এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ভ্রমণ  পথ ও রেখা

  • শীতল মরুভূমিতে সাড়ে তিনদিন - ঝালমুড়ি ঝাঁকানো পথে

    লেখকের গ্রাহক হোন
    ভ্রমণ | পথ ও রেখা | ০২ নভেম্বর ২০২৩ | ১০৮৪ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  •  

    স্পিতি ফুল সার্কিট - আমাদের  পরিকল্পনা ছিল এইভাবে 
     

    স্পিতির ম্যাপ -  আমরা গিয়েছিলাম মানালি থেকে  এইভাবে
     
    বাইশ তারিখ সকালে যাত্রা কিন্তু সাড়ে আটটা নয় শুরু হল বেলা দশটা পার করে। ততক্ষণে হোটেলের সামনের সব দোকানই প্রায় খুলে গেছে, এমনকি শীতবস্ত্রের দোকানগুলোও। হোটেলটা পাহাড়ি জায়গার হোটেলের নিয়ম মেনেই রাস্তা থেকে বেশ খানিক উঁচুতে, বেশ খাড়াই একটা ঢাল বেয়ে নামা ওঠা করতে হয়। ফলতঃ নামার সময় গাড়ি মালবোঝাই কিন্তু মানুষবিহীন হয়ে  গড়গড়িয়ে নেমে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমাদের তুলল। ততক্ষণে অভি আর অপর্ণাদি দোকানে গিয়ে পর্যাপ্ত খাবার জল কিনে নিয়েছে। স্পিতির রাস্তা শুরু হয়েছে অটল টানেল হয়ে। এই টানেল তৈরীর ফলে মানালি থেকে লাহুল স্পিতি যেতে এখন আর রোটাং পাসের উপর নির্ভর করতে হয় না। আগে ১৩০০০ ফুট উঁচু রোটাং পাস ছিল লাহুল উপত্যকায় ঢোকার একমাত্র পথ। 

    অতিরিক্ত তুষারপাতের কারণে বছরে প্রায় ছয়মাস বন্ধ থাকে রোটাং-লা, শীতের ছয়মাস প্রকৃতপক্ষে লাহুল উপত্যকা প্রায় বিচ্ছিন্ন থাকত বাইরের পৃথিবী থেকে। রোটাং পাসের ঠিক নীচেই ১০০০০ ফুট উচ্চতায় পুর্ব পীরপাঞ্জাল পর্বতশ্রেণির বুক চিরে ৯.০২ কিমি লম্বা এই টানেল কুলুর সাথে লাহুলকে যুক্ত করেছে। ১৮৬০ সালে মোরাভিয়ান মিশন প্রথম জানায় রোটাং পাসের মধ্যে দিয়ে একটা টানেল  বানালে লাহুলের সাথে যোগাযোগ সহজ হবে। বহু টালবাহানা পেরিয়ে দেড়শো বছর বাদে ২০১০এ এই টানেলের নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ২০২০তে সম্পূর্ণ হয়। এখন মানালি থেকে লাহুল, স্পিতি হয়ে লেহ যাবার পথ সারাবছরই খোলা, যাত্রার দূরত্ব এবং  সময়ও কমেছে প্রায় চার ঘন্টার মত।     

    সে ছিল অক্টোবরের প্রায় শেষের দিক, রোটাঙের পথে একটা জমে যাওয়া ঝর্ণা, রাহালা ফলস, দেখে গাড়ি থামিয়ে বরফ নিয়ে ঘাঁটাঘাটি, খেলাধুলো। সেই আমাদের প্রথম প্রাকৃতিক বরফ দর্শন। সেজমামা বরাবরই হইচই করা মানুষ, কিন্তু আমার অমন গম্ভীর মা আর নিম গম্ভীর সেজ মাইমাও উচ্ছল যুবতী হয়ে গিয়েছিল। পথে আরেকটা ঝর্ণা পেয়েছিলাম, সে তখনো পুরো জমে নি, ঝিরঝির করে বইছিল। নাম বোধহয় রাণীনালা।  রোটাঙ পাসে নেমে খানিক হেঁটে একটা ছোট্ট কুন্ড দেখিয়ে সারথি বলেছিলেন বিয়াস কুন্ড, বিপাশার উৎস। পরে জেনেছি বিপাশার উৎস ওখানে নয়, অমন ছোট গর্ত টাইপও নয়। প্রকৃত উৎস এক হ্রদে, ধুন্ডি থেকে ট্রেক করে যেতে হয়। গাড়ির সারথি জানিয়েছিলেন পাহাড়ের ওপাশেই লাহুল।  

    একদিকের সবুজ ঘাসেভরা পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ভাই অনেকটা উঠে গিয়েছিল, পেছন পেছন আমিও। মা নীচ থেকে আমাদের নাম ধরে পরিত্রাহী চীৎকার শুরু করে নেমে আসার জন্য। সেজমামার হইহই হাসি, ছোট্ট বোনটার একদিকে আমাদের সাথে যাবার ইচ্ছে আরেকদিকে বাবা মা’কে ছেড়ে উপরে ওঠার দ্বিধা, প্রথম বরফ দেখার উচ্ছাসে কলকল করে সবাই মিলে একসাথে কথা বলা। দুপুর পার করে মানালি ফিরে কোথাও ভাত না পেয়ে হোটেলের দোতলার বারান্দার গা লাগোয়া আপেলগাছ থেকে আপেল পেড়ে কচমচিয়ে খেয়ে ফেলা, গোল্ডেন আপেলও সেই প্রথম চেনা ...চৌত্রিশ বছর আগের দিনটা তার তীব্র ঠান্ডা হাওয়া, ঝলমলে রোদ্দুর, সরুমোটা গলার আওয়াজ, হইহই হাসি, সব সঅব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে আজ।

    সেবার আমরা মানালি থেকে একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে রোটাং পাস গিয়েছিলাম। কদিন আগেই একপ্রস্থ তুষারপাত হয়ে গেছে, শুনেছিলাম আর মাসখানেকের মধ্যে পাসে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে, আবার খুলবে সামনের গ্রীস্মে। রোটাং পাস দিয়ে এখন আর লাহুল উপত্যকায় যাওয়া আসা করা যায় না, এই পাস এখন শুধুই একটা ট্যুরিস্ট স্পট, মানালি থেকে পার্মিট করিয়ে গিয়ে দেখে আবার মানালি ফেরা। আমরা অবশ্য রোটাং যাব না, সোলাং উপত্যকা হয়ে অটল টানেল দিয়ে বেরিয়ে যাব। ,চারদিক পপলার গাছে ঘেরা অপূর্ব সবুজ সোলাং থেকে প্যারাগ্লাইডিং করা যায়। রোপওয়ে আছে, গন্ডোলা চড়ে অনেকটা উপরে গিয়ে পুরো পীরপাঞ্জাল রেঞ্জের ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ দেখা যায়। আমরা অবশ্য সোলাঙে দাঁড়াই নি।

    সোলাং ভ্যালি - চলন্ত গাড়ি থেকে নেওয়া 
     
    সংগঠকরা জানিয়েছিলেন যাবার সময় অটল টানেলে কোন গাড়ি যেন না থামে, ফেরার দিনে থেমে ছবি টবি নেওয়া হবে। এদিকে টানেলের বাইরেই দেখি চমৎকার জন শৌচাগার। সকাল সাড়ে আটটা থেকে তৈরী হয়ে বসে থেকে থেকে এগারোটা নাগাদ অটল টানেলে পৌঁছে আমাদের প্রায় সকলেরই তখন বাথরুমে যাওয়া প্রয়োজন। আরো বিশেষতঃ মূল সংগঠক আগের দিন পইপই করে বলে দিয়েছেন অ্যাকিউট মাউন্টেন সিকনেস এড়ানর জন্য গোটা যাত্রাপথে অন্তত ৪ লিটার জল খেতেই হবে। তো  জলের কোটা বজায় রাখতে সকলেই  পাঁচ দশ মিনিট পরপর জল খাচ্ছে। অতএব টানেলের বাইরে দাঁড়ানো হল। আর দাঁড়ানোই যখন হল, তখন দু’একটা ছবি না নিলে কি আর হয়!


    অটল টানেল 

    অটল টানেল পেরিয়ে খানিক এগোতেই আস্তে আস্তে গাছের আকার ছোট হতে শুরু করল। বোঝা গেল বৃক্ষ রেখা শেষ হয়ে আসছে, তৃণরেখা শুরু হবে। সামনে এক রকফল জোন, এক উত্তাল ঝর্ণা উপর থেকে নেমে নাচতে নাচতে রাস্তা পেরিয়ে ঝাঁপ দিয়েছে নীচের দিকে, আর চারপাশে, রাস্তা জুড়ে অজস্র বড় ছোট লুজ বোল্ডার পড়ে আছে। কয়েকটা তো যে কোন মুহূর্তে  খসে পড়বে। আগে হিমালয়ে এরকম অঞ্চলে চলার অভিজ্ঞতায় দেখেছি সারথিরা এইসব এলাকা অত্যন্ত দ্রুত পার হয়ে যাবার চেষ্টা করেন। অনেকসময় গাড়ি চলায় যে কম্পন সৃষ্টি হয় তাতেও আলগা পাথর খসে পড়তে থাকে আর নিতান্তই খসে পড়তে শুরু করলে তার রিপল এফেক্টের থেকে বাঁচার জন্যই যত দূরে সম্ভব চলে যাওয়ার চেষ্টা থাকে।
     
    আমাদের গাড়ির তিন সহযাত্রিণী অবশ্য এমন ফোটোজেনিক জায়গায় সেলফি না তুলে যেতে নারাজ, অতএব নীরজ প্রচুর আপত্তি করেও গাড়ি দাঁড় করাতে বাধ্য হল। পেছন থেকে আসা গাড়িদের হর্নে বাধ্য হয়ে ফোটোসেশান বন্ধ করে সবাই গাড়িতে উঠলেন, আবার চলা শুরু। রাস্তা ক্রমেই নেই-রাস্তা হয়ে যেতে শুরু করল, শুরু হল অল্প বিস্তর ঝাঁকুনি। এইভাবেই এলো গ্রামফু। এখানে একটা বড় ধাবা,বাথরুম ইত্যাদি আছে। আর আছে বেশ কটা বড়সড় টিবেটান ম্যাস্টিফ (বা টি-ম্যার মিক্স)।  আমাদের সঙ্গে খাবারদাবার আছে, আর এখন খিদেও পায় নি, তবু নামা হল। অন্য দুটো গাড়ির সহযাত্রীদের সাথে দু’চারকথা বলতে না বলতেই এক কালো চকচকে ঝুলোঝুলো লোমের ভৌ এসে হাঁটুতে নাক ঘষে দিল।


    গ্রামফু ব্রিজের কাছে 

    সে আমার হাঁটু ছাড়িয়ে আরো ইঞ্চি দুয়েক লম্বা। প্রচুর কান ও গলা চুলকানো আদায় করে তিনি একটু খাবার দাবারের খোঁজ করলেন, কিন্তু ইতোমধ্যে গাড়িতে ওঠার ডাক এসে গেছে, অতএব তার ছবি নেবার চেষ্টা করতেই আমাকে ছেড়ে অন্য আরেক গাড়ির দিকে চারপায়ে হাওয়া। বোঝা গেল ব্যক্তিগত মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী করতে দিতে তাঁর খুবই আপত্তি। এদিকে ধাবার সামনে দেখি গুডডে  বিস্কুটের প্যাকেট, একটা মোচড়ানো প্ল্যাস্টিকের জলের বোতল আর কটা সেন্টার ফ্রেশের প্যাকেট পড়ে আছে। আশেপাশের পরিচ্ছন্ন প্ল্যাস্টিকবিহীন পরিবেশে কোন উদো ট্যুরিস্ট এগুলো ছড়িয়ে গেছে কে জানে! তুলে নিয়ে একপাশে রাখা নোংরা সংগ্রহের মস্ত ড্রামে ফেলে গাড়িতে উঠে বসি। গ্রামফু থেকে বাতালের মধ্যে বাড়িঘর দোকানপাট কিচ্ছু নেই, এমনকি রাস্তাও বিশেষ নেই।     


    বরফচুড়োরা টুকি করতে শুরু করেছে 

    অ্যালপাইন অঞ্চলে ঢুকে গেছি আমরা, দূর থেকে টুকি করছে বরফমোড়া পাহাড়চুড়ারা। জানালা খোলা থাকায় হঠাৎই বেশ একটু ঠান্ডা লাগতে শুরু করে। অচেনা হিমবাহরা অনেক উপর থেকে নজর রাখছে হেলেদুলে নেচে নেচে লাফিয়ে লাফিয়ে চলা গাড়িগুলোর দিকে। বিপাশা বিদায় নিয়েছে অনেকক্ষণ, পাশে পাশে চলেছে স্পিতি নদী। পাহাড়ের রঙ বদলাচ্ছে, বদলাচ্ছে টেক্সচার। মোবাইলের নেটওয়ার্ক অনেক আগেই মিলিয়ে গেছে। রোদ্দুর আর মেঘ কখনো এ ওকে একহাত দেখে নিচ্ছে কখনো ও একে।  যত এগোচ্ছি বাড়ছে হাওয়ার বেগ আর বাড়ছে ঝাঁকুনি। খানিকক্ষণ অনবরত ছবি তুলে শেষে তোলা বাদ দিয়ে শুধু দেখতে থাকি। ওদিকে সহযাত্রিণীরা মুড়ি মাখতে শুরু করেছেন।          

     

    গ্রামফুর পরে কোন এক বাঁকে 
     
    সোনামণি আর হাসিনা গুছিয়ে মেখে দেন সবাইকে। মুড়িটা মেখেছিলেন ওঁরা অসাধারণ। একমুঠো খেয়ে আমার বাদামে মন দিই। কিন্তু অত ঝাঁকুনিতে খেতে বিশেষ ভাল লাগে না কিছুই। ফলে কয়েক মুঠো খেয়ে ক্ষান্ত দিই। আমন্ড কাজু আর কিশমিশ মিলিয়ে প্রায় আধকিলো কিনেছিলাম। আমি বোধহয় চার কি পাঁচমুঠো খাই আর আর একজন সামান্য একটু নেন। তারপর সে বাদামের পোঁটলা যে কোথায় হারিয়ে এলাম! তাদের আর খুঁজেই পেলাম না। ওদিকে হিমবাহ থেকে আধা জমে যাওয়া নদী নেমে স্পিতি নদীতে মিশেছে। নীরজ এই রাস্তায় এই প্রথমবার আসছে, ফলে সে কোন নদী বা শৃঙ্গেরই নাম বলতে পারে না। আফশোস হয় বিস্তারিত অফলাইন ম্যাপ ডাউনলোড করে না নিয়ে আসার জন্য।
     
    হিমবাহ ও ​​​​​​​হিমনদী 


    স্পিতি নদী চলেছে পাশে পাশে 
     
    ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে দোলাতে দোলাতে নাচাতে নাচাতে গাড়ি একসময় বাতালে পৌঁছায়। সেখানকার ‘চাচা চাচী ধাবা’য় গরম গরম ম্যাগী, মোমো থুকপা স্যুপ কফি ইত্যাদি খেয়ে খানিক চাঙ্গা হয় তিনটে গাড়ির মানুষজন। এত উচ্চতায় এতটা অফরোডিঙের পর এরকম জায়গায় গরমা গরম খাবারের স্বাদই আলাদা। ওদিকে চার লিটার করে জল খাওয়ার চক্করে বাথরুমের প্রয়োজনও হয় ঘন ঘন। গ্রামফু ছাড়ার পর একমাত্র লোসার ছাড়া আর কোথাওই মোটামুটি ব্যবহারযোগ্য বাথরুম পাই নি। মানে বাতালে যেটা ছিল সেটা তালাবন্ধ, বাকী আর তো সব জনমানবশুন্য পাহাড়ি পথ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লোকজনকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে প্রকৃতির বুকেই যেতে হয়, আমাদের গাড়িগুলোও তার ব্যতিক্রম নয়।  


    এনএইচ-৩ - এটা কিন্তু  ন্যাশনাল হাইওয়ে বাবা হুঁ হুঁ cool 

    বাতালে গিয়ে জানা গেল লোসার অবধি এরকমই রাস্তা, লোসারের পর নাকি ভাল রাস্তা আছে। মজার ব্যপার হল গুগলে যখন মানালি ট্যু কাজা দূরত্ব চেক করেছিলাম  বলেছিল ৫ ঘন্টা, হ্যারীভাই কিন্তু বলেছিলেন নয় থেকে দশ ঘন্টা আরামসে। আসলে মানালি থেকে কাজা ভায়া অটল টানেল ১৮৩ কিলোমিটার, স্বাভাবিক রাস্তায় ওই ৫-৬ ঘন্টাই লাগা উচিৎ। কিন্তু রাস্তাবিহীন রাস্তায় আমাদের আর্টিগার চলতে সময় লাগছে অনেক বেশী। কোথাও কোথাও স্পিতির কোনও নাম না জানা উপনদী বয়ে চলেছে রাস্তার উপর দিয়ে, সাবধানে পেরোতে হয় তাকে। আর ঝাঁকুনি! বাপরে সারা জীবনে অত ঝাঁকুনি খাই নি যত এই সাড়ে তিনদিনে খেয়েছি। লোকাল ট্রেনে ঝালমুড়ি মেখে টিনের কৌটোটা ধরে ঝাঁকায় দেখেছেন তো? ডাইনে বাঁয়ে, বাঁয়ে ডাইনে, উপরে নীচে, নীচে উপরে, অবিকল সেই কায়দায় ঝাঁকুনি। 
     

    গ্রামফু থেকে বাতালের মাঝে - পথে বেশ কয়েক জায়গায় এরকম কোন উপনদী রাস্তা দিয়ে বয়ে নেমে গিয়ে স্পিতিনদীতে মিশেছে। 

    বাতাল থেকে লোসারের পথে এক জায়গায় একটা ছোট্ট চড়াইতে আমাদের গাড়ি আর উঠতে পারে না কিছুতেই। নীরজ বেশ কয়েকবার চেষ্টা করল, বেশ খানিকটা পিছিয়ে রেস করে এসে ফুল চার্জ --- নাহ তাও হল না। শেষে তিনজন নামলেন, গাড়ি আরো বার দুয়েক চেষ্টার পর চড়ল গাড়ি। ওঁরা ওইটুকু হেঁটে উঠে এসে চড়লেন। এই পথেই স্পিতির পাশে এক মস্ত চওড়া এলাকায় বায়োব্রেক নিতে থামার সময় শুরু হল সুক্ষ্ম তুষারপাত (যাকে ফ্লারিজ বলে আর কি) আর সাথে তেমনি হাওয়া। ধুসর বিবর্ণ পাহাড়, জায়গায় জায়গায় কচ্ছপের পিঠের মত খোপকাটা, নীলচে সবুজ স্পিতিনদী, হু হু হাওয়া, চলতে ফিরতে বুকে চাপ আর ধুসর আকাশ থেকে নেমে আসছে সুক্ষ্ম সুঁচের মত সাদা তুষার, আমরা কজন আর আমাদের গাড়িটা ছাড়া যতদূর দেখা যায় আর কিচ্ছুটি নেই ---কেমন অপার্থিব লাগে চারপাশ।         


    আধা জমে যাওয়া ঝর্ণা - কুঞ্জুম পাসের একটু আগে 
     
    কুঞ্জুম পাস পেরিয়ে লোসারে পৌঁছাই আমরা প্রায় শেষ বিকেলে। সেখানে একপ্রস্থ চা কফি খেয়ে আবার যাত্রা শুরু। হ্যাঁ রাস্তা কিঞ্চিৎ ভাল বটে, তবে ওই কিঞ্চিৎমাত্রই। উপরে নীচে ঝাঁকুনিটা একটু কমেছে, ডাইনে বাঁয়ে একইভাবে ঝাঁকিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে রাস্তায় আমাদের গাড়ি আটকে যাওয়ার কথা জানতে পেরে বাকী ট্র্যাভেলার দুটো থেমে থেমে আমাদের নজরে রেখে চলেছে, যদিই কিছু সাহায্য লাগে। এতক্ষণে শরীর রীতিমত অবসন্ন লাগছে, সকলেরই কিছু না কিছু সমস্যা হচ্ছে। দেখতে দেখতে ওইই উঁচু পাহাড়ের একদম চুড়োতে এলিয়ে বসে  থাকা  সুজ্জিমামাও টুপুস করে ঘুমিয়ে পড়ল।আমরা চলেছি তো চলেইছি কাজা আর আসে না। মাঝেসাঝে ছোট্ট জনপদ,কয় ফুলকি আলো আবার নিকষ কালো। অবশেষে রাত আটটায় হোটেল রি-জং রেসিডেন্সি। এবারে শান্ত ঘুমের ওভারডোজ।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ভ্রমণ | ০২ নভেম্বর ২০২৩ | ১০৮৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • স্বাতী রায় | 117.194.***.*** | ০৩ নভেম্বর ২০২৩ ০১:০০525464
  • এইটা এইখানে বেশি আরাম হল। বেশ ছবি দেখতে দেখতে বিন আয়াসের যাত্রা। দারুণ। 
  • kk | 2607:fb90:ea0c:cd31:c5e4:bfd6:bab5:***:*** | ০৩ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:৪০525482
  • ইশ, এই জায়গা গুলো কী সুন্দর! ছবিতেই দেখে এত ভালো লাগছে, সামনাসামনি দেখতে না জানি আরো কেমন লাগবে। কিন্তু কবে যে যাওয়া হবে! ভৌ এর একটা ছবি দেখতে পেলে বেশ হতো। কিন্তু ছবি তোলাতে ওনার যখন এতই আপত্তি, কী আর করা যাবে? কিন্তু এনএইচ৩ এর ছবিতে গাড়ির ভেতরে একটা যেন লোমশ মাথার একটু দেখতে পাচ্ছি। উনি কে?
    দ'দি, তোমার এই লেখাগুলো এত ঝরঝরে হয় বলে আরো ভালো লাগে। ঠিক মনে হয় বসে কারুর থেকে গল্প শুনছি। লেখ্য ভাষার কাঠিন্য ত্যাগ করতে পারাটা একটা বড় অ্যাচিভমেন্ট।
  • | ০৩ নভেম্বর ২০২৩ ২৩:৩৬525490
  • স্বাতী, হ্যাঁ ফেবুতে ত ছবিগুলো জায়গামত বসানো যায় না। ওইজন্য লেখার সাথে দিইও না একটা দুটোর বেশী। 
     
    কেকে,   ছবিতে ১০% ও আসে নি জায়গাগুলোর সৌন্দর্য। 
    পাহাড়ি ভৌয়েরা ভারী অমায়িক হয়।  এগিয়ে এসে আলাপ করে কথাবার্তা বলে। হোমস্টেতে থাকলে আশেপাশে গেলে সঙ্গে যায় পাহারা দিয়ে। 
  • সুদীপ্ত | ০৪ নভেম্বর ২০২৩ ১০:১৯525505
  • স্পিতি নদীর ছবিগুলো আর আধা জমে যাওয়া ঝর্ণার ছবিটা খুব ভালো লাগলো! 
  • দীমু | 182.69.***.*** | ০৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:০১525514
  • দারুণ yes খুবই ফটোজেনিক জায়গা। ​​
  • | ০৫ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:৩৬525554
  • সুদীপ্ত, দীমু, থ্যাঙ্কুউ
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন