মাথাটা খুব ধরেছে সুব্রতর। একসাথে দুটো কেস নিয়ে বেশ ঝামেলায় পড়েছে। সবে মাত্র সাব ইন্সপেক্টর পোস্টে জয়েন করেছে , আর তার মধ্যেই দুই দুটো কেশ। কেন যে সকালবেলাটা ছুটি নেয় নি সেটাই ভাবছিল। কিন্তু কি আর করা যাবে ? কল যখন এসেছে ,তা আবার হাই প্রোফাইল। যেতে তো হবেই।
শীতের হওয়া গায়ে মেখে পৌঁছল শ্মশানের পাশে। আগত ভোটে এম এল এর ক্যান্ডিডেটকে কাস্তে দিয়ে খুন করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী অনেক আছে। খুনের মোটিভ এখনো স্পষ্ট নয়। গাড়ি থেকে নামতেই দেখে ভিড় জমে আছে।
"দেখি ! দেখি ! পুলিশ কে জায়গা করে দিন। সরে যান আপনারা ", তার সঙ্গে থাকা একজন হাউলদার বলে উঠলো।
সুব্রত এগিয়ে গিয়ে দেখে রাস্তার উপর সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত এক বছর তিরিশের যুবক পরে আছে। গলাটা চিড়ে আছে ,আর শুকিয়ে যাওয়া লাল রক্ত কালো পিচের ফাঁক দিয়ে উঁকি মারছে। শীত আসছে , বোঝাই যাচ্ছে। কতক্ষন লাগে রাস্তার রক্ত শোকাতে ? নিজেকেই প্রশ্ন করে বসে। রাতে নিশ্চয়ই মদ খেয়েছিল। রক্তে এলকোহল থাকলে নাকি তাড়াতাড়ি উড়ে যায় রক্তের সব জলীয় ভাব। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে কিনা তা জানেনা, শুনেছিল কোথাও।
তিনচারজন পার্টির লোক বলে উঠলো ," স্যার , এই বুড়িটা খুন করেছে আমাদের দাদাকে। আমরা ধরে রেখেছি "
মেঘের ফাঁক দিয়ে হালকা রোড পড়েছে সাদা থান পড়া বুড়িটার গায়ে। মাথায় হাত দিয়ে রাস্তার উপর বসে আছে আর এক দৃষ্টিতে মৃতদেহের দিকে তাকিয়ে আছে। কি অদ্ভুত শীতল সেই চোখ গুলো , যেন কাঁচ দিয়ে গড়া।
বুড়িটাকে খুব চেনা চেনা লাগছে। কোথায় যেন দেখেছে ইনাকে, এখন খেয়াল করতে পারছেনা। পকেট থেকে রুমাল বার করে কাস্তে টা তুলে একটা প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে নিলো। এভিডেন্স। কাস্তে, লাল রক্ত আর চোখের তারা সব যেন একই সাথে আছে। ভোট সত্যি এসে গেছে।
হাওলাদারের দিকে ইশারা করে বলল ," ইনাকে এরেস্ট করে গাড়িতে তোলো। হাসপাতালের লোককে খবর দাও আর ফরেনসিককে ডাকো "
হাওলাদার তার কথা মতো কাজ করতে যেতেই দূরে সাংবাদিকদের গাড়ি হাজির। এই জিনিসটাই সুব্রতর পছন্দ নয়। যেকোন ইনভেস্টিগেশানকে একেবারে নষ্ট করে দেয় এই সাংবাদিকরা। হাতে মাইক ধরলেই নিজেদের বিচারক মনে করে। নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা আর কজন করে ? সব চ্যানেলগুলোই কোন না কোন পার্টির দালাল। আর এখন তো আবার এনালিটিক্স এর যুগ। ফেসবুক , টুইটারেই লড়াই , ভোট সবই হয়ে যায়।
একজন মহিলা সাংবাদিক এসে সুব্রতর সামনে মাইক ধরে বলল ," স্যার , চিনতে পারছেন ?"
সুব্রত একটু হেসে উঠলো । বছর ছাব্বিশের অনন্যা, তারই ক্লাসমেট।
"তুই এখানে ?"
"এই জয়েন করেছি। কখন হলো এইসব "
"এগারোটা চল্লিশ নাগাদ। "
"আততায়ী ধরা পড়েছে ?"
সুব্রত গাড়ির দিকে ইঙ্গিত করে বলল ," হ্যা , এরেস্ট হয়েছে। "
"মোটিভ জানতে পারলি কিছু ? পলিটিকাল ?"
"তা এখনও বলা যাচ্ছেনা। আগে থানায় নিয়ে যাই , তারপরেই জানতে পারবো "
শ্মশানের গেট ধরে একজন মহিলা খুব কেঁদে চলেছে। অনন্যা সেইদিকে এগিয়ে গেল ,"আপনি কিছু জানেন দিদি ? কি হয়েছে ?"
ইতিমধ্যে আরো কয়েকটা গাড়ি এসে উপস্থিত। এম্বুলেন্স ট্যা ট্যা শব্দ করে সবে পৌঁছেছে। সুব্রত তার বাকি হাওলাদারকে ইশারা করলো পরিধি বাড়ানোর জন্য। ফরেনসিক টিম এসেও হাজির। দেখতে দেখতে জায়গাটার ভিড় আরো বেড়ে গেলো। চিনির রস পড়লে যেমন পিপড়েদের ভিড় বাড়ে ঠিক তেমনিভাবে ভিড় বাড়তে শুরু করেছে।
ফটো তোলা হয়ে যেতেই সুব্রতর নির্দেশে ডেড বডি উঠে গেল এম্বুলেন্সে ,আর আবার ট্যা ট্যা করে বেরিয়ে চলে গেল সিন্ থেকে। ঠিক যেমন ভাবে ট্রেন স্টেশন ছেড়ে বেরোয় কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে। পার্টির কয়েকজন সদস্য চীৎকার করে এসে বললো ," আমরা এর বিচার চাই স্যার, আমরা এর বিচার চাই "
"আপনারা কয়েকজন থানায় আসুন। চার্জশিট বানাতে হবে , আপনাদের বয়ান খুবই জরুরি "
অনন্যা ছুটে এসে বলল ," আমার মনে হয় ওই ভদ্রমহিলা কিছু জানে। কিন্তু এখন খুবই শকড। কিছু বলার মতো জায়গায় নেই "
"ঠিক আছে দেখছি "
সুব্রত মহিলাকে গাড়িতে উঠে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েই অনন্যার দিকে তাকিয়ে বলল ,"আমি থানায় যাচ্ছি। তোরা আয়।"
(২)
থানায় ফোনের পর ফোন। প্রেস , মিনিস্টার কোন কিছুই বাদ নেই । অনন্যা সামনে বসে বসে চা খাচ্ছে ।
"কেস টা কিছু বুঝলি ?"
সুব্রত একটু চায়ে চুমুক দিয়ে বলল ," সোজা সাপ্টা কেশ। বুড়ির মেয়ের রেপ করেছিল ওই প্রার্থী। তাই বুড়ি প্রতিশোধ নিয়েছে। কোন পলিটিকাল মোটিভেশান তো মনে হচ্ছেনা "
অনন্যা একটু নিরাশ গলায় বলল ," ওঃ "
সুব্রত আর চোখে তাকিয়ে বলল ,:" খোড়াক পেলিনা বুঝি ?"
"আসলে তা নয় , মন্ত্রী , বিধায়কের খুন তো কখনোই সোজা সাপ্টা হয় না। এই রিপোর্ট গিয়ে এডিটারকে দিলেই সে মাথা খারাপ করে দেবে। জোর করে পলিটিকাল এঙ্গেল খুঁজবে।"
সুব্রত হেসে ফেলল। আশা করেছিল এরকমই কিছু একটা বলবে অনন্যা। যে মন্দিরে অনন্যা এখন পুজো দেয় সেই মন্দিরর দোর গোড়া থেকেই পালিয়ে এসেছে সে । বিচার দেবী এখন কোথাও নেই। এই কদিন পুলিশের চাকরি করে সে নিজেও বুঝেছে। আইন আছে , আইনের ফাঁকও আছে। কোর্টের সামনে সত্যি মিথ্যে , অনুভূতি , ভালোবাসার কোন দাম নেই। দাম আছে মোটা টাকা পকেটস্থ করা উকিলের বয়ানের। কোন কেস কিভাবে ঘুড়ে যায় সে চোখের সামনে দেখেছে। তাই বেশী আবেগ সেও দেখায়না।
"চল , আমি কাটি। বারুইপুরে যেতে হবে। "
বারুইপুর বলতেই সুব্রতর খেয়াল পড়লো। তার মেন্ কেসের কথা। অনন্যা কি সেই খোঁজেই যাচ্ছে ?
"কি ব্যাপারে ?"
অনন্যা একটু চোখ বড় বড় করে বলল ," কেন তুই জানিস না কি হচ্ছে ? তোর থানার আন্ডারেই তো। কমপ্লেন তো নিশ্চয়ই পেয়েছিস "
কমপ্লেন পেয়েছে সুব্রত ,ছয় ছয় খানা মেয়ে নিখোঁজ। কিন্তু ব্যবস্থা কি নেবে সেই ভেবে পারছেনা। আর নিয়েই বা কি হবে ? দু একজন হাজতে ঢুকবে আর কিছুদিন পরে ছাড়া পেয়ে যাবে। কিন্তু যারা নিখোঁজ তারা নিখোঁজই থাকবে । থানার ওয়ান্টেড বোর্ডে খালি ছবি খানি থেকে যাবে। রেকর্ডের পর রেকর্ড বাড়বে , ধুলো জড়াবে ফাইলগুলোতে। আর বছর ছয়েক পরে দূর দেশে প্রতিপন্ন কোন গ্রাহকের কাছে রাতে গল্প শোনাবে সেই নিখোজি । এইটাই সিস্টেম। এর বাইরে যাওয়ার সাধ্য কারুর নেই। এই কদিনেই বুঝে গেছে আসল সত্যতা। কলেজ থেকে বেরিয়েই জীবনকে যেমন ভাবে দেখেছে তাতে তার আবেগ ,অনুভূতি,আদর্শ সবই থিতিয়ে গেছে বন্য এই পৃথিবীতে ।
আর তাছাড়া সে তো একজন সাব ইন্সপেক্টর। কতই বা তার ক্ষমতা। মাসের শেষে মাইনে আর দু চারটে ছিঁচকে চোরকে গরম দেখিয়েই সে ভালো আছে।
"কেন বেকার জড়াচ্ছিস নিজেকে ? ফালতু ফেঁসে যাবি "
অনন্যা ঘুরে দাঁড়ালো,"মানে ? কি বলতে চাইছিস ?"
সুব্রত একটু শান্তভাবে বলল ,"দেখ , এইসব অনেক জটিল ব্যাপার। এতে অনেক বড় বড় প্লেয়ার আছে। এখানে তুই ঢুকলে ফেঁসে যেতে পারিস। ছাড় না "
সুব্রতর কথা শুনে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো অনন্যা," তুই তো নিজেও মাস কমের স্টুডেন্ট ছিলিস। যেকোন সাংবাদিকের আদর্শ হচ্ছে সত্যের জন্য লড়াই করা। ভুলে গেছিস বাবুদার সেই গল্প ?"
"আদর্শ ? কিসের আদর্শ ? দুইদিন তুই খবরের কাগজে লিখবি। এরেস্ট হবে , হিউম্যান রাইটস মিছিল করবে আর তার পরেই তো সব ধামাচাপা পরে যাবে। দোষী জেল থেকে বেরিয়ে আবার বুক চিতিয়ে ঘুরবে। কোন লাভ আছে কি তাতে ?"
"তাই বলে তুই নিজের কাজ করবিনা ?"
"নিজের কাজই তো করছি। চার্জশিট লিখছি , কেস বানাচ্ছি , ইনভেস্টিগেশান করছি। ব্যাস, এর থেকে বেশী এই মাইনে দিয়ে হয় না "
অনন্যার চোখদুটো ছলছল করে উঠলো। তার রোগা শরীরটা থরথর করে কেঁপে উঠলো।
" ভাবতেই পারছিনা তুই এতো পাল্টে জাবি। কত শান্তভাবে বললি মেয়ের রেপ হয়েছে তাই মা প্রতিশোধ নিয়েছে। বিবেক , দুঃখ সবই কি হারিয়ে ফেলেছিস ?"
"দেখ , পুলিশের চাকরিতে এটা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। তাই বেশী ভাবার সময় নেই "
এই কথা শুনে অনন্যা আর দাঁড়াতে পারছিলো না। চিনতে পারছিলোনা সামনে বসে থাকা তার সহপাঠীকে।
"আমি আসি রে । আমার কাজ আছে ", বলে অনন্যা চলে গেল বারুইপুরের দিকে।
অনন্যা চলে যেতে সুব্রতর মুখটাও চুন হয়ে গেল। ভেবেছিল বিকেলে কফি খাবার জন্য বলবে, এতদিন পরে দেখা। কিন্তু সে আর হল কোথায় ? কোন কথা থেকে কোন কথায় চলে গেল। কলেজের সময় থেকেই অনন্যা জন্য একটু দুর্বলতা ছিল। তার মাস কমের সমস্ত সিলেবাস জুড়ে খালি অনন্যা ছিল। তার কথা ভেবেই কেটে যেত দিনরাত। কিন্তু মুখ ফুটে কোনোদিন বলতে পারেনি। সব কথা বুকে জমিয়ে রেখেছিলো। আর সেই জমে থাকা কথাগুলোও হারিয়ে গেছে আজকে। পলি পড়ে গেছে সেই ভাষাগুলোর উপর, সেই স্বপ্নগুলোর উপর। কলেজের প্রেম কলেজের দরজাতেই ফেলে এসেছে।
এমন সময় একজন ছেড়া লুঙ্গি পরা মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক এসে হাজির। সাদা পাকা দাড়ি , মাথায় উস্কো খুস্কো চুল। গায়ে একটা সাত জন্মের পুরানো চেক শার্ট। হাতাগুলো ফোল্ড করা। গরিব খেটে খাওয়া মানুষটার দিকে তাকিয়ে সুব্রত জিজ্ঞেস করলো ,"কি ব্যাপার ?"
লোকটি একবার এপাশ ওপাশ দেখে বলল ," বাবু , একটু আলাদা করে কথা বলা যাবে ?"
সুব্রতর কেমন একটা সন্দেহ হলো। এরকম একটা মানুষ থানার দারোগাকে আলাদা করে ডাকছে। নিশ্চয়ই কোন পাগলের প্রলাপ শোনাবে।
"কি নাম ? "
"আজ্ঞে মহিরুল"
"যা বলার এখানেই বলো "
লোকটা একটু মিটিমিটি হেসে একটা লাল রঙের কার্ড দেখিয়ে বলল ," যে জিনিস আপনি খুঁজছেন তা আমি জানি "
(৩)
রাস্তায় ঘন অন্ধকার। বারুইপুর স্টেশন থেকে বেশ খানিকটা দূরে একটা লুকিয়ে থাকা কানাগলির পাশে শুয়ে আছে এক ভিখারি। রোজ সে এখানেই শুয়ে থাকে। হালকা শীত বাড়াতে কোথা থেকে একটা কম্বল জোগাড় করে এনেছে। দু চারটে লোক যারা যাচ্ছিল তারা কেউ সেরকম পাত্তা দিচ্ছিলো না তাকে। জায়গা জমজমাট হোক কি শুনসান , ভিখারির দাম সব জায়গাতে এক রকম।
রাত গভীর হচ্ছে আর ভিখারি ঠকঠক করে কাঁপছে। তার কাঁপুনি শোনার জন্য রাস্তাতে কোন কুকুর বেড়াল ও নেই। আছে কেবল দূরে একটা স্ট্রিট লাইট। যার টিম টিম করা আলো ভেদ করে একটা কালো রঙের স্করপিও এসে দাঁড়ালো অন্ধকার গলিটার মুখের সামনে।
দুটো লোক গাড়ি থেকে নেমে চটপট ঢুকে পড়লো গলির মধ্যে। বিড়ালের মতো তাদের পা, টেরটি অব্দি কেউ পেলোনা। কিছুক্ষন সব চুপ। একেবারে নিস্তব্ধ। পিনড্রপ সাইলেন্স । এমন নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করতে ঝি ঝি পোকারও হয়তো পারমিশান লাগবে।
কিছুক্ষন পরে সেই দুটো লোক ফিরে এলো , কিন্তু এবার তাদের সাথে একটা বড় বস্তা । তাহলে কি এভাবেই পাচার করছে ? বস্তায় ভোরে ভোরে মেয়ে পাচার চলছে ? মানুষের জীবনের দাম কি তবে এইটুকুই ? থাক , ভেবে কাজ নেই। অপারেশন তার নয় , সে সেকেন্ডারি। কিন্তু ভুল চুকের কোন চান্স নেই।
একেবারে তৈরী হয়েই আসতে হয়েছে সুব্রতকে। একশান করতে হবে। ট্রেনিং এ ড্রিল করেছে অনেক , কিন্তু এটা বাস্তব। সামান্য ভুল আর খেল খতম । পাছে যাতে সন্দেহ না হয় তাই আরো তিনজন কে নিয়ে এসেছে।
গাড়িতে লোক দুটো উঠতেই যাবে অমনি সুব্রত সিগন্যাল দিলো। হয় ইস্পার না হলে উসপার।
"হ্যান্ডস আপ ", বলেই পকেট থেকে নাইন মিলিমিটার অটোমেটিকটা সটান করে ধরলো।
আচমকা পিস্তলধারীকে দেখে প্রথম লোকটি একটু ঘাবড়ে গিয়ে পিস্তল বার করতেই দূর থেকে একটা ঠাঁই করে শব্দ হলো। ওয়ার্নিং শট।
"খবরদার !!!! কোন চালাকি না। আত্মসমর্পণ ছাড়া কোন উপায় নেই ", সুব্রত এগিয়ে গেল স্করপিওটার দিকে।
কিন্তু অন্য লোকটা সঙ্গে সঙ্গে একটা বন্দুক বার করে বস্তাটার উপর ঠেকিয়ে দিল । একেবারে ফিল্মি কায়দায়। হস্টেজ সিচুয়েশন।
"একদম আসবেনা কাছে , এখুনি উড়িয়ে দেব"
অন্যদিকে থাকা সঙ্গীকে সুব্রত ইশারা করলো। তারপর বলে উঠলো ," পালাবার পথ নেই। ধরা দে, সাজা কম হবে "
আততায়ী ঘাবড়ে গেছে। পালাবার পথ নেই। তিনদিক থেকে আটকা পরে গেছে। কোনদিকে যাবে ভেবে পাচ্ছিলো না। এমন সময় লোকটার পিছন থেকে হঠাৎ দাপিয়ে উঠলো সেই শুয়ে থাকা ভিখারিটা। কম্বল ফেলে দিয়ে আততায়ীকে জড়িয়ে ধরতেই বস্তাটা মরা গাছের মতো ঝোপ করে মাটিতে পড়ে গেল।
সুব্রত আর না ভেবে ছুটে গেল স্করপিওটার উল্টো দিকে। গাড়িটা সামনে থাকতে বুঝতে পারছিল না কি হচ্ছে উল্টোদিকে। অন্যদিকে আর এক আততায়ী গলির ভেতরে অদৃশ্য হওয়ার আগেই একটা কনস্টেবল লাফ মারলো তার উপর। পালানোর পথ সত্যি ছিল না তাদের কাছে।
সুব্রতর পৌঁছনোর আগেই মহিরুল কাবু করে নিয়েছে অন্য অপরাধীতাকে। মিশন সাকসেসফুল। সুব্রতর মনে একটু স্বস্তি হলো।
"সুব্রত , ঘরের ভেতরেই বাকি মেয়েগুলো আছে। কুইক "
মহিরুলের নির্দেশ মতো সুব্রত গলির ভেতরে দৌড়ে গেল। কানাগলির শেষের দিকে একটা ছোট গুদামঘরের ভেতরে টিমটিম করছে মোমবাতির আলো। খুব সন্তর্পনে কাজটা করছিল এই দুই পাচার কারী। ভেতরে একটা ছোট দরজা দিয়ে ঢুকতেই সুব্রতর চোখ দুটো ছানাবড়া। ছয় ছয় খানা মেয়ে বস্তাবন্ধি হয়ে মাটিতে নিথরভাবে প্রাণহীন আসবাবের মতো পড়ে আছে। সে একটা বস্তার মুখ খুলে চেক করে নিলো বেঁচে আছে কিনা। হ্যা, নিঃশ্বাস নিচ্ছে। অল গুড। কিন্তু এখানে ছয়টা হলে বাইরে কে আছে ?
হৃদয়তা যেন এখুনি পাঁজরের হাড় ভেঙে বেরিয়ে আসবে। হারিয়ে যাওয়া পুরোনো আবেগগুলো বাঁধ ভাঙা বন্যার মতো এসে তাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। যে অনুভূতিগুলো সে ফেলে এসেছিল কলেজের দরজাতে ,সেগুলো এই অন্ধ গলিতে উষ্ণ রক্ত হয়ে তার শিরা উপশিরা দিয়ে বয়ে যেতে লাগলো। নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না। ছুটে বাইরে বেরিয়ে এলো। থরথর করে কাঁপছে তার হাত পা।
স্করপিওটার সামনে এখনো বস্তাবন্ধি হয়ে পড়ে আছে সেই আগের মেয়েটা। না , এ হতে পারে না। এ কিছুতেই হতে পারেনা।
হাঁটুগেড়ে বসে বস্তাটা খুলতেই তার সারা শরীর পাথর হয়ে গেল। এক দৃষ্টিতে মেয়েটার রক্তাক্ত মুখের দিকে তাকিয়ে সুব্রতর চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো।
" সুব্রত , অল ওকে ? সবাকটা মেয়ে আছে তো ?", মহিরুল উৎকণ্ঠিত ভাবে জিজ্ঞেস করলো ।
মাটিতে পরে থাকা দেহটির নাকের কাছে আঙ্গুল রেখে ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে সুব্রত বলল ," ইয়েস স্যার , অল ওকে "।