এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা

  • পুরানো কথা পর্ব  ১৬

    Jaydip Jana লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ০৭ জুন ২০২১ | ২৮২২ বার পঠিত
  • আগেই বলেছি কোলকাতায় যেতে যেতে আমার মত মানুষ জনের সাথে আমার আলাপ হয়। ওদের সকলের সাথে কথা বলতে আমার বেশ লাগে। কেউ কেউ নিজের ভালবাসার গল্প বলে কেউ বা ভালবাসা হারিয়ে যাওয়ার গল্পও বলে। মজাটা হল এই আড্ডায় আমি কাউকে আমার রণর ভালবাসা বা সম্পর্কের কথা বলিনা। অকপট আড্ডায় কখনও কখনও জানতেও পারি এদের কেউ কেউ রণকেও চেনে, কারও কারও সাথে রণর কখনও কখনও শারীরিক সম্পর্কও হয়েছে তাও জানতে পাই। এদের কারও কারও থেকে কোলকাতা শহরের বিভিন্ন এলাকায় সন্ধ্যেবেলায় আড্ডার কথাও জানতে পারি। কখনও কখনও কেউ কেউ নিজেদের ফাঁকা বাড়িতে একসাথে অনেকে মিলে জড়ো হয় মজা করে সেসব খবরও কানে আসে। সারাদিনের নানা কথায় এসব কথা কখনও আমি আর রণ আলোচনা করি। আগের মতই রণ আমাকে আগলে রাখতে চায় এসব থেকে। বুঝতে পারি রণ নিজের বহুগামিতাকে আড়াল করতে চায়। রণকে হারানোর ভয়টা মাঝে মাঝেই ভাবিয়ে তোলে। যে সম্পর্কটার কোনও বাঁধন নেই, তার ভবিষ্যত ভেবে ভয় পাই। আমি মনে মনে ভাবি যদি কারও শরীরে আটকে গিয়ে রণ আর আমার সম্পর্ক হারিয়ে যায় তাহলে আমার ভালবাসায় খাদ আছে। তাই এসব নিয়ে খুব বেশি গুরুত্ব দিই না। আমি আমার ভালবাসাতেই বু্ঁদ হয়ে থাকি।

    আজও মনে করি যে কোনও সম্পর্কের ভিত হল বিশ্বাস, আর সেই বিশ্বাসটাই যদি কখনও টলে যায় তার ওপর দাঁড়িয়ে প্রেমের ইমারত টেঁকে না, যত ভালবাসার চুন সুড়কিই সেখানে দেওয়া হোক না কেন...

    আমার রণর বাড়িতে যাওয়ার কোনও সময় অসময় ছিলনা। শুধু শনিবার দুপুরটা রণ থাকত না ও নাচ শিখতে যেত। আমি শনিবার গেলে জেঠিমার সাথে আড্ডা দিতাম, কেনাকাটা বা মুভি দেখতেও যেতাম কখনও দুজনে। এরকম একদিন সন্ধ্যায় রণ-র বাড়িতে গেছি। শুনলাম ও ওর ওপরের ঘরে। কেউ এসেছে কথা বলছে। নিচ থেকে উঠতে উঠতেই লক্ষ্য করেছিলাম ওপরের ঘরে বড় আলো জ্বলছে না। ওপরে উঠে দেখলাম দরজা ভিতর থেকে বন্ধ । কেমন যেন একটা মনে হল। দরজা নক করার অনেকটা বাদে দরজা খুলল রণ। আমি জানতে চাইলাম ভেতরে কে। আর দরজাই বা বন্ধ কেন। রণ জবাব দিয়েছিল পাড়াতুতো দিদির চন্দনগরেরর বাড়ির পাশে থাকা ছোটবেলার বন্ধু বিতাণ। জীবন বিমা নিয়ে কাজ করে তাই কথা বলতে এসেছে। আর বাইরে থেকে শ্যামা পোকা ঢুকছে বলে বড় আলো নেভানো। আমি ভেতরে আসতেই পারি। আমার মন কিন্তু বুঝল রণ মিথ্যে বলছে। কোনও সিনক্রিয়েট না করে ছেলেটির সাথে আলাপ করলাম। ভদ্রতা সেরে তারপর বেড়িয়ে বাড়ী চলে এলাম, অথচ সেদিন আমি গিয়েছিলাম ওর কাছে থাকতে। রাতের বেলা রণ ফোন করে গরম নিল, আমি ওকে না জানিয়ে চলে আসায়। এবং এও বলতে ছাড়ল না মিথ্যে অমূলক সন্দেহ করে আমি দাদাভাই এর মত বিহেভ করছি।

    কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, অথচ কোনও প্রমাণও নেই। নিজেই নিজেকে বোঝাতে শুরু করলাম আমিই বোধহয় ভুল। এদিকে নিজে থেকে যোগাযোগ করতেও পারছিলামনা। অদ্ভুত একটা টানাপোড়েন।

    আমি তখন পর্যন্ত কোনোদিন চন্দননগরে জগদ্ধাত্রীপুজোয় যাই নি। কয়েকদিন বাদে দুপুরবেলা রণ ফোন করল, গদগদ গলায় জানতে চাইল, "বিকেলে কি করছিস? বিতাণ বলছে অনেকদিন ঠাকুর দেখতে চন্দননগর যাইনি, ঠাকুর দেখতে যাবি" আমি উত্তর দিলাম, "আজ তো ষষ্ঠী"। তখনও জানতাম না ষষ্ঠী থেকেই পুজো শুরু। আর ভিড়টাও কম হয় ওইদিন। যাইহোক ঠিক হল সন্ধ্যেবেলা চন্দননগর ষ্টেশনে আমরা মিট করব।কথা মত সঠিক সময়ে পৌঁছে বিতানের থেকে জানতে পারলাম, রণ একটু আগে জানিয়েছে ও আসতে পারবেনা, আমরা তাই দুজনেই যাব। আমার ব্যাপারটায় একটু অস্বস্তি হলেও ভদ্রতার খাতিরে কিছু বলতেও পারছিলাম না। বিতানের সাথে নানা কথায় এটুকু বুঝতে পারছিলাম বিতান আমার আর রণ’র সম্পর্কটা নিয়ে বুঝতে চেষ্টা করছে। আমিও কোনও রকম কথা এ নিয়ে অচেনা অজানা লোকের কাছে বলতে আগ্রহী নই। সুতরাং ব্যাপারটা বেশি এগোলো না। তবে বিতানের সপ্রতিভ ব্যবহারে বিতানকে নিয়ে মনের মাঝে থাকা গুমোটটা কেটে গেল।

    এরপর থেকে মাঝেমাঝেই বিতানের সাথে ফোনে কথা হয় আড্ডা হয়। আমাদের এই যোগাযোগটা আমি কখনও রণকে লুকোই নি। হঠাৎ একদিন বেশ রাতে রণ র ফোন। আচমকা প্রশ্ন, " তুই বিতানকে কি বলেছিস, বিতান আমার ফোন ধরছে না,বিতান বাড়ী ফেরেনি। বিতান কিছু করলে আমি তোকে ছেড়ে দেবনা।" বলেই ফোনটা রেখে দিল। ভীষণ অবাক হলাম, কেননা বিতানের সঙ্গে যা কথা হয় ভীষণই ক্যাজুয়াল। আমার আর রণ-র সম্পর্কের কোনও কথাও ওর সাথে হয়নি। চিন্তা বাড়ল। এক, রণ আমাকে হঠাৎ কেন দোষারোপ করছে? দুই,তবে কি বিতানকে নিয়ে আমার সন্দেহঠিক? সারারাত চিন্তায় ঘুম হলনা। পরের দিন রবিবার, বাড়িতে আছি। সকালে উঠেই রণকে ফোন লাগালাম। তখনও পর্যন্ত বিতানের কোনও খোঁজ রণ পায়নি। বিতানের বাড়ীতে ফোন করলাম। ফোন ধরলেন বিতানের মা, জানালেন, ''আগের দিন দুপুরে বেড়িয়েছে, রাতে ফেরেনি, এমন অনেক সময়ই ও করে, কোথায় কোন বন্ধুর বাড়ি থেকে গেছে । চিন্তার কোনও কারণ নেই।" রণ কে ফোন করে সবটা জানালাম, বাবু উত্তর দিলেন, আগের দিন দুপুরে বিতান ওর বাড়িতেই গেছিল, সেখানে ওর সাথে কথা কাটাকাটি করে বেড়িয়ে গেছে। ওর তাই চিন্তা হচ্ছে ও তাই আমার ওপর চোটপাট করেছে।

    ফোনটা সবে রেখেছি হঠাৎ মনিমা বলল, "বেড়িয়ে দেখতো তোকে বোধ হয় কেউ খুঁজছে।" বেড়িয়ে দেখলাম বিতান, আমাকে দেখে দাঁত বার করছে।

    বিতানকে দেখে আমার যেন ধড়ে প্রাণ এল। যদিও ওর মায়ের কথায় আমি নিশ্চিত ছিলাম বিষয়টা রণর ভাবনামত গুরুতর না। কিন্তু কি নিয়ে ওদের কথাকাটি কেনই বা রণ আমায় দায়ী করল, জানতে না পারলে খচখচানিটা হয়েই চলছিল। ব্রেকফাস্ট করতে করতে যা জানলাম তাতে অবাক হইনি, তবে খারাপ লাগছিল। জানতে পারলাম যা আমি এতদিন জানতাম তা সবটাই মিথ্যে, কোনও জীবন বীমা না, এমনকি রণর পাড়াতুতো দীপুদিকে বিতান চেনেও না। বেশ কিছুদিন ধরেই বিতাণ আর রণর মধ্যে একটা শারীরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে আমার অজান্তেই। সেই জগদ্ধাত্রী পুজোর সন্ধ্যে থেকে বিতান আমার আর রণ র সম্পর্ক টা বোঝার চেষ্টা করেছে। আগের দিন রণর কাছেই ও আমাদের কথা জানতে পারার পর রণর সাথে ঝামেলার সূত্রপাত। রণ জানায় রণর জীবনে আমি অনেক বেশি ইম্পরট্যান্ট পার্ট। আর তাই নিজের গুরুত্ব বোঝার জন্য ও এটা করে দেখতে চেয়েছিল রণ ওকে নিয়ে ভাবে কিনা।

    এই কদর্য সত্যটা জানার পর একমুহুর্ত আর দেরী করিনি। বিতানকে নিয়ে রওয়ানা হই রণর বাড়ির উদ্দেশ্যে। রণ সামনে বিতানকে নিয়ে গিয়ে দাঁড়ালে সবটুকুই স্বীকার করে রণ।আমার পায়ের তলার মাটিটা সরে যায়। রণ আমায় কথা দিয়েছিল যা কিছু হবে আমি ওর থেকেই জানব, অন্য কারও থেকে কোনও কিছু শুনে কখনও আমায় অপ্রস্তুত হতে হবে না। রণর বহুগামীতা নিয়ে কখনও এতটা কষ্ট পাইনি, যতটা পেয়েছিলাম এই মিথ্যাচার এ।এরপর থেকে রণকে বিশ্বাস করতে পারিনি কখনও।

    মজার বিষয় আজও আমার বিশ্বাসের ভিত কেউ আর তৈরী করতে পারল না। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যখনই কাউকে ভালবেসেছি সেইই ঘটিয়েছে আমার জীবনে। একবার না বহু বহুবার...
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ০৭ জুন ২০২১ | ২৮২২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন