এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • উলটে দেখুন

    তির্যক লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৩ | ৯৭২ বার পঠিত
  • গিনেস বুক অফ রেকর্ডসের খাতায় নিজের নাম তুলবার নেশায় পেরেকের ওপর গোটা শরীরের ভর রেখে দু’পায়ে দাঁড়িয়েছিলেন মানুষটি। সেই দৃশ্য দেখে আমরা যখন রোমাঞ্চিত, তখন পাশে বসা এক প্রবীণ শিক্ষক মন্তব্য করলেন “সারাজীবন ধইর্যা চেষ্টা কইর্যা যে পেরেকের উপর খাড়াইল, তাতে কী হইল!” কথাটা শুনে সেই যে ভ্যাবাচ্যাকা খেলাম সে অবস্থা আর কাটল না। মাঝে মাঝেই কথাগুলো মনে পড়ে আর নিজের মনে নিজের সঙ্গে তর্কাতর্কি চালিয়ে যাই।ক’দিন আগে কথাটা আবার মনে পড়ল এই শচীন তেন্ডুলকরের ভারতরত্ন খেতাব পাওয়া দেখে। মনের মধ্যে কেউ যেন বলে উঠল “সারাজীবন ধরে কাজের মধ্যে তো করল শুধু ব্যাটে বল ঠেকানো। তার জন্য খেতাব যা যা পাওয়ার তা তো পেয়েছেই, আবার ভারতরত্ন কেন বাবা !” 

    না, যা ভাবছেন তা নয়, এটা শচীন বনাম সৌরভ বা ক্রিকেট বনাম অন্য খেলার গল্প নয়, শচীন এখানে একটা না্ম মাত্র। এই কথাটা আগেও মনে হয়েছে, অন্য প্রসঙ্গে। যেমন ধরুন গতবছর (২০১২) আমাদের বিশ্বব্যাপী চতুর্বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার(অলিম্পিক গেমস) সময়। ছ’টা পদক পেয়ে ভারতীয় ক্রীড়াদপ্তর তাদের এযাবৎ শ্রেষ্ঠ কেরামতি দেখাল যা আবার অন্যন্য দেশের তুলনায় প্রায় আনুবীক্ষণিক! সেই নিয়ে এদলে-ওদলে বিবিধ চাপান-উতোরের মধ্যেও এই কথাগুলো আমার মনে পড়েছিল! ভাবছিলাম মূলতঃ মানুষের শারীরিক ক্ষমতার ওপরে ভিত্তি করে এই যে হরেক রকম ক্রীড়াশৈলী তৈরি হয়েছে আর তাকে কেন্দ্র করে এই যে বিশ্বজোড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন যাতে বিশ্বসুদ্ধ সব দেশের মানুষ সামিল হচ্ছেন, সেটা সত্যি সত্যি কতটা গুরুত্বপূর্ণ! আমাদের দেশের খেলোয়াড়রা যে বেশির ভাগ খেলায় জিততে পারেননি তার পেছনে তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যর্থতা, পরিশ্রম ও একাগ্রতার অভাব, পরিকাঠামোর ত্রুটি থেকে অন্তর্দেশীয় রাজনীতির প্রভাব সবকিছুই থাকতে পারে কিন্তু এই পারা-না-পারাটায় আসলে কী এসে যায়? এই যে শচীনকত্তা সারা জীবন ধরে শুধু ঠিকঠাক ব্যাট হাঁকাবার সাধনা করে গেলেন আর বেচারা উইসান বোল্ট জীবনের সব কিছু বাদ দিয়ে বছরের পর বছর লড়ে চল্লেন শুধু একটা নির্দিষ্ট দুরত্ব পার হবার সময়টা কয়েক মিলিসেকেন্ড কমাতে এতে সামগ্রিকভাবে মানুষ জাতিটার কী মঙ্গল হল? এই যে সেদিন চিনের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভেতরের ছবিতে দেখলাম ফুলের মত কোমল শিশুরা তাদের শৈশবের সব কিছু স্বাভাবিকত্ব হারিয়ে কড়া তত্ত্বাবধানে তৈরি হচ্ছে সে তো শুধু সুদুর ভবিষ্যতে কোনোদিন এক ‘মিছিমিছি’ প্রতিযোগিতায় জেতার জন্যই! কিন্তু কিছু মানুষ খুব জোরে দৌড়োতে পারলে, খুব উঁচুতে লাফ দিতে পারলে, খুব জোরে বল পেটালে বা খুব তাড়াতাড়ি সাঁতার কাটতে পারলে সত্যি জগতের কতটা লাভ হয়, কীভাবেই বা হয় ?     

    লক্ষ্য করবেন আমি কিন্তু সামগ্রিকভাবে মানুষের উন্নতির কথা বলেছি, শুধু ভারত বা চীন বা পশ্চিমবাংলা বা কলকাতার উন্নতির(বা সম্মানের) কথা বলিনি। তাই দেশপ্রেম বা দেশের সম্মান জাতীয় বিষয়গুলো নিয়ে আপাতত ভাববেন না। প্রশ্নটা একেবারেই গোড়ায় গলদ বিষয়ক। অর্থাৎ খেলাধুলো সম্পর্কিত বিষয়গুলোকে প্রতিযোগিতার ছাঁচে ফেলে ঢালাই করা আর সেই সব প্রতিযোগিতায় জেতা-হারা কে যতটা সম্ভব ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে একটা বিরাট সাফল্য ও সম্মান (এমনকি দেশের সেবা!) হিসেবে দেখা ও দেখানো, এইটা কতটা সঙ্গত, প্রশ্নটা সেইখানেই।

    এই প্রশ্নটা কেন উঠছে সেই কথাটা এইবার বলি। অলিম্পিকের কথাই ধরা যাক প্রথমে। প্রথমতঃ, অলিম্পিক গেমস একটা অসম প্রতিযোগিতা, যেখানে শারীরিক সক্ষমতার তুলনা হয় শারীরিকভাবে অ-তুলনীয় ব্যক্তিদের মধ্যে। মানে উচ্চতায়, ওজনে, শারীরিক গঠনে, খাদ্যাভ্যাসে যারা অনেকটা আলাদা তাদের লড়তে হয় একই মাপের লক্ষ্যপূরণের জন্য, যে মাপটা অবশ্যই ‘বড়ো’দের ঠিক করে দেওয়া। এটাই কি একটা চূড়ান্ত অবিচার নয়! দ্বিতীয়তঃ, একেবারে স্বাভাবিক ও সাধারণ কিছু দক্ষতাকে প্রতিযোগিতার বিষয় হিসেবে দাঁড় করানো হচ্ছে আর সেই দক্ষতাকে আরো বাড়িয়ে তোলার জন্য বিপুল অর্থব্যয়ে (কিছু ক্ষেত্রে কৃত্রিম পদ্ধতিতে) ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেই চেষ্টার অংশীদার করে তোলার জন্য নানাভাবে উৎসাহিত (পড়ুন পুরস্কৃত) করতে হচ্ছে প্রতিযোগীদের ।অনুশীলনের চাপে (এবং পুরস্কারের আকর্ষণে) তাঁরা একটা অমানুষিক দক্ষতা অর্জন করছেন, যা তাঁদের ব্যক্তিগত সাফল্য, খ্যাতি ও স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিচ্ছে অথচ সেটাকে দেখানো হচ্ছে ‘দেশের সাফল্য’ হিসেবে। প্রতিযোগিদের জীবনের স্বাভাবিকতা হারিয়ে তার দাম দিতে হচ্ছে কিন্তু এই গোটা ব্যাপারটা যাঁরা উপভোগ করছেন তাঁদের কাছে এই প্রতিযোগিতা আসলে কিছুটা বিনোদন ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ  দৌড়ের সময়টা একপলক কমানো বা লাফের উচ্চতা একফুট বাড়ানো একটা ব্যাক্তিগত অর্জন বা উত্তরণ যাই হোক, তাতে আপামর জনসাধারণের কোনো লাভ-ক্ষতি নেই। যদি দেশীয় পর্যায়ে ভাবি, অর্থাৎ আমাদের ছেলেমেয়েরা আরো একটু জোরে দৌড়লে বা কয়েকটা লক্ষ্যভেদ করতে পারলে মানে অলিম্পিকে আরো দু-চারটে পদক পেলে বা ক্রিকেটে আর দশটা দেশকে হারিয়ে একটা কাপ জিতলে যে তথাকথিত সম্মান পাবেন, তাতে একজন সাধারণ ভারতীয় নাগরিকের জীবনযাত্রার কি কোনো উন্নতি হবে? কিচ্ছু হবে না, কারণ দেশের সম্মান নামক বায়বীয় পদার্থটি এইসব উন্নয়নের কাজে কোত্থাও লাগে না!  

    তার মানে ভুলেও ভাববেন না যে আমি খেলাধুলো ও শরীরচর্চাকে (এমনকি বিনোদনকেও) গুরুত্বহীন মনে করছি। সেটা একেবারেই নয়, বরং প্রতিটি মানুষের মধ্যে কিছুটা শরীরচর্চার গুরুত্ব বোঝার মত সচেতনতা আসাটাকে আমি সামাজিক অগ্রগতির একটা দিক বলেই মনে করি। সুস্থ শরীর মানুষের জীবনযাত্রার একটা প্রাথমিক ও মৌলিক উপাদান আর সেই কারণেই জীবনযাত্রার মানের উন্নয়নের একটা ধাপ হল নিয়মিত শরীরচর্চা। অনেকে সেটা খুব ভালবেসেই করেন, যেমন আমার পরিচিত একটি ছোট্ট মেয়ে রোজ দশ কিলোমিটার দৌড়োয়, যেটা না করতে পারলে নাকি তার মন ভাল থাকে না! কিন্তু সেইটুকু শরীরচর্চার জোরে তো আর বিশ্বকাপ কিম্বা অলিম্পিকের মানে পৌঁছানো যায় না। অলিম্পিকের বিজয়ী ক্রীড়ানক্ষত্ররা জীবনের অনেক কিছু বাদ দিয়ে ক্রমাগত যে অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতাকে প্রায় যন্ত্রের সমকক্ষতায় নিয়ে যান, স্বাভাবিক জীবনে তো সেই মানের শরীরচর্চার প্রয়োজন নেই। এই মানে পৌঁছতে পারার পেছনে সেই প্রতিযোগীর অসীম পরিশ্রম, মনোযোগ, আত্মত্যাগ অনেক কিছু আছে কিন্তু এই এতসব করে শেষ পর্যন্ত তিনি যা করলেন (মানে কয়েক ফুট বেশি লাফানো বা কয়েক মিলিসেকেন্ড কম সময়ে দৌড়োনো) তা মানুষের মৌলিক উন্নয়নে কি কোথায় কাজে লাগল? যদি কিছু না-ই করে, তবে কেবল কিছুটা বিনোদনের স্বার্থে আমরা কতটা অপচয়কে ‘দরকারি’ বলে মেনে নেব আর কেনই বা নেব! বুলফাইটও তো একসময় দারুণ জানপ্রিয় বিনোদন ছিল, এখন বন্ধ হয়ে গেছে। আত্মরক্ষার স্বার্থে কুস্তির মারপ্যাঁচ জেনে রাখব সেটা ভালো কথা কিন্তু বিনা প্রয়োজনে দুটো লোক পরস্পরকে ঘুষোচ্ছে এই  দেখে আমরা আমোদ পাবো, এটা কতটা স্বাস্থ্যকর বিনোদন, একবার ভেবে দেখব না? 

    এই অবধি পড়ে অনেকেই জানি মাথা নেড়ে বলবেন “এরকম ভাবলে তো সবকিছুকেই বন্ধ করে দিতে হয়...ইত্যাদি”। উত্তরে সবিনয়ে  জানাই যে আজ্ঞে না মহাশয়রা, ‘সবকিছুই’ এমন নহে। মানুষের মৌলিক স্বার্থ, মৌলিক সাফল্য, মৌলিক উন্নয়ন ইত্যাদি বলেও জগতে কিছু হয়, যার পরিধিও নেহাত ছোট নয়। তবে এইসব মৌলিক উন্নয়নের অনেককিছুর গোড়ায় অবশ্যই আছে শিক্ষা। শুধু অনেক উঁচু লাফিয়ে বা অনেক জোরে দৌড়ে কি তির ছুঁড়েই কিন্তু চীনারা পৃথিবীর নজর তাদের দিকে ঘোরায় নি, সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষায়-শিল্পে-বিজ্ঞানেও সমান তালে এগিয়েছে। কোনো দেশের কয়েকডজন লোক অলিম্পিকে দৌড়ে-লাফিয়ে-সাঁতরে মেডেল পেলেও কিম্বা বিশ্বকাপ জিতে এলেও দেশের সাধারণ মানুষের খাদ্য-স্বাস্থ্য-বাসস্থানের সমস্যার কোনো সুরাহা হয় না কিন্তু কয়েক ডজন ডাক্তার-প্রযুক্তিবিদ-বিজ্ঞানী-শিক্ষাবিদ বিশ্বমানের কাজ করলেও তা দেশের মানুষের মৌলিক সমস্যায় সরাসরি উপকারে আসতে পারে। তাই খেলাধুলোয় বিশ্বমানে পৌঁছোবার চেয়ে পড়াশোনায় পৌঁছোনর চেষ্টা করা এমনকি দেশের মানুষকে ন্যূনতম শিক্ষার আলোয় আনাও অনেক বেশি জরুরি।

    অবধারিত প্রশ্ন উঠবে যে ভারত গরীব দেশ বলে ভারতে কয়েক কোটি শিশু অনাহারে থাকে বলে কি কেউ গান গাইবে না, ছবি আঁকবে না, ছবি তৈরি করবে না, খেলাধুলো করবে না, না কি সরকার খেলাধুলো-শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষকতা করবে না? এই প্রশ্নের উত্তরে বলি ‘চর্চা’ আর ‘প্রতিযোগিতা’ এক কথা নয়, আমি বলতে চাইছি পড়াশোনা-শিল্পকলা-খেলাধুলো, সব কিছুরই চর্চা চলুক, সরকার তার উন্নতির চেষ্টা করুক কিন্তু সবকিছুকে প্রতিযোগিতার বিষয় হিসেবে দাঁড় করানো দরকারি নয়। বিশুদ্ধ বিনোদনমূলক বিষয়গুলো থাকুক ‘চর্চা’ ও ‘প্রদর্শন’ পর্যায়ে, তাকে প্রতিযোগিতায় নিয়ে যাবার দরকার নেই। আর গেলেও তা হোক একেবারেই দেশীয় পর্যায়ে। প্রতিযোগিতা হোক সেই সব বিষয়ের যা মানুষের উন্নয়নের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, সেইরকম প্রতিযোগিতায় জেতার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় খরচ করুক, যাতে আখেরে লাভ আছে। যদি ভারত ক্রিকেট না খেলেঅলিম্পিকে অংশগ্রহণ নাই নেয়, কী ক্ষতি হবে দেশের? ভেবে দেখা তো যেতে পারে! অলিম্পিকে পদক পাওয়া মানে সারা বিশ্বের নজরে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা, যা হয়তো দেশীয় অর্থনীতিতেও কিছু প্রভাব ফেলে, সেসব কথা মাথায় রেখেও বলি এই পরোক্ষ স্বার্থ কি এই উন্নয়নশীল (পড়ুন গরীব) দেশের প্রত্যক্ষ উন্নয়নের সমকক্ষ হতে পারে? সেটা নিশ্চই একটা ভাবার বিষয় । কিন্তু মৌলিক প্রশ্নটা ছিল অলিম্পিক গেমস আদৌ যদি নাই থাকে, জগতের কী ক্ষতি হবে?

    মনে করিয়ে দিই এই লেখায় অলিম্পিক গেমস একটা উদাহরণ মাত্র, আসলে আলোচনাটা যে কোন আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতারই সারবত্তা নিয়ে। আর খেলাধুলো হল এমনই একটা ক্ষেত্রে যেখানে প্রতিযোগিতাই উৎকর্ষ লাভের একমাত্র পথ কারণ ওই যে বললাম অলিম্পিকের বিভিন্ন পর্যায়ে জেতার মত জায়গায় যেতে হলে একটা মানুষকে তার স্বাভাবিক জীবন থেকে অনেকটা দূরে গিয়ে যে আমানুষিক পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, শুধুমাত্র ভালোবেসে কোনো মানুষ ততটা যেতে চাইবেন না। তার জন্য প্রতিযোগিতা ও পুরস্কারের টোপ দিতেই হবে আর দৈহিকভাবে শক্তিশালী প্রতিযোগী এগিয়েই থাকবেন। অর্থাৎ খেলাধুলোর জগতে সাফল্য পেতে গেলে একটা বিরাট ‘ফ্যাক্টর’ হল জন্মগত শারীরিক ক্ষমতা। এইখানে খেলাধুলো অন্যন্য বিনোদনের থেকে মানে ছবি আঁকা, গান গাওয়া, সাহিত্য রচনা থেকে আলাদা হয়ে যায়। এইসব অন্যন্য ক্ষেত্রে ঘটা করে প্রতিযোগিতার আয়োজন না করলেও যারা যেটা ভালবাসে, সেটার চর্চা চালিয়ে যায়, আর সেই চর্চায় শিল্পীর সঙ্গে আত্মিক ও বৌদ্ধিক উন্নতি ঘটে রসিকেরও। শিল্পী নিজের ভেতরেই নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করে্ন, সমকালীন শিল্পী-সাহিত্যিকদের চেয়ে অন্যরকম বা আরো ভালো হবার তাগিদ অনুভব করেন, আর সেই করেই তাঁদের নাম ছড়ায় দেশে বিদেশে। তার জন্য কোনো  প্রতিযোগিতায় প্রথম হবার দরকার পড়ে না। ছবি দেখতে গেলে লোকে প্রদর্শনীতেই যায়,  সেখান থেকেই পছন্দমত ছবি কেনে কোটি কোটি টাকা দিয়ে (হতে পারে তা প্রিয় মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা!)।একজন শিল্পীর গান শুনতে বা বই কিনতে গিয়ে কেউ জানতে চায় না ইনি ‘প্রথম’ কিনা ! এইসব মৌলিক বিনোদনের ক্ষেত্রে ভীমসেন যোশীকে বব ডিলান হয়ে উঠতে হয় না, এমনকি আলি আকবর খানও হতে হয় না, রবীন্দ্রনাথকেও টেনিসনের সঙ্গে লড়াই করে ‘জিততে’ হয়না। সবাই সমান গুরুত্ব পায়। অথচ দৌড়ের সব ব্যাকরণ মেনে চলেও শুধু একটা প্রতিযোগিতায় জিততে না পারায় পি টি ঊষা বা মিলখা সিং ফোর্থ ক্লাবের মেম্বারই হয়ে থাকেন, কোনোদিনই প্রদীপের আলোয় আসেন না। তাই মৌলিক প্রশ্নটা হল প্রতিযোগিতার আসর না বসালে যে গুণপনা বিশেষ উন্নয়ন হয় না সেইরকম বিষয়কে কতটা গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ ? অলিম্পিক গেমস না থাকলে যদি মানুষের দৌড়ের সর্বনিম্ন সময়, লাফানোর উচ্চতা এইসব নথিতে বিশেষ বদল না হয় তো না-ই হবে; তাতে জগতের কি ক্ষতি হবে !

    সত্যি বলতে কি খেলাধুলোয় এখন আর স্বতঃস্ফূর্ত পটুত্ব আর কতটুকুই বা আছে! প্রতিযোগীরা কোথায় অনুশীলন করছেন, কীরকম পরিকাঠামো পাচ্ছেন (কী কী ওষুধ খাচ্ছেন কিম্বা কার শরীরে কী কী জিন ঢোকানো হয়ছে, সে সব কথা না হয় ছেড়েই দিলাম) তার ওপরই তো নির্ভর করছে অনেক কিছু! সেই কোন আদ্যিকালে কে দুবেলা বই বগলে দশ মাইল দৌড়ে ইস্কুলে যেতে-আসতে গিয়ে  ‘ন্যাচারাল রানার’ হয়ে উঠেছিলেন, সেই দিনকাল তো এখন আর নেই। অলিম্পিক গেমসের কয়েকশো সোনা-রুপো-ব্রোঞ্জ পদকের মধ্যে কয়েকটা (সর্বোচ্চ ছয় বা একটাও নয়!) পাওয়া আর অনেকগুলো না-পাওয়া দিয়ে গড়া যে ‘পার্টিসিপেশন’ তাও যদি ভারতীয় পরিকাঠামোতেই আয়ত্ত করা যেত, বুঝতাম! কিন্তু সেই তো শুরু থেকেই তাহাদের দেশে গিয়ে তাহাদের কথামতো তৈরি হওয়া... এতে ভারতীয়ত্বই বা থাকল কতটুকু? তাই প্রশ্নটা এসেই যায়, যে পারদর্শিতা সত্যিকারের কোনো কাজে লাগে না আর যা ঠিক পুরোপুরি নিজস্ব ক্ষমতার ওপর নির্ভরই করে না, তাকে এত গুরুত্ব দেবার কি কিছু আছে? তাছাড়া অলিম্পিকে সাফল্য তো ভারতের মত একটা দেশের প্রকৃত ছবিটাও তুলে ধরে না; অর্থাৎ ভারতীয়রা অলিম্পকে দু-চারটে পদক পেলেই তো ধরে নেওয়া যায় না ভারতের সাধারণ নাগরিকের গড় স্বাস্থ্য ও শরীরচর্চার মান যথেষ্ট উন্নত! বরং এই গুটিকয়েক খেলোয়াড়কে অলিম্পিকের জন্য তৈরী করতে, বিদেশে প্রশিক্ষণ নিতে (আর শেষ পর্যন্ত হেরে যাওয়া দেখতে) যে বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ হয় তাকে দেশের সাধারণ মানুষের, স্কুলের বাচ্চাদের দরকারি শরীরচর্চার পরিকাঠামো গঠনের কাজেই তো ব্যবহার করা যায়! তাতে বরং দেশের মানুষের কিছুটা সত্যিকারের উন্নয়ন হয়।

    বিশ্বকাপ কিম্বা অলিম্পিকে পদক যদি বিজ্ঞানে নোবেলের সমতুল্য ধরা হয় (যদিও আসলে তা নয় কারণ নোবেলের জন্য কোনো অনুশীলন কেন্দ্র খোলা যায় না), তাহলে আমি বলব নোবেলের জন্য দৌড় অনেক বেশী কার্যকর (যদিও সরাসরি কোনো প্রতিযোগিতায় নোবেল পুরস্কার ঠিক করা হয় না)।কারণ অলিম্পিক পদক না পেলে গোটা বিনিয়োগটাই জলে  গেল, আর পদক পেলেও সেটা দেশের লোকের কোনো কাজে লাগল না। কিন্তু নোবেল প্রাইজ শেষ পর্যন্ত পান বা না পান একজন বিজ্ঞানী বা অর্থনীতিবিদ বিশ্বমানের কাজ করলে সেই কাজটাই দেশের লোকের এবং বিস্তৃত প্রেক্ষাপটে, মানুষের কল্যাণে কাজে লাগে। সেটাই সবচেয়ে বড় কথা। কোটি কোটি লোক পড়াশোনা করে, গুটিকয়েক লোক নোবেল পুরস্কার পায়, অনেকেই সেই মানের কাজ করে কিন্তু পুরস্কার পায় না কিন্তু তাদের কাজও প্রতিদিন মানুষের ছোটবড় ভালোমন্দের সঙ্গে জুড়ে থাকে। তাছাড়া নোবেল পুরস্কার পাবার  দিকে তাকিয়ে একটা লোক পড়াশোনা বা লেখালেখি করে না, আর সেটা না পেলেই কাজ বন্ধ করে দেয় না। তেমনি বই পড়ার বা গান শোনার সময়ও এই লোক নোবেল বা গ্র্যামি পেয়েছেন কিনা তাই নিয়ে লোকে ভাবে না। সবচেয়ে বড় কথা সাহিত্যে / বিজ্ঞানে নোবেল বা গানের জগতে ‘গ্র্যামি’ পুরস্কার পাবার জন্য তো আর সরকার খরচা করে প্রশিক্ষণ নিতে পাঠায় না, তাই এইসব বিষয়ের সঙ্গে ক্রীড়া প্রতিযোগিতাকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না ! অলিম্পিক গেমকে বরং ‘মিস ইউনিভার্স’ বা ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ প্রতিযোগিতার সঙ্গে তুলনা করা যায়, যেখানে শারীরিক সৌন্দর্য্যকে প্রতিযগিতার বিষয় করে তোলা হয়; সেই সৌন্দর্য্য বিচারও হয় ‘দেখে’ নয়, ‘মেপে’ আর সেই মাপ ঠিক করে দেয় কিছু লোক নিজেদের সুবিধে মত। যতই মেয়েরা সাজগোজ করতে, সুন্দর হয়ে উঠতে ভালোবাসুক, সেই মাপে পৌঁছোতে গেলেও বিভিন্ন প্রতিযোগিকে যে অমানুষিক পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, ওই পুরস্কারের টোপ না ঝোলালে কেউ সেই পর্যন্ত এমনি এমনি যাবেন বলে মনে হয় না। তাই আপনি যদি ‘বিউটি কন্টেস্ট’ অপছন্দ করেন, তবে আপনার মনে রাখা উচিৎ ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও খুব একটা আলাদা কিছু নয়! 

    তাই বলি খেলাধুলো-শরীরচর্চা চলুক (সাজগোজ-প্রসাধনও চলুক যেন সবাইকে সুন্দর দেখায়!) কিন্তু তাকে বিশ্বমানে পৌঁছে দেবার জন্য প্রাণপাত করার কিছু দরকার নেই। ওই বিশ্বমান ব্যাপারটাই একটা আপেক্ষিক ব্যাপার আর খেলাধুলোয় বিশ্বমানে পৌঁছে আপনার দেশের (বা জগতের) সত্যিকারের কিচ্ছু লাভ নেই। তৃতীয় বিশ্বের এই উন্নয়নশীল দেশ থেকে অলিম্পকে পদক পেল কিনা বা গ্র্যান্ড স্ল্যাম বা বিশ্বকাপ পেল কিনা তাই নিয়ে বেশী ব্যস্ত না হয়ে কত বেশি শিশু পড়াশোনা-খেলাধুলোর সুযোগ পায় সেইটা নিয়ে ভাবা বোধহয় অনেক বেশী দরকারি।

    পুনশ্চঃ মতামতের আঙ্গিকে লেখা হলেও এই লেখা আসলে একটা চাপান-উতোর। নিজের সঙ্গে নিজের। সীমাবদ্ধ জ্ঞান-বুদ্ধি নিয়ে একটু অন্যভাবে ভাবা, উলটে দেখা বা ভাবা প্রাকটিস করা। তাই এই লেখার যথোচিত কাটাছেঁড়া বিরুদ্ধ যুক্তির অবতারণা একান্ত প্রার্থনীয়।

     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৩ | ৯৭২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • i | unkwn.***.*** | ০২ ডিসেম্বর ২০১৩ ১০:০১77737
  • উল্টো ভাবনার প্র্যাকটিস ভালো লাগল। কিন্তু এখনও মিনিময় শুরু হয় নাই কেন?
  • sanjay | unkwn.***.*** | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৬:৫১77738
  • খুব দরকারি চিন্তা ভাব্না।ভালো লাগলো।
  • hu | unkwn.***.*** | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৯:০৩77739
  • চমৎকার লেখা। আমিও ছোটো আই-এর মত মিনিময়ের অপেক্ষা করছি।
  • sosen | unkwn.***.*** | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৩ ১১:০৩77740
  • এরকম-ই একটা লেখা একবার রবিবাসরীয়তে পড়েছিলাম, মানে এই চিন্তা ভাবনারই আর কি।
    বেশ চিন্তার বিষয়
  • ভোম্বল সর্দার | unkwn.***.*** | ০৪ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৩:৪৪77741
  • ক্রীড়া জগতে যাঁরা সফল হন, তাঁরা অনেক লড়াই এবং প্রতিকুলতার মুখোমুখি হয়েই হন | জাতীয়তাবাদের ক্ষুদ্র পরিসরের বাইরেও তার একটা উজ্জীবক ভুমিকা থাকে| এই মেরি কম-এর কথাই ধরা যাক| পিছিয়ে পড়া পার্বত্য উপজাতি অঞ্চলের মেরি অলিম্পিক সাফল্যের জেরেই তো আজ দেশের নয়নের মনি| তাকে দেখে দুর্গম অঞ্চলের হাজার যাহার মেরিরা ভাবতে চেষ্টা করছে, আমিও পারব| এই পারবটা বক্সিং না হয়ে অঙ্ক কষার ক্ষেত্রেও হতে পারে| ১৯১১ সালে মোহনবাগান যখন শিল্ড যেতে, তারতো একটা প্রতিক্রিয়া জনমানসে হয়েছিল| তখন কি ভারতবাসীর মনে হয়নি, আমরাও পারি? ক্রীড়া জগতের ব্যক্তিত্বরা যে অনুপ্রেরণা সঞ্চার করেন, তার গুরুত্ত্ব আছে বৈকি| পি টি ঊষা-র বা মিল্খার কোনো দাম রেকর্ড-এর খাতায় না থাকতে পারে, কিন্তু খেলোয়াড় হিসেবে, আইকন হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে আছে| আর সেই হিসেবে না গেলে, রবীন্দ্রনাথেরই বা কি গুরুত্ত্ব, ক্যালকুলাসের-ই বা কি গুরুত্ত্ব? মানুষের বিবর্তন হয়েছে আফ্রিকান সাভানাতে শিকার করতে আর ফল পাকুর, শেকর বাকড় সংগ্রহ করতে| মানুষের দেহ এবং মস্তিস্ক এই সকল কিছু বেসিক কাজকে সুষ্ঠ ভাবে করে মরার আগে বংশবিস্তার করতে গঠিত হয়েছে| আহার, নিদ্রা এবং মৈথুন, এর বাইরে সকল কিছুই তো অপ্রয়োজনীয়, ময়ুরের লেজ বা কোলা ব্যাঙের ডাক|
  • π | unkwn.***.*** | ০৪ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৬:০৮77742
  • ভোম্বল সর্দারের পোস্টে 'প্রয়োজনীয়তা' সংক্রান্ত পয়েন্টের উত্তর বোধহয় লেখাটাতেই আছে। আমার মনে হল লেখিকা প্রতিযোগিতার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, খেলাধূলার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নয়।

    'অবধারিত প্রশ্ন উঠবে যে ভারত গরীব দেশ বলে ভারতে কয়েক কোটি শিশু অনাহারে থাকে বলে কি কেউ গান গাইবে না, ছবি আঁকবে না, ছবি তৈরি করবে না, খেলাধুলো করবে না, না কি সরকার খেলাধুলো-শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষকতা করবে না? এই প্রশ্নের উত্তরে বলি ‘চর্চা’ আর ‘প্রতিযোগিতা’ এক কথা নয়, আমি বলতে চাইছি পড়াশোনা-শিল্পকলা-খেলাধুলো, সব কিছুরই চর্চা চলুক, সরকার তার উন্নতির চেষ্টা করুক কিন্তু সবকিছুকে প্রতিযোগিতার বিষয় হিসেবে দাঁড় করানো দরকারি নয়। বিশুদ্ধ বিনোদনমূলক বিষয়গুলো থাকুক ‘চর্চা’ ও ‘প্রদর্শন’ পর্যায়ে, তাকে প্রতিযোগিতায় নিয়ে যাবার দরকার নেই। .....

    খেলাধুলো-শরীরচর্চা চলুক (সাজগোজ-প্রসাধনও চলুক যেন সবাইকে সুন্দর দেখায়!) কিন্তু তাকে বিশ্বমানে পৌঁছে দেবার জন্য প্রাণপাত করার কিছু দরকার নেই। ওই বিশ্বমান ব্যাপারটাই একটা আপেক্ষিক ব্যাপার আর খেলাধুলোয় বিশ্বমানে পৌঁছে আপনার দেশের (বা জগতের) সত্যিকারের কিচ্ছু লাভ নেই। তৃতীয় বিশ্বের এই উন্নয়নশীল দেশ থেকে অলিম্পকে পদক পেল কিনা বা গ্র্যান্ড স্ল্যাম বা বিশ্বকাপ পেল কিনা তাই নিয়ে বেশী ব্যস্ত না হয়ে কত বেশি শিশু পড়াশোনা-খেলাধুলোর সুযোগ পায় সেইটা নিয়ে ভাবা বোধহয় অনেক বেশী দরকারি।'
  • arindam | unkwn.***.*** | ০৫ ডিসেম্বর ২০১৩ ০২:০৮77743
  • এইসব লেখার ভাল মন্দ নিয়ে মন্তব্য করার আগে যেটা দরকার তা'হল নিজের মনের মধ্যে যে প্রশ্নগুলো আসছে তা তুলে ধরা সামনে। সেটাই করি-

    প্রতিযোগীতার প্রয়োজনীয়তা কেন?

    মাঝে মাঝেই এ দেশে শুনি, পরীক্ষা তুলে দেওয়া হোক। পাশ ফেলে থাকবে না। কখনও পঞ্চম শ্রেনী অবধি কখনও তা বেড়ে বেড়ে দশম শ্রেনীতে। বেশ কিন্তু তারপর? তারপর একটা না একটা সময় পরীক্ষা দিতেই হয়। দিতে হবে। দিচ্ছেও সকলে। নিস্তার নেই। পরীক্ষার হাত থেকে। আর এই বিভিন্ন পরীক্ষাগুলো কেন দিতে হয়? নিজের যোগ্যতা প্রমান করার জন্য।
    কেন নেওয়া হয়? সকলেই একই যোগ্যতার নয়। যোগ্যতার মাপকাঠিতে গ্যারেজে গাড়ি ঢোকে। রান্নাঘরে মিনিকিট বা বাসমতি। পে প্যাকেজ, সরু মোটা হয়।

    যতদিন গান বাজনা গল্প-উপন্যাস কবিতা ফুটবল খেলা বিনোদন এবং পাতি বিনোদন ছিল ততদিন প্রতিযোগিতা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায়নি। যেদিন থেকে এই বিনোদনগুলোর একটা ব্যবসায়িক মূল্য সামনে এল। শুর হল প্রতিযোগিতা। মুড়ি মিছরির এক দর নয় তাই কৃশানু দে কার্তিক শেঠের থেকে বেশি রোজগার করলেন। ভীমসেন আমাদের পাড়ার তানসেন দার চে।

    ভীমসেন আর হেমন্তবাবু সোলো পারফরমার কিন্তু মারাদোনা ফুটবলার। তাকে জেন্টিলকে ধোঁকা দিতেই হবে। বিপক্ষের গোলকীপারকে বোকা বানাতেই হবে। দলগত খেলা কিন্তু তার মধ্যেও নিজেকে "আলাদা" করে তুলে ধরা। তারজন্যই দরকার প্রতোযোগিতা রাজ্য দেশ ও অন্তর্জাতিক স্তরের প্রতিযোগিতা। শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য। প্রতিযোগিতা না থাকলে, ফলাফল সামনে না এলে মারাদোনা বিশ্ব বন্দিত ফুটবলার হতেন না। এত অর্থ রোজগার করতে পারতেন না।

    হ্যাঁ অর্থ। আর তারজন্যই "ধান্দা'। গান গাওয়া থেকে ফুটবলে লাথি। মাপকাঠি, প্রতিযোগিতা।

    বিনোদন কাদের লাগি?

    যাদের পেটে ভাত আছে। মাথার নীচে বালিশ। সান্তা ক্রিসমাস গিফট রেখে যায়। বিনোদন তাদের জন্য।
    বিত্তবান মানুষেরা বিনোদন খুঁজে নেন কিন্তু দাম দেন ঝারাই বাছাই করে, সেইজন্যও প্রতিযোগিতার দরকার পড়ে।

    আর গরীবে দেশে সরকারি সাহায্য বা অনুদানের বেশি দরকার শিক্ষা স্বাস্থ্য জন সচেতনতা বৃদ্ধিতে। যে মেয়েটা পেটের জ্বালায় রোজ অনিচ্ছা সত্ত্বেও বদলায় হাতে হাতে বা পাতা ফুটিয়ে খেয়ে থাকে বিনা চিকিৎসায় মারা যায় তার কাছে মারাদোনার কোন মুল্য নেই। বাজারে চারাপোনার দাম কমলে লাভ। রবি ঠাকুর আর শনি ঠাকুরও "এক"। ওরা কেউই টিউবারকিউলিসের ওষুধ আবিষ্কার করেননি।
  • Pubদা | unkwn.***.*** | ২০ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৯:৪৪77744
  • এই জন্যেই ঠাকুর বলেছেন সর্বদা কমেন্ট পড়িয়া কমেন্ট করিবে ।
    অরিন্দম - সবই লিখে দিয়েছেন । ঃ)
    প্রথমেই বলি - এটা একটা Frustrated Mind'এর লেখা ।
    আমি মনে করি প্রতিযোগিতা না থাকলে তো উন্নতির চেষ্টাও মরে যাবে । আর সেই প্রতিযোগিতা পুরো দেশকে এক সূত্রে বেঁধে দিতে পারে - তার প্রমাণ আমরা গত বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সময়েই দেখেছি - যেটা আমাদের মত নানা ভাষা - নানা মতের মত দেশের জন্যে খুবই দরকার ।
    তাই সবাইকে সমান দেখার মতন কম্যিউনিস্ট ভাবনা থাকলেও - আমরা সবাই নিজ নিজ গুণে ভিন্ন - আর সেই ভিন্নতাকে উপযুক্ত মর্যাদা না দিলে - জীবণ বিস্বাদ ঃ)
  • arindam | unkwn.***.*** | ২১ ডিসেম্বর ২০১৩ ০১:৫১77745
  • "এটা একটা Frustrated Mind'এর লেখা ।"

    প্রথমেই বলি। এই বিশেষণে আমার প্রবল আপত্তি। এই লেখাটি মানুষজনকে ভাবতে বলেছে। কী করছে এবং কেন করছে। যা করছে তাকে একটু খতিয়ে দেখতে বলেছে।
    এই যেমন সরকারী সাহায্য কতটা জরুরী? এটাও ভাবছি।

    গরীব দেশে বিনোদনের জন্য সরকারী সাহায্য আদৌ জরুরী নয়। তবে এও ঠিক কথা ভারতবর্ষে সর্বাধিক জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট ও ফুটবলের জন্য সরকার সেই অর্থে(অর্থাৎ অনান্য ক্রীড়া পাগল দেশে বা ধনী দেশের ন্যায়)কিছুই করেনা।
    টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমি বা মোহনবাগান ফুটবল অ্যাকাডেমি বেসরকারী সংস্থা।
    ডেনিস লিলির তত্ত্বাবধানে তৈরী MRF ফাইনডেশান ও সৌরভের কোচিং ক্যাম্পও তাই...

    সব টুর্ণামেন্টেই হয় বেসরকারী পয়সায়। অর্থাৎ স্পনসাররা এগিয়ে আসে। সরকার স্টেডিয়াম ভাড়া দেয়। জল আলো ও পুলিশ সরবরাহ করে। পয়সার বিনিময়ে।
    সরকার এই দেশে ঐ অর্জুন, দ্রোণাচার্য অতি সম্প্রতি ভারতরত্ন দিয়েই ক্ষান্ত হন বা হয়েছেন।

    ক্রীড়া দফতর মূলতঃ ফোড়ে টাইপ। IFA/AIFF ও BCCIএর ওপর মাতব্বরী করে। আর যেহেতু খেলাধূলার মাধ্যমে অনেক মানুষকে একত্রিত করা যায় তাই জন সংযোগ অক্ষুন্ন রাখার জন্য তার মধ্যে ভীড়ে যায়।
    ( এই যেমন দিদি পাড়ায় পাড়ায় সব ক্লাবকে পয়সা দিচ্ছে। শস্তা জনপ্রিয়তা। এগুলো পাবলিক খায়না।)

    ভারতবর্ষের ক্রীড়া দপ্তরের খুব বড় ভূমিকা নেই। অন্ততঃ আমার জানা নেই। তাদের কোন পরিকল্পনা বা পরিকাঠামো নেই।
    শচীন বা সৌরভ সম্পূর্ণ্ভাবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজের বাপের পয়সায় ট্রেনিং নিয়ে এখানে এসে পৌঁছেছে। সরকার বাহাদুর কিছুই করেনি।

    পকেটের রেস্ত ও ব্যক্তিগত ভালোলাগা থেকেই মানুষ বিনোদন বেছে নেয়। কেউ ফুটবল দেখে, কেউ সিনেমা, নাটক ইত্যাদি।

    আর সব শেষে দেশের বা দশের উন্নয়ন বা উন্নতিতে যদি অবদানের কথা ভবতে হয় তাহলে তা একমাত্র অমর্ত্য সেন এবং সিভি রমনের গবেষণা লব্ধ ফলের ওপরই নির্ভর করে।
    মারাদোনার বাঁ পায়ের জাদুতে পেট ভরে না। মন ভরে।

    আর একটা দিকও আছে। প্রতিযোগিতা হয় বলেই। সেটা খবর হয়। মিডিয়া আসে। নাহলে এই ভারতবর্ষে বসে আমি সারাজীবন কার্তিক শেঠের খেলাই দেখে যেতাম। মারাদোনা আর্জেন্টিনার গলিতে খেলে বেড়াত। দেখা হত'না।যারা ফুটবল ভালোবাসেনা তাদের কাছে কোন ক্ষতি নয়। যারা ভালোবাসে তাদের কিন্তু ক্ষতি।
  • দেব | unkwn.***.*** | ২১ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৭:২৩77746
  • অলিম্পিকের ব্যার্থতা নিয়ে এত লেখা পড়ে একটাই সন্দেহ হল; না পেলে আঙ্গুর টক।

    অন্যভাবে দেখলে খেলার প্রতি আমাদের মানসিকতা এই লেখাটায় যা আছে, ইতিমধ্যেই তাই। জনতা বা সরকার, কেউই অলিম্পিকের পদক নিয়ে উত্তেজিত নয়, চাপও নেয় না, পদকও জেতে না। অংশ নেয় নেওয়ার জন্য। ঠিকই আছে।

    তবে হালকা কিছু ইঙ্গিত পেলাম বোধহয়, খেলাধুলা (এবং সাহিত্যচর্চাও কিছুটা) অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, অঙ্ক আর বিজ্ঞানে মন দাও। হেঁ হেঁ সে আর বলতে। এটা সব্বাই জানে। মুখে স্বীকার করবে না যদিও।
  • মোঃ রেজাউল করিম | unkwn.***.*** | ২৪ জানুয়ারি ২০১৪ ০৯:৩২77747
  • গিনেস বুকে কি ভাবে নিজের নাম লিখানো যায় এবং তাতে কিরে কি লাভ হয়?
  • Asit Kumar De | unkwn.***.*** | ৩১ জানুয়ারি ২০১৪ ০৬:১২77748
  • অত্যন্ত সুন্দর ও মনোগ্রাহি লেখা। আমি লেখকের মনভাবের সাথে সম্পূর্নভাবে এক মত।
  • rani | unkwn.***.*** | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৮:১৬77749
  • একমত ।
  • π | unkwn.***.*** | ২৩ মে ২০১৪ ০৫:০৮77750
  • বিশ্বকাপ দোরগোড়ায়। এনিয়ে হৈহল্লাহুল্লোড়ের মধ্যেই সেই পুরানো তর্ক, কিছুটা মৃদুস্বরে হলেও শোনা যাচ্ছে। এই লেখাটার কথা মনে পড়লো।

    '..Carrying banners declaring “Na Copa vai ter luta” (The Cup will have protests), appeals for a general strike and claims that the cost of refurbishing the Maracanã stadium could pay for 200 schools, the demonstrators rallied with striking workers in the broadest show of dissent in several months...

    http://www.theguardian.com/world/2014/may/16/anti-world-cup-protests-across-brazil
  • AP | unkwn.***.*** | ২৪ মে ২০১৪ ০১:৫২77751
  • বিশ্বকাপের আগেই আমরা একটা দুঃখ জনক ঘটনার মধ্যে ঢুকে পড়লাম। ছন্দা গায়েন। এঁর জায়গাটা প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলোর থেকে একটু আলাদা বটে তবে গোড়ার কথাটা কিন্তু একই। জয় করার অদম্য ইচ্ছে। তার থেকেই এই ঝুঁকি নেওয়া। এই প্যাশনকে সেলাম জানিয়েও মনের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব থেকেই যাচ্ছে ঃ খুব কি দরকার ছিল এতোটা ঝুঁকি নেওয়ার ? এই 'জয়' করা আসলে কি ? সহযাত্রীরা নেমে এলেও ছন্দা নিশ্চই ভেবেছিলেন টানাটানির সংসারে বার বার ধার করে এভারেস্ট ভ্রমণ সম্ভব হবে না, তাই এইবারেই কাজ সেরে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এই বিরল ধরনের সাহসিনী মেয়েটির কি আরো কিছু করার ছিল না ? আর একটু দয়িত্ববোধ কি থাকা উচিত ছিল না ? কয়ক বছর আগে বর্ষা কালে বাগমুণ্ডিতে ট্রেকিং-এ গিয়ে যাদবপুর এর কয়েকটি ছেলেমেয়ে মারা গিয়েছিল। তখনও এই রকম কথা মনে হয়েছিল। এই লেখার বিষয়ের সঙ্গে কিছুটা মেলে বলে কথাটা এখানেই লিখলাম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল প্রতিক্রিয়া দিন