পঞ্চাশের মন্বন্তরের প্রকোপ তখন তুঙ্গে। কমিউনিস্ট পার্টির পি সি যোশীর আহ্বানে দুই তরুণ চষে বেড়াচ্ছেন সারা বাংলা। সুনীল জানার হাতে রয়েছে ক্যামেরা আর শিল্পী চিত্তপ্রসাদ সঙ্গে নিলেন তাঁর স্কেচবুক। উদ্দেশ্য, কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র "পিপল'স ওয়ার" পত্রিকার জন্য দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতাকে নথিবদ্ধ করা। ঘুরতে ঘুরতে চিত্তপ্রসাদ এসে পৌঁছলেন হুগলি জেলার জিরাটে, ইচ্ছে ছিল শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটে দর্শন করা, আর নিজের চোখে দেখে নেওয়া 'বেঙ্গল রিলিফ কমিটি'র প্রধান নিজের গ্রামে ত্রাণের কী ব্যবস্থা করেছেন।
বলাগড় অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে জিরাটের দিকে হেঁটে যাওয়ার সময় চিত্তপ্রসাদ দেখলেন যে, গত বছরের বিধ্বংসী বন্যার পর পরই এই দুর্ভিক্ষ একেবারে শিরদাঁড়া ভেঙে দিয়েছে এলাকার মানুষের। রাজাপুর গ্রামের ৫২টি পরিবারের মধ্যে ততদিনে কেবলমাত্র আর ৬টি পরিবার রয়ে গেছে। এদিকে আবার অধিকাংশ গ্রামবাসী শ্যামাপ্রসাদের নাম না শুনলেও, প্রত্যেকেই জানালেন যে "আশুতোষের ছেলের" থেকে ছিটেফোঁটা সাহায্যও পাননি গ্রামের মানুষ। বরং সরকারের তরফ থেকে মাস দুয়েক খাবারদাবার পেয়েছেন তাঁরা, আর খাদ্যশস্য এবং সামান্য আর্থিক সাহায্য পেয়েছেন কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ফেডারেশন, মুসলিম স্টুডেন্টস লিগের ছাত্রদের উদ্যোগে। শ্যামাপ্রসাদের রিলিফ কমিটি দেশের নানাপ্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ডোনেশন পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেই টাকা যে এই অঞ্চলের মানুষের কাজে লাগেনি তা একনজর দেখেই বুঝে গেলেন চিত্তপ্রসাদ। কিন্তু জিরাটে পৌঁছে যা দেখলেন, তা সত্যি মেনে নিতে পারেননি তিনি। দেখলেন দুর্ভিক্ষ-পীড়িত বাকি গ্রামের মতনই আশুতোষের আদি বাড়ির ভগ্নপ্রায় অবস্থা আর তার মধ্যেই, ওই দুর্ভিক্ষের বাজারে, শ্যামাপ্রসাদ তৈরি করছেন প্রাসাদোপম বাগান বাড়ি। সেখানে আবার মাঝেমাঝেই ছুটির দিনে কলকাতা থেকে বন্ধু-বান্ধব এসে ফুর্তি করে সময় কাটিয়ে যান।
১৯৪৩ সালের এই দুর্ভিক্ষ কিন্তু খরা বা অনাবৃষ্টি বা খারাপ ফসল হওয়ার কারণে হয়নি, হয়েছিল সম্পূর্ণভাবে ব্রিটিশ সরকারের গাফিলতিতে। একেই জাপানের কাছে বার্মার পতনের ফলে সেখান থেকে চালের আমদানি বন্ধ হয়ে গেল। তার ওপর যুদ্ধের সৈন্যদের জন্য জমা করা হয়েছিল প্রচুর খাদ্যশস্য এবং বাকি যা ফসল ছিল তার সুষম বণ্টন করা হল না বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে। কলকাতা শহরের বাসিন্দাদের জন্য এবং কলকারখানার শ্রমিকদের জন্য চালের বন্দোবস্ত হলেও, খাবার পৌঁছল না রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলগুলিতে। এর সঙ্গে শুরু হল মজুতদারদের চালের কালোবাজারি যা খাদ্যদ্রব্যের দাম নিয়ে গেল গরিব মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। খাবারের অভাবে গ্রামবাংলার মানুষ চলে আসতে লাগলেন শহর কলকাতায়। প্রতিদিন মৃতদেহের সংখ্যা বাড়তে লাগলো শহরের রাস্তাঘাটে। কলকাতা শহরের এই চরম দুরবস্থার ছবি সরকারের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ছাপালেন স্টেটসম্যান সংবাদপত্রের সম্পাদক ইয়ান স্টিফেন্স। সেসব ছবি সাড়া জাগাল গোটা বিশ্বে। এই অবস্থায় সরকারি ত্রাণব্যবস্থা যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখন বেসরকারি ত্রাণ শুরু হল শ্যামাপ্রসাদের পরিচালনায়। তিনি 'বেঙ্গল রিলিফ কমিটি' বা বিআরসির রিলিফ কমিশনার নিযুক্ত হলেন এবং এই দুর্ভিক্ষের হাহাকারের মধ্যেও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করার সুযোগ ছাড়লেন না। ত্রাণকেন্দ্র স্থাপন করলেন কেবলমাত্র সেই সব গ্রাম এবং ওয়ার্ডে যেখানে হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। বিআরসির সঙ্গে সঙ্গে শ্যামাপ্রসাদের তত্ত্বাবধানেই তৈরি হলো হিন্দু মহাসভা রিলিফ কমিটি। বিআরসির উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও আর একটি কমিটির প্রয়োজনীয়তার কারণ হিসেবে বলা হল যে অনেক মানুষ চাইছেন যে তাঁদের দানের অর্থ যেন কেবলমাত্র হিন্দু মহাসভা মারফত খরচ করা হয়। কমিটির বক্তব্য ছিল, যেহেতু সরকারি ত্রাণকেন্দ্রের ক্যান্টিনগুলোতে বেশিরভাগ রাঁধুনি মুসলমান, তাই হিন্দুদের নাকি সেখানে খাবার ব্যাপারে আপত্তি আছে। হিন্দু মহাসভার নিজেদের ক্যান্টিনে কেবলমাত্র হিন্দুদের রান্না করা খাবার পরিবেশন করা হতো । মহাসভার দাবি ছিল যে, রান্না খাবার না দেওয়া হলেও, মুসলমানদের পুরোপুরি বঞ্চিত না করে তাঁদেরকে দেওয়া হয় কাঁচা শস্য। সাংবাদিক টি. জি. নারায়ণ মেদিনীপুরে মহাসভার একটি হাসপাতালে গিয়ে দেখেন যে বাইরে হাজার হাজার মরণাপন্ন মানুষ থাকা সত্বেও, হাসপাতালের চল্লিশটির মধ্যে পনেরোটি শয্যা খালি। তবে গরিব রুগীর চিকিৎসা হোক না হোক, হাসপাতালের প্রত্যেকটি ঘর কিন্তু আলোকিত করে রেখেছে শ্যামাপ্রসাদের ফ্রেমে বাঁধানো পোর্ট্রেট।
যে ভয়ঙ্কর সময়ে প্রায় ৩০ লক্ষ বাঙালি না খেতে পেয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন, সেই সময় শ্যামাপ্রসাদের দুশ্চিন্তার কারণ উচ্চবর্ণের আধপেটা-খাওয়া হিন্দু কী করে মুসলমান রাঁধুনির হাতের রান্না সরকারি ক্যান্টিনে খেতে পারেন। এর সঙ্গে সঙ্গে দুর্ভিক্ষের ত্রাণকার্য নিয়ে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ চলতেই থাকে - হিন্দু মহাসভাও আঙুল তুলতে থাকে মুসলিম লীগ নিয়ন্ত্রিত বাংলার গভর্নমেন্টের দিকে, তাদের বক্তব্য সরকারি ত্রাণকার্য্যে মুসলিম জনগণের প্রতি পক্ষপাতিত্ব স্পষ্ট ।
অথচ মুসলিম লীগের সঙ্গে হিন্দু মহাসভার সম্পর্ক কিন্তু খুব অল্প দিনের ছিল না। ভারতকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে ফেলার প্রতিবাদে ১৯৩৯ সালে যখন কংগ্রেসের নেতারা মন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন, তখন হিন্দু মহাসভা মুসলিম লীগের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জোট সরকার বানান সিন্ধ এবং উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে। ১৯৪১ সালে বাংলায় শ্যামাপ্রসাদ ফজলুল হকের মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রী হিসেবে যোগদান করেন, সেই ফজলুল হক, যিনি বছরখানেক আগেই লাহোরে মুসলিম লীগের সভায় 'পাকিস্তান প্রস্তাব' গ্রহণ করার দাবি জানান। সাভারকার আর শ্যামাপ্রাসাদের নেতৃত্বে হিন্দু মহাসভা জোর কদমে চালাতে থাকে গান্ধীজির 'ভারত ছাড়ো' আন্দোলনের বিরোধিতা। ১৯৪২-এর ২৬ জুলাই বাংলার গভর্নর জন হার্বার্টকে চিঠি লিখে শ্যামাপ্রসাদ জানিয়েও দেন কংগ্রেসের এই আন্দোলন মোকাবিলা করার জন্য ঠিক কিরকম কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তারপর ১৯৪৩এর ৩রা মার্চ সিন্ধের মন্ত্রিসভায় ভারতের মুসলমানদের জন্য যখন পৃথক রাষ্ট্রের দাবি পাস করা হয়, হিন্দু মহাসভা কিন্তু সরকার থেকে বেরিয়ে আসেনি এই প্রস্তাবের প্রতিবাদে।
আজ থেকে বছর পাঁচেক আগে দিল্লির নেহেরু মেমোরিয়ালে শ্যামাপ্রসাদের ওপর একটি প্রদর্শনী আয়োজিত হয়। সেখানে অমিত শাহ তাঁর ভাষণে বলেন যে শ্যামাপ্রসাদ নেতৃত্ব দিয়ে থাকলে সমগ্র কাশ্মীর আজ ভারতের দখলে থাকত।
প্রোপাগান্ডা এরকমই হওয়া উচিত - রাজনৈতিক সুবিধা পেতে যদি মিথ্যের আশ্রয় নিতেই হয়, তাহলে সেই মিথ্যাকে সুকৌশলে এমনভাবে পেশ করতে হবে কতকগুলো আংশিক সত্যকে পাশে রেখে, যাতে সত্যি-মিথ্যের ফারাকটুকুও আর করা না যায়। আসলে, কাশ্মীরের যতটুকুও আজ ভারতের দখলে আছে, সেটুকুও রয়েছে কিন্তু নেহেরুর জন্যই। কাশ্মীরকে স্বাধীন ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার কোনও তাগিদ হিন্দুত্ববাদীদের কোনকালেই ছিল না। বলরাজ মাধকের প্রচেষ্টায় আর এস এস-এর জম্মু শাখা স্থাপিত হয় ১৯৩৯ সালে আর কাশ্মীর শাখা ১৯৪৪এ। কাশ্মীরের ডোগরা পরিবার শুরু থেকেই এই প্রচেষ্টায় শরিক। প্রেমনাথ ডোগরা ছিলেন জম্মু আর এস এস-এর সঙ্ঘচালক, যিনি আবার ছিলেন জম্মু কাশ্মীর হিন্দু সভার একজন প্রধান সদস্যও। লোকসভাতে দাঁড়িয়ে সমগ্র কাশ্মীর ভারতের অধীনে না থাকার জন্য অমিত শাহের নেহেরুকে দোষারোপ করা যাঁরা শুনেছেন তাঁরা অবাক হবেন শুনে যে, দেশভাগ যখন একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে গেল ১৯৪৭-এর মে মাসে, তখন এই হিন্দু সভা কিন্তু মহারাজের পাশে থেকে ভারতে যোগদান না করে কাশ্মীরকে স্বাধীন রাখার জন্য সোচ্চার হয়েছিল।
স্বাধীন ভারতের প্রথম শিল্পমন্ত্রী হিসেবে শ্যামাপ্রসাদের যে 'বিশাল অবদান' রয়েছে সে কথা নেহেরু মেমোরিয়ালের ওই প্রদর্শনীতে বেশ ফলাও করেই বলা হয়েছিল। এও দাবি করা হয়েছিল যে ভিলাই ইস্পাত কেন্দ্র গড়ে ওঠার পেছনেও নাকি তাঁরই হাতযশ। বস্তুত ভিলাই ইস্পাত কেন্দ্র স্থাপিত হয় ১৯৫৫ সালে আর শ্যামাপ্রসাদ মারা যান তার দু'বছর আগেই। সদ্য স্বাধীন ভারতের শিল্পায়ন শ্যামাপ্রসাদের হাত ধরে হয়েছে, এই ন্যারেটিভ বর্তমান সরকারের 'মেক ইন ইন্ডিয়া'র ছবি কিছুটা হলেও শক্তিশালী করবে ঠিকই, কিন্তু এই প্রদর্শনীর আগে পর্যন্ত নেহেরু-মহলানবীশ প্রকল্পের ধারেকাছে কোথাও যে শ্যামাপ্রসাদের আনাগোণাও ছিল, সে কথা কেউ বোধহয় ঘুণাক্ষরেও টের পাননি ।
এখানেই শেষ নয়। আর এক চমকপ্রদ ন্যারেটিভ তৈরি করা হয়েছে শ্যামাপ্রসাদকে ঘিরে - তিনি নাকি কলকাতা শহরকে বাঁচিয়েছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হওয়ার থেকে। বস্তুত এরকম কোনো প্রস্তাব কখনোই আসেনি। বরং বাংলার প্রধানমন্ত্রী সুহরাবর্দি আর শরৎ বোস, কিরণ শংকর রায়ের মতন কংগ্রেস নেতারা আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন বাংলাকে অবিভক্ত এবং স্বাধীন রাখার। অন্যদিকে আশুতোষপুত্র চেয়েছিলেন বাংলাকে দুটুকরো করতে - আর তাই মাউন্টব্যাটেনকে গোপন পত্র মারফত আর্জি জানিয়েছিলেন যে দেশভাগ না হলেও যেন অন্তত বাংলাকে ধর্মের ভিত্তিতে দুভাগ করা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে কি একবার প্রশ্ন করা যায় না, যে হিন্দু মহাসভার যদি প্রকৃতপক্ষেই আপত্তি ছিল দেশভাগ করা নিয়ে, তাহলে স্বাধীনতার পর শ্যামাপ্রসাদ নেহরুর মন্ত্রিসভায় যোগদান করলেন কেন? তাঁর রাজনৈতিক জীবনের এইসব অপ্রীতিকর সত্যিগুলো ধামাচাপা দিয়ে হিন্দু মহাসভার তখনকার কাণ্ডকারখানা বাঙালির কাছে গ্রহণযোগ্য করে শ্যামাপ্রসাদকে বাংলায় বিজেপির আইকন করে তোলার কাজটা খুব একটা সহজ হবে না। তবে পয়সার জোরে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে ডাহা মিথ্যেকে সত্যির রূপ দেওয়ার কঠিন কাজটা এই জাতীয় ফ্যাসিস্ট দলগুলি আগেও করে দেখিয়েছে। দেখা যাক, এক্ষেত্রে জল কতদূর গড়ায়।
শালা এই কারণেই বারবার বলি লগিন করে মন্তব্য করার বন্দোবস্ত চালু করতে। শ্যামাপোকা এসেছে, এবারে গোপাল পাঁঠার দল আসর গরম করতে নামবে। ডায়লগ মারছে দ্যাকো, যেন ইতিহাস গুলে খেয়েচে।
সেদিন "শ্যামাপ্রসাদ মা বোনদের বোরখাবন্দী হওয়া"র থেকে বাঁচিয়ে ছিলেন বলেই কি আজ তার দল সেই ভুল সংশোধন করছে? এমন রামরাজত্ব চালু করছে যাতে হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ শিখ জৈন সব মেয়েরাই অন্তঃপুরের ঘেরাটোপে ঢুকে পড়তে বাধ্য হয়। কেমন শিক্ষা পেল তাহলে শ্যামাপ্রসাদের থেকে?
এলেবেলের কি দু:খ গো- সে ছদ্মনামে লিখতে পারে, সমস্যা নেই। অন্য কেউ লিখলেই লগ-ইন চালু করা দরকার। পুরো হেরো কেস। হিন্দু মেয়েদের অন্ত:পুরে না ঢুকিয়ে কি করবে? মুসলিম মেয়ে ত‘ সব বোরখার ভেতরেই থাকে। শুধু হিন্দু মেয়েগুলিই যার তার কোলে উঠে কারিনা কাপুরের মত গর্ভবতী হয় আর তারপর বলে শিবলিঙ্গে কন্ডোম পরাবে।
"আর এক চমকপ্রদ ন্যারেটিভ তৈরি করা হয়েছে শ্যামাপ্রসাদকে ঘিরে - তিনি নাকি কলকাতা শহরকে বাঁচিয়েছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হওয়ার থেকে। বস্তুত এরকম কোনো প্রস্তাব কখনোই আসেনি। বরং বাংলার প্রধানমন্ত্রী সুহরাবর্দি আর শরৎ বোস, কিরণ শংকর রায়ের মতন কংগ্রেস নেতারা আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন বাংলাকে অবিভক্ত এবং স্বাধীন রাখার। অন্যদিকে আশুতোষপুত্র চেয়েছিলেন বাংলাকে দুটুকরো করতে - আর তাই মাউন্টব্যাটেনকে গোপন পত্র মারফত আর্জি জানিয়েছিলেন যে দেশভাগ না হলেও যেন অন্তত বাংলাকে ধর্মের ভিত্তিতে দুভাগ করা হয়।"
এটি আসলে অর্ধসত্য-সিকিসত্য-নির্জলা মিথ্যার বেসাতিনির্মাণ ।
১৯৪৭ সালের ২২শে মে হিন্দু মহাসভার নেতা শ্যামাপ্রসাদ প্যাটেলের কাছে এক চিঠিতে লিখলেন ''ক্যাবিনেট মিশনে যেরকম বলা হয়েছে সেরকম একটা শিথিল কেন্দ্রীয় সরকার হলেও বাংলায় আমাদের নিরাপত্তা থাকবে না। পাকিস্তান হোক আর নাই হোক বর্তমান বাংলাকে ভেঙ্গে আমরা দুটি প্রদেশ গড়ার দাবি করছি।” এইবার আসা যাক,ক্যাবিনেট মিশন(১৯৪৬) কিরকম সরকারের কথা বলা হয়েছিলো সেই প্রসঙ্গে৷
১৯৪৫ সালে ব্রিটেনে কনসার্ভেটিভ দল ক্ষমতাচ্যুত হয়,নতুন প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলীর নেতৃত্বে লেবার পার্টি ক্ষমতায় আসে৷সমসাময়িক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এটলী যত শীঘ্র সম্ভব ভারতকে স্বাধীনতা দিতে উদ্যোগী হন৷বিশ্বযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি,আজাদ হিন্দ ফৌজের বিক্রম, নৌবিদ্রোহ ইত্যাদির পর ভারতশাসন করা ব্রিটিশদের পক্ষে অসম্ভব ছিলো৷সেইমত ২৪ মার্চ,১৯৪৬ সালে স্যার প্যাথিক লরেন্স,এ ভি আলেকজান্ডার, স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস ব্রিটেনের এই তিন ক্যাবিনেট মিনিষ্টারের একটি দল ভারতে আসে,যা ক্যাবিনেট মিশন নামে পরিচিত৷এই মিশনের উদ্দেশ্য ছিলো স্বাধীন ভারতের একটি সংবিধানসভা এবং একটি অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠন৷ ক্যাবিনেট মিশন কংগ্রেস ও লীগের সাথে আলোচনা শুরু করে, কিন্তু লীগ নিজের পাকিস্তান দাবীতে অনড় থাকে৷কোনভাবে সহমতে আসা যাচ্ছে না দেখে, ১৬ ই মে,১৯৪৬ সালে ক্যাবিনেট মিশন নিজেদের প্রস্তাবগুলি দু পক্ষের সামনে রাখে৷ক্যাবিনেট মিশন অবিভক্ত ভারতের পক্ষে এবং সেপারেট ইলেকটোরেটের বিপক্ষে মত দিয়েছিলো৷ আসুন,বিশদে দেখা যাক৷
১.ক্যাবিনেট মিশন প্রস্তাব দিয়েছিলো,ভারতের প্রভিন্সগুলোকে তিনটে সেকশান A.B এবং C তে ভাগ করা হোক৷সেকশান A তে থাকবে বোম্বে,ইউনাইটেড প্রভিন্স,মাদ্রাজ,সেন্ট্রাল প্রভিন্স,বিহার ও উড়িষ্যা৷গ্রুপ B তে থাকবে পাঞ্জাব, বালুচিস্তান, সিন্ধ,নর্থ ওয়েস্ট ফ্রন্টিয়ার প্রভিন্স এবং সেকশান C তে থাকবে বাংলা এবং অসম৷অর্থাৎ,সেকশান B মুসলিম মেজরিটি,A হিন্দু মেজরিটি অঞ্চল এবং C তে মুসলিম মেজরিটি হওয়া সত্ত্বেও ভালোসংখ্যক হিন্দু আছে,বলা হয়েছিলো,প্রত্যেক প্রভিন্স নিজেদের সংবিধান বানাবে,তারপর প্রত্যেক প্রভিন্স মিলে নিজের সেকশানের সংবিধান বানাবে,শেষে সবকটা সেকশান মিলে দেশের সংবিধান তৈরী করবে৷প্রিন্সলি স্টেটগুলিকেও অটোনমি দেওয়া হয়৷তারা চাইলে ভারতে জুড়তে পারে বা ব্রিটেনের সাথে এগ্রিমেন্ট করতে পারে৷
২.ইউনিয়ান গর্ভনমেন্টের ক্ষমতা খুবই সীমিত হবে৷তাদের শুধু ফিনান্স, কমিউনিকেশন এবং ফরেন এফেয়ার্সের ক্ষমতা থাকবে৷বাকী নিরাপত্তা,আইনশৃঙ্খলাজনিত সব ক্ষমতা প্রভিন্সের হাতে থাকবে৷
৩.এছাড়াও এটা বলা হয় যে,পাঁচ বছর অন্তর কোন প্রভিন্স চাইলে অন্য সেকশানে ঢুকতে পারে৷অর্থাৎ,বেঙ্গল চাইলে সেকশান C ছেড়ে সেকশান B তে যেতে পারে৷শুধু তাইই নয়,দশ বছর পর কোন প্রভিন্স সেকশান বা ইউনিয়ানের সংবিধান পরিবর্তনের দাবী করতে পারে৷
৪.প্রভিন্সগুলোর এসেম্বলি থেকে সংবিধান সভার সদস্য নির্বাচিত হবেন জনসংখ্যার অনুপাতে৷এই সংবিধানসভা ইন্ডিয়ান ইউনিয়ানের সংবিধান এবং অন্তর্বতীকালীন সরকার বানাবে৷
এইবার,মুল পয়েন্টে আসি৷পাকিস্তান বানানোর দাবীকে নস্যাৎ করা হলেও জিন্না এই প্ল্যান শুনে খুশি হলেন৷কারণ,জিন্নাহ এখানে তার কল্পিত পাকিস্তানের থেকেও বড়ো পাকিস্তানের সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছিলেন৷সেকশান B এবং C মুসলিম মেজরিটি অঞ্চল, পাঞ্জাব, বাঙ্গালা এরই অংশ৷এসেম্বলির মেজরিটি সদস্য মুসলিম৷তাদের হাতেই যাবতীয় সিদ্ধান্তের ভার৷ক্যাবিনেট মিশনের আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিলো যদি ভারতভাগ হয় তবে অর্ধেক বাঙ্গালা ও অর্ধেক পাঞ্জাব ভারতেই থেকে যাবে৷অতএব জিন্নাহ ভেবে নিলেন,এই পাঁচ বছর ও দশ বছরের প্রভিশানকে কাজে লাগিয়ে দুটো সেকশানকে ভারত থেকে পুরোপুরি আলাদা করা যাবে৷এই ভেবে ১০ ই জুন,১৯৪৬ এ লীগ ক্যাবিনেট মিশন প্ল্যানে সম্মতি দেয়৷কিন্তু গোল বাঁধে অন্যখানে৷ কংগ্রেস সহ অন্য দলগুলি দাবী করতে থাকে যে, প্রভিন্সগুলো এ,বি,সি কোন সেকশানে যুক্ত হবে বা আদৌ যুক্ত হবে কিনা,সেটা কম্পালসারি থাকবে না,তাদের ইচ্ছানুসারে হবে৷যেহেতু অসম ও নর্থ ওয়েস্টে কংগ্রেসের সরকার ছিলো৷অবশেষে তাই,মেনে নেওয়া হলো৷সেকশানে যুক্ত না হলে,বাঙ্গালা ,পাঞ্জাব হাত থেকে বেরিয়ে যেতে পারে দেখে,এইবার জিন্না বেঁকে বসলেন৷প্রভিন্সের যোগদান কম্পালসারি না বানানোয় এবং ভারতভাগ হচ্ছে না দেখে, কংগ্রেস মোটামুটি মেনে নিলো৷ কিন্তু,ক্রমহ্রাসমান ব্রিটিশ শক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন ওয়াভেল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উদ্বোধন করতে আগ্রহী ছিলেন। জিন্নাহর ভেটো উপেক্ষা করে তিনি একটি মন্ত্রিসভার অনুমোদন করেন, যাতে নেহেরু অন্তবর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হন৷ পাকিস্তান প্রত্যাখ্যাত হওয়ার সাথে সাথে জিন্নাহ অশান্ত হয়ে ওঠেন। পাকিস্তানকে অর্জন করতে তিনি "সরাসরি পদক্ষেপ" গ্রহণ করেছিলেন, যা দাঙ্গা এবং গণহত্যার সূত্রপাত করেছিল।আগস্টের ডাইরেক্ট একশান ডে ওয়াভেলের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার সংকল্পকে আরও বাড়িয়ে তোলে। 1946 সালের 2 রা সেপ্টেম্বর নেহেরুর মন্ত্রিসভা গঠিত হয়৷
২ রা মার্চ,১৯৪৭ শ্যামাপ্রসাদ মাউন্টব্যাটেনকে লেখেন,
"আমি এই চিঠিতে যে অভিমত ব্যক্ত করছি তার সঙ্গে শুধু বাংলার বৃহৎ সংখ্যক হিন্দু নয়, ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের হিন্দুরাও সহমত পোষণ করে। এবং আশা করি আপনি তা যথাযথ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন। আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে পাকিস্তানের বিরোধিতা করি। আমরা শুধু হিন্দুদের মনোভাব থেকে একথা বলছি না, সর্বভারতীয় স্বার্থেই একথা বলছি। বর্তমান গণপরিষদ ব্রিটিশ ভারতের সকল প্রদেশের নয়, বেশ কিছু সংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ দেশীয় রাজ্য প্রতিনিধিত্ব করে। সিন্ধ,পাঞ্জাব,বালুচ,নর্থ ওয়েস্ট ফ্রন্টিয়ারের মুসলমান সদস্যগণ অবশ্য অধিবেশনে অনুপস্থিত থাকছেন এবং ঐ প্রদেশগুলির হিন্দু ও শিখ সদস্যরাই তাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। মুসলিম লীগের এই বাধাদানকারী মনোভাবকে কোনও মতেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়। যদি সরকার সাহস সঞ্চয় করে ঘােষণা করতে পারেন যে তারা মন্ত্রী মিশন পরিকল্পনার মূল সুপারিশ থেকে কোনওমতেই পিছিয়ে আসবেন না, তাহলেই পুরো পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়ে যাবে। যদি আরও ঘোষণা করা হয় যে গণপরিষদ কে স্বাধীন ভারতের প্রথম সাময়িক লোকসভা বলে গণ্য করা হবে, এবং সে লোকসভা থেকে নির্বাচিত অস্থায়ী সরকারের হাতেই ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে নির্বাচিত অবশ্যই সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে তা হলেই মুসলিম লীগ তাদের নেতিবাচক ও বাধাদানকারী মনোভাব পরিবর্তন করতে বাধ্য হবে এবং দেশের শাসনকার্যে নিজেদের ন্যায্য অংশ গ্রহণ করবে।ভারত ভাগ হোক বা না হোক, পাঞ্জাব ও বাংলাকে ভাগ করা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে৷"
অবিভক্ত ভারত,মিশনে প্রস্তাবিত শিথিল কেন্দ্রীয় সরকার,ইচ্ছার বিরুদ্ধে সেকশানে যোগদান এবং বেশীরভাগ ক্ষমতা সংখ্যাগুরু শাসকের হাতে কেন্দ্রীভুত,এই রকম পরিস্থিতি কল্পনা ভারতের ফেডারেল স্ট্রাকচার নেই তখন,বরং ইউনিয়ান অফ স্টেটস৷বঙ্গের সংখ্যালঘু পৌত্তলিকের নিরাপত্তা কোথায়?
এখানে কিছু কথা বলা আবশ্যক৷চলুন ফিরে যাওয়া যাক,১৯৪৬সালের প্রভিন্সিয়াল ইলেকশানে৷ পাকিস্তানের দাবীতে নির্বাচনে নেমে, বাঙ্গালার মুসলিম রিজার্ভ 119 টি সিটের মধ্যে লিগ পায় 114 টি সিট সাথে 83% এর উপর মুসলিম ভোট৷ এরপরই,১৬ ই আগষ্ট ডাইরেক্ট একশান ডে র নরসংহারের দিন৷'লড়কে লেঙ্গে' পাকিস্তানের দাবী 'মারকে লেঙ্গে' পাকিস্তানে পর্যবসিত,কলকাতার ধুলোমাখা রাজপথ ধুয়ে গেছে কাফেরের রক্তধারায়,সুরাবর্দি-নাজিমুদ্দিনের প্ররোচনায়৷চার দিনে প্রায় দশহাজার মানুষের মৃত্যু দেখেছিলো এই 'সিটি অফ জয়' কলকাতা মহানগরী৷রুখে দাঁড়িয়েছিলেন গোপাল মুখার্জী,যুগল ঘোষ, কালু, শ্যামাপ্রসাদ সহ ব্যায়াম সমিতি,আখড়ার হিন্দু শিখ যুবরা৷ তারপর,১০ ই অক্টোবর,১৯৪৬ নোয়াখালীতে কোজাগরী লক্ষীপুজোর দিন কাশেম-গোলাম সরোওয়ার হুসেইনির 'মিঞার ফৌজ' খ্যাপা কুকুরের মত তছনছ করে দেয় 18% হিন্দুর জীবন যৌবন ধনমান৷বোঝা গেলো,দেশভাগ আসন্ন৷প্রয়োজনে ভারতবর্ষকে রক্তস্নাত করে পাকিস্তানের মসনদে বসবেন কায়েদ এ আজম মহম্মদ আলি জিন্নাহ৷বাঙ্গালায় তখন মুসলমানেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ৷ধর্মের ভিত্তিতে ভারত বিভাজিত হলে সংখ্যাগরিষ্ঠের বাঙ্গালা পাকিস্তানেই যাবে৷কিন্তু তা হতে দিলেন না এ সি চ্যাটার্জী,নলিনাক্ষ স্যান্যাল, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী,যাদব পাঁজা,সুবোধ চন্দ্র মিত্র,শৈলেন্দ্র কুমার ঘোষ প্রমুখ৷১৯৪৬ সালের শেষের দিকে গড়ে উঠলো বেঙ্গল পার্টিশান লিগ৷হিন্দু বাঙ্গালী হোমল্যান্ডের দাবীতে,এগিয়ে এলেন রমেশচন্দ্র মজুমদার,যদুনাথ সরকার,মেঘনাদ সাহা,সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের মত নমস্য শিক্ষাবিদ৷ অবস্থা বেগতিক বুঝে তড়িঘড়ি শরৎ বোস-সুরাবর্দি-আবুল হাসেম-কিরণ শঙ্কর রায় গভর্নর বারোজের সহায়তায় স্বাধীন সার্বভৌম যুক্তবঙ্গের প্রস্তাব পেশ করলেন৷জিন্না প্রথমে অরাজী হলেও পরে বুঝলেন স্বাধীন বাঙ্গালা আদতে 'Virtual Pakistan',অতএব রাজী হলেন৷তো,কিভাবে বুঝলেন এ কথা?খুবই সহজ,ডেমোগ্রাফি বিচারে সেই ১৯৪৬ সালে অবিভক্ত বঙ্গের আঠাশটির সতেরোটি জেলায় বিশেষ সম্প্রদায় ক্রুড মেজরিটি৷ চট্টগ্রাম (74.55%), নোয়াখালী (81.35%), কুমিল্লা(77.09%), বরিশাল (72.33%), ময়মনসিংহ (77.44%), ফরিদপুর (64.78%), ঢাকা(67.29%), মালদা(56.79%), রংপুর( 71.41%), বগুড়া(83.93%) , পাবনা (77.06%), খুলনা(49.36%), যশোর (60.21%), নদীয়া (61.29%), দিনাজপুর (50.20%), রাজশাহী (74.65%),মুর্শিদাবাদ(56.55%) গড়ে 54.73% মুসলমান৷ অতএব,স্বাধীন সার্বভৌম বাঙ্গালা যে আদতে পাকিস্তানে সংযুক্তির ইন্টারমিডিয়েট স্টেজ সন্দেহ নেই৷শাসনতন্ত্রে মেজরিটিই শেষ কথা বলে৷ পৃথক সার্বভৌম যুক্তবঙ্গে সংখ্যালঘু কাফেরকে পুড়তে দেখলে কোন আর্মি বাঁচাতে আসত?গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংয়ের সময় কিরণশঙ্কর-শরৎ-জ্যোতিরা হায়েনাদের হাত থেকে কাফেরদের বাঁচাতে রাস্তায় নেমেছিলেন? বরং,কষাই সুরাবর্দির বিরুদ্ধে বিধানসভায় অনাস্থা প্রস্তাব আনীত হলে তা সমর্থন করতে সাহস পাননি,জ্যোতি বসু, রতনলাল ব্রহ্ম এবং রুপনারায়ণ রায়,এই তিন কমিউনিষ্ট সদস্য৷
স্বাধীন বাঙ্গালার অসাধু পরিকল্পনা প্রসঙ্গে ২ রা মে,১৯৪৭ ওই একই পত্রে শ্যামাপ্রসাদ মাউন্টব্যাটেনকে লিখছেন,
''স্বাধীন অবিভক্ত বাংলা নিয়ে কিছু সস্তা কথাবার্তা চলছে। আমরা এর তাৎপর্য একেবারেই অনুধাবন করতে পারছি না; কিংবা এ প্রস্তাব কোনোভাবেই সমর্থন করতে পারছি না। এই প্রস্তাবে হি$ন্দুদের কোনও প্রকার উপকারের সম্ভাবনা নেই। সার্বভৌম বাংলার সংবিধান কারা রচনা করবে? অবশ্যই একাজ সংখ্যাগুরু মুসলিম লীগারদের হাতেই অর্পণ করা হবে। তারা পৃথক জাতি তত্ত্বের প্রবক্তা রূপে ধর্মান্ধ মনোভাবেই পরিচালিত হবে। আমরা তাদের হাতে আমাদের ভাগ্য সমর্পণ করতে রাজী নই। অধিকন্তু আমরা কোনও মতেই ভারতের অবশিষ্টাংশ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে নিতেও রাজী নই। এই প্রশ্নে কোনও সমঝােতা, সালিশী বা বিবেচনা করতে আমরা প্রস্তুত নই।"
এটাই সারসত্য৷যারা পাকিস্তানের দাবীতে কলকাতা,নোয়াখালীতে প্রকাশ্যে হিন্দু নিধনে নেমেছিলো কয়েক মাস আগে,পুনরায় তাদেরই জিম্মায় সংখ্যালঘু হিন্দুদের ছেড়ে দেওয়ার নামান্তর এই স্বাধীন সার্বভৌম বাঙ্গালা৷ যারা পৌত্তলিক নির্যাসটুকুকে নিঃশেষ করে দিতে চায়,তাদের সাথে স্বাধীন বাঙ্গালা(Virtual Pakistan) এ থাকার জন্য নিজেদের ঐতিহ্য ত্যাগ,কতটা সুখদায়ক হতে পারে? 'সাম্রাজ্যবাদী দিল্লি' র অধীনে থেকেও দক্ষিণেশ্বরের মন্দির স্বমহিমায় আছে, তথাকথিত বাঙ্গালী ভাইজানরা কিন্তু রমনা কালিমন্দিরের অস্তিত্ব ধুলিসাৎ করে দিয়েছে৷
এবার কিছু প্রশ্ন......
১৯৪৬ সালে নোয়াখালীতে রাজেন্দ্রলাল রায়চৌধুরীর কাটা মাথা থালায় করে গোলাম সরোওয়ারকে উপঢৌকন দেওয়ার মুলে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী?
১৯৫০ সালে মেঘনার উপর ভৈরবপুলে ট্রেন থেকে নগেন চ্যাটার্জীকে কেটে মেঘনায় ভাসিয়ে দেওয়ার মুলে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী?
১৯৫০ সালে কালশিরার কম্রেড জয়দেব ব্রহ্ম হত্যার মুলে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী?
১৯৫০ সালে নাচোলে কম্রেড ইলা মিত্রর যৌনাঙ্গে সেদ্ধ গরম ডিম ঢুকিয়ে নির্যাতনের মুলে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী?
তাবড় তাবড় তত্ত্বজ্ঞানী অশোক মিত্র,প্রমোদ দাশগুপ্ত,জ্যোতি বসু ঢাকা থেকে এবং যোগেন মন্ডলের বরিশাল থেকে ভাইজানদের তাড়া খেয়ে কলকাতায় পালিয়ে আসার মুলে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী?
চট্টগ্রামে মাষ্টারদার সহযোদ্ধা অনন্ত সিংহ ও গণেশ ঘোষকে পোঁটলা বেঁধে ভারত রওনা হতে হয়েছিলো,এর মুলে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী?
১৯৫০ সালে বরিশালের মাধবপাশা,মুলাদি,সিলেটের হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ১৯৬৪ সালে হজরতবাল ম স জি দ থেকে পবিত্র চুল চুরি যাওয়ার রটনার পর,খুলনার গোপালগঞ্জ,ওড়াকান্দি থেকে কাতারে কাতারে হিন্দু নির্যাতিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গে চলে আসার মুলে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী?
১৯৭১ সালে ইমান শনাক্তকরণে লুঙ্গির তলদেশ পরীক্ষা, অধ্যাপকগণ জি সি দেব, অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য্য, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা,ধীরেন্দ্রনাথ রায়চৌধুরীর হত্যা(৩০ লাখ মৃতে ৯৫% হি$ন্দু),চুকনগরে একদিনে সর্ববৃহৎ হিন্দু গণহত্যার মুলে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী?
ভোলা(২০১৯).রামু(২০১২),নাসিরনগর(২০১৬) নারকীয় হত্যা,পুর্ণিমা শীলের মায়ের 'বাবা তোমরা এক এক করে যাও,আমার মেয়েটা মরে যাবে,'আর্তনাদ, বিরাজবালা দেবনাথের পুরো পরিবারের জলে ডোবানো ড্রামে ভরা মৃতদেহের মুলে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী?
১৯৫০ এ ১৫ লাখ,১৯৬৪ তে ১০ লাখ,১৯৭১ সালে ১৫ লাখ,এখনো যে প্রতিদিন গড়ে ৬৩২ হিন্দু বাংলাদেশ ছাড়ছে,তার মুলে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী?
বরং,এই বাস্তুহারা পরিবারগুলো একটা আশ্রয়স্থল পেয়েছে,বাঙ্গালার মাটিতে বাঙ্গালা বলতে পারছে এবং মহান নেতারা বিফপ্রগতি করতে পারছেন,তার মুলে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী৷ নইলে এপারও বাংলা,ওপারও বাংলা,তাহলে খামোখা ওপার ছেড়ে এপারে আসা কেন? অথচ পশ্চিমবঙ্গে মুসলমান শতাংশ(1941 সেন্সাস) বীরভুম( 27.41%), বর্ধমান(17.81%) হুগলি(15.03%) চব্বিশ পরগণা(32.47%), কলকাতা(23.59%) মুর্শিদাবাদ(56.55%) জলপাইগুড়ি (23.08%) দার্জিলিং( 2.42%) মালদা( 56.79%) মেদিনীপুর(7.73%), বাঁকুড়া(4.31%) থেকে তো কমেনি,বরং বেড়েছে৷
তথ্যসুত্র:-
১.শ্যামাপ্রসাদ,বঙ্গবিভাগ ও পশ্চিমবঙ্গ,দীনেশ চন্দ্র সিংহ
২.প্রান্তিক মানব,প্রফুল্ল চন্দ্র চক্রবর্তী
৩.রক্তরঞ্জিত ঢাকা বরিশাল,১৯৫০ এবং,দীনেশ চন্দ্র সিংহ
৪.Jinnah: India- Partition- Independence by Jaswant Singh 2009
৫.সেনসাস রিপোর্ট,1941
এই যে আমরা হোয়াটস এ্যাপ ইউনিভার্সিটির যারা বিজেপির আইটি সেলের পয়সা খেয়ে এত সুন্দর ফিকশনগুলো লিখছি- টাইম মেশিনে চড়ে গিয়ে এসব দাঙ্গার গল্প-গাছা লিখছি...সবই নরেন্দ্র মোদির পয়সায়, প্রভু (https://en.wikipedia.org/wiki/Noakhali_riots)!
এলেবেলে রাতে এখানে ঢুকবে এবং এই একপেশে মিথ্যে ন্যারেটিভের চোদ্দপুরুষ করে ছাড়বে।
এলেবেলে রাতে এখানে ঢুকবে এবং এই একপেশে মিথ্যে ন্যারেটিভের চোদ্দপুরুষ করে ছাড়বে।
The Noakhali riots were a series of semiorganized massacres, rapes, abductions and forced conversions of Hindus to Islam and looting and arson of Hindu properties perpetrated by the Muslim community in the districts of Noakhali in the Chittagong Division of Bengal (now in Bangladesh) in October–November 1946, a year before India's independence from British rule.
It affected the areas under the Ramganj, Begumganj, Raipur, Lakshmipur, Chhagalnaiya and Sandwip police stations in Noakhali district and the areas under the Hajiganj, Faridganj, Chandpur, Laksham and Chauddagram police stations in Tipperah district, a total area of more than 2,000 square miles.
The massacre of the Hindu population started on 10 October, on the day of Kojagari Lakshmi Puja and continued unabated for about a week. It is estimated that 5,000 were killed, hundreds of Hindu women were raped and thousands of Hindu men and women were forcibly converted to Islam. Around 50,000 to 75,000 survivors were sheltered in temporary relief camps in Comilla, Chandpur, Agartala and other places. Around 50,000 Hindus remained marooned in the affected areas under the strict surveillance of the Muslims, where the administration had no say. In some areas, Hindus had to obtain permits from the Muslim leaders in order to travel outside their villages. The forcibly converted Hindus were coerced to give written declarations that they had converted to Islam of their own free will. Sometimes, they were confined in others' houses and only allowed to be in their own house when an official party came for inspection.
উইকিপিডিয়ায় অতি সংক্ষেপে যেসব রোমহর্ষক বিবরণ আছে, সেটা কপি করতেই মন চাচ্ছে না। ভাল লাগে না ত‘ সারাক্ষণ এসব নিয়ে চেঁচা--মেচি করতে। এলেবেলে দাদা নিজেই পড়ে নিতে পারেন। বাংলাদেশের এক ভার্সিটির শিক্ষিকা মহিলার সাথে কয়েক বছর আগে আমেরিকায় এক কনফারেন্সে পরিচয় হয়েছিল। ভদ্রমহিলার নামটি বলব না। তাঁর পূর্বপুরুষ নোয়াখালি দাঙ্গার সময় বাধ্য হয়েছিল কনভার্ট করতে। না- বর্ণাশ্রম-ট্রমের কষ্টে নয়, তাঁরা কায়স্থ ছিলেন। পরিবার প্রধান মেয়েদের সম্মান বাঁচাতে নিজে থেকে ধর্মান্তরিত হবার প্রস্তাব দিয়ে সহায়-সম্পত্তি ও মেয়েদের রক্ষা করেন। এখন তাঁরা মুসলিম। ঐ শিক্ষিকা মহিলা এই ঘটনা তাঁর পূর্বপুরুষের কাছ থেকে শুনেছেন। বাংলাদেশে ধর্মীয় ও নৃ-তাত্ত্বিক সব সংখ্যালঘুর প্রতি নির্যাতনে তিনি সোচ্চার। তারপরও তাঁর বর্তমান আরবি নামটি (একটি বাংলা ডাক নামও আছে) প্রকাশ করছি না। এটা জানা-জানি হলেই উনি চারপাশ থেকে মনস্তাত্বিক ও সামাজিক পার্সিকিউশনের চাপে পড়বেন, দুই পুরুষ হয় ধর্ম বদলেও মনে মনে হিন্দু রয়ে গেছে! প্রকৃত মুসলিম কাউকে জবরদস্তি করে ধর্মান্তরিত করে না ইত্যাদি ইত্যাদি। কেউ তাদের জবরদস্তি করেনি। তুই বললি কেন যে তোদের চাপে ফেলে কনভার্ট করা হইছে? মার শালীকে! ইত্যাদি ইত্যাদি।এখন এলেবেলে দাদা বলবেন হোয়াটস এ্যাপের গল্প ফাঁদছি। ভদ্রমহিলার আরবি পোশাকি নাম আর বাংলা ডাক নাম দু‘টোই ত‘ জানা। বলব না। ওনাকে বিপদে ফেলে কি লাভ? আর একটি ব্যঙ্কার ছেলের সাথে ফেসবুকে পরিচয় হয়েছিল। নোয়াখালি এলাকার। তার বাবাকে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয়। ছেলেটির একটি মুসলিম নাম ছিল। কিন্ত পিতৃ পুুরুষের পরিচয়ে ফিরে যাবার জন্য কি যে সংগ্রাম আর আকুলতা ছিল! অনেক লড়াইয়ের পর সে বিদেশে বাবা-মা ও স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যেতে পেরেছে। স্ত্রীর সাথে প্রেম তার মুসলিম যুবক হিসেবে ও সেই পরিচয়ে বড় হবার পরই। প্রথমে ওর স্ত্রী বিয়ের পর সব জেনে শকড হয়। তবে পরে মেনে নেয়। ওরও ত‘ আরবি ও বাংলা দু‘টো নামই জানি। তবে বলব না। বললে এখন ইউরোপের যে দেশে আছে, সেখানে গিয়েও কেউ তাকে খুন করতে পারে। ধন্যবাদ আপনাদের।
ইউরোপের যে দেশে আছে সেখানে গিয়েও খুন করতে পারে? বাপরে, এ তো ডিপ স্টেট এর থেকেও ডিপ!
দাদা ব্রাইটবার্টে লেখেন টেখেন নাকি? মানে সেখানকার নিক জানলে রেগুলার ফলো করতে পারি আরকি, এই চাপের জীবনে কিছু স্ট্রেসবাস্টার না থাকলে আর কি নিয়ে বাঁচবো?
Deep state < Deeper state < Mariana state
দাঙ্গা, জোর করে ধর্ম পাল্টানো, অকল্পনীয় সব বিভৎসতা তো হয়েইছে, এ নিয়ে তো কোন দ্বিমত কারো থাকার কথা না।
কিন্তু তাতে শ্যামাবাবু দাঙ্গা পীড়িত লোকেদের বাঁচাতে কী করেছেন সেই জিনিসটা স্পষ্ট হলো না।
হিন্দু মরেছে, মুসলমানও মরেছে, ঐ পার থেকে হিন্দুদের আসা লোকেদের এপারের লোকেরা রিফিউজিগুলো সোনার কলকাতা নোংরা করে দিল বলে গাল দিয়েছে, এপার থেকে যাওয়া মুসলমানরা পাকিস্তানেও অনুরূপ ব্যবহারই পেয়েছেন, বাংলাদেশে তো এখনো ভারত থেকে যাওয়া বিহারী মুসলমানদের খারাপ অবস্থাই।
এইসবের কারন হওয়ার পেছনে শ্যামাপ্রসাদ, এবং তার তদানীন্তন ও বর্তমান সাঙ্গোপাঙ্গোদের ভূমিকা স্পষ্টই দেখা যায় যদিও।
কলকাতার দাঙ্গায় কারা লোকজনকে বাঁচাতে রাস্তায় নেমেছিল সেসব নিয়েও তো তথ্য খুব দুর্লভ নয়। সেই 'বাঁচানো'র লোকের লিস্টিতে শ্যামাবাবুর দলের লোকজন নেই যদিও, তার পক্ষের কিছু দাঙ্গাকারী আছে নামকরা।
Syamaprasad is the main culprit for Calcutta killing and Noakhali massacre. We long to be a part of the free Bangladesh. Let's all plan to migrate there.
হোয়ানিভার্সিটির মোটামুটি পুরো সিলেবাসই কভার করা হয়েছে।
সিএস, একদম :d
নোয়াখালির দাঙ্গা ঠেকাতে হিন্দু মহাসভার ভূমিকার ব্যাপারে কোনও লিড পেলাম না এখনও।
প্যারা করে লিখুন o ঋদ্ধ করুন।
মোদ্দা কথাটা কি? ১৯৪৭ এর দাঙ্গার বদলা হবে ২০২১?
১. মিথ্যা ১ – “২ রা মার্চ, ১৯৪৭ শ্যামাপ্রসাদ মাউন্টব্যাটেনকে লেখেন”
মাউন্টব্যাটেন ২২ মার্চ দিল্লি এসে পৌঁছন এবং ২৪ তারিখে ভারতবর্ষের ৩৪তম এবং শেষ ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অথচ শ্যামা চিঠি লিখছেন নাকি ২ মার্চ!
২. মিথ্যা ২ – “চার দিনে প্রায় দশহাজার মানুষের মৃত্যু দেখেছিলো এই ‘সিটি অফ জয়’ কলকাতা মহানগরী। রুখে দাঁড়িয়েছিলেন গোপাল মুখার্জী, যুগল ঘোষ, কালু, শ্যামাপ্রসাদ সহ ব্যায়াম সমিতি ,আখড়ার হিন্দু শিখ যুবরা।”
১০ জুলাই, নবনির্বাচিত কংগ্রেস সভাপতি জওহরলাল বোম্বাই-এ সাংবাদিক সম্মেলন করেন এবং তাতে এক বিবৃতি দেন। কয়েকজন সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেন, এআইসিসি কর্তৃক এই প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর কি কংগ্রেস অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠার গঠনপ্রণালীসহ [মিশনের] সমগ্র পরিকল্পনাকেই পুরোপুরি (in toto) গ্রহণ করেছে? উত্তরে জওহরলাল বলেন যে, কংগ্রেস ‘কোনও রকমের চুক্তির বন্ধনে আবদ্ধ না হয়ে এবং যখন যেরকম অবস্থার সৃষ্টি হবে তার মোকাবিলা করার স্বাধীনতা নিয়ে’ গণপরিষদে যোগদান করবে। সংবাদপত্রের প্রতিনিধিরা অতঃপর জিজ্ঞাসা করেন, এর অর্থ কি এই দাঁড়ায় যে ক্যাবিনেট মিশনের পরিকল্পনা রদবদল হতে পারে? জওহরলাল দ্ব্যর্থহীনভাবে উত্তর দেন, “ কংগ্রেস কেবল গণপরিষদে যোগ দিতে রাজি হয়েছে এবং প্রয়োজনবোধে নিজেদের অভিরুচি অনুযায়ী ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাবের পরিবর্তন বা রদবদল করার স্বাধীনতা তাদের আছে।” ওই সাংবাদিক সম্মেলনে নেহরু আরও বলেন, “সমস্যাটিকে যেদিক থেকেই দেখা যাক না কেন, গ্রুপ গঠিত হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। গ্রুপ ‘এ’ অর্থাৎ হিন্দুরা গ্রুপ গঠনের বিরোধিতা করবে। খুব জোরের সঙ্গেই বলা যায় যে, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের পক্ষে গ্রুপ সমর্থন করার সম্ভাবনা আদৌ নেই। এর অর্থ হল গ্রুপ ‘বি ধসে যাবে। বাংলা এবং আসামেও গ্রুপ গঠনের বিরোধিতা করার সম্ভাবনা বেশি।”
নেহরুর মন্তব্যের অব্যবহিত পরেই লিগ কাউন্সিলের সভায় এ বিষয়ে জিন্না বিবৃতি জারি করে বলেন, “ …the Muslim League Council had accepted the Cabinet Mission Plan in Delhi as it was assured that the Congress had also accepted the scheme and that the Plan would be the basis of the future constitution of India. Now that the Congress President had declared that the Congress could change the scheme through its majority in the Constituent Assembly, this would mean that the minorities were placed at the mercy of the majority”।
অবশেষে ১৬ অগস্ট সারা দেশে তাঁদের প্রস্তাব ব্যাখ্যা করার জন্য লিগ সভার আহ্বান করে। ভারতবর্ষের সর্বত্র ওই দিন শান্তিপূর্ণভাবে সভা সমাপ্ত হলেও সবচেয়ে হিংসাত্মক ঘটনাটি ঘটে কলকাতার বুকে। লিগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দীর প্রত্যক্ষ প্ররোচনা ও প্রশ্রয়ে সকাল ৭টা থেকে মানিকতলা এলাকায় দাঙ্গা শুরু হয়ে দিনের বাকি সময়ে তা অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে মুসলমান এবং পরে হিন্দু ও শিখরা সংগঠিতভাবে আক্রমণ শুরু করলে যে পুরোদস্তুর হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা শুরু হয়, তা থামে তিন দিন পরে। কেবলমাত্র মুসলমানরাই যে সশস্ত্র ছিলেন না, হিন্দুদের তরফেও যে এই দিন দাঙ্গা করার পরিকল্পনা বহু আগেই থেকেই ছিল – তার সমর্থন মেলে ইতিহাসবিদ স্যার ফ্রান্সিস টাকারের মন্তব্যে। তিনি এই বিষয়ে লিখেছেন, ওই দিন “buses and taxis were charging about loaded with Sikhs and Hindus armed with swords, iron bars and firearms”।
দাঙ্গায় মৃত্যুর খতিয়ান দিতে গিয়ে লর্ড ওয়াভেল ২১ অগস্ট লেখেন — “At any rate, whatever the causes of the outbreak, when it started, the Hindus and Sikhs were every bit as fierce as the Muslims. The present estimate is that appreciably more Muslims were killed than the Hindus”। একই কথার পুনরাবৃত্তি করে একই দিনে প্যাটেল চিঠিতে রাজাগোপালাচারিকে জানান: “This [the Calcutta killing] will be a good lesson for the League, because I hear that the proportion of Muslims who have suffered death is much larger”। পরবর্তীকালে এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ১ সেপ্টেম্বর বোম্বাই ছুঁয়ে ছড়িয়ে পড়ে নোয়াখালি (১০ অক্টোবর), বিহার (২৫ অক্টোবর) এবং উত্তরপ্রদেশের গড়মুক্তেশ্বরে (নভেম্বরে)। পরের বছর ২ মার্চ পাঞ্জাবের হিজির হায়াত খান পদত্যাগ করতে বাধ্য হওয়ার সঙ্গেই সঙ্গেই দাঙ্গার আগুন গোটা পাঞ্জাবকে পুরোপুরি গ্রাস করে ফেলে। যেখানে স্বয়ং বড়লাট ওয়াভেল সামগ্রিকভাবে কংগ্রেসের একতরফা ক্ষমতা লাভের বাসনাকে অভিযুক্ত করে বলেছেন – গোটা দাঙ্গাটাই সংঘটিত হয়েছিল ‘as an excuse to go ahead with the transfer of power to a Congress-only cabinet’, সেখানে একতরফাভাবে কেবল নোয়াখালির উল্লেখ হচ্ছে কেন? কোথায় পাওয়া যাচ্ছে দশ হাজার হিন্দুর মৃত্যুর তথ্য?
৩. মিথ্যা ৩ – “১৯৪৭ সালের ২২শে মে হিন্দু মহাসভার নেতা শ্যামাপ্রসাদ প্যাটেলের কাছে এক চিঠিতে লিখলেন “ক্যাবিনেট মিশনে যেরকম বলা হয়েছে সেরকম একটা শিথিল কেন্দ্রীয় সরকার হলেও...”
প্যাটেল ১৯৪৭ এর ২২ মে-র অনেক আগে পাঞ্জাব এবং বাংলার বিভাজনের পক্ষে রায় দিয়েছেন! তত দিনে কংগ্রেস-লিগের সরকার চলছে রমরমিয়ে!! কারণ ১৯৪৬-এর ২৬ অক্টোবর লিগের ৫ জন সদস্য – লিয়াকত আলি, গজনফর আলি, ইব্রাহিম ইসমাইল চুন্দ্রিগর, আব্দুর রব নিস্তার ও যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল মন্ত্রিসভায় যোগ দেন এবং শরৎ বসু, সাফাৎ আহমেদ খান ও সৈয়দ আলি জাহির পদত্যাগ করতে বাধ্য হন!!!
এবারে আসি প্যাটেলের প্রসঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী অ্যাটলি বিটিশ পার্লামেন্টে ‘ক্ষমতা হস্তান্তর’-এর ঘোষণা করার তিন দিন আগেই অর্থাৎ ১৭ ফেব্রুয়ারি (লিয়াকত আলির বাজেট পেশ হওয়ার মাত্র ১১ দিন আগে) প্যাটেল ওয়াভেলকে জানান যে, ‘he was quite prepared to let the Muslims have the Western Punjab, and Sind and NWFP if they wished to join, and Eastern Bengal’। এহ বাহ্য, ১৯৪৭ সালের ১০ মার্চ নেহরুও প্যাটেলের মতোই বাংলা ও পাঞ্জাব বিভাজনের প্রস্তাব দিয়ে ওয়াভেলকে জানালেন, “যদিও রূপায়িত করতে পারলে ক্যাবিনেট মিশনের পরিকল্পনাই সবচেয়ে ভালো সমাধান ছিল — এ ছাড়া বাংলা ও পাঞ্জাবের ব্যবচ্ছেদই একমাত্র বাস্তব বিকল্প।”
এরপরে ১৬ মে মেনন তাঁর খসড়াটি ভাইসরয়ের কাছে জমা দিলে তা নেহরু, প্যাটেল, জিন্না, লিয়াকত আলি খান এবং বলদেব সিং প্রমুখ নেতৃবৃন্দ কর্তৃক অনুমোদিত হয়। ১৮ মে মেননকে সঙ্গে নিয়ে মাউন্টব্যাটেন এই খসড়া সহ লন্ডনে রওনা হন। ব্রিটিশ সরকারও কালবিলম্ব না করে এই নতুন পরিকল্পনাটি অনুমোদন করে। এর পরে শ্যামাপোকা ২২ মে কাকে চিঠিতে কী লিখলেন তা দিয়ে কে ধুয়ে জল খাবে? আর এই গোটা ঘটনায় শ্যামাপোকাকে কেউ ডেকেছিল নাকি পাত্তা দিয়েছিল?
৪. মিথ্যা ৪ – “সেই ১৯৪৬ সালে অবিভক্ত বঙ্গের আঠাশটির সতেরোটি জেলায় বিশেষ সম্প্রদায় ক্রুড মেজরিটি। চট্টগ্রাম (74.55%), নোয়াখালী (81.35%), কুমিল্লা(77.09%), বরিশাল (72.33%), ময়মনসিংহ (77.44%), ফরিদপুর (64.78%), ঢাকা(67.29%), মালদা(56.79%), রংপুর( 71.41%), বগুড়া(83.93%) , পাবনা (77.06%), খুলনা(49.36%), যশোর (60.21%), নদীয়া (61.29%), দিনাজপুর (50.20%), রাজশাহী (74.65%), মুর্শিদাবাদ(56.55%) গড়ে 54.73% মুসলমান।”
আদৌ ১৯৪৬ সালকে ভিত্তিবর্ষ ধরা হয়নি। ব্রিটিশ সরকারের তরফে ভাইসরয় মাউন্টব্যাটেন ১৯৪৭ সালের ৩ জুন বাংলা ও পঞ্জাব প্রদেশের বিভাজন সম্পর্কিত যে বিবৃতি প্রকাশ করেন, তার সংযোজনী অংশে ১৯৪১ সালের জনগণনার ভিত্তিতে পঞ্জাব ও বাংলার কোন জেলাগুলিকে মুসলিম-গরিষ্ঠ এলাকা হিসাবে গণ্য করা হবে তার একটি তালিকা পেশ করা হয়। ৯ জুলাই সীমানা কমিশনের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই সরকার কমিশনের প্রাথমিক কাজ চালানোর সুবিধার জন্য মুসলিম অধ্যুষিত ১৬টি জেলার তালিকা উল্লেখ করে ‘provisional boundary’ বা সাময়িক সীমানা নির্ধারণ করে দেয়। ওই সরকারি তালিকায় ১৬টি জেলা ছিল চট্টগ্রাম ডিভিশনের চট্টগ্রাম (মুসলিম ৭৩.৮%), নোয়াখালি (৭৮.৪৮%) ও ত্রিপুরা (৭৫.৪৮%); ঢাকা ডিভিশনের বাখরগঞ্জ (৭১.৬৩%),ঢাকা (৬৬.৮১%), ফরিদপুর (৬৩.৮%) ও ময়মনসিংহ (৭৬.৫৬%); প্রেসিডেন্সি ডিভিশনের যশোহর (৬১.১৬%), মুর্শিদাবাদ (৫৫.৫৬%) ও নদীয়া (৬১.৬৭%) এবং রাজশাহি ডিভিশনের বগুড়া (৮৩.৩৬%), দিনাজপুর (৫০.৫৭%),মালদহ (৫৪.২৮%),পাবনা (৭৬.৯%),রাজশাহি (৭৫.৭৯%) ও রংপুর (৭০.৭৯%)। এখানেও যে পরে নবগঠিত দুই দেশের মধ্য নদীয়া, যশোহর, দিনাজপুর, মালদহ ও জলপাইগুড়ি জেলা ভাগ হয়; সেখানে শ্যামাপোকার বিন্দুমাত্র ভূমিকা নেই।
এলেবেলে উইকি পড়ে ইতিহাস শেখে না। এসব কথা সে এখানে প্রায় আড়াই বছর আগে লিখে ফেলেছিল। এবারে লগিন করে ফের থাপ্পড় মেরে গেল। দম থাকলে লগিন করে এগুলোকে চ্যালেঞ্জ করবেন। অবিশ্যি পোস্ট পিছু ৭০ পয়সার খাটনিতে যদি পড়তা হয়!
সাধু সাধু। এই একখানা মুখের মতো জবাব হয়েছে। শচীন নেমে গেছে আর কোনো কথা হবে না।
১৯৪৭ সালের ২০ শে জুন ছিল ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ। এইদিন বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভা ভেঙে তৈরি হয় পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গ আইনসভা। পশ্চিমবঙ্গ আইনসভার সদস্যগণ ৫৮-২১ ভোটে বাংলাভাগের পক্ষে ও পাকিস্তানে যোগদানের বিপক্ষে ভোট দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ গঠন নিশ্চিত করেন। প্যাটেল ভোট দিয়েছিলেন কিনা এটি গবেষণার বিষয়।
১৬ মে ২০ জুনের আগে না পরে? মেননের খসড়া? আর ২০ জুনের বিধানসভায় শ্যামাপোকার দলের কতজন ছিল? আবারও লগিন করে মন্তব্য করলাম।
পয়সার গরম, বিলেতের গরম এসব দেখেছি, লগিনের গরম মাইরি বাপের জন্মে দেখিনি। গুরু এবার kyc-র গরমও এনে ফেললে পারে।
এলেবেলে যাদের উদ্দ্যেশ্যে খেটেখুটে পোস্ট করলেন, তাদের কি কিছু যায় আসে? বোধায় না। অপপ্রচার শুনতে আর বলতে এরা অভ্যস্ত হয়ে গেছে। (আপনাকে ডিসকারেজ করার জন্য বলছি না, তবে হোয়া ইউনির ছাত্ররা ওরকমই)।
গুরুতে অনেক কিছুই বাপের জম্মে পেত্থম দেখবেন।
"এলেবেলের কি দু:খ গো- সে ছদ্মনামে লিখতে পারে, সমস্যা নেই। অন্য কেউ লিখলেই লগ-ইন চালু করা দরকার। পুরো হেরো কেস।"
এই হেরো কেসওয়ালা যে বাপজম্মে আর এদিকে ভিড়বে না, সেটা প্রমাণ করার জন্য লগিনের গরম দেখাতে হয়। তাতে নিননিছা থেকে নিন্দা করা যেতে পারে, বিকট ঠাট্টা করা যেতে পারে, গুরুর *লের ডায়নামিক্স বোঝানো যেতে পারে (শীতঘুম থেকে উঠে পিনাকী যেমতি বোঝাতে চেয়েছিলেন) কিন্তু সেখানে শ্যামাপোকাদের উপদ্রব ঠেকাতে গেলে মেঘের আড়াল থেকে ওয়ান লাইনার ঝেড়ে লাভের লাভ কিছু হয় না।
আরে ডিসিজনাব, কিস্যু খাটিনি। সেরেফ কপি-পেস্টো!
আচ্ছা, এইমাত্র (২১. ২৮) ভাটে গুরুর পনেরো বছরের রেসিডেন্ট খ লিখেছেন ---
আমি লগিন গরমের পক্ষে। নাম লুকিয়ে বন্ধু দের মধ্যে মজা করার স্পিরিট বহুদিন নষ্ট হয়ে গেছে।
নিন, এবার ওঁর পেচুনে লাগুন। থলিতে নেই বিষ তার আবার কুলোপনা চক্কর!
হাহা। পনেরো বছর সতেরো বছর দিয়ে কী হবে, টই ভাট উঠে যাক, লগিন বাধ্যতামূলক হোক, এই সব তো হনুদার দাবি। ওগুলো হাস্যকর।
(মানে আমার হাসি পায় আরকি, নিতান্তই ব্যক্তিগত হাসি, নো অফেন্স মেন্ট)।
লগিন করে বা না করে যে ভাবেই হোক, এলেবেলে এখানে যা পোস্ট করেছেন সেগুলো তার কন্টেন্টের গুণেই গুরুত্বপূর্ণ।
এলেবেলে ১৭:১৪ বেশ গুছিয়ে লিখেছেন। তথ্যই যথেষ্ট, তাল ঠোকার দরকার নেই। এলেবেলেকে ধন্যবাদ।
এলেবেলে'কে অনেক ধন্যবাদ। অনেক তথ্য দিয়েছেন তিনি। বিশ্বাস আছে, আরও অনেক তথ্যই দিতে পারেন তিনি। শ্যামাবাবু ও দেশভাগ প্রসঙ্গে যা কিছু আমাদের পড়া ছিলো সেগুলিকে সংহত করে, বিশ্বাসযোগ্য ইতিহাসকে তুলে ধরেছেন। উইকি আমাদের দিয়েছে অনেক কিছুই। কিন্তু বহুভাবে মূঢ়তার চাষ করে মানুষকে বিভ্রান্তও করে যায়। মনের মাধুরী প্রচারের বিপরীতে এলেবেলের এই প্রয়াসকে স্বাগত জানাই। তবে আরও অনেক কিছুই বাকি থেকে গেলো। আশা করবো ভবিষ্যতে তিনি তা নিয়েও আলোচনা করবেন।
তবে এই মুহূর্তে আমাদের সমস্যাটি অন্যরকম। কোনও কালেই চোরা ধর্মের কাহিনী শোনেনা। এখন তো তারাই ধর্মের কাহিনী লেখে। এবং গেলাতেও চায়। লগইন বা অন্য কিছু, এলেবেলে বিষয়টি নিয়ে আরও লিখুন। সোমনাথের প্রশ্নটি এখনও অনুত্তরিত হয়ে আছে।
শিবাংশুবাবু, গুরুতে আপনি আমার অন্যতম শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। আমার মামুলি মন্তব্য আপনার ভালো লেগেছে জানায় আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি। ১৯৪৬-৪৭এর দাঙ্গার ইতিহাস নিয়ে আমার খুব বিস্তারিতভাবে লেখার ইচ্ছে আছে। কিন্তু এখন অন্য একটা লেখা নিয়ে ব্যস্ত। মানে সেটাও বড় লেখাই। বছরখানেক তো লাগবেই। দেখা যাক, তার পরে হয়তো যদি লিখে উঠতে পারি।
থ্যাঙকিউ ইতিহাস গুলে। আপনার ২ মার্চ তারিখটা ২ মে হবে। ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটের সভার কথাও লিখলে পারতেন, তাহলে যদুপোকা মেঘপোকা ইত্যাদিদের অবস্থান আরও স্পষ্ট হত। আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর এপাড়ার অ্যাপোলজিস্টরা এড়িয়ে গেলেন।