এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ইন্দুবালা ভাতের হোটেল-২

    Kallol Lahiri লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ৩১ আগস্ট ২০১৮ | ৪৬৭১ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৪ জন)
  • বিউলির ডাল

    ভাদ্রের যে এমন নাভিশ্বাসের গরম আছে ইন্দুবালা আগে কখনও জানতেন না। কিম্বা ঠাহর করতে পারেননি তেমন। বিয়ের পর ছেনু মিত্তির লেনে এসে বুঝতে পেরেছিলেন শহুরে দমবন্ধ করা পরিবেশ কাকে বলে। গায়ে গায়ে ঠেকানো বাড়ি। চৌকো খোলা ছাদ। বাড়ির ভেতর থেকে একটুস খানি আকাশ। করপোরেশান কলের ছিরছিরে জল। শ্যাওলা ওঠা স্যাঁতসেঁতে দেওয়াল। বড় সোঁদা সোঁদা গন্ধ। আশে পাশে কোন নদী নেই। পুকুর নেই। তার বদলে বাড়ির সামনে আছে মুখ হাঁ করা বড় বড় নালা। তার দুর্গন্ধ। হুল ফোটানো মশা। গা ঘিনঘিনে মাছি। আর সন্ধ্যে হলেই টিমটিমে বিজলিবাতি। এটাই নাকি কলকাতা। এখানে আসার জন্য মানুষ স্বপ্ন দেখে। গড় হয়ে প্রনাম করে না দেখা কালীঘাটের মায়ের কাছে। বটতলায় সত্যপিরের সিন্নি চড়ায়। মুখের খাবার বন্ধক রাখে ঈশ্বরের কাছে। একবার কলকাতায় আসতে পারলে ট্রাম, বাস, মনুমেন্ট, ফেরিওয়ালার কাছে কাচের চুড়ি। এইটুকু সাধের জন্য এতোটা কষ্ট করা? বাড়ির কোন এক সমবয়সী মেয়েকে কোন একদিন হয়তো নিজের মনের প্রশ্নগুলো করে ফেলিছিলেন ইন্দুবালা তাঁর সহজ সরল ভঙ্গীতে। তাঁর গেঁয়ো বিদ্যে তখনও শহরের মানুষের জটিল মনের তল পায়নি। পরে যে পেয়েছিল তেমনটাও নয়। সারা বাড়ি ছড়িয়ে ছিল কোন এক গাঁয়ের মেয়ের কলকাতাকে দুর-ছাই করার সংবাদে। শাশুড়ি মুখ ঝামটা দিয়ে বলেছিলেন “কোথাকার কোন রাজরাজেশ্বরী এল রে। পাকা দালান কোঠায় পা পড়ে না। শুনেচি তো সেখানে শেয়াল কুকুর ঘুরঘুর করতো”। তা ঠিক। খুলনার কোলাপোতায় সন্ধ্যে হলে বাঁশ বাগানে শেয়াল ডাকতো। তুলসী তলায় জোনাকিরা ভিড় করে আলো জ্বালাতো। লণ্ঠন লাগতো না। ভাদ্রের এই সময়ে কাঠ চাঁপার গন্ধে আকাশ-বাতাস ভরে থাকতো। বিয়ের যেদিন সম্বন্ধ এলো অশ্বত্থ তলায় সেদিন অষ্টমপ্রহর। রাজশাহি থেকে এসেছে কীর্তনের নাম করা সব দল। ছানা এসেছে খুলনা শহর থেকে। বড় ভিয়েন বসেছে সামনের তালতলার রান্নাঘরে। এদিকে বাড়িতে ঠাম্মা বানাচ্ছে তুলতুলে নরম মোমের মতো তালের পিঠে। কলাপাতায় গরম গরম সেই ভাপ ওঠা পিঠে আজও যেন ইন্দুবালার চোখে জলছবি হয়ে ঘুরে বেড়ায়। ততক্ষণে অষ্টম প্রহরের মালসা ভোগের দই চিড়ের জন্য মানুষের কাড়াকাড়ি পড়ে গেছে। ইন্দুবালার তাড়া আছে। সে মালসা ভোগও খাবে। তার সাথে বাড়িতে গিয়ে ঠাম্মার তৈরী তালের পিঠে। এদিকে দূর থেকে ধূর্জটি পিওন আসছে সাইকেলে চেপে। তারস্বরে চিৎকার করছে বাবার নাম ধরে। ও ব্রজমোহন বাবু...শুনছেন...চিঠি আছে। চিঠির কথায় ইন্দুবালা ঘুরে তাকায়। একটু আড়াল নিয়ে দেখতে পায় বাবার হাতে একটা পোষ্টকার্ড। ধূর্জটি পিওন বলে, “মাষ্টারবাবু ইন্ডিয়াতে মেয়ের বিয়ের সম্বন্ধ করেছেন একবার জানাননি পর্যন্ত। এদিকে কি ছেলের অভাব ছিল? আমার ভাইপো তো এখন ঢাকায় সুতোর কলে কাজ করছে”।

    বাবা পারতপক্ষে চাননি মেয়ের এদিকে বিয়ে হোক। ভেবেছিলেন তার সোনার বরণ কন্যের যথাযথ মর্যাদা করতে পারবে ওপারের লোকজনেরা। তাই খুব ব্যস্ত সমস্ত হয়ে বছর পনেরো বয়সে বেশী দোজবরে ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন নিজের একমাত্র মেয়ের। বাড়িতে আপত্তি উঠেছিল তীব্র। ঠাম্মা নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন। মা বলেছিল “এর চেয়ে মেয়েটাকে একটা কলসি আর গামছা দাওনা। হালদারদের পুকুরে ডুবে মরুক”। ভাই গুলো ফুঁপিয়ে কেঁদেছিল। তোদের তখন এতোটাও বোঝার বয়েস হয়নি। তবুও কারো কথা শোনেনি বাবা। আর কেউ না জানুক তিনি হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন কোন না কোন সময়ে বাপ ঠাকুরদার এই ভিটে ছেড়ে তাদের একদিন চলে যেতেই হবে। সেদিনের ভয়ে তিনি সারাক্ষণ অতীষ্ট হয়ে থাকতেন শেষের দিকে। তাঁকে অবশ্য কষ্ট করে চোরের মতো রাতের অন্ধকারে সীমান্ত পেরিয়ে এপারে আসতে হয়নি। খান সেনাদের ঢোকার অনেক আগেই তিনি চোখ বুঁজেছিলেন কপোতাক্ষের তীরে। বাপ-ঠাকুরদার ভিটেতে। কোন এক অগ্রহায়ণের শিশিরে ভিজতে ভিজতে। আর বাকিরা জ্বলে পুড়ে মরেছিল স্বাধীনতার আগুনে। বাংলা ভাষার রাষ্ট্র হোক, এই স্বপ্ন বুকে নিয়ে এক আশ্বিনের রাতে শিউলির গন্ধে।

    ইন্দুবালার বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়িতে পুজো আচ্ছা হতো বেশী। শনি নামের যে ঠাকুরের পুজো হয় ইন্দুবালা এখানে এসে তার কথা সঠিক ভাবে জানতে পারেন। শাশুড়ি ছেলের মতি গতি ফিরিয়ে আনার জন্য নানা মন্দিরে হত্যে দিতেন। উপোষ-আচ্ছা করতেন। পাঁজি ধরে ধরে ছেলের নতুন বউকেও বাদ দিতেন না। খুব কঠিন নিয়মে বেঁধে রাখতেন। যদিও ইন্দুবালার গ্রামে ঘেটু ষষ্ঠী, ওলাই চন্ডী, পূণ্যি পুকুর ব্রতে এতো কঠোর অনুশাসন ছিল না। চাপড়া ষষ্ঠীতে কাঁঠাল পাতার ভেতরে গুড় আর কলা দিয়ে মাখা আটার সিন্নি খেতে দিব্যি লাগতো। বাড়িতে হতো ক্ষুদের চালের পায়েস। এইসব কথা শুনলে শ্বশুর বাড়ির লোকরা হাসাহাসি করতো। তাচ্ছিল্যের নামে অপমান করতো। সেসব গা সওয়া হয়ে গেছে ততদিনে। পূর্ণিমা-অমাবশ্যায়, তিথি নক্ষত্রের ফেরে ভালো দিনে ইন্দুবালাকে সঙ্গে নিয়ে মানুষে টানা রিক্সায় গঙ্গার স্নানে যেতেন শাশুড়ি। প্রথম দিনের ঘটনা আজও মনে আছে ইন্দুবালার। স্বামী ডেকে এনেছেন এমন এক জিনিস যা দেখতে আধভাঙা ঢাকা ওয়ালা গাড়ির মতো। সামনে টানা দুটো শুড়ের মতো লাঠি। তার মাঝে দাঁড়িয়ে একটা সিড়িঙ্গে মতো লোক। তার হাতে একটা ঝুমঝুমি। এরেই বুঝি টানা রিক্সা বলে? স্বামীর সাথে কথা হয় না শাশুড়ির সামনে। তা ছিল নিয়ম ভঙ্গের সামিল। শাশুড়ি জবাব দেন, “দেখেছো কখনও বাপের আমলে? নাও ওঠো এবার”। সেই বিষম বস্তুটায় উঠতে গিয়ে ইন্দুবালা কেঁদে ফেলেন আর কি! রিক্সায় বসার সাথে সাথে রিক্সা বুঝি উলটে যায়। শাশুড়ি চিৎকার করে বলেছিলেন “বাঙাল মেয়ে কি সাধে বলি? রিফিউজির রক্ত যাবে কোথায়? আমারও যা কপাল।” উঠতে বসতে ইন্দুবালাকে ‘বাঙাল’ বলাটা এই বাড়ির রেওয়াজ ছিল। আর ‘রিফিউজি’ তো তখন কলকাতার আকাশে বাতাসে। শাশুড়িই ধরিয়ে দিয়েছিলেন। পরে বাড়ির লোকের অভ্যেসে পরিণত হয়। মানুষকে এভাবে যে সম্বোধন করা যায় সেটা ইন্দুবালা এপারে না এলে বুঝতে পারতেন না কোনদিনও। এমনকি গায়ে পড়ে অপমানটাও। অনেক ছোট বেলায় বাড়ির মাটির দাওয়ায় হ্যারিকেন জ্বালিয়ে এক সময়ের টোলে পড়ানো দাদু যখন কৃতদাসদের গল্প করতেন তখন শিউরে উঠতো ইন্দুবালা। দারা দিন কাজ করতো মানুষ গুলো। নাওয়া নেই খাওয়া নেই। উঠতে বসতে মার। জাতের নামে অপমান। কাজ না পারলেই অন্ধকুঠুরিতে বন্ধ করে রাখা। এক এক সময় ছেনু মিত্তির লেনের বাড়িটা অন্ধকুঠুরি মনে হতো ইন্দুবালার। মনে পড়ে যেত সেই রাত গুলো। দাদুর গল্প বলার আসরের মাঝে ঠাম্মা এসে কড়া ধমক লাগাতো। “বাচাগুলান রাতে গুমাবে সেই খেয়াল আছে তো? থামাও তোমার হাবিজাবি গল্পগুলান।” ইন্দুবালা রাতে স্বপ্ন দেখতেন তিনি সেই কৃষ্ণকায় দাসের মতো পিছমোড়া হয়ে বাঁধা আছেন। গায়ে লেখা কতকগুলো সংখ্যা। প্রচন্ড ভয়ে ভোরে ঘুম ভেঙে গেলে ঠাম্মাকে পাশে খুঁজে পেতেন না। ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে উঠোন পেরিয়ে ঠাম্মা তখন গোয়াল ঘরে। হরিমতির দুধ দুইছেন। তার বাছুরকে আদর করছেন। বিচালি আর ভেলি গুড় মাখিয়ে খাওয়াচ্ছেন। ঠাম্মার গা থেকে ভেসে আসছে খুলনার গন্ধ। কলাপোতার গ্রাম। চোখ বন্ধ করে আছেন ইন্দুবালা। চোখ খুললেই স্বপ্নটা যদি চলে যায়।

    চোদ্দ গুষ্টি ঘটির মাঝে কেন যে তার শাশুড়ি বাঙাল মেয়ে বউ করে নিয়ে এসেছিলেন সেই সময়ে বুঝতে পারেননি ইন্দুবালা। অনেক পরে বুঝেছিলেন। কিন্তু সেদিকে গল্পের মোড় ঘোরাতে গেলে অনেকটা পথ যেতে হবে। উনুনের আঁচ হবে নিভন্ত। যা ইন্দুবালা কোনদিনই সহ্য করতে পারবেন না। তাঁর হোটেলে উনুনের আঁচ মানে সাক্ষাৎ অন্নপূর্ণা। টগবগ করে ফোটা ভাতের গন্ধ মানে এই বাড়িতে প্রান আছে এখনও। এতোদিন পরেও। বাড়িতে জমিদারি আমলের ভাড়ারে শাশুড়ি থাকা কালীন চালের অফুরান হলেও ইন্দুবালার জীবনে প্রানের অফুরান হয়নি কখনও। বাগবাজার ঘাটে গঙ্গার সামনে দাঁড়িয়ে প্রথম দিনে তাঁর কপোতাক্ষের কথা মনে পড়েছিল। বাড়ি থেকে লাল চেলী পড়ে, গা ভর্তি সোনা নিয়ে চলে আসার সময় মনে পড়েছিল ইচ্ছামতীর কথা। গ্রামের পাশের বড় হালদারদের পুকুরটার কথা। সবার কথা স্মরণ করে ইন্দুবালা ছলছল চোখে গঙ্গায় ডুব দিয়েছিলেন। বিড়বিড় করে বলেছিলেন “ভালো থাকুক ইচ্ছামতী...কপোতাক্ষ...হালদারদের পুকুর”। মাস ছয়ের মধ্যে বড় ছেলে পেটে এলে গঙ্গার পাট চুকলো। শাশুড়িও অসুস্থ হলেন।

    বুড়ি খিটখিটে হলেও বউয়ের নিন্দা অন্যলোকে তার সামনে করছে কোনদিন সহ্য করতে পারতেন না। তার মুখের ওপর জবাব দিতেন। ঠাম্মা শিখিয়েছিল ওপারের রান্না। আর শাশুড়ি শেখালো খুব যত্ন করে, চিৎকার চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথায় উঠিয়ে এপারের রান্না। ওপারের রান্নায় যেখানে মিষ্টতার অভাব ছিল এপারে এসে সেগুলোতে একটু একটু মিষ্টি পড়লো। আর এপারের রান্নায় মিষ্টি সরে গিয়ে কাঁচা লঙ্কা বাটা এলো। মরিচ ঝাল এলো। চুইঝালের গন্ধ এলো। মউরির ফোড়ন এলো। সারা বাড়ি মো মো করতে থাকলো ঘটি-বাঙালের রান্নার সুবাতাসে। সেদিন এমনই ভাদ্রের আকাশ ছিল। ঘর ছিল গুমোট গরম। দুই ছেলের পর মেয়েটা তখন পেটে। শাশুড়ি আর হাঁটতে পারে না। চলতে পারে না। ঘরের বিছানায় শুয়ে সব কিছু। তাও দুদিন প্রায় খাওয়া নেই। হঠাত সকালে ইন্দুবালার কাছে আবদার করলেন “বউ একটু বিউলির ডাল রাঁধলে দুটো ভাত খেতে পারতুম”। ইন্দুবালা তাড়াতাড়ি উনুন ধরিয়ে ছিলেন সেদিন। ডাল সেদ্ধ করে মৌরি ফোড়ন দিয়েছিলেন। নামানোর আগে একটুস খানি মিষ্টি। বুড়ি ওঘর থেকে চিৎকার করছিলেন হাঁপ ধরা গলায়। “হলো তোমার বউ? আর কত দেরী?” পদ্মকাটা বাটিতে ডাল ঢেলে, কাঁসার থালায় ভাত বেড়ে যত্ন করে খাইয়েছিলেন শাশুড়িকে ইন্দুবালা। সবটুকু ভাত আর ডাল বিছানার সাথে মিশিয়ে যাওয়া বুড়ি কোথায় যে নিয়ে নিচ্ছিলো ইন্দুবালা নিজেও তা বুঝতে পাচ্ছিলেন না। খাওয়া শেষ হলে বুড়ির চোখ গড়িয়ে নেমেছিল করুণাধারা। আশীর্বাদ করেছিলেন, “সবাইকে এইভাবে খাইয়ে পরিয়ে সুখী রাখিস বউ।” কথিত আছে মরা মানুষের শেষ বচন খনার বচনের থেকেও নাকি ফলপ্রদ। সত্যি তা অক্ষরে অক্ষরে ফলে গিয়েছিল ইন্দুবালার জীবনে। না হলে এতোগুলো মানুষকে এই বয়সেও খাওয়াতে পারেন? তবে যেটা তিনি এখনও বুঝতে পারেননি মানুষ কি করে বুঝতে পারে এটাই তার শেষ খাওয়া? না হলে সেই ভাত খাওয়ার পর বুড়ি আর মুখে কুটোটি নাড়েনি সারাদিন। পরের দিন সকাল বেলায় চা নিয়ে শাশুড়ির ঘুম ভাঙাতে গিয়ে শুধু দেখেছিলেন পাঁচিলের গা ঘেষা জানলার দিকে তাকিয়ে আছেন বুড়ি অপলক দৃষ্টিতে। আকাশে তখন ভাদ্রের জল ভরা মেঘ। মা...মা...বলে দুবার ডেকেছিলেন ইন্দুবালা। বুড়ি আর কোনদিন সাড়া দেননি। ছেনু মিত্তির লেনের অনেক বাড়ির মতো ইতিহাস হয়ে রয়ে গিয়েছেন ইন্দুবালার মণিকোঠায়।

    ধনঞ্জয় হাঁপাতে হাঁপাতে দোতলায় আসে। হড়বড় করে বলে যায় কথা। “আমি কত বারণ করলাম। শুনুচি না আমার কথা। ওই ছেলে গুনানরে আরও মাথায় তুলুচি...। তো এমন হউচি”। ইন্দুবালা হেসে পারেন না। ধনঞ্জয়ের ভাষা ঘটি বাঙাল ওড়িয়া মিলে মিশে একাকার। মাথার চুল গুলো সব সাদা ধপধপে। কোথাও যেন ইন্দুবালার জীবনের নাড়ি নক্ষত্রের সাথে জড়িয়ে গেছে ধনঞ্জয়। তার কাছে সবটা শোনার আগে সিঁড়িতে ধুপধাপ পায়ের আওয়াজ পান ইন্দুবালা। কারা আসছে? এইসময় তো কোন পুজো নেই। চাঁদার বালাই হওয়ার কথা নয়। আর ছেলে ছোকরা গুলো চাঁদা চায় না তার কাছে। আবদার করে এটা ওটা নিয়ে যায়। কিম্বা দুবেলা খেয়ে যায় সবাই মিলে এসে। বড় একটা কেউ ওপরে ওঠে না নাতি-নাতনি ছাড়া। কিন্তু তাদেরও তো এখন আসার সময় নয়। কিছুদিন আগেই তো সুননয়নীকে ঠেলে পাঠালো নিজের বাবার বাড়ি। শুনছেন নাকি কোন কলেজে পড়াচ্ছে। মাঝে মাঝে সে এসে পড়লেও এখন তার মোটেই আসার সময় নয়। ইন্দুবালা এগিয়ে যান দোতলার সিড়ির কাছে। সামনেই যাকে দেখতে পান সে কিংশুক। উলটো দিকের মেসে থাকে। ডাক্তারি পড়ছে। মাঝে মাঝেই রান্না খেয়ে দিদা বলে জড়িয়ে ধরে। ফরসা দেখতে। চোখে আবার গান্ধী ফ্রেমের কালো চশমা। শহরে নতুন উঠেছে। আর চাঁদি পর্যন্ত ছাঁটা ফুলকাট চুল। আর তার ওপরটায় আবার ঢেউ খেলানো বাবড়ি। বড় মিষ্টি লাগে এমন সব আজব সাজগোজ দেখে ইন্দুবালার। ছেলেটা সিঁড়ির কাছে এসে দাঁড়ায়। ধনঞ্জয় তেড়ে আসে। ওপরে সে উঠতে দেবে না। হড়বড় করে বলে যাওয়া কথায় যেটুকু বোঝা যায় কিংশুক হোটেলের সামনে টাঙানো কালো বোর্ডের লেখা মুছে দিয়েছে। যেখানে রোজ রান্নার মেনু লেখা থাকে। ইন্দুবালা বলে “এতো ভারী অন্যায় কিংশুক। আমার লেখা মোছো কি কী করে?” কিংশুক তখনও হাঁপাচ্ছে। তার সদ্য তারুণ্য হার মানতে শেখার নয়। “শোনো দিদা। সত্যি বলছি। আমি তো ছিলামই না কয়েকদিন। বাড়ি গিয়েছিলাম। কাল লাস্ট ট্রেনে বর্ধমান থেকে ফিরেছি। মুড়ি জল খেয়ে শুয়ে পড়েছি...। না না প্লিজ তুমি আগে আমার কথা শোনো। আজ সকালে উঠে গিয়ে দেখি ইন্দুবালা ভাতের হোটেলে রান্না হবে কচুর ডালনা, মুসুরির ডাল, আর ট্যাঙরা মাছ? এ কেমন কথা দিদা? আজ সুজিতের জন্মদিন ও খাবে কী? এই সুজিত তুই আবার রূপম, সাবেরর পেছনে লুকোচ্ছিস কেন? এদিকে আয়।” পেছনের ছোট খাটো ভিড় ঠেলে যে ছেলেটা এগিয়ে আসে তাকে দেখে চমকে যান ইন্দুবালা। কোকড়ানো চুল। গালে হালকা দাড়ি। কালো বার্নিশে গায়ের রঙ। হাসলে টোল পড়ে গালে। চোখে শুধু চশমাটুকু নেই। এতোদিন পরে এইভাবে কেউ ফিরে আসে? সত্যি কি আসা যায়? তিনি শুধু জানেন অলোক কোনদিন ফিরবে না। ফিরতে পারে না।

    বড় বেতের ঝুড়ি দিয়ে খাবার ঢাকা দেওয়া থাকতো রান্নাঘরে। অনেক রাতে শহর নিশুতি হলে ইন্দুবালা ভাতের হোটেলের পেছনের দরজায় কড়া পড়তো একবার। ওটা সাংকেতিক শব্দ। মানে “জেগে আছো কমরেড ইন্দুবালা?” কমরেড? সেটার আবার কি মানে? অলোক ফস করে সিগারেট জ্বালায়। “আপনি দেখছি কিছুই জানেন না। তা না জেনে আমাদের খাওয়াচ্ছেন কোন সাহসে? গোটা শহর আমাদের কি বলে জানেন?” ইন্দুবালা ঘাড় নাড়েন। না জানেন না। অলোক শিড়দাঁড়া সোজা করে বলে “নকশাল”। ইন্দুবালার চকিতে মনে পড়ে যায় আজকেই কালেক্টর অফিসের কেরানী কুল খেতে এসে কিসব ফিসফিস করে আলোচনা করছিল। কটা ছেলে মারা গেছে। গঙ্গার ঘাটে বোমা। সব নকশাল...নকশাল...। বিপ্লব করে দিন দুনিয়া পালটে দেবে। ইন্দুবালা তাকিয়ে থাকেন অলোকের দিকে। “একদিন রাতে যখন দরজা ধাক্কিয়ে ভাত খেতে এসেছিলে তখন তো জানতে চাইনি পরিচয়। আজ কেনো জানাচ্ছো? মা বলতেন অতিথির কোন পরিচয় হয় না। ধর্ম হয়না। তাঁরা হন ঈশ্বর।” চকিতে জবাব দিয়েছিল অলোক। তাকাতে পারেনি ইন্দুবালার দিকে। সে সাহস তার ছিল না। যদিও দুটো ঘোরেল পুলিশ ইন্সপেক্টর আর একটা গোয়েন্দা দপ্তরকে সে আদাজল খাইয়ে ঘোরাচ্ছে কলকাতার রাস্তায়। অলিতে গলিতে। লাল বাজারে একজন তাদেরও ওপরের লোক হাতে লোহাড় বেড়ি নিয়ে বসে আছেন নিজের সাদা-কালো আমিকে চিনিয়ে দেবার জন্য। এতোসব দস্যিপনা করা ছেলেটা সেই নিশুতি রাতে এক সহজ সরল গেঁয়ো বাঙাল বিধবার দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারেনি। শুধু বিড়বিড় করেছিল “ঈশ্বরে আমি বিশ্বাস করিনা কমরেড। কিন্তু আপনারা থাকুন। আপনারা থাকলে আমরা থাকবো।”

    অনেক রাত পর্যন্ত কান পেতে থাকতেন ইন্দুবালা। অপেক্ষা করতেন অলোকের জন্য। সারাদিন ওরা না খেয়ে, পুলিশের তাড়া খেয়ে ছুটে বেড়িয়ে অধিকার আদায় করছে। মানুষের মতো বেঁচে থাকার অধিকার। চাড্ডি ডাল ভাতের অধিকার। অপমানিত না হয়ে স্পর্ধায় মাথা তুলে দাঁড়াবার অধিকার। তাঁরও ভাইও কি শুধু একটা ভাষার জন্য একটা দেশের স্বাধীনতার জন্য এমন করে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ায়নি? শুনেছিলেন সেদিন ভাত খেতে এসেছিল ভাই। আর খান সেনারা গোটা বাড়িটাকে আগুনে খাইয়ে দিয়েছিল। ঠুক শব্দ শুনলেই নিজে ঘুম থেকে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিতেন ইন্দুবালা। ছেলেটা সাতদিনের ভাত একদিনে খেয়ে কোথায় যে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে চলে যেত কে জানে। মজা করে ইন্দুবালা তার একটা ছদ্ম নাম দিয়েছিলেন, প্যাঁচা। প্যাঁচার জন্য রোজ ভাত বাড়া থাকতো। কিন্তু প্যাঁচা রোজ আসতো না। তার আসা সম্ভব ছিল না। রাতের অন্ধকারে শুধু একটা গলা ফিসফিস করে ভেসে বেড়াতো “কমরেড ইন্দুবালা আপনার থাকলে আমরা থাকবো।” কিন্তু কই। ইন্দুবালা তো আছে। তাহলে অলোক নেই কেন? সুশান্ত নেই কেনো? গোরা নেই কেনো? মাধবী নেই কেনো? প্যাঁচার দলটা যে আর ভাত খেতে আসেনি কোনদিন। বরানগর ঘাটে পিচ আর ব্লিচিং দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল রক্ত। সেদিনও কি এমন বৃষ্টি পড়ছিল না? সেদিনও কি মনে হয়নি হাড়িতে আর কিছুটা চাল বেশী নিই?

    কেউ যেন একটা হাত ধরে ইন্দুবালার। ছানি না পাকা ঘোলাটে চোখে সামনে তাকান। কিংশুক হাত ধরেছে। পাশে সুজিত। আরও পেছোনে ইন্দুবালার সব চাঁদপানারা। “দেখবে না দিদা তোমার বোর্ডে কি লিখেছি? তারপরে তুমি ডিসিশান নিও এই গুলো আজ রান্না করবে নাকি করবে না”। ওরা দুড়দাড় করে নামে। ইন্দুবালা কি আর অতো তড়বড় করতে পারেন? হাঁটুর ব্যাথা, গেঁটে বাত নিয়ে এক দঙ্গল ছেলের সঙ্গে যখন সেই কবেকার কালো সিমেন্টের বোর্ডের সামনে এসে দাঁড়ান তখন তাঁর চোখ ঝাপসা হয়ে ওঠে ভাদ্রের বৃষ্টির মতো। কবেকার অলোক, গোরা, সুশান্ত, মাধবী যেন কিংশুক, সুজিত, রূপম, সাবেরের হাত ধরে এসে লিখে গেছে তার বোর্ডে। ইন্দুবালা হোটেলের আজকের মেনুতে জ্বলজ্বল করছে ভাত, বিউলির ডাল, আলুপোস্ত, কালো জিরে দিয়ে পার্শে মাছের ঝোল, বিলাতি আমড়ার চাটনি। ইন্দুবালা জানেন এরপর তিনি আর স্বস্তিতে থাকতে পারবেন না। যতক্ষণ না ছেলেগুলোর মুখে হাপুশ হুপুশ শব্দ ওঠে। সারা বাড়ি ছড়িয়ে যায় বিউলির ডালে মৌরি ফোড়নের গন্ধে। পার্শে মাছে কালো জিরের পাশে কাঁচা লঙ্কার আবেশ করা ঝোলে। আলু পোস্তো্র একটু কাঁচা তেলের সুবাসে। বিলাতি আমরার টকে সর্ষের মন কাড়া তীব্র ঝাঁঝে। কলাপাতা পড়ে। মাটির গ্লাস। লেবু, নু্‌ন, লঙ্কা। কবেকার এক পেট ক্ষিদে আর চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে হারিয়ে যাওয়া ছেলেমেয়েদের হয়ে এখনকার প্রজন্ম ভাত খায় ইন্দুবালার হোটেলে। ইন্দুবালা আজও বিশ্বাস করেন অতিথির কোন ধর্ম হয় না। বর্ন হয় না। জাত, গোত্র কিচ্ছু না। অতিথি হয় ঈশ্বর। (ক্রমশ)

    ঋণ- ঠাম্মা, মনি, দিদা, রাঙা, বড়মা আর মা। এছাড়াও বাংলার সেইসব অসংখ্য মানুষদের যাঁদের হাতে এখনও প্রতিপালিত হয় আমাদের খাওয়া দাওয়া। জিভে জল পড়ার ইতিহাস।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ৩১ আগস্ট ২০১৮ | ৪৬৭১ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    কবিতা  - S Azad
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • a | ***:*** | ৩১ আগস্ট ২০১৮ ০২:১৫63651
  • এটা বেশ ভালো লেখা হচ্ছে
  • Munia | ***:*** | ৩১ আগস্ট ২০১৮ ০৩:৪০63652
  • শেষ করে মনে হয় কেন হল শেষ!
    কি মিঠে লেখা!
  • শঙ্খ | ***:*** | ৩১ আগস্ট ২০১৮ ০৪:০৩63653
  • বাহ
  • kihobejene | ***:*** | ৩১ আগস্ট ২০১৮ ০৫:১৫63654
  • darun kisti :-) gora nokshal mukh dekhiye chole gelo mone holo ... gora nokshal ki arektu details a phire ashbe? shonge tukun?
  • Suman | ***:*** | ৩১ আগস্ট ২০১৮ ০৮:০৮63655
  • দারুন হচ্ছে। পরের কিস্তির অপেক্ষায় রইলাম।
  • | ***:*** | ৩১ আগস্ট ২০১৮ ০৯:০৮63648
  • দ্বিতীয় পর্ব দেখেই ঝাঁপিয়ে এসে পড়ে ফেললাম।
  • Du | ***:*** | ৩১ আগস্ট ২০১৮ ১১:০০63656
  • আবহমান। এইরকম লেখার জন্যই দাঁ হাতে আমার দিম্মাকে ফিরে পাই। আবার নোয়াখালি থেকে রিফিউজি হয়ে আসা পেছনের বাড়ির দিদা----
  • সিকি | ***:*** | ৩১ আগস্ট ২০১৮ ১১:৫০63649
  • সব ঝাপসা হয়ে গেল ... সব।

    আর কিছু লিখতে পারছি না
  • | ***:*** | ৩১ আগস্ট ২০১৮ ১২:০০63650
  • প্রসঙ্গত আজ মনে হয় খাদ্য আন্দোলনের শহীদ দিবস। ১৯৫৯ এর ।
  • Kallol Lahiri | ***:*** | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:০৪63662
  • পড়ে ফেললাম ইন্দুবালা ভাতের হোটেল -২।ভালো লাগলো

    শক্তি
  • dc | ***:*** | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:০৪63657
  • আগের লেখাটা পড়ে এতো ভালো লেগেছিল যে এটাও তাড়াতাড়ি পড়তে শুরু করেছিলাম। কিন্তু অল্প একটু পড়েই দেখলাম সেই টিপিকাল আঁতেল মার্কা লেখার মধ্যে ঢুকে পড়ছি, ছোটবেলায় স্কুলে যেগুলো পড়তে হতো, মহেশ না কিসব নাম ছিল। আর পড়তে পারলাম না।
  • ani | ***:*** | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:৪০63658
  • অনবদ্য অনবদ্য।
    অপেক্ষায় রইলাম...
  • র২হ | ***:*** | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:০৪63659
  • মহেশ মোটেই আঁতেলমার্কা না

    :(
  • বিপ্লব রহমান | ***:*** | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৬:১২63660
  • দ্বিতীয় পর্ব থেকেই শুরু করলাম। নতুন উপন্যাসের আভাস পাচ্ছি যেন! উড়ুক!
  • Amit | ***:*** | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৯:২৪63661
  • বড়ো মন কেমন করা লেখা । হটাৎ করে সব ছোটবেলার ঠাকুমা, দিদা, সবার কথা মনে পরে গেলো।
  • ঝর্না | ***:*** | ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:১৪63665
  • বড় ভালো লিখেছেন... ১ম পর্বে কুমড়োর বড়া দিয়ে শুরু করে ২য়তে বিউলির ডাল...আর খুব সুন্দর ভাবে এতে জড়িয়ে আছেন ইন্দুবালা ও তার ভাতের হোটেল...
    "চুইঝাল" চিনতাম না... মানে মা ঠাকুমাকে রান্নায় ব্যবহার করতে দেখিনি...পরে অবশ্য চিনেছি, মাংসের সাথে খেয়ে...অসম্ভব ঝাল...আপনার লেখায় পেয়ে ভালোলাগল... ভালোলাগল মেনুতেও কি অসম্ভব বাঙালিয়ানা ...

    পর্বের এই অংশটা ক্রমশ মস্তিষ্কে অনুরণন করে চলেছে...

    "ইন্দুবালা হোটেলের আজকের মেনুতে জ্বলজ্বল করছে ভাত, বিউলির ডাল, আলুপোস্ত, কালো জিরে দিয়ে পার্শে মাছের ঝোল, বিলাতি আমড়ার চাটনি। ইন্দুবালা জানেন এরপর তিনি আর স্বস্তিতে থাকতে পারবেন না। যতক্ষণ না ছেলেগুলোর মুখে হাপুশ হুপুশ শব্দ ওঠে। সারা বাড়ি ছড়িয়ে যায় বিউলির ডালে মৌরি ফোড়নের গন্ধে। পার্শে মাছে কালো জিরের পাশে কাঁচা লঙ্কার আবেশ করা ঝোলে। আলু পোস্তো্র একটু কাঁচা তেলের সুবাসে। বিলাতি আমরার টকে সর্ষের মন কাড়া তীব্র ঝাঁঝে। কলাপাতা পড়ে। মাটির গ্লাস। লেবু, নু্‌ন, লঙ্কা। কবেকার এক পেট ক্ষিদে আর চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে হারিয়ে যাওয়া ছেলেমেয়েদের হয়ে এখনকার প্রজন্ম ভাত খায় ইন্দুবালার হোটেলে।"

    অসম্ভব ভালোলাগা রইল...
  • | ***:*** | ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৬:৩৩63663
  • দুটি পর্ব ই ভালো লেগেছে।
  • এলেবেলে | ***:*** | ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৮:২৮63664
  • এখানেও একটা ভুল চোখে পড়ল। '“একদিন রাতে যখন দরজা ধাক্কিয়ে ভাত খেতে এসেছিলে তখন তো জানতে চাইনি পরিচয়। আজ কেনো জানাচ্ছো? মা বলতেন অতিথির কোন পরিচয় হয় না। ধর্ম হয়না। তাঁরা হন ঈশ্বর।” চকিতে জবাব দিয়েছিল অলোক। তাকাতে পারেনি ইন্দুবালার দিকে।' জবাবটা দিয়েছিলেন ইন্দুবালা, অলোক নয়। এই জবাবের কারণেই অলোক ইন্দুবালার দিকে তাকাতে পারেনি।

    আর লেখাটায় অসংখ্য টাইপো যথা 'হাড়ি', 'পোস্তো' ইত্যাদি গিজগিজ করছে। পরবর্তী কিস্তিগুলোতে এ ব্যাপারে সামান্য সতর্কতা জরুরি।
  • Kallol Lahiri | ***:*** | ২১ জুলাই ২০১৯ ১২:১২63666
  • সত্যি দারুণ , আমার শাশু মা বরিশালের, তাই রান্নার কথা বড্ড মেলে। আমি খোদ ঘটির ঘর। এই এত লংকা যে বাটা হয় আগে জানতাম না, বিয়ের পর রাধুনি ফোড়নের নাম শুনি। আর তার কে কি দারুণ গন্ধ। খুব ভালো, অনেক শুভে।
  • ভাস্বতী | 42.108.***.*** | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০০:২৭102423
  • পড়তে পড়তে বিভোর হয়ে গেছি...

  • reeta bandyopadhyay | ০১ ডিসেম্বর ২০২১ ২২:১২501601
  • পড়তে পড়তে ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল,  আমার দিদিমাও এমন চমৎকার সব রান্না করতেন,  চমৎকার লাগছে ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন