৩) ফিচেল বর (এদের জীবনের এক এবং একমাত্র উদ্দেশ্য এবং পরমার্থ হচ্ছে বৌয়ের লেগপুলিং করা। এদের যেদিন অফিস ছুটি থাকে সেদিন এরা সারাদিন ধরে শুধু বৌয়ের পেছনে লাগে। এরা বৌকে নানাভাবে রাগিয়ে নির্মল আনন্দ লাভ করে। জীবনে একটি বা দুটি শ্যালিকা থাকলে এদের প্রাণে আনন্দ আর ধরে না - শুধু আরেকটি প্রাণীর পেছনে লাগার সুযোগ পাওয়া যাবে এই খুশিতে। By the way, প্রিয় পাঠককূল, আমারটি হচ্ছে এই ভ্যারাইটির প্রাণী। )
৪) রোম্যান্টিক বর ( সবচেয়ে দামী ভ্যারাইটি - তাই সহজলভ্য নয় সবসময় )
৫) মায়ের পোলা বর (এদের কাছে কোন ন্যায়-অন্যায় নেই, ভালো-মন্দ নেই, ঠিক-বেঠিক নেই। শুধু মা আছে।)
৬) সিরিয়াস বর (এরা সর্বদাই কোনো অজ্ঞাত কারণে গম্ভীর হয়ে থাকে। এদের সাথে ঠাট্টা-ইয়ার্কি করতে গেলে এমন ভাব করে যেন তারা world hunger বা world poverty-র কোনো permanent solution বার করছে - এসময় তরল হাসি-ঠাট্টা করলে গর্হিত অপরাধ করা হবে। কিন্তু কোনো ‘কাজের কাজ’ করার প্রমাণ দেখাতে এরা কখনোই পারেনা।)
৭) পড়ুয়া বর (এরা সর্বদা বই মুখে করে বসে থাকে। এরা বইতে এতটাই বুঁদ হয়ে থাকে যে বই পড়ার সময় জগৎসংসার ভুলে যায়। এরা সাধারণত নিজেদের দিকে নজর দেয় না - খেতে দিলে খায় তাও বই হাতে নিয়ে বসে। এরা চুল আঁচড়াতে প্রায়ই ভুলে যায় আর জামাকাপড়ের পারিপাট্য এদের কাছ থেকে আশা করাটাও বোকামির পরিচয় হিসেবে গণ্য করা হয়। এরা প্রথম জীবনে মা এবং বিবাহ-পরবর্তী জীবনে সম্পূর্ণভাবে বৌয়ের ওপর নির্ভরশীল হয় - তাই যত্নশীলা পত্নী না পেলে এরা জীবনে খুব বিপদে পড়ে যায়। এদের বেশিরভাগেরই কোনো বিষয় নিয়ে কোনো ঝামেলা করার মনোবৃত্তি থাকেনা। অনেক বৌয়েরা এই বিশেষ ভ্যারাইটিকে খুবই পছন্দ করেন। এদের একটি উপপ্রজাতি হচ্ছে
‘রিসার্চার বর’ - এদের বৌদের দুঃখ শুধু সমগোত্রীয় বৌয়েরা বোঝে বলে শুনতে পাওয়া যায়।)
৮) ইমম্যাচিওর বর (এদের ধারণা পৃথিবীর সব সমস্যার সমাধান পাবজি খেলে, নিত্যনতুন ইলেট্রনিক গ্যাজেট কিনে, swiggy / zomato থেকে খাবার অর্ডার করে, বা এদের বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বেরিয়ে, বা বৌ-এর সাথে হাসি-ঠাট্টা করে হয়ে যাবে। এদের প্রিয় ডায়লগ হচ্ছে – ‘সব ঠিক হয়ে যাবে।‘ কিন্তু কিকরে ঠিক হবে জিজ্ঞেস করলে এরা তার উত্তর দিতে পারে না। কিছু কিছু রিসেন্ট সার্ভে অনুযায়ী এদের সংখ্যা আজকাল ডেঞ্জারাসলি বেড়ে গিয়েছে। )
৯) জ্ঞানদাতা বর (এদের কোনো রস-কষ নেই… শুধু নানা বিষয়ে জ্যাঠামশাই-মার্কা জ্ঞান ঝাড়ে সারাদিন। এদের ধারণা এরা ছাড়া কেউই কোনো কিছু জানেনা। এদের বৌয়েরা প্রায় সর্বদাই অসুখী হয়।)
১০) আহ্লাদী বর (সারাদিন মান-অভিমান করে। তবে এদের প্রিয় খাবার রান্না করে খাওয়ালে বা পছন্দের জিনিস কিনে উপহার দিলেই এরা সাধারণতঃ ঠান্ডা হয়ে যায়।)
১১) উদাস বর (এদের মোক্ষপ্রাপ্তি হয়ে গিয়েছে পৃথিবীতে। এদের কোনো বিষয়েই কোনো মতামত বা বক্তব্য থাকেনা। বৌ, মা, বা বাড়ির যে কেউ কোনো ব্যাপারে এদের ইনপুট চাইলে এদের প্রিয় ডায়লগ হচ্ছে – “যা মনে হয় করো / যা ভালো বোঝো করো - কিন্তু আমাকে টেনো না।“ এদের কোনো ব্যাপারে আজ অবধি উৎসাহিত হতে দেখা যায় নি। এদের তেমন কোনো বন্ধুবান্ধবও থাকেনা।)
১২) চা-তক বর (এরা সারাদিন শুধু চা খেতে চায়। বাড়িতে থাকলে এরা অনায়াসে বৌকে তিরিশ চল্লিশ বার চা করার হুকুম দিয়ে থাকে। তাই এরা অফিসে গেলে এদের বৌদের হাড় জুড়োয়। এদের চা তৃষ্ণা সন্তোষজনকভাবে মেটাতে পারার মতো বৌ আজ অবধি জন্ম নেয়নি - তবে ল্যাবরেটরিতে কৃত্রিমভাবে বানানোর চেষ্টা চলছে।)
১৩) খাদ্যরসিক বর (এরা খেতে এতই ভালোবাসে যে এদের মধ্যে বেশিরভাগই নিত্যনতুন বাজার করে নিয়ে আসাতে খুব পটু হয়। এরা এমন এমন রান্না খেয়েছে যেগুলোর আপনি কোনোদিন নামও শোনেননি। এরা জীবনে রন্ধনপটীয়সী বৌ না পেলে ডিপ্রেশনে চলে যায়। এদের মধ্যে একটা উপপ্রজাতি আছে যারা আবার নিজেরাও ভালো রান্না করতে পারে এবং বৌয়ের জন্মদিনে রেঁধেও খাওয়ায় - তাদেরকে বলে রাঁধুনে বর - রিসেন্ট সার্ভে অনুযায়ী এই বিশেষ উপপ্রজাতির বৌয়েরা তাদের বরদের পারলে সিন্দুকে তুলে রাখে। )
১৪) পেটুক বর (এদের ঘন ঘন খিদে পায় এবং এদের সারাদিনই মুখ চলে। এরা অফিস যাওয়ার সময় চার-পাঁচ রকম আলাদা আলাদা টিফিন নেয় - তার ওপর অফিস পাড়ার সব দোকান থেকে খেয়ে আসে। এরা যে এলাকায় থাকে তার পঞ্চাশ কিলোমিটার রেডিয়াসের মধ্যে সমস্ত খাবারের দোকানের নাম জানে এবং কোন দোকানের কোন খাবারটা সবচেয়ে ভালো সেগুলো এদের অটোমেটিক্যালি মুখস্থ থাকে। এরা নেমন্তন্ন পেলে কোনো অবস্থাতেই ছাড়ে না। কারোর বাড়িতে নেমন্তন্ন থাকলে বা নিজের বাড়িতে একটু ভালোমন্দ রান্না হলে এরা খেয়ে খেয়ে পেটখারাপ করে ফেলে। রাতে নেমন্তন্ন থাকলে বা রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়ার কথা থাকলে এরা প্রায় সারাদিন অভুক্ত থেকে পেটে জায়গা তৈরী করে। নেমন্তন্ন বাড়িতে এরা ঢিলা প্যান্ট বা পাজামা পরে যায় এবং বেল্ট ব্যবহার করে না।)
১৫) লোভী এবং অকৃতজ্ঞ বর (এদের জন্য বৌ বা শ্বশুরবাড়ির লোক যাই করুক না কেন এরা তাতে নাক সিঁটকোয়। কোনো কিছুতেই এদের মন পাওয়া যায় না বললেই চলে। শ্বশুরবাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে নেক্সট কি উপহার আসছে দেখার জন্য - কিন্তু উপহার পেলে সেটার নিন্দে না করে এরা সাধারণত জলস্পর্শ করে না। শ্বশুরবাড়ির কেউই বা কোনো কিছুই তাদের চোখে সমালোচনার উর্ধে নয়। জামাইষষ্ঠীর আয়োজনের খুঁত খুঁজে বের করা এদের অন্যতম প্রিয় বার্ষিক ইভেন্ট।)
১৬) রাগী বর (এরা কথায় কথায় রেগে যায়। এবং রেগে গিয়ে তুলকালাম কান্ড ঘটায়। এদের নিয়ে এদের বৌরা কনস্ট্যান্ট চিন্তায় থাকে।)
সঙ্গত কারণে হুমকি-ওয়ালা বর, বৌ-পেটানো বর, পণ/যৌতুক লোভী বর, চরিত্রহীন বর - ইত্যাদি প্রজাতিগুলিকে আজকের আলোচনার বাইরে রাখা হলো।