এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  ইতিহাস

  • ধর্মাধর্ম – পঞ্চম পর্ব  - পঞ্চম ভাগ 

    Kishore Ghosal লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | ইতিহাস | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১৪১৫ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • ৫.৫.১ সমুদ্র মন্থন
    ভগবান শিবের এই দক্ষযজ্ঞ পণ্ড করার রুদ্র রূপই একমাত্র রূপ নয়। তাঁর অন্য আরেকটি রূপ ভীষণ সহজ, সরল, অনাড়ম্বর এবং উদাসীন তপস্বীর মঙ্গলময় রূপ। অমৃত লাভের জন্যে দেবতা ও অসুররা সম্মিলিত হয়ে, সমুদ্রমন্থন শুরু করার কিছুক্ষণের মধ্যেই সমুদ্রের থেকে অতি উৎকট হলাহল উঠে এল। সেই হলাহলের তীব্র তেজে দেবতা, অসুর এবং লোকপালেরা সকলেই অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তাঁদের রক্ষার জন্যে সকলেই দেবাদিদেব মহেশ্বরের শরণাপন্ন হলেন। মহেশ্বর তখন কৈলাসে দেবীর সঙ্গে তপস্যা করছিলেন। দেবতাদের প্রার্থনা শুনে তিনি পত্নী ভবানীকে বললেন, “কী দুশ্চিন্তার বিষয়, সমুদ্র মন্থনে উদ্ভূত কালকূট প্রজাদের ঘোর দুঃখের কারণ হয়ে উঠেছে। প্রজাগণ নিজেদের প্রাণ রক্ষার জন্যে ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। এদের অভয় দেওয়াই আমার বিধেয়, যেহেতু যিনি সমর্থ, দীনজনকে রক্ষা করাই তাঁর একান্ত কর্তব্য। অতএব এই বিষ আমিই পান করব”। দেবী ভবানী পতি মহেশ্বরের সাধ্যের কথা জানতেন, তাই আপত্তি করলেন না। তখন দেবাদিদেব সমস্ত হলাহল পান করলেন এবং বিষের তীব্র তেজে তাঁর কণ্ঠ নীল হয়ে গেল। যদিও সেই বিষ তাঁর আর কোনও ক্ষতি করতে পারল না। সেই থেকেই তাঁর আরেক নাম হল নীলকণ্ঠ। পান করার সময়, তাঁর আঙুলের ফাঁক দিয়ে কিছু বিষ মাটিতে পড়েছিল, সেই ছিটেফোঁটা বিষ পান করেই, সাপ, বৃশ্চিক, শৃগাল, কুকুর এবং কিছু লতা-গুল্ম বিষধর হয়ে উঠেছিল।

    এরপর সমুদ্রমন্থন থেকে একে একে নানান ঐশ্বর্যের উদ্ভব হতে লাগল। যেমন, সুরভি নামের কামধেনু, ব্রহ্মবাদী ঋষিরা তাঁকে গ্রহণ করে তাঁদের গোয়ালে বেঁধে ফেললেন। শ্বেতবর্ণ এক ঘোড়া উচ্চৈঃশ্রবা, দেবরাজ ইন্দ্র গ্রহণ করে স্বর্গের ঘোড়াশালে পাঠাবার ব্যবস্থা করলেন। ঐরাবত নামের হাতি, সঙ্গে আটটি হস্তিনী- কেউ গ্রহণ করলেন কিনা, মহাভারত থেকে জানা যায় না। কিন্তু অন্য পুরাণ মতে ঐরাবত দেবরাজ ইন্দ্রই কুক্ষিগত করে নিজের পিলখানায় বেঁধে ফেলেছিলেন। কৌস্তুভ নামের পদ্মরাগ রত্ন, ভগবান বিষ্ণু গ্রহণ করলেন। পারিজাত বৃক্ষ, ইন্দ্র গ্রহণ করে স্বর্গের বাগানে রোপণ করলেন। সোনার অলংকারে ভূষিতা অপ্সরাগণ, তাঁদেরও ইন্দ্র স্বর্গে নিয়ে গেলেন। এরপর আবির্ভূতা হলেন লক্ষ্মীদেবী, তিনি নিজেই ভগবান বিষ্ণুকে আশ্রয় করলেন। এরপর সুরার দেবী বারুণী আবির্ভূতা হলেন, ভগবান বিষ্ণুর অনুমতি নিয়ে অসুররা তাঁকে গ্রহণ করলেন। এরপরেই অমৃতপূর্ণ কলস হাতে আবির্ভূত হলেন, আয়ুর্বেদ পারদর্শী ধন্বন্তরি। অতএব সমুদ্রমন্থনে লব্ধ এত ঐশ্বর্যের মধ্যে ভগবান শিবের ভাগে জুটেছিল তীব্র বিষ, কারণ অমৃতের ভাগ তো, পৌরাণিক মতে, দেবতাদের সকলেই পেয়েছিলেন। এমন উদাসীনতা আর কোন হিন্দু দেবতার মধ্যে আছে বলে আমার মনে হয় না।  

    ৫.৫.২ শিবের পূজা

     
     
    ৫.৫.৩ শিবমূর্তি

    প্রাচীন অনার্য ভারতীয়দের পূজিত আরেকটি দেবমূর্তির নিদর্শন পাওয়া গেছে, সিন্ধুসভ্যতার প্রত্নখননে। শিং-ওয়ালা মুকুট মাথায় এক দেবমূর্তি, যাঁর আশেপাশে বেশ কয়েকটি সজীব প্রাণীর মোটিফ। অনুমান করা হয় ইনি ভগবান শিবের আদিম সংস্করণ, পশুপতিদেব। একটু অন্যরকম পশুপতির মূর্তি পাওয়া গেছে প্রাচীন দক্ষিণ ভারতেও। সে মূর্তি চতুর্ভুজ, একহাতে বরাভয় বা আশীর্বাদ, অন্য হাত মুক্ত যেন বরদানে উদ্যত, তৃতীয় হাতে একটি কুঠার আর চতুর্থ হাত থেকে লাফিয়ে উঠছে ছোট্ট একটি হরিণশাবক।

    ৫.৫.৪ শিবের অসুর বা দৈত্য নিধন
     
    ...অতি কষ্টে সেই চক্র সে যেমনি কাঁধে তুলল, তখনি তার দেহ দু’টুকরো হয়ে, কাটা গাছের মতো, আছড়ে পড়ল মাটিতে। জলন্ধর নিহত হওয়াতে ত্রিজগতের দেব, গন্ধর্ব, দানব এবং নর - সকলেই আনন্দে “সাধু সাধু” বলতে লাগল। এই জলন্ধর-বিমর্দন উপাখ্যান যিনি পাঠ করবেন বা শুনবেন বা শোনাবেন, তিনি গাণপত্য লাভ করে অপার আনন্দ ভোগ করতে পারবেন। (লিঙ্গপুরাণ/ ৯৭)

     
    ৫.৫.৪.১ তারকাসুর বধ ও শিব-পার্বতী সংবাদ
    দক্ষের যজ্ঞে সতীদেবীর দেহত্যাগের পর, মহাদেব সুদীর্ঘ তপস্যায় মগ্ন রয়েছেন, পুনর্বিবাহের কথা তাঁর মনেও আসেনি। অন্য দিকে সতীদেবী মহাদেবকেই আবার পতিরূপে লাভ করতে নিজের ইচ্ছেয় জন্ম নিলেন, হিমালয়-পত্নী মেনকা দেবীর গর্ভে। এই জন্মে তাঁর নাম হল হিমালয়-দুহিতা পার্বতী। দেবী পার্বতীর যখন বারো বছর বয়স হল, তিনি তপস্যায় প্রবৃত্তা হলেন।

    "ধর্মাধর্ম" গ্রন্থাকারে প্রকাশিত। প্রকাশক - গুরুচণ্ডা৯ প্রকাশন।  

    এরপর বহুবিধ আড়ম্বরে সকল দেবতাদের উপস্থিতিতে উভয়ের বিবাহ সম্পন্ন হল এবং যথাকালে তাঁদের পুত্র কার্তিকেয়র জন্ম হওয়ার পরে, বালক কার্তিকের হাতেই তারকাসুর নিহত হল (লিঙ্গপুরাণ/১০১, ১০২, ১০৩)।

    এই কাহিনী নিয়ে কোন মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন, কিন্তু একটা বিষয় বেশ উপভোগ্য। দেবরাজ ইন্দ্র অসুর ও দৈত্যদের সঙ্গে যুদ্ধে প্রায়শঃ পরাজিত ও স্বর্গ থেকে বিচ্যুত হয়ে পরিত্রাণের জন্য ত্রিদেবের শরণ নিয়ে থাকেন। কিন্তু এক্ষেত্রে দেবী পার্বতীর কোলে থাকা একটি শিশুকে বধ করার জন্য তাঁকে প্রথমেই হাতে বজ্র তুলে নিতে হল! আবার শিশুরূপী দেবাদিদেবের হাতের ইশারায় তিনি একেবারে জড়বৎ পুতুল হয়ে গেলেন! দেখা যাচ্ছে ভাগবত এবং শৈব - উভয় পুরাণকারই সুযোগ পেলে বৈদিক দেবরাজ ইন্দ্রকে অপদস্থ করতে দ্বিধা করেননি। 

    ৫.৫.৫ হরি-হর
     
    খ্রীষ্টপূর্ব শেষ শতাব্দী এবং পরবর্তী দুই শতাব্দীতে আমরা হিন্দু ধর্মের ভাগবত এবং শৈব দুই শাখারই সুস্পষ্ট অস্তিত্ব দেখেছি।  ভাগবত শাখার প্রধান দেবতা বিষ্ণু, যাঁর আরেক নাম হরি। এবং শৈব শাখার প্রধান দেবতা শিব, যাঁর আরেক নাম হর। প্রাথমিক পর্যায়ে এই দুই শাখার মধ্যে সহাবস্থান থাকলেও কিছুটা রেষারেষি এবং প্রতিদ্বন্দ্বীতার আভাস পাওয়া যায় পুরাণগুলিতে। যেমন বিষ্ণু-মহিমার পুরাণগুলিতে, অতএব বুঝতে অসুবিধে হয় না, সামাজিক প্রতিষ্ঠা পেতে ভাগবতদের তুলনায় শৈবদের অনেকবেশি আগ্রাসী হতে হয়েছিল, সেই স্মৃতিই সাধারণের মনে শিবের রুদ্ররূপটি গেঁথে দিয়েছে।  

    "ধর্মাধর্ম" গ্রন্থাকারে প্রকাশিত। প্রকাশক - গুরুচণ্ডা৯ প্রকাশন।  
     
     
    যদিচ হরি ও  হর ভক্ত গোষ্ঠীদের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব সম্ভবতঃ কোনদিনই ভয়াবহ হয়ে ওঠেনি, কিন্তু ছোটখাটো বিবাদ ও সংঘর্ষের ঘটনা লেগেই থাকত। যে বিভেদ ও দ্বন্দ্বের অবসান করেছিলেন যুগপুরুষ শঙ্করাচার্য। মূলতঃ তাঁর প্রচেষ্টাতেই হরি ও হর প্রায় অভিন্ন দেবতা হরি-হর আত্মারূপে হিন্দু ভক্তদের মনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। তিনিই হিন্দুধর্মের গঠন সম্পূর্ণ এবং সম্পন্ন করলেন, যার মূল তত্ত্ব আজও হিন্দু সমাজে একইভাবে প্রবহমান। সেকথা সংক্ষেপে আসবে একটু পরেই।

    ৫.৫.১ অন্যান্য হিন্দু দেবতা
     
     
    শিল্পী, কলাকুশলী ও দক্ষ কারিগর মহলে অত্যন্ত জনপ্রিয়।

    ৫.৫.২ দেবীরূপা নদী
     
    নদীসমূহতে দেবীত্ব আরোপ করার প্রাচীন প্রচলন যে অনার্য ভারতীয়দের মধ্যে ছিল, সেকথা আমরা আগেই আলোচনা করেছি। ব্রাহ্মণ্যধর্ম সেই নদীগুলিকেও নানান পৌরাণিক কাহিনীতে সাক্ষাৎ দেবীরূপে বরণ করে, হিন্দু ধর্মের অন্তর্ভুক্ত করে নিল। হিন্দু ধর্মের যে কোন দেব বা দেবী পূজায় জলশুদ্ধি একটি আবশ্যিক প্রকরণ এবং তার মন্ত্রটি হল, “গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরি সরস্বতি। নর্মদে সিন্ধু কাবেরি জলেস্মিন সন্নিধিং কুরু”।।

    "ধর্মাধর্ম" গ্রন্থাকারে প্রকাশিত। প্রকাশক - গুরুচণ্ডা৯ প্রকাশন।  

    যাই হোক, এই সাতটি পবিত্র নদীর মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ নদী গঙ্গা ও নর্মদা। গঙ্গা এবং নর্মদা সাক্ষাৎ দেবী মূর্তিতে পূজিতা হয়ে থাকেন।

    ৫.৫.২.১ গঙ্গা
    গঙ্গা মকরবাহনা দেবী। একদিকে গঙ্গা ও তাঁর অজস্র শাখানদী ও উপনদীর পবিত্র জলধারায় উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ জনজীবন একান্তভাবেই নির্ভরশীল। অন্যদিকে তিনিই পাপীজনের সকল পাপ ও কলুষহারিণী। গঙ্গার ভৌগোলিক উৎস যেখানেই হোক, পৌরাণিক মতে গঙ্গার উৎপত্তি ভগবান বিষ্ণুর চরণ থেকে। ভগীরথের তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে তিনি স্বর্গ থেকে মর্ত্যে এসেছিলেন। কিন্তু তাঁর সেই প্রবল জলধারার প্রপাত ধারণ করার সাধ্য পৃথিবীর ছিল না, অতএব ভগীরথের তপস্যায় সন্তুষ্ট মহাদেব তাঁর জটায় গঙ্গার সেই প্রপাত ধারণ করলেন। তারপর ভগীরথের প্রদর্শিত পথে গঙ্গা হিমালয় থেকে নেমে এলেন এবং দীর্ঘ পথ পরিক্রমা শেষ করলেন বঙ্গোপসাগরের সঙ্গমে।    

    এ গেল পূতসলিলা গঙ্গা নদীর পৌরাণিক কাহিনী। এ ছাড়াও আছে দেবীরূপা গঙ্গার কাহিনী। তাঁর অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কুরুরাজ শান্তনু, গঙ্গাদেবীকে বিবাহের প্রস্তাব দেন। দেবী গঙ্গা প্রথমে নারাজ হলেও, শর্ত সাপেক্ষে শান্তনু-জায়া হতে সম্মতা হলেন। শর্ত ছিল, তাঁর গর্ভজাত পুত্রদের তিনি জন্ম মূহুর্তেই গঙ্গাজলে বিসর্জন দেবেন, 
     

    "ধর্মাধর্ম" গ্রন্থাকারে প্রকাশিত। প্রকাশক - গুরুচণ্ডা৯ প্রকাশন।  
     
    এক সময় কৌরব বংশ যেমন আর্যাবর্তের শ্রেষ্ঠ গোষ্ঠী হয়ে উঠেছিল, তেমনি তাঁর উদাসীনতায় তার ভয়ংকর পতনও হয়েছিল। তাঁর পরোক্ষ সহযোগিতায় কুরু গোষ্ঠীর জ্ঞাতিশাখা পাণ্ডবরা উঠেছিলেন উন্নতির শিখরে এবং ঘটনাচক্রে তৃতীয়-পাণ্ডব বীর অর্জুনই হয়েছিলেন তাঁর মৃত্যুর কারণ। [মহা/আদি/৯৮]                       

    ৫.৫.২.২ নর্মদা
    নর্মদা গঙ্গার মতো বিষ্ণুপদী নন। তিনি রুদ্রের কন্যা - ভগবান মহাদেবের তেজ থেকে তাঁর জন্ম। গঙ্গার অপরিসীম মহিমার কথা মনে রেখেও মহর্ষি ভৃগু, কর্দম, কপিল, দুর্বাসা, অণীমান্ডব্য প্রমুখ বলেছেন নর্মদা ভারতবর্ষের সমস্ত নদীকুলের মধ্যে শ্রেষ্ঠা; রুদ্রের তেজ থেকে তিনি সমুৎপন্না; স্থাবর জঙ্গম সমস্ত কিছুকেই তিনি ত্রাণ করেন। শুদ্ধচিত্তে তাঁর তট পরিক্রমা করলে সর্বসিদ্ধি উপলব্ধি 
     
     

    "ধর্মাধর্ম" গ্রন্থাকারে প্রকাশিত। প্রকাশক - গুরুচণ্ডা৯ প্রকাশন।  

    নর্মদা - এই ত্র্যক্ষর শব্দটি শৈবদের কাছে “গায়ত্রী”-র সমতুল্য একটি বীজমন্ত্র। নৃ ধাতু থেকে নর্ম বা নর্মন  শব্দটি নিষ্পন্ন করা যায় – নর্ম কথার অর্থ ক্রিয়া, খেলা বা লীলা, আরও সঠিক বললে, আনন্দ-লীলা।  অতএব নর্মদা কথার অর্থ যিনি আনন্দ-বিলাস দান করেন। এই আনন্দের সংজ্ঞা মিলবে তৈত্তিরীয় উপনিষদের তৃতীয় ভৃগুবল্ল্যধ্যায়ের ষষ্ঠ অনুবাকে –
    “আনন্দই যে ব্রহ্ম একথা জেনে রাখুন। কারণ আনন্দ থেকেই এই জীব ও জড় জগতের সৃষ্টি হয়, আনন্দের আবহেই তারা প্রতিপালিত হয় এবং অন্তিমে এই আনন্দেই তারা ফিরে আসে ও আনন্দেই বিলীন হয়” [বাংলায় সরল অনুবাদ – লেখক]।
     
     করে নির্মল শুভ্র গাভীরূপে ফিরে যান স্বস্থানে। শিব ভক্তগণ আরও বিশ্বাস করেন, নর্মদাতটের প্রতিটি কংকর – অর্থাৎ প্রতিটি নুড়ি এবং কাঁকরই শিবময় শংকর। অতএব উওরভারতে কাশি যেমন একটি শিবক্ষেত্র, নর্মদা তট তার থেকেও বরেণ্য শিবক্ষেত্র।               

    চলবে....
    (পঞ্চম পর্বের ষষ্ঠ ভাগ আসবে ১৭/০৯/২২ তারিখে।)

    গ্রন্থ ঋণঃ
    ১. শ্রীমদ্ভাগবত– মহর্ষি কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাস রচিত মূল সংস্কৃত থেকে বাংলায় গদ্য অনুবাদ – সম্পাদনা তারাকান্ত কাব্যতীর্থ ভট্টাচার্য।
    ২. মহর্ষি কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাস রচিত মহাভারত – মূল সংস্কৃত থেকে বাংলায় অনুবাদ – মহাত্মা কালীপ্রসন্ন সিংহ মহোদয়। বসুমতী সাহিত্য মন্দির, কলকাতা ৭০০০১২।
    ৩. তপোভূমি নর্মদা (সাতটি খণ্ডে প্রকাশিত) – শ্রী শৈলেন্দ্রনারায়ণ ঘোষাল শাস্ত্রী, Director of The Vaidic Research Institute
    ৪. তৈত্তিরিয় উপনিষিদ - স্বামী গম্ভীরানন্দ সম্পাদিত এবং উদ্বোধন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত। গ্রন্থাংশের সরল বাংলা অনুবাদ- লেখক।

    [1] শব্দকোষে মার্জ্জালীয় শব্দের অর্থ বলছে, ১. মার্জ্জার, ২. কিরাত বা শুদ্ধদেহ, ৩. শূদ্র। (মহাদেব কী তাহলে শূদ্র কিরাতের ছদ্মবেশে নয়, নিজের স্বাভাবিক বেশেই অর্জুনের সঙ্গে লড়াই করলেন? তা না হলে, অর্জুন তাঁকে সাক্ষাৎ মহাদেব জেনেও, তাঁর কিরাত বা শূদ্র রূপেরও সম্বর্ধনা করলেন কেন? )

    [2] সম্ভবতঃ সত্যযুগে– এই সময়েই বিখ্যাত অসুর এবং দৈত্যদের সংহার করে আর্যরা তাদের আধিপত্য বিস্তার করছিলেন, এই অসুর, দৈত্য, দানব সকলেই যে অবৈদিক অনার্য সেকথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

    [3] প্রমথাধিপত্য>প্রমথদের আধিপত্য – প্রমথ মানে ভূত বা প্রেত – মহাদেবের পারিষদদের “গণ” বলা হত, গণপতি তাদের প্রধান। 

    [4] একার্ণব–এক+অর্ণব - গোটা পৃথিবী একটিমাত্র সমুদ্রের জলে ডুবে ছিল।

    [5] নারায়ণ – নার মানে জল, আর অয়ণ মানে আশ্রয় – একার্ণব জলের মধ্যে তিনিই একমাত্র আশ্রয় বলে, তাঁর নাম নারায়ণ।

    [6] অন্তকৃৎ - অন্তকারক, নাশক । “অনাদি অন্তকৃৎ” - যাঁর শুরু নেই অথচ যিনি প্রলয়কারী বিনাশক – অর্থাৎ ভগবান মহাদেব।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১৪১৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • guru | 103.175.***.*** | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১১:০১511844
  • @কিশোরবাবু 
     
    ভীষণ ভালো হচ্ছে | আপনার এই বইটি ভারতে ইতিহাস রচনাতে অবশ্য পাঠ্য হওয়া উচিত |
     
    কয়েকটি প্রশ্ন আছে |
     
    ১ | আচ্ছা হিন্দু পুরান গুলী তে একটি ক্লিয়ার প্যাটার্ন দেখা যায় যে যত অসুর রাক্ষস দানব তাদের শেষ পর্যন্ত নিহত হতে হয় | এই বিষয়ে একটি চীনা পুরাণের দৃষ্টিভঙ্গি একটু অন্য | আমি এইখানে "Xī Yóu Jì" বা "journey to the west" ষোড়শ শতাব্দীতে লিখিত এই পুরানটিতে যেসব দানব গুলির দেখা পাই তারা প্রত্যেকেই দুর্দান্ত কিন্তু কেউ শেষ পর্যন্ত নিহত হননা বরঞ্চ বিভিন্নভাবে তারা বিভিন্ন সৎ কাজে নিয়োজিত হন বা বোধিস্বত্ব ও বুদ্ধের দ্বারা বিভিন্ন শ্রেষ্ট পদ লাভ করেন | তাহলে হিন্দু পুরান ও চীনা পুরানের গল্পের এই প্যাটার্নের ভিন্নতার কারণ কি ?
     
    ২ | এই journey to the ওয়েস্ট গল্পটি আমি অনেকাংশেই রামায়ণের অনেক মিল খুঁজে পাচ্ছি | রামায়ণের হনুমানের মতো এইখানেও একটি অলৌকিক ক্ষমতাশালী বানর চরিত্র সুন্ wukong আছে | এইখানেও একটি অনেক দূর দেশে অভিযানের ব্যাপার আছে ও অনেক দানবদের সঙ্গে লড়াই এর ঘটনা আছে | পার্থক্য হচ্ছে যে এইখানে শেষপর্যন্ত কোনো দানবের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনা যেমন রামায়ণে ঘটে | তাহলে এই লেখাটিকে কি রামায়ণের ইনফ্লুয়েন্স বলা যেতে পারে নাকি vice versa ?
  • Sara Man | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৭:২৬511849
  • কিশোরবাবু, প্রথমবার অমরকন্টকে গিয়ে শুনেছিলাম, এখানকার মন্দিরের শিবলিঙ্গ গুলি মানব - প্রতিষ্ঠিত নয়, সবগুলোই পাতাল থেকে স্বপ্রকাশিত। অল্পবয়সী শহুরে দিদিমণি হিসেবে পাত্তা দিইনি। পরে আবিষ্কার করলাম। প্রতিটি শিবলিঙ্গ আগ্নেয় উদ্ভেদ। উল্লম্ব ডাইক। সারফেস ইরোশনের ফলে বেরিয়ে পড়েছে। ঐ লিঙ্গ মানুষের প্রতিষ্ঠার প্রশ্ন ই ওঠে না। মানুষ ওগুলো কে ঘিরে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে। ঐ মহাকাল পর্বত থেকে অজস্র নদী প্রবাহিত হয়েছে। প্রতিটির উৎস ভূগর্ভস্থ জল। নদীগুলো বেরিয়েছে শিবমন্দির থেকে। কারণ ডাইকের গায়ে আছে ফাটল, আর ভৌমজলস্তর ভূপৃষ্ঠের খুব কাছে। ঐ ফাটল দিয়ে শ্রাবণ মাসে ভলকে ভলকে জল বেরোয়। স্থানীয় মানুষ বলে নর্মদার সঙ্গে মা গঙ্গা দেখা করতে আসেন। কিন্তু তিনি আসেন সৎ মেয়ের মান ভাঙাতে। নর্মদা কেন অভিমানিনী সে আর এক ব্লক বাস্টার কাহিনী। আরও অনেক কিছু আছে। ঐ স্থানটি আমার ব‍্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী একটি প্রহেলিকা। 
  • Kishore Ghosal | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৮:৫৭511852
  • @ গুরুবাবু, 
    আমার লেখাটি পড়ে বারবার উৎসাহ দেওয়ার জন্যে অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই। 
    তবে আপনি যে বিষয়ে আলোচনা করেছেন, সেই চীনা পুরাণ সম্বন্ধে আমার বিন্দুমাত্র পড়াশুনো নেই, অতএব এ বিষয়ে কিছু বলার সাধ্যও নেই।   
  • Kishore Ghosal | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৯:৪৭511853
  • @ শারদা ম্যাডাম, নর্মদা উপত্যকার অধিকাংশ লিঙ্গ-প্রস্তরকে স্বয়ম্ভূ বলা হয়। প্রাচীন যুগ থেকেই বিশেষ আকারের প্রস্তর খণ্ডকে অনার্যরা লিঙ্গ নাম দিয়ে দেবপ্রতীক হিসেবে পূজা করতে শুরু করে। নর্মদা উপত্যকায় সেই লিঙ্গ আকৃতির অজস্র প্রাকৃতিক পাথরকেই তারা স্বয়ম্ভূ  আখ্যা দিয়ে সমগ্র নর্মদা উপত্যকাকেই শিব ক্ষেত্র বলে কল্পনা করেছে। 
     
    Plate Tectonic Evolution theory অনুযায়ী যে ভারতীয় প্লেট  ছিল আফ্রিকা, আনটার্কটিকা আর অস্ট্রেলিয়ায় ঘেরা - সেই প্লেট কোটি কোটি বছরের প্রাকৃতিক খেয়ালে ভেসে এসে ধাক্কা  খেল এশিয়ার প্লেটে - তাতে কত কী ঘটে গেল তার হিসেব রাখবে কে?  পৃথিবীর বুকে বুদ্ধিমান মানুষতো সেদিনের ছোকরা।  আর প্রাকৃতিক বিস্ময়কে ঈশ্বরে আরোপ করা আমাদের সাধারণ চরিত্র - আমরনাথ গুহার তুষার লিঙ্গের মতো - সবই স্বয়ম্ভূ।          
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন