এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ইন্দুবালা ভাতের হোটেল-৪

    Kallol Lahiri লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৪ মে ২০১৯ | ৪২৩০ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • আম তেল

    বিয়ের পরে সবুজ রঙের একটা ট্রেনে করে ইন্দুবালা যখন শিয়ালদহ স্টেশনে নেমেছিলেন তখন তাঁর কাছে ইন্ডিয়া দেশটা নতুন। খুলনার কলাপোতা গ্রামের বাড়ির উঠোনে নিভু নিভু আঁচের সামনে ঠাম্মা, বাবার কাছে শোনা গল্পের সাথে তার ঢের অমিল। এতো বড় স্টেশন আগে কোনদিন দেখেননি ইন্দুবালা। দেখবেনটা কী করে? এই যে প্রথম ট্রেনে উঠলেন তিনি। নামলেনও। মাথার ওপর রাজপ্রাসাদের মতো ছাদ দেখলেন। এতোবড় বাড়ি দেখলেন। এতো লোক। সবাই যেন মাথা নীচু করে সামনের দিকে ছুটছে। কেউ কারো সাথে দু-দন্ড দাঁড়িয়ে একটুও কথা বলছে না। কুশল বিনিময় করছে না। যে যার খেয়ালে আছে। একটু অসতর্ক হলে, চলাফেরার একটু এদিক ওদিক হলে সবাই বুঝি সবার গায়ে হুড়মুড়িয়ে পড়বে। তখন ইন্দুবালার জিনিসপত্রের কী হবে? নেই নেই করেও তো সঙ্গের জিনিস কম নয়। মা বারবার বলে দিয়েছিল “চোখ ছাড়া করবি না ইন্দু”...। ঠাম্মা বলে দিয়েছিল “আগলে রাখবি সব কিছু”...। যদিও অদৃষ্ট বড় নির্মম খেলা খেলেছিল ইন্দুবালার জীবন নিয়ে। কোন কিছুই তিনি আগলে রাখতে পারেননি এই ভাতের হোটেলটা ছাড়া। তবুও সব কিছুর ওপর বড় মায়া তাঁর। ঘরের কোণে দাঁড় করিয়ে রাখা ক্ষয়ে যাওয়া নারকেলের ঝাঁটা থেকে পোড়া দেশলাইয়ের কাঠি। কিছুতেই মন চায়না কোন কিছু ফেলতে। সব কিছু বুড়ি জমিয়ে জমিয়ে রাখেন নিজের করে। তাঁর উপচে পড়া স্মৃতির মতোই। মাঝে মাঝে এইসব নিয়ে যে গোল বাঁধে না তেমনটা নয়। বেশ ভালোই চিৎকার চেঁচামেচি হয়। ধনঞ্জয় তখন লোক নিয়ে এসে রেগেমেগে কিলো হিসেবে বিক্রি করে সব কিছু। বুড়ি ঘুরঘুর করে চারপাশ। “ওরে মূর্খ তুই কী করে জানবি... ঠাম্মা বলতো বাড়ির আগাছাটাও তো দরকারি। না হলে হরিমতি খাবে কী? আর দুধ দেবেই বা কেন?” ধনঞ্জয় কাঁই মাই করে ওঠে। “বারবার তোমার খুলনার কলাপোতার গল্প শুনিও না তো মা। এখানে তোমার কোথায় হরিমতি? পোড়া দেশলাইয়ের কাঠি তোমার কাছে আগাছা? এই এতো এতো ঘিয়ের খালি শিশি? রঙ চটে যাওয়া টিনের তোরঙ্গ?” টান মেরে উঠোনে ফেলেছিল ধনঞ্জয়। কেমন যেন আর্তনাদ করে উঠেছিল সেই কতদিন আগের ফুলছাপ বাক্সটা। ডালাটা হাঁ করে খুলে পড়েছিল উঠোনে। ঠিক মরে যাওয়া মানুষের মতো। তার মুখ দিয়ে কিলবিল করে বেরোচ্ছিল আরশোলা। তারাও যেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম খুলনার কলাপোতার স্বপ্ন নিয়ে বংশ বিস্তার করে চলেছে। “এটা তুই কি করলি ধনঞ্জয়? এটা তোর কাছে পুরনো তোরঙ্গ বলে মনে হল?” ইন্দুবালা এগিয়ে যাচ্ছিলেন একটু একটু করে। “আমার বিয়ের সময় বাবা কিনেছিলেন ঢাকা থেকে। তারপর তিনটে নদী পার করে নিয়ে গিয়েছিলেন খুলনা। সেখান থেকে এই কলকাতা।” ধনঞ্জয় ক্ষয়ে যাওয়া নারকেল ঝাঁটায় আরশোলা মারতে মারতে বলে “তাহলেই বুঝে দেখো আর ওর জেবন প্রেদীপ থাকতে পারে?” ছ্যাঁত করে বুকে বাজে যেন ধনঞ্জয়ের কথা। তোরঙ্গের জীবন প্রদীপ নিভতে পারে তাহলে ইন্দুবালার নয় কেন? তাঁরও তো কম পথ অতিক্রম করা হলো না। এখনও কোন মায়ায় আটকে আছেন তিনি? ঘাড় তুলে আকাশের দিকে তাকান ইন্দুবালা এক টুকরো আকাশ দেখার জন্য। কিন্তু এখানে আকাশ কোথায়? ওই তো চার কোনের চৌখুপ্পি। তার ওপরে বাড়ির পেছনের আম গাছটা ঝাঁকড়া হয়ে এসে পড়েছে খানিকটা ভেতরে। কাঁচা আম গুলো যেন পুরুষ্ট হয়েছে গ্রীষ্মের রোদের খর তাপে। মন খারাপটা যেন কোথাও ঝুপ করে গায়েব হয়ে যায় ইন্দুবালার। আম দেখার আনন্দে এগিয়ে যেতে গিয়ে পায়ে কিছু একটা ঠেকে। নীচু হয়ে কুড়িয়ে নেন। সেই কবেকার প্রথম ট্রেন চড়ার টিকিট।

    “বিলাতি আমড়া খাবে গো নতুন বউ? বিলাতি আমড়া?” ফেরিওয়ালা হাঁক দিয়ে যায় কামড়ায়। মুখের সামনে এনে দেখায় আমড়া গুলো। ততক্ষণে ইন্দুবালার কপালের চন্দন ফিকে হয়ে গেছে। গলায় রজনীগন্ধার মালা বাসী। চোখের কাজল কিছুটা ধেবড়ে গেছে। বাকিটা রাখা আছে বিস্ময়ে মাখামাখি হয়ে। মাথা নাড়েন ইন্দুবালা। না তিনি খাবেন না। জানলার দিকে তাকিয়ে ভাবেন এই ফল আবার কিনে খেতে হয় নাকি? তাঁদের গ্রামে ফেলা ছাড়া যেত। কাঁচা কাঁচা ডেঁসো আমড়া পেড়ে আনতো ভাই। মা চাটনি করতো। নুন দিয়ে কুটি কুটি করে কেটে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে ভাই বোনে খেতো বোসদের পুকুর পাড়ে বসে। বৃষ্টির জল মেখে আমড়া পাকতো অম্বুবাচি পার করে। ঠাম্মা সারাদিন উপোষ করে থাকতো। এক বেলা ফলাহার। কখনও ছাতু ভিজে। কিম্বা সারাদিন মিছরির জল। বাবা এনে দিতেন ছানা, কলা। সেইসব মুখে তুলতেন না তিনি। সব যেত নাতি নাতনির পেটে। অতোবার চা খাওয়ার যার অভ্যেস ছিল সেও ওই কটা দিন চা না খেয়ে দিব্যি কাটিয়ে দিত। ইন্দুবালা বিধবা হবার পর এতোসব কিছু মানেননি। তার সম্ভাবনাও ছিল না। আর লছমী থাকতে তা করতেও দিতো না। মাষ্টার রতনলাল মল্লিক তাঁকে অনেক ছোট বয়সে বিধবা করে কেটে পড়েছিলেন পরপারে। দায় ফুরিয়েছিল তার। বড় ছেলেটাও এতো ছোট তখন যে মালসার খাবার খাবে কী করে? নিজে হাতে স্বামীর মুখাগ্নি করেছিলেন ইন্দুবালা। শ্রাদ্ধও। নিয়মভঙ্গের দিন লছমীর এনে দেওয়া ট্যাঙরা মাছ আর বাড়িতে দেওয়া বড়ি দিয়ে একটা তরিজুতের ঝোল রেঁধেছিলেন। অনেক দিন পর ছোট ছোট ট্যাঙরার মাথা গুলো চুষে চিবিয়ে খাওয়ার সময় মনে পড়েছিল ঠাম্মার কথা। অম্বুবাচিতে সারাদিন উপোষ করে থাকার পর ছাতু খেতে খেতে তাঁর যখন আর কিছু মুখে রুচতো না তখন খোসা ছাড়িয়ে পাকা আমড়া মুখের কাছে ধরতেন ইন্দুবালা। ঠাম্মা চুষে চুষে সেই বুনো ফলের সব রসটুকু খেয়ে নিতো। সারা ঘর মো মো করতো পাকা আমড়ার গন্ধে। এসব কথা কোনদিন ইন্দুবালা কাউকে বলতে পারেননি। এমনকি ছেলে-মেয়েদেরকেও না। নাতি নাতনি তো অনেক দূরের কথা। কিছু কিছু জানতো মাছওয়ালী লছমী কিন্তু সেতো আজ কোন সুদূরের অতিথি।

    সেদিনের সেই ট্রেনের কামড়ায় বিলাতি আমড়াই শুধু উঠেছিল তাই নয়। চিরুনি, পাতাবাহারে ফুল গাছ, সূচ, বশীকরণের ওষুধ কৃষ্ণনগরের সর ভাজা, শান্তিপুরের ভাজা মিষ্টি সবকিছু। তার ভাই মাঝে মাঝে বায়না করে খাচ্ছিল। কিন্তু ইন্দুবালার নিজের খেতে ইচ্ছে করেনি কিচ্ছু। এমনকি নতুন জরির চুল বাঁধার ফিতে দেখেও কিনতে ইচ্ছে হয়নি। জানলার পাশ দিয়ে তখন বেরিয়ে যাচ্ছিল মাঠঘাট। নদী, নৌকা, গ্রাম। ইঞ্জিনের কয়লার কালো ধোঁওয়া। চোখ বড় বড় করে দেখছিলেন তাঁর বয়সী মেয়েরা কাজে যাচ্ছে। কলেজে যাচ্ছে। ইন্দুবালা কলেজ যেতে চেয়েছিলেন। পড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু কোথা থেকে যে কী হলো মনিরুলের সজল কালো চোখ দুটো বাঁধা থাকলো তাঁর অন্তরে। নক্সী কাঁথার মাঠের সাজুর মতোই তাকে সব স্মৃতি উপড়ে নিয়ে চলে আসতে হলো এপারে। রূপাই থেকে গেল অনেক দিনের পুরনো অতীত হয়ে।

    ট্রেনটা জোরে ঝাঁকুনি দিয়ে দাঁড়িয়ে গেল কোন একটা স্টেশনে। কান ফাটানো আওয়াজ শোনা গেল বন্দুকের। ঝুপ ঝুপ করে ট্রেনের জানলা পড়তে শুরু করলো। একদল ছেলে-মেয়েকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠি চালালো। কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়লো। মাষ্টার রতনলাল মল্লিকের ঘুম ভেঙে গেল। তিনিও বিরক্ত হয়ে ইন্দুবালার সামনের জানলা ফেলে দিলেন। গোটা কামড়ায় এক অসহ্য গুমোট গরম। বাইরে চোখ জ্বালা করা ধোঁওয়া। কানে এলো গর্জনের মতো স্লোগান “পুলিশ তুমি যতই মারো/মাইনে তোমার একশো বারো।” আবার একটা কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটলো। কামড়ার ভেতরের লোকগুলো কেমন যেন ভয়ে কুঁকড়ে গেছে। তারই মধ্যে কয়েকটা ছেলে মেয়েকে হুড়মুড়িয়ে ট্রেনের কামড়ায় উঠতে দেখলো ইন্দুবালা। ঝাঁকুনি দিয়ে ট্রেনটা আবার চলতে শুরু করলো। মাথা ফেটে যে ছেলেটার রক্ত পড়ছে সে চিৎকার করে বললো, “ভয় পাবেন না বন্ধুরা...যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দিনে একবেলা করে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে নিজেদের ক্যাবিনেটের মন্ত্রীদের পেট ভরাচ্ছেন সেই শাসনের অবসান চাই আমরা। যে তীব্র খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে গোটা রাজ্য জুড়ে সেটা আর যাই হোক এই সরকার সামলাতে অপারগ...তাও আমরা যারা দুবেলা দুমুঠো এখনও খেতে পাচ্ছি...রেশনে গিয়ে পচা চাল আর গম কিনতে পারছি তাঁরা যদি এগুলো যারা একদম পারছেন না তাদের সাহায্যে কিছু দান করেন তাহলে লোকগুলো না খেয়ে অন্তত মরবে না। কমরেড দয়া করে ভুলে যাবেন না এখনও এই দেশে একবেলাও খাবার না জোটা লোকের সংখ্যাটা অনেক।” ছেলেটা বলে চলেছিল আর কয়েকটি ছেলে মেয়ে কৌটো নাড়িয়ে অনুদান চাইছিলো। সবটাই ইন্দুবালার কাছে নতুন। একটা তারই বয়সী মেয়ে তার সামনে এসে যখন অনুদানের কৌটো ধরলো ইন্দুবালার খুব ইচ্ছে করলো তার সেই কৌটোতে দু আনা হলেও দিই। কিন্তু তার কাছে কোন পয়সা ছিল না। গা ভর্তি ছিল সোনার গয়নায়। কৌটো ধরা মেয়েটা কেমন অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল ইন্দুবালার দিকে। তার বর মাষ্টার রতনলাল মল্লিক খিঁচিয়ে উঠলে সরে গিয়েছিল মেয়েটা। খারাপ লেগেছিল ইন্দুবালার। মানুষ গুলোর পেটের ভাতের জন্য ওরা রাস্তায় নেমেছে। ভিক্ষে করছে। তারা যদি দুবেলা ভরপেট খেতে পারে তাহলে যে দোরগোড়ায় এসে অভুক্ত দাঁড়াচ্ছে সে পাবে না কেন? সেই ইন্দুবালা তখনও জানতেন না তিনি একদিন একটা ভাতের হোটেলের মালিক হবেন। দুবেলায় তাঁর হোটেলে পাত পড়বে অসংখ্য মানুষের। সেই হোটেল থেকে পয়সা ছাড়াও খাবার বিলির বন্দোবস্ত থাকবে। সেটা সত্তরের জ্বালাময়ী সময়েই হোক কিম্বা তারও অনেক পরে মানুষগুলোর কাজ হারানোর সময়। সবাই জেনে গিয়েছিল এই একটা জায়গায় এমন এক অন্নপূর্ণা আছেন যাঁর ভাতের হাঁড়ি কারো জন্যেই কোনদিন খালি হয় না।

    নতুন কনে ইন্দুবালার সঙ্গে মালপত্র হিসেবে ছিল বড় নক্সা করা দুটি তোরঙ্গ। দানের বাসনের বড় ঘড়াটা। বাবার হাতে ছিল ওপারের বাজারের জোড়া ইলিশ। ভাইরের হাতে দইয়ের বড় হাঁড়ি। বাবু মাষ্টার রতনলাল মল্লিকের হাতে ছিল বিয়ের ছাতা নিপাট ভাঁজ করা। কাঁধে ফেলা ছিল দানের শাল। হাতে চকচক করছিল আশীর্বাদের দু ভরি সোনার আংটিটা। স্টেশনে ট্রেন থামলে বরের বাড়ি থেকে লোক আসা দস্তুর ছিল। নতুন কনেকে যেভাবে গল্প শুনিয়েছিল তার বাড়ির লোকেরা সে আরও অনেক কিছু ভেবে রেখেছিল। ব্যান্ড পার্টি। রঙ মশাল। ফানুস। কিন্তু এইসবের ছিটেফোঁটা ইন্দুবালার আশেপাশে কিছু ছিল না। নতুন বউকে নিয়ে যাওয়ার জন্য শ্বশুর বাড়ি থেকে কাউকে আসতে দেখেননি তিনি। বাবা একটু কুন্ঠা নিয়েই জানতে চেয়েছিল, “বাবা রতন...তোমার বাড়ির থেকে...?” কথা শেষ করতে দেয়নি মাষ্টার রতনলাল মল্লিক। তার সযত্নে লালিত বাবরি চুলের গোছা নেড়ে বলেছিল “তাই তো...তাই তো...এখন যে কি করি? বউভাতের যোগাড় যত্নে লেগে গেল কিনা লোকজন...। পুরুষ বলতে বাড়িতে আমি তো একাই...।” বাবা বিচলিত হতে বারণ করেছিলেন জামাইকে। তিনি থাকতে চিন্তা তো কিছুই নেই। “শুধু এতো জিনিস বলে লোকজনের খোঁজ করা। তা দুটো কুলি নিলেই হয়ে যায় আর কি।” বাবা দুটো কুলির মাথায় তুলে দিয়েছিলেন প্রায় সবটুকু। আর যেটুকু ছিল কুড়িয়ে বাড়িয়ে সবার হাতে হাতে ধরে গেল। কপোতাক্ষর গাঁয়ের মেয়ে যখন ভাগিরথীর পাড়ে এসে প্রথম পা দিলো কেউ শাখ বাজালো না। দুধে আলতা মিশিয়ে কেউ পা ছোঁওয়াতে বললো না। ঈশ্বর পাটনীর মতো কেউ আদর করে পার করে দিল না শ্বশুর বাড়ির দোড়টা। কিন্তু সে গল্প আমাদের জানা। যতই মাষ্টার রতনলাল মল্লিক বলুন না কেন বউভাতের আয়োজনে বাড়ির সবাই ব্যস্ত আছে। আমরা তো জানি ইন্দুবালার বউভাতই হয়নি। কাকপক্ষীটিও টের পায়নি ইন্দুবালার শাশুড়ি এক বংশ ঘটির মাঝে একটা বাঙাল মেয়ে বউ করে নিয়ে আসছেন। বাড়ির সামনে থেকে বাবা আর ছোট্ট ভাই চলে যাচ্ছে অপমানিত হয়ে। তাদের কেউ একটু জল খাওয়ার কথা পর্যন্ত বলছে না। যে বাবাকে এরপর আর কোনদিন দেখতে পাবেন না ইন্দুবালা। ভাই গিয়ে যোগ দেবে তারও অনেক পরে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে। এগুলো আমাদের গল্পের সুতো। ইন্দুবালার ভাষায় বলতে গেলে রোদে থোওয়ানো কাসুন্দি। যত তাপ পাবে...বৃষ্টি পাবে...নিজের মৌতাতে মজতে থাকবে যতনে।

    কলকাতা শহর তখন বেশ স্বর গরম। মিছিলের পর মিছিল চলেছে রাস্তা জুড়ে। মানুষের পাতে ভাত নেই। মনে সুখ নেই। খাবার নিয়ে যে আন্দোলন হতে পারে ইন্দুবালা জানতেন না এই শহরে না এলে। স্টেশনের বাইরে থেকে অনেক দর দাম করে বাবা একটা ট্যাক্সি ভাড়া করেছিলেন। সেই ট্যাক্সির মধ্যে ইন্দুবালা, তার ভাই, বাবা আর মাষ্টার রতনলাল মল্লিক ঠিক এঁটে গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিল সেইসব জিনিস গুলো যা আজ ধনঞ্জয় কুড়িয়ে বাড়িয়ে ফেলে দিতে চাইছে। ও কি জানে এইগুলোর মাহাত্ম্য? গজগজ করে বুড়ি ভাঙা তোরঙ্গটার সামনে বসেন। ততক্ষণে ডালে ফোড়ন পড়েছে। নটা বাজতে চললো। কলেজের ছেলেগুলো খেতে আসবে। ইন্দুবালার কাজের তাড়া পড়ে যায়।

    ট্যাক্সির জানলার পাশ আর ট্রেনের জানলার ধার ঠিক এক জিনিস নয়। ট্রেনের জানলার পাশে কত গ্রাম নদী জলা জঙ্গল আর ট্যাক্সির পাশে শুধুই ধূসর শহর। খেতে না পাওয়া মানুষের মিছিল। তখনও প্রথম ট্রেনে ওঠার ঘোরটা যেন কাটেনি ইন্দুবালার। অল্প অল্প মাথাটাও কি টলছিল ট্রেনের দুলুনির সাথে? তার রেশ রয়ে গিয়েছিল অনেক দিন। কলকাতায় এসেই মনিরুলকে লুকিয়ে চিঠি লিখেছিলেন ইন্দুবালা। “জানিস মনিরুল সে যে কি ভীষণ বস্তু তোকে না বলে বোঝাতে পারবো না। আমাদের সেই বাঁশ গাছে দোল খাওয়ার মতো। তুই নিশ্চই এতোদিনে ঢাকায় পড়তে চলে গিয়েছিস? অনেক কিছু দেখা হয়ে গেছে তোর? অনেক নতুন বন্ধু হয়েছে? আমার কথা মনে পড়ে আর? বোসদের পুকুর। খানার ধারের ল্যাঙড়া...। গাজনের মাঠ...। কপোতাক্ষের ঘাট আমি কিছু ভুলিনি মনিরুল। এখনও কি নানি সন্ধ্যে হলে বিষাদসিন্ধু পড়েন? তুই কি এখনও রাতের আঁধারে বাঁশি বাজাস? লণ্ঠনের আলোয় পড়িস নক্সীকাঁথার মাঠ? ঢাকাতে কি তোর দেখা হলো আমাদের প্রিয় কবি জসীমউদ্দীনের সাথে? আমার যে সব কথা...সব কিছু বড্ড জানতে ইচ্ছে করছে মনিরুল...। আমি যে তোকে...।” এরপর আর লেখা এগোতে পারেননি ইন্দুবালা। তিনি মনিরুলকে কী? ভালোবাসেন? পছন্দ করেন? একসাথে থাকতে চেয়েছিলেন? নিজের কাছে উত্তর গুলো স্পষ্ট নয়। যেমন ঠিক স্পষ্ট নয় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা আদৌও হয় কিনা। কিম্বা ভালোবাসার অপর নাম শুধু শরীর কিনা। যে শরীরটাকে মাষ্টার রতনলাল মল্লিক তার ছয় বছরের বিবাহিত জীবনে তিন তিনটে বাচ্চার মা বানানোর ফ্যাক্টরি করে দিয়ে হঠাৎ উবে যাবেন কর্পূরের মতো হাওয়ায়। শরীরের সেই না পাওয়া কিম্বা প্রচন্ড পাওয়া কষ্ট গুলো নিয়ে ইন্দুবালাকে বেঁচে থাকতে হবে দিনের পর দিন। তাও মলিন হবে না স্মৃতি গুলো। মানুষ গুলো। টগবগ করে ভাত ফোটে। ডাল ফোটে। মাছের ঝোলে মাছ গুলো যেন ফুটতে ফুটতে ফড়ফড় করে নিজেদের মধ্যে কথা বলে। তিন তিনটে উনুন জ্বেলে সেই স্মৃতি সম্ভাষণের আসন সাজান ইন্দুবালা।

    নতুন যে দেশটায়...শহরটায় তিনি এসে পড়লেন, এই দেশ নিয়ে...শহর নিয়ে এর আগে তিনি কম গল্প শোনেননি। বাবার বাবা মানে ইন্দুবালার দাদু এক সময়ে নাকি কাজ করতেন কলকাতার বন্দরে। সেখানে সাহেব সুবোর খাতা লিখে তাঁর দিন গুজরান হতো। বড় বড় জাহাজে করে কত শত যে জিনিস আসতো তার কোন ইয়ত্তা ছিল না। মেমসাহেবের ছোট্ট চিরুনি থেকে বেলজিয়াম কাঁচের আয়না। ইন্দুবালার গ্রামের বাড়িতে ঠাকুর দেবতার যা মূর্তি ছিল লক্ষ্মী থেকে শুরু করে শিব সব কিছু তার দাদুর আনা। জার্মান চিনেমাটিতে বানানো সব হিন্দু দেব-দেবীর মূর্তি। কলকাতার বড়লোক বাড়িতে ছেলে মেয়েদের খেলার জন্য বিদেশ থেকে আনাতেন বাড়ির লোকেরা। অনেক সময় বিয়ের তত্ত্ব যেতো। পুতুল গুলোর তলায় লেখা থাকতো মেড ইন জার্মানি। বেশ নামডাক ছিল এই শিল্পের। ঠাম্মার খেলার জন্য দাদু এইসব পুতুল মাঝে মাঝে নিয়ে গেলেও ঠাম্মা সব কিছু সাজিয়ে রাখতো পুজোর ঘরে। লক্ষ্মী, শিব, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর নিয়ে কেউ খেলে নাকি? শুক্রবার হলেই দাদু বাড়ি ফিরতো শিয়ালদহ স্টেশন হয়ে খুলনায়। একটা সবজেটে ট্রেন দাদুকে নামিয়ে দিত কপোতাক্ষের ওপারে। শনি রবি বাড়ি থেকে আবার সকালের ট্রেন ধরে কলকাতায়। বাবাও দাদুকে অনুসরণ করেছিলেন। দাদুর কাছে কাজ শিখতে শিখতে কলকাতায় পড়াশুনো চালিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ মাঝখান থেকে দেশটা স্বাধীন হলো। শুধু স্বাধীন হলো তাই না দেশটা দু-টুকরো হলো। মনে অনেক কষ্ট আর হতাশা নিয়ে দাদুর সাথে বাবা ফিরে এলেন খুলনার কলাপোতায়। যা টাকা জমিয়েছিলেন দাদু সেই টাকায় কিছু জমি কিনলেন। একটা টোল খুললেন। সেখানে পড়াতে শুরু করলেন গ্রামের ছেলে মেয়েদের। বাবা জমি জমার কাজ নিয়ে পড়ে থাকলেন। দেশ ভাগ হয়ে যাবার পর দাদুর কলকাতার অনেক বন্ধু বান্ধব তাকে বারবার বলেছিল ইন্ডিয়াতে থেকে যেতে। দাদু রাজী হননি। যে গ্রামের মাটিতে তাঁর বাবা, মা, পূর্বপুরুষেরা পঞ্চভূতে বিলিন হয়েছেন সেখানেই তিনিও থাকতে চেয়েছিলেন। তাঁর অবিচল সিদ্ধান্ত থেকে কেউ টলাতে পারেনি। তাহলে যেখানে সবাই রয়ে গেল ওই পাড়ে, সেখানে একমাত্র ইন্দুবালা তাঁদের পিতৃপুরুষের স্মৃতি তর্পনের জন্য কেন রয়ে গেলেন এপাড়ে? কেন বাবার মনে হয়েছিল একমাত্র ইন্দুবালাকেই ওপারে পাঠাতে হবে? অনেকের মতো কেন তিনি নিজেও সিদ্ধান্ত নিলেন না এপারে চলে আসার? ইন্দুবালা জানতেন বাবা শিকড় ছাড়া হতে পারতেন না। মাও না। ঠাম্মাও না। আর ভাই? তার কথা সোনার আখরে ইতিহাসে না লেখা থাকলেও ইন্দুবালা জানেন ওই যে মুক্তোর মতো বর্ণপরিচয় সেখানেই লুকিয়ে আছে তাঁর ভাই। লুকিয়ে আছে বাংলা ভাষার রাষ্ট্র গড়ার দাবীতে।

    গোটা বাড়ির জানলা দরজা গুলো হুটোপাটি করে পড়ার শব্দে ইন্দুবালার ঘুম ভেঙে যায়। দুপুরের হোটলের কাজ কম্ম শেষ করে তাঁকে এখন একটু গড়িয়ে নিতে হয়। না হলে রাতের দিকে আর উনুনের সামনে দাঁড়াতে পারেন না। কাঁচা ঘুম চোখে তাকান ইন্দুবালা বাইরের দিকে। আকাশ কালো করে মেঘ করেছে। কালবৈশাখী। কোনরকমে গাঁটের ব্যাথা সামলে উঠে পড়েন তিনি। ধনা...ধনা করে চিৎকার করেও ধনঞ্জয়ের কোন সাড়া পাওয়া যায় না। বাজার করতে গেল নাকি এখনি? ইন্দুবালা কোন রকমে ওপরের ঘরের জানলা গুলো বন্ধ করার চেষ্টা করতে লাগলেন আর ঠিক তখনি তাঁর নজর গেলো উঠোনে। বাগানের গাছটা থেকে টুপ টুপ করে আম পড়ছে ঝড়ে। সেদিনও কি এমন ঝড়টাই হচ্ছিল না? তবে সেটা ছিল ভোর। আর আজ বিকেল। ইন্দুবালা নামতে থাকেন সিঁড়ি দিয়ে। কিন্তু তাঁর মন যেন ছুটছে।

    ছুটছেন ইন্দুবালা। ছুটছেন তীর বেগে। হাতে লণ্ঠন। ভোর হতে তখন অনেক দেরী। পেছনে ছুটছে ছোট্ট ভাইটা। তার পেছনে মা তারও অনেক পেছনে ঠাম্মা। গোটা আমবাগান জুড়ে কলাপোতার লোকজন যেন জড়ো হয়েছে ওই আঁধার ভোরে। প্রায় একশো গাছের বাগান যাদের তারাও এসে জড়ো হয়েছে। শিলের মতো পড়ছে আম। কেউ মারামারি করছে না। রেষারেষি না। সবার কোচড় ভরে উঠছে কাঁচা মিঠে, ল্যাঙড়া, বোম্বাই আমে। ঝড়ের সাথে শুরু হচ্ছে বৃষ্টি। কড়কড় করে বাজ পড়ছে। দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ভাইটা ঠকঠক করে কাঁপছে। ছুটে গিয়ে নিজের আঁচলে জড়িয়ে ধরেম ইন্দুবালা। “লেবু পাতায় করম চা যা বৃষ্টি চলে যা”। কিন্তু বৃষ্টি থামার নাম নেই। গায়ে যেন বরফ জলের ঠান্ডা। ভাই বোন ঠকঠক করে কাঁপে। দুজনে আগলে রাখে কোচড়ে জমানো আম গুলোকে। একটা সময়ে ইন্দুবালা হঠাৎই বুঝতে পারেন চারপাশে বৃষ্টি পড়ছে কিন্তু তাঁদের মাথায় বৃষ্টি নেই কেন? ওপর দিকে তাকাতে ইন্দুবালা দেখলেন একটা বড় কচু পাতা। সেটা ধরে আছে মনিরুল। কি যে ভালো লেগেছিল সেদিন ইন্দুবালার বলে বোঝাতে পারেননি কাউকে। বলার সুযোগ ছিল না। কম কথা বলা মেয়েটা রুমালের ওপর সুতো দিয়ে একটা ছেলেকে এঁকেছিল। তার হাতে দিয়েছিল একটা কচুর পাতা। আর মেয়েটাকে রেখেছিল দূরে। এলোচুলে। বৃষ্টির মধ্যে। ইচ্ছে ছিল মনিরুলকে নিজে হাতে করে দেবে। সেটা আর দেওয়া হয়নি। জ্বর বেধেছিল সেবার খুব। সাতদিনের মাথায় পথ্যি পেয়ে তবে মেয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে পেরেছিল। গ্রীষ্মের রোদে ঘর থেকে বেরিয়ে মন ভালো হয়ে গিয়েছিল ইন্দুবালার। ঠাম্মা সেই ঝড়ে কুড়োনো আম গুলোকে দিয়ে আমতেল বসিয়েছেন রোদে। সূর্যিদেব গোটা গ্রীষ্মকাল জুড়ে রোদে তাতিয়ে তেলে মিশিয়ে কাঁচা আম গুলোকে জারিয়ে দেবেন নকুলের ঘানির খাঁটি সর্ষের তেলে। তারপর সেই তেল দিয়ে সারা বছর যা খাওয়া দাওয়া চলবে তার কোন হিসেবের কুল কিনারা পাওয়া যাবে না। আম তেল মুড়ি দিয়ে মাখা হবে। গরমভাতে ঘিয়ের বদলে খাওয়া হবে। মাছের ঝোলে বিশেষ করে সরল পুটিতে আমের গন্ধ দেওয়ার জন্য আমতেল ব্যবহার হবে। আর গ্রামে পোয়াতির সংখ্যা নেহাত কম থাকে না সম্বৎসর। তারাও পাবে। পাতা কুড়োতে এসে খেন্তির মা পাবে। টিফিনে মনিরুল পাবে। ফকিরি গান করতে আসা ভিখারী পাবে। চুরি করে ঠাম্মার আম তেল খেতে খেতে গরমের ছুটির দুপুর গুলো কেটে যাবে।

    বৃষ্টিটা সবে থেমেছে। ইদানিং হয়েছে কি কলকাতার এই ধরনের হুট করে বৃষ্টিতে সবাই কেমন যেন তালকানা হয়ে যায়। ট্রাফিক সার্জেন্ট থেকে শুরু করে অটো চালক সবাই। প্রদীপ নিজেই ড্রাইভ করে মায়ের সাথে দেখা করতে এসেছে। কিন্তু গাড়ি পার্ক করবে কোথায়? ইন্দুবালার ভাতের হোটেলের সামনে একটু বৃষ্টিতেই গোড়ালি সমান জল। সেখানে আবার কোথায় গর্ত আছে, নর্দমা আছে সেইসব দেখে গাড়ি পার্ক করতে প্রদীপের অনেকটা সময় লেগে যায়। এতোক্ষণে বাড়িটার দিকে তাকানোর সময় হয় তার। আর বাড়িটার দিকে তাকাতেই কেমন যেন কু গেয়ে ওঠে মনটা। গোটা বাড়িজুড়ে অন্ধকার। কেউ কোত্থাও নেই। এমনকি সামনের বোর্ডে লাগানো আলোটাও আজ জ্বলছে না। প্রদীপ অনেক দিন পর মায়ের সাথে দেখা করতে এলো। আসবো আসবো করে তার আসাই হয় না। আজ এইটা কাল ওইটা লেগেই থাকে। আজকে আসার আরও একটা কারণ হচ্ছে এইবার পাসপোর্টটা ফারদার রিনিউ করার আগে সে একবার বাংলাদেশ ট্যুর করতে চায়। একটা প্যাকেজেও পাচ্ছে প্রায় কিছু না দিয়েই। ছেলে বুবাই বললো “যাও না ঠাম্মির দেশে। কিসব তোমাদের কলাপোতা...ফোতা।” আইডিয়াটা খারাপ লাগেনি প্রদীপের। বউ সম্পূর্ণাও রাজী হয়ে গিয়েছিল। কর্মসূত্রে স্বামীর সাথে তার বাইরের অনেক দেশ ঘোরা। কিন্তু বাংলাদেশ যাওয়া হয়নি। নিজের চোখে হাতে করে একটু ঢাকাই মসলিন দেখে আসার ইচ্ছে আছে তার। সাথে কিছু কেনারও। এবার মা রাজী হলে তাহলে পাসপোর্টের একটা ঝামেলা থাকবে। মায়ের পুরনো পাসপোর্টটা আছে কিনা সেটাও দেখা দরকার। প্রদীপ যদিও জানে পাসপোর্ট করাতে সময় লাগবে না। বুবাইয়ের বন্ধু কাজ করে ফরেন সার্ভিসে। তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে সব। সম্পূর্ণাই তাকে ঠেলে পাঠালো। একবার কথা তোলবার জন্য। মেজাজ যা মাঝে মাঝে থাকে বুড়ির। বাড়ি থেকে যখন বেড়িয়েছিল প্রদীপ বৃষ্টি ছিল না। এই দিকেই হয়েছে তাহলে ভালো। প্রদীপ এগিয়ে গেল ভেতরের দরজার দিকে। সিঁড়ির আলো জ্বালালো। বাইরের বারান্দার। না কোথাও কেউ নেই। দুবার ডাকলো মা মা বলে। উত্তর এলো না। প্রদীপ চিৎকার করে ডাকলো ধনঞ্জয়কে। ধনঞ্জয় নেই। কেমন যেন ভয়ে পেয়ে গেলো প্রদীপ। যদি মা সত্যি না থাকে? এই কথাটা এই প্রথম ভাবলো যেন সিনিয়র সিটিজেনের ক্যাটাগরিতে সবে প্রবেশ করতে যাওয়া প্রদীপ। এমন ভাবে কোনদিন এর আগে মনে হয়নি। মা থাকলে জগৎটা তার এক রকম। আর মা না থাকলে আর এক রকম। বাবাকে তার ঝাপসা মনে পড়ে। ঘুড়ি ওড়ালে বাবা লাটাই ধরা শেখাতো। ব্যস ওইটুকুই। তার তো তাও এটা মনে আছে ভাই আর বোনের সেটুকুও তো মনে নেই। সবটাই তো তিনজনের মাকে ঘিরে। একবার কি ফোন করবে তাহলে ভাইকে? খুকুকে? কিন্তু কী বলবে? ছেনু মিত্তির লেনে ইন্দুবালা ভাতের হোটেলে সে এসেছে অথচ ইন্দুবালাকে খুঁজে পাচ্ছে না? বাইরের দিকে পাতকো তলায় উঠোনের কাছে এসে আর একবার কাঁপা কাঁপা গলায় ডেকে উঠলো প্রদীপ... “মা”। এবার খুব শান্ত গলায় উত্তর ভেসে এলো “আয়...”। প্রদীপ তার মায়ের গলা শুনতে পেল কিন্তু মাকে সে দেখতে পেলো না তখনি। মোবাইলের টর্চ জ্বালালো। “কোথায় তুমি মা?” আর অবাক হয়ে দেখলো তার মাকে। কাক ভিজে হয়ে সন্ধ্যের উঠোনে ঝাঁকড়া আমগাছের ডালটার নীচে বসে আছেন ইন্দুবালা। চারপাশে জড়ো করা ঝড়ে পড়া কাঁচা আম। প্রদীপ এগিয়ে যায়। জড়িয়ে ধরে তার মাকে। “মা তুমি ঠিক আছো তো? তোমার শরীর ঠিক আছে তো? পড়ে গিয়েছিলে নাকি? এই বয়সে কেউ এভাবে এতো বৃষ্টির মধ্যে...। আমাকে ধরো মা...প্লিজ আমাকে ধরো...শক্ত করে ধরো...।” ইন্দুবালা ছেলের হাত ধরেন। সেই আধো আলো আধো অন্ধকারে, আধুনিক মোবাইলের এল ই ডি লাইটে ইন্দুবালা বলে ওঠেন “আমাকে একটু তেল কিনে দিবি খোকা? আম তেল বানাবো...।”

    এমনটা নয় যে ইন্দুবালার তেল কেনার টাকা নেই। এমনটা নয় ইন্দুবালা এইভাবে ছেলেদের কাছে টাকা চান। কোনদিন কারো কাছে একটা টাকাও হাত পেতে চাননি সেই প্রথম দিন লছমী টাকা দিয়ে ভাত খেয়ে যাওয়ার পর। তারপর থেকে ক্যাশবাক্স ভর্তি থেকেছে সবসময়। তাই প্রদীপ একটু আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিল। তার মনে ভয় ছিল ছোট খাটো কোন সেরিব্রাল এ্যাটাক হয়েছে কিনা। ততক্ষণে সারা রাজ্যের বাজার ঘুরে ধনঞ্জয় এসে গিয়েছিল। প্রদীপ একটুও দেরী না করে এ্যাম্বুলেন্স ডেকেছিল। সোজা নিয়ে গিয়েছিল হসপিটালে। এমার্জেন্সির ডাক্তার বরং উলটে কথা শোনালো প্রদীপকে। আমতেল করবেন বলে তেল কিনে দিতে বলেছেন বলে সোজা হসপিটাল নিয়ে চলে এলেন? আচ্ছা ছেলে তো মশাই। প্রদীপ কিছুতেই বোঝাতে চেষ্টা করলো না এই ইন্দুবালা কি ধরনের মানুষ। বরং ডাক্তার অবাক হয়ে গেলেন দু বেলা এখনও তিনশো লোকের রান্না করা, কুটনো কাটা ইন্দুবালা করেন কী করে? আতিপাতি খোঁজ নিয়ে হোটেলের ঠিকানা নিয়ে দুটো এন্টাসিড লিখে ডাক্তার ছেড়ে দিলেন ইন্দুবালাকে। তার সাথে ইন্দুবালা তাকে বলে এলেন সকালে উঠে লেবুর জলের সাথে মধু খাওয়ার নিদান। তাও যে সে মধু নয়। সর্ষে ফুলের মধু। গরম জলের মধ্যে ঘুরবে তার ঝাঁঝ। আপনি চর্বি যাবে কমে।

    ইন্দুবালার শরীর যখন বেশ ভালো। তেলের মধ্যে আমগুলো যখন বেশ চুবো চুবো হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রদীপ তার বউকে নিয়ে এলো একদিন। সেদিন যে কথাটা পাড়া হয়নি এবার বলেই ফেললো সাহস করে। “যাবে মা আমাদের সাথে বাংলাদেশ?” ইন্দুবালা খুব যে একটা গুরুত্ত্বপূর্ণ কাজ করছিলেন তেমনটা নয়। এঁচোড় কাটছিলেন হাতে তেল মেখে আঠা পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে। কুটনো কাটা থেমে গেল তাঁর। বিয়ের পরে যখন দেশ থেকে এসেছিলেন তখন সেটা ছিল পূর্ব পাকিস্তান। আর আজ সেটা বাংলাদেশ। তার ছেলে বলছে মাকে একবার বাংলাদেশ ঘোরাবে। সত্যি কানে ঠিক শুনছেন তো তিনি? কোন ছলনায় এরা আবার এসে জোটেনি তো এই সাত সকালে? উঠে পড়েন ইন্দুবালা। পড়ে থাকে আধ কাটা এঁচোড়। ডালনার না কাটা আলু। মোচা। আরও অনেক তরিতরকারি। ছেলের কাছে এগিয়ে এসে জানতে চান হঠাৎ বাংলাদেশ যাওয়ার কথা বলছিস কেন? আমি না মরা পর্যন্ত এই বাড়ি তোমরা বিক্রি করতে পারবে না খোকা। প্রদীপ হো হো করে হাসে। “তুমি কি করে ভাবলে আমি বাড়ি বিক্রি করার জন্য তোমাকে বাংলাদেশের লোভ দেখাবো?” ইন্দুবালা বিশ্বাস করেন না তাঁর ছেলে মেয়েদের। “এই তো সামনের চক্কোত্তিবাড়ির মেয়ে দুটো বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিয়ে বাড়ি বিক্রি করে ফ্ল্যাট তুলে দিলো।” সম্পূর্ণা এবার এগিয়ে আসে। ইন্দুবালার বড়ছেলের বউ কম কথা বলে। কিন্তু যেটুকু বলে কাটা কাটা, তীক্ষ্ণ, নুন ছড়ানোর মতো। “আপনি ভুল বুঝছেন মা। চক্কোত্তি বাড়ির সাথে আপনার ছেলে মেয়েদের গোলাবেন না। আমরা বাংলাদেশের ট্যুর প্ল্যান করছিলাম। প্রদীপ তাই ভেবেছিল আপনি গেলে আমাদের ভালো লাগবে। ও তো কোনদিন দেখেনি...। কলকাতা স্টেশন থেকে এখন ট্রেনও ছাড়ছে। মৈত্রী এক্সপ্রেস। এর মধ্যে বাড়ি বিক্রির কথা আসছে কী করে? আর আমাদের সবার তো বাড়ি আছে মা...।” ট্রেন ছাড়ছে বাংলাদেশের জন্য এই বড় খবরটা ইন্দুবালার কাছে ছিল না এতোদিন? “ট্রেনে করে যাওয়া যাবে খুলনা?” বড় ছেলে বলে যাবে। ইন্দুবালা প্রশ্ন করেন “জানলার ধারে সিট পাবো খোকা?” প্রদীপ জানিয়ে দেয় “পাবে। আমরা একটা কূপ রিজার্ভেশান করে নেবো মা। সেখানে আমরা তিনজন ছাড়া আর কেউ থাকবে না।” কেমন যেন ফুরফুরে মেজাজের হয়ে যান ইন্দুবালা। বাড়ির সামনের তুলসী মঞ্চটাকে স্পষ্ট দেখতে পান। মাকে...বাবাকে...ঠাম্মাকে...ভাইকে...মনিরুলকে...।

    বড় ছেলে, বউকে এঁচোড়ের ডালনা, মোচার ঘন্ট, পাবদার ঝোল আর কাঁচা আমের চাটনি খাইয়ে বাড়ি পাঠান। ভাত খেতে আসা কালেক্টর অফিসের কেরানি থেকে শুরু করে সামনের মেসের ছেলে গুলো এমনকি পাঁচু পাগোলও জেনে যায় ট্রেনে করে ইন্দুবালা বাংলাদেশ যাবেন। সারা রাত ওপরের ঘরে ঘটর ঘটর করে কিসের যেন আওয়াজ হয়। ধনঞ্জয় যতক্ষণ জেগেছিল শুনেছে। অনেক ভোরে ইন্দুবালার ডাকাডাকিতে ঘুম ভেঙে যায় তার। “কি হয়েছে মা? এতো ভোরে?” চোখ কচলায় ধনঞ্জয়। দেখে ইন্দুবালার পরিপাটি করে চুল বাঁধা। নতুন কাপড় পড়া। কোথাও যাওয়ার প্রস্তুতি। “কী হলো কি মা তোমার? নাতি পাসপোর্টের ফটো তোলার জন্য তোমাকে নিয়ে যাবে বেলা নটায়। এখন থেকে কাপড় পড়ে বসে আছো কেন?” ইন্দুবালা হুকুমের সুরে বলে একটা ট্যাক্সি ডাক। আমি কলকাতা স্টেশন যাবো। ধনঞ্জয় বলে “এ্যাঁ? এতো সকালে কলকাতা স্টেশনে? তোমার মাথা কি সত্যিই খারাপ হলো?” ইন্দুবালা কোন কথা না বলে দরজার দিকে এগোলে কোনরকমে উঠে জামা পড়ে দৌড় লাগায় ধনঞ্জয়। এই মুড তার অনেক দিনের চেনা। বেশি কথা বললে জেদ আরও বাড়বে। নিজেও চলে যেতে পারে। তখন হিতে বিপরীত হবে। দাদাবাবুদের কাছে কৈফিয়ত দিতে দিতে জান কাবার হবার জোগাড়। তাই কথা না বাড়িয়ে একটা ট্যাক্সি ডেকে নিজেও চেপে বসে ধনঞ্জয়।

    দুটো প্ল্যাটফর্ম টিকিট কাটা হয়। ইন্দুবালা বলেন “জিজ্ঞেস কর মৈত্রী এক্সপ্রেস কোন প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়বে?” একজন টিটি দেখিয়ে দেয়। “ওই তো...দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু ওদিকে তো যেতে পারবেন না। সময় হয়নি এখনও। টিকিট আছে তো? পাসপোর্ট ভিসা চেক হবে।” দূর থেকে মৈত্রী এক্সপ্রেস দেখেন ইন্দুবালা। বড় বড় করে বোর্ডে লেখা কলকাতা-খুলনা। কিন্তু সেই আগের ট্রেনটার মতো সবজেটে নয়তো। কেমন যেন ধূসর নীল। “আচ্ছা আপনি ঠিক বলছেন তো ভাই? এই ট্রেনটাই যাবে খুলনা?” ইন্দুবালা এবার নিজে জানতে চান। বিরক্ত হয় টিটি। একে ইণ্টারন্যাশানাল ট্রেন। তার ওপরে ঝক্কি আছে অনেক। “দেখতেই তো পাচ্ছেন লেখা আছে সব কিছু।” কিন্তু এই ট্রেনের সামনে তো শেষবারের মতো মনিরুলের সঙ্গে দেখা হয়নি ইন্দুবালার। দুই দেশের মধ্যে যখন সব যোগাযোগ বন্ধ তখন সেই সবজেটে ট্রেনটাই কি একটা থেমে থাকা সময়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকতো না শিয়ালদার স্টেশনে? মাঝে মাঝে লছমীর সাথে শুধু সেই ট্রেনটাকে দেখবেন বলে চলে আসতেন ইন্দুবালা। সেই ট্রেনের গায়ে হাত দিলে তিনি তার দেশকে দেখতে পেতেন। গ্রামটাকে দেখতে পেতেন। গন্ধ পেতেন কপোতাক্ষের। না না না...এই ট্রেন তাঁর সেই সবুজ কাঁচা আমতেল রঙের ট্রেন নয়। এই ট্রেন কী করে যাবে খুলনা? বসে পড়েন ইন্দুবালা। চোখ দিয়ে টিপ টিপ করে বৃষ্টির মতো পড়তে থাকে জল। অনেক দিন আগে একাত্তরে তাঁদের কলাপোতার বাড়িটা পুড়িয়ে দিয়েছিল খানসেনারা। বাড়ির সাথে পুড়েছিল মা, ভাই আরও অনেকে। বাড়িটাকে পাওয়া যাবে না তিনি নিশ্চিত জানেন। এবার যদি গিয়ে গ্রামটাকেই না খুঁজে পান? যদি বোস পুকুরটাই আর না থাকে? কপোতাক্ষের ঘাট। মনিরুলের বাড়ির উঠোন? বড় খেলার মাঠের ফলসা গাছ? তাহলে কার কাছে ফিরে যাচ্ছেন ইন্দুবালা? কার কাছে? যারা ছিল আজ নেই...? নাকি যারা মরেও বেঁচে আছেন ইন্দুবালার মধ্যে? নীরবে কাঁদেন ইন্দুবালা। কিন্তু কান্নাটাও বা কার জন্যে? কোন সদুত্তর পান না নিজের থেকে। শুধু এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার মানুষদের ভিড় বাড়ে। তাঁরা দেখেন সত্তর পেরোনো এক মহিলা চুপ করে বসে আছেন দেশে ফিরবো বলে। যার সত্যি আজ দেশে ফেরার পথে অপেক্ষা করে থাকার কেউ নেই। (ক্রমশ)

    ঋণ- ঠাম্মা, মনি, দিদা, রাঙা, বড়মা আর মা। এছাড়াও বাংলার সেইসব অসংখ্য মানুষদের যাঁদের হাতে এখনও প্রতিপালিত হয় আমাদের খাওয়া দাওয়া। জিভে জল পড়ার ইতিহাস।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৪ মে ২০১৯ | ৪২৩০ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    কবিতা  - S Azad
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ***:*** | ২৬ মে ২০১৯ ০৬:১১48527
  • পাওয়ার, হারাবার, নতুন কিছু পাওয়ার, তাও হারাবার এইসব ব্বেদনা, মনকেমন আমরা কতজনেই তো বহন করে চলেছি।
  • Santanu | ***:*** | ২৬ মে ২০১৯ ১২:৫৪48528
  • অসাধারণ
  • ভাষা ভাষা | ১১ এপ্রিল ২০২১ ০৯:০৮104631
  • অসাধারণ । একটা ফেলে আসা সময়ে এমন প্রাণসঞ্চার -- অনেকদিন বাদে উপলব্ধি করছি। সুতোর এক একটা ফোঁড়ে বুনে উঠছে আশ্চর্য এক নক্সী কাঁথা ।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল প্রতিক্রিয়া দিন