শিলং এ বাঙালিদের তাড়াতে আবার আন্দোলন শুরু হয়েছে। কাছাড়ের বাঙালিরা প্রতিবাদে করলেও তৃণমূল - সহ পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক দল গুলি নীরব!
--- প্রসূন আচার্য
বিগত এক সপ্তাহ ধরে শিলংয়ে বাঙালি, যাঁরা অধিকাংশই আবার হিন্দু তাঁদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছে খাসি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন এবং অন্য কয়েকটি উপজাতি যুব ও ছাত্র সংগঠন।
বাঙালিদের শুধু শিলং ছাড়া করার হুমকিই দেওয়া হচ্ছে না, তাদের একাধিক দোকান এবং ব্যবসা কেন্দ্রে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রাণে মারার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। বাঙালিদের বাংলাদেশী হিসেবে চিহ্নিত করে শিলং শহরে বহু পোস্টার এবং ফেস্টুন টাঙানো হয়েছে। অথচ, এই বাঙালিরা কেউই কিন্তু বাংলাদেশী নন। তাঁরা সকলেই ভারতীয়।
শিলং এ বাঙালিরা বিগত কয়েক শত বছর ধরেই আছে। দার্জিলিং এর মতই শিলং এর সঙ্গেও বাঙালির সম্পর্ক বহু দিনের। রবীন্দ্রনাথ নিজেও দীর্ঘ দিন শিলং পাহাড়ে ছিলেন। ব্রিটিশ আমলে শিলং এ বাঙালিদের রমরমা ছিল। কিন্তু ১৯৭২ সালে অসমের থেকে বেরিয়ে গিয়ে আলাদা রাজ্য হওয়ার পরে ১৯৭৯ সালে "বঙ্গাল খেদার" নামে বাঙালিদের ঘর বাড়ি পুড়িয়ে চাকরি ক্ষেত্র থেকে বিতাড়িত করা হয়।
সেই সময় প্রায় ২০ হাজারের বেশি সম্ভ্রান্ত এবং আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল বাঙালি প্রাণ বাঁচাতে শিলং তথা মেঘালয় ছাড়তে বাধ্য হন। সরকারি আইন অনুযায়ী, পাহাড়ি উপজাতি অর্থাৎ খাসি ও জয়ন্তীয়া বা গারো ছাড়া কেউ মেঘালয় রাজ্যে কোনও সম্পত্তি কিনতে বা নতুন করে ব্যবসা করতে পারবে না।
তবু অনেক বাঙালি পূর্ব পুরুষের ঘর বাড়ি এবং ব্যবসা আঁকড়ে পড়ে আছেন। বর্তমানে মেঘালয়ের রাজধানী শিলং এর বাসিন্দাদের প্রায় ২০% বাঙালি। কিন্তু এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী দিনে তাঁরাও থাকতে পারবেন কিনা সন্দেহ। কারণ, লক ডাউনের সময় বন্ধ হয়ে যাওয়া কোনও বাঙালির ব্যবসা আবার নতুন করে খোলার অনুমতি সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
মেঘালয়ের বাসিন্দাদের মধ্যে বাঙালির সংখ্যা প্রায় ৭ শতাংশ। অধিকাংশই হিন্দু। কিছু মুসলিমও আছেন। রাজ্যে খ্রিস্টান জনসংখ্যা ৭০ শতাংশের বেশি। এবং এঁরা সকলেই প্রায় উপজাতি।
মেঘালয় সরকার বর্তমানে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। এই বাঙালি বিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই অসমের কাছাড়ের বাঙালিরা সরব হয়েছেন। তাঁরা অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। প্রশান্ত কিশোরের মধ্যস্থতায় কংগ্রেস বিধায়করা দল ভেঙে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় সরকারি ভাবে মেঘালয়ে বিরোধী দল এখন তৃণমূল। যদিও মাটিতে তাদের ক্ষমতা সীমিত। কিন্তু এখনও সাংসদ সুস্মিতা দেব ছাড়া তৃণমূলের কেউ সেই ভাবে এই ঘটনার প্রতিবাদ করেনি। সুস্মিতা কাছাড়ের বাঙালি বলেই স্থানীয় চাপে পড়ে প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু আমাদের দিদি এখনও নীরব!
বাংলার রাজনৈতিক দল গুলোর এর বিরুদ্ধে একযোগে প্রতিবাদে সরব হওয়া উচিত এবং শিলং এর বাঙালিদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। না হলে আবার তাঁদের নিজভূমে পরবাসী হতে হবে।
C@ Prasun Acharya