এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • পুজোর চাপ ঃ ২

    অনিকেত পথিক লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৯ অক্টোবর ২০১৫ | ১১২৯ বার পঠিত
  • রাস্তা কারুর একার নয় ঃ

    ভয় করে। রাস্তাটা পার হতে গিয়ে যেদিন প্রথম দেখি রাস্তার ডিভাইডারে বাঁশ বাঁধা শুরু হচ্ছে, সেদিন থেকে কেমন একটা ভয় ভয় করে। এই বাঁধনই দিন দিন শক্ত হয়ে বসবে। এই যে এখনও প্রায় পনেরো দিন দেরী কিন্তু রাস্তার দুপাশে বাঁশের লাইন টানা হয়ে গেছে এমনকি বাসস্টপগুলোর সমনেও টানা বাঁশের ব্র্যাকেট। এর মানে হল বাসের ড্রাইভার আপনাকে যেখানে খুশি নামিয়ে দিতে পারে, আপনি ফুটপাথে উঠতে পারবেন না, পাশ দিয়ে গুঁতো মেরে চলে যাবে অটো কিম্বা বাইক। কারণ রাস্তা কারুর রেকার নয়। হাতে ভারী ব্যাগ পায়ে ব্যাথা নিয়ে টেনেটুনে স্টপেজ দুয়েক এগিয়ে রিক্সায় উঠবেন ভেবেছেন কিন্তু রিকশা স্ট্যান্ড কি আর সেখানে আছে, সেও এগিয়ে-পিছিয়ে কোথায় ঠাঁই পেয়েছে কে জানে ! হ্যাঁ এই পনেরো দিন আগে থেকেই এইসব চলতে শুরু করেছে মানে পুজো এসে গেছে।

    কিন্তু এখনো তো মহালয়ার আরও চার-পাঁচদিন দেরী। তা হোক ! দেখছেন না অ্যাতো বড় ! সত্যি ! কোথাও একটা বিশাল মুখ কিম্বা পায়ের পাতা...হ্যাঁ ফ্লেক্সগুলোও লাগানো হয়ে গেছে। এদিক-ওদিক দেখা যাচ্ছে না। চট করে বুঝতে পারবেন না কোথায় এলেন। বড় রাস্তা পেরোতে গেলে ডিভাইডারটা মাঝখানে কিছুটা জায়গায় খোলা। সব জায়গাতেই থাকে। কিন্তু সেই ফাঁকটুকু রোজ একটু একটু করে কমবে। কমতে কমতে ঠিক এক-দু মানুষ (চওড়ার দিকে) কি একটা রিকশা পরিমাণ হয়ে দাঁড়াবে। শুধু বাঁশে ভরসা নেই, টিনের পাত বসিয়ে নিশ্ছিদ্র করে দেওয়া হবে একমানুষ সমান উঁচু। তারপর আর একটা সেকেন্ড ব্র্যাকেট, মানে রাস্তার আদ্ধেক অবধি আর একটা বাঁশের লাইন পড়বে, তার ভেতর দিয়ে চলাচল করতে হবে কিন্তু কোথায় কাটা সেই খুঁজে পেতে পেতেই মহালয়া এসে যাবে। আর মহালয়াটা পেরোতে দিন, ব্যাস ওই ফাঁকটুকুর মুখেও পুলিশ দাঁড়িয়ে যাবে আর লাঠি দিয়ে আটকে রাখবে, অনেকক্ষণ পরে পরে লাঠিটা ঠিক মাপমত সরাবে যাতে একটি কি দুটি মানুষ একসাথে পেরোতে পারে। কি বললেন, অফিসের দেরী হয়ে যাবে, ওইদিক দিয়ে পরপর বাস বেরিয়ে যাবে ! যাক, দেখছেন না পুজো এসে গেছে ! ? কোথায় দাঁড়ালে কখন কে যে ধমকে দেবে, কোন রাস্তা বন্ধ বলে বাস / ট্যাক্সি / গাড়ী কোথা দিয়ে ঘুরিয়ে দেবে কোনও ঠিক নেই কেননা পুজো এসে গেছে।

    কিন্তু কাদের বলুন তো ! মানে কাদের পুজো, কাদের জন্য এসেছে ? আমাদের জন্য নয় নিশ্চই। কি করে হবে, আমরা তো যেমনকার যেমন অফিস যাচ্ছি, বাজার যাচ্ছি, তেমন বেকায়দায় পড়লে হসপিটালেও যেতে হচ্ছে, এমনকি বাচ্ছা-কাচ্চাগুলোও এখনও নাহোক এক হপ্তা ইস্কুলে যাবে। পুজো তবে কাদের জন্য এসে গেছে, বলুন তো ! এমনিতে আমি তো মনেই করি যে পুজো আমার জন্যও আসছে। সোনালী রোদ্দুর-ছাতিমের গন্ধে আমিও মনে মনে নেচে উঠি, নতুন জামা কাপড়ের দেওয়া-নেওয়ার হিসেব রাখি। কিন্তু তাই বলে তো অনির্দিষ্টকালের জন্য সময়মত অফিস যাওয়া বাচ্চাদের ইস্কুলপত্র, দরকারে এখানে-ওখানে যাওয়া-আসা সব শিকেয় তুলতে পারি না। কেই বা পারে ! কোন কোন সরকারী অফিস তো সপ্তমী অবধিও খোলা, তার মানে আমাদের পুজো আসছে কিন্তু এখনও এসে যায় নি। তাই এই যে পুজো এসে গেছে রব তুলে এক পক্ষকাল আগে থাকতে এই এই সব বজ্র-আঁটুনির জেরে জেরবার হয়ে যাচ্ছি, আর মহালয়া পেরোতে না পেরোতে দাদা-দিদিরা কাঁচি হাতে নিয়ে ফিতে কেটেই চলেছেন, এ তাহলে কাদের পুজো, যা পঞ্চমীরও পাঁচ দিন আগে থাকতে ‘এসে যায়’ ? কাদের জীবন এমন ‘পুজো’নির্ভর যে দুটো পুজোর মাঝের সময়টা কোনোরকমে কাটিয়ে দিলেই চলে ?
    সবাই জানে। পুজো এখন আসলে ক্লাবগুলোর সম্বসৎরের কর্মযোগ। সেই যোগ (বা যজ্ঞে !) আমাকে আপনাকে যোগ দিতে হবে এমনকি যোগ না দিলেও চলবে কিন্তু এর ভার বইতে হবে। ইহা একপ্রকার সমাজসেবা। ইহার কোনও শুরু বা শেষ নাই, ইহা ক্রমবর্ধমান। না হলে এই ক্লাব জুলাই মাস থেকে ‘টিজার’ ছাড়ছে তো ওই ক্লাব তাদের ‘ব্রান্ড অ্যাম্বাসাডরে’র ছবি ছাপছে ! আচ্ছা একটা ক্লাব যাদের নাম লোকে বছরে একবার শোনে, এই পুজোর সময়, আর সারাবছর যাদের কোনও কর্মকান্ড নেই, তারা কি করে ব্র্যান্ড হয়ে ওঠে বলুন তো যে তাদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর লাগে (পুঁইশাকের ক্যাশমেমো আর কারে কয় !) ! ওই আসছে বা এসে গেছে কিছুই আপনার / আমার জন্য নয়, সবই ‘তাহাদের কথা’। তবে চাপ নিচ্ছি / নেবেন না, এতে আমার / আপনারই উপকার হচ্ছে, সহ্যশক্তি বাড়ছে। এর পর অন্ততঃ কিছুদিন শুক্রবারের নামাজের জন্য রাস্তা বন্ধ দেখলে মনে মনে খিস্তি পাবে না কারণ আপনি জেনে যাবেন যে রাস্তা কারুর একার নয়।

    ওই দেখুন বলব না বলব না করেও বলেই ফেল্লাম। কথাটা হল ‘আমরা’ তো নিজেদের মত করে ‘সর্বজনীন’ (নাকি ‘সার্বজনীন’, এমনকি সর্বজননীও দেখেছি কোথাও কোথাও)-এর সংজ্ঞা ঠিক করে নিয়ে দু-চারজন ‘হোসেন’ বা ‘মোল্লা’ বা ‘খান’ কে পুজো কমিটিতে রেখে ঢাক পিটিয়ে ঘোষণা করতে লেগেছি যে এই উৎসব সকলের কিন্তু সত্যিই কি বুঝতে চেয়েছি অন্য ধর্মের মানুষদের কেমন লাগে এই প্রায় একপাক্ষিক (উভয় অর্থেই)হল্লা, মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত যার সামিল হয়ে পড়েন ? মানে এই সীমাহীন কোলাহল, এই মাঝরাত অবধি মাইকে ঢাকের আওয়াজ, যখন তখন স্তোত্রপাঠের হুঙ্কার একজন গড়পরতা হিন্দুর মনেই যেখানে বিরক্তি, অস্বস্তি, উদ্বেগ ছড়িয়ে দিচ্ছে সেখানে একজন অন্য ধর্মের মানুষের কতটা ভালো লাগতে পারে, আর কেনই বা লাগবে ! সারা রাস্তা জুড়ে ব্যানার উড়ছে 'আপনার আনন্দে আমরাও সামিল' আমার 'অসুবিধে'য় কি কারুর কোনও দায় নেই ? কিন্তু নাহ্‌, এখন এত কিছু ভাবার সময় নেই। পুজো এসে গেছে, রাস্তা ছাড়ুন, রাস্তা কারুর একার নয় !

    পুনশ্চ ঃ এই লেখা শেষ হবার পর খবর পেলাম প্রবল যানজটের কারণে 'সবচেয়ে বড়' দুর্গার 'দর্শন' বন্ধ করে দিতে হয়েছে পঞ্চমীর সন্ধ্যায় (হিসেব মত যেদিন পুজো শুরুই নয়)। খারাপ লাগল, কারণ যে মানুষগুলো রাস্তায় বেরিয়ে নাজেহাল হলেন তাদের তো কোন অপরাধ নেই। কিন্তু সত্যি বলতে কি এটা হবারই ছিল। প্রায় সারা বিশ্ব জুড়ে 'এতবড় সত্যি !' ব্যানার লাগিয়ে যারা ভীড় সামলাবার ন্যূনতম দায়িত্ব / ব্যবস্থা নেয় না, তাদের এই অবস্থাই হয়।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৯ অক্টোবর ২০১৫ | ১১২৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সে | ***:*** | ১৯ অক্টোবর ২০১৫ ০১:৪৭69782
  • একদম। আগেরটা ভাল হয়েছিল।
  • a | ***:*** | ১৯ অক্টোবর ২০১৫ ১০:১৮69781
  • আগেরটা অনেক বেটার হয়েছিল
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন