এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  প্রবন্ধ

  • পক্ষীর দল

    Sukdeb Chatterjee লেখকের গ্রাহক হোন
    প্রবন্ধ | ২৯ জুন ২০২৪ | ৩৭৬ বার পঠিত | রেটিং ৪ (২ জন)
  • পক্ষীর দল
    শুকদেব চট্টোপাধ্যায়

    এই কাহিনীর শুরু অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে। ব্রিটিশ রাজের পাশাপাশি কোলকাতায় তখন পক্ষীর রাজ চলছে। মানুষরূপী এই পাখিরা গান গায়, ঠোকরায়, বুলি আওড়ায়, শুধু ডানা নেই। কয়েক ছিলিম গাঁজা টানার পর নেশার মৌতাত চড়লে ডানা ছাড়াই কল্পলোকে উড়ে বেড়ায়। নিত্য নতুন পাখির কলরবে সহর মুখরিত। তবে গাছের ডালে নয়, মাটিতে। সে এক বিচিত্র হুজুগ। সুধীর চক্রবর্তীর লিখেছেন, “সেকালে কলকাতায় ধনীঘরের বখাটে ছোকরারা একেক জায়গায় গাঁজার আখড়া খুলেছিল। বাগবাজারে এমনই এক আটচালায় রাম নারায়ণ মিশ্র পক্ষীর দল তৈরি করেন। মহারাজ গোপীমোহন ঠাকুর ছিলেন পক্ষীর দলের একজন পৃষ্ঠপোষক। অবশ্য অনেকের মতে শিব মুখুজ্যে বা শিবচন্দ্র ঠাকুর পক্ষীর দল গড়েন কলকাতায়, তিনি ছিলেন রাজা নবকৃষ্ণ দেবের বন্ধু অতএব দলগঠনে রাজার আনুকুল্য ছিল। যেহেতু নবকৃষ্ণের মৃত্যু ঘটেছিল ১৭৯৮ সালে তাই বলা যায় পক্ষীর দলের সংগঠন আঠারো শতকের শেষাশেষি। পক্ষীর দল আসলে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের অলস মস্তিষ্কের ইতর উপভোগের বিষয়।”

    পক্ষীর দলের সদস্যরা মদ তেমন একটা পছন্দ করত না। গাঁজা, গুলি, আফিমেই বেশি আসক্তি ছিল। এদের ছড়া ছিল—দেবের দুর্লভ দুগ্ধ ছানা, তা না হলে গুলি রোচে না, কচুঘেঁচুর কর্ম না রে যাদু। শুঁড়ির দোকানে গিয়া, ট্যাক টাক ফেলে দিয়া, ঢুক করে মেরে দিলে শুধু।

    পক্ষীর দলের দুটি প্রধান আড্ডা ছিল। একটি ছিল বটতলায় জয় মিত্রের বাড়ির উত্তরদিকের আটচালায়। এটির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন নিমতলার রাম নারায়ণ মিশ্র। ইনি আনন্দময়ী কালী মন্দিরের অধিকর্তা ছিলেন। আর একটি ছিল বাগবাজারে, যার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন শিবচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। অনাথকৃষ্ণ দেব কোন এক শিবচন্দ্র ঠাকুরকে পক্ষীর দলের সৃষ্টিকর্তা বলেছেন, তিনি রাজা নবকৃষ্ণের অন্তরঙ্গ ছিলেন শুধু এটুকুই জানা যায়। কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্যের মতে বাগবাজারের আড্ডার প্রতিষ্ঠাতা হলেন শিবকৃষ্ণ মুখপাধ্যায়। পক্ষীর দলের প্রতিষ্ঠাতার নাম নিয়ে কিছুটা ভিন্নমত আছে। মনে হয় বটতলা এবং বাগবাজারের আড্ডা দুটিকে গুলিয়ে ফেলার কারণে এই বিভ্রান্তি। বটতলার আড্ডার দলপতি ছিলেন নিধুবাবু আর বাগবাজারে রূপচাঁদ পক্ষী। পক্ষীর দলের সদস্যরা নেশা করার পারঙ্গমতার ভিত্তিতে এক একটি পাখির নাম পেত এবং সেই পাখির ডাক, চালচলন অনুকরণ করত।

    শিবনাথ শাস্ত্রী মেলে ধরেছেন তৎকালীন বঙ্গসমাজের যাপন চিত্র—‘সহরের স্বাস্থ্যের অবস্থা যেরূপ ছিল, নীতির অবস্থা তদাপেক্ষা উন্নত ছিল না। তখন মিথ্যা, প্রবঞ্চনা, উৎকোচ, জুয়াচুরী প্রভৃতির দ্বারা অর্থ সঞ্চয় করিয়া ধনী হওয়া কিছুই লজ্জার বিষয় ছিল না। ....... এই সময় সহরের সম্পন্ন মধ্যবিত্ত ভদ্র গৃহস্থদিগের গৃহে ‘বাবু’ নামে এক শ্রেনীর মানুষ দেখা দিয়াছিল। .....এই বাবুরা দিনে ঘুমাইয়া, ঘুড়ি উড়াইয়া, বুলবুলির লড়াই দেখিয়া, সেতার, এসরাজ, বীণ প্রভৃতি বাজাইয়া, কবি, হাপ আকড়াই, পাঁচালি প্রভৃতি শুনিয়া, রাত্রে বারাঙ্গনাদিগের আলয়ে আলয়ে গীতবাদ্য ও আমোদ করিয়া কাল কাটাইত; এবং খড়দহের মেলা ও মাহেশের স্নানযাত্রা প্রভৃতির সময়ে কলিকাতা হইতে বারাঙ্গনাদিগকে লইয়া দলে দলে নৌকাযোগে আমোদ করিতে যাইত। .... এই সময় ও ইহার কিঞ্চিত পরে সহরে গাঁজা খাওয়াটা এত প্রবল হইয়াছিল যে সহরের স্থানে স্থানে এক একটা বড় গাঁজার আড্ডা হইয়াছিল। বাগবাজার, বটতলা ও বৌবাজার প্রভৃতি স্থানে এরূপ এক একটা আড্ডা ছিল। বৌবাজারের দলকে পক্ষীর দল বলিত। সহরের ভদ্র গৃহের নিষ্কর্মা সন্তানগণের অনেকে পক্ষীর দলের সভ্য হইয়াছিল। দলে ভর্তি হইবার সময়ে এক একজন এক একটি পক্ষীর নাম পাইত এবং গাঁজাতে উন্নতিলাভ সহকারে উচ্চতর শ্রেণীতে উন্নীত হইত।’

    গাঁজা, গুলি, মদ, চন্ডু প্রভৃতি নেশাকে নিয়ে সেকালে যে ছড়া গাঁথা হয়েছিল তাতে বাগবাজার পেয়েছিল গাঁজার স্বীকৃতি।
    ‘বাগবাজারে গাঁজার আড্ডা,
    গুলির কোন্নগরে,
    বটতলায় মদের আড্ডা,
    চন্ডুর বৌবাজারে।
    কেবল বাগবাজার নয়, বটতলা এবং বৌবাজারও ছিল গাঁজার গৌরবের সমান দাবিদার।

    পক্ষীর দলের কার্যকলাপ বিলক্ষণ জানলেও ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত এদের সম্পর্কে কুকথা পরিহার করে লিখেছেন—‘পক্ষীর দলের পক্ষী সকলেই ভদ্রসন্তান ও বাবু এবং সৌখিন নামধারী সুখী ছিলেন।.....এই সমস্ত দ্বিপদ পক্ষীর আকাশভেদী বুলিসকল দ্বিপদ পক্ষীরাই বুঝিতে পারিতেন অন্যের বুঝিবার সাধ্য কি?’

    পক্ষীর দলে ঠাঁই পাওয়া খুব সহজ ছিল না। প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে হত। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে গেলে কলজের দম লাগত। ছিলিমের পর ছিলিম গাঁজা টানতে হত একটুও না কেশে। কাশলেই নম্বর কাটা যাবে। গাঁজা টানার এলেমের উপরেই নির্ভর করত পাখি হওয়ার যোগ্যতা।

    পাখি হওয়ার বাসনায় একদিন এক ব্যক্তি আটচালাতে এলেন। দলপতির সামনে যোগ্যতা নির্ধারণের পরীক্ষায় বসতে হল। নিরানব্বই ছিলিম মসৃণভাবে টানার পর একশ ছিলিমের সময় লোকটি খুক খুক করে একটু কেশে ফেলল। দলপতি বিরক্ত হলেন। দলে তাকে নেওয়া হল বটে তবে অবস্থান হল একেবারে নিচের দিকে। তাকে বানান হল ‘ছাতারে’। সামান্য দোষে গুরু দণ্ড পাওয়ায় লোকটি বিমর্ষ হয়ে পড়ল। কাতরভাবে দলপতির কাছে উন্নততর কোন পাখির জন্য আবেদন করল। অনেক কাকুতি মিনতির পর দলপতি তুষ্ট হয়ে লোকটির পিঠ চাপড়ে বললেন, ‘বাবু হে, যা বলেছি তা তো আর ফেরে না! হাকিম টলে তো হুকুম টলে না। তোর স্তবে আমি সন্তুষ্ট। ‘ছাতারে’ নামটা একেবারে রহিত করতে পারব না, তবে তারই ভেতর একটু ভাল করে দিচ্ছি—তুই হবি স্বর্ণ ছাতারে।’ দলপতি খুশি হলে তোতা, ময়না, বুলবুলি, কাঠঠোকরা ইত্যাদি হওয়া যেত, অন্যথায় হতে হত শালিক বা ছাতারের মত অপছন্দের পাখি।

    কথিত আছে, পক্ষীর যুগে যে সব মহাপুরুষ একাদিক্রমে একশ আট ছিলিম গাঁজা টানতে পারত তারা একখানা করে ইঁট পেত। এইভাবে সংগৃহীত ইঁটে বাড়ি তৈরি করতে পারলে ‘পক্ষী’ উপাধি পাওয়া যেত। তখনকার কোলকাতায় মাত্র দেড়জন ‘পক্ষী’ ছিল। পটলডাঙ্গার রূপচাঁদ পক্ষী আর বাগবাজারের নিতাই হাফ- পক্ষী। বাড়ি সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই মারা যাওয়ায় নিতাইয়ের আর ফুল পক্ষী হওয়া সম্ভব হয়নি।

    এই পক্ষীর দল নিয়ে অনেক মজার মজার গল্প আছে। একবার ভদ্রঘরের একটি ছেলে বাড়িতে কিছু না জানিয়ে চলে এসে পক্ষীর দলে নাম লেখাল। পদ পেল কাঠঠোকরার। এদিকে ছেলেকে খুঁজতে খুঁজতে তার বাবা একদিন আটচালার ওই আখড়াতে এসে হাজির হলেন। আটচালাতে তখন বেশক’টি ছেলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। কেউ ঘুরছে, কেউ বসে আছে। নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা চলছে ভিষিন কিটি কিটি কিস কিসিন এর মত অদ্ভুত সব শব্দে। ভদ্রলোক নিজের ছেলের কথা একজনকে জিজ্ঞেস করতেই সে বলে উঠল, ‘কিচি মিচি কিচি কিচিন।’ বিচিত্র শব্দের কিছুমাত্র বুঝতে না পেরে ভদ্রলোক নিজেই ছেলেকে খুঁজতে লাগলেন। অবশেষে চালার এক কোনায় তন্দ্রাচ্ছন্ন সুপুত্রকে খুঁজে পেলেন। ছেলেকে ফেরত নিয়ে যাওয়ার জন্য টেনে তুলতেই সে কড়র ঠক্ কড়র ঠক্ শব্দ করে বাবাকে ঠুকরে দিল। ছেলে যে তখন কাঠঠোকরা।

    গঙ্গা নারায়ণ নস্কর ছিলেন সে যুগের বিখ্যাত পাঁচালীকার। তাঁর বড় ইচ্ছে, আটচালায় গিয়ে পক্ষীকুলের মজার কাণ্ডকারখানা একবার নিজের চোখে দেখার। একদিন গিয়ে পৌঁছলেন আটচালার দ্বারে। দ্বারপাল তাঁর পরিচয় এবং আসার কারণ জিজ্ঞেস করল। নস্করবাবু জানালেন—আমার নাম গঙ্গা নারায়ণ নস্কর। তোমাদের সাথে দেখা করতে এসেছি।
    দ্বারপাল জানাল—সেজন্য রাজার অনুমতির দরকার। তুমি এখানে অপেক্ষা কর আমি ভেতরে খবর দিচ্ছি।
    ভেতরে গিয়ে জানাল—মহারাজ, একজন নস্কর দেখা করতে চায়।
    রাজার মৌতাত তখন তুঙ্গে। শুধলেন —সে জন্তু না মানুষ?
    --আজ্ঞে মানুষ।
    --হিন্দু না মুসলমান?
    --হিন্দু, গলায় পৈতে আছে।
    নস্কর তায় হিন্দু, আবার গলায় পৈতে আছে। কিছুই মেলাতে না পেরে রাজা চেঁচিয়ে বললেন—এ কেমন করে হয়?
    প্রধান অমাত্য ছুটে এসে বলল—অক্ষরের কোটায় এর কুলজী মিলতে পারে। এক এক বর্গ ধরে নস্করকে মিলিয়ে দেখলেই চলবে।
    এরপর সে কস্কর, খস্কর, গস্কর করে মেলাতে মেলাতে ‘ত’ এ এসে উদ্দীপিত হয়ে বলল—পেয়েছি মহারাজ।
    --কি পেলে?
    -- ব্যাটা যাবে কোথায়? মহারাজ তস্করের ঘরে নস্করের বাস।
    ব্যাস, আর যায় কোথা? নিজেদের বুলি আওড়াতে আওড়াতে সবকটা মিলে ছুটে এসে,গঙ্গা নারায়ণকে ঘিরে ধরে, কেউ ঠোকরাল তো কেউ কানের সামনে কর্কশ চিৎকার করতে শুরু করল। নস্কর মশাইয়ের তখন প্রাণান্তকর অবস্থা। পাখির রঙ্গ দেখা মাথায় উঠল, কোনোরকমে পালিয়ে বাঁচলেন। ঈশ্বর গুপ্তের ভাষায়—‘অম্বলচাকা ভোম্বলদাসের ন্যায় ফ্যা ফ্যা করিতে করিতে উঠে ছুটে প্রস্থান করিলেন।’

    আর একটি মজার ঘটনা ঘটেছিল শোভাবাজার রাজবাড়িতে। রাজা গোপীমোহন দেবের একবার ইচ্ছে হল পাখিদের রঙ্গ কৌতুক দেখার। রাজার বাসনার কথা পাখিদের দলকে জানান হল। প্রথমে গররাজি হলেও অনেক অনুনয়-বিনয়ের পর রাজি হল। তবে একটি শর্তে, নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজবাড়ি থেকে খাঁচা পাঠাতে হবে। নির্ধারিত দিনে রাজবাড়ি থেকে খাঁচার আকৃতির পালকি এল। পাখিরা কিচির মিচির করতে করতে খাঁচায় ঢুকে গেল। খাঁচায় চড়ে পাখিরা রাজবাড়িতে পৌঁছল। রাজবাড়িতে সেদিন অনেক অতিথি এসেছেন পাখিদের রঙ্গ তামাশা দেখবে বলে। পাখিরা কোথাও গেলে প্রথমে নাচ গান কৌতুক করে তারপর আধার নেয়( খেতে বসে)। সেদিন পাখিরা আসা মাত্রই রাজা মশাই খাবার দিয়ে তাদের আপ্যায়ন করলেন। পাখিরা মহানন্দে সেগুলি খেয়ে ফুড়ুৎ করে আবার খাঁচায় ঢুকে গেল।
    রাজা মশাই বিস্মিত হয়ে বললেন—যে নাচ গান আর কৌতুকের জন্য এত আয়োজন, তার তো কিছুই হল না!
    উত্তর এল—আধার পেলে কি আর ওসব করা যায়, হজম করতে হবে তো! আধার যদি আগে না পেতাম, তাহলে সব রঙ্গই দেখাতে পারতাম।
    এ হেন অসভ্য আচরণে রাজামশাই বিরক্ত হলেও পাখিদের টলান গেল না। খেয়ালী পাখিরা খাঁচায় চেপে ফিরে গেল নিজেদের বাসায়।

    পক্ষীর দলের এই বালখিল্যপনার পাশাপাশি ছিল এক গৌরবোজ্জ্বল সাংস্কৃতিক দিক। বটতলার নিধুবাবু এবং বাগবাজারের রূপচাঁদ, উভয়েই ছিলেন সেই সময়ের সঙ্গীত জগতের প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তি।

    রামনিধি গুপ্ত পাঞ্জাবী দ্রুততালের টপ্পাকে নিয়ে এলেন বাংলায়, দিলেন তার নতুন রূপ, নতুন গায়কি। তাঁর টপ্পাতেই প্রথম শোনা গেল আত্মকেন্দ্রিক লৌকিক সূর। নিধুবাবুর টপ্পা আজও সঙ্গীত জগতের চর্চার বিষয়। নিধুবাবুই প্রথম ইংরেজি জানা কবিয়াল এবং প্রথম স্বদেশী সঙ্গীতের রচয়িতা।
    নানান দেশের নানান ভাষা।
    বিনে স্বদেশীয় ভাষা,
    পুরে কি আশা?
    কত নদী সরোবর কিবা ফল চাতকীর
    ধারাজল বিনা কভু
    ঘুচে কি তৃষা?

    নিধুবাবু রাতে যখন আটচালায় বসে সঙ্গীত চর্চা করতেন তখন তা শোনার জন্য সেখানে উপস্থিত থাকতেন সহরের অনেক মানী গুণী মানুষ। তিনি খুব স্বাধীনচেতা ছিলেন, তোষামোদি পছন্দ করতেন না। তাই তাঁর গান শুনতে হলে বটতলার আটচালাতে আসতে হত, তিনি সাধারণত কারো বাড়িতে যেতেন না। বর্ধমানের রাজা তেজেশচন্দ্র রায় বাহাদুর, মুর্শিদাবাদের দেওয়ান মহারাজ মহানন্দ রায়বাহাদুরের মত কোলকাতার বাইরের বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি সহরে এলে তাঁর গান শোনার জন্য আটচালায় আসতেন। নিধুবাবু গায়কী রীতির অনেক পরিমার্জন করে আখড়াই গানকে জনপ্রিয় করে তোলেন। তাঁর গানে নারী–পুরুষের চিরন্তন প্রেম, আবেগ, বিরহ কোন আড়াল না নিয়ে এক সহজ, সাধারণ, মানবিক ভাষায় ব্যক্ত হয়েছিল। নিধু বাবুর টপ্পায় কয়েকটি বাদে প্রায় সবই নায়িকার উক্তি।

    পিরীতি না জানে সখী, সে জন সুখী বল কেমনে?
    যেমন তিমিরালয় দেখ দীপ বিহনে।।
    প্রেমরস সুধাপান, নাহি করিল যে জন,
    বৃথায় তার জীবন, পশু সম গণনে।
    ***
    "ভালবাসবে বলি ভালবাসিনে,
    আমার স্বভাব এই,
    তোমা বই আর জানিনে।
    বিধুমুখে মধুর হাসি,
    আমি বড় ভালবাসি,
    তাই দেখে যেতে আসি –
    দেখা দিতে আসিনে।।"
    ***

    যতনে যাহারে সঁপিলাম প্রাণ
    সদাই চাতুরি করে সেই জন
    দেখিতে তাহারে হইল সাধ রে
    কাহারে দুঃখ কহিব।
    ***

    এই কি তোমার প্রাণ, ছিল হে মনে।
    যাচিয়া যাতনা দিবে জানিব কেমনে।।
    অবলা সরলা সতি জানিয়া মনে।
    ছলেতে ভুলালে ভালসুধা বচনে।।
    ***

    নায়ক নায়িকার প্রেম ও মিলনের ছবি পারস্পরিক আত্মসমর্পণের ঐকান্তিকতায় মনোরম হয়ে ফুটে উঠেছে নিচের কথোপকথনে—

    নায়িকা-
    তুমি হলে রাজেন্দ্র আমি তব দাসী।
    তোমার অধীন হয়ে থাকি ভালবাসি।।
    করি অনেক সাধন, এমন হয়েছে মন,
    ইহাতে সদয় থাক সুখী দিবানিশি।।
    নায়ক-
    তুমি মোর সুখের কারণ প্রিয়সি।
    সদা উল্লসিত হেরি মুখশশী।।
    রাজেন্দ্র যদি লো আমি, রাজেন্দ্রাণী হলে তুমি।
    উভয় পিরীতে হয়, দাস কেহ দাসী।।

    ১৮০৫ সালে নিধুবাবু দুটি সৌখিন আখড়াই দল তৈরি করেন। বাগবাজার, শোভাবাজার, মনসাতলা এবং পাথুরিয়াঘাটায় সৌখিন আখড়াই দলগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। নিধু বাবুর অসাধারণ সঙ্গীত রচনা এবং তাঁর চেলা বিখ্যাত মোহনচাঁদ বসুর গায়নের মণিকাঞ্চন যোগে বাগবাজারের দল সব সময় বিজয়ী হত।

    ১৮৩২ সালে গীতরত্ন নামে তাঁর গানের একটি সংকলন প্রকাশিত হয়; তাতে ৯৬টি গান স্থান পায়। তাঁর পুত্র জয়গোপাল গুপ্ত ১৮৫৬ সালে এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করেন; তাতে আরও সাতটি গান সংযুক্ত হয়।

    রূপচাঁদ দাসের দেশ উড়িষ্যার চিল্কায় হলেও শৈশব থেকে কোলকাতাতেই তাঁর বাস। তিনি ছিলেন স্বভাব কবি এবং কণ্ঠস্বর ছিল অতি মধুর। ব্যাঙ্গে, গানে, খেঊড়ে, শ্লেষে তিনি মাতিয়ে রেখেছিলেন উনিশ শতকের কোলকাতাকে। তাঁর গান ছিল আয়নার মত, যাতে দৃশ্যমান হত সেকালের সমাজচিত্র। রূপচাঁদের লেখায় ‘পক্ষী’, ‘খগরাজ’, ‘খগবর’, ‘খগপতি’র ভণিতা থাকত।

    তাঁর ঝুলিতে আগমনী, বিজয়া, বাউল, দেহতত্ত্ব, পাঁচালী, টপ্পা ছাড়া রাধাকৃষ্ণের গানও ছিল। তবে সব থেকে জনপ্রিয় ছিল তাঁর ব্যঙ্গ বিদ্রূপাত্মক গান। তাঁর গানে তিনি প্রচুর ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করতেন।

    লেট মি গো ওরে দ্বারি,
    আই ভিজিট টু বংশীধারী।
    এসেছি ব্রজ হতে, আমি ব্রজের ব্রজনারী।।
    বেগ ইউ ডোরকিপর লেট মি গেট,
    আই ওয়ান্ট সি ব্লক হেড,
    ফর হুম আওয়ার রাধা ডেড,
    আমি তারে সার্চ করি।

    ***

    আমারে ফ্রড করে
    কালিয়া ড্যাম তুই কোথায় গেলি।
    আই য়্যাম ফর ইউ ভেরি স্যরি,
    গোল্ডন বডি হল কালী।।

    ***

    মানুষ চলে কলের বলে।
    পঞ্চভূত, বড়োই মজবুত, ঘেরেছে
    সহস্র দলে।।(ওরে ভাই)
    এই দেহ-মেসিন, ইহা ভাই বড়োই প্রবীণ,
    ইংরাজ চীন ফ্রেঞ্চ মারকিন, সবাই হার মানিলে;
    মরি কি শিল্পবিদ্যা,
    করেছেন মহাবিদ্যা, যোগারাধ্যে পায় না বুদ্ধে,
    অসাধ্য হয় ভাবতে গেলে।।
    এ কলের কী কৌশল, কল থেকে জন্মাচ্ছে কল,
    রেলওয়ে ইষ্টিম ভেসল, লোক-সাহায্যে চলে;
    টেলিফোন, ফনোগ্রাফ। ইলেকট্রিক টেলিগ্রাপ,
    মানুষ কল সব কলের বাপ,
    চৈতন্য রয়েছে মূলে।।

    ***

    তাঁর কলকাতা বর্ণন নামের গানে সহরকে স্বর্গের সাথে তুলনা করেছিলেন। বিরাট সেই কীর্তনে সংশ্লিষ্ট অনেক কিছুর সাথে আছে সহরের বহু রাস্তার নাম।
    ধন্য ধন্য কলিকাতা শহর।
    স্বর্গের জ্যেষ্ঠ সহোদর।।
    পশ্চিমে জহ্নবীদেবী দক্ষিণে গঙ্গাসাগর।। .....
    .... বিডন ষ্ট্রীট, ক্যানিং ষ্ট্রীট, রসল ষ্ট্রীট, ক্যামাক ষ্ট্রীট/ জানবাজার, বহুবাজার আর বৈঠকখানা
    সারকিউলর।।/
    (অলিগলির ঘরগুলি মিউনিসিপ্যালের গোচর)। .....

    সঙ্গীত জীবনের প্রথম দিকে তিনি ‘পক্ষীর জাতিমালা” নামে একটি পাঁচালি দলও গঠন করেন।
    দুর্গা দাস লাহিড়ী লিখেছেন – “রূপচাঁদ বড়োই আমোদপ্রিয় ও রসিক পুরুষ ছিলেন। পক্ষী উপাধিকারী বলিয়া তাঁহার গাড়িখানি কতকটা খাঁচার আকারের মত ছিল। তিনি সেই গাড়ি চড়িয়া কলকাতার বড়ো বড়ো লোকের বাড়ি গিয়া উপস্থিত হইতেন।।.... তাঁহার রচিত গান গাহিয়া অনেক ভিখারিকে আমরা ভিক্ষা করিতে দেখিয়াছি।”

    রূপচাঁদের জীবিতকালে তাঁর গানের সংকলন ‘সঙ্গীতরসকল্লোল’ প্রকাশিত হয়। এই সংকলনে পাঁচালি, আখড়াই, ঢপ, যাত্রা, কবিগান, গাজনের সঙ প্রভৃতি বিভিন্ন ধরণের ২১১টি গান সংকলিত হয়।

    সস্তার চাহিদা মেটাতে গিয়ে ব্যাঙ্গ বিদ্রুপাত্মক গানে অনেকটা সময় দিয়ে দেওয়ার ফলে তাঁর প্রতিভার প্রকৃত স্বরূপ উদঘাটিত হয়নি। সুধীর চক্রবর্তীর মতে, “রূপচাঁদের গানেই আমরা সর্বপ্রথম পাই কোলকাতার বর্ণনা। কিন্তু রূপচাঁদের রচিত ভক্তি ও দেহতত্ত্বের গান শুনলে বোঝা যায় কত বড় কবিত্বের সম্ভাবনা তাঁর রঙ্গব্যঙ্গের বেঠিক পথে ব্যয় হয়ে গেছে।”

    উনিশ শতকের মাঝামাঝি আটাচালার বাসা শূন্য করে পাখিরা কোলকাতার বুক থেকে চিরতরে হারিয়ে গেল। হয়ত রাম নারায়ণ মিশ্র , গোপীমোহন ঠাকুর, শিবচন্দ্র মুখোপাধ্যায়দের মত নতুন কেঊ আর পাখির রক্ষণাবেক্ষণে আগ্রহ দেখাননি।

    হুতোমের কথা দিয়ে শেষ করি—“এখন আর পক্ষীর দল নাই, গুখুরি ও ঝকমারির দলও অন্তর্দ্ধান হয়ে গেছে, পাকিরা বুড়ো হয়ে মরে গছেন, দু একটা আদমরা বুড়ো গোছের পক্ষী এখনও দেখা যায়, দল ভাঙ্গা ও টাকার খাঁকতিতে মন মরা হয়ে পড়েচে সুতরাং সন্ধ্যার পর ঝুমুর শুনে থাকেন। আড্ডাটি মিউনিসিপাল কমিসনরেরা উঠিয়ে দেছেন অ্যাখন কেবল তার রুইন মাত্র পড়ে আছে।”

    তথ্যসুত্র—
    বাবু গৌরবের কলকাতা- বৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায়
    বটতলার ভোরবেলা- জীবানন্দ চট্টোপাধ্যায়
    হূতোম প্যাঁচার নকশা- কালীপ্রসন্ন সিংহ
    রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ- শিবনাথ শাস্ত্রী
    নির্বাচিত প্রবন্ধ—সুধীর চক্রবর্তী
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • প্রবন্ধ | ২৯ জুন ২০২৪ | ৩৭৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাপাঙ্গুল | ০২ জুলাই ২০২৪ ১৩:০৩534055
  • ভাল লাগল। এতখানি জানতাম না। 
  • Kuntala | ০২ জুলাই ২০২৪ ১৬:৩৮534080
  • সম্প্রতি দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত 'শ্রীমতী' পড়ে পক্ষীকুল সম্পর্কে অল্প কিছু জেনেছিলাম। তাই ভাল লাগল, এই গবেষণা করে লেখাটি।
    নিধুবাবুর টপ্পা কালোয়াতি স্টাইলে না গাইলে ভালো লাগে। ইফফাত আরা খান দেওয়ানের গাওয়া শুনে শুনে 'তোমারই তুলনা তুমি প্রাণ' গানটি তুলেছিলাম। শ্রীমতীতে আছে এটি নিধুবাবু তার জন্য লিখেছিলেন। 'যেমন আকাশে পৃর্ণশশী, সেও কাঁদে কলঙ্কছলে'। ভাবা যায়? 
  • kk | 172.56.***.*** | ০২ জুলাই ২০২৪ ১৮:২০534085
  • ভালো লাগলো। এই পুরোনো দিনের গল্প নিয়ে শুকদেব বাবুর লেখাগুলো বেশ ভালো লাগছে। আলাদা করে আর জানানো হয়নি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন