এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • প্রিয় চিনার পাতা, ইতি সেগুন

    Anamitra Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১০০৬ বার পঠিত
  • পর্ব ১ | | পর্ব ৩ 
    আমার পুজো আজ শেষ হলো; কেননা, মা কাল বাড়ি ফিরে যাবে। পৃথিবী পৃথিবীর মতো ঘোরে, আমি আমার মতো। আমি এই পৃথিবীর উপর থাকি; সম্পর্ক বলতে মাত্র এটুকুই। বাকি আমার বসবাস মূলত নিজের মাথার ভিতর। হাসপাতাল থেকে ফেরার পর এই ক'দিন হয় মা নয় বাবা কেউ না কেউ এসে থাকছিল এখানে। যার ফলে টুকটাক ইচ্ছেমতো এদিক-ওদিক বেরনো যাচ্ছিল শরীরটা একটু সুস্থ হওয়ার পর। এই সুযোগে মাঝেমধ্যে সন্ধেবেলা একা হাঁটতে যাওয়া ছাড়াও তিন-তিনখানা সিনেমা দেখে ফেললাম। এর মধ্যে 'আদিউ গোদার' এবং 'প্রিয় চিনার পাতা, ইতি সেগুন' পরিকল্পিতভাবে দেখতে যাওয়া, আর 'লক্ষ্মী ছেলে' এমনিই দেখে ফেলা পরিকল্পনা ছাড়াই। এরপর বেশ কিছুদিন আর এরকম ভাবে ফিল্ম দেখতে যাওয়া হবে না। কারণ মা কাল বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। প্রায় দু'মাস পরে আমার একলা থাকা শুরু হবে আবারও কাজুকে সঙ্গী করে। আপাতত লিখব ভেবেছি। জানিনা সত্যিই লেখা হবে কিনা, কেননা এরকম অনেককিছুই আমি ভাবি যা কিনা শেষ অবধি করে ওঠা হয় না। আজ ইচ্ছে করছে; তার মানেই যে কাল ইচ্ছে করবে এমনটা তো নাও হতে পারে। মাথা তো আর বাঁধা দেওয়া নেই কোনও প্রকাশকের কাছে। আর সত্যি বলতে আমি যা লিখি তাই দিয়ে কোনও বই হওয়ারও নয়। মানে, যা আমার লিখতে ইচ্ছে করে। আমি নিজে প্রকাশক হলে নিজেই প্রকাশ করতাম না সেসব।  ঠিক যেমন আজ থেকে আট বছর আগে পিছিয়ে এসেছিলাম এই ভাবনা থেকে যে আমার নিজের পয়সা থাকলে আমি নিজেও নিজের ফিল্মের থিয়েট্রিকাল রিলিজের পিছনে সেই পয়সা নষ্ট করতাম না। কাজেই অন্য কেউ করবে এমন আশা না রাখাই ভালো। গত আট বছরে সময় বদলেছে অনেক; এবং আগামী আট বছরে আরও বদলাবে। সবচেয়ে বড় বদল মনে হয় এইটাই যে আজ থেকে আট বছর আগে আমার আগামী আট বছরে ঘটে যেতে পারে এমন সম্ভাব্য পরিবর্তনগুলোর দিকে তাকিয়ে ধৈর্য্য রাখতে পারার মতো ধৈর্য্য ছিল না। দ্বিতীয় বদল বলতে বলা যেতে পারে যে, আট বছর আগে কাউকে "অনুরাগ কাশ্যপ ইন্ডিপেন্ডেন্ট নয়, ভাই!" বললে সে হয় ঘ্যাম বেড়ে গেছে নয় মাথা খারাপ হয়ে গেছে বলে ধরে নিতো। কয়েকদিন আগে 'আদিউ গোদার'-এর স্ক্রিনিং শেষে অমর্ত্য আড্ডার মাঝে বলে উঠল, "অনুরাগ কাশ্যপ ইন্ডিপেন্ডেন্ট হলে ইন্ডাস্ট্রি কে?" 
    --- সময় এইভাবেই ছবিগুলো পরিষ্কার করে দেয়, বেলা বাড়লে কুয়াশা কাটার মতো। 

    এরকম আরও অনেক বদল রয়েছে।  যেমন আমি যে কাজটি করে উঠতে পারিনি শেষমেশ, উজ্জ্বল দা সেই কাজটিই ২০২০ সালে করে ফেলেছে একটু অন্যরকম ভাবে। বাংলাদেশে নজরুল দশ টাকা করে চাঁদা তুলছিল সিনেমা বানাবে বলে। জানি না তার সেই উদ্যোগের কী হয়েছিল শেষমেশ, তবে যেটা বলার যে সংখ্যায় আর আমরা ততটাও কম নেই আট বছর আগেকার মতো। ২০১৪ সালে তখনও মূলত ফিল্মমেকারদের যুগ চলছে। সেখানে আজকের এই পোস্ট-ফিল্ম জমানায় বরঞ্চ কন্টেন্ট প্রোডিউসারের সংখ্যাই বেশি। আর সবচেয়ে মজার কথা এই যে গত পাঁচ বছরে প্রোডিউসড সবচেয়ে পপুলার কন্টেন্টটা কিন্তু আবার ইন্ডাস্ট্রি-র বানানো নয়, কনফিউজড পিকচার নামে একটা ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রোডাকশন হাউজ তথা নেহাতই আমাদের অরিজিৎ সরকারের বানানো। 

    এইরকমই আরও আরও অনেক অনেক কথা বলব বলে এই লেখাটা শুরু করলাম। যাঁরা আমাকে চেনেন, খুব ভালোভাবেই জানেন যে এইরকম শুরু আমি আঠেরো বছর বয়স থেকেই বহুবার নানানভাবে করে এসেছি এবং তার কোনওটাই আজ অবধি শেষ হয়নি। এবারও যে হবেই তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু শুরু যখন করেছি আবারও, শেষ হওয়ার সম্ভাবনা অন্তত রয়েছে একটা। শুরুটাও না করলে সেটুকুও থাকতো না। একথা কে না জানে যে ব্যাটেলশিপ পোটেমকিনে কোনও যুদ্ধজয় হয়নি। কিন্তু যুদ্ধজয়ের সম্ভাবনার বীজ সেখানে নিহিত ছিল।  আর ছিল বলেই একদিন গিয়ে সোভিয়েতের পত্তন সম্ভব হয়েছিল। সেই সোভিয়েতও আবার মুখ থুবড়ে পড়েছিল বহু বছর পর একদিন। কিন্তু তাই বলে অক্টোবর বিপ্লব অর্থহীন হয়ে যায়নি। তার সবচেয়ে বড় গুরুত্ব আর কোথাও থাক না থাক মনুষ্যজাতির চেতনার জগতে থেকে যাবে সৃষ্টির শেষদিন পর্যন্ত। ইতিহাস এইভাবেই ফেইলিওর থেকে ফেইলিওর হয়ে এগিয়ে চলে পরবর্তী সিগনিফিক্যান্ট ফেইলিওরটির দিকে যা কিনা চিন্তার জগতে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে সক্ষম। সাফল্য, সে তো চাঁদে মানুষ পাঠানোর মতো! সত্যি হোক বা জালিয়াতি, ঘরে-বাইরে চাপের মুখে ভিয়েতনাম থেকে নিক্সনের সেনাপ্রত্যাহার ঘোষণা করার বছরে যার মূল উদ্দেশ্য আসলে লোকদেখানো আর চোখধাঁধিয়ে দেওয়া। মোদিজমানার ভাষায় সম্ভবত একেই আমরা জুমলা বলে থাকি। আর ব্যাটেলশিপ পোটেমকিন থেকে নিক্সন অবধি যে লাইনগুলো লেখা হয়েছে ওপরে সেও আসলে একপ্রকার জুমলা কেবলমাত্র নিজেকে সার্টিফায়েড এলিজিবল আঁতেল প্রমান করার জন্য। এসব আমি এখানে না লিখলেও পারতাম। 

    যাই হোক, এই লেখাটি যে 'প্রিয় চিনার পাতা, ইতি সেগুন' নামক সিনেমার কোনও রিভিউ নয় সে তো বোঝাই যাচ্ছে এতক্ষণে। ওই নামটা আমি ধার নিয়েছি নেহাতই পছন্দ হয়েছে বলে। আর সত্যি বলতে কুমার দা যতটা নিষ্ঠা নিয়ে ফিল্মটা বানিয়েছে অতটা মন দিয়ে তো মানুষ বাঁচতেও ভুলে গেছে আজকাল। কাজেই এইটুকু করাই যায়। ফিল্মটা চলছে এখনও নজরুলতীর্থ-র তিন নম্বর স্ক্রিনে বিকেল চারটে কুড়ি থেকে। কারোও ইচ্ছে হলে দেখে আসতে পারেন। যদ্দুর মনে হয় ভালো লাগবে না, কারণ আমরা যে ভাষার ফিল্ম দেখতে অভ্যস্ত ইদানিং 'চিনার পাতা' তার ধারকাছ দিয়ে যায় না। কিন্তু চোখ থাকলে এই ফিল্মে 'অ্যামেলি'-র বাইসাইকেল রাইড থেকে 'দোহাই আলি'-র রেললাইন অবধি অনেককিছুই রয়েছে আবিষ্কৃত হওয়ার অপেক্ষায়। আজ সকালে ভূমিকার সঙ্গে আধঘন্টা ঝগড়াই হয়ে গেল ফোনে এই 'চিনার পাতা' নিয়ে! তবে কিনা ভাবলেও ভালো লাগে যে আমার এমন সব বন্ধুবান্ধব রয়েছে যাদের সঙ্গে এসব নিয়ে ঝগড়া করা যায় --- "জেন্দেগি রাঞ্জাশ!" 

    (ক্রমশঃ। মানে, সম্ভবতঃ)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    পর্ব ১ | | পর্ব ৩ 
  • ব্লগ | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১০০৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে প্রতিক্রিয়া দিন