অত্যন্ত ভয়ে ভয়ে ‘কাদম্বরী’ দেখিলাম। একা দেখি নাই অবিশ্যি। সঙ্গে পাড়ার হুলো মস্তানটিকে লইয়া গিয়াছিলাম। কেন? লোকমুখে শুনিয়াছি উহার নাকি একটি ‘আনলাইসেন্সড রিভলবার’ আছে। একেই ‘বম্বকেস’ বাবুর বম্ব খাইয়া হিরোশিমা-নাগাসাকির মত ‘থ’ কেস খাইয়া বসিয়াছি। তাহার পর ‘কাদম্বরী’র সাইড এফেক্টে কী হইবে কে জানে। গঙ্গা যদি কোলে তুলিয়া না লন্, তবে হুলোর রিভলবারই সই! ‘মরিব মরিব সখী, নিশ্চয়ই মরিব-ও-ও-ও-ও...!’ ইয়ে, মানে সব ফিলিমকে খারাপ বলিলে লোকে আমাকে নিন্দুক বলিবে। তাই ‘কাদম্বরী’কে খারাপ বলিব না! ভালোই হইয়াছে। ... ...
১.
‘দাদার মৃত্যুটা কি সত্যিই স্বাভাবিক ছিল ডক্টর?’
ডঃ ব্যানার্জী মুখ তুলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে জরিপ করছেন আমায়। অনড় ট্র্যাফিক সিগন্যালের মত অপলক দৃষ্টি! সে দৃষ্টির সামনে নড়াচড়া যায় না। শ্বাস-প্রশ্বাস স্তব্ধ হয়ে যায়। আমি রুদ্ধশ্বাসে বসেছিলাম। আরও কতক্ষণ ওভাবেই নিশ্চল, স্থবির হয়ে বসে থাকতে হত কে জানে। আচমকা ঘরের টিউবটা দপদপ করে উঠল! ভোল্টেজের তারতম্যের সাথে সাথেই চোখের পাতা ফেললেন তিনি। তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ঢিমে উচ্চারণে বললেন--
‘ তুমি এত সন্দেহপ্রবন কেন দীপঙ্কর? সন্দেহটা ঠিক কোন্ বিষয়ে? তোম ... ...
১.
হঠাৎ প্রচন্ড জোরে ল্যাবের অ্যালার্ম বেজে উঠলো!
এতক্ষণ ল্যাবরেটরীর ভিতরে কোনও আওয়াজ ছিল না। অন্যদিনও বিশেষ থাকে না। শুধু মাঝেমধ্যে টেস্টটিউবের টুংটাং আর বিকারে জল গরম করার খলবল শব্দ অস্ফুট ভাবে শোনা যায়। ভিতরের মানুষগুলো ক্কচিৎ কদাচিত কথা বলে। তাদের কথা বলার সময় কোথায়? সবাই সাদা অ্যাপ্রন পরে কাজ করতেই ব্যস্ত!
আজ সকালেও এমন শান্ত পরিবেশ ছিল। ল্যাবের মুখ্য বিজ্ঞানী ডঃ হিঙ্গোরানি একটি গোপন আবিষ্কার নিয়ে ব্যস্ত আছেন!ঐ ঘরে সবার প্রবেশ নিষিদ্ধ। একমাত্র ডঃ হিঙ্গোরানিই প্রাইভেট পাসওয়ার্ড ... ...
১.
--‘ম্যাডাম, এক মহিলা আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান।’
‘লিট্ল অ্যাঞ্জেলস’ অনাথ আশ্রমের সর্বময়ী কর্ত্রী নীলাঞ্জনা চক্রবর্তী জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে পিওনের দিকে তাকালেন।
--‘ কি নাম? অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে?’
--‘আজ্ঞে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেই’। পিওন মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল—‘তবে বললেন, জিকোর ব্যাপারে কিছু বলতে চান। দরকারী কথা...!’
জিকোর নামটা শুনেই নীলাঞ্জনা নড়েচড়ে বসলেন। জিকো তাঁদের অনাথ আশ্রমেরই ছেলে। বয়স নয়-দশ বছর। অনাথ আশ্রমের আর পাঁচটা ছেলের মতই। ক’দিন আগেও তার আলাদা কোনও বৈশিষ্ট্য ছিল না। ... ...
১.
রান্নাঘরে বাসনপত্র পড়ার প্রবল শব্দ!
নীলিমা শুনেও না শোনার ভান করেন। এমন কত শব্দই তো সারাদিন ধরে অবিশ্রান্ত কানের কাছে চলছে। কখনও ঠুকঠুক। কখনও কুটকুট—কুটুর কুটুর। কখনও তীক্ষ্ণ দাঁতে পুরনো জুতো কাটার শব্দ। কখনও বা একটা লম্বা লেজ সর্সর্ করে চলে যায় এদিক থেকে ওদিকে। তাকে সবসময় দেখা যায় না বটে। কিন্তু বাসনের ঘটাং ঘটাং-এ, খুট খুট, কুট-কুট-এ সে রীতিমত সদর্পে নিজের অস্তিত্ব ঘোষণা করে চলেছে।
নীলিমা মাঝেমধ্যে মাঝরাতে বাথরুমে যাওয়ার পথে কখনও কখনও তাকে একঝলক দেখেছেন । যদিও বয়েসের সাথে সাথে ... ...
১.
রাজধানী এক্সপ্রেস তুমুল গতিতে ছুটে চলেছিল।
তখন অনেক রাত। যাত্রীরা নিজেদের বার্থে শুয়ে ঘুমে মগ্ন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ট্রেনের কামরার জানলাগুলো শক্ত করে আঁটা। তার ঝাপ্সা কাঁচে কালো মসৃণ রাতের ছায়া পিছলে পিছলে যাচ্ছে। কখনও কখনও শোনা যাচ্ছে দু একটা পায়ের শব্দ। কখনও বা বেসিনের জলের কলের কলকল।
একটা সুন্দর দুলুনি অনুভব করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তিনি। তিনি মানে যে কেউ হতে পারেন। আমি, আপনি, বা অন্য কেউ। ধরে নেওয়া যাক, তাঁর নাম অমুক চন্দ্র অমুক। সংক্ষেপে অমুকবাবু। টিপিক্যাল মধ্যবিত্ত মার্কা ... ...
কাঁটা রিভিজেটেড
সায়ন্তনী পূততুন্ড
আবার ডানকুনিতে ট্রাক চালকের রহস্যময় মৃত্যু—ডানকুনি জংশন মরণফাঁদ
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ গভীর রাতে ডানকুনির শুনশান রাস্তায় পাওয়া গেল আরেক ট্রাক চালকের মৃতদেহ। এই নিয়ে তৃতীয়বার কোনও হতভাগ্য ট্রাকচালকের মৃত্যু ঘটল অজ্ঞাত আততায়ীর হাতে। মৃত্যুর কারণ এখনও অজানা। এভাবে একের পর এক, লাগাতার ট্রাক ডাইভারেরা কেন খুন হচ্ছে, কিভাবেই বা খুন হচ্ছে সে বিষয়ে কিছুই জানা যায়নি। সি আই ডি অফিসাররা এ বিষয়ে কোনও আলোকপাত করতে পারেননি। তদন্তকারী অফিসার দেবাশিস জানা ... ...
পূর্বকথা---
বাড়িটা অনেক কালের পুরনো।ইঁটে ইঁটে শ্যাওলা জমে একটা অদ্ভুত ফ্যাকাশে অথচ বিষণ্ণ আস্তরণ তৈরি করেছে। কোন সময়ে ওটার রঙ হয়তো সাদা ছিল। এখন সবুজাভ। আদিম,অতিকায় জীবের মতো পড়ে থাকা বাড়িটাকে দেখলে প্রথম দর্শনেই ভয় হয়। মনে হয় কোনও অশুভশক্তির ছায়া বুঝি ওটার উপর ভর করেছে।
অতীতে এই বাড়িটা কোনো এক সাহেব খুব শখ করে তৈরি করেছিলেন। তখন এটা একটা ঝকঝকে তকতকে অট্টালিকা ছিল।কিন্তু সিপাহী বিদ্রোহের সময় তিনি ও তাঁর গোটা পরিবারই বিদ্রোহী সেনাদের হাতে বীভৎস ভাবে খুন হন।
তারপর থেকেই বাড়িটা পরি ... ...
৭.
--‘রোজ সকালে যদি আপনার একশো গ্রাম পায়খানা না হয়, তবে বুঝবেন সিস্টেম ক্লিয়ার হয়নি। পেটের ভিতরে দুর্গন্ধযুক্ত গ্যাসের সৃষ্টি হয়—ভদ্রসমাজ নাকে রুমাল দেয়। তাই ব্যবহার করুন গন্ধরাজ চুড়ন...!’
‘গন্ধরাজ চুড়ন’ এর ক্যানভাসারের চিৎকারে রোজ সকালে ঘুম ভাঙে লাটুর। আর ঘুম ভাঙতেই মুড ডুম হয়ে যায়! যদি ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গেই কাউকে একশো গ্রাম পায়খানার ফান্ডা শুনতে হয়, তবে মেজাজের পিন্ডি চটকে যাওয়াই স্বাভাবিক! তার উপর সম্প্রতি তার মেজাজ একটা বিশেষ কারণেই খারাপ হয়ে আছে। মা ফসসা হতে চলেছেন। সেটা দুঃখের কথা ... ...
৩.
--‘হ্যালো’?
--‘হ্যালো। পুঁটিরাম নার্সারী?’
ওপ্রান্ত থেকে এমন একটা অদ্ভুত নাম শুনে ব্যায়ামবীর রাবন, তথা বাবন ঘাবড়ে গেল। পুঁটিরাম নার্সারী! এমন নামের কোনও নার্সারী আছে নাকি! সে আমতা আমতা করে বলে—‘না...এটা তো নার্সারী নয়। আপনার বোধহয় ভুল হচ্ছে’।
--‘সে কি!’ ওপ্রান্ত থেকে ব্যথিত স্বর ভেসে আসে—‘এমন বলতে পারলেন আপনি? আমার ভুল হচ্ছে না! আপনারই ভুল হচ্ছে’।
তার চোখ প্রায় চড়াৎ করে চাঁদিতে উঠে পড়েছে। অনেকটা চোখওয়ালা নারকোলগুলো যেমন হয়, তেমনই চাঁদি ছুঁয়ে পিট্পিট্ করে তাকিয়ে থেকে সে ক ... ...