এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  অর্থনীতি

  • বিনিময় হারের আকাশে কালবৈশাখির হানা ও আমাদের আপতকালীণ  প্রতিরক্ষা

    মোহাম্মদ কাজী মামুন লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | অর্থনীতি | ১৩ মে ২০২৩ | ৪২৪ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • কিছুদিন আগে এক আমদানি গ্রাহক বিনিময় হার শুনে চেয়ার থেকে প্রায় ছিটকে পড়ছিলেন, মাস খানেক আগে তিন গুন মার্জিন শুধে করা এলসি নিষ্পত্তিতে প্রায় পাঁচ টাকা বেশী দিতে হবে ডলার প্রতি – এ যেন ছিল তার কল্পণারও বাইরে! তাহলে তিনি ব্যবসা চালাবেন কি করে? তার কর্মচারীদের বেতন? সংসার? বাইরে তখন ধেয়ে এসেছে কালবৈশাখী।

    আমাদের বৈদিশিক মুদ্রার বাজারে এখন তীব্র দাবদাহ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আবার টাকার অবমূল্যায়ন করেছেন, ফলে আন্তঃব্যাংক বাজারে এই হার এখন ১০৬! কোন একটি ব্যাংক নাকি বিনিময় হার প্রকাশ করতে সাহস করছে না। আগুন নেভাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি অর্থবছরে কয়েক বিলিয়ন ডলার সরবারহ করেছে ব্যাংকগুলোকে। আশ্চর্য হল, ১৯৯৪ এর ২৪শে মার্চ বিনিময়যোগ্য করার পর ২০০৩ সালের পর থেকে ম্যানেজড ফ্লোট এর আওতায় রয়েছ  টাকা, কিন্তু গত ১৪ বছর মাত্র একবারই টাকার মূল্য বেড়েছে ডলারের বিপরীতে, এছাড়া প্রতি বছরই এর মূল্য কমেছে। আর এই সময়ে ২৫% মূল্য হারিয়েছে সে ডলারের কাছে। এদিকে তার বাণিজ্যক শরীকদের তুলনায় অতি, নাকি কম মূল্যায়িত, তার উপর পরিচালিত একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, টাকা সাম্যাবস্থার কাছাকাছি রয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে, বড়জোর কিছুটা অতিমূল্যায়িত বলা যেতে পারে। বাংলাদেশের মহামারি-সাফল্য একটি কারন হতে পারে ।
    ২০১৫ সালে একটি অসাধারণ পরিস্থিতির সন্মুখীণ হয়েছিলেন আমাদের মুদ্রানীতির কারিগরগণ। দশ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি ও ৬ বিলিয়ন ডলারের সেবা ঘাটতিকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের অতিকায়  প্রবাসী আয় প্রায় একাই গ্রাস করে চলতি হিসাবের সামগ্রিক ঘাটতিকে ১ বিলিয়ন ডলারে নামিয়ে এনেছিল। এদিকে অভ্যন্তরীন ১২% সুদ হারের তুলনায় বৈদিশিক ঋণ সস্তা হওয়ায় (লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফার রেইট ৫% ) বৈদিশিক ঋণের স্তুপ বাড়তে বাড়তে ৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। এছাড়া, প্রত্যক্ষ বৈদিশিক বিনিয়োগ ও সরবারহকারী প্রদত্ত ঋণ সুবিধাও চলমান ছিল। এসব কিছুর উপর ভর করে মূলধন ও আর্থিক হিসাব এতটা দানবীয় রূপ নিল যে চলতি হিসাবের ১ বিলিয়ন ঘাটতিকে আগাপাশতলা গিলে নিল এবং দেশের অর্থনীতিকে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের উদ্বৃত ব্যালেন্স অব পেমেন্ট উপহার দিতে সক্ষম হল। এই পরিস্থিতিতে আমাদের টাকার বিনিময় হারে নিম্নমূখী চাপ তৈরী হয়।
    এই সময়টিতেই ইন্ডিয়া ও চায়নায় রুপি ও রেনমিনবির বিনিময় হার ডলারের তুলনায় হ্রাস পেতে থাকে, যার প্রেক্ষিতে আমাদের দেশের রপ্তানিকারকরা টাকার অবমূল্যায়ন করার জোর দাবী তুলতে থাকেন। আমাদের মুদ্রা কৌঁশুলিরা বিনিময় হারের এই অবাস্তব ঊর্ধমুখী চাপের সামনে নির্বিকার থাকলেও একান্তই প্রাকৃতিক নিম্নমুখী চাপকে ঠেকিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা চালান অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে মাথায় রেখে। তারা বাজার থেকে রাশি রাশি ডলার কিনে নেন, ফলে টাকা শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা দূর হয়ে যায়। কিন্তু তৈরী হয় অন্য এক সমস্যা, ডলার কিনতে যেয়ে ব্যাংকগুলোকে টাকায় ভাসিয়ে দেয়া হয়; এই অবস্থায় মুদ্রাস্ফীতির যেকোন মাথা তোলাকে দমন করতে বাজার থেকে টাকা তুলে নেয়ার প্রয়াসে ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক বিল কিনতে বাধ্য করা হয়। তো ডলারের বিপরীতে টাকার অনাকাংখিত শক্তিবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতি  – দুই অসুখকে তো দমন করা গেল, কিন্তু কোন কিছুই নিখরচায় আসে না। ক্রয় করা ডলার বিনিয়োগ  করে ৩% পাওয়া গেলেও বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের জন্য দিতে হল ৪%। মানে, নেট লোকসান ১%।
    কিন্তু এই কৃত্রিম হস্তক্ষেপ না করে কি এগুনো যেত না? মনে রাখতে হবে, বিনিময় হার চাহিদা ও যোগানের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে ২০০৩ সালে শেকল তুলে দেয়ার পর। জোর করে দমিয়ে রাখলেও দীর্ঘমেয়াদে বাজার ঠিকই উসুল করে নেবে তার মূল্য। এই অবস্থায় দেশের মেগা প্রজেক্টগুলোতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও আমদানী উদারিকরনের মাধ্যমে  দেশের ডলারের চাহিদা তৈরী করাটা ছিল প্রাকৃতিক চিকিৎসা, এতে বাজার অর্থনীতিকে আহত করতে হত না, দীর্ঘমেয়াদে সুফল পাওয়া যেত, এবং বিপুল ব্যয়ের বোঝা কাঁধে তুলে নিতে হত না।
    বিনিময় হার হচ্ছে অর্থনীতির সেই পিরামিড বা ফিনিক্স পাখি যাকে ধরতে বা ভবিষ্যৎবানী করতে সব থেকে বেশী ব্যর্থ হতে দেখা যায় অর্থনীতির দিকপালদের। কারণ অর্থনীতির এই উপাদানটি সারা বিশ্বের সব ঘটনা দিয়ে প্রভাবিত হয়, বিশ্বের যেকোন প্রান্তের যেকোন ঘটনায় হাজার মাইল দূরের কোন দেশের মুদ্রাও নেচে উঠে ধেই ধেই করে। যেমন ধরা যাক, ২০০৭ এর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির কথা, সাব প্রাইম মর্টগেজ সংকটে সম্পূর্ণ নিমজ্জমান  একটি রুগ্ন অর্থনীতি সে তখন, তার মুদ্রা ডলারের মূল্য-হ্রাস ছিল প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রের জন্যও একটি সহজ অংক। কিন্তু যতই সংকট বিশ্বের দুয়ারে দুয়ারে ছড়িয়ে পড়ল, ততই আরো বেশী করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডলার শক্তি বৃদ্ধি করতে লাগলো - বন্ড কিনতে লাগল সারা দুনিয়ার সরকারগুলো, কারণ তাদের কাছে ডলার বন্ড ছিল নিরাপদ স্বর্গ, আর আপৎকালীন সময়ে তারা আরো বেশী করে এর নিরাপত্তা ছাতায় ঢুকতে চেয়েছিল।
    ১৯৯২ সালের ঘটনা।  ব্রিটেন একটা মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা তাদের ভাগ্য অপেক্ষাকৃত সুস্থ দেশগুলিতে যাচাই করে দেখতে চাচ্ছিল, ফলে হাতে থাকা ব্রিটিশ পাউন্ডগুলো বিক্রি করতে শুরু করল, পাউন্ডের দাম পড়ে গেল বিনিময় হার বাজারে ভয়ানকভাবে, এমনকি ‘ইউরোপিয়ান এক্সচেঞ্জ রেইট মেকানিজম (ইআরএম)’ -এর সদস্য মুদ্রা হিসেবে তার জন্য যে বিনিময় হার বরাদ্দ ছিল, তার নিরাপদ সীমার নীচে চলে যাওয়ার আশংকা তৈরী হল। তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জন মেজর সেই সময় জাতিকে তার সরকারের দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথা জানিয়ে বললেন, পাউন্ডকে রক্ষা করতে যা কিছু দরকার করা হবে। ব্রিটিশ সরকারের হাতে সেসময় ছিল দুটি অস্ত্র; একঃ সে তার হাতে থাকা বৈদিশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছেড়ে দিয়ে পাউন্ড কিনে নিতে পারতো এবং এভাবে পাউন্ডের কৃত্রিম চাহিদা তৈরী করে এর মূল্য পতন ঠেকাতে পারতো। দুইঃ সে মুদ্রানীতির কলাকৌশলকে কাজে লাগিয়ে সুদ হার বাড়িয়ে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের ডেকে নিয়ে আসতে পারতো ব্রিটিশ বন্ড কিনতে, সেক্ষেত্রে বিদেশী মুদ্রা ভাঙ্গিয়ে পাউন্ড কেনার জন্য লাইন লাগতো আর এভাবে পাউন্ডের কৃত্রিম চাহিদা তৈরী হত ও দর পতনকে রুখে দেয়া যেত। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার এ দুটো তীরের একটিও ছুঁড়তে সফল হয়নি, কারন ইতোমধ্যেই সে রিজার্ভ খুইয়ে বসেছিল পাউন্ড কিনতে যেয়ে, আর মন্দার সময়ে যেখানে সুদ হার কমিয়ে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যকে প্রনোদিত করা দরকার সে সময় সুদ হার বাড়ানো আত্মহত্যার শামিল হত। ফলে সেপ্টেম্বর ১৬, ১৯৯২, যাকে ‘ব্ল্যাক ওয়েডনেসডে’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়, ব্রিটিশ সরকার পাউন্ডের নির্ধারণ করে দেয়া সীমার মধ্যে থাকতে ব্যর্থ হয়ে  ‘ইআরএম’ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়, আর ইতিহাসের সব থেকে বিখ্যাত মুদ্রা কারবারী জর্জ সোরোস, যে কিনা অর্থনীতির মানচিত্র পড়তে পারতেন খুব ভাল করে এবং স্পষ্ট দেখতে পেয়েছিলেন পাউন্ডের উচ্চ দালান থেকে সো সো করে কংক্রিটেরর রাস্তায় লুটোপুটি খাওয়া, অক্টোবরের একটি একক কর্মদিবসেই পকেট ভর্তি করে নেন প্রায় এক বিলিয়ন ডলার দিয়ে। 
    আদর্শ অর্থনীতির দাবি, বিনিময় হারের গাড়ি চলবে ক্রয় সক্ষমতা সমতা নীতি মেনে, মানে, আমাদের দেশে এক ঝুড়ি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে যে টাকা লাগবে তা সমান হবে বাইরের কোন দেশের সেই পরিমান মুদ্রার যা দিয়ে সমজাতীয় পণ্যের ঝুড়ি কেনা যাবে। কিন্তু পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতা ছাড়াও বিশ্বের দেশগুলির আপত্তি রয়েছে এই সমতার নীতিতে বাঁধা পড়তে। দ্যা ইকোনোমিস্ট ম্যাকডোনাল্ডের বিগ ম্যাকের ভিত্তিতে রেনমিনবির ক্রয় ক্ষমতা নির্দেশিত মূল্য বের করেছিল ৩.৮৬ রেনমিনবি ১ ডলারের বিনিময়ে, কিন্তু অফিসিয়াল বিনিময় হার ছিল ৬.৪৩, যা আসলে চায়নার মুদ্রা নীতির কারণে ঘটেছিল, চায়নার অর্থনীতি রপ্তানি নির্ভর ছিল, আর সে সবসময়ই বিনিময় হারকে অবমূল্যায়িত রেখেছিল। অবমূল্যায়িত মুদ্রা রপ্তানিকে সাবসিডাইজ করে বা প্রনোদিত করে এবং আমদানির ভোক্তাদের উপর কর আরোপ করে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্ড কোম্পানি সেই একই আয়ই করবে, তার মুদ্রা বাংলাদেশের তুলনায় দুর্বল হলেও, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সস্তায় আমেরিকান গাড়ি কিনতে পারবে, আর আমেরিকান ফোর্ড কোম্পানিও লাভবান হবে, মানে সব পক্ষ লাভবান হবে। তবে ডলার জাপানের মুদ্রার কাছে কাছ মূল্য হারালে, আমেরিকান ফোর্ড তার দেশের গাড়ি বিক্রয়েও সুবিধা পাবে, , জাপানি গাড়ি এমনকি যদি দাম নাও বাড়ায়ও, তাও আমদানি খরচ বেশী হওয়ায় আমেরিকানরা কম টয়োটা কিনবে আর বেশী ফোর্ড কিনবে, এক্ষেত্রে  জাপান ক্ষতিগ্রস্ত হবে হয়তো, বৈদিশিক মুদ্রা কম পাবে, কিন্তু আমেরিকান ফোর্ড প্রতিযোগিতা সুবিধা ভোগ করবে, এক্ষেত্রে অবশ্য ডলারের মূল্য হ্রাসে সব পক্ষের লাভ নিশ্চিত হবে না। এভাবে মুদ্রার মূল্য হ্রাস রপ্তানিকারক বা উৎপাদনকারীদের সুবিধা দেয়, নিজ দেশের আমদানীকারকদের ক্ষতি করে, অন্য দেশের আমদানিকারকদের সুবিধা দেয়।  
     
    বিগত অর্থবছরের প্রথন নয় মাসে,  আমদানী গত বছরের ৪২.৭৭ থেকে বেড়ে ৬১.৫২ বিলিয়ন ডলারে, রপ্তানি গত বছরের ২৭.৫৫ থেকে বেড়ে ৩৬.৬২ বিলিয়ন ডলারে এবং রেমিট্যান্স গত বছরের ১৮.৬০ থেকে নেমে ১৫.৩ বিলিয়ন ডলারে অবস্থান করছে। একই সময়ে আমাদের  বাণিজ্য ঘাটতি ২৪.৯০ বিলিয়ন ডলার এবং চলতি হিসাব ঘাটতি ১৪.০৭ ডলার যা ভেঙ্গে দিয়েছে পূর্বের সব রেকর্ড। ব্যালেন্স অব পেমেন্ট ৩.১০ বিলিয়ন ডলার ঋণাত্বক রেখায় অবস্থান করছে যা গতছরই ৬.৯৯ বিলিয়ন ডলার ধ্বনাত্মক স্মরনীতে ছিল। বর্তমান ধারা বজায় থাকলে বছর শেষে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াত আমদানি, ফলে হাতে বৈদিশিক মুদ্রা আর থাকতো কিনা সন্দেহ!  তবে চলতি হিসেবের ঘাটতি বা উদ্বৃত্তি আসলে অর্থনীতিবিদগনের কাছে কোন অর্থ বহন করে না। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র বড় ধরণের চলতি হিসাব ঘাটতে দেখে যাচ্ছে ফি বছর, সেখানে দ্রব্যাদির গুনগত মান বা প্রতিযোগিতামূলক শ্রমিক দক্ষতায় যুক্তরাষ্ট্রের থেকে যোজন যোজন পিছিয়ে থাকার পরেও বতসোয়ানা ও আজারবাইজানের চলতি হিসবে বড় ধরণের উদবৃত্ত ছিল ২০১৭ সালে। একটি দেশের চলতি হিসাব ঘাটতি না উদ্বৃত্ত দেখাবে তা নির্ভর করে অনেক সময় দেশটির ইচ্ছে বা নীতিকৌশলের উপর। যেমন, কোন দেশ যদি যা উৎপাদন করে তার থেকে কম ভোগ করে, তাহলে তার স্বভাবতই উদ্বৃত্ত থাকবে। অন্যদিকে, ধরা যাক, কোন দেশ ১০০ টাকার পণ্য আমদানি করল, কিন্তু তার কাছে রপ্তানি করার মত আছে মাত্র ৫০ টাকা, তাহলে ঘাটতি দেখা দেবে চলতি হিসেবে, যে ঘাটতি মেটাতে কোন দেশের কাছ থেকে ঋণ করতে হবে অথবা বিক্রি করে দিতে হবে রিয়েল এস্টেট বা বন্ড বা স্টক। ঋণের ক্ষেত্রে সুদ গুনতে হবে, আর সম্পদ বিক্রির ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ ভাড়া আয় বা সুদ আয় হারাতে হবে। মানে, উভয় ক্ষেত্রেই বর্তমান ভোগ চাহিদাকে মূল্য দিতে ভবিষ্যৎ আয় কমিয়ে দিতে হবে। সাধারণত আত্মশুদ্ধি পদ্ধতিতে এই ভারসাম্যহীনতাগুলি দূর হয়।
    আমাদের বিনিময় হারের বাজারে দাবানল ছড়িয়ে পড়ার কারণ বর্ধিত ঋণ চাহিদা, প্রনোদনা ঋণ সরবারহ, বর্ধিত মূল্যের আমদানি, বর্ধিত আমদানি রপ্তানির তুলনায়, কম রেমিট্যান্স । আমরা বিগত বছর প্রবৃদ্ধি টার্গেট ৭.৫ কে ছাড়িয়ে যাচ্ছিলাম, আমাদের উৎপাদন খাত ১২.৮৭ ভাগ বেড়েছিল। যেখানে আমাদের ব্যক্তি খাত ভোগে দেখিয়েছিল ১৩.১৮ ভাগ প্রবৃদ্ধি। আমাদের বিনিয়োগ হার মাত্র ২৩.৭ শতাংশ জিডিপির, রপ্তানি বাড়লেও ভোগ খেয়ে ফেলছে বেশীর ভাগ অর্জিত বৈদিশিক মুদ্রা মাঝ পথেই, আমাদের সঞ্চয় গত দুবছরের ভাঙা হচ্ছে। বিগত বছরয়ের এপ্রিল ৩০শে আমাদের বৈদিশিক মুদ্রার মজুদ ছিল ৪৪ বিলিয়ন ডলারে, যা ৩০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে সম্প্রতি। মাত্র তিন মাস দেশের সংসার চালাতে সক্ষম এই মজুদ। অথচ আমরা বছর দুয়েক আগেও সারা বছরের মজুদ হাতের রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছিলাম।   বৈশ্বিক ঘটনা যেমন বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধ আমাদের মুদ্রার উপর চাপ সৃষ্টির পায়তারা করছে। কিন্তু আমাদের নিজস্ব ব্যর্থতাও আছে। দেবপ্রিয় ভট্রাচার্য বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের দুর্বলতম দেশ বিনিময় হারের যথাযথ তদারকি ও নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রে। দুবাইসহ মধ্যাপ্রাচ্যে বড় ব্যবসায়িরা দপ্তর খুলেছেন বড়রা আমদানী রপ্তানি ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং ও ছোটরা হুন্ডির আশ্রয় নিচ্ছেন অর্থ পাচারে । গত জুনে ইতিহাসের রেকর্ড ভেঙ্গে অতিরিক্ত তারল্য পৌঁছেছিল ২,৩১,৪৬২ কোটি টাকায়। তখন ২ শতাংশ রেমিট্যান্স প্রনোদনা প্রত্যাহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু রেমিট্যান্স ঠিকমত কাজে লাগাতে ব্যর্থ হলে, সেই ব্যর্থতার যন্ত্রটার নয়।  বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২০-২০২১ বার্ষিক প্রতিবেদনে আভাষ দেয়া হয়েছে, ব্যাপ্তমান তারল্য ও নিম্ন সুদ হার আর্থিক বাজারকে অস্থিতিশীল করার সমূহ সম্ভাবনা।   
     
    বাংলাদেশ তার ইতিহাসের সব থেকে বেশী বৈদিশিক সাহায্য ৬.৭৯ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে বিগত অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে। এর মধ্যে ৬.৬১ বিলিয়ন ডলার হচ্ছে ঋণ, বাকিটা অনুদান। এই সময়ে ১.৫৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ। বর্তমানে পাইপলাইনে আছে ৫০.৩৬ বিলিয়ন ডলার। গত পাঁচ বছরে বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণ দ্বিগুণ হয়েছে, সামনে এই ঋণ পুনর্জাগরনের  সম্ভাবনা কম যেহেতু বিদেশী ঋণদাতা বর্ধিত সুদ হার ও বিশ্বাসযোগ্যতার কারণে শিল্পোন্নত দেশগুলিতে চলে যেতে পারেন। ফলে ডলারে উপর চাপ বাড়ার সমূহ সম্ভাবনা অদূর ভবিষ্যতে বিশেষত যখন প্রকল্প ঋণ পরিশোধের বিলম্বিত সময়সীমা শেষ হতে যাচ্ছে। আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, রাশিয়া, তুরস্ক, দক্ষিন কোরিয়া, থাইল্যান্ড, আইসল্যান্ড – এই দেশগুলোর মধ্যে কোন সাংস্কৃতিক বা জলবায়ুগত মিল নেই, কিন্তু তারা সবাই এক কাতারে দাঁড়িয়ে থাকবে ইতিহাসের মুদ্রা আলোচনায়, কারণ প্রতিটি দেশই প্রথমে বিপুল বৈদিশিক ঋণের সায়রে ভেসেছে, এরপর এক সময় প্রবল বুদবুদে মুদ্রার মান নেমে গিয়েছে তরতর করে, প্রচন্ড শংকায় বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আরো দাম হারানোর আগেই তাদের মুদ্রা বিক্রি করে পালানোর চেষ্টা করেছে, এই করে মুদ্রা আরো তলানিতে ঠেকেছে। এক সময় দেশগুলো বিশ্ব দরবারে হাত পেতেছে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষনা করে।  আইসল্যান্ডের বিদেশী তহবিলের উপর এত তীব্র আকর্ষণ ছিল যে,মানুষ একটি গাড়ি হলেও ইউরো বা ইয়েনে ক্রয় করতো।  
    অনেক মুদ্রা কুশীলব মনে করেন, আরও বড় পরিসরে অবমূল্যায়ন করা দরকার টাকা ডলারের বিপরীতে, কারণ তাহলে আমদানির প্রবৃদ্ধি ৪৬ থেকে ৩০ শতাংশে নামানো যাবে এবং মানুষের চাহিদাও নিয়ন্ত্রিত হবে। আর না হলে, কার্ব মার্কেটে চলে গিয়ে রেমিট্যান্স দাবানল ছড়িয়ে দেবে। এদিকে মুদ্রাস্ফীতি ৬.২২% পৌঁছে গেছে যা ১৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। একদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য, জাহাজ ভাড়া আকাশচুম্বী; অন্যদিকে আমাদের ভোগ্যপণ্য আমদানি নির্ভর - শিল্প খাতের জন্য বিপুল পরিমাণ কাচামাল, মধ্যবর্তী পণ্য ও পুজি যন্ত্রপাতি আনতে হয়। কিন্তু  দেশের মানুষের এই মূল্যস্ফীতি সহ্য করে যেতে হবে মনে করেন মুদ্রা কৌঁসুলিরা যদি  শ্রীলংকার মত  বৈদিশিক মুদ্রার অভাবে দেউলিয়া হয়ে না যাওয়ার ইচ্ছে থাকে। কর হার কমিয়ে, খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি, নগদ সহায়তা, সামাজিক নিরাপত্তা ইত্যাদি বাড়িয়ে মানুষকে মূল্যস্ফীতির দাহ থেকে কিছুটা বাঁচানোর পরামর্শ তাদের।  
    এদিকে বিলাস দ্রব্যের উপর ৭৫ শতাংশ ও অপরিহার্য নয় এমন দ্রব্যের উপর ৫০ শতাংশ মার্জিন আরোপ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নীতি নির্ধারনী মহলে, ব্যয় সংযমের একটি রব শোনা যাচ্ছে, দ্রুতই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে এই ঢেউ। কেউ কেউ বিলাস দ্রব্য  আমদানী নিষিদ্ধ করার কথাও ভাবছেন, মেগা প্রকল্প স্থগিতের চিন্তা করছেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যবসা বা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর কি হবে? আসলে এগুলো সবই বাজার বহির্ভূত হস্তক্ষেপমূলক পদক্ষেপ। আমদানিকে ব্যয়বহুল করে একে কমানো সম্ভব নাও হতে পারে, মানুষ তো পেয়াজ খেয়েই যায়, যতই নীতি নির্ধারকরা এর অনুপযোগীতার কথা প্রচার করুক। অন্যদিকে, শিল্প উৎপাদন না বাড়লে, মার্জিন বাড়িয়ে বা ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য বাড়িয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রন করা যাবে কি? তাছাড়া, মেগা প্রকল্পগুলোতে যে বিপুল শ্রমিক কাজ করেন, তারাই বা কই যাবেন রাতারাতি বন্ধ করে দিলে? টাকার উপুর্যুপুরী অবমূল্যায়নে জরুরী পণ্যের সরবারহ সংকট-সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় কি? 
    বাংলাদেশের অর্থনীতির ৩০% বিশ্বের সাথে বাঁধা আমদানি ও রপ্তানির মাধ্যেমে। ১৯৭০ এর পর  ‘স্ট্যাগফ্লেশান’ এর এই যুগে যখন উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও নিম্ন প্রবৃদ্ধি বিরাজিত শিল্পোন্নত দেশগুলিতে, তখন বিনিময় হারের অবমূল্যায়ন করেই অর্থনীতির ফুসফুস অক্ষত রাখা দুরাশা হতে পারে।  মার্চের একটি হিসাব অনুযায়ী, সরকারের ‘ফিস্কাল স্পেস’ রয়েছে সর্বোচ্চ ৯৪৯০০ টাকা ও সর্বনিম্ন ২৮৫০০ টাকা, যদি ধীর বাজেট বাস্তবায়নকে বিবেচনায় নেয়া হয়। যদি রপ্তানিকারকদের সুবিধা দিতেই হয়, এ জায়গা থেকে দেয়া যায়। আর্থিক স্পেসকে কাজে লাগিয়ে প্রয়োজনীয় খাদ্য আমদানীতেও প্রণোদণা দেওয়া যেতে পারে। অনেকের মতে ২০২১ সালে, যে ৬ লাখ প্রবাসী শ্রমিক ফিরে গেছে কর্মস্থলে, তাদের প্রত্যাবাসিত অর্থে রেমিট্যান্স গতি পেতে যাচ্ছে সামনে। তাদের জন্য প্রনোদণা ৩% পর্যন্ত করা যেতে পারে। এদিকে সুদ হার বাড়ালে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বিনিময় হারকে কাংখিত স্বস্তি যোগাতে পারে।
    রফতানি নির্ভর পোশাক শিল্প, যা আমাদের রপ্তানির ৮১%, তার বেশিরভাগ কাঁচামালই আমদানি করতে হয়, নিট পোশাকে এ নির্ভরতা কমে এলেও ওভেন খাতে প্রায় ৮০ শতাংশ কাঁচামাল আমদানি করতে হয়, তাই বিনিময় হারের বল্গাহীন অবমূল্যায়ন হলে রপ্তানিরও শিরোঃপীড়া ঘটতে পারে। তাছাড়া, বিদেশী আমদানিকারক বাংলাদেশের অবমূল্যায়িত মূল্যের প্রেক্ষিতে তাদের মূল্য সমন্বয় করতে পারে। আসলে রপ্তানি বাড়ানোর প্রাকৃতিক তরিকা হল নতুন পণ্য ও  নতুন বাজার অনুসন্ধান। যেখানে ২০১৯-এ এলডিসির রপ্তানি জিডিপির অনুপাত ২৩.৩৮ শতাংশ, বাংলাদেশে তা ১৫.৩২%। রপ্তানি পন্যের কেন্দ্রীকরণ অনুপাত ২০২০-এ বাংলাদেশে ছিল ০.৪ যেখানে এলডিসিতে ০.১৮ । গত এপ্রিলে ৪.৭৩ বিলিয়ন ডলার বৈদিশিক মুদ্রা উপহার দিয়েছে রপ্তানি খাত ৫১% প্রবৃদ্ধির উপর ভর করে। ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, ভিয়েতনাম, মায়ানমার, ইথিওপিয়া থেকে অর্ডার আমাদের দেশে আসছে, যেহেতু কভিডে আমরা ভাল করেছি, কিন্তু রপ্তানিকারকরা সতর্ক যেহেতু অর্ডার নেয়ার পর সুতা, কাপড় এবং কেমিক্যালে বেশী মূল্যের কারণে ক্ষতি গুনতে হয়েছে। ‘ভবিষ্যৎ চুক্তি’ করে পণ্য মূল্য একটা নির্ধারতি মূল্য আগে থেকেই নিশ্চিত করে নিলে, এ অনিশ্চয়তা এড়ানো সম্ভব।  
    ২০১৮ সালের শুরুতেও তুরস্কের রিজার্ভ ছিল ১৬৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি যা এ বছরের শুরুতে নেমে আসে ৯ বিলিয়ন ডলারেও নীচে। লিরার অবমূল্যায়ন ঠেকাতে গত বছর ব্যাপক হারে রিজার্ভ মুদ্রা বিক্রি করে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক, কিন্তু এতে কোন কাজ হয়নি, ডলারের বিপরীতে লিরা মূল্য হারিয়েছে ৪৪ শতাংশ। উল্টো রিজার্ভ শূণ্যের কোঠায় নিয়ে এসেছে। দু দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের আমলে ব্যাপক উন্নয়নের দেখা পেয়েছে দেশটি, সামনের বছর নির্বাচনেও তারা জয়লাভের আশা করছে, কিন্তু লিরার মান কমায় নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার ও জ্বালানি আমদানিতে বড় চাপ তৈরী হচ্ছে, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মূল্যস্ফীতি, অথচ দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহারে ৫ শতাংশে কমিয়ে রাখতে বদ্ধ পরিকর। তাদের মতে, বর্ধিত সুদ হার সুবিধাভোগী ও যাবতীয় নষ্টের গোড়া। অন্যদিকে, ভয়াবহ ডলার সংকটে পড়া শ্রীলংকা ২০২০ সালের মার্চে গাড়িসহ আমদানিতে বিস্তৃত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যাতে দেশটির নাগরিকদের কাছে বাড়ির চেয়েও গাড়ি বেশী ব্যয়বহুল হওয়ার মত বিষ্ময়কর দৃশ্যের অবতারণা হয়। কিন্তু যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য ডলার সাশ্রয় করার পরিকল্পণা হয়েছিল, তা কিন্তু বাড়তেই থাকে। দেশটি কিন্তু ঋণখেলাপি হওয়া এড়াতে পারেনি।
     
    বিনিময় হার যদিও মুদ্রানীতির উপাদান, কিন্তু একে মেরামত করতে এখন মুদ্রা ও রাজস্ব উভয় নীতির যন্ত্রপাতি প্রয়োগ করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বিনিময় হারের খুব বেশী অবমূল্যায়ন শ্রীলংকার মত জ্বালানি দুষ্প্রাপ্যতা ঘটিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে যা যে কোন নিরাময় প্রচেষ্টাকে কঠিন করে তুলতে পারে। আবার, তুরস্কের মত দিগ্বিদিকশূণ্য হয়ে অবমূল্যায়ন ঠেকানোর প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে, ডলার বিক্রি থেকে প্রাপ্ত ৩২,৫০০ টাকা দীর্ঘদিন পড়ে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে।  বিনিময় হারের অবমূল্যায়ন করলেই আমদানি কমবে, আর বৈদিশিক মুদ্রার মজুদ বেড়ে যাবে, এমন কোন স্বতঃসিদ্ধ সূত্র নেই অর্থবিজ্ঞানে। আর  মুদ্রার সঞ্চালন বা বিয়োজন বা শুষে নেয়ার কাজ সব সময়ই সাময়িক ডোজ হতে পারে সংকটাপন্ন অর্থনীতিকে প্রাণের স্পন্দন দিতে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে সেগুলো সব সময়ই অকার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। যদি একটি দেশের মুদ্রাকে ব্যাপক পতনের হাত থেকে রক্ষা করতে হয় তাহলে রপ্তানি বা প্রবাসী আয় বা বিদেশী বিনিয়োগ এর মত দীর্ঘমেয়াদী রস যোগাতে হবে অর্থনীতির শিরা উপশিরায়, শুল্ক বা অশুল্ক সব বাণিজ্য বাঁধার বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে উপযুক্ত প্রতিষেধক, প্রয়োজনীয় আয় তুলে আনতে ব্যর্থ অর্থনীতির সূত্রে অদক্ষ বলে প্রমানিত প্রকল্প ব্যয়ের হিড়িক, ঘুষ বাণিজ্য, অনিয়ন্ত্রিত ভোগ ইত্যাদির বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে শক্ত প্রতিরোধক।  

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ১৩ মে ২০২৩ | ৪২৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন