অথৈ : কেকে
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ১৫ এপ্রিল ২০১৮ | ১৫৯৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
“তোমাকে আমি ঠকাবো না।এটা জেনে রেখো” ।নাচো বলেছিলো।কথাটা বিশ্বাস করার অবশ্য কোন কারণ নেই।নাচো যেসব জিনিষ বিক্রি করে তার মধ্যে মিথ্যে কথাও একটা।না করলে ওর সংসার চলবেনা।শুধু একরকম জিনিষ বিক্রি করলে কারুরই সংসার চলেনা আজকালকার দিনে।নাচো মিথ্যে কথা বিক্রি করে, বেনামী বারুদ(অনেক আগে থেকে বলে কয়ে,অনেক দাম দিলে তবে পাবেন)বিক্রি করে,পুরোনো হাতফেরতা মণি-মানিক বিক্রি করে(পাতা ছেঁড়া হলুদ বই,রং ফিকে হয়ে যাওয়া ছবি,আর কি কি চান?)।নাচো পাতা বিক্রি করে।সরল ভালোমানুষ ন্যাকাচন্ডী পাতা নয়... যা পুড়িয়ে ধোঁয়া দিলে ভুত পালায় সেই পাতা।ভুতের উপদ্রব খুব আজকাল সর্বত্র।খারাপ স্বপ্নের ভুত, অস্বপ্নের ভুত, ভুতেরই বাড়বাড়ন্ত! নাচো'র কাছ থেকে আমি পাতা কিনি।শুকনো রঙের, উনোবুনো গন্ধের পাতা।খারাপ স্বপ্নদের দূরে রাখতে লাগে।অস্বপ্নদেরও।
আমি : কেকে
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২৪ অক্টোবর ২০১৫ | ২৩৫৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
ওর আঙুলগুলোর দিকে তাকাই। লম্বা,সরু,ফিকে প্রবাল রঙের। ওই আঙুল আমার হাতের মুঠোর মধ্যে গুঁজে দিচ্ছে… কোথাও একটা প্রজাপতি আস্তে আস্তে ডানা ঝাপ্টাতে থাকে। কিম্বা দুটো? পাঁচটা? ফিরতে অনেক রাত হয়েছিলো। ভয়েডকে দেখতে পাইনা এসে। আজকাল মাঝেমাঝেই পাইনা। কোথায় যায় কে জানে?কখোনো জিজ্ঞেস করিনি। কোনো কোনোদিন অনেক রাত্রে আধোঘুমের মধ্যে গালের ওপর ওর নিঃশ্বাস টের পাই। ফিসফিস করে বলে “আই নো, ইউ হ্যাভ সামওয়ান এলস অন ইওর মাইন্ড”। আমি ওর কথার খেই ধরতে চাই – “আই নো…”, বাক্য শেষ হবার আগেই আধোচেতনা আমার জিভকে আচ্ছন্ন করে। আবল্লী আমাকে আস্তে আস্তে টেনে নিতে থাকে। যেন কেউ খুব নরম একটা কম্বল দিয়ে আমায় মুড়ে দিচ্ছে। বহুদিন হারিয়ে থাকা একটা কম্বল। আমি আবল্লীর মধ্যে তলিয়ে যাই। তলিয়ে যাওয়া বেশ ভালোই জিনিস। গভীরে।
ওদের কথা : কেকে
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ১৪ নভেম্বর ২০১১ | ১৬০৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
রূপকথার পুরো জগতটা জুড়েই রাজপুত্তুর কোটালপুত্তুরদের সাথে সমান জাঁকিয়ে আছে এই সব না-মানুষরা। সে আমাদের দেশের গল্পেই বলুন আর অন্য দেশের কাহিনীতেই বলুন। রূপকথার জাদু দুনিয়ায় জন্তু জানোয়ার, পাখিপক্ষীরা যে মানুষের মতই কথা বলতে পারবে তাতে আশ্চর্য্য হবার কিছু নেই। ভালুক এসে চাষীর সাথে ফসলের ভাগ নিয়ে ঝগড়া করবে, শেয়াল আর সারস এ ওর বাড়ি নেমন্তন্ন যাবে, খরগোশ আর কচ্ছপ দৌড়ের বাজি ধরবে এসব ওখানে হামেশাই হয়ে থাকে। কিন্তু আজ আমি সেই সব না-মানুষদের কথা বলব নানান দেশের রূপকথায় যারা এক্কেবারে মানুষের মত হয়েই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রথমে আসুন দেখি আমাদের নিজেদের দেশের আঙিনায়। বাংলার রূপকথায় সেই যে ছিলো এক হীরেমন পাখি। এই হীরেমন দুনিয়ার সব প্রশ্নের উত্তর জানতো, তে¢ত্রশকোটি দেবদেবীর নাম বলতে পারতো।
জিহ্ব : কেকে
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ২১ জানুয়ারি ২০০৮ | ১৫৬৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
আমার দাঁতে অনেকটা জীবন জড়িয়ে গেছে। জার্মান শেফার্ড জিভ ইচ্ছে মত ক্লান্ত হয়। ঐ সব ফাঁকফোকর ঘুরে 'তাড়ানো তাড়ানো' পরিচ্ছেদ গুলোতে চরম ক্লান্তি ওর। অন্য সময়ে ওকে ভার্মিয়ের বলে ডাকতেও ইচ্ছে করে কোনো কোনো দিন।
ভালোই। গুঁড়ো গুঁড়ো না তাড়ানো জীবন অনেক ক্ষণ ধরে জিভের আঁচে দমপুখ্ত,'চাওয়াদের' ঝিকমিকে সব চে ভালো বাসাটা থেকে আখরোট-বাসরে সেঁধিয়ে যায়। রোজ রোজ। অহনের সব বেলাগুলো, বার্ষিকগতির রাস্তায় পড়ে পাওয়া ঋতুরা,আমার শৈশব,কৈশোর,আমার প্রৌঢ়ত্ব,ইন্তেকাল,একমাত্র ওই টের পায়। জিভটা। আমার ভার্মিয়ের।
ক্যালাইডোস্কোপ : কেকে
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ০১ নভেম্বর ২০২০ | ৩১৬৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
সে এক ঝলমলে দিন ছিলো গ্রীষ্মকালে। বাকেট্লিস্টের একটা বাক্সে টিকচিহ্ন দেবার জন্য আমি সাঁতার কাটতে গেছিলাম । গ্রেট লেকগুলোর মধ্যে একটায়। মিশিগান।
গভীর অন্ধ্কার জল, তার মধ্যে আস্তে আস্তে নিজের বল্গা খুলে দিতে হয়। আমি টের পেয়েছিলাম জল আমার সাথে কথা বলছে। না, ওর কথা 'শোনা' যায়না। তোমায় বুঝতে হবে, সারা শরীর দিয়ে। ও স্রোতের ভাষা বলে। ঢেউ এর ভাষা। অতলের ভাষা। তরলের। আর আরো কতকিছুর, পৃথিবীর শব্দ দিয়ে যার নাম বলা যায়না।
বিশাল গভীর মিশিগান, আমার সাথে কথা বলেছিলো। আপনজনের মত।
সেই থেকে আমি জলের সঙ্গে কথা বলতে পারি। মিসিসিপি নদী ভয়ানক রেগে থাকে। মানুষরা ওকে এমন বিষিয়ে দিচ্ছে। রাগবে না তো কি করবে? হুরন লেক আবার খুব লক্ষ্মী মতো। মিশুকে, হাসিখুশি। মস্ত লেক সুপিরিয়র কি গম্ভীর! আমার সেই কঠিন নিষ্ঠুর শিকারী কাকুর মত। যিনি এককথায় আমার জন্য নিজের প্রাণটা দিয়ে দিতে পারতেন! ডেড সী ও চুপচাপ খুব। ইন্ট্রোভার্ট। সমাহিত। অথচ ভূমধ্য সাগর? ভূমধ্য সাগর আমাকে বলেছিলো ওকে 'খাতুনা' বলে ডাকতে। এক নম্বরের ফ্লার্ট একটা!
না, এসব আমি বলতে যাইনা কারুর কাছে। বলে কী হবে? আমি যে জলের সঙ্গে কথা বলতে পারি কেউ তো আর বিশ্বাস করবে না?
নুড়িতলার বাঁকে - পর্ব ১ : কেকে
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ১০ এপ্রিল ২০২১ | ৩৩৫৩ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৪
মহা বুদ্ধিমান সেই মানুষটি সমুদ্রের তীরে নুড়ি কুড়োনোর কথা বলেছিলেন। নুড়ি, ঝিনুক, এইসব। আমার বুদ্ধিসুদ্ধি তত নেই। কিন্তু আমিও একটা বিশাল সমুদ্রের ধারে নুড়ি খুঁজে বেড়াই। কখনো সমুদ্রের ধারে, কখনো নদীর। সব নদীই তো একদিন সমুদ্র হয়ে যায়। কাজেই ব্যপারটা একই হলো। নানা রকম রং ওদের। নানা আকার। আকৃতি। প্রত্যেকটা নুড়ি আমাকে গল্প বলে। একেক জনের একেক রকম গল্প। আমি ঢেউয়ের মাঝখানে একটা উঁচু পাথরে বসে সব গল্প হাওয়ায় উড়িয়ে দিই। কোনকিছুই নিজের জন্য জমিয়ে রাখার নেই এই পৃথিবীতে। শব্দগুলো ভাসতে ভাসতে কত দূর দূর চলে যায়। কেউ শোনে, কেউ শোনেনা। তুমি শুনলে গল্পটাকে পাখির পালকের মত আবার ভাসিয়ে দিও । কিম্বা নাই শুনলে। মশার ভিনভিনানির মত হাত নেড়ে তাড়িয়ে দিও। নুড়িতলার গল্পগুলোকে।
নুড়িতলার বাঁকে - পর্ব ৪ : কেকে
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ২৯ মে ২০২১ | ৩২৩৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১২
দিন যায়, কাল যায়। ঢেউ ওঠে, ঢেউ পড়ে। চোখের ভুল সবটাই। কেউই যায়না কোত্থাও। দিন, মাস, বছর, জীবন, জোয়ার, ভাঁটা। সবকিছু চোখের ভুল। মনের ভুল। অন্ধ মানুষ কী দেখে কী ভাবে। হয় এক, মানুষগুলো বোঝে আরেক। বোকা মানুষ সব। বোকা নাহলে কেউ সুখ খোঁজে? সুখ জিনিষটা কিনতে প্রচুর দাম দিতে হয়। এমনি এমনিইই পাওয়া যাবেনা কিছুতেই। অ-নে-ক দাম। অথচ মজা এমন, যা দিয়ে তুমি দাম দেবে সেই জিনিষটা মিনিমাগনায় সারাক্ষণ এসে পড়ছে তোমার কাছে। সুখ কিনতে হয় দুঃখ দিয়ে। যন্ত্রনা দিয়েও পাওয়া যায়। কান্না দিয়ে। সেগুলো বিনি পয়সায় ঢের করে পাবে তুমি। নিয়ে যেও সুখ কিনতে। যদি সে বাজারের ঠিকানা জানা থাকে। দুঃখ এসে ওর সব কিছু উজাড় করে দেয় আমার কাছে। নিঃশেষে। আমার শরীর, মন, সত্বা, তারও আড়ালে আরো যা কিছু অদেখা হয়ে রয়েছে, সব কানায় কানায় ভরিয়ে দেয় দুঃখ। অকূল দুঃখ। আকূল।
চার : কেকে
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : পুজো ২০০৬ | ০১ অক্টোবর ২০০৬ | ৮৭৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১
এখন আকাশ। কুচকুচে। ধ্যাৎ এটা শুক্লপক্ষ, ক্যালেন্ডার বলেছে। তো? আমি কুচকুচেই দেখতে পাই; তারা ছিটানো। আজি যত তারা ........ফুটকি ফুটকি ফুটকি। জ্বলজ্বলে। সবুজ। অগুন্তি, না অগুন্তি নয়, গোনা যায়। সফটওয়্যার আছে, আই পি ল্যাব। আই পি ল্যাব ভাইরাস গুনে চলে। টেন টু দি পাওয়ার এইট। সেভেন। এইট। সাইবারগোল্ড দিয়ে রং করা সবুজ ওরা সব, অ্যানোডিস্ক ফিল্টারকে কুচকুচে কালো দেখায়। আই পি ল্যাবের কখনো ভুল হয় না। মেথানলের গন্ধকে ও অকারণ আজে অগুরু ব'লে ভাবেনি। একটা প্যাঁচা ডাকছে কোথাও, চী-ঋ-ঋ-ঋ , আমারে কুড়ায়ে নেবে । আমার তোবড়ানো অলফ্যাক্ট্রি আবার ভুল বলতে থাকে ..... রূপশালী রূপশালী রুপশালী, ধুস। জানলায় আকাশ টোকা দেয়। শুক্লপক্ষই। নিরাচন্দের পর ছ দিন চলে গেছে।
দ্য আদার সাইড : কেকে
বুলবুলভাজা | গপ্পো | ০১ অক্টোবর ২০১০ | ১১১৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩
হলটায় রোজ রোজ একটাই সিনেমা চলে। মিনিটরা আরো মিনিটদের ডাকে, ঘন্টারা আরো ঘন্টাদের, দিন,সপ্তা,মাস,বরষ ডাকে। আরো সব দিন, সপ্তা,মাস, বরষকে। সবার চোখের মণি জুড়ে এই একটা সিনেমাই চলে। মানুষ গুলো তাতে হাঁটে, বসে, ঘোরে, ফেরে। মানুষগুলোর চারপাশে হাওয়ায় ধুলোর কণার মত কথা ওড়ে। ছোটছোট গোলগোল কথা, বড়মত কোণাচে কথা, ভাঙাভাঙা গুঁড়োগুঁড়ো কথা।ওড়ে। সিনেমাটায় ঠিক এত ঘন্টা এত মিনিট পরে একটা মেরুন রঙের ট্রাম চলে যায়, সেই সময়েই রাস্তা পেরোয় একটা হলুদ ছাতা, আকাশ জুড়ে বিষ্টি থরথর ক'রে কাঁপতে থাকে।
নুড়িতলার বাঁকে - পর্ব ৬ : কেকে
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক | ২৬ জুন ২০২১ | ২৫৪০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
আমাদের চারদিকে সারাক্ষণ খড়মড়ে মত বাস্তব ছড়িয়ে আছে। কাগজে, রুপোলী বা সোনালী পর্দাতেও। আমি তাদের সাথে কথা বলি। অন্য সবার মত। কথা বলি, হাঁটি একসাথে কিছুটা, কখনো কখনো তাদের বাড়ি লৌকিকতা করতে যাই। কিন্তু ওদের আমি ভালোবাসিনা। কঠোর বাস্তব, তাকে আমি ভালোবাসিনা। সমাজের খাতায় আমার অনেক রকম নাম লেখা আছে। বোকা, ভিতু, ক্যাবলা, অসুস্থ মস্তিষ্ক, এইসব। তবু আমি ঐ তাদের ভালোবাসি। কোমল অবাস্তব গল্পদের। রূপকথা, উপকথা, লোককথা, পুরাণ। তাতেও খড়মড়ে আছে, ধারালো, ছুঁচলো, টগবগে গরম, এসব আছে। তবু কেমন যেন মনে হয় জলের ভেতর দিয়ে শোনা শব্দের মত হয়ে যায় ওরা। নরম, ফিসফিসে। আমার মনে হয়। আমি অবাস্তব গল্পদের ভালোবাসি। রূপকথাদের ।
ভাতুড়ে দুপুর : কেকে
বুলবুলভাজা | খ্যাঁটন : খানা জানা-অজানা | ১২ আগস্ট ২০২১ | ২৬৭৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৯
গলাভাত জিনিসটা শুনলেই কেমন রুগীর পথ্য মনে হয় না? অবশ্য রুগীর পথ্য হলেই খেতে বিস্বাদ হবে তা নয়! তেমন করে রাঁধতে পারলে দূর্বাঘাসই ভালো খেতে হয়, তা গলাভাত তো অনেক ওপরের জিনিস! গলাভাত নিয়ে আমার এক সময়ে বেশ আগ্রহ জেগেছিল। বাণী বসুর ‘মৈত্রেয় জাতকে’ বারবার পড়েছি ‘কাঁজি’ খাবার কথা। যদিও জিনিসটাকে খুব রোমাঞ্চকর কিছু বলে লেখা হয়নি, তবু আমার মনে টিকটিক করলো, যে ব্যাপারটা কী একবার দেখতে হবে। ইচ্ছেটা সে সময়ে নানা কারণে শিকেয় তুলে রাখতে হয়েছিল। পরে, যখন ‘ফুডি’ ও ‘শেফি’ পরিমণ্ডলে বেশ সড়গড় হয়েছি, তখন চীনে-খাবারের মধ্যেও শুনলাম ‘কনজি’। অমনি আমার তুলে রাখা শখ ডানা-ঝটপটিয়ে শিকে থেকে নেমে এল।
নুড়িতলার বাঁকে - পর্ব ১০ : কেকে
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : বিবিধ | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২৭৪৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
অর্চনার একজনের ওপর বিরাট ক্রাশ ছিলো। জনৈক 'লেদা রাজা'। যে যেখানে কারুর কোনো গুণের কথা বলুক না কেন, অর্চনা হাসিতে মুখ ভরিয়ে বলতো "লেদা রাজার মত"। আমি তো কিছুতেই ভেবে পেতামনা যে কোনো রাজা 'ল্যাদা' হলে তাঁর এত ভক্ত হবার কী আছে! এদিকে যতই জিজ্ঞেস করা হোক না কেন এই 'লেদা রাজা'টি কে, অর্চনা খালি ফিক করে হেসে বলতো "আমি কী জানি?" শেষে একদিন কৃষ্ণর গল্প শুনে সে সটান বলে বসলো "এটা তো লেদা রাজার গল্প। আন্টি মোটেই জানেনা, লেদা রাজার গল্পে শুধুশুধু ভুলভাল কান্ড ঢুকিয়ে দিয়েছে!" সবাই মিলে তখন নানা প্রশ্ন, নানা মন্তব্য। কারুর রাগ হয়েছে, কেউ আন্টিকে বলে দিতে চাইছে। কিন্তু এই বিস্ফোরক মন্তব্য করে দিয়েই অর্চনা আবার সেই – ফিক, "আমি কী জানি?" মোডে চলে গেছে।
নুড়িতলার বাঁকে - পর্ব ১২ : কেকে
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : গপ্পো | ১১ ডিসেম্বর ২০২১ | ২৫৪৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৭
বিক্রমাদিত্য আর বেতালের গল্প কত পুরোনো ভাবো। ভারতীয় গল্প-সংস্কৃতি পুরোই হবেনা এই সিরিজটা বাদ দিলে। আমি খুঁজতে খুঁজতে, ধুলো, মাকড়্সার জাল হাতড়ে অনে-এ-এক দূরের এক দেশের উপকথার মধ্যে একটা গল্প খুঁজে পেলাম যার সাথে এই বিক্রম-বেতালের (পুরনো গান মনে আছে? বিক্রম বিক্রম বিক্রম, বেতাল তাল তাল?) বেবাক মিল! দেশটার নাম জর্জিয়া। হ্যাঁ, পূর্ব ইউরোপের সেই ককেশাস পাহাড় আর কালো সমুদ্দুরের দেশ। গল্পটা হলো 'রাজা আর আপেলের গল্প'।
নুড়িতলার বাঁকে - পর্ব ১৪ : কেকে
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : গপ্পো | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ২২৪৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
আমাদের সব অনুভূতিই একেকটা মেসেঞ্জারের মত। একেক জন একেক খবর নিয়ে আসে। খবরটা দেবার জন্য ওরা আমাদের ডাকে। বলে "ওগো,তাকিয়ে দেখো। এমন ঘটনা ঘটলে তুমি নিরাপদে থাকবে। এমন ঘটলে তোমার সমূহ বিপদ। এই কাজ ভুলেও করতে যেওনা। এই কাজটা বারবার কোরো।" এইসব। এইবার আমাদের ওরা ডাকবে কী করে? ওরা মানুষের ভাষায় কথা বলতে পারেনা, গলার স্বর নেই ওদের। আঙুলও নেই যে ইমেল করবে, হোয়াট্স-অ্যাপ করবে।
নুড়িতলার বাঁকে - পর্ব ১৫ : কেকে
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : গপ্পো | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ২৬৪৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
‘রাইডিং দ্য ওয়াইল্ড হর্স মেডিটেশন’ আমি আর কখনো করিনি। ঐ পাঁচদিন আমার শরীরের, মনের ওপর যে ছাপ ফেলেছিল – তার জের সামলে উঠতে পারছিলাম না। আমি বুঝতে পেরে গেছিলাম, যে জীবনকে আমি এতদিন যা বলে জেনে এসেছি, তা ঐ পাঁচদিনে একেবারে শেষ হয়ে গেছে। সেই ‘আমি’ শেষ হয়ে গেছে তার সঙ্গেই। আমি বুনো ঘোড়ার পিঠে উঠতে গেছিলাম। বুনো ঘোড়ারা আমাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। ঐ ধুলোর মধ্যে এখন রয়েছি পড়ে ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের ক্রিচারের মত এই ‘আমি’। নিজের অচেনা। নতুন। হ্যাঁ, ঐ বুনো ঘোড়া আমার জন্মদাতা।
বাহির হয়ে এস : কেকে
বুলবুলভাজা | অন্য যৌনতা | ০৪ জুলাই ২০২২ | ৩১৪৭ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৩
আমার নিজের জন্য কষ্ট হয় না। কষ্ট হয় সেইসব লোকদের জন্য, যারা নিজেদের জানা দুনিয়াটুকুর বাইরের কোনো কিছুকে বুঝতেই পারে না। অমুক অমুক লক্ষণ থাকলে ইনি পুরুষ, অমুক অমুক থাকলে ইনি নারী। খুব বেশি হলে উভলিঙ্গ অবধি বোঝা যায় (মেনে নেওয়া অবশ্য চলে না, তবু বোঝা যায়), ব্যস! আমার আয়নার মধ্যে একটা পুরো দুনিয়া আছে যেখানে জেন্ডার, বৃষ্টির পরের নরম আলোর মত অনেকগুলো রং ছুঁয়ে ছুঁয়ে যেতে পারে। আমার এই দুনিয়ায় ভালোবাসার জন্য আমাকে শুধু পুরুষে আবদ্ধ থাকতে হয় না, শুধু নারীতেও না। ভালোবাসা কোমল জলের মত আকার বদলাতে পারে অবিরত। আকৃতি, রূপ, সৌন্দর্য্য। রোদ্দুরের গুঁড়ো আর জলের কণা পলকে এক রং থেকে অন্য রঙে গড়িয়ে যেতে পারে। এই বেগুনি, এই নীল, এই সবুজ, কমলা, লাল। যারা চোখ বন্ধ করে রাখে, অসুবিধা তাদের। তাদের সাদাকালো, সীমাবদ্ধ দুনিয়ার কথা ভাবলে আমার কষ্ট হয়।
ব্ল্যাকআউট ডাইনিং - পর্ব ১ : কেকে
বুলবুলভাজা | বাকিসব | ০২ নভেম্বর ২০২৩ | ১৭৮১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৬
নিজের নাম লেখা কার্ড দিয়েছিলো পরিস্থিতি। আইভরি ফিনিশের ওপর কালো টানা অক্ষরে লেখা। 'ব্ল্যাকআউট ডাইনিং'। নামটা মনের মধ্যে বেশ বড় মাপের একটা কৌতুহলের ঢেউ তোলে। শুধু নামে আজকালকার দিনে আর কী-ই হয়? পরিচয় চাই না একটু? তা পরিচয়ও দিয়েছিলো বই কি। নাহলে লোকে আসবে কেন ওর কাছে? নামেই অনেকখানি বলা আছে, তবু কনসেপ্টটা বোঝা দরকার। এটা একটা রেস্টুরেন্ট যেখানে তোমাকে খেতে দেওয়া হবে সম্পূর্ণ অন্ধকারের মধ্যে। ইন্দ্রিয়দের মধ্যে আমরা সচরাচর সবথেকে বেশি যাকে কাজে লাগাই সেই চোখকে এখানে ইচ্ছে করেই অকেজো করে দেওয়া, যাতে খাবারকে পুরোপুরি বুঝতে তোমায় বাকি ইন্দ্রিয়দের সাহায্য নিতে হয়। "দেখবেন আজকাল", পরিস্থিতি বলে চলে, "আজকাল বেশির ভাগ রেস্টুরেন্টে মানুষ খাবারের থেকেও খাবারের ছবি তোলার ওপরে বেশি মন দেয়। ইনস্টা-ওয়র্দি হলো কিনা। আমি যে খাচ্ছি তা সবাই জানলো কিনা। কিম্বা টেবিলে বসে সবাই যে যার ফোনের পর্দাতে বন্দি হয়ে থাকে। খাবার আসে, খাবার যায়। কেউ তাকে তার প্রাপ্য সম্মান দেয়না। এই অন্ধকারে কি আপনি খাবারকে 'খাবার' হিসেবে চিনতে শিখবেন? সেটাই দেখার। হা হা, স্যরি, সেটাই 'না দেখার'।"
ব্ল্যাকআউট ডাইনিং -- পর্ব ৩ : কেকে
বুলবুলভাজা | লঘুগুরু | ০৮ নভেম্বর ২০২৩ | ২৩৩১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
আমি খুব ধীরে মনের মধ্যে তাকাই। কেউ একটা ছবি আঁকছে সেখানে। জলরঙের মত ব্লেন্ডেড, কিনারা-বিহীণ ছবি। প্লেটের মধ্যিখানে মোটা একটা লাল রঙের ব্রাশ স্ট্রোক। টমেটো, রেড ওয়াইন, রসুন -- মারিনারা স্যস? সরু ফিতের মত সবুজ তাজা গন্ধ। বেসিল নিশ্চয়ই। আর ঐ গোল বলের মত জিনিষটা? ভাজা একটা পরত পেলাম সবার ওপরে, ভেতরটা ক্রীমি, মুখে মিলিয়ে গেলো। তোমার নাম 'আরাঞ্চিনি' না? ইতালিয়ান, ভাজা ভাতের চপের মত? অভিজ্ঞতা এবার আমার দিকে তাকিয়ে হাসে। শেকলহীণ নিশ্চিন্ততার হাসি।
যে চোখে ধুলো দেয় তার কথা : কেকে
বুলবুলভাজা | ইস্পেশাল : উৎসব | ২০ অক্টোবর ২০২৫ | ৪১৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
ইয়ে... ওপরের নামটা আমি কি বলে যেন... হ্যাঁ, একটু ধার করেছি। আজকাল পালিশিত ভাষা পলিসিতে 'অনুপ্রাণিত' দিয়ে অবশ্য সুন্দর কাজ চালানো যায়। কিন্তু ওলে-লুকৈয়ে আজ রাত্রে আমায় এসে চেপে ধরলে স্বীকার করা ছাড়া গতি থাকবে না যে নামটা আমি চুরি.... মানে ঐ যে ইয়ে... হ্যাঁ ধার করেছি।
হুঁ, ওলে-লুকৈয়ে, লোকটার নাম। যে চোখে ধূলো দেয়। দেখুন, এই অনুপ্রেরণা-ধার-চুরি গত ঝামেলা গুলোর জন্য আমি মোটেই দায়ী নই। এই সমস্তটার জন্য দায়ী একমাত্র হ্যান্স ক্রিশ্চান অ্যান্ডারসন। ঐ বুড়ো ওলে-লোকৈয়ে কে যখন উনিই আমার ঘাড়ে চাপিয়েছেন তখন এই নাম টুকু ওঁর থেকে ধার নেওয়াতে আমি কিচ্ছু খারাপ দেখিনা।