শিক্ষানীতির লক্ষ্য
এবারের চমকের বিষয় রাষ্ট্রীয় শিক্ষানীতি। চারদিকে হইচই, খবরের কাগজের হেডলাইন, "এবার প্রাথমিক স্তরে শিক্ষাদানের মাধ্যম হতে চলেছে স্থানীয় ভাষা"। শিক্ষানীতির পরিমার্জিত খসড়ায় (আপাতত যেটি সরকারি সাইটে আছে) দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করা হয়েছে, যে, বহুভাষিকতাই ভারতবর্ষের শক্তি। ভারতীয় ভাষাগুলি গভীর, অভিব্যক্তিসম্পন্ন এবং বৈজ্ঞানিক, তবুও সমাজ এবং শিক্ষায় কথোপকথনের এবং শিক্ষাদানের মাধ্যম হিসেবে ইংরিজিকে ব্যবহার করার এক দুর্ভাগ্যজনক প্রবণতা দেখা যায়। যুক্তি দিয়ে বললে, অবশ্যই, ইংরিজির আলাদা করে ভাবপ্রকাশ করার বিশেষ কোনো ক্ষমতা নেই। বরং ঠিক উল্টো। ভারতীয় ভাষাগুলি শতাব্দীর পর শতাব্দী এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বিশেষ করে ভারতীয় প্রেক্ষিতে, জলহাওয়ায়, সংস্কৃতিতে ভাবপ্রকাশের জন্যই বিকশিত হয়েছে। ("Despite the rich, expressive and scientific nature of Indian languages, there has been an unfortunate trend in schools and society towards English as a medium of instruction and as a medium of conversation. Logically speaking, of course, English has no advantage over other languages in expressing thoughts; on the contrary, Indian languages have been specifically developed over centuries and generations to express thoughts in the Indian scenario, climate, and culture." -- পাতা ৮১। )
তাহলে ইংরিজির বিশেষ মর্যাদা এতদিন কেন দেওয়া হয়েছে? কারণ খুব পরিষ্কার। তাও খসড়ায় স্পষ্ট করেই বলা আছে। ভারতীয় এলিটরা ঐতিহাসিকভাবেই ইংরিজি ব্যবহার করেন। তাঁরা ওতেই পোক্ত। যদিও ভারতে ইংরিজি বলতে পারেন মাত্র ১৫% মানুষ, কিন্তু তাঁরাই ভারতের চাকরির এবং কাজকর্মের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখেন। রাখতে চান। এমনকি ইংরিজি জানাকে অনেক সময়ই "শিক্ষা"র প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেন ইংরিজি শিক্ষাই হল শিক্ষার পরাকাষ্ঠা। এবং এতে করে ভারতের বিপুল সংখ্যক জনসমষ্টিকে প্রান্তিক করে রাখা হয়েছে। (পাতা ৮২। আলাদা করে আর ইংরিজি উদ্ধৃতিটা টুকে দেওয়া হলনা। ভাবানুবাদ লেখকের, কিন্তু "এলিট" শব্দটা খসড়াতেই আছে)।
অতঃপর ভাষাগতভাবে এই শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য কী? এলিটদের এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে চণ্ডাল ভারতবাসী, দরিদ্র ভারতবাসী, নেটিভ ভারতবাসীকে ন্যায়বিচার দেওয়া। যে ব্যবস্থা তাদের এতদিন ধরে বঞ্চিত করে রেখেছে সেটাকে পাল্টানো। যদি সমাজে সত্যিকারের সমতা এবং সকলের সর্বাঙ্গীণ উন্নতি চাওয়া হয়, তাহলে ভাষাকে কেন্দ্র করে গোটা দেশজুড়ে শিক্ষা এবং চাকরির জগতে যে ক্ষমতাচক্র তৈরি হয়েছে, তাকে যত শীঘ্র সম্ভব, থামানো দরকার। ভারতের ভূমিজ ভাষাকে ফিরিয়ে দেওয়া দরকার তাদের হারিয়ে যাওয়া সম্মান, প্রাপ্য পরিসর। ("For true equity and inclusion in society, and in the education and employment systems across the country, this power structure of language must be stopped at the earliest. A major effort in this direction must be taken by the elite and the educated to make increased use of languages native to India, and give these languages the space and respect that they deserve" -- পাতা ৮২)
এই ঘোষণার পর আর কোনো সন্দেহ থাকেনা, যে, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এলিট ও ভদ্রজনদের আধিপত্য রুখে দিতে দৃঢ়্প্রতিজ্ঞ। এবার "ছোটোলোক"দের জয় হবেই। ভাষাগতভাবে। আর উঁচুনিচু কিছু থাকবেনা। আমরা করব জয়। নিশ্চয়।
অ-এলিট ভারতে কেমন ভারতবাসী চাই?
এই শিক্ষাব্যবস্থায় "ছোটোলোক"দের জয় হবে, তা না হয় বোঝা গেল। কিন্তু শিক্ষার ফল হিসেবে বেরিয়ে আসবে যে ভারতবাসী, ভাষাগতভাবে সে কেমন হবে? শিক্ষানীতি একদম গোড়াতেই সেটাও স্পষ্ট করে দিয়েছে। বহুভাষিকতাই ভারতের শক্তি। তার অর্থ খুবই সোজা। অর্থাৎ, লোকে বহুভাষিক হবে। অর্থাৎ কিনা, নানা এলাকায় আলাদা আলাদা একটি ভাষার চর্চাই আর হবেনা। সবাই একাধিক ভাষা বলতে, পড়তে ও বুঝতে পারবে। এবং সেটা শেখানো হবে একদম কচি বয়স থেকে, অর্থাৎ ইশকুলের প্রথম দিন থেকেই। কারণ কী? কারণ, কচি বেলায় ভাষা শেখানো শুধু সহজ, তাইই নয়। সঙ্গে এও ঠিক, যে দুনিয়াজোড়া অধ্যয়নে দেখা গেছে, যে, যে বাচ্চারা একটিমাত্র ভাষা শেখে, তাদের চেয়ে যারা একাধিক ভাষা শেখে, তারা অনেক তাড়াতাড়ি শেখে। জীবনে অনেক বেশি উন্নতি করে। সংস্কৃতি, অভিব্যক্তি, ভাবপ্রকাশ, সব কিছুতেই এগিয়ে থাকে। বহুভাষিক এক ভারতবর্ষ তাই হবে, বেশি শিক্ষিত এবং জাতীয় সংহতিতে বেশি ঐক্যবদ্ধ। ("Children learn languages extremely quickly when immersed early, and multilingual children in studies around the world have also been found to learn faster and be placed better later in life than those who are unilingual. It enriches them intellectually and culturally, and allows them, throughout their lives, to think in more than one way, by being equipped with the structures of expression, vocabulary, idioms, and literature of more than one language. A multilingual India is better educated and also better nationally integrated." -- পাতা ৮১)। কোন অধ্যয়নের কথা এখানে বলা হচ্ছে, তার কোনো সূত্রোল্লেখ এখানে নেই।
ব্যাপারটা সোজা কথায় একটু ভালো করে বুঝে নেওয়া যাক। নতুন শিক্ষানীতিতে বিদ্যালয় শিক্ষাকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছেঃ
১। প্রথম পাঁচ বছরের বুনিয়াদি স্তর : ৩ বছর প্রাক প্রাথমিক এবং প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী।
২। প্রস্তুতি স্তর : ক্লাস ৩, ৪ ও ৫।
৩। মধ্য বিদ্যালয় : ক্লাস ৬, ৭, ৮।
৪। উচ্চ বিদ্যালয় : ক্লাস ৯, ১০, ১১, ১২।
(পাতা ৭৫)
এর মধ্যে কচি বয়সে (বুনিয়াদি এবং প্রস্তুতি স্তরে, পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত) শিক্ষাদানের মাধ্যম মূলত স্থানীয় বা মাতৃভাষাই হবে (যদিও সেখানে কিছু অস্পষ্টতা আছে, কিন্তু তা এখন থাক)। এর বাইরে ওই বয়স থেকেই বাচ্চাদের করে তোলা হবে বহুভাষিক। তারা একাধিক ভাষা শিখবে। এই ভাষাশিক্ষা চলবে শিক্ষার পরবর্তী স্তরেও। এতে বাচ্চাদের শিক্ষায় উন্নতি হবে। একই সঙ্গে জাতীয় সংহতিও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হবে।
কী ভাষা শেখা হবে
বহুভাষিকতা ব্যাপারটা বোঝা গেল, কিন্তু বহুভাষিকতা মানে ঠিক কী? বাচ্চারা ঠিক কী ভাষা শিখবে? তার অভিমুখও খসড়ায় স্পষ্ট করেই বলা আছে। এক্ষেত্রে কচি বয়স থেকেই অনুসরণ করা হবে ত্রিভাষা সূত্র। এই ত্রিভাষা সূত্রটা কী জিনিস? খুব নতুন কিছু নয়। ভারতে ভাষা বিতর্ক পুরোনো। ত্রিভাষা সূত্রও। এর নানারকম বিবর্তন হয়েছে, নানারকম আঞ্চলিক পার্থক্যও আছে। গুজরাল এবং জাফরি কমিটি এ ব্যাপারে যা সূত্র দিয়েছিল, তা হল এইঃ
হিন্দিভাষী রাজ্যে শিখতে হবে তিনটি ভাষাঃ ১। হিন্দি (সংস্কৃত সমেত), ২। উর্দু বা অন্য কোনো আঞ্চলিক ভাষা, ৩। ইংরিজি বা অন্য কোনো ইউরোপীয় ভাষা।
অ-হিন্দিভাষী রাজ্যে যে ভাষাগুলি শিখতে হবেঃ ১। আঞ্চলিক বা স্থানীয় ভাষা। ২। হিন্দি। ৩। উর্দু বা অন্য কোনো আঞ্চলিক ভাষা। ৪। ইংরিজি বা অন্য কোনো ইউরোপীয় ভাষা।
অর্থাৎ, কার্যত, হিন্দি এবং ইংরিজি শেখাটা প্রতিটি ভারতীয় শিক্ষার্থীর জন্য বাধ্যতামূলক। এই সূত্র অবশ্য কোথাওই হুবহু অনুসরণ করা হয়না। তৃতীয় ভাষা সেভাবে জোর দিয়ে পড়ানোও হয়না। কিন্তু নতুন শিক্ষানীতি এই সূত্রকেই ব্যাপকভাবে অনুসরণ করার কথা বলছে। একদম প্রাক-প্রাথমিক স্তর থেকে। অর্থাৎ, কার্যত হিন্দি ও ইংরিজিকে প্রতিটি রাজ্যের প্রতিটি মানুষের জন্য বাধ্যতামূলক করার সম্ভাবনা প্রবল। এতে করে, নতুন শিক্ষানীতি দাবী করছে, ইংরিজির এলিটীয় আধিপত্য কমে আসবে। এবং জাতীয় সংহতি স্থাপিত হবে।
হিন্দির আধিপত্য
হিন্দির আধিপত্যের এই সম্ভাবনা নিয়ে নতুন নীতির খসড়ায় কিছু ভাবা হয়নি এমন না। বরং উল্টোটাই। নীতিপ্রণয়নকারীরা এই নিয়ে প্রচুর ভাবনাচিন্তার স্বাক্ষর রেখেছেন পরিমার্জিত খসড়ায়। বলা হয়েছে হিন্দি এলাকার বিদ্যালয়গুলিরও অন্যান্য জায়গার ভাষা পড়ানো উচিত ( "schools in Hindispeaking areas should also offer and teach Indian languages from other parts of India." -- পাতা ৮৭)। এ ব্যাপারটা অবশ্য তাদের ঔচিত্যের উপরেই ছেড়ে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ, অ-হিন্দিভাষী এলাকায় বিদ্যালয়ে ৩ বছর বয়স থেকে হিন্দি শেখাতেই হবে। উল্টোদিকে হিন্দিভাষী এলাকায় হিন্দি-উর্দুও পড়ানো যেতে পারে, বা হিন্দি-তামিল। অবশ্যই তামিল পড়ালে ভালো হয়, কমিটির এই মত। কিন্তু বাধ্যতার কোনো জায়গা নেই। ফলে প্রকৃত প্রস্তাবে এই শিক্ষানীতি হুবহু অনুসরণ করলে ভাষাগতভাবে ব্যাপারটা দাঁড়াবে এই, যে, গোটা দেশের প্রতিটি বাচ্চাকে কচি বয়স থেকে হিন্দি শিখতেই হবে। এটা বাধ্যতামূলক। হিন্দি বলয়ের বাচ্চারা অন্য কোনো ভাষা শিখবে কি আদৌ? সেটায় বাধ্যতার কিছু নেই।
বাংলার হাল
বাধ্যতা না থাকলেও, যদি ধরে নেওয়া যায়, হিন্দিভাষী এলাকার প্রতিটি বিদ্যালয় এই শিক্ষানীতির "আত্মা"টি উপলব্ধি করে ফেলল, এবং উর্দুর বদলে অন্য কোনো আঞ্চলিক ভাষা শেখাতে শুরু করল। এই শিক্ষানীতি অনুসরণ করলে হিন্দিভাষী বাচ্চাটি কোন ভাষা শিখবে? এই বহুভাষী ভারতবর্ষে বাংলার কী হাল হবে?
ভারতীয় সরকার ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে, যে ভারতবর্ষে হিন্দি ছাড়াও কিছু ধ্রুপদী ভাষা আছে। তামিল, তেলুগু, কন্নড়, মালায়লম, ওড়িয়া এবং অসমীয়া। জাতীয় শিক্ষানীতি জানাচ্ছে, এই ভাষাগুলি এবং তাদের সাহিত্যকে রক্ষা করা অবশ্য কর্তব্য। ("India also has an extremely rich literature in other classical languages, including classical Tamil, as well as classical Telugu, Kannada, Malayalam, and Odia, in addition to Pali, Persian, and Prakrit; these classical languages and their literatures too must be preserved for their richness and for the pleasure and enrichment of posterity." -- পাতা ৯০)। লক্ষ্যণীয় যে, রক্ষা করার তালিকায় বাংলা কোথাও নেই। এটা শুধু প্রতীকি তা নয়, শিক্ষানীতিতে স্পষ্টই বলা হচ্ছে, কোনকোন ধ্রুপদী ভাষার বিস্তারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোন ভাষার জ্যান্ত থাকা দরকার। এবং বিদ্যালয়ে ব্যাপকভাবে কী ভাষায় শিক্ষা পাওয়া যাবে। ("the teaching of other classical languages and literatures of India, including Tamil, Telugu, Kannada, Malayalam, Odia, Pali, Persian, and Prakrit, will also be widely available in schools, to ensure that these languages and literatures stay alive and vibrant" -- পাতা ৮৭)। এই ভাষাগুলিতে তৈরি হবে কোর্স। ভারতের প্রতিটি স্কুলে ধ্রুপদী ভাষার যে আলাদা কার্যক্রম থাকবে, সেখানে এই ভাষাগুলি থাকবে। বাংলার সেখানে কোনো জায়গা নেই।
খুব সহজ ভাষায় বললে, কোনো যাদুমন্ত্রবলে যদি হিন্দিভাষী বিদ্যালয়গুলি উর্দুর বদলে অন্য ভাষা শেখাতে শুরু করে, তাহলেও তারা তামিল, তেলুগু, কন্নড়, মালায়লম, ওড়িয়া বা অসমীয়া শিখবে। অথবা সংস্কৃত বা পালি বা ফার্সি। বাংলা নয়। বাঙালির বাচ্চারা বাংলার বিদ্যালয়ে বসে হিন্দি শিখবে, কিন্তু হিন্দিভাষী বা অন্য কোনো রাজ্যভাষীরা বাংলা শিখবেনা।
হাতে থাকা পেনসিল
তাহলে যা দাঁড়াল।
১। "স্থানীয় ভাষায় শিক্ষা"এর অর্থ, বাঙালিদের জন্য হলঃ বাঙালি বাচ্চা তিন বছর বয়স থেকে ইংরিজি এবং হিন্দি শিখবে। "বহুভাষিকতা"র মূল কথা দাঁড়াল এই, যে, বাঙালির বাচ্চারা বাংলার বিদ্যালয়ে বসে হিন্দি শিখবে, কিন্তু হিন্দিভাষী বা অন্য কোনো রাজ্যভাষীরা বাংলা শিখবেনা। বাংলা হয়ে উঠবে হিন্দি বলয়ের এক উৎকৃষ্ট সাংস্কৃতিক বাজার, একেই সম্ভবত এক কথায় "জাতীয় সংহতি" বলা হবে। কেবলমাত্র এলিটদের গর্ব কীকরে খর্ব হবে বোঝা গেলনা, কারণ ইংরিজি সর্বরাজ্যে নার্সারি থেকেই বহাল থাকবে। এমতাবস্থায় বাংলার রাজনৈতিক শক্তিদের কী কর্তব্য তা তাঁরাই ঠিক করুন।
পুঃ এই লেখা কেবলমাত্র শিক্ষানীতির ভাষাগত দিক নিয়েই লেখা। মূল প্রশ্নটাই এখানে তোলা হয়নি, যে, শিক্ষা আদৌ কেন্দ্রীয় তালিকায় থাকবে কেন। ৪০০ পাতার শিক্ষানীতি খুঁজলে মাথাভারি কেন্দ্রীয় অস্তিত্বের আরও গাদা নিদর্শন পাওয়া যাবে, যা মূলত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী। এই লেখায় সেসব ধরা হয়নি। তার মানে এই নয়, যে, সেগুলো নেই।
বাংলা জেনে কিছু শিক্ষকতার চাকরি হতে পারে।সংস্কৃত জানলে সেই সুযোগ আরো কম।বাস্তবতার খাতিরে,বাংলা জানার একমাত্র কারণ হলো,বাঙালি আইডেন্টিটি রক্ষা।বাংলায় বসবাস কারি,অবাঙালি জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও বাংলা ভাষাকে জানার চেষ্টা চালাতে হবে,সরকারী ভাবেই।যাতে করে পৃথক পৃথক ভাষা গোষ্ঠী র লোকজন এটলিস্ট পরস্পর কে,কমিউনিকেট করতে পারে।
অনেক ব্যাংক ,পোস্ট অফিসে বেশ কিছু কর্মী বাংলায় কথা বার্তাই চালাতে পারে না।অনেক গ্রাহক,বিশেষত স্বল্প শিক্ষিত ও প্রান্তিক মানুষ জন,বাংলা ছাড়া কিছু জানেন বা বোঝেন না।এঁদের নিয়ে চলে অমানুষিক টানা হিঁচড়ে। এইসব ক্ষেত্রে ওই প্রান্তিক মানুষ জন খুব অসহায় বোধ করেন।কোন ইংলিশ বা হিন্দি জানা গ্রাহক এর কৃপা প্রার্থী হন বা শরণাপন্ন হন। এইসব জিনিষ দূর করার জন্যই ব্যাবহারিক বাংলা শিক্ষা পশ্চিমবঙ্গে বাধ্যতা মূলক করা উচিত।
ভাষা ধারালো,ধর্ম ছুঁচলো,গায়ের রং জোড়ালো (বি এল এম),দেশের সীমা ধাঁধালো (ডোকলাম, গালোয়ান)।তাহলে রাজনীতিটা হবে কি নিয়ে ?ঘোড়ার ঘাস কাটা নিয়ে?
আগেই বলে দিয়েছি,পোস্ট অফিস,ব্যাংক,থানা,আদালত,দলিল সর্বত্রই বাংলায় আবেদন,নিবেদন ও ফর্ম ফিলাপ করা যায়,এই ব্যবস্থা রাখতে হবে। পশ্চিম বঙ্গে কিছু ব্যাংকের ফর্মে ইংলিশ এর সঙ্গে বাংলা আছে,কিন্তু অধিকাংশ ব্যাংকে হিন্দি। বেসরকারি পোস্টব্যাংক গুলোতে তো বাংলা বা হিন্দি কোন কিছুরই চল নেই। পোস্ট অফিসেও, বাংলার চল কম।জমির দলিল এর ক্ষেত্রে ইংলিশ এর চল বেশি।সহজ বোধ্য।কিন্তু অজ্ঞাত কারণে বাংলা রূপান্তর খুব জটিল।এগুলোকে সহজ সরল করতে হবে।আদালত এর কার্য কলাপ এর ক্ষেত্রেও তাই হওয়া বাঞ্ছনীয়।ব্যাবহারিক বাংলা যেন সহজ বোধ্য হয়।বহুকাল ধরে এ নিয়ে প্রশাসন উদাসীন।মানে কাজ চলে যাচ্ছে,নতুন করে ঝামেলা বাড়িয়ে কি লাভ! এই হলো মানসিকতা।
যা ইচ্ছা লিখে দেয়া হচ্ছে।
অসুবিধা টা কোথায় তামিলনাড়ুর ১টা ছেলে বাংলা শিখছে না বলে নাকি বাংলা ১টা ছেলে কে হিন্দি শেখানো হচ্ছে বলে।
তামিলনাড়ুতে বাংলা না যানলে জীবন চলে যাবে, কিন্তু বাম এবং ডান শাষনের ফলস্বরুপ যারা বাইরে কাজ করতে যায় তার হিন্দি জানতেই হয়।
Being multilingual doesn't make you a less of a bong.
হিন্দি আবার কবে থেকে classical language হলো? লেখক কি লেখেন? আমি তো জানি তামিল, সস্কৃত, ওড়িয়া, কন্নর , তেলেগু, মালায়ালাম এরা।
বহুদিন বাংলার বাইরে থাকি। হয়তো সেজন্য টানটা একটু বেশী। বর্তমানের বাংলা ভাষা শুনে অবাক হই, বেদনা পাই। কলকাতার মেয়েরা কানে ‘চিপকানো’ দুল পরে শুনে ভেবেছিলাম এটা বোধ হয় ইংরাজী মিডিয়ম স্কুলের হিন্দী বন্ধুদের প্রভাব। পরে টিভি তে শুনলাম বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব ডায়লগ বলছেন, ‘কান খুলে শুনে নাও’ কিংবা ‘তাহলে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না’। এ তো হিংলা! কোন বাঙালীর কোন বাঙলার জন্য ভাবছি আমরা?
আমার এই 'ধ্রুপদী' তকমাটা নিয়েই জোরালো আপত্তি আছে। এটা প্রথমে করে হ্যালহেড ১৭৭৮ সালে, তার থিওরিকে ১৭৮৬-তে পাকাপোক্ত করে জোন্স। ভাষার রাজনীতি, ভাষার সংস্কৃতায়ন এবং সে ভাষায় সাহেবরাই পণ্ডিত - এরকম অনেক খেলা এর সঙ্গে জড়িয়ে ছিল। এই নিয়ে আমার লেখা আসবে কিছু দিন পরে (বিজ্ঞাপন করছি না!)।
এই দুই বদমাইশের দেখাদেখি আমরাও সেই নিয়ে আদিখ্যেতা শুরু করেছি। শুধু বাংলাকে ধ্রুপদী বলাতে আমার আপত্তি তা বলিনি। ভারতীয় কোনও ভাষাকে ধ্রুপদী বলা মানে ভাষার ক্ষমতায়নের প্রশ্ন চলে আসে। থাকবন্দি মানসিকতা শুরু হয়।
একটা ভাষাকে আইডিয়াল ধরে নিয়ে তার সাপেক্ষে অন্য ভাষাগুলোকে বিচার করার মানসিকতাটা ভাষাবিজ্ঞানের বিরোধী। ভারতের মতো বহুভাষী দেশে প্রতিটি ভাষারই সমান মর্যাদা থাকা উচিত।
সাহিত্য রচনা যদি ভাষাকে ধ্রুপদী তকমা দেয়, তবে তা আরও হাস্যকর।
আর চর্যাপদ একটা 'নির্মাণ'। কারণ ওটা পাওয়া না গেলে সাহেবদের মতো আদি-মধ্য-আধুনিক মার্কা থাকবন্দি করতে বড্ড অসুবিধা হচ্ছিল। আমি নিজে রামপ্রসাদ কেন মধ্যযুগীয় কিংবা ভারতচন্দ্র অথচ ঈশ্বর গুপ্ত কেন আধুনিক - সে বিষয়টা হাজার চেষ্টা করেও বুঝতে পারিনি। সৈকতবাবু বলতে পারেন।
পশ্চিমবঙ্গে র,অফিসিয়াল সমস্ত কাজে বাংলা ভাষার প্রয়োগ হওয়া উচিত।সঙ্গে ইংলিশ বা হিন্দি থাকুক চাহিদা মতোন।
বিদ্যুৎ সংস্থার বিল লেখা হয়, ইংলিশে।দুপাতা জুড়ে হাবি জাবি এবংবিজ্ঞাপন।কেন? মূল বিলের অংশে ইংলিশ এর সঙ্গে সঙ্গে বাংলা য় লেখা হবে না কেন?বৃহত্তর জন গোষ্ঠীর সুবিধে হয়।সরকারী হাসপাতালে তো দিব্যি বাংলায় আউট ডোর টিকিট হয়!বেসরকারি হাসপাতালে নয় কেন?
একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স লেখা হয়,ইংলিশে।ইংলিশ এর সঙ্গে বাংলায় লেখা থাকলে কি অসুবিধে?
লাও,ধ্রুপদী ভাষার ব্যাখ্যা ও সাহেব দের অবদান বাজারে এসে গেলো!সংস্কৃত ধ্রুপদী ভাষা। ঠিক আছে।কিন্তু,আমি এড়িয়ে চলি।কি অসুবিধে হচ্ছে??
আমার চাকরির সুবিধার জন্য ইংলিশ দরকার।এই ইংলিশ বৃহত্তর বিশ্বের ভাষা।ক্ষমতার ভাষা।চাকরী দেবার ভাষা।ভারত এবং ভারতের বাইরে ; দুজায়গাতেই বিরাট দাম আছে।এ ভাষা শক্তি প্রদান করে।ইংলিশ অস্বীকার করা নির্বোধের কাজ।
কিছু লোক অবিশ্যি,নিজেদের ছেলে মেয়ে, নিকট জনদের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়িয়ে, মাতৃভাষা ই মাতৃদুগ্ধ বলে ,তুমুল প্রচার করে।উদ্দেশ্য হলো,যাতে বিরাট একটা শ্রেণী ,ইংলিশ না জেনে অবদমিত থেকেই যায়।
আমার মতে ইংলিশ ভাষা শেখা বিরাট গুরুত্বপূর্ণ।পশ্চিম বঙ্গে থাকলে,বাংলা ভাষা শেখা ও আবশ্যিক। হিন্দি থাকুক অপশনাল।যদি নিজের তাগিদে শিখতে চায় ,শিখুক।কারণ কেন্দ্রীয় সরকারী চাকরী পেতে হিন্দি দরকারী।উত্তর ভারতীয় সংস্কৃতির অংশীদার হতে গেলেও হিন্দি জানলে সুবিধাজনক হয় ,পরিস্থিতি।
সংস্কৃতকে 'ধ্রুপদী' ভাষা ঠিক করে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাহেবরা সেটাকে 'মৃত' ভাষা বলে দাগিয়ে দিয়েছিল। তাই সে ভাষার শব্দগুলোকে 'তৎসম' বলা হয় অর্থাৎ তাহার সমান। মানে সংস্কৃতটা আইডিয়াল, বাকি ভাষাগুলো তার থেকে বিচ্যুত। এটাকে মেনে নিলে ভাষা নিয়ে আলোচনা করার অর্থই হয় না। ভাষাবিজ্ঞান বিষয়টা ঘেঁটে ঘ হয়ে যায়। তাতে কেউ সংস্কৃত শিখল কিংবা শিখল না, তাতে কিস্যু এসে যায় না। কিন্তু সংস্কৃতকে আদর্শ বলে মেনে নেওয়া হয়। সাহেবরা সেটাই চেয়েছিল। মোসাহেবরাও দেখছি তার পক্ষে!
আর হ্যাঁ, ভাষার সঙ্গে চাকরির বিষয়টাকে জড়িয়ে ফেলাটাও সাহেবদের অবদান। কিন্তু ভারতের কত শতাংশ মানুষ ওই ইংরেজি জেনে চাকরি করেন? মানে কেবলমাত্র তাদের চাহিদা পূরণের জন্য আমাকে সে ভাষা শিখতে হবে কেন? আমি যদি চাকরি না করি? এ-ও তো ক্ষমতায়নের প্রশ্ন।
সংস্কৃত একটি অকাজের ভাষা।যে ভাষায় সাত টা বিভক্তি,তিনটে পুরুষ, গুচ্ছ কারক, শব্ধ রূপ, ধাতু রূপ এতো সব কঠিন জিনিষ এর সমাহার,সেই ভাষা আধুনিক যুগে অচল।এটাকে পরিত্যাগ করা সঠিক কাজ।
আজ ওই উইলকিনস,কর্মকার আর বিদ্যাসাগর মিলে বদ মায়েশি করেছিল বলে,সহজ সরল বাংলা ভাষায় কথা বলে,লেখা লেখি করে প্রাণ জুড়োচ্ছে। না হলে ওই অহম,,আবাম , বয়ম্ করতে হতো। বাপ্রে!
আর ইংরেজি জানলে সারা বিশ্বে চাকরী মেলে।ব্যবসা বানিজ্য করা যায় । যে কটি বাঙালি ছেলে পুলে করে কম্মে খাচ্ছে,ওই ইংরেজি ভাষার দৌলতে।
নয়তো আমার সোনার বাংলা করে ,একতারা বাজাতে হতো। পশ্চিম বঙ্গের চাকরী গুলো ও মাদ্রাজি,বিহারী, মারাঠি লোকেরা নিয়ে নিতো!
কারো ব্যক্তিগত ভাবে ইংরেজি না জানার বাধ্য বাধকতা থাকতে পারে কিন্তু বেশির ভাগ লোকের আছে।অন্তত জানলে সুবিধে হয়।
বাংলাভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দেওয়ার কোনো ইচ্ছে বা পরিকল্পনা ছিলো না পূর্ববর্তী পশ্চিমবঙ্গে আসীন সরকারের। বর্তমানের সরকার এবিষয়ে কি ভাবনাচিন্তা করছে তাও স্পষ্ট নয়। তাই ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে পাশের রাজ্য ওড়িশার ওড়িয়া ভাষা স্থান পেলেও বাংলা পায়নি।
দ্বিতীয়ত, যে ভারতবর্ষের জাতীয় সংগীত আর জাতীয় স্তোত্র দুইই বাংলাভাষায় রচিত ও গীত হয় সেই ভারতের মহামানবের সাগরে ত্রিভাষা সূত্রে হিন্দি-ইংরেজি-বাংলা এই সূত্রই ছিল।সেই স্বাধীনতার পরেই ভাষাসূত্র গঠিত হয়। তখন থেকে আজ পর্যন্ত বাঙ্গালীরাই এবিষয়ে কোনো জোরদার অস্মিতা দেখিয়ে উঠতে পারলো না।তাই বতর্মান শিক্ষাদলিলে ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে বাংলা স্থান পায়নি,সংগতকারণেই।
বাংলাভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দেওয়ার কোনো ইচ্ছে বা পরিকল্পনা ছিলো না পূর্ববর্তী পশ্চিমবঙ্গে আসীন সরকারের। বর্তমানের সরকার এবিষয়ে কি ভাবনাচিন্তা করছে তাও স্পষ্ট নয়। তাই ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে পাশের রাজ্য ওড়িশার ওড়িয়া ভাষা স্থান পেলেও বাংলা পায়নি।
দ্বিতীয়ত, যে ভারতবর্ষের জাতীয় সংগীত আর জাতীয় স্তোত্র দুইই বাংলাভাষায় রচিত ও গীত হয় সেই ভারতের মহামানবের সাগরে ত্রিভাষা সূত্রে হিন্দি-ইংরেজি-বাংলা এই সূত্রই ছিল।সেই স্বাধীনতার পরেই ভাষাসূত্র গঠিত হয়। তখন থেকে আজ পর্যন্ত বাঙ্গালীরাই এবিষয়ে কোনো জোরদার অস্মিতা দেখিয়ে উঠতে পারলো না।তাই বতর্মান শিক্ষাদলিলে ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে বাংলা স্থান পায়নি,সংগতকারণেই।