এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ইস্পেশাল  পুজো ২০১০

  • মধ্যরাতের কীট

    অরণ্য
    ইস্পেশাল | পুজো ২০১০ | ০১ অক্টোবর ২০১০ | ২০৮ বার পঠিত
  • ১.

    হে গাছ, তোমাকে বলছি শোনো, শুনতে পাচ্ছো কি, কীভাবে কুরে কুরে খেয়ে চলেছে শরীর, মধ্যরাতের কীট? কুকুরের চিৎকার শুনে, আমি বড়জোর কল্পনা করতে পারি মানুষের হাসি, যারা শেষরাতে ঘরে ফেরে, মাতাল। এর বেশি হলেই এসে যায় শ্মশান, যেখানে তুমিও পুড়তে থাকো নির্বিকার। আমাকে প্রশ্ন করো না এখন, একটা অদ্ভুত স্বপ্ন শেষে এই মাত্র জেগেছি! অগোছালো আমি তাকিয়ে আছি দূরে। জানি, প্রশান্তির কোন সংজ্ঞাই দিতে পারে না কেউ। তবুও বিশ্বাসী মানুষ, প্রিয় ঘুম। এতসব হট্টগোল শেষে পড়ে থাকে হাড়, আর সেদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে লালা ঝরায় পোষা কুকুর। তারপরও আমি ভালবাসি জাদুঘর, ভালবাসি সাপের খেলা, বোমারু বিমান, কসাইয়ের দোকান। বর্ণিল মোড়কে এভাবেই ফিরে আসে বাধ্যবাধকতা, আর টিভির পর্দায় সারাদিন ভেসে থাকে সুখ।

    শেষরাত পর্যন্ত আমি রোজ মৃত্যু প্রার্থনা করি, আর ভোরবেলা দেখি, ঘোড়া ছুটিয়ে খুব ছন্দে সামনে দিয়ে কেউ টেনে নিয়ে যাচ্ছে লাশ। হে গাছ তুমি কি দেখেছো, আমাদের সুনীল জলে, কীভাবে একটা কালো হাঁস অসংখ্য সাদা ফুল ঠুকরে ঠুকরে খাচ্ছে, আর অজস্র সাদা হাঁস বসে আছে একটিমাত্র কালো ফুলের পাশে? যে কোন দীর্ঘশ্বাসের পর মনে হয়, কোথাও যেন খসে গেল তারা, কারও শুভকামনা নিয়ে। প্রার্থিত রাতের চাঁদ, সেও আমার-ই মত মূর্খ, সহাস্যে জেগে থাকে। বেশ গুমোট হয়ে উঠেছে এখানে বাতাস! হে গাছ, তোমাকেই বলছি শোনো, শংকা ও ভয়হীন পৃথিবীর যে নাম আমি জেনেছি, তা সবুজ। অনেকটা তোমার-ই মত, পাতায় পাতায় ছেয়ে থাকে শরীর। আমাদের শীতের দিন ফুরিয়ে যায় না কখনও। হাড়ের ভেতর কাঁপন নিয়ে যে বেঁচে থাকা, তাকে এই নাম দেয়া যেতে পারে, হলুদ।

    ঝরে যাওয়াকে তবে সংজ্ঞায়িত করা হোক, আর বসন্তের দোহায় দিয়ে নতুন করে সাজানো হোক মঞ্চ। কেউ কখনও মরে না, এভাবেই ফুরিয়ে যায় নাটক। নির্লজ্জতা নিয়ে এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকি সমুদ্রের ধারে, আর প্রার্থনা করি, হে ডুবে যাওয়া সূর্য, পুনরায় ফিরে এসো। শব্দ সে তো ইথারের দাস। তবুও চিৎকার করছি, আর সমস্ত অপরাধীদের ধরে ধরে ঝুলিয়ে দিচ্ছি ফাঁসিতে। কে কার হাত ধরে ডেকে নিয়ে যায়, কে কার পিছু পিছু ফিরে আসে? বিভ্রান্তির শেষ পেরেক তুমি গেঁথে যাও মগজে, আমার আত্নার বিলাপ শেষ হয়ে গেছে। খুব শীতল একটা ঘরে এবার চুপচাপ শুয়ে থাকতে চাই। একটানা শুনতে চাই সেই সব ট্রেনের আর্তনাদ, যারা থেমে গেলে কাঙ্খিত শান্তি নেমে আসে, মনে হয়, হয়তবা এবার ফিরে আসবে প্রিয় মানুষ।

    হতাশ হতে হতে এভাবেই ফিরে আসে দীর্ঘশ্বাস, আর প্রাণের উপরে রেখে যায় হলুদ রং। হে গাছ, তোমাকেই বলছি শোনো, শিশুদের গাড়ি ঠেলে ঠেলে দেখেছি, তারা একেকটা রাক্ষস, ঘাড় ফিরিয়ে কেমন হাসতে হাসতে কামড়ে ধরে হাত। তারচেয়ে ললিপপ কিনে মুখে পুরি, ভাবি, কত না সুন্দর এই পৃথিবী। নাগরদোলা তুমিই ঈশ্বর, অসীম শক্তিশালী কালো গহ্বর থেকে বের করে এনেছো।

    হায়, প্রার্থনার সুর কখনৈ প্রাণ থেকে মোছে না, মোছে না আঁতুর ঘরের প্রথম ক্ষত। যে মানুষ আলো দেখে প্রথম কাঁদে, সে কীভাবে ভুলতে পারে আঁধার ছেড়ে বেরিয়ে আসার ক্ষোভ? বস্তুত, যে কোন প্রথম ক্ষোভ আজীবন থেকে যায়, যেভাবে থেকে যায় অবিশ্বাসী নারীদের দাঁত, ধারালো নোখ। আমি কল্পনা করি, হাত-পা বিহীন মানুষ, যারা বেড়ে উঠছে কুকুরের পেটে, আর পিতৃত্ব সনাক্তকরণের জন্য গড়ে তোলা হচ্ছে বিচারালয়। হাস্যকর এই যে, পৃথিবীর সমস্ত গর্ভধারিণীর ঋতুস্রাব বন্ধ হয়েছিল আগেই। তারপরও শিশু! হে গর্ভপাত তুমি ঝড় হয়ে এসো, তছনছ করে দিয়ে যাও গর্ভাশয়। আমিতো চাই, পৃথিবীর সব নারী বন্ধ্যা হয়ে যাক, সমস্ত পুরুষ নির্বীজ। এখানে বাতাস সত্যিই গুমোট হয়ে উঠেছে। হে গাছ, তুমি কি বুঝতে পারো না, হাড়ের মধ্যে কীভাবে ঘুমিয়ে আছে আমাদের পরিচিত সাপ।

    পাপ পাপ করে যেসব মিছিল প্রার্থনালয় থেকে বেরিয়ে আসে, তার পেছন পেছন অনেক বছর হেঁটে দেখেছি, জন্ম বিষয়ে আমাদের সবারই জ্ঞান সীমিত, এবং যেসব পিতৃপরিচয়ে আমাদের হাত নেই কোনো, তাকে ভালবেসে চলেছি অন্ধের মত। আমি পতিতালয়ের সেইসব শিশুদের সাথে খেলতে চাই, যাদের কারও কারও পিতার পেছন পেছন প্রার্থনালয় পর্যন্ত হেঁটেছি, আর ঘরে ফিরে ভেবেছি, শুভ্র পোশাক তোমাকে আমি সস্তা দরে বেচতে চাই। গণশৌচাগারের ভাষা, তোমাকে ঘৃণা করতে পারি না আর, ঘৃণা করতে পারি না নির্লজ্জ নারীদের মুখ। একটা প্রকৃত সাদা ঘর, তোমার জন্য আজীবন জমাতে চাই ভালবাসা, তারপর মূর্খ এক নারীর হাত ধরে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে চাই সে আকাশ, যার ওপারে থাকে না কোনো দীর্ঘশ্বাস।

    ২.

    হে গাছ, তুমি কি জানো, বিশুদ্ধ ঘুম কীভাবে স্বপ্ন থেকে মুছে দেয় ক্লান্তির ছাপ? আমার শরীরে এখন অজস্র ক্ষত। মরুঝড়ে হারিয়ে ফেলেছি পথ, আর কল্প-সমুদ্র নিয়ে এগিয়ে চলেছি শকুনের দেশে। শুনেছি সেখানে অনেক হাড়, মাংস ভুলে পড়ে থাকে রোদে। আমার এখন ছায়ার লোভ নেই কোনো। পালক উপড়ানো শকুনের মত খুঁজে চলেছি রক্তের স্বাদ। অবশেষে নিজেরই মাংস খুবলে খুবলে বের করে আনি কংকাল, যা বহুবছর আগে দেখা সেই মৃতের মত।

    হে গাছ, তুমি তো জানো, পোকামাকড়ের শব্দে কীভাবে ঘুম ভেঙে যায় আর নিজেরই আত্নার ফিসফিসানিতে কীভাবে হয়ে উঠি ভীত? তবুও উঠে দাঁড়াই, দেয়ালে হাত বুলিয়ে দেখি কতটা গাঢ় সেইসব প্রতিবিম্বের রং, যাদের হাতছানিতে এতদূর এসেছি। পবিত্র পালক হাওয়ায় নড়ে ওঠে আর নিজেকে ঘৃণার জন্য ভুলে যাই কান্নার স্বর। হে গাছ, শরীর এখন কাঠ, আগুন ছাড় সে কিছুই ভালবাসে না আর। এভাবেই ভাল আছি। বুকের ভেতর মরা পাতা, একমাঠ হলুদ ঘাস। পাথরের সংখ্যা বাড়ে, বাড়ে পরিচিত ডাহুকের ডাক। দৈত্য-দানো, তোমাদের সত্যিই ভালবাসি না এখন। আমার হাড় কালো হয়ে গ্যাছে, মরে গ্যাছে মাথার ভেতরের অবুঝ পোকা। প্রিয় ট্রেন সশব্দে ফিরে আসে না আর। থেমে থাকি আমি, থেমে থাকে পরিচিত ঘড়ি, আর পৃথিবীর সমস্ত ছায়া চিৎকার করে ওঠে একসাথে!

    হে গাছ, আমি জানি, তোমার ঘৃণা থেকে মুক্তি নেই কোনো। অনেক আগেই হারিয়েছি সবুজ পালক, মায়াবী নদী। জানি, কোনো কান্না-ই পারে না ধুয়ে দিতে সেইসব পাপ, যা নির্বিকার মিশিয়েছি জলে। বস্তুত, এখন আর শোক নেই কোনো, শুধু শরীর মেলে চুপচাপ শুষে নিচ্ছি আগুনের তাপ। তবুও স্বপ্ন দেখি, সুবিশাল পাহাড়ের চূড়ায় মেঘের কাছাকাছি আমি, উড়িয়ে চলেছি রূপকথার ঘুড়ি...

    ৩.

    অপেক্ষা করে আছি সময়, এই দ্যাখো আমার অসুখের বৃত্তান্ত, কেমন দিনের পর দিন ভারী করে চলেছে রুপোলি রঙের ডালা। ঘড়ি আর ঘন্টার ভেতর শুয়ে আছি একটানা, আর শরীর থেকে উড়ে যাচ্ছে ডানাহীন পাখি। বহুদিন কেউ ডাকে না জলে। শুকিয়ে যাওয়া হাড় লিখে চলেছে ফ্যাকাসে দিনলিপির পাতা। বন্ধ্যা-প্রেম, তোমার প্রসবযন্ত্রণা এখনও বাতাসের গায়ে এঁকে চলেছে ঝিনুকের গ্রাম, দেহাতি নারীর মুখ। আমি তবে কোন সমুদ্রপথে ফিরে এসেছি পাড়ে ? কোন পাহাড়ের গুহায় লুকিয়ে রেখেছি ঋতু ? মুগ্ধতা, পুনরায় হারিয়ে ফেলেছি হৃদয়। যে মোহ নিয়ে বার বার হেঁটে গেছি তার বাড়ির সীমাহীন পথ, সে মোহে বাসা বেঁধেছে পায়ুরোগ, ধর্ষকাম। আঁধারের গর্ভে আমি সযত্নে বুনে রাখি সাপের দাঁত। যে হরিণের চোখ আমাকে চিনতে পারেনি কখনও, আমি তার মুখে লেপে দিই কুমারীর রক্ত, ধর্ষকের লালা। ঘর্মাক্ত সিঁদুর মেখে বসে থাকি অপেক্ষায়, শুনেছি এবার পুজোয় নাকি নরবলি হবে।

    ৪.

    যন্ত্রণার নীল-গহ্বর এভাবে কেন গুছিয়ে রেখেছো পুরোনো ছাতা? তুমি তো অনেক আগেই চিনেছো গ্রহপথ, গ্যালাক্সির ব্যথা। তুমি কী দ্যাখোনি পৃথিবীর থালে কীভাবে খেয়ে গ্যাছে দ্বি-মুখী মানুষের মুখ? নদীর ধারে দাঁড়িয়ে কখনও ভাবতে নেই উঠোন। বস্তুত, জলের গভীরেই রয়ে গ্যাছে জীবনের প্রকৃত-পাঠ, প্রাচীন গাঁথা। রয়ে গ্যাছে অসংখ্য বিজ্ঞ-মাছ। তুমি তাদের কথা ভাবো, ভাবো কাদার কাছাকাছি যে দারুণ অন্ধকার, সেখানেও আছে সুন্দর ঘর, মাটির ঘ্রাণ। সেখানে নিশ্চিন্তে ভেসে বেড়ায় শিশুমাছ, শান্ত-সময়। ছোপওয়ালা হলুদ গামছা দ্যাখো, কীভাবে সে ঝুলে ঝুলে শুকিয়ে যায়, শুষে নিয়ে মানুষের তৃপ্তির দাগ। হে গাছ, এইখানে শুরু আমাদের বাল্যপাঠ। সরল বর্ণমালা দিয়ে ভরিয়ে দেবো পৃথিবীর পাঠশালা আর সারাদিন কেটে যাবে নামতায়।

    ৫.

    কারা আজ শব্দ করে চলে গেল এই উর্বর বালুকাবেলায়? কাদের পায়ের চিহ্ন মুছে তটজুড়ে পড়ে রইল মাছের আঁশ? প্রিয় মানুষ কোথায় তোমার সবুজ-ছায়া, ওষধি-গাছ? অসুখের নামতা গুনে গুনে আজ আমি প্রাচিন-বট, কোটরে যার বাসা বেঁধেছে বাদুড়ের ঘ্রাণ, পেঁচার চোখ। তুমি নেই তাই এখানে প্রলাপের হাট, মরুঝড়, কাটার বাগান। অনেক সুগন্ধিফুল ফুটে থাকে বালিশের তলায়। ঘুম আর স্বপ্নের মাঝামাঝি উড়ে বেড়ায় ময়ূর-পালক। কে তোমাকে আজ স্মরণ করি বিকেল বেলায়? কে তোমাকে ভাসিয়ে দিচ্ছি কাগজের নৌকা, ময়ূরপঙ্খী-নাও? বনৌষধির বাগান খুঁজে খুঁজে হারিয়ে ফেলেছি গোয়াল-ঘর, দীঘির ঘাট। আমড়াগাছের নীচে এখনও আমি সেই অপরাধী বালক, যে তোমার তেতুল-স্বাদ, একটু একটু করে লুকিয়ে রাখছে ডায়েরীর পাতায়।

    ৬.

    বলছি না আমি, এভাবে পার হওয়া যায় না সেতু, সবুজ-রক্তের নদী। টালামাটালো পায়েই তো হেঁটে এসেছি পাহাড়, গভীর অরণ্য, শত শত বধ্যভূমি। কুড়িয়ে কুড়িয়ে খেয়েছি হাড়, পোড়ামাটি, আর শুয়ে থেকেছি পাতার বাগানে, শেকড়ের ছায়ায়। অগুনিত উষঞ্ঝ-কাছিম নেমে এসেছে ঘুমে, আর জলের সমান্তরাল উড়ে গেছে অচেনা-পাখি অথবা সাপ। কত মাছ ছিল, ছিল কত আপ্লুত-হরিণ ও আরোগ্য-লতা, তবুও তো আমি অন্ধকার পথ চিনে ফিরে এসেছি কামারের গ্রামে। ফুটন্ত-ভাত আর রাক্ষসী আগুন, কত গভীর ঘুমিয়েছি হাপরের ধুনে। আমাকে বলে দেয়নি কেউ পথের হদিশ। শুধু ঘুম ভেঙে দেখেছি নতুন সূর্য আর হেঁটে গেছি সে পথে রোদের-ঘ্রাণ শুঁকে শুঁকে, যে পথে ছড়িয়েছিল পবিত্র-পালক ও পুঁথি।

    ৭.

    পোশাক শুকিয়ে নিলে কান্নার-ঘ্রাণ, গতির ভেতরে ঘুমিয়ে যায় নিষ্পাপ-শিশু। উলম্ব ঝুলে থাকে সিঁড়ির সংকেত, পেরেছি এসেছি নদী, সামনে আতরের দেশ। অদৃশ্য-সুগন্ধ আর তুলার আদর, ঘুম, ঘুম জাগরণে ভরে ওঠে শূন্য-শরীর। এ কোন ধ্বনি বাজে সাগরকিনারে, বিশাল কোন রাক্ষস কাঁদে অবোধ চিৎকারে? মোহ আর মোহনীয় ফলের যে দ্বীপ, ভেসে গেছে বহুদূর বাতাস-সুবাসে। আলোক, আলোক খেলা, খেলে শিশুদল, বিমুগ্ধ-পৃথিবী হেসে ওঠে পায়ের আঘাতে। আমাকে মুক্ত করো এই মরীচিকা বনে, মাটির বুনটে খুঁজে নিই অদৃশ্য-ঘর। লুকিয়ে লুকিয়ে রোজ নিজেকেই দেখি, দাঁড়িয়ে আছি চুপচাপ মাংসের দোকানে। হাড়ের গহীনে বসে ডাকে সেই পাখি, উড়েছিল যারা সব পরম-পাহাড়ে। ফসল, ফসল-ঋতু, নবান্ন-উৎসব, মাখছি কাদার-ক্বাথ মশাল-মেলায়।

    ৮.

    এইখানেই থেমে যাও মোহ-ঘোড়া, তোমার ছুটি। ফিরে পেয়েছি আমি সপ্তমুখি নদী, কাগজের নাও। হাওয়া-ঘড়ি দ্যাখো হাসছে কেমন পালের ছায়ায়, কম্পাসের নির্ভুল শিখরে। মিটে গ্যাছে জলের বিবাদ, কোলাহল, আর মূর্খ-অধিকার। রেখেছি চোখ চোখের গভীরে আর হাত থেকে পড়ে গ্যাছে দূরবীন জলের তলায়। ঐ তো দেখছি গ্রাম, কুড়েঘর, শিমুলগাছ, পাশাপাশি সব সরলরেখায়। ও মৃদু বাতাস, তুমি কি পারো না শোনাতে আমাকে সেই গান, যা গাইত আমার দাদীমা আর সারারাত আমি আকাশের গায়ে চরাতাম শুভ্রভেড়া? ও ঘুম, তুমি কি সত্যিই পারো না আর জাগাতে আমায় সকালবেলা, দীঘির পাড়ে রোদের আভায়, অনন্ত মুড়ি ও রসের নেশায়? কি করে আমি ফিরে পাব সেই গাড়ি, যা আমাকে নিয়ে ছুটত সারাবেলা? এখনও তো আমি দেখতে পাই নারকেলগাছ, বিশুদ্ধ তালপাতা। বাঁশি বাজে, বাজতেই থাকে ঘাসের ডগায়।

    কুমড়োফুল জানি তুমি এখনও হলুদ থালা ও জিহ্বায়। লোলুপ-হাত যেভাবে শিখেছিল ছিঁড়ে অথবা ছুঁড়ে দেওয়া, ও আমার গোপনসময় আমাকে ফিরিয়ে দাও আঙুল-কথা। লেপের ভেতরে বার বার ছিঁড়ে গ্যাছে স্বপ্নসুতা, আর নকশী-কাঁথা থেকে বেরিয়ে এসে রাক্ষস খেয়ে নিয়েছে আলোক-লতা। ও মোহ-ঘোড়া, আজ সত্যিই তোমার ছুটি, বহুদিন বাদে প্রাণ পেয়েছে আমার কাঠের-ঘোড়া।

    ৯.
    আমাকে শুদ্ধ করো নীল, করো শুভ্র কাপাসের তুলো। আজ সন্ধ্যা নেমেছে ঠিক, আর একঝাঁক পাখি উড়ে গেল, যারা ফিরেছিলো মায়া ও নেশায়। কত সুন্দর চাঁদ, যেন আকাশে উঠেছে ঝড়, হাসি আর ধুলোর। দূর দূর ছেয়ে আছে পালকের ঝালর, আর ডানার ওম থেকে দু'ফেআঁটা শিশির ঝরে গেল! হয়ত আকাশও আজ ফিরে পেয়েছে পঙ্খীরাজগুলো। কার কাঁধে চড়ে এগিয়ে চলেছে বালক? কোন বিস্ময়ে একজোড়া সুখি পা মাটিতে নেমে এলো? আমাকে অনুলিপি করো নীল, আকাশের ধুলো। দ্যাখো, কীভাবে ছড়িয়ে আছে কাগজের শরীর, নকশীআঁকা পথগুলো। এই বিনম্র সন্ধ্যার শান্ত সুরে, আমাকে ফিরিয়ে দাও সেই গান, যা আমার সন্তানদের জন্য তুলে রাখা ছিল।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ইস্পেশাল | ০১ অক্টোবর ২০১০ | ২০৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত প্রতিক্রিয়া দিন