হেনরি কিসিঞ্জারের মতো আন্তর্জাতিকভাবে ঘোষিত যুদ্ধাপরাধী গণহত্যাকারীকে মার্কিন মিডিয়া "বিতর্কিত এক মহানায়ক" বলে অবিচুয়ারি সাজিয়েছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস, সিএনএন, এমএসএনবিসি, এবং তথাকথিত লিবারাল মিডিয়া। এরা থাকতে অতি দক্ষিণপন্থীদের কী দরকার? এরা থাকতে ফক্স মারডক শন হ্যানিটি লু ডবসের দরকার নেই।
এরাই প্রোপাগাণ্ডার আসল খলনায়ক। এই দুদিন আগেই এমএসএনবিসি পত্রপাঠ তাদের তিনজন নামকরা মুসলিম অ্যাঙ্করকে পিঙ্ক স্লিপ দিয়েছে। সেই নিয়ে গুরুচণ্ডালীতে লিখেছিলাম। গার্বেজ বাহিনী স্টিংক বোমা সেখানেও ফেলেছিলো। তা ফেলুক। ওদের সিরিয়াসলি কেউ নেয়না আর।
নিউ ইয়র্ক টাইমস পড়লে তো মনে হবে ফিফ্থ এভিনিউতে নতুন ফ্রেঞ্চ রেস্তোরাঁ খোলা হয়েছে, এর চেয়ে বড় খবর আজ আর নেই।
তাদের পছন্দের শাসকরা হাসপাতালে বোমা ফেলে হাজারে হাজারে শিশুহত্যা করে যাচ্ছে।
ওই যে বলেছিলাম -- "জার্নালিজম অফ এক্সক্লুশন।"
কিসিঞ্জারের গণহত্যাও আমেৰিকাৰ মানুষদের কাছে এখন শুধু একটা ফুটনোট। মিডিয়া তাকে এখন শুধু এক "বিতর্কিত" মহান স্টেটসম্যান সাজিয়ে শুইয়ে রাখছে। জনগণ এসে মালা দিয়ে যাবে।
আসল কিসিঞ্জারের কথা মার্কিনি মিডিয়া আর বলবেনা। ঠিক যেমন গুজরাটের মোদী শাহের কথা ভারতীয় মিডিয়া আর কখনো বলেনা। ব্যাপারটা একই। "জার্নালিজম অফ এক্সক্লুশন।"
গণহত্যাকারী এখন শুধুই "বিতর্কিত" এক মহান স্টেটসম্যান।
কেউ আর জানবেনা, শুধু বাংলাদেশেই দশ লক্ষ মানুষের হত্যার জন্যে দায়ী এই "বিতর্কিত স্টেটসম্যান।" শুধু বাংলাদেশেই তিন লক্ষ নারীর ওপর পাশবিক অত্যাচারের মাস্টারমাইন্ড এই ওয়ার ক্রিমিনাল।
তারপর আছে ভিয়েতনাম। আছে চিলি ১৯৭১ -- ঠিক সেই বাংলাদেশের গণহত্যার সময়েই। পিনোশে নামক হিটলারকে একটানা মদত দিয়ে এসেছে এই মার্কিন এস্টাব্লিশমেন্ট আর এই বিতর্কিত স্টেটসম্যান। আছে দক্ষিণ আফ্রিকার নারকীয় অত্যাচার সেদেশের বাসিন্দাদের ওপরেই।
আছে ইন্দোনেশিয়ার জঙ্গী খলনায়ক সুহার্তোকে দেওয়া মদত। আচে দ্বীপপুঞ্জে সুহার্তোর মিলিটারি হাজার বিরোধীকে খুন করিয়েছিলো। আমার সে সময়ের রুমমেট জাফর হামজা সিদ্দিককে হাত পা বেঁধে খুন করে চোখ দুটো তুলে নিয়ে গিয়ে নদীর ধারে ফেলে রেখেছিলো সুহার্তোর বাহিনী। পিছনে ছিল মার্কিন মদত এবং কিসিঞ্জার।
আরো কত গল্প আছে এই বিতর্কিত অবিচুয়ারিকে নিয়ে। ইন্দিরা গান্ধী। বেনজির ভুট্টো। রাজীব গান্ধী।
"যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখো তাই পাইলে পাইতে পারো ইয়াংকি রতন।"
একবার সামনাসামনি দেখেছিলাম ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময়ে। সাউন্ড অফ মিউজিকের জুলী অ্যান্ড্রুজ আর এই কিসিঞ্জার।
একই মঞ্চে -- কেন?
আর যেখানে থাকুক শান্তিতে যেন রেস্ট না হয় ঈশ্বরের কাছে এই একমাত্র প্রার্থনা।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।