এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • হাঁসখালি, আরশোলা, ইত্যাদি...

    Anamitra Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১২ এপ্রিল ২০২২ | ১৫৫৬ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • "তৃণমূলকে আরশোলা কামড়েছে!"
    --- এবার কথা হচ্ছে, আরশোলা কামড়ায় না জীবন্ত মানুষকে, সাধারণত। মৃতদেহ হলে আলাদা কথা। অথবা যদি কামড়েই দেয় সত্যি সত্যি, সেক্ষেত্রে বুঝতে হবে একটা ছোট্ট জায়গায় তাদের অনিয়ন্ত্রিতভাবে সংখ্যাধিক্য ঘটেছিল কোনওভাবে। খাবার কম পড়েছিল হয়তো। অথবা কোনটা খাবার কোনটা কী মাথার ঠিক রাখতে পারেনি। তাই কামড়ে দিয়েছে। 

    "তৃণমূল তৃণমূল বলে বেড়াচ্ছেন, রাজ্য জুড়ে সবাই তৃণমূল।"
    --- এরকম পরিস্থিতি প্রথম নয়। এসব আমরা আগেও দেখেছি রাজ্য রাজনীতিতে। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা, যোগ্য তথা প্রকৃত বিরোধীর অভাব, ইত্যাদি। সেইদিনের হুঙ্কার ছিল "ওরা তিরিশ, আমরা দু'শো পঁয়ত্রিশ!" সেদিন বলা হতো, "বামফ্রন্টের বিকল্প উন্নততর বামফ্রন্ট!" অর্থাৎ, আসলেই কোনও যোগ্য বিরোধী নেই, সেটাই একটু কায়দা করে বলা। অর্থাৎ, মোদি নেহি তো কৌন! মানে অপশন নেই; সেটাই মনে করিয়ে দেওয়া বারবার। অথবা থেকে থাকলেও "নেই" শব্দটা বলে যাওয়া ততক্ষন অবধি যতক্ষণ না সবার বিশ্বাস হচ্ছে সত্যিই নেই! এখনও অবস্থাটা সেরকমই খানিকটা। বিজেপি সাম্প্রদায়িক। সিপিএম একে অমেরুদন্ডী তায় আবার দম্ভ ঢোঁক গিলে উঠতে পারেনি রাজ্যপাট যাওয়ার এগারো বছর বাদেও। অতএব একমাত্র অপশন লেসার ইভিল মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির পার্টি; যে পার্টি না করলে সরকারি কনট্র্যাক্ট থেকে অটোর পারমিট কোনোকিছুই পাওয়া যায় না। অথবা পাওয়া গেলেও অন্তত সহজে তো পাওয়া যায় না। কাকে ঘুষ দিতে হবে, কাকে ঘুষ দিলে কাজ হবে আর কে টাকা মেরে দিয়ে পালাবে সেটাও বোঝা যায় না। স্থানীয় স্তরে নিজের মতো নিজে ব্যবসা করে টিকে থাকাই দায় হয়ে যায় উল্টে। খেয়ে-পরে বাঁচতে হবে তো, নাকি? তাই, "রাজ্য জুড়ে সবাই তৃণমূল!" 

    এটা অবশ্য দোষের কিছু নয়। রুলিং পার্টি এরকমই হয়। সিপিএমও এরকমই ছিল, আর বিজেপি এলেও এরকমই হবে। যদিও 'গণতন্ত্র', সমস্ত ক্ষেত্রগুলোকে বিরোধীশূন্য করে ফেলতে পারার মধ্যেই এই ব্যবস্থায় শাসক দলগুলোর আসল সাফল্য। অন্তত তারা সেরকমই মনে করে থাকে। "আমরা" আর "আমাদের লোক" ছাড়া বাকি সব সাইনবোর্ড!

    "বাংলায় সহ্য করি বলে ভাববেন না সব সহ্য করব। তৃণমূল নরম মাটি তাই না!"
    --- সাল-তারিখ মনে নেই, নন্দীগ্রাম-লালগড় তুঙ্গে তখন। বুদ্ধবাবু মিডিয়ার উদ্দেশ্যে বললেন, "এটা এই রাজ্যে বসেই করছেন। মনে রাখবেন কথাটা!" মুখ বেঁকে যেত একদিকে তখন ওঁর ক্যামেরার সামনে কথা বলতে গিয়ে। সেটা ঔদ্ধত্য না মানসিক চাপের ফল বলা মুশকিল। বাঁ দিকে বেঁকতো না ডানদিকে সেটাও এখন আর মনে পড়ছে না। তবে বুদ্ধবাবুরও মনে হতো এই যে মিডিয়া এত কথা বলে, যেগুলো ওঁর সরকারের পক্ষে যায় না, সেটা একপ্রকার অপরাধ; এবং নিশ্চিতভাবেই ওঁর ক্ষমতা রয়েছে চাইলে এক্ষুনি সব বন্ধ করিয়ে চ্যানেলে চ্যানেলে কাস্ত্রোর জীবনী দেখাতে বাধ্য করার। মমতা ব্যানার্জিও সেরকমই ভাবছেন; রামনবমীতে যে কোথাও কোনও গন্ডগোল হলো না সেইটা বরং বেশি করে দেখানো উচিত একটা আরশোলার কামড়ের চেয়ে। 

    এটাও দোষের কিছু না। রুলিং পার্টির নেচার। ক্ষমতায় পুরোপুরি গেঁড়ে বসার পর এই মানসিকতাটা আসে। আমার রাজ্যে ক'রে খাচ্ছিস যখন আমার কথা অনুযায়ী চলবি, নইলে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো! এগুলো সবই আমরা আগেও দেখেছি। কিন্তু এরপর একটা সময় আসে যখন একসপ্তাহ আগে একসঙ্গে মিছিলে হেঁটে যাওয়া লোকটা বুথে গিয়ে অন্য বোতাম টিপে দেয়। অপশন না থাকার পরও টিপে দেয়। কাউন্টিং-এর দিন বর্ষীয়ান নেতারা গণনাকেন্দ্রের বাইরে বসে শোনে সাম্রাজ্যপতনের শব্দ। তারপর জীবনে সম্ভবত প্রথমবার কাউন্টিং শেষ হওয়ার আগেই বাড়ি ফিরে আসে। একগ্লাস জল খেয়ে ঘুমিয়ে নেয় কয়েকঘন্টা শুয়ে। 

    মমতা ব্যানার্জির সৌভাগ্য যে সেই ত্রহ্যস্পর্শ এখনও সম্ভবত শুরু হয়নি। এখনও সময় আছে আড়াল না করে বাপ-ছেলেকে পার্টি থেকে বিতাড়িত করার এবং অন্তত লোকদেখানো প্রশাসনিক তত্পরতা দেখিয়ে অপরাধীদের শাস্তি সুনিশ্চিত করার। এর বাইরে অন্য কিছু করলে সম্ভবত স্কিন রিয়্যাকশন শুরু হয়ে যাবে। কারণ একটা অপরাধীকে আড়াল করলে আরেকটার উৎসাহ বাড়ে। আর অপরাধীরা কোনও পার্টির লোক হয় না। যে পার্টি ক্ষমতায় তারা তার ছাতার তলায় গিয়ে ঢোকে ক্ষমতার লোভে। কারণ ক্ষমতা থাকলে নিশ্চিন্তে অপরাধ করে যাওয়া যায়, কাউকে জবাব না দিলেও চলে। সম্ভবত এই কারণেই ভারতীয় পার্লামেন্টের প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ সদস্যের ক্রিমিনাল রেকর্ড রয়েছে। ক্ষমতা অপরাধ সংঘটিত করে, এবং নিজের সর্বগ্রাসী প্রবণতার কারণে নিজেই নিজের পতনের কারণও হয়ে দাঁড়ায় অহরহ। 

    মূল ঘটনাটা কী?
    একটা আরশোলা। কামড়েছে। 
    - কাকে?
    - তৃণমূল কংগ্রেসকে। অর্থাৎ ভিকটিম এখানে আরশোলা নয়, ভিকটিম তৃণমূল কংগ্রেস। 
    কোনও গণধর্ষণের কেসই না। তৃণমূল কংগ্রেসকে মনের খেয়ালে কামড়াতে গিয়ে একটা আরশোলা মরে গেছে। ফলে আরশোলার দেহটাকে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে তড়িঘড়ি। এখন হতে পারে আরশোলাটা মারা গিয়েছে বিষক্রিয়ায়, হতে পারে আরশোলাটা অন্তঃসত্ত্বা ছিল, হতে পারে আরশোলাটার লাভ অ্যাফেয়ার ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের সাথে; কিন্তু সেগুলো বড় ব্যাপার না। মাথায় রাখতে হবে মারা গিয়েছে একটি আরশোলা, আর কামড় খেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। অতএব সমস্ত মলম যদি কারও প্রাপ্য হয় সেটা তৃণমূল কংগ্রেসের। কারণ মৃত আরশোলা মলমের ব্যবহার জানে না। বাংলার হাথরাস কিনা জানি না কিন্তু একটা চিন্তা যাচ্ছে  না কিছুতেই মাথা থেকে। হাঁসখালির মেয়েটির নাম আর তাপসী মালিক, নামদুটোর অদ্যাক্ষর মিলে যায় হুবহু। অদ্ভুত না?

    মাননীয়া, আপনি জ্যোতিষী দেখান!
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১২ এপ্রিল ২০২২ | ১৫৫৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন