এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • যাঃ.....

    শিবাংশু লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৪ মার্চ ২০১৫ | ৭০৬ বার পঠিত
  • জাদুগোড়া জামশেদপুরের পূর্বদিকে একটা ছবির মতো ছোট্টো জনপদ। ট্রেনে গেলে রাখামাইনস টিশনে নেমে রিকশায় চার-পাঁচ কিমি। গপ্পোটা প্রায় তিন দশক হতে চললো। তখন রাস্তা দিয়ে আসতে গেলে হাতা হয়ে আসতে হতো। নরওয়া পাহাড় ফুঁড়ে রাস্তা বা মাইনস কিছুই তখনও তৈরি হয়নি। জাদুগোড়ার দিক দিয়ে আসতে গেলে পাহাড়ের গোড়ায় ভাটিন মাইনস পর্যন্ত রাস্তা ছিলো শুধু। বহু বহুদিন আগে যখন হাইওয়ে নম্বর ৩৩ তৈরি হয়নি, তখন সড়কপথে জামশেদপুর থেকে ঘাটশিলা আসতে গেলে সেই টাটা টিশন ছাড়িয়ে খাসমহল, করনডি, সুন্দরনগর, গিতিলতা,হাতা, পোটকা, কালিকাপুর, রংকিনী পাহাড়, জাদুগোড়া হয়ে যে পথটা রাখা, চাপড়ি, সুরদা থেকে বাঁদিকে মৌভান্ডার হয়ে এগিয়ে গেছে, সেটাই ধরতে হতো। এই পথের চারদিকে ঘন পাহাড়জঙ্গল, পাগলাঝোরা, পথভোলা নদী আর সবুজ আঁধারের ফাঁকে ফাঁকে মাটির কুঁড়েঘর, কালো কালো মানুষজন। আমাদের সিংভূম, বিভূতিভূষণের রাজপাট। শুনেছি আমার জন্মের অনেক আগে ঘাটশিলার ডাহিগোড়ায় লালবাড়ি গৌরীকুঞ্জে যখন বিভূতিভূষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, জামশেদপুর থেকে ব্রহ্মডাক্তার (প্রবাদপ্রতিম ডাঃ ব্রহ্মপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) ঐ রাস্তায় রুদ্ধশ্বাস গাড়ি চালিয়ে জামশেদপুর থেকে ঘাটশিলায় পৌঁছেছিলেন, তাঁর কালো ব্যাগটা হাতে করে। কিন্তু কিছু করা যায়নি। ততোক্ষণে বিভূতিভূষণ দেবযানের পথিক।
    ------------------------------------
    জাদুগোড়ায় যখন আমার পোস্টিং হয়, তখন আমার বড়োমেয়ের বয়েস তিনমাস। সেই প্রথম আমার গৃহস্থ হিসেবে বাড়ি ছেড়ে যাওয়া, দারা-কন্যাসহ। যদিও এখন সেই দূরত্ব অনেক কমে গেছে, কিন্তু তখন অনেক সময় লেগে যেতো। কিছু কিছু লোকজন জামশেদপুর থেকে নিত্য যাতায়াত করতেন। কিন্তু আমার কাছে তখন ব্যাংকের চাবি থাকতো, তাই ঝুঁকি নেওয়া যেতোনা। সেই প্রাক-তিরিশ জীবনে জাদুগোড়ার 'নির্বাসন' আমরা খুব উপভোগ করতুম। ব্রাঞ্চটা মোটামুটি বড়ো। ইউরেনিয়াম কর্পোরেশনের সব কাজকম্মো হতো সেখান থেকে। কয়েকজন সমবয়সী ঘনিষ্ট বন্ধুজন আর একটা ছোট্টো দু'কামরার সরকারি ফ্ল্যাট, দোতলায়। শোবার ঘরের জানালায় একটা ফলন্ত আমগাছের ডালপালার দোলাচল, মুকুলের গন্ধ, লাল-কচি-ঘন সবুজ পাতার আলোছায়ায় সূর্য সারাদিন তাপস সেন, ভোরবেলা কোকিলের ডাক আর অফুরন্ত হাওয়া। চমৎকার, হে পঁচিশ নম্বর মধুবংশীর গলি।
    ---------------------------------------------
    ছেলেটির নাম ছিলো, ধরা যাক, সুজয় বিশ্বাস। আমারই বয়সী, সম্প্রতি এসেছে। চাকরিতে কিঞ্চিৎ কনিষ্ঠ। তখনও বিয়ে হয়নি, মেসে থাকে। সুজয় ছিলো একটি স্ট্রিটস্মার্ট, প্রগলভ যুবক, ইয়েজদি বাইক চড়ে ঘোরাফেরা করে। তার ছিলো ব্যবসার নেশা। মানে, সব সময় কী করে কিছু ধান্দাপাতি করা যায় তাই নিয়ে খুব মাথা ঘামাতো। একবার শুরু করলো কাপড়ের কাটপিস সাপ্লাই। অচিরেই বেশ লোকসান দিয়ে চলে গেলো ডিমসাপ্লাইয়ের ব্যবসায়। হ্যাঁ,শুদ্ধ কুক্কুটডিম্ব এবং কিছুদিনের মধ্যে কুক্কুটমাংসের জোগানও শুরু হলো তার সঙ্গে। কিন্তু দু'চার মাসের মধ্যেই তার সহকারী যা কিছু সঞ্চয় হয়েছিলো তা নিয়ে কোথায় চম্পট দিলো, জানা গেলোনা। বেশিদিন নিরাশ হয়ে থাকার লোক নয় সে। একটা পোর্টেবল জেনারেটর সেট কিনে আশপাশের গাঁয়ে ভাড়াটাড়া দিতে শুরু করলো। সেখানেই শেষ নয়। আরো বহু ধরণের ব্যবসাই সে ধরতো আর ছাড়তো। বিকেল চারটের মধ্যে হিসেবটিসেব মিলিয়ে বলতো, শিবাংশু'দা একটা আর্জেন্ট কাজ আছে....। যার বাংলা মানে, এবার আমি চললুম 'ব্যবসা' করতে। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র তাকে দেখলে অতি প্রফুল্ল হয়ে উঠতেন, কোনও সন্দেহ নেই।
    ----------------------------------------------------
    সুজয়ের বন্ধু রামপ্রবেশ মিশ্র। আমার আরেক সহকারী। লম্বা, রোগা মৈথিল, অতি প্রগলভ, আরেকজন ব্যাংকবাবু। আমরা ডাকতুম টুনটুন মিশির, তার ডাকনাম। আমাদের থেকে কিছু বড়ো বয়সে। জাদুগোড়ায় নবাগত সুজয় তার সঙ্গে ঐ ছোটো কলোনির হাটবাজারে ঘুরে বেড়াতো একসঙ্গে। সুজয়ের পড়াশোনা, বেড়ে ওঠা কলকাতার কাছে কোনও একটা জনপদে। যেখানের লোকজন ট্রেন খড়্গপুর পেরোলেই 'নতুনদা' হয়ে যা'ন। মানে খাস কলকাতার লোকেদের থেকেও ঢের ক্যালকেশিয়ান। আমাদের ছোটোবেলায় যাঁদের দেখতুম নামের পাশে ব্র্যাকেট ব্র্যাকেট 'কলি' লিখতে। মারি তো গন্ডার, লুটি তো ভান্ডার টাইপ কথাবাত্তা। কিন্তু টুনটুন'ও বাঘা তেঁতুল, আফটার অল আগমার্কা মৈথিল ফ্রম পন্ডৌল, মধবনি। তাছাড়া সে অনেকদিন ধরে জাদুগোড়ায় আছে। জানাশোনা অনেক বেশি। সুজয় প্রায়ই তার কাছে খোঁজ নেয়, ক্যা টুনটুন, ক্যেয়সে জগহ হ্যাঁয়, কওনো খুবসুরত লড়কি নজর হি নহি আতা...
    ---------------------------------
    এরকম কোনও এক রুক্ষ বিকেলে দু'জনে মিলে বাজারের দিকে ঘুরতে ঘুরতে একজন মেয়ে'কে দেখতে পায়। না, ঠিক মেয়ে নয়, মহিলাই বলা যায় হয়তো। কিন্তু খুব কমনীয় এবং সুজয়ের চোখে তাকে রীতিমতো সুন্দরী লাগে। সে টুনটুনকে ধরে পড়ে, উসকো জানতে হো? সে বলে হাঁ, জানতে তো হ্যাঁয়, মগর উওহ তো শাদিশুদা অওরত হ্যাঁয়। সুজয় তখন কিছুই শুনতে চায়না। আরে, উসমেঁ ক্যা? কভি মিলা তো দে সকতে হো। কঁহা রহতি হ্যাঁয় উয়োহ?
    -উধর, এ-টাইপ তরফ...
    -বস, কভি মিলা দো বস। বহোত মেহরবানি হোগি...
    টুনটুন একটু ভেবে বলে, দেখতে হ্যাঁয়, উসকি আদমি সে ভি তো বাত করনা পড়েগা...
    -অরে, ঘবরাও নহি, মুঝে থোড়ে হি কুছ অয়সে ত্যয়সে করনা হ্যাঁয়। জরা মিলুঁগা, বাতচিত হোগি বস...
    -ঠিক হ্যাঁয়, হড়বড়াও নহি, লাইন করতেঁ হ্যাঁয়...
    -----------------------------------------------
    দিন দুয়েক পরে টুনটুন এসে কানে কানে সুজয়'কে বলে, কাম বন গয়া।
    -আরে বস, গ্রেট। চলো বাবলিকে দুকান মেঁ ধোসা খিলাতে হ্যাঁয়...
    বাবলি কিন্তু কোনও মহিলা'র নাম নয়। পুরো জাট পঞ্জাবি। সেখানে বসে ঠিক হয় শেষ বিকেলে টুনটুন সুজয়'কে সেই মহিলার সঙ্গে দেখা করাতে নিয়ে যাবে। গল্পগুজব, যা করে সে শান্তি পায়, সমাপনান্তে ফিরিবার সুবন্দোবস্ত আছে।
    -অরে ইয়ার, উসকি হাজব্যান্ড সে বাত হুই ইয়া নহি...?
    -অরে বিনা উসকা ক্যা হম পাগল হ্যাঁয় কি তুমকো ওঁহা লে জায়... বড়িয়া সে এক চায় বোলো ...
    -অরে এক কিঁউ, দো পী জাও...
    ------------------------------
    জাদুগোড়ায় শেষ বিকেল থেকে সন্ধে, গোটা ভিজ্যুয়ালটিই খুব প্রেডিক্টেবল। মাইনসে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের শিফট ডিউটি। শুধু সাহেবরা আর অ্যাকাউন্টসের বাবুরা ঐ সময়টায় বাড়ি ফেরেন। তারপর স্নানটান করে কখনও ছোট্টো বাজারটায় অথবা জাদুগোড়া ক্লাবে ঢুঁ মারা। তবে সাহেবরা মোটামুটিভাবে একেকদিন একেকজনের বাড়িতে বসে সন্ধে আটটা নাগাদ বোতলের ছিপি খোলেন। তার পর উল্টে না পড়া পর্যন্ত গোছানো নেশায় বসের মুন্ডুপাত করা। টিপিক্যাল খনিশহরের সিস্টেম। সুজয় আর টুনটুন ব্যাংক থেকে বেরিয়ে কিছুক্ষণ চা'য়ের দোকানে বসে মর‌্যাল স্ট্রেংথ জড়ো করে। যতো-ই ক্যালকেশিয়ান হোক না কেন সুজয়ের মনে হয় সে যেন এক ফিদাইন মিশনে চলেছে। জলজ্যান্ত এক সুন্দরী মহিলার সঙ্গে সান্ধ্য আলাপ। সে অবশ্য ঊনিশ শতকের ফরাসি সালোঁর গপ্পো জানতো না। যেখানে সাঁঝের ঝোঁকে বালজাক বা জোলা বা তুলুজ লত্রেক সব প্রিয়তমা সুন্দরীতমা মাদাম'দের বৈঠকখানায় বসে নানা 'সৃজনাত্মক' আলোচনা করতেন সুরা'সহযোগে প্রায় সারা রাত। কিন্তু কোথায় সেই সুরভিত ফরাসি সন্ধ্যা । এটা একটা নেহাৎ গাঁইয়া শহরতলির তস্য গাঁইয়া মাইন্স কোয়ার্টার। জার্মিনালের সঙ্গে কিছু মিল পাওয়া গেলেও যেতে পারে। কিন্তু আবেগ, উত্তেজনার কি কোনও ব্যাকরণ থাকে। অগর দিল হ্যাঁয় চঙ্গা....
    ------------------------------
    সুজয়ের ইয়েজদি বাইক প্রচুর শব্দদূষণ সহকারে এ-টাইপের একটা ব্লকের সামনে এসে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে নেমে টুনটুনের দিকে তাকিয়ে বলে, বস, কো-ই লাপড়া নহি হ্যাঁয় ন না।
    -অরে হম যব লায়া তুমকো তব হন্ড্রেড পর্সেন্ট গারন্টি, চলো....
    দোতলায় চড়ে টুনটুন একটা দরজার সামনে বেল বাজায়। দরজাটি খোলে, খুলে যায়। একেবারে সেই মহিলাই দরজা খুলেছেন।
    -আইয়ে, আইয়ে....
    -ইয়েহ হ্যাঁয় সুজয়বাবু, হমারা সাথ কাম করতেঁ হ্যাঁয়..
    -ম্যঁয় উনকো জানতি হুঁ, ইয়েজদি বাইক চলাতেঁ হ্যাঁয়, হ্যাঁয় না?
    সুজয় ভাবে সত্যি বাইকটার পিছনে খরচ করা সার্থক হয়েছে।
    -আইয়ে অন্দর আইয়ে, বৈঠিয়ে আরাম সে,
    দু'জনে গিয়ে বসে ভিতরে। ভদ্রমহিলা ভিতরে চলে যান। টুনটুনের কিছু একটা মনে পড়ে যায়। সুজয়'কে বলে, তুম বইঠো জরা। ম্যঁয় অভি আয়া পাঁচ মিনটমে...সে বেরিয়ে যায়।
    সঙ্গে সঙ্গে ভদ্রমহিলা ফিরে আসেন। সুজয় খুব অ্যাপোলোজেটিক্যালি বলে, মিশ্রাজি থোড়া নিকলে হুয়ে হ্যাঁয়, অভি আ জায়েঙ্গে....
    -অরে উসমে ক্যা? ম্যঁয় মিশ্রাজিকো জানতি হুঁ। আপ আরাম সে বৈঠিয়ে না....ম্যঁয় অভি চায় লাতি হুঁ.... অফিস সে সিধা আয়ে হ্যাঁয়, হ্যাঁয় না?
    -হাঁ, হাঁ, লেকিন আপ কিঁউ ইতনা পরেশান হো রহি হ্যাঁয়? চায়-উয় ক্যা জরুরত ...?
    সে এসব কথা যেন শুনতেই পায়না। চা ও 'টা' সাজিয়ে নিয়ে আসে।
    ---------------------------------------------
    -আপকা নাম সুজয় হ্যাঁয়, হ্যাঁয় না? দেখিয়ে মেরি নাম ভি আপসে মিলতি হ্যাঁয়....
    -অচ্ছা, ক্যা নাম হ্যাঁয় আপকি?
    এখানে শোলে ও বসন্তি জাতীয় কিছু অনুষঙ্গ আসতে পারতো। কিন্তু এলোনা।
    -মেরি নাম হ্যাঁয় সুষমা....
    -অরে বাহ, ক্যা বাত হ্যাঁয় ভাবিজি...
    সুজয় ওর ক্যালকেশিয়ান কনফিডেন্স ফিরে পেতে থাকে।
    - আপ মুঝে ভাবিজি মত বোলিয়ে, সুষমা বোলিয়েগা, হ্যাঁয় না?
    এখানটায় সুজয় একটু কেলিয়ে যায়। নিজের ক্যারিশ্মার উপর খুব বিশ্বাস ছিলো তার। কিন্তু নিজের রেঞ্জটা যে এতোদূর সে নিজে কখনও বোঝেনি।
    -আপ য়ঁহা ক্যা ফ্যামলি কে সাথ রহতেঁ হ্যাঁয়?
    -নহি, নহি, অভি তক শাদি নহি কিয়া...
    - অরে ইয়েহ তো গজব হো গই। ইতনা স্মার্ট আদমিকো অভি তক লড়কি নহি মিলি। বহোত অফসোস কি বাত হ্যাঁয়...
    - য়্যসি বাত নহি। দর অসল সহি লড়কি অভি তক নহি মিলি....
    -বোলিয়ে তো অতা পতা লগায়েঁ? মেরা বহোত বঙ্গালি সহেলিয়াঁ হ্যাঁয়। ক্যা পসন্দ হ্যাঁয় আপকা?
    মুখ থেকে প্রায় বেরিয়ে গিয়েছিলো, য়হি আপ জইসি। অতি কষ্টে আটকায়। বলে সে রকম কিছু না, লড়কি থোড়ি অচ্ছি হোনি চাহিয়ে, মতলব বিয়েথাওয়া তো সিরিয়স ব্যাপার...(টীকাঃ সেই পুরাকালে ছেলেমেয়েরা বিবাহ'কে সিরিয়স ব্যাপার মনে করিত)
    -ম্যঁয় সমঝ গই। আপকো স্মার্ট লড়কি চাহিয়ে, হ্যাঁয় না?
    প্রচুর শক্তি সংগ্রহ করে সুজয় বলে ফেলে, আপ ভি তো বহোত স্মার্ট হ্যাঁয়.....
    খিলখিল হাসিতে লুটিয়ে পড়ে সুষমা। মান গই, আপ সহি মেঁ বেজোড় হ্যাঁয়....
    --------------------------------------
    শরীরের এতো কা্ছে সুজয় এখনও কোনও অনাত্মীয় নারীকে এভাবে পায়নি। প্রায় ছুঁয়ে আছে। আজ খুব সুন্দর সেজেছে। গৌরী কপালে সামান্য স্বেদবিন্দু আর লাল টিপ। চোখদুটো কথা বলে, হাসিটাও প্রাণখোলা। সুজয় ভাবে এবার গিয়ে বড়দা'কে বলবে, খুঁজতে পারো। অনেকদিন ধরেই দাদা বলছেন। ওর বাবা-মা নেই, বড়দাই বাবার মতো। কিন্তু এই রকম ব্রেকিং স্ট্রেস টানওয়ালা মেয়ে খোঁজার ব্যাপারটা সে বড়দা'কে বোঝাবে কী করে? হঠাৎ শংকা জাগে প্রাণে। টুনটুনটাও এতোক্ষণ ধরে যে কোথায় গায়ব হলো?
    -আপকি হজবেন্ড কঁহি গয়ে হ্যাঁয় ক্যা?
    -লো, ঘবরা গয়ে ক্যা? ইতনা স্মার্ট নওজওয়ান আদমি....
    সুজয় চোখের কোণে স্পষ্ট দেখতে পায় চোরা কটাক্ষ।
    -নহি, য়্যসে নহি, ইতনি দের সে বইঠা হুঁ, অভি তক ভেট নহি হুই...
    -সচ বোলিয়ে তো, আপ হম সে মিলনে আয়ে হ্যাঁয় ইয়া উনসে?
    'কলি'ব্র্যান্ডের অ্যাম্বাসাডর স্মার্ট সুজয় পদে পদে চমকায়। বিহারি মেয়ে এতো ড্যাশি? চমকাচ্ছে এভাবে, ভাবা যায়না।কথা ঘোরায়,
    -আপ কভি কলকত্তা গয়ি হ্যাঁয়?
    -হমেশা জানে কো মন করতা হ্যাঁয়। পর জাঁউ ক্যয়সে? আপ লে জাইয়েগা?
    -ম্যঁয় !!?? কিঁউ নহি, কিঁউ নহি, জরুর জাঁউঙ্গা....
    -আপকা ঘর মেঁ হি রহ জাঁউঙ্গা । আপ মুঝে পুরা কলকত্তা ঘুমা দিজিয়েগা, হ্যাঁয় না?
    -মগর আপকি হজবেন্ড ভি তো জায়েঙ্গে না?
    -অরে ধৎ, উনকা ফুরসত হো তব না। উনকো ছোড়িয়ে, অপনা বতাইয়ে...
    সুজয়ের কিস্যু বলার নেই আর।
    --------------------------------------------
    -এক রিকুয়েস্ট করুঁ? না নহি বোলিয়েগা লেকিন...
    -বোলিয়ে না
    -একঠো গানা সুনাইয়ে না...
    -লো ডুব গয়া হিন্দুস্তান, ম্যঁয় অওর গানা, ক্যা জলিল কর রহি হ্যাঁয় আপ?
    -নহি, ম্যাঁয় জানতি হুঁ, বঙ্গালি লোঁগ সব গানা গাতে হ্যাঁয়...আপকো দেখকে হি লগতা হ্যাঁয়...

    এ পর্যায়ের কমপ্লিমেন্ট সুজয়ের কপালে এ জন্মে জোটেনি এখনও। আমতা আমতা করতে থাকে। সুষমা আনডন্টেড।
    -জিত লেঙ্গে ইয়েহ বাজি হম তুম... সুনাইয়ে না... ম্যঁয় ভি গাউঙ্গি আপ কে সাথ...পতা হ্যাঁয় না কিস ফিলম কা হ্যাঁয় ইস গানা?
    -নহি তো...
    -তব সুন লিজিয়ে, শোলা অওর শবনম...
    সুজয় ভাবে এভাবে শোলা এবং শবনম'কে যে একদেহে তার দেখা হয়ে যাবে, এক ঘন্টা আগেও জানতো না। কাঁপা কাঁপা গলায় গান ধরে...
    "....মিলতি জঁহা ধরতি সে গগন, আও বঁহি হম জায়ে/ হম তেরে লিয়ে, তুম মেরে লিয়ে, এক দুজে মেঁ খো জায়ে..." চোখ বুজে সে শুনতে পায় সুষমা গলা মেলাচ্ছে।
    হঠাৎ গলা খাঁকারির শব্দে সম্বিৎ ফেরে। হতভাগা টুনটুন ফিরেছে এতোক্ষণে। দুজনেই থেমে যায়। টুনটুন বলে, বড়িয়া হো রহা থা, চলনে দিজিয়ে....
    ---------------------------------
    -তুম শালা, সরি, ইতনা দের কঁহা মর গয়া থা?
    -মত বোলো, উয়োহ গয়া পরসাদ য়্যেসে পকড় লিয়া থা ন, অভি জাকে ছোড়া...
    -চলো নিকলতে হ্যাঁয়, বহোত দের হো গই...
    -আরে বইঠো না, ভাবিজি সে বাত হো গই?
    সুষমা বলে ওঠে, ভাবি নহি সুষমা...
    - অচ্ছা উওহি সহি...ঠিক হ্যাঁয়, আজ চলুঁ তব..
    -ক্যা করেঁ, চলিয়ে ...লেকিন ফির আইয়েগা জরুর
    -হাঁ হাঁ জরুর আয়েঙ্গে
    সুজয় আজ যেন কল্পতরু....
    -মগর আজ হি বতাকে জাইয়ে কব আইয়েগা ফির....
    ------------------------------
    টুনটুন আর সুজয় নীচে নেমে আসে। টুনটুন জিগায়, ক্যয়সে গিয়া জি?
    -অরে ইয়ার গজব হো গয়া। সুষমা সে মিলকে দিল তর গয়া, ক্যা বোলুঁ অওর...মেনি থ্যাংকস...

    সুজয় তার ইয়েজদি স্টার্ট করে। টুনটুন'কে বলে , চলো তুমকো তুমহারে ঘর ছোড় দেতে হ্যাঁয়...
    টুনটুন বলে, অওর কঁহা জায়েঙ্গে? ম্যঁয় ভি তো য়ঁহি রহতে হ্যাঁয়...
    -মতলব??
    -বস, জঁহা অব তক তুম আরাম ফর্মা রহা থা, বহি মেরা ঘর হ্যাঁয়...
    - মতলব???
    -বস, বহি মতলব হ্যাঁয় মেরি...
    একটা ফিচেল হাসি উপহার দিয়ে টুনটুন সিঁড়ি দিয়ে উঠে যায় নিজের ঘরের দিকে। দোতলার বারান্দায় আধো আলোছায়ায় দাঁড়িয়ে সুষমা...

    ইয়েজদি'র ডবল একঝস্টের পাড়া কাঁপানো আওয়াজে ঝিমন্ত গ্রাম আলুথালু। সুজয় কিন্তু কিছু শুনতে পাচ্ছিলো না।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৪ মার্চ ২০১৫ | ৭০৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কল্লোল | ***:*** | ১৫ মার্চ ২০১৫ ০৩:৫১68578
  • বোম্বস্টিক লা জওয়াব।
  • adhuli | ***:*** | ১৫ মার্চ ২০১৫ ০৪:০৫68579
  • লাস্ট পারা-টা আলটিমেট। আপনার সোনার কলম হোক। আরো চাই।
  • Su | ***:*** | ১৫ মার্চ ২০১৫ ০৪:৩৮68586
  • বিভূতিভুষণ লাগে আমার- অসাধারন শিবুদা!
  • ন্যাড়া | ***:*** | ১৫ মার্চ ২০১৫ ০৫:২২68580
  • এ তো পুরো বনফুল, ও' হেনরি ঘরানা!
  • Arpan | ***:*** | ১৫ মার্চ ২০১৫ ০৫:৪৩68581
  • ডি লা গ্র্যান্ডি।
  • lcm | ***:*** | ১৫ মার্চ ২০১৫ ০৬:২৭68582
  • শানদার কহানি
  • ওয়াও | ***:*** | ১৫ মার্চ ২০১৫ ০৭:৫৯68583
  • সিম্পলি অসাধারণ! পুরো লেখাটা জুড়েই একটা মুচকি হাসি ঠোঁটের কোণে লেগে রইল কেমন :)
  • kiki | ***:*** | ১৫ মার্চ ২০১৫ ০৯:৪২68584
  • :D
  • ranjan roy | ***:*** | ১৫ মার্চ ২০১৫ ১২:৫১68585
  • দিল একদম গার্ডেন-গার্ডেন হো গয়া!
  • Nina | ***:*** | ১৬ মার্চ ২০১৫ ০২:৩৪68587
  • আরিব্বাস ডিলা গ্র্যান্ডি মেফিস্টোফিলিস
    ইয়াক ইয়াক ঃ-))))
    আরো আরো লেখ শিবাজি
    প্লিজ
  • Tim | ***:*** | ১৬ মার্চ ২০১৫ ০২:৫৭68589
  • এটা সত্যিই মেফিস্টোফিলিস টাইপের ভালো হয়েছে!! ঃ-)
  • Paallin | ***:*** | ১৬ মার্চ ২০১৫ ০৪:৩৫68590
  • অসাধারন স্মার্ট লেখা।
  • | ***:*** | ১৬ মার্চ ২০১৫ ০৪:৫০68591
  • বাহ বাহ। দিব্বি লাগল, খাসা লাগল।
  • kaushik | ***:*** | ১৬ মার্চ ২০১৫ ১২:২৭68588
  • যা তা!
    ধুয়াদ্ধার লেখা শিবাংশুদা!!!
  • nina | ***:*** | ১৭ মার্চ ২০১৫ ০৩:১৭68592
  • আর এক বার পড়ে গেলুম
    ;-)))))))))))))
  • ঐশিক | ***:*** | ১৭ মার্চ ২০১৫ ০৪:২০68596
  • ফিরে পড়ার মত
  • S | ***:*** | ১৭ মার্চ ২০১৫ ০৪:৩৭68597
  • ক্কি চাপ।
  • de | ***:*** | ১৭ মার্চ ২০১৫ ০৯:৫৩68593
  • খুব ভালো লাগলো ঃ))))
  • সিকি | ***:*** | ১৭ মার্চ ২০১৫ ১০:২৯68594
  • পুউরো একঘর লেখা। অসাম!
  • AP | ***:*** | ১৭ মার্চ ২০১৫ ১১:০৩68595
  • যা-তা একেবারে ! ঃ-)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন