এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  স্মৃতিচারণ  নস্টালজিয়া

  • প্রতিবন্ধকতার সকাল ও সকালের প্রতিবন্ধকতা 

    Dr. Bubai Bag লেখকের গ্রাহক হোন
    স্মৃতিচারণ | নস্টালজিয়া | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩ | ৪৪৮ বার পঠিত
  • সাল ২০০৪, আগস্ট  মাসের উনিশ তারিখ, ক্যালেন্ডারে শরৎ কাল হলেও সকাল থেকেই আকাশের মুখটা ভীষণ ভারাক্রান্ত। গত কয়েক দিনের বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির কারণে আবহাওয়া বেশ স্যাঁতস্যাঁতে। এই পরিস্থিতিতে মন না চাইলেও জরুরী কাজ থাকার জন্য নতুন কলেজ যেতেই হবে। সকালের ডাউন মেদিনীপুর লোকাল যখন হাওড়া ষ্টেশানের ১৫ নম্বর প্লাটফর্ম দাঁড়িয়ে গেল তাঁর বুকের ভেতরটা কেমন যেন মুছড়ে উঠল। ঘড়িতে সময় সকাল আটটা বেজে চল্লিশ মিনিট। তেমন কিছুই নয়, দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ের নিত্যযাত্রীদের জীবনে নতুন ঘটনা না হলেও হামাগুড়িয়ে হাঁটা বছর ষোলোর এক কিশোরের কাছে অনেক কিছু। ছোট থেকেই অঙ্গহানিজনিত কারণে কোমর থেকে দুটি পা একেবারেই অচল। গমনের প্রধান মাধ্যম একটি ভাঙাচোরা ট্রাইসাইকেল। যেখানে যেখানে সেই  ট্রাইসাইকেল নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না, সেখানে হাঁটুতে ভর গিয়ে হামাগুড়িয়ে যাওয়ায় একমাত্র অবলম্বন। তাই মনে মনে ১৫ নম্বর প্লাটফর্ম থেকে বারুইপুর সিটিসি বাস টার্মিনাসের দূরত্ব পরিমাপ করে কিছুটা হলেও শঙ্কিত হয়ে উঠল। মূহুর্তের মধ্যে তাঁর শারীরিক প্রতিবন্ধকতার পরিসর যেন দ্বিগুণ হয়ে উঠল। কিন্তু হেরে যাওয়ার পাত্র সে নয়, যে ফুল জন্মিয়াছে ধরণীকে সুভাষিত করার জন্য তার গন্ধ কী সহজে শুকায়ে যায়? কষ্টকে জয় করার মধ্য দিয়ে যে জীবনকে উপভোগ করে, তাঁর পক্ষে কষ্টহীন জীবন একটা অলীক কল্পনা মাত্র।
    তাই মনকে শক্ত করে ট্রেন থেকে নেমে ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করল। হাঁটা মানে তথাকথিত সুস্থ স্বাভাবিক মানুষেরা যেমন দুটি পায়ে ভর দিয়ে হাঁটে তেমনটা নয়, তাঁদের মত মানুষদের কাছে হাঁটা মানে দুটি হাটু এবং দুটি হাতের ওপর ভর দিয়ে নিজের শরীরকে টেনে নিয়ে যাওয়া। এককথায় যাকে ‘হামাগুড়ি’য়ে যাওয়া বলা হয়ে থাকে। যদিও মানব জীবনের বিবর্তনে এই হামাগুড়িয়ে যাওয়া একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা নয়। প্রায় প্রত্যেকেই  শৈশবে এই ধরণের হামাগুড়িয়ে যাতায়াতে অভ্যস্ত বা সকলের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে শৈশব অতিক্রম করে কৈশোরে এই ধরণের গমনাগমন মাধ্যম খুব কম সংখ্যক মানুষদের করতে হয়। বলাবাহুল্য কিছুটা বাধ্যবধকতায় মধ্যেই এই ধরণের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন। সাধারণ চলন সক্ষমতাযুক্ত মানুষেরা যাকে অনায়াসে মারিয়ে চলে যায়, সেই জমে থাকা নোংরা কাদামাখা জলকে খুব কাছ থেকে দেখে তাদের সঙ্গে সখ্যতা স্থাপন করে এগিয়ে যায় নির্দিষ্ট বাস টার্মিনাসের দিকে।    
    পারিবারিক আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকলে হয়ত চিৎকার করে কুলিকে বলতে পারতো ‘একটা হুইল চেয়ার নিয়ে এসো’, কিন্তু সেই ছাত্রবয়সে তা অকল্পনীয়। পারিবারিক আয় তেমন কিছুই নেই। মিশনের মহারাজের সহযোগিতায় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে থাকা খাওয়া ও পড়ার সুযোগ পেয়েছে। বই খাতার খরচের জন্য ছাত্রবৃত্তি প্রধান ভরসা। ফলে যত কষ্টই হোক না কেন হামাগুড়িয়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কোন মাধ্যম ছিল না। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে পীঠে ব্যাগ নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে নিজের গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চলে। মাথায় রয়েছে সাড়ে নটার বাস না ধরলে কোনভাবেই নির্দিষ্ট সময়ে কলেজে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তাই একটু গতি বাড়ানোর চেষ্টা করতেই কিছুটা গিয়ে হাফিয়ে উঠলো। ব্যস্ততম ষ্টেশানের অফিসের সময়ে ফাঁকা রাস্তা পাওয়া কষ্টকর। তাই কোন রকমে একটু এগিয়ে বারো নম্বর প্ল্যাটফর্মের কাছে টয়লেট লাগোয়া এক স্থানে বসে একটু বিশ্রাম না নিলেই নয়। কারণ এগিয়ে যাওয়ার জন্য মাঝে মাঝে যে পিছিয়ে পড়তে হয় , এটা সে খুব ছোট থেকেই উপলব্ধি করে নিয়েছিল।
    এদিকে ষ্টেশানের জনাসমাগম ক্রমেই বাড়তে থাকছে। আপ-ডাউনের লোকজন আপন গতিতে চলেছে নিজ নিজ গন্তব্যের দিকে। মিনিট খানেক বসে, সেও ভাবছে ঠিক আরও কতটা পথ গেলে বাসের দেখা পাওয়া যাবে? এরকম মানসিক অস্থিরতার মধ্যে থাকতে থাকতে মাথা তুলে উপরে দিকে তাকিয়ে লক্ষ করলো পথচারীদের অনেকেই বেশ কৌতুহলবশত তাঁর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। যদিও এই সব তাঁর কাছে একেবারেই তুচ্ছ। কারণ সে জানে এই পৃথিবীতে সবাই একরকম হয় না। তবে মানুষ চেষ্টা করলেই নিজের ভাগ্য নিজে বদলাতে পারে। তবুও মানুষেরা চিড়িয়াখানার জানোয়ার দেখার মত তাঁর দিকে তাকানো দেখে কিছুটা যে কষ্ট হচ্ছিল না বললে সত্যের অপলাপ হতে পারে। এরই মধ্যে তাঁর চোখে পড়ল মধ্যবয়স্ক এক ভবঘুরে ভিখারি পিঁড়ের নীচে চারটি চাকা লাগিয়ে মাটিতে জাঁক দিয়ে ষ্টেশানের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে অনায়াসে চলে যাচ্ছে। তৎক্ষণাৎ তাঁর মাথায় ঐ ধরণের চাকাযুক্ত গাড়ির বিশেষ চাহিদা দেখা দিল। যেতা দেখেও তাঁরও জীবনকে সহজ করার কথা মনে হতে থাকলো। ভাবতে থাকে সেও এরকম একটা গাড়ির সাহায্যে জীবনের গতি খুব সহজে বৃদ্ধি করতে পারত। মনে মনে চিন্তা করছিল এত বেশী চাহিদার জন্যই হয়ত তাদের মত তথাকথিত প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষদের অনেকে ‘বিশেষ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন’ বলে চিহ্নিত করেন।
    এত কিছু এলোমেলো ভাবনার মধ্যেই বাস ধরার চিন্তা কোনভাবে গেল না। অগত্যা আপন গতিতে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। প্রায় আধ ঘণ্টা হাঁটার পর সে বুঝতে পারলো সবে মাত্র নয় নম্বর প্লাটফর্ম পর্যন্ত যেতে সক্ষম হয়েছে। মনের মধ্যে আরও জোর সঞ্চয় করে ভাবছে আর কিছুটা পথ এগোলেই সাবওয়ে পেয়ে যাবে। মাথা উঁচু করে দূরের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো আগের তুলনায় ষ্টেশানের ভিড় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। কারণ হাওড়া ষ্টেশানের নয় নম্বর প্ল্যাটফর্ম অনেকটা জলবিভাজিকার মত। এখান থেকেই দক্ষিণ পূর্ব ও পূর্ব রেলওয়ের যাত্রীদের মিলন ঘটতে থাকে। ফলে জনস্রোত ক্রমশ জনসমুদ্রের রূপ ধারণ করে। পিপিলিকার মত তাঁকে যে কোন মুহুর্তে মাড়িয়ে দেওয়ার আশঙ্কায় নিজে থেকে গতি অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে।
    এই সব টেনশানের মাঝে ঘাড় তুলে বড় ঘড়িটার দিকে তাকাতে আতঙ্ক বেড়ে গেল। ঘড়িতে প্রায় সোয়া নয়টা। সাড়ে নটার বাস মিস করে গেলে আবার সেই এক ঘণ্টা বসে থাকতে হবে পরের হাওড়া-বারুইপুর সিটিসি বাসের জন্য। হাওড়া থেকে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের আবাসিক মহাবিদ্যালয় যেতে এই বাস অন্যতম অবলম্বন। কারণ এটিই একমাত্র পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ট্রাম কোম্পানির সরকারী বাস। এখানে রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত প্রতিবন্ধকতার পরিচয় পত্র দেখিয়ে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এবং প্রতিবন্ধকতার নির্দিষ্ট আসনে বসে যাওয়া সম্ভব। আরও একটি বাস আছে বটে হরিনাভী হাওড়া মিনি, সেখানে ভাড়াও বেশী এবং সময়ও লাগবে অনেক বেশী। সরকারী বাসে প্রায় ঘন্টা দেড়েক লাগে। মিনি বাসে সেখানে আড়াই ঘণ্টা। ফলে দেরী করে পৌঁছে দুপুরের খাবার পাওয়া যাবে কিনা তাঁর জানা নেই। সবেমাত্র একমাস হল কলেজে প্রবেশ করেছে। সবার সঙ্গে সম্যকভাবে আলাপ পরিচয় পর্যন্ত হয় নি। এই সব ভাবতে ভাবতে এগিয়ে দেখে সামনের বেশ কিছুটা জায়গা জুড়ে কাদা জল জমে রয়েছে। পরনের প্যান্টখানি ইতিমধ্যে কিছুটা স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গিয়েছে। সোজাসুজি এগিয়ে গেলে সম্পূর্ণ ভিজে যাওয়ার ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে উঠলো। কিছুটা পাশে অবশ্য আপাত শুকনো রাস্তা রয়েছে বটে, তবে সেখানে লম্বা লম্বা পায়ের বুট পড়া লোকগুলি ক্ষিপ্র গতিতে এগিয়ে চলেছে। ফলে ওদিক দিয়ে যেতে গেলে পিষে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। এই সব গভীর চিন্তার মাঝে বুঝতে পারলো একটু বিশ্রাম না নিলে শরীর তাঁকে টেনে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব। বাড়ি থেকে খুব সকালে বেড়তে হয়েছে বলে পেটে তেমন কিছুই পড়ে নি। শারীরিক ভাবেও দুর্বলতা অনুভব করে পুনরায় বিশ্রামের নিরাপদ স্থান খুঁজতে শুরু করলো।
    এমতাবস্থায় টিকিট চেকারদের সন্নিকটে স্থানটা চোখে পড়ল। তুলনামূলক ভিড় কম, সেখানেই হাতের জুতোটা রেখে তার ওপরে বসার চেষ্টা করল। পিঠে কলেজের ব্যাগটা নামিয়ে রাখলো হাতের পাশে। প্রথমবার তাঁর নিজেকে অসহায় মনে হতে লাগলো। এইভাবে বসে থাকতে দেখে বছর পঞ্চাশেক জনৈক ভদ্রলোক তাঁর হাতে ষোলো আনার একটি কয়েন দিয়ে চলে গেল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আবও এক ভদ্রলোক আট আনার এক কয়েন হাতে দিয়ে প্রণাম করে চলে গেলো। অকস্মাৎ তাঁর বুঝতে অসুবিধা হল না নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের মত কলেজে অনার্স নিয়ে পড়লেও তাঁর শারীরিক প্রতিচ্ছবি আদতে তাঁকে এখনও রাস্তার বা ষ্টেশানের ভিখারীই প্রতিপন্ন করে। কারণ লোকশ্রুতি আছে ঐশ্বরিক চেতনায় সৃষ্ট প্রতিবন্ধী মানুষদের দান করলে ঈশ্বর বা ভগবানের কাছে পূণ্যবান হিসেবে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যাবে। সমাজের চিরাচরিত ধারণার বশবর্তী হয়েই তাঁরা প্রতিবন্ধী মানুষদের দান করতে এগিয়ে এসেছে। যার মধ্যে অন্যায় নেই, বরঙ খুব মাহাত্ম থাকতে পারে। এই সবের মধ্যেই তৃতীয় ব্যক্তি এসে কিছু দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরিস্থিতি অনুধাবন করে আত্মমর্যাদায় ভরপুর সেই কিশোর গর্জে উঠলো। কিছুটা বিরক্তির সুরে ও অবেগের স্বরে চিৎকার করে বলতে থাকে ‘আমাকে দেখে কীভাবে আপনাদের ভিখারী মনে হয়, উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে পাশ করা ছাত্র আমি, নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র, দোয়া করুণা বা সাহায্য নয়, পারলে প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষদের পাশে থাকবেন, সহযোগিতা করবেন’ ভদ্রলোক কিছুটা শুনলেন আবার কিছুটা না শোনার ভান করে একটা দুঃখ প্রকাশ করে প্রণাম ঠুকে দিকে আপন গতিতে এগিয়ে চলল।
    এদিকে কিশোরেরও সময় এগিয়ে আসছে বলে পুনরায় নিজের গতি বাড়িয়ে সাবওয়ের দিকে এগিয়ে গেলো। সাবওয়ের ত্রিশটা সিঁড়ি নামতে যতটা সহজ হয় ওঠার সময় ঠিক তততাই কষ্ট হয়। তাছাড়া বিকল্প কোন উপায়ও ছিল না। সিঁড়ির বদলে র‍্যাম্প বা ঢালুযুক্ত স্থান নির্মাণের কথা নির্মাতাদের মাথাতেও আসে নি। বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী মানুষেরা যে এই সাবওয়ে ব্যবহার করতে পারে তা রেলের কাছে অলীক কল্পনা ছিল। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাষ্ট্র প্রতিবন্ধী বান্ধব পরিবেশ নির্মাণে খুব একটা ইতিবাচক চেতনা দেখায় নি। অন্য কোন উপায় না থাকায় শত কষ্টকে সাথী করে একটা একটা  সিঁড়ি ভেঙে বাস স্ট্রান্ডের দিকে উঠতে থাকে। আর মনে জোর নিয়ে আসতে ভাবতে থাকে তাঁর মায়ের কথা যিনি একুশ বছর বয়স থেকে সামান্য পেন কারখানায় কাজ করে প্রতিবন্ধী ছেলেকে প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে। মনে আসে তাঁর থেকে বছর তিনেকের বড় দাদার কথা, যিনি ছয় বছর বয়স থেকে স্যান্ডো গেঞ্জী ও হাফ প্যান্ট পড়ে ফুলের বোঝা মাথায় নিয়েই এই হাওড়া ষ্টেশান থেকে ব্রীজের ওপারে জগন্নাথ ঘাটে প্রতিদিন যাতায়াত করে শুধুমাত্র তাঁর ভাইকে পাঁচ জনের একজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার আশায়। বাবা লোকের জমিতে উদয়াস্ত পরিশ্রম করে কোনোরকমে সংসার চালানোরে চেষ্টা করে। যে লড়াইগুলোকে পাথেয় করেই জীবনের সব যন্ত্রণা তুড়ি মেরে এগিয়ে যেতে থাকে সে। এই সব ভাবতে ভাবতে যতক্ষণে বাসের কাছে পৌঁছালেন ততক্ষণে ঘড়িতে নয়টা বেজে আঠাশ মিনিট হয়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই বাস ছাড়বে ছাড়বে করছে। সে বুঝতে পারেন মহানুভব কোন হৃদয়ের সহযোগিতা ছাড়া এই ভিড়ে বাসে ওঠা তাঁর পক্ষে একেবারেই দুঃসাধ্য কাজ। বাসের পাদানিতে পর্যন্ত লোক দাঁড়িয়ে আছে। বাসের মধ্যে দুইখানি প্রতিবন্ধীদের জন্য আসন আছে বটে। উঠতে পারলে তবেই তা পাওয়া সম্ভব। অকস্মাৎ সে লক্ষ করল জনৈক  ভদ্রলোক অন্যদের সরিয়ে তাঁকে উঠতে সহযোগিতা করছে। ভদ্রলোকের দিকে একপলক তাকিয়ে তাঁর বুঝতে দেরী হলনা উক্ত ব্যক্তিই ষ্টেশানের ভিক্ষা দিতে আসা সেই তৃতীয় ভদ্রলোক। যাকে একটু আগেই বিরক্তি দেখিয়ে বলেছেন ‘প্রতিবন্ধী দেখলেই ভিখারী ভাববেন না, দয়া করুণা দেখাবেন না, পারলে সহযোগিতা করবেন’। সেই ভদ্রলোক কিনা বিনা অনুরোধেই তাঁকেই সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসছেন। কিছুটা লজ্জা পেল বটে। তবে ভদ্রলোক খুব সাবলীল ভাবে বলে উঠলেন ‘একটু আগে ষ্টেশানে তুমি যেই শিক্ষাটি দিয়েছিলে সেটিই পালনের চেষ্টা করলাম, সত্যি বলতে, তোমাকে ষ্টেশানে ভিখারী ভেবে যে পাপবোধ মনের মধ্যে নিমজিত হয়েছিল, তোমার কথা মত একটু সহযোগিতা করতে পেরে যেন সেই পাপের প্রায়শ্চিত্র করতে পারলাম। ভালো থেকো ভাই, জীবনে এই আত্মসম্মানটা বজায় রেখো। অনেকদুর যাবে তুমি।’         
    ______________________________

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • স্মৃতিচারণ | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩ | ৪৪৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন