যাত কবি নিলিম কুমার লিখেছেন, আমি মিঞা ভাষাটি জানলে, আমিও সেই কবিতা লেখতাম।

    যাঁর কবিতার লাইন ধরে ধরে এফআইআর হয়েছে, কবি হাফিজ আহমেদ এপলজি চেয়েছেন, তাঁর কবিতা কাউকে দুঃখ দিয়ে থাকলে। এপলজি’র যাইহোক তাঁর লেখাটি ছড়িয়ে পড়েছে। বার্তাটিও। এপলজি চেয়েছেন বলে মামলা উঠে গেছে, তা কিন্তু নয়। কবিতাটির লাইন লাইন  ধরে যে এফআইআএর হয়েছে, সেসব ব্যাখ্যা যেন ‘ আজ বাংলাদেশে উড়ে রক্তমাখা নিউজ পেপার’ মানে, রক্ত মেখে খবরের কাগজ ওড়ানো হচ্ছে বাংলাদেশে !

    কবিদের নামে মামলার বিরুদ্ধে ট্যুইটারে নিন্দার ঝড় বয়েছে। তাছাড়াও অনেকেই সলিডারিটি জানিয়েছেন। দু’শো কবি-সাহিত্যিক, প্রমুখ  সারা দেশ থেকে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, মামলার নিন্দা করেছেন।  এক ফ্রেম । ) 


    কবিতা, কবিদের বক্তব্য, ইত্যাদিসহ তথ্যসূত্রঃ ইটামুগুর, কবিদের ফেসবুক একাউন্ট, ইউটিউব, গণমাধ্যম, ই-মেল, এবং ইত্যাদি।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • অপার বাংলা | ২৪ জুলাই ২০১৯ | ৩০৬১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কল্লোল | ***:*** | ২৫ জুলাই ২০১৯ ০৪:৪৯79664
  • খুব তাড়াহুড়ো করে পড়েছি। তাই আগাম ক্ষমা চেয়ে রাখছি।
    কিন্তু হঠাৎ এই কবিতাগুলোর নাম মিঞা কেন?
    এগুলো শুধু মুসলমানেরাই লেখে - তাই?
    এগুলো আঞ্চলিক ভাষায় লেখা - তাই?
    অন্য কোন কারন?
    জানতে চাই।
  • b | ***:*** | ২৫ জুলাই ২০১৯ ০৪:৫৬79665
  • আসামে বাঙালী মুসলমানদের জেনেরিক মিঞা নামে ডাকা হয়। অল্প তাচ্ছিল্য আছে (পঃ বঃ বাঙালীদের খোট্টা সম্বোধন যেমন)।
  • কল্লোল | ***:*** | ২৫ জুলাই ২০১৯ ০৫:২৬79666
  • ধন্যবাদ বি।
  • | ***:*** | ২৫ জুলাই ২০১৯ ১২:৪৭79667
  • ভালো লেগেছে। থ্যাংক্স।

  • santosh banerjee | ২৮ নভেম্বর ২০২০ ১৯:১৭100736
  • অসম প্রদেশে বহু দিন ছিলাম !সেই সূত্রে বলি।.."মিয়া " শব্দ টা ওখানে তাচ্ছিল্যে বলা হয় !!একটা প্রবাদ ১৯৮৩ তে চালু ছিল ( যখন আসু এবং জাতীয়তা বাদী যুব ছাত্র পরিষদ ..এরা অগপ 'র ইন্ধন পেয়ে মুসলমানদের জবাই করেছিল নেলি এবং গোহপুর নামক স্থানে )।..."হাতে বিড়ি মুখে পান মিয়াঁ জাব(মানে যাবে ) পাকিস্তান "" !!অর্থাৎ ,   একদা পূর্ব বঙ্গ থেকে আসা বাঙালি মুসলমান দের প্রতি বিদ্বেষ ভাব আর অত্যাচার হয়েছিল কিছু গোষ্ঠীর দ্বারা !! ময়মনসিং থেকে আসা বাঙালি মুসলীম রা প্রধানতঃ নিম্ন অসম এ চাষ বাস করে ।..ব্রহ্মাপুত্র নদের চাপৰি  তে (চাপৰি মানে নদীর  বুকে জেগে ওঠা চর )এরা  ঘর বানিয়ে বাস করতে শুরু করে !!অসম এর অধিবাসী রা স্বীকার না করলেও এই মুসলমান রা তাদের শ্রম আর অধ্যাবসায় দ্বারা ফসল উৎপাদন থেকে শুরু করে ।..অট্টালিকা নির্মাণ কার্য ।..সবজি উৎপাদন ।..এবং গৃহস্থালি কর্মেও নিজেদের সপেঁ দিয়েছিলো !!ব্যাপার টা ঠিক  চলছিল ।..কিন্তু বিজেপি ক্ষমতায় এসে এদের নিয়ে আবার রাজনীতি শুরু করলো ।..যার ফলে ঐ এন আর সি /সি এ এ এইসব দিয়ে হুঙ্কার দিতে শুরু করলো যে এরা আসামের পক্ষে বিপদ স্বরূপ !!তখন এই কবিতা এবং কিছু লেখা প্রকাশ পেলো ।..যার নাম দেয়া হলো "মিয়াঁ কবিতা ""।বস্তুত , এই মিয়া শব্দ টা মুসলমান রা দেন নি ।..দিয়েছেন তথাকার কিছু উগ্রবাদী বুদ্ধজীবী ।..যারা এটা হজম করতে পারেনি !!

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন