এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  খবর  খবর্নয়

  • রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের আদি বাসিন্দা

    admin লেখকের গ্রাহক হোন
    খবর | খবর্নয় | ১৯ এপ্রিল ২০১০ | ৫৯৯ বার পঠিত
  • বাজারচলতি কাগজ বা চ্যানেলগুলির কোণায় পড়ে থাকা বা বাতিলের ঝুড়িতে ফেলা এইসব খবরগুলি এমনিতে চোখে পড়েনা। মিডিয়ার মার্জিনে পড়ে থাকে বলে এগুলি কি খবর্নয় ? মার্জিনে থাকা মানুষের লড়াইয়ের খবর বলে খবর্নয় ?

    আইনী অধিকার রক্ষার প্রশ্ন তুললে অভিযোগ উঠছে আইনভঙ্গের। গণতান্ত্রিক দাবী দাওয়া নিয়ে লড়াই, রাষ্ট্রের অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেকোনো প্রতিবাদী কণ্ঠকে চাপা দেওয়া হচ্ছে রাষ্ট্রদ্রোহিতা,সন্ত্রাসবাদের তকমা লাগিয়ে। আর সেই অজুহাতে নেমে আসছে আরও দমন পীড়ন। রাষ্ট্রযন্ত্র্রের এই আচরণ ও কি আদতে একধরণের সন্ত্রাস নয় ? রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ?
    গুজরাত, অসম, ওড়িশা, ছত্তিশগড়, উত্তরপ্রদেশ, প: বঙ্গ ....সারা দেশ জুড়েই চিত্রটা একদিক দিয়ে এক ই রকম। অন্ত্যেবাসী ভূমিপুত্রদের ভূমির অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে , প্রান্তিক মানুষগুলিকে আরো প্রান্তিকতার দিকে ঠেলে দিতে রাষ্ট্র ও কর্পোরেট মাফিয়া ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির অশুভ আঁতাতের এক সুকৌশলী প্রয়াস। আর অবস্থা আরো জটিল করে তুলেছে আদিবাসী আন্দোলনের মোড়কে মাওবাদী রাজনীতির হিংসাত্মক হঠকারী পদক্ষেপসমূহ, যা কোনোভাবে রাষ্ট্রকে দমনের জন্য সুযোগ করে দ্যায়, দ্যায় বৈধতা, কিছুটা হলেও। মুকরম গ্রামে সি আর পি এফ জওয়ানের হত্যার মূল্য প্রাণ দিয়ে চোকাতে হয় ঐ গ্রামের ই কুঞ্জম শুক্ল কে , ঐ জওয়ান হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী পুলিশ হামলার পর যে কুঞ্জম নিখোঁজ হয়ে যান, দুদিন পরে ঐ এক ই জায়গা পাওয়া যায় যার লাশ।
    গণতান্ত্রিক স্পেস কমতে থাকার জন্য মাওবাদী রাজনীতির উপর নির্ভরতা আসছে নকি মাওবাদী রাজনীতির জন্যো গণতান্ত্রিক আন্দোলনের স্পেস সঙ্কুচিত হতে থাকছে এই চক্রাকার তর্কে আর হিংসা প্রতিহিংসার বিষচক্রে ঘুরপাক খেয়ে চলবো আমরা আর এই রাষ্ট্র বনাম মাওবাদী যুদ্ধে ক্রমশ নিতে থাকবো কোনো এক পক্ষ।
    আর সেই তালেগোলে চাপান উতোরে চাপা পড়ে যাবে আসল মানুষগুলোর কথা, তাদের আসল সমস্যার কথা, সমস্যার মূলে গিয়ে সমাধান খোঁজা ও নিরসনের কোনো প্রয়াস।

    -----------------------------------------------------------------------------------------------------------

    সারা দেশ জুড়ে গ ত কয়েক সপ্তাহ ধরে এক নতুন হানাহানির ঢেউ উঠেছে। বনদপ্তর আর অন্য কয়েকটা সংস্থার সাথে সাধারণ মানুষের অধিকারের লড়াই। http://www.forestrightsact.com/ বেরোলো এরকম কিছু খবর।

    এই লোকগুলো আর কিছু চায়নি, বনজ সম্পদের ওপরে ওদের ন্যায্য অধিকারটুকুর দাবী জানিয়েছিলো মাত্র। শুধু এরই জন্য পুলিশ ওদের জেলে পুরেছে, খোলাখুলি গুলি চালিয়ে কিম্বা পিটিয়ে মেরেছে,বাড়িঘর পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে। গুজরাটে, অসমে, উত্তরপ্রদেশে, ওড়িশায়। মার্চ মাসের একুশে, তিরিশে,ষোলয়, আবার তিরিশে, যথাক্রমে বলতে গেলে। সরকার জানিয়েছেন "এ তো আইনী নিয়ম'। আইনী নিয়ম? পুলিশ বনদপ্তর আর তার বন্ধু কোম্পানীদের ভাড়াটে গুন্ডার কাজ করবে। এটাই কি ঐ নিয়ম?

    গুজরাত
    গুজরাতের অবিনাশ কুলকার্ণি আর ভরত পাওয়ারকে জেলে ঢোকানো হয়েছে। ওঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে দুজনেই সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন। শুধু তাইই নয় এও বলা হয়েছে যে ওঁরা এমন একটা সংস্থার সদস্য যারা সন্ত্রাসবাদীদের অর্থ সাহায্য করে। আসলে কিন্তু ওঁরা যে সংস্থার সদস্য তার নাম ডাঙ্গি মজদুর ইউনিয়ন(DMU),গত পনেরো বছর ধরে যারা সাধারণ মানুষের অধিকারের দাবিতে লড়াই করে আসছে। এঁরা আরো একটা সংস্থার হয়েও কাজ করেন, তার নাম হলো আদিবাসী মহাসভা। সারা গুজরাতের আদিবাসীদের "জান-ইজ্জত' বাঁচানোর কাজ করে এই সংস্থাটি, বনজসম্পদের আইনী ব্যবহার নিয়ে সাধারণ মানুষের হয়ে কাজ করে। কিন্তু আজ যাঁরাই আইনের কথা তুলছেন তাঁরা সবাই তো বনদপ্তরের চোখে সন্ত্রাসবাদী। অবিনাশ ও ভরতের রেকর্ডে কোথাও কোনো ক্রিমিন্যাল অ্যাক্টিভিটির কথা লেখা নেই। শুধু এটুকু বলা আছে যে দক্ষিণ গুজরাতে যে নকশাল্পন্থী কাজকর্ম হচ্ছে তাতে এঁরা জড়িত। অন্য সময় হলে এই রেকর্ড বাজে কাগজের ঝুড়িতে চলে যেতো। কিন্তু আজকে শুধু এই কথার ভিত্তিতেই এঁরা দুজন অনির্দিষ্টকাল ধরে জেলে। ঘটনাটা এতই নিন্দনীয় যে কংগ্রেস পার্টি এর প্রতিবাদে পঁচিশে মার্চ সংসদ ত্যাগ করেছিলেন।

    অসম
    অসমের ধেমাজীতে তিরিশে মার্চ 'কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি' বারোহাজার মানুষের এক মিছিল বার করেন। ওঁদের দাবী ছিলো বনজসম্পদের ব্যবহার নিয়ে আইনী বিল পাশ করতে হবে, পিডিএসের সংস্কার করতে হবে আর বড় বাঁধ তৈরীর কাজ বন্ধ করতে হবে। পিলিশ এই মিছিলের ওপরে লাঠি চার্জ করে, কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে, হাওয়ায় গুলিও চালানো হয়। এতে একশো জনের বেশি লোক জখম হয়েছেন, তেইশ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। তার মধ্যে দুজনের অবস্থা রীতিমতো খারাপ। সমিতির প্রেসিডেন্টকে পুলিশ শুধু গ্রেপ্তারই করেনি, ওঁর নামে অনেক মিথ্যে কেসও ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সমিতির জেনারেল সেক্রেটারী অখিল গগৈকেও পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে, ওঁর নামেও প্রচুর মিথ্যে কেস আনা হয়েছে যার মধ্যে অনেকগুলো জামিন না পাওয়ার মত অপরাধে। আর সরকার? সরকার অখিল গগৈকে একটা তকমা দিয়ে দিয়েছেন -- আজ্ঞে হ্যাঁ, "মাওবাদী'।

    উত্তরপ্রদেশ
    ষোলই মার্চ উত্তরপ্রদেশের সোনভদ্রতে "ন্যাশনাল ফোরাম অফ ফরেস্ট পিপল্‌ অ্যান্ড ফরেস্ট ওয়র্কারস' এর নেতৃত্বে আদিবাসীরা প্রতিবাদ মোর্চা বার করেছিলেন। গতবছর অগস্ট মাসে বেআইনী ভাবে এঁদের বসতি থেকে উৎখাত করে দেওয়া হয়েছিলো, তার বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ। বনদপ্তরের গার্ড আর স্থানীয় গুন্ডারা আর এই প্রতিবাদীদের যথেচ্ছ মারধোর করে। অনেকে গুরুতর জখম হন। একজন গর্ভবতী মহিলাকে এত মারা হয় যে ওঁর গর্ভপাত হয়ে গিয়েছে। আহতদের কোনরকম মেডিক্যাল সাহায্য দিতে অস্বীকার করা হয়। শুধু তাইই নয়, চারজন রীতিমতো জখম লোককে পুলিশ জেলেও নিয়ে গেছে। ওঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ কিন্তু এই প্রতিবাদ মোর্চা নয়। সেই গতবছরের উৎখাতের চার্জ দিয়ে ওঁদের জেলে ঢোকানো হয়েছে।

    ওড়িশা

    কলিঙ্গনগরের সংঘর্ষের খবর কিছুদিন আগেই পড়েছি আমরা।


    http://www.guruchandali.com/?portletId=20&porletPage=1&pid=wpgc:///2010/04/07/1270583132969.html

    http://www.guruchandali.com/?portletId=20&porletPage=1&pid=wpgc:///2010/04/01/1270131010289.html

    ---------------------------------------------------------------------------------------------

    ছত্তিশগড়
    আর ছত্তিশ্‌গড় তো অগ্নিগর্ভ ই ।
    একদিকে মরছেন সি আর পি এফ জওয়ানরা তো আরেকদিকে মাওবাদী আখ্যা পেয়ে একের পর এক এনকাউণ্টারে মারা যাচ্ছেন আদিবাসীরা। গত ১ ৯শে মার্চ "দ্য হিন্দু' থেকে পাওয়া গেল সেরকম ই কিছু তথ্য। যেকোন রকমের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পথ ও বন্ধ করা হচ্ছে। গান্ধীবাদী হিমাংশু কুমারের বনবাসী চেতনার আশ্রম ভাঙ্গার ঘটনার কথা আমরা আগেই জেনেছি। রাষ্ট্রের তাড়নায় এখন হিমাংশু এখন ছত্তিশগড়ের বাইরে। কলকাতায় এসেছিলেন ছত্তিশগড়ের অভিজ্ঞতার কথা বলতে। কি বললেন হিমাংশু?
    সি আর পি এফ জওয়ানের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে প্রেস বিবৃতি দিলেন এইড ও পি ইউ ডি আরের মত মানবাধিকার সংস্থাগুলি। বল্লেন, এই ঘটনার দায় দু পক্ষের উপরেই বর্তায়। আর হিংসার এই বিষচক্র থেকে বেরো®নোর জন্য সচেষ্ট হতে হবে দু পক্ষকেই।

    হিমাংশু কুমার কলকাতায় বললেন

    ভারত সরকার আদিবাসীদের সঙ্গে কথা বলছে না, বন্দুক হাতে সেপাই পাঠাচ্ছে জমি কাড়তে, শান্তির সম্ভাবনা নষ্ট হচ্ছে তখনই
    বললেন হিমাংশু কুমার ।
    ১৯৯২ সালে গান্ধীবাদী হিমাংশু কুমার তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে দান্তেওয়াড়া গিয়েছিলেন, গ্রাম গঠনের স্বপ্ন নিয়ে। আদিবাসী অধ্যুষিত এই বস্তার জেলায় আদিবাসী মানুষদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তিনি দেখেন, এই আদিবাসীরা নিজেদের অজান্তে, ইচ্ছানিরপেক্ষভাবে একদিন ভারতবর্ষের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অংশ হয়ে গেছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক ভারতবর্ষ এই আদিবাসীদের গাঁয়ে কখনও যায় না। যদি বা গেছে, তাহলে বন্দুক হাতে পুলিশ হয়ে গেছে, তাদের সম্পদ ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য। তাই তারাও শিখেছে, বন্দুক না ধরলে নিজেদের সম্পদ বাঁচানো যাবে না। যদি ভারতীয় গণতন্ত্র তার সংবিধান নিয়ে যেত, তাহলে হয়ত তারা সংবিধান শিখত।
    "বছর চারেক আগের কথা। বস্তার জেলায় এসার গ্রুপের একটি স্টিল প্ল্যান্ট হবে। ... বস্তার পঞ্চম শিডিউলের অন্তর্গত, গ্রামসভার সম্মতি ছাড়া এখানে কোনও জমি অধিগ্রহণ হতে পারে না। কীভাবে গ্রামসভা হল? সকাল হতেই সিআরপিএফ গ্রামের সব ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে গেল। আদিবাসীরা সেদিন কেউ জল পর্যন্ত আনতে যেতে পারল না বাচ্চাদের জন্য। সবার ঘাড় ধরে গ্রামের মাঝের স্কুলে নিয়ে আসা হল। সেখানে কালেক্টর, এসপি, এবং এমএলএ কংগ্রেসের মহেন্দ্র কার্মা বসেছিলেন। সামনে ছিল একটা রেজিস্ট্রার। একটা দরজা দিয়ে আদিবাসীদের ঢোকানো হচ্ছিল। জমি দেওয়ার অঙ্গীকারপত্রে টিপ ছাপ দিয়ে অন্য দরজা দিয়ে তাদের বেরিয়ে যেতে হচ্ছিল। ওদিনের আগে পর্যন্ত ঐ গ্রামে কোনও নকশাল ছিল না, ঐদিন সন্ধ্যেয় চলে এল।'
    ছত্রিশগড় সরকার তৈরি হবার পর বিভিন্ন কোম্পানি সরকারের কাছ থেকে সেখানে মাইনিং-এর লাইসেন্স পায়। তারপর ঐ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বলতে শুরু করে, সরকার তো লাইসেন্স দিল, কিন্তু নকশালদের জন্য আমরা মাইনিং শুরু করতে পারছি না। সরকারের মদতে তখন শুরু হয় সালওয়া জুডুম। সালওয়া জুডুম বলে, গ্রামগুলোতে যে আদিবাসীরা থাকে তারা নকশালদের মদত করে। তাই আদিবাসীদের গ্রাম ছেড়ে শহরের ধারে থানার আশেপাশে জুডুমের বানানো ক্যাম্পে থাকতে হবে। আদিবাসীদের এভাবে থাকার অভ্যাস নেই। ওরা খোলামেলাভাবে থাকে, জঙ্গলে থাকে। তখন সালওয়া জুডুম কিছু গুণ্ডাকে এককাট্টা করে, অস্ত্র নিয়ে, সিআরপিএফ, পুলিশ সঙ্গে নিয়ে গ্রামবাসীদের বোঝাতে যেতে থাকে। তারা এর নাম দেয় শান্তি আন্দোলন। যে আদিবাসীরা ক্যাম্পে যেতে চাইত না, তারা জঙ্গলে পালিয়ে যায়। সেই পলায়নপর আদিবাসীদের ওপর গুলি, কাটারি চালানো হয়, মহিলা শিশুদের ধর্ষণ করা হয়। এরপরেও যারা জঙ্গলে পালিয়ে যায়, তাদের নকশাল বলে দেগে ঘর, ফসল সব জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। পালিয়ে যাওয়ারা ফিরে এলে আবার সালওয়া জুডুম হামলা করে। এক-একটা গ্রামে ২০ বার পর্যন্ত হামলা হয়েছে। মোট সাতশ' গ্রাম খালি করেছে জুডুম। তিন লাখ আদিবাসী পালিয়েছে জঙ্গলে।
    'আমরা একটা এরকম গ্রামে যখন গিয়ে বললাম, আমরা তোমাদের গ্রামে ফেরাব, ঘর বানিয়ে দেব। লোকে বলল, ঘর আমরা বানিয়ে নেব, আপনারা দেখুন, জুডুম যেন আবার ঘর না ভেঙে দেয়। ... এসব শুরু হলে সরকারের সাথে আমাদের লড়াই-ও শুরু হয়। আমরা সরকারকে বলি আপনারা এই কাজ করতে পারেন না। তখন আমাদের আশ্রম ভেঙে দেওয়া হয়, আমাদের কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়।' গ্রেপ্তার করা হয় বনবাসী চেতনা আশ্রমের কর্মী স্থানীয় আদিবাসী কোপা কুঞ্জম-কে। সে বেশ কতগুলি গ্রামে আদিবাসীদের পুনর্বাসনের কাজ করছিল। 'ব্যবস্থাগত হিংসাকে বোঝাটা জরুরি। ... জল, হাওয়া, আলো, জমি এসবে সবার সমান অধিকার? না। আমি উঁচু জাতের, তাই জমিতে-সম্পদে আমার হক বেশি। তুমি ছোটো জাতের, তাই তোমার অধিকার ওসবে কম। ... আমি লেখাপড়া জানা, তাই আমার হক বেশি, তুমি লেখাপড়া জানো না, তাই তোমার অধিকার কম। এইসব অসমতা আমরা ঠিক বলে মেনে নিই, আমরা প্রশ্ন করি না। কেন করি না? কারণ, আমরা এই অসাম্যের কারণেই তো বেশ মজায় আছি। আমাদের বসে বসেই খাবারের যোগাড় হয়ে যায়।' এই ব্যবস্থাগত হিংসার শিকার হয় ঐ আদিবাসীরা। নিজেদের মজাটাকে আরও বাড়ানোর জন্যই তো আমরা যাচ্ছি ঐ আদিবাসীদের ঘর ভাঙতে।
    এখন দান্তেওয়াড়া ঘিরে ফেলে নকশাল দমন অভিযান 'অপারেশন গ্রিন হান্ট' চালাচ্ছে কেন্দ্র-রাজ্য সরকার। ওখানে আদিবাসীদের সঙ্গে কথা বলতে কোনও সমাজকর্মী বা রিপোর্টার যেতে পারছে না। এই অভিযানের অঙ্গ হিসেবে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এক গ্রামে সিআরপিএফ গিয়ে সাতসকালে ষোলজনকে হত্যা করেছে। তাদের আত্মীয়স্বজন অভিযোগ জানাতে দান্তেওয়াড়ায় এসে আজও পুলিশের কব্জায়। এই দেশের গণতন্ত্র চুপ, এই দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় চুপ, এই দেশের মিডিয়া চুপ।
    সেই থেকে হিমাংশু কুমারও দান্তেওয়াড়ার বাইরে। সারা দেশ ঘুরে তিনি এখন এসব কথা শোনাচ্ছেন রিক্সাওয়ালা, যৌনকর্মী থেকে শুরু করে বিজ্ঞানী, শিল্পপতি --- সবাইকে, যারা শুনতে চায়। যেমন শোনালেন আমাদের, ৯ মার্চ সন্ধ্যায় কলকাতার ইউনিভার্সিটি ইন্সটিটিউট হল-এ। কানে লেগে রইল তার সখেদ উক্তি, 'শেষ পর্যন্ত আদিবাসীরাই তো মরছে।'
    ------------------------------------------------------------------------

    এনকাউণ্টার ইত্যাদি
    রংচটা একটা ছাতা, আধ বোতল রান্নার তেল, দুটো বাজারের ব্যাগে কিছু জামাকাপড় - এই ছিল কবরের ওপর, মুড়িয়া পরম্পরা অনুযায়ী মৃতের পার্থিব সব সম্বল তার কবরের ওপর রাখার রীতি অনুসারে। কোয়াসি মুয়ের কবর। কোয়াসি মুয়ে, দুধে মুয়ে, মাদভি যোগা, কোয়াসি গঙ্গা, মাদভী হদমা, মদকম সুল্লা - অচেনা জগতের অচেনা কিছু নাম কিম্বা বৃহত্তর পরিসংখ্যানের অংশ। অথবা "মাওবাদী", ভার®তের সুরক্ষার সামনে সবচেয়ে বড় বিপদ ।
    ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯, গচনপল্লী গ্রামের যে পাঁচজন মুড়িয়া আদিবাসিকে মাওবাদী বলে খুন করা হয়, তাদের মধ্যে তিনজনের বয়স ৬৫'র বেশি। ৭০ বছরের বৃদ্ধা দুধি মুয়েকে তার বাড়ির দোরগোড়ায় পাওয়া যায়, ম্যা®শেটে দিয়ে তার দুই স্তন কেটে নেওয়া হয়েছে।

    গ্রামবাসীদের মতে এই খুন সালওয়া জুড়ুম ও সরকারী নিরাপত্তা বাহিনী মিলে ঘটিয়েছে। এর আগে ২০০৮ সালেও এই মিলিত বাহিনী ৪০টির ওপর ঘর জ্বালিয়ে দেয়। ঘটনার সাক্ষীর বয়ান অনুযায়ী, ঐদিন ভোরবেলা এদের এক বিশাল বাহিনী গ্রামে ঢোকে, যার জন্য আতঙ্কিত গ্রামবাসীদের প্রায় সবাই জঙ্গলে পালিয়ে যায়। পরে ফিরে এসে তারা পড়ে থাকা মৃতদেহ গুলি পায়।

    নিরাপত্তা বাহিনীর মতে এই ছজন সহ যে তিরিশ জনকে ঐ অঞ্চলে খুন করা হয়েছে, তারা সবাই মাওবাদী। কিন্তু গ্রামবাসীদের কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে বুঝতে হবে সম্পূর্ণ মিথ্যে দিয়ে এই খুন আড়াল করা হচ্ছে।

    গচনপল্লী, গোম্পাদ এবং নিকটবর্তী গ্রামগুলিতে যে ১৭জন কে খুন করা হয়েছে, তার জন্য সুপ্রীম কোর্টে তদন্ত চেয়ে পিটিশন দাখিল করা হয়। যারা পিটিশন করেন, তাদের মধ্যে ১২ জন নিঁখোজ হয়ে যান। কিছুদিন পরে পুলিশ এদের কোর্টে নিয়ে আসে। পুলিশের হেফাজতে থাকাকালীন তাদের কে কি ভয় দেখান হয়েছে তা নিয়ে অনেকেই শঙ্কিত। গোম্পাদ থেকে যারা পিটিশন দিতে গেছিলেন তাঁরা এ বছরের ৬ই জানুয়ারী নিখোঁজ হয়ে যান, পুলিশ এদের কোর্টে আনে ১৫ ফেব্রুয়ারী। এদের মধ্যে ছিলেন গচনপল্লীর মাদভী হিদমাও।
    গোচনপল্লীর বাকি পিটিশনকারীদের মধ্যে কোয়াসি কোসা, মাদভী সুকদা, মাদভী রাজা এবং মদাকম মুক্কে কে অবশেষে দিল্লীর তিসহাজারি কোর্টে আনা হয় মার্চ মাসের ১১ তারিখে। ঐ গ্রামেরই আরো দুজন পিটিশনকারী এখনও নিখোঁজ। প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান অনুযায়ী, ১১ জনকে তুলে নিয়ে গিয়ে দুই সপ্তাহ ধরে জেরা করে ১০ জনকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। মাধভী হিদমা কে ছেড়ে দেওয়া হয় সুপ্রীম কোর্টে হাজিরা দেবার জন্য, কিন্তু বাকিদের এই বলে ছাড়া হয়, যে তারা গিয়ে যেন অন্য পিটিশনকারীদের পুলিশে কাছে পাঠিয়ে দেয়। কোয়াসি কোসা, দুধি ভিমা এরা এখনও নিখোঁজ।

    পিটিশনে খুনের তদন্ত স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিমকে দেওয়া হোক এই আবেদন থাকা সত্ত্বেও ডিজি বিশ্বরঞ্জন জানান যে স্থানীয় আধিকারিকরাই ময়না তদন্ত করেছেন।

    গচনপল্লীর ঐ কবরগুলোর ওপর নতুন মাটি পড়েছে। "যেদিন ওরা ঐ ১১ জনকে নিয়ে যায়, সেদিন কবর খুঁড়ে মৃতদেহ বার করে", বলেন্‌ কোয়াসি মুয়ে। লাশগুলো ফেরৎ এসেছে কবরে। পিটিশনকারীরা এখনও গ্রামে ফেরৎ আসেননি।

    "তল্লাসী অভিযান নয়, এখন দরকার আলোচনা" : বিনায়ক সেনের বিবৃতি

    গত ছয়ই এপ্রিল ছত্তিশগড়ের দান্তেওয়াড়ায় মাওবাদীদের হাত ছিয়াত্তর জন জওয়ানের প্রাণ হারানোর দু:খজনক ঘটনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রখ্যাত মানবাধিকারকর্মী ডক্টর বিনায়ক সেন বলেন যে " এখন যেটা সবচেয়ে বেশি দরকার তা হলো সরকার আর বিদ্রোহীদের মধ্যে একটা খোলাখুলি আলোচনা ,এই ধরণের তল্লাশী অভিযানের নয়। তাতেই আরো অনেক বেশি কাজ হতো।" ড: সেন দু'বছর ধরে রাইপুরে মাওবাদীদের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলবন্দী ছিলেন; গত মে মাসে জামিনে ছাড়া পান। এখন ভেলোরে ওঁর চিকিৎসা চলছে। সেখান থেকে টেলিফোনে "দি হিন্দু' কাগজের সাথে কথা বলার সময় ড: সেন বলেন যে এই উগ্রতায় সরকার বা মাওবাদী কারুকেই তিনি সমর্থন করেন না। এতে তো শুধু প্রচুর লোকের জীবন গেলো, সমাজের একটা ক্ষতি হলো বই তো নয়। এতে করুরই কোন সুবিচার হলোনা।

    অন্য এক বিবৃতিতে ড: সেন বলেছেন "এই যে সেনা নামানো হলো, এত হানাহানি হলো,ছয়ই এপ্রিল ছিয়াত্তর জন পুলিশ জওয়ানকে প্রাণ দিতে হলো, এই সমস্ত ঘটানাটাই অত্যন্ত দু:খজনক । সরকার আর মাওবাদীদের এই বিরোধের জেরে আরো কত মানুষ জীবন দিচ্ছে, কত মানুষের মৃত্যুর খবরটুকু অব্দি কেউ জানতেও পারেনা, সবার চোখের আড়ালে কত লোক মরে যাচ্ছে, এর থেকে দু:খের ব্যাপার আর কি হতে পারে? কোনোরকম সামাজিক বা রাজনৈতিক বদল আনতে গিয়ে উগ্রতার রাস্তা নেওয়া, সেনা নামিয়ে তল্লাশী চালানো এগুলোকে আমরা একেবারেই সমর্থন করিনা। সে যে পক্ষ থেকেই হোক না কেন। চারপাশে এখন শুধু দেখতে পাচ্ছি যে রীতিমতো আটঘাট বেঁধে অপরাধ চলছে, কেউ কোন বিচার পাচ্ছেনা। আমরা সবার সাথে গলা মিলিয়ে বলতে চাই যে এই সন্ত্রাস বন্ধ হোক, সরকার আর বিদ্রোহীরা শান্তিপূর্ণ আলোচনায় বসুন, যাতে এই অবস্থায় এবার বদল আসে।"

    "এই যে শুধু দান্তেওয়াড়াতেই সাতশো গ্রাম থেকে প্রায় সাড়ে তিন লাখ লোককে উচ্ছেদ করা হয়েছে এর থেকেই বোঝা যায় ছত্তিশগড় এলাকায় কি চলছে" -- পেশায় ফিজিশিয়ান ড: সেন বললেন। উনি ন্যাশনাল নিউট্রিশন মনিটরিং ব্যুরোর রিপোর্টটা দেখাচ্ছিলেন। তাতে দেখা যাচ্ছে তেত্রিশ শতাংশ মানুষ, তার মধ্যে শতকরা পঞ্চাশজন আদিবাসী আর শতকরা ষাটজন শ্যিডুল কাস্ট, সারা বছরই অপুষ্টিতে ভোগেন -- "বুঝতে পারিনা যেসব এলাকায় কোন মাওবাদী হামলা হয়নি অন্তত সেখানে কেন এই সমস্যাটা নিয়ে কিছু করার কথা উঁচুমহল ভাবছেন না। উনি আরো বলেন যে 'জন সহযোগ' নামের একটি ছোট এনজিও যারা ছাত্তিশগড়ের বিলাসপুরে কাজ করছে তারা দেখিয়েছে যে প্রত্যেক বছর অগাস্ট থেকে নভেম্বর সময়টায় এই অঞ্চলের লোকে অপুষ্টি আর তার থেকেই হওয়া ম্যালেরিয়া, পালমোনারী টিউবারকুলোসিসের মত আরো নানা রকম অসুখে ভোগে -- 'এই এলাকায় তো কোনো মাওবাদী নেই। কাজেই সরকার যে অজুহাত দেখাচ্ছেন যে মাওবাদীদের জন্যই এই সমস্ত হচ্ছে, এই গরিবী, উন্নয়নের অভাব, অবিচার চলছে, সেটা তো এক্ষেত্রে খাটেনা।"

    ড: সেন জানান যে " প্রতি মাসে বডি মাস ইন্ডেক্স মেপে দেখা গেছে যে যখন আগের বছরকার তোলা ফসলের ভাঁড়ার শেষ হয়ে যায় তখনই বডি মাস ইন্ডেক্স অনেক খানি কমে যায়। আসলে ফসল ফুরিয়ে গেলে আর খাবার জোটেনা এদের, ফলে অপুষ্টি জেঁকে বসে, ইমিউনিটি ভীষণ কমে যায়। তার জন্যই ম্যালেরিয়া চেপে ধরে। এও দেখা গেছে যে শতকরা ৯৫ জন পালমোনারী টিউবারকুলোসিস রোগীর বডি মাস ইন্ডেক্স ১৮.৫ এর কম হয়।"

    দু'তরফেই মারা পড়ছে নিরীহ মানুষ, আমাদের নিজেদের মানুষ: 'পিপল্‌'স ইউনিয়ন ফর ডেমোক্র্যাটিক রাইট্‌স' এর প্রেস বিবৃতি।

    ৬ই এপ্রিল,২০১০ এর ভোরবেলায় দান্তেওয়াড়ায় সত্তর জন জওয়ান প্রাণ দিয়েছেন। 'পিপল্‌'স ইউনিয়ন ফর ডেমোক্র্যাটিক রাইট্‌স'এর মতে এটা সরকারের 'অপারেশন গ্রীনহান্ট'এরই একটা দুর্ভাগ্যজনক ফল ছাড়া আর কিছু নয়। দেশে যখন বহু দিন ধরে ক্ষরা চলছে,ফসল উৎপাদন চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, জিনিষপত্রের দাম প্রায় আকাশ ছুঁয়েছে সেই সময় এই সমস্ত সমস্যার সমাধানের কথা না ভেবে 'বামবাদী চরমপন্থী'দের সাথে যুদ্ধে নামাটা সরকারের একটা চরম ভুল সিদ্ধান্ত বলে আমরা মনে করি। সরকারের কাছে আমরা বহুদিন ধরে আর্জি জানিয়ে আসছি যে কোনো কারণেই আমাদের নিজেদের মানুষজনের মধ্যে যাতে গৃহযুদ্ধ না বাধে সেদিকে যেন লক্ষ্য রাখা হয়। তাছাড়া খনিজ সম্পদ খুঁড়ে তোলা, শিল্পোদ্যোগের জন্য জমি নিয়ে নেওয়া, বন কাটা, নদীর জলের ব্যবহারের অধিকার এইসব নিয়ে সরকার যে MOU সই করেছেন আর তাই নিয়ে আদিবাসীদের যে অভিযোগ উঠেছে এই বিষয়টাও যাতে শান্তিপূর্ণ ভাবে আলোচনা করে মিটিয়ে নেওয়া হয় সেই নিয়েও আমরা বহু অনুরোধ করেছি। তা না ক'রে জোর-জবরদস্তি করলে তার ফল তো খারাপই হচ্ছে। দু'তরফেই মারা পড়ছে নিরীহ মানুষ, আমাদের নিজেদের মানুষ।

    সরকার যুদ্ধের রাস্তাই বেছে নিয়েছেন, কাজেই এই ভাবে এত মানুষের মৃত্যুর জন্য কিন্তু সরকার ছাড়া আর অন্য কেউ দায়ী নন। এখানে আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই যে তিনদিন ধরে অভিযানের পরে যখন রক্ষীরা ফিরছিলো তখনই এই হঠাৎ হামলাটা হয়। আমাদের সংস্থা সাধারণ মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করে। কাজেই যেকোনো মানুষের মৃত্যুই আমাদের দু:খজনক, সে রক্ষীরাই হোক, বা মাওবাদীরাই হোক বা আম জনতা। আমরা শুধু এইদিকেই সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইবো যে ওঁরা যদি আরেকটু মানবতার দিক দিয়ে ভাবতেন, ওঁরা যদি এর মধ্যে এই সেনা নামানোর সিদ্ধান্ত না নিতেন তাহলে আজকে এই রক্তপাত ঘটতোনা, এতগুলো মানুষের প্রাণ যেতোনা।

    হিংসার খেলা ও সবরকমের সামরিক অভিযান বন্ধ করে আপনারা আলোচনায় বসুন তৃণমূল স্তরে: AID এর বিবৃতি

    ৬ই এপ্রিল মঙ্গলবার ভোরে ছত্রিশগড়ের দান্তেওয়াড়ায় মাওবাদী আক্রমনে সত্তরাধিক সিআরপিএফ জওয়ানের মৃত্যুর তীব্র নিন্দা করছে AID । মৃতদের পরিবারবর্গ এবং ঘনিষ্ঠদের প্রতি আমাদের আন্তরিক সমবেদনা রইল। আমরা আশা করি এই হামলায় যারা প্রাণ হারালেন তাদের পরিবারের জন্য সরকারের তরফ থেকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং জীবনধারণের উপযোগী সবরকমের সহযোগিতার বন্দোবস্ত করা হবে।

    সেই সাথে আমরা এটাও বলতে চাই অপরেশন গ্রীন হান্ট বা এই জাতীয় সামরিক অভিযান ছত্রিশগড়, পশ্চিম বাংলা, বিহার, ঝাড়খন্ড ও ওড়িশায় ঘটে চলা অন্তহীন সন্রাসের কোন সমাধান হতে পারে না। বিভিন্ন রিপোর্টে প্রকাশ দান্তেওয়াড়ার প্রায় দুই লাখ মানুষ গৃহচ্যুত, সাড়ে ছশো গ্রাম জনশূন্য। রাজ্য পুলিশ ও সালওয়া জুড়ুম বাহিনীর ধর্ষণ, হত্যা, লুটপাট, উৎখাত ও অরাজকতার বিবরন বহুবার প্রকাশ্যে এসেছে বিভিন্ন সংগঠনের বিবৃতিতে এবং উল্লিখিত হয়েছে সুপ্রীম কোর্টে। একদিকে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার, অন্যদিকে মাওবাদীরা ,উভয়ের কাছেই আমাদের একান্ত অনুরোধ অবিলম্বে এই হিংসার খেলা ও সবরকমের সামরিক অভিযান বন্ধ করে আপনারা আলোচনায় বসুন তৃণমূল স্তরে, সিটিজেনস ইনিশিয়েটিভ অফ পিসের মত অসামরিক সংগঠনদের সাথে নিয়ে। বঞ্চনা, উৎখাত, জমি ও জঙ্গলে আদিবাসীদের অধিকার, এই অঞ্চলে mining operations অস্বস্তিদায়ক উপস্থিতি এবং অরাজকতা - আলোচনা হোক সব কিছু নিয়েই।

    ---------------------------------------------------------------------------------------------------------

    লালগড়

    অবস্থা তো প্রায় এক ই রকম , লালগড়েও। রাষ্ট্র, মাওবাদী দু পক্ষ থেকেই হিংসার চাপানউতোর অব্যাহত। চলেছে এলাকা দখলের খুনোখুনির রাজনীতি। প্রাণ দিচ্ছেন উলুখাগড়ারা। অসহায় ভাবে দেখে যাওয়া ছাড়া আমরা কি কিছুই করতে পারিনা ? কিছু লিটল ম্যাগ পত্রিকার পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে , রাষ্ট্রপতির কাছে এই চিঠিটি পৌঁছানোর। সমর্থন করলে আপনিও এতে সই করতে পারেন, এখানে মেইল করে: shamiksarkar@gmail.com এ।

    শ্রীমতী প্রতিভা পাতিল
    মাননীয় রাষ্ট্রপতি, ভারত সরকার
    নয়া দিল্লি
    দেশের ভিতর একটা "যুদ্ধ'-এর খবর আমরা সকলেই কমবেশি জানতে পারছি। বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত বাহিনী এবং আধুনিক ভবহ যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করে উড়িষ্যা, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড় সহ দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে এই হিংস্র মোকাবিলার ঘটনা একের পর এক ঘটে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গেও এই জ্ঞযুদ্ধঞ্চ চলছে লালগড়-জঙ্গলমহল সমেত মেদিনীপুর-বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চল ও জঙ্গল এলাকায়। এরাজ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি, যে কোন অন্য যুদ্ধের মতৈ এই যুদ্ধে প্রতিদিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। যদিও যুদ্ধের ঘোষিত দুটো পক্ষ রয়েছে, কিন্তু এই দুঞ্চপক্ষের বাইরেও হাজার হাজার মানুষ হয়ে পড়ছে গৃহহীন, যুবকেরা হয়রানির ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছে অন্য রাজ্যে, মহিলারা নিগৃহীত হচ্ছে, হতাহত হচ্ছে সাধারণ পরিবারের সদস্যরা, নষ্ট হচ্ছে তাদের খেতের ফসল আর রোজকার জীবিকা। কেউ কেউ বলছে, এটা যুদ্ধের জ্ঞকোল্যাটারাল ড্যামেজঞ্চ অর্থাৎ পার্শ্ব-ক্ষয়ক্ষতি। কিন্তু আমরা সাধারণ পারিবারিক মানুষ উপলব্ধি করি, সমস্ত যুদ্ধের মতো এটাই বর্তমান যুদ্ধের আসল ক্ষয়ক্ষতি। যুদ্ধে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষের প্রত্যেকটি মৃত্যুই সমান দু:খজনক।
    ভারতরাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে আপনি নিশ্চয় আমাদের সঙ্গে একমত হবেন যে, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তার নাগরিকদের কোন অংশের প্রতিই প্রতিহিংসার মনোভাব বাঞ্ছনীয় নয়; যদি নাগরিকদের কোন অংশ বিপথগামীও হয়, রাষ্ট্র কি সেই জ্ঞবিপথগামীঞ্চ নাগরিকদের ধ্বংস বা নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার কথা ভাবতে পারে? আমরা গভীর দু:খের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, রাষ্ট্র এক্ষেত্রে সেই ধরনের মনোভাবই তার পরিকল্পনা ও কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত করে চলেছে। আমরা অবশ্যই একই সঙ্গে বলব, এই হিংস্র মোকাবিলা, প্রতিহিংসা তথা যুদ্ধের মনোভাব এখনই সমস্ত পক্ষ ত্যাগ করবেন। কখনই দিনের পর দিন এই বিপুল ক্ষয়ক্ষতি চলতে দেওয়া যায় না, একে মুখ বুজে মেনে নেওয়া যায় না --- এখনই দেশের ভিতর এই যুদ্ধ বন্ধ হওয়া দরকার। রাষ্ট্রের দিক থেকে কোন জনমত না নিয়ে একতরফাভাবে এই যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে; দেশের ভিতর দেশের মানুষেরই অর্থে জনসমাজের ওপর এইভাবে যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া অনৈতিক এবং অসাংবিধানিক।
    আশা করি, আপনি আমাদের এই আবেদন জরুরি এবং ন্যায্য বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

    আর এসবের মধ্যেই জাতীয়তাবাদের দোহাই দিয়ে আবার তৈরি হয়ে চলেছে নতুন নতুন কালা নিয়মকানুন। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনোরকম কণ্ঠস্বরকেই রুদ্ধ করার নতুন এক প্রয়াস দেখা গেল এবার দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে।

    দিল্লি

    জে এন ইউয়ের হোস্টেলে এখন থেকে আর সেই সব সিনেমার প্রদর্শন করা যাবে না, যে সব সিনেমার সে¾ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশনের ছাড়পত্র থাকবে না। এমনকি হোস্টেলে আর কোনো ধরনের অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা ইত্যাদির আয়োজন করতে গেলেও যে অনুমতিপত্র পেশ করতে হবে তার খসড়ায় বলা হয়েছে "জাতীয়তাবাদ/জাতীয় সংহতির প্রতি স্পর্শকাতর এবং জাতীয় নিরাপত্তার উপর প্রভাব ফেলতে পারে এমন কোনো অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেওয়া হবে না। কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে গেলে আয়োজকদের অন্তত এক সপ্তাহ আগে অনুমতি নিতে হবে। '
    গত ২৬শে মার্চ জে এন ইউএর এক মিটিংয়ে এই নিয়মগুলি ঠিক করা হয় আর গত ২৯শে মার্চ খসড়ার কপি একটি চিঠি বিতরণ করা হয় অ্যাসোসিয়েট ডীন অফ স্টুডেনে্‌ট্‌সর দ্বারা যাতে বলা হয়েছে সমস্ত হোস্টেলে এই বিধিনিষেধগুলি অবিলম্বে চালু করতে।
    এর প্রতিবাদে মুখর ছাত্ররা। অধ্যাপকগণ ও। সরাই ডট নেটে আজ প্রকাশিত হয়েছে রোমিলা থাপার, প্রভাত পটনায়ক, তনিকা সরকার, জয়তী ঘোষ সহ সাতান্ন জন অধ্যাপকের স্বাক্ষর সম্বলিত কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো একটি চিঠি। তাতে বলা হয়েছে :
    'এই যে ইস্তেহার দেওয়া হয়েছে, দুটো কারণে আমরা এর বিরুদ্ধে। এক তো জেএনইউ এর বাকিদের সাথে কোনরকম আলোচনা না করেই এরকম কোন নিয়ম জারি করার অধিকার ইউনিভার্সিটির কর্তাব্যক্তিদের নেই। আর দ্বিতীয়ত: এভাবে কথা বলার, মতামত দেবার স্বাধীনতার ওপরে কড়াকড়ি নিয়ম বসানোটাও কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায়না।

    আজকের দিনে যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই খোলাখুলি মতামত দেওয়ার এক্তিয়ার সবার থাকে, তাতে যতই বিতর্ক হোক না কেন। আর বিশেষ করে জেএনইউ তো তৈরীই হয়েছিলো ডিমক্র্যাটিক জীবনধারা,সামাজিক চাহিদা এইসব ব্যপারকে আরো বেশি করে উন্নত করার জন্য। জেএনইউ এর সংস্কৃতি আর ইতিহাসের একটা অঙ্গই হলো খোলাখুলি আলোচনা, তর্কবিতর্ক। এই ইশতেহার তো সেসবকে পুরো তছনছ করে দেবে।

    আমাদের মতে জেএনইউ এমন একটা জায়গা যেখানে সবার আগে মতামত দেবার স্বাধীনতাকে যেকোন ভাবেই হোক বাঁচিয়ে রাখা দরকার। মানুষের বক্তব্যের ওপরে এই রকম কাঁচি চালানো নিয়মের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কর্তৃপক্ষকে সওয়াল করার ক্ষমতা রাখার দরকার। এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।'

    -----------------------------------------------------------------------------------------------------------------

    লেখা, অনুলিখন ও অনুবাদ: শমীক সরকার, সুদেবী, আত্রেয়ী দাশগুপ্ত, শুচিস্মিতা সরকার, সুচেতনা দত্ত, ঈপ্সিতা পাল ভৌমিক।

    ১৯শে এপ্রিল, ২০১০
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • খবর | ১৯ এপ্রিল ২০১০ | ৫৯৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন