আমেরিকার যুদ্ধু যুদ্ধু জেল জেল খেলা
যে খেলার মাঠ এখন ইজরায়েল, ইউক্রেন, এবং আগামীকাল ভারত
_____________
বেশিদিনের কথা নয়। আফগানিস্তান ইরাক সিরিয়া। আর কয়েক দশক আগেই ভিয়েতনাম।
আমাদের ঘরেই বাংলাদেশ ঊনিশশো একাত্তর -- পাকিস্তানী খানসেনা আর রাজাকার আলবদরের বীভৎস বর্বরতা।
ইরাকে মিডিয়া প্রোপাগাণ্ডা দিয়ে তৈরী "ওয়েপন্স অফ মাস ডেস্ট্রাকশন" নামক ভুয়ো তত্ত্বের ভিত্তিতে একটা প্রাচীন সভ্যতাকে গুঁড়িয়ে দেওয়া। লক্ষ নিরীহ মানুষ এবং নারী শিশুকে হত্যা রিমোট কন্ট্রোলে মিসাইল পাঠিয়ে।
প্রতিটি গণহত্যার পিছনেই মার্কিনি যুদ্ধব্যবসা। যা প্রায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে তা হলো এই।
মার্কিন দেশের মূল ব্যবসাগুলির মধ্যে তিনটি হলো --
(১) অস্ত্র ব্যবসা। -- বিশ্বের কোণে কোণে নানা জায়গায় যুদ্ধ বাধানো আর অস্ত্র ও বোমা সরবরাহ। ভিয়েতনাম থেকে বাংলাদেশ, ইজরায়েল থেকে ইউক্রেন।
(২) ড্রাগসচক্র -- কোকেন, এলএসডি, মেট, হেরোইন, আরও হাজার রকমের ভয়ঙ্কর মাদক সামগ্রী।
(৩) যৌনতামূলক ইন্ডাস্ট্রি -- পর্নোগ্রাফি এবং টিনএজ ও প্রি-টিন কিশোর কিশোরীদের নিয়ে বিশাল দেহব্যবসা।
এই হলো বাস্তব। যা প্রায় কেউই জানেনা।
অস্ত্রের কারবার হয়তো জানে। কিন্তু জানেনা, অস্ত্রব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে মার্কিনি অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। প্রকৃতপক্ষে, অস্ত্রের ব্যবসাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির সর্বপ্রধান চালিকাশক্তি।
হ্যাঁ রাশিয়ান অস্ত্রও আছে। কিন্তু সারা পৃথিবীর মধ্যে আমেরিকার মতো আর্মস ইন্ডাস্ট্রি-ভিত্তিক অর্থনীতি আর কোথাও নেই।
রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাট -- দুই দলই দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর থেকে এই চালিকাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমেরিকা নামক দেশটাকে প্রধান সুপারপাওয়ারে পরিণত করেছে। এদিকে রাস্তাঘাট বাড়িঘর একটু বেশি বৃষ্টি হলেই জলের তলায় ।পার্ক লাইব্রেরি ব্রিজগুলো খসে খসে পড়ছে। রাস্তায় রাস্তায় হোমলেস।
গোর ভিডাল তাঁর তথ্যচিত্রে দেখিয়েছেন, ঊনিশশো পঁয়তাল্লিশে হিরোশিমা ও নাগাসাকির ওপর নারকীয় পারমাণবিক বোমা ফেলে লক্ষ নিরীহ মানুষকে হত্যা করার পর থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায় প্রতি বছর পৃথিবীর কোথাও না কোথাও যুদ্ধ বাধিয়েছে, বা যুদ্ধের সঙ্গে, হিংসার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত থেকেছে।
তুমি আমার কর্পোরেশনের জিনিস কেনো -- ম্যাকডোনাল্ড থেকে ফোর্ড শেভি জিএম থেকে কোক থেকে কম্পিউটার। যদি কেনো এবং আমাকে একচ্ছত্র ব্যবসা করার বরাত দাও, তোমার দেশের সরকার থাকবে। যদি না দাও, আমরা তোমার সরকারকে ফেলে দেবো। আর নয়তো যুদ্ধ অথবা সামরিক অভ্যুত্থান।
বানিয়ে বলছিনা, এই হলো আসল মার্কিনি বিদেশনীতি, কূটনীতি।
মিলিয়ে দেখুন। রিসার্চ করে দেখুন। আমি কিছু রেফারেন্স দিলাম। যাঁরা সবজান্তা নন তাঁদের জন্যে।
আজকের ইউক্রেন যুদ্ধ, ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধও সেই যুদ্ধব্যবসার নতুন বাজার -- বিশ্বাস করুন বা নাই করুন। ভিয়েতনাম, ইরাক, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ -- সবই যুদ্ধব্যবসা। যুযুধান দুই দেশ বা একাধিক দেশ সবাই মার্কিন ও ব্রিটিশ-ফ্রেঞ্চ অস্ত্র ব্যবহার করছে। কী চমৎকার বিশ্বায়িত বাণিজ্য -- এই গ্লোবালাইজেশনের যুগে!
যুদ্ধের ব্যবসার সঙ্গে এখন ফুলে-ফেঁপে উঠছে ব্যক্তিগত মালিকানায় কারাগারের ব্যবসা। যা এখন বিশালভাবে বেসরকারিকরণ করা হয়েছে। প্রাইভেট প্রিজন কোম্পানিগুলো আমেরিকার নানা শহরে ঘাঁটি গেড়ে বসেছে, এবং সে শহরের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে।
আমার ছাত্ররা রিসার্চ করে আমাকে বলেছিলো, সারা পৃথিবীতে -- সব দেশ মিলিয়ে -- যতসংখ্যক জেলবন্দী আছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আছে তার এক-চতুর্থাংশ -- পঁচিশ শতাংশেরও বেশি।
প্রাইভেট প্রিজন কোম্পানিগুলো এখন তাদের শেয়ার স্টক মার্কেটে কেনাবেচা করে। লক্ষ লক্ষ মানুষ সেই শেয়ার কেনে।
অবিশ্বাস্য ব্যাপার। কিন্তু দেখুন, কতজন জানে?
আজকে ইজরায়েল, ইউক্রেনে যা দেখছেন, কাল তা ভারতে দেখবেন। যদি না ফ্যাসিস্টদের পতন হয়।
যখন দেখবেন, তখন আমাকে হয়তো একটু মনে পড়বে।
হয়তো।
###
আমার বই "আমেরিকা স্বপ্নপুরী না হত্যাপুরী?" (ভিরাসাত, ২০২৩) থেকে কয়েকটা রেফারেন্স এখানে দিলাম।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।