অনেকদিন আগে, সে ধরো ছ' সাত বছর তো হবেই, নেট ঘাঁটাঘাঁটি করার সময় -চন্ডালীর ল-এ দিঘ্যির জায়গায় ৯ (লি) অক্ষরটা দেখে সাইটটা খুলেছিলাম। খুলেই সামনে দেখি অসভ্য চোখ। লিখেছে কে এক সায়ন্তনী পুততুন্ড, না কি যেন অমনি একটা নাম।রাত বাড়ে, বৌ তাড়া দ্যায়, আমি আর মনিটরের সামনে থেকে উঠতে পারিনা। পড়ছি। আর ইপ্সিতার বিছানায় কুকুরকে বুকে নিয়ে শুয়ে ডিপ্রেশনে কষ্ট পাওয়া পর্যন্ত পৌঁছনোর আগেই শিওর হয়ে গেছি যে স্লা, লেখক মালটা পুরুষ মানুষ। ছদ্মনামে লিখেছে।
ছেলের তখন ক্লাস এইট। মেয়ের সিক্স।
সায়ন্তনী চাঁদের পাহাড় নামান নি। সায়ন্তনী বিষবৃক্ষ বা শেষের কবিতারও লেখক না। কিন্তু গল্পটা ভুলিনি। ক'দিন আগে ভাটিয়ালিতে প্রশ্ন করলাম গল্পটাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না বলে। ওঁরা সাহায্য করলেন।
ছেলেমেয়েকে গল্পটার কথা বলেছিলাম। আজ পড়তে শুরু করার পরে দেখি ছেলের হোএ্যাপে টাইপ করা বন্ধ হয়ে গেছে। মেয়ে চিৎ হয়ে ছিলো, পাশ ফিরে আমার দিকে মুখ করে শুলো। গাঁড় আর বাঞ্চোত জাতীয় শব্দ এতোদিনে আরো ছ' সাত বছর বুড়িয়ে যাওয়া বৌএর মুখে অস্বস্তির ছাপ ফেলছে।
শুনতে শুনতে ফোর্থ ইয়ারের ছাত্র ছেলে লাইটার তুলে নিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো, এক সেকেন্ড পরেই ফিরে এসে বললো, "উঁহুঃ, বারান্দা থেকে ভালো শোনা যাচ্ছে না, পরে খাবো, তুমি পড়ো। কিন্তু শেষ না করে ঘুমিয়ে পড়ো না বাবা।"
ভীষণ বিরক্ত হয়ে ছেলের মা বললেন, "ইন্টারেস্টিং গল্পটার মাঝখানে ডিস্টার্ব করিস কেন ?" তাকিয়ে দেখি ওঁর মুখে অস্বস্তির মেঘ কেটে গেছে।
সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী আমার মেয়ে ঘেঁষে এসেছে আমার কোলের কাছে। লাটু এইমাত্র মরতে মরতে বাঁচলো একটুর জন্য। ক্যাবলা হলে কি হবে, লাটুর প্রেমিকপ্রবরের বুদ্ধি তার প্রেয়সীর বিপদের সময় কাজ করেছে ঠিকঠাক।
আমাদের এখন কফি ব্রেক। লাটুর দু'হাত বিশুর হাতে। কফি শেষ করে ছেলেমেয়েকে আর তাদের মা-কে শোনাবো সুব্রতদা কিভাবে ধরা পড়লো অসভ্য চোখ হিসেবে।
সায়ন্তনী, এতো বছর পরেও লাটুকে ভুলিনি। আমি জানি আমার ছেলেও ভুলবে না।
সায়ন্তনী, আপনি আপনার পাঠকদের ভুলে গেলেন কি করে ? আর লিখলেন না তো !