এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • সমালোচনাঃ ইনহেরিট্যান্স সিরিজ; ক্রিস্টোফার পাওলিনি (২০০১ – ২০১১)

    রৌহিন লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৭ মে ২০১৮ | ১১৭১ বার পঠিত
  • রিভিউ এর আগে কখনো লিখিনি। সিনেমার রিভিউ লেখার যোগ্যতা আমার এমনিতেও নেই, কিন্তু বই এর রিভিউও লিখিনি কখনো। তাহলে হঠাৎ এই চেষ্টা কেন? কারণ মূলতঃ দ্বিমুখী। প্রথমতঃ এই বইটা আমার নিজের খুব ভাল লেগেছে, কিন্তু সেভাবে আলোচিত হতে দেখিনি – এর দুরকম কারণ হতে পারে বলে আমার মনে হয়েছে – হয় বইটা লোকে বিশেষ পড়েনি, অথবা পড়ে খুব একটা ভালো লাগেনি। এবং দ্বিতীয়তঃ, যদিও এটা কিছুটা রিলেটেড, আমি কয়েকটা রিভিউ পড়লাম, যেগুলো সবই নেগেটিভ রিভিউ – তো আমার মনে হল আমার যে ভাল লেগেছে, সেটা ডকুমেন্টেড করে রাখি। ও হ্যাঁ – বইটা। একটা নয় – চারটে বই – একটা সিরিজ, “ইনহেরিট্যান্স”। লেখক ক্রিস্টোফার পাওলিনি। প্রকাশক নফ (Knopf)। প্রথমে ছিল ইনহেরিট্যান্স ট্রিলজি, কিন্তু তৃতীয় বই চলাকালীন লেখক জানান যে বইএর প্লট এত জটিল যে তিনটে বইএ শেষ করা সম্ভব নয়, অগত্যা ইনহেরিট্যান্স সাইকেল (ট্রিলজি) এ বেরোল চতুর্থ বই। আলাদা করে চারটে বইএর নাম যথাক্রমে “এরাগন” (২০০১ / ২০০৩), “এল্ডেস্ট” (২০০৫), “ব্রিসিঙ্গর” (২০০৮) এবং “ইনহেরিট্যান্স” (২০১১)। এখানে একটা তথ্য মনে রাখা জরুরী যে প্রথম এরাগন লেখার সময় পাওলিনির বয়স ছিল মাত্র পনেরো এবং তখনো তিনি কলেজে পড়া শুরু করেননি – এবং ইনহেরিট্যান্স শেষ করার সময়ে ছাব্বিশ। এরাগনের সাথে আমার প্রথম পরিচয় ২০১০ এ – তারপর সিরিজের অন্য বইগুলোও পরপর।

    জঁরের দিক থেকে এই গল্প ফ্যান্টাসি – রূপকথার গল্প। একটা কাল্পনিক দেশ এবং অচিহ্নিত কাল – যদিও মোটামুটি আন্দাজ করা যায় মধ্যযুগীয় কোন সময়ের (যখন ইস্পাতের তলোয়ার অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে, বড় বড় ক্যাটাপল্ট থেকে আগুনের গোলা বা ব্যালিস্টেট থেকে ছ ফুট লম্বা তীর ছোঁড়ার প্রযুক্তি মানুষের আয়ত্তে) গল্প এটা। যারা লর্ড অফ দ্য রিংস পড়েছেন, তাদের শুধু এই স্থান এবং কাল নয়, এমনকি প্লটটাও অনেকটাই চেনা মনে হবে। বস্তুতঃ এই বইএর সমালোচকদের অন্যতম প্রধান অভিযোগই হল যে এটা লর্ড অফ দ্য রিংস আর স্টার ওয়ারস এর প্লটকেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করেছে, নতুনত্ব কিছু নেই, কাহিনীর মুন্সিয়ানা অতটা নয়। আমি একমত নই, কেন সেটা আলোচনায় উঠে আসবে আশা করি। প্রসঙ্গতঃ আমি লর্ড অফ দ্য রিংস এর একজন ভক্ত পাঠক – আমার পড়া সেরা বইগুলির তালিকায় রিংস সিরিজ (দ্য হবিট সহ) অবশ্যই থাকবে। এবং তা সত্ত্বেও আমি ওই সমালোচনার সাথে একমত নই।

    গল্পটা বলে দেওয়া অবশ্যই রিভিউএর স্কোপের মধ্যে পড়েনা – ওটা পাঠককেই পড়ে দেখতে হবে – অবশ্যই যদি উৎসাহ পান। সেই উৎসাহ জাগানোয় এই রিভিউএর কিছু মূল্য থাকলেও থাকতে পারে। তবে গল্পের সূত্র একটা দেওয়া যেতেই পারে। এই কাহিনী যে কাল্পনিক স্থানে সংঘটিত হচ্ছে তার নাম অ্যালাগেজিয়া। এর মধ্যে রয়েছে তিন-চারটি দেশ, যাযাবর ও উপজাতীদের চারণভূমি, জনবিহীন মরুভূমি, দ্বীপ, সমুদ্র, গভীর জঙ্গল। আর রয়েছে এখানে বসবাসকারী বিভিন্ন বুদ্ধিমান প্রজাতি – মানুষ (হিউম্যানস), এলফ, বামন (ডোয়ার্ভস), উর্গাল এবং কাল (আট ফুট লম্বা উর্গাল প্রজাতিবিশেষ), ওয়ারক্যাট, ওয়ারডগ / ওয়ারউলভস, রা’জ্যাক এবং ড্রাগন। এছাড়া আমাদের চেনাজানা পশুপাখীরা ছাড়াও কিছু অজানা স্পিসিস – যেমন ফেলডুনস্ট, এলভেন হর্স, দানব ভাল্লুক, নাগ্রা (দানব শুয়োর) ইত্যাদি। উত্তর-পূর্বের গভীর জঙ্গল ডু-ওয়েলডেনভার্ডেন এ এলফদের রাজত্ব, তাদের রাজধানী এলসমীরা এবং আরও চার পাঁচটি শহর এই অরণ্যের মধ্যেই। দক্ষিণ-পূর্বে অতিকায় বীয়র মাউন্টেন এর খাঁজে খাঁজে ডোয়ার্ফদের রাজধানী ত্রোয়নঝিম সহ বিভিন্ন ডোয়ার্ফ বসতি, দক্ষিণে সুর্দা নামক স্বাধীন দেশ, পশ্চিমাংশ জুড়ে “দ্য এম্পায়ার” এবং মাঝখানে সুবিশার হাডারাক মরুভূমি। এদের মধ্যে ডোয়ার্ফ এবং ড্রাগনরা হল এই ভূখন্ডের আদি বাসিন্দা – বাকি জাতিরা সবাই বাইরে থেকে বিভিন্ন সময়ে এসেছে। এলফরা বাইরে থেকে আসা জাতিগুলির মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন – তারা প্রায় জন্মগতভাবে জাদু-ক্ষমতার অধিকারী এবং শারিরীকভাবে (এবং বুদ্ধিমত্তায়) অত্যন্ত শক্তিশালী। ড্রাগনরাও বিপুল শক্তিশালী প্রজাতি এবং তাদের মধ্যেও প্রাকৃতিক জাদুর বিপুল ক্ষমতা রয়েছে যদিও সেটা তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। এলফরা অ্যালাগেজিয়ায় আসার পর দীর্ঘদিন এলফ এবং ড্রাগনদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলে, কিন্তু শেষ অবধি দুই প্রজাতিই অনুভব করে যে এভাবে চললে তারা কোনদিনই কেউ কাউকে হারাতে পারবে না, কিন্তু একটু একটু করে সবাই শেষ হয়ে যাবে। এরপরে তারা তাদের জাদুক্ষমতা কাজে লাগিয়ে নিজেদের মধ্যে এক চিরস্থায়ী বন্ধুত্বের চুক্তি করে, যা ভাঙা অসম্ভব। এবং এই চুক্তির অঙ্গ হিসাবে তৈরী হয় এক নতুন শৃঙ্খলা (অর্ডার) – ড্রাগন রাইডার।
    ড্রাগন রাইডাররাই এই কাহিনীর কেন্দ্রীয় চরিত্র। এই রাইডারদের ওপরেই দায়ীত্ব দেওয়া হয় এলফ এবং ড্রাগন সহ অ্যালাগেজিয়ার সমস্ত প্রজাতির মধ্যে শান্তিশৃঙ্খলা এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়ীত্ব। এবং রাইডারদের দেখভালে বেশ কয়েক হাজার বছর এখানে ছিল শান্তি ও সমৃদ্ধির রাজত্ব। কিন্তু তারপরে যেমন হয়, রাইডারদের অতিলৌকিক ক্ষমতা ক্রমশঃ তাদের মধ্যে দুর্নীতি এবং আলস্যের বীজ বুনতে শুরু করল। তাদের শৃঙ্খলায় ভাঙন দেখা দিতে শুরু করল। এবং এই রাইডারদের মধ্যে থেকেই উঠে এল এই কাহিনীর এন্টাগোনিস্ট – গ্যালবাটোরিক্স। গ্যালবাটোরিক্সের ড্রাগন জাম্যুনভোক্স কোন এক অভিযানের সময়ে উর্গালদের হাতে নিহত হয় এবং গ্যালবাটোরিক্স কোনমতে বেঁচে ফেরে। প্রাথমিক শোক কাটিয়ে উঠে গ্যালবাটোরিক্স একটি নতুন ড্রাগনের আর্জি জানায় কিন্তু রাইডারদের কাউন্সিল সেই আর্জি নাকচ করে দেয়। এরপর গ্যালবাটোরিক্স নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নেয় এবং পরবর্তীকালে মরজান নামে আরেকজন রাইডারের সহায়তায় শ্রুইকান নামের আরেকটি ড্রাগনকে চুরী করে এবং অসদুপায়ে তাকে বশ করে। এরপর মরজানের সহায়তায় গ্যালবাটোরিক্স আরো বারোজন রাইডারকে নিজের দলে আনে এবং তাদের সাহায্যে রাইডারদের এবং ড্রাগনদের পুরো প্রজাতিকে হত্যা করে নিজে এম্পায়ারের রাজা হয়ে বসে এবং তার অত্যাচারী শাসন শুরু করে। শুধু তিনটি ড্রাগনের ডিম গ্যালবাটোরিক্স নিজের কাছে রেখেছিল ভবিষ্যতে তার পেটোয়া নতুন রাইডার তৈরী করবে বলে।

    এই প্রেক্ষিতেই এই কাহিনীর বুনন এবং সেখানে বহু রকমের ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে কাহিনীর নায়ক এরাগন এবং তার ড্রাগন স্যাফিরা গ্যালবাটোরিক্সের বিরুদ্ধে লড়াই চালায়। এই লড়াইএর বর্ণনার মাঝে উঠে আসে সমস্ত অ্যালাগেজিয়া জুড়ে বিভিন্ন প্রজাতির জীবনযাত্রা, সংগ্রাম এবং সঙ্কটের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ, মানবিক ও মানসিক টানাপোড়েন, ভূ-প্রাকৃতিক বৈচিত্র এবং তার প্রভাব এবং রাজনৈতিক টানাপোড়েনের নানান উপকাহিনী। এই বহু প্রজাতির বৈশিষ্ট্য এবং পার্থক্য এই কাহিনীর অন্যতম আকর্ষণ আমার কাছে। এবং পুরো কাহিনীতে একটি চরিত্রও এমন নেই, যা সম্পূর্ণ সাদা অথবা কালো। ছোট থেকে বড় প্রতিটি চরিত্রই তাদের দোষ-গুণ সহ খুব মানবিকভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। লেখকের বয়স মনে রাখলে এই চরিত্রায়ণ অবশ্যই বাড়তি মুগ্ধতার দাবী করে, কারণ ওই বয়সে আমরা সাধারণতঃ কাহিনীর চরিত্রকে, এমনকি বাস্তব চরিত্রদেরও সাদা-কালোয় দেখতে এবং বুঝে নিতেই অভ্যস্ত থাকি সাধারণতঃ। মানুষ যে মূলতঃ ধুসরের বহু শেড, এই উপলব্ধি আসতে অনেকের গোটা জীবন চলে যায়। পাওলিনি মাত্র পনেরোতেই সেই উপলব্ধিতে পৌঁছাতে পেরেছেন, এটা অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। এবং এটা আরো গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে এই কারণে যে যে বইএর সাথে তুলনা করে এটির সমালোচনা করা হয়েছে বারবার, সেই লর্ড অফ দ্য রিংস এ কিন্তু সওরন এর মত খলনায়ক বা গবলিন বা অর্ক দের পুরো প্রজাতিকেই সম্পূর্ণ শয়তান হিসাবেই দেখানো হয়েছে, তাদের কোন অ্যাকাউন্ট কোথাও নেই, কোন গ্রে শেড নেই। যুদ্ধে অথবা যুদ্ধ ছাড়াও কোন অর্ক বা গবলিনকে হত্যা করা নিয়ে কারো কোন খারাপ লাগা নেই। অন্যদিকে আমাদের আলোচ্য কাহিনীর প্রায় পুরোটা জুড়ে যুদ্ধ-বিগ্রহ, লড়াই, হত্যা এসব থাকা সত্ত্বেও কোথাও, কোন ছুঁতোতেই ভায়োলেন্সকে জাস্টিফাই করার কোন চেষ্টা চোখে পড়েনি। প্রতিটা হত্যা, সে যে দলেরই হোক, যে প্রজাতিরই হোক, এবং হত্যাকারী যে-ই হোক, তাদের মনের মধ্যে যন্ত্রণার সৃষ্টি করেছে, এবং লেখক সেই যন্ত্রণা, টানাপোড়েনের বিবরণ একনিষ্ঠভাবে দিয়ে গেছেন। এমনকি যেখানে এত রক্তপাত, নিরীহ মানুষদের মৃত্যু ছাড়াও যুদ্ধের কারণে অন্যান্য নানান সমস্যার মুখে ফেলে দেওয়া এসব অবশ্যম্ভাবী জেনেও আদৌ এই যুদ্ধটা কেন নায়ককে লড়তেই হবে, আদৌ এর প্রয়োজনটা কোন বৃহত্তর স্বার্থ কি না, এই প্রশ্নকেও এড়িয়ে যাওয়া হয়নি, বরং দীর্ঘ বিতর্কের অবতারণা করা হয়েছে। এই পরিণত মানসিকতা এই কাহিনীর অন্যতম সম্পদ।

    এই বইএর আরো একটা উল্লেখ্য বিষয় রাজনীতি। রাজনীতি এখানে প্রবল মাত্রায় উপস্থিত এবং অন্য অনেক ফ্যান্টাসির মত এখানে রাজনীতিকে হীনত্ব আরোপ করে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়নি। কাহিনীর বিভিন্ন চরিত্ররা রাজনীতিতে জড়িয়েছেন সচেতনভাবে, এবং বিভিন্ন স্বার্থবিন্দুর ভিন্ন ভিন্ন রাজনীতিগুলি তাদের দৃষ্টিভঙ্গীতেই ব্যখ্যায়িত হয়েছে। এর ফলে দুটি জিনিষ হয়েছে – বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণগুলি যেমন স্পষ্ট বোঝা গেছে, তেমনই সেই দ্বন্দ্ব কেন এবং কিভাবে অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে, কেন মিত্রপক্ষেও এক শিবির আরেক শিবিরের মধ্যে অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরী হয়ে ওঠে, এইসব আপাত অস্বস্তিকর প্রশ্নগুলির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে উত্তর খোঁজার চেষ্টা চোখে পড়ার মত। সবসময়েই সব উত্তর খুব বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পেরেছে এমন নয়, কিন্তু এড়িয়ে না গিয়ে উত্তর খোঁজার দায়বদ্ধতাটা অবশ্যই চোখে পড়ার মত। একই সঙ্গে রাজনীতির মূল সূত্র এবং উদ্দেশ্যগুলিও খুব বেশী তাত্ত্বিক না হয়েই লেখক ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন।

    তাহলে এই বইএর কি সবটাই প্রশংসনীয়? সেরকম দাবী করাটা বাতুলতা হবে। বেশ কিছু দুর্বলতা অবশ্যই আছে। প্লট বাছাই এবং স্থান-কাল এর অবতারণায় মৌলিকতার অভাবকে আমি অন্ততঃ গৌণ দুর্বলতা হিসাবেই দেখছি – কিন্তু এই গল্পের প্রধান দুর্বলতা এর দৈর্ঘ্য। লেখক নিজে এর কৈফিয়ৎ দিতে গিয়ে বৃহৎ ও জটিল প্লটের দোহাই দিয়েছেন – কিন্তু প্লটটা সত্যিই চারটে বই এর মত জটিল নয়, ট্রিলজিতেই শেষ করা যেত। বহু সময়ে কোন কোন বর্ণনা দিতে গিয়ে তা প্রায় একঘেয়ে হয়ে উঠেছে – কিছু কিছু বর্ণনা এতটাই ডিটেলে যে তা মাঝে মাঝে বিরক্তি উৎপাদন করে। চরিত্র এবং ঘটনাগুলিও অধিকাংশ সময়েই বেশ প্রেডিক্টেবল – ফলে অনেক ক্ষেত্রে প্রচুর সাসপেন্স তৈরী করেও শেষ পর্যন্ত সাদামাটা ক্লাইম্যাক্সে এসে উপকাহিনীগুলি শেষ হয়েছে। বিশেষতঃ তৃতীয় পর্ব (ব্রিসিঙ্গর) এ কাহিনীটি প্রায় ভ্রমণকাহিনীর পর্যায়ে চলে গেছে যেখানে মূল কাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু কিছু ঘটনা ঘটছে মাত্র, ভ্রমণের ফাঁকে ফাঁকে। এই দীর্ঘায়তঃ বর্ণনা কোন কোন ক্ষেত্রে সময়ের ধারাকেও গুলিয়ে ফেলেছে – অর্থাৎ ঘটনাটা হয়তো ঘটছে মাত্র কয়েকদিনের বা মাসের ব্যবধানে, অথচ লেখক এর মধ্যে এত কিছু লিখে ফেলেছেন যে তার নিজেরই মনে হচ্ছে মাঝে অনেকদিন কেটে গেছে – সেই মনে হওয়াতে কাহিনীর চরিত্ররাও প্রভাবিত হচ্ছে।

    কিন্তু এসব দুর্বলতা সত্ত্বেও ইনহেরিট্যান্স সিরিজ বেশ উৎসাহ নিয়েই পড়ে ফেলা যায়। এরাগন এবং রোরানের সারল্য এবং বীরত্ব, ব্রমের ঔদার্য, ওরোমিসের গভীরতা, স্যাফিরা এবং গ্লিয়াডরের ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য, আরিয়া, ইসলানজাদির রাজকীয় উপস্থিতি, নাসুয়াদার বুদ্ধিমত্তা এবং সাহস, মার্তাঘের লড়াই, গ্যালবাটোরিক্সের ঠান্ডা মাথার শয়তানি, ওরিকের বন্ধুত্ব, এলভার অপার্থিব ক্ষমতা এবং সর্বোপরি অ্যাঞ্জেলার অসম্ভব বুদ্ধিদীপ্ত অথচ পাগলাটে কার্যকলাপ – এসবই এই কাহিনীর সম্পদ। এছাড়া আরো বহু চরিত্র, যারা কেউই নিজের পারিপার্শ্বিকের দাবী থেকে বিচ্যুত না হয়েও প্রবলভাবে মৌলিক, প্রায় প্রতিটা চরিত্রকেই পাঠক আলাদাভাবে মনে রাখতে পারবেন সহজেই। আর সেই সঙ্গে অ্যালাগেজিয়ার ভূগোলের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ, ম্যাজিকের ব্যখ্যা, তার সীমাবদ্ধতা এবং সম্ভাবনা, এসবই কাহিনীর বাড়তি আকর্ষণ, কাহিনী পড়তে পড়তে যাদের একটুও বাড়তি বলে মনে হয়না কখনোই। প্রতিটা ছোটখাটো চরিত্র, ঘটনা, স্থান সম্বন্ধে লেখকের মমতা তাঁর একাত্মতার প্রমাণ বহন করে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৭ মে ২০১৮ | ১১৭১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • রৌহিন | ***:*** | ২৮ মে ২০১৮ ০৩:৪৪62782
  • এট্টু নিজে নিজেই তুললাম - যদি কারো ইন্টারেস্টিং লাগে
  • প্যালারাম | ১৩ আগস্ট ২০২১ ১৬:১২496722
  • বেশি কথা বলব না, শুধু এই লেখাটার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে চলে যাব। বাকি ওই লেখাতেই বলা আছে।
    যেটুকু বলা নেই, তা হ'ল, আমি প্রথম দু'টি গল্প পড়ি, পড়ে খুব ভালও লাগে, কিন্তু ৩ নম্বরটা পড়তে শুরু করে আর টানতে পারিনি।
    আশা ছাড়িনি (বই বহুদিন কেনা আছে), তাই গল্পের শেষও জানা নেই।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে প্রতিক্রিয়া দিন