এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা

  • মেটিরিয়া মেডিকার কাব্য – ( পর্ব – ৭/৮ ) 

    Goutam Dutt লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ০৯ এপ্রিল ২০২২ | ১৫০৭ বার পঠিত | রেটিং ৩ (১ জন)

  •  
    পরে বুঝেছি সেই শিব্রাম চক্কোত্তির ঘড়ি সারাই-এর কেসের গল্প ! মনে আছে তো আপনাদের ? আচ্ছা আরেকবার বলিই গল্পটা।     

    গল্পের নাম ‘আমার সম্পাদক শিকার’। শিব্রাম নিজের একটা লেখা নিয়ে গেছেন এক পত্রিকা সম্পাদকের দপ্তরে।

    “একটা গল্প। একেবারে নতুন ধবনের- আপনি পড়লেই বুঝতে পারবেন।' লেখাটা বাড়িয়ে দিলাম “আনকোরা প্রলটে আনকোরা স্টাইলে একেবারে -

    ভদ্রলোক গল্পে মনোযোগ দিয়েছেন দেখে আমি বাকাযোগ স্থগিত বাখলাম। একটু পড়তেই সম্পাদকের কপাল কুঞ্চিত হল, তারপরে ঠোট বেকে গেল, নাক সিঁটকাল, দাড়িতে হাত পড়ল,--যতই তিনি এগুতে লাগলেন, ততই তাঁর চোখ-মুখের চেহারা বদলাতে লাগল, অবশেষে পড়া শেষ করে যখন তিনি আমার দিকে তাকালেন তখন মনে হল তিনি যেন হতভম্ব হয়ে গেলেন। হতেই হবে। কিরকম লেখা একখান।

    'হ্যাঁ, পড়ে দেখলাম- নিতান্ত মন্দ হয়নি! তবে এটা যে একটা গল্প তা জানা গেল আপনি গল্পেব নামেব পাশে ব্র্যাকেটের মধে। কথাটা লিখে দিয়েছেন বলে-_নতুবা বোঝার আর কোনো উপায় ছিল না।'

    'তা বটে। আপনারা সম্পাদকরা যদি ছাপেন তবেই নতুন লেখক আমরা উৎসাহ পাই।' বলতে বলতে আমি গলে গেলাম, “এ গল্পটা আপনার ভাল লেগেছে তাহলে ?”

    'লেগেছে এক রকম। তা এটা কি _'

    'হ্যাঁ, অনায়াসে । আপনার কাগজের জন্যেই তো এনেছি।'

    “আমাব কাগজের জন্য? ভদ্রলোক বসেই ছিলেন কিন্তু মনে হল যেন আরো একটু বসে গেলেন, 'তা আপনি কি এর আগে আর কখনও লিখেছেন’ ?

    ঈষৎ গর্বের সঙ্গেই আমি জবাব "দিলাম, “নাহ, এই আমার প্রথম চেষ্টা ।'

    'প্রথম চেষ্টা, বটে ? ভদ্রলোক ঢোঁক গিললেন, “আপনার ঘড়িতে কটা এখন ?”

    ঘডিটা পকেট থেকে বার করে অপ্রস্তত হলাম, মনে পড়ল কদিন থেকেই এটা বন্ধ যাচ্ছে, অথচ ঘড়ির দোকানে দেওয়ার অবকাশ ঘটেনি । সত্য কথা বলতে কি, সম্পাদকের কাছে ঘড়ি না হোক অস্ততঃ ঘড়ি চিহ্নমাত্র না নিয়ে যাওয়াটা “বে-স্টাইলি' হবে ভেবেই আজ পর্যস্ত ওটা সারাতে দিইনি। এখান থেকে বেরিয়েই বরাবর ঘড়ির দোকানে যাব এই মতলব ছিল।

    ঘড়িটাকে ঝাঁকুনি দিয়ে বললাম, “নাঃ বন্ধ হয়ে গেছে দেখছি। কদিন থেকেই মাঝে মাঝে বন্ধ যাচ্ছে।

    “তাই নাকি ?  দেখি তো একবার ?' তিনি হাত বাড়ালেন।

    “ঘড়ি মেরামতও জানেন নাকি আপনি? আমি সম্ভ্রমভরে উচ্চারণ করলাম।

    'জানি বলেই তো মনে হয়। কই দেখি, চালানো যায় কিনা’।

    আমি আগ্রহভরে ঘড়িটা ওর হাতে দিলাম-_যদি নিখরচায় লেখা আর ঘড়ি একসঙ্গে চালিয়ে নেওয়া যায, মন্দ কি '

    ভদ্রলোক পকেট থেকে পেনসিল-কাটা ছুরি বার করলেন। তার একটা চাড় দিতেই পেছনের ডালার সবটা সটান উঠে এল। আমি চমকে উঠতেই তিনি সান্ত্বনা দিলেন, 'ভয় কি ? জুড়ে দেব আবার।'

    সেই ভোঁতা ছুরি এবং সময়ে সময়ে একটা চোঁথা কলমের সাহাযো তিনি একটার পর একটা ঘড়ির সমস্ত অঙ্গ-প্রত্ঙ্গ খুলে ফেলতে লাগলেন। মিনিট এবং সেকেণ্ডেব কাঁটাও বাদ গেল না। খুঁটিনাটি যত যন্ত্রপাতি টেবিলের উপর স্তুপাকার হলো--তিনি এক একটাকে চশমার কাছে এনে গভীব অভিনিবেশেব সঙ্গে পর্যবেক্ষণ কবছিলেন। সুক্ষ্ম তারের ঘোরানো ঘোরানো কি একটা জালের মতো -_ বোধহয় হেয়ার-ম্প্রিংই হবে - দু'হাতে ধরে সেটাকে লম্বা করার চেষ্টা করলেন। দেখতে দেখতে সেটা দুখান হযে গেল, মৃদু হাস্য করে আমার দিকে তাকালেন - তার মানে, ভয় কি, আবার জুড়ে দেব।

    ভয় ছিল না। কিন্তু ভরসাও যেন ক্রমশ কমে আসছিল। যেটা জুয়েলেব মধ্যে সবচেয়ে স্থলকায় সেটাকে এবাব তিনি দাঁতের মধ্যে চাপলেন, দাঁত বসে কিনা দেখবাব জনাই হযত বা। কিন্তু দন্তস্ফুট করতে না পেরে সেটাকে ছেড়ে ঘড়ির মাথাব দিকেব দম দেবার গোলাকার চাবিটাকে মুখের মধ্যে পুরলেন। একটু পরেই কটাস করে উঠল, ওটার মেরামৎ সমাধা হয়েছে বুঝতে পারলাম।

    তারপর সমস্ত টুকরো-টাকরা এক করে ঘড়ির অন্তঃপুবে রেখে তলাকার ডালাটা চেপে বন্ধ করতে গেলেন ; কিন্তু ডালা তাতে বসবে কেন ? সে উঁচু হযে রইল। ওপরের ডালাটা আগেই ভেঙেছিল, এবার সেটাকে হাতে নিয়ে আমাকে বললেন, আঠার পাত্রটা আগিয়ে দিন তো-_দেখি এটাকে ?’

    অত্যন্ত নিকৎসাহে গাম-পটটা বাড়িয়ে দিলাম। তিনি আঠাব সহায়তায় যথেষ্ট সংগ্রাম করলেন কিন্তু তার যৎপরোনাস্তি চেষ্টা সমস্ত বার্থ হলো। আঠায় কখনও ও জিনিস আঁটানো যায় ? তখন সবগুলো মুঠোয করে নিয়ে আমার দিকে প্রসারিত করলেন-_'এই নিন আপনার ঘড়ি ।'

    আমি অবাক হয়ে এতক্ষণ দেখছিলাম, বললাম— ‘এ কি হল মশাই ?’

    তিনি শান্ত কণ্ঠে জবাব দিলেন- ‘কেন, মেরামৎ করে দিয়েছি তো!’

    বাবার কাছ থেকে বাগানো দামী ঘড়িটার এই দফারফা দেখে আমার মেজাজ গরম হয়ে গেল- ‘এই বুঝি মেরামত করা? আপনি ঘড়িব যদি কিছু জানেন না তবে হাত দিতে গেলেন কেন?’

    ‘কেন, কি ক্ষতি হয়েছে ? একথা বলে তিনি অনায়াসে হাসতে পারলেন— ‘তাছাড়া, আমারও এই প্রথম চেষ্টা।'

    আমি অনেকক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে রইলাম, তারপর বললাম, ‘ওঃ! আমার প্রথম লেখা বলেই এটা আপনার পছন্দ হয়নি ?  তা-ই বললেই পারতেন—_ঘড়ি ভেঙে একথা বলা কেন ?’ আমার চোখ ফেটে জল বেরুবার মতো হলো, কিন্তু অবাঞ্ছিত অশ্রু কোনমতে সম্বরণ করে, এমনকি আনেকটা আপ্যায়িতের মতো হেসেই অবশেষে বললাম— ‘কাল না হয় আর একটা নতুন গল্প লিখে আনব, সেটা আপনার পছন্দ হবে। চেষ্টা করলেই আমি লিখতে পারি।’

    'বেশ আসবেন।’ এ বিষয়ে সম্পাদকের বিশেষ উৎসাহ দেখা গেল, কিন্তু ঐ সঙ্গে আর একটা নতন ঘড়িও আনবেন মনে করে। আমাদের দুজনেই শিক্ষা হবে তাতে। আপনারও লেখার হাত পাকবে, আমিও ঘড়ি সম্পর্কে পরিপর্কতা লাভ করব।’

    এই হল শিব্রামের গল্পাংশ। আমারও যেমন হ’ত নতুন নতুন কম্প্যুটার শেখার কালে। এমনও হয়েছে যে ঘন্টা ছয়েক ধরে কোনো একটা কিছু বানানোর চেষ্টা করেই যাচ্ছি — হঠাৎ অফিসে কারেন্ট চলে গেল। ব্যস, সারাক্ষণের পরিশ্রম পুরোটাই জলে। তখনো শিখিনি যে মাঝে মাঝে যা তৈরি করছি, তাকে সঞ্চয় (সেভ) করে রাখতে হয় !  সে সময় উইণ্ডোজ ৩.১ অপারেটিং সিস্টেম। কাজ করছি ওয়ার্ড স্টার, ডি-বেস, ফক্সপ্রো ইত্যাদি ডস-বেসড এ্যাপলিকেশন নিয়ে। এখন তো ওয়ার্ড বা এক্সেল ফাইল নিয়মিত সময় অন্তর নিজের থেকেই সেভ করে নেয়।

    *

    আমার ছেলের বয়স তখন দুই কি আড়াই।

    মাদ্রাজে চোখ দেখিয়ে গিন্নি আর ছেলেকে নিয়ে বেড়াতে গেছিলাম ব্যাঙ্গালোর আর মাইশোর। মাইশোর – বাংলায়  লিখলাম ইংরেজি শব্দটা। বাঙলায় বলে মহীশূর। ওই অঞ্চলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ যে মানুষটির কথা চোখে ভাসে তিনি হলেন টিপু সুলতান। টিপু সুলতানকে ডাকা হতো শের-ই-মহীশূর। তিনি তাঁর শৌর্যবীর্যের কারণে শের-ই-মহীশূর (মহীশূরের বাঘ) নামে পরিচিত ছিলেন।

    ব্যাঙ্গালোর কোনোরকমে ঘুরে নিয়ে চলে গেছিলাম মহীশূরে। উঠেছিলাম কর্ণাটক সরকারের ট্যুরিষ্ট লজে। মহীশূরের এই একতলা ট্যুরিষ্ট লজটি আমার খুব পছন্দের। বছর তিনেক আগেও দেখে এসেছি সেই একতলাই আছে। মাঝখানে একটা চারচৌকো ঘাসের বাগানের চারপাশেই থাকার ঘরগুলো। পাশেই ময়ূর গ্রুপের তিন তারা হোটেল। একই কম্পাউন্ডে।

    মহীশূর আমার খুব প্রিয় শহর। খুব ছোট্ট অথচ অনেক কিছু দেখার এখানে। নন্দী হিল্‌সে মহীশূরের দেবী চামূণ্ডার মন্দির। শহরের মাঝখানে মহীশূর—এর রাজবাড়ী বা সিটি প্যালেস। এক অপূর্ব দ্রষ্টব্যস্থল। রবিবারে’র রাতের আলোয় যখন গোটা সিটি প্যালেস জুড়ে আলো জ্বলে ওঠে তখন মহীশূরের রাত সত্যিই বর্ণময়। শুনেছি, নন্দী হিল্‌সের ওপর থেকে নাকি মনোরম সে দৃশ্য। এছাড়া আমার খুব প্রিয় আরেক জায়গা হ’ল মহীশূর আর্ট গ্যালারি। এখানে রয়েছে ভারতবর্ষের অন্যতম সেরা শিল্পী রাজা রবিবর্মার অজস্র পেইন্টিং। এছাড়া বিশেষ করে এস. এল. হালদানকরের আঁকা ‘উয়োম্যান উইথ দ্য ল্যাম্প’। এটি এক অসাধারন পেইন্টিং যা না দেখলে বর্ণনা করা শক্ত। আগ্রহী পাঠকগনের জন্য নীচের লিঙ্কটি শেয়ার করলাম।

    http://bangaloremirror.indiatimes.com/bangalore/others/How-a-woman-with-a-lamp-turned-a-plain-canvas-into-a-masterpiece/articleshow/50033938.cms

    ছোটদের জন্যে মহীশূর চিড়িয়াখানা এককথায় অনবদ্য। অত ছোট পরিসরে একটা জু গার্ডেন যে এত জীবন্ত হতে পারে তা এখানে না এলে বোঝা যায় না। তাই বাচ্চাদের খুব প্রিয় জায়গা এটা কারণ তারা এখানকার সব জন্তুজানোয়ার বা পাখীদের একেবারে তরতাজা দেখতে পায়।

    ব্যাঙ্গালোর থেকে মহীশূর পৌঁছে গেলাম ট্রেনে। ঘন্টা তিনেকের যাত্রা। আর ষ্টেশন থেকে প্রায় হাঁটাপথেই ট্যুরিষ্ট লজটা। সেবারে আমার অগ্রিম বুকিং ছিল না। তাই একটু দুশ্চিন্তাও ছিল। যাই হোক কোনোক্রমে দালালদের হাত বাঁচিয়ে একখানা চার বিছানার ঘর পাওয়া গেল।

    পরেরদিনের সকাল। ইচ্ছে ছিল সেদিন আগেই যাব চিড়িয়াখানা। তাতে ছেলের একটু আনন্দ হবে এই আর কি !  চা—টা খেয়ে গিন্নি গেছেন টয়লেটে। একফালি রোদ এসে পড়েছে বিছানায়। দেখেই মাথায় চাগাড় দিল ছবি তুলতে হবে ছেলের। সকালের রোদ্দুরের কচি রঙে দারুণ ওঠে ছবি। হাতে নিলাম আমার এস.এল.আর। অলিম্পাস। ব্যাটাকে রোদ্দুরের দিকে মুখ করে বসিয়ে আমি গেলাম খাটের ধারে। বসলাম মেঝেতে।

    ভিউ ফাউন্ডার দিয়ে দেখতে পাচ্ছি যে ও আপনমনে খেলা করেই যাচ্ছে কিন্তু আর একটু পিছিয়ে গেলে যেন ফ্রেমটার পুরোটা রোদ্দুরে ভরে যাবে। দারুণ লাগছে। ওকে বললাম, বাবু একটু পিছিয়ে যা…আরেকটু…আরেকটু…দাঁড়া…দাঁড়া…না আরেকটু পেছো……

    হঠাৎ চিল চিৎকার !  ব্যাটা পেছনে যেতে যেতে খাটের ধারে চলে গিয়ে সপাটে পড়ে গেছে মাটিতে। হায় রে ! ছবি তোলার সময় এটা আর খেয়ালই ছিল না আমার।

    মাথায় লেগেছে কিনা বুঝতে পারছি না। তবে পিঠে যে লেগেছে এ বিষয়ে একেবারে সন্দিহান। টয়লেট থেকে উদগ্রীব গলা…কি হল বাবুর ?

    আর কি হোলো। কি বলবো এবার ওর মাকে ! আমার তো দফারফা করবেই করবে। কিন্তু বাবুর কান্না আর থামেই না। ওর ভঙ্গিমা দেখে বুঝতে পারছি যে অসম্ভব যন্ত্রণা পাচ্ছে বেচারী পিঠের দিকে। ওর মাকে বলতেই হ’ল তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসতে।

    ছুটে গেলাম ট্যুরিষ্ট লজের ম্যানেজারের কাছে। কি করব ওইটুকু বাচ্চা নিয়ে। হাসপাতালে নিয়ে যাব কিনা। বললাম যে করে হোক একজন চাইল্ড স্পেশালিষ্ট কে খবর দিতে। তিনি দ্রুত বুঝে নিলেন ঘটনাটা আর আমায় বললেন আপনি ঘরে যান আমি ডাক্তার ডাকছি।

    সবে সকাল হয়েছে মহীশূরে। সাতটা কি সাড়ে সাতটা হবে। এত সকালে কি উনি ডাক্তার পাবেন ? মনের মধ্যে হাজারো চিন্তার উঁকিঝুকি।  সে বেচারী’র কান্নার বেগ একটু কমলেও ফুঁপিয়েই যাচ্ছে ক্রমাগত। ওর মা যথাসম্ভব সামাল দেবার চেষ্টায় ব্যাকুল।

    ঘরের দরজায় খট্খট্। ম্যানেজার জানালেন যে উনি একজন অর্থোপেডিক স্পেশালিষ্টকে পেয়েছেন ফোনে। আসছেন তিনি হাসপাতাল থেকেই। যেহেতু বাচ্চাটা পড়ে গেছে তাই উনি সরাসরি ওনাকেই ডেকেছেন।

    আরো প্রায় আধ ঘন্টাটাক বাদে ডাক্তারবাবু এলেন। সব শুনলেন। পিঠে হাত দিয়ে টিপে টিপে দেখলেন ছেলেকে অনেকক্ষণ ধরে। তারপর জানালেন যে,তেমন কিছু লেগেছে বলে মনে হচ্ছে না,তাও এক দুদিন দেখে যদি ব্যথা না কমে তখন অন্য কিছু ভাবা যাবে। একটা ওষুধ লিখে দিলেন।

    তখন সবে পেজার এসেছে ভারতবর্ষে। ডাক্তারবাবুর কোমরে’র বেল্টে গোঁজা সেই পেজার থেকে পিপপিপ আওয়াজ আসছে মাঝে মাঝে। উনি একবার করে দেখে নিচ্ছেন মেসেজগুলো। তার মধ্যেই চলছে আমার ছেলেকে দেখা।

    বললেন যে এক্ষুনি ওষুধটা আনিয়ে নিয়ে খাইয়ে দিতে।

    তারপরে বললেন যে আমাদের কি প্রোগ্রাম। বললাম। চিড়িয়াখানা দেখতে যাব ভাবছিলাম। উনি বললেন বেশ,যান দুপুরে তবে ওকে কোলে নিয়ে ঘুরবেন। ও অন্ততঃ আজকের দিনটা যেন না হাঁটে। আর যদি তেমন কিছু বাড়াবাড়ি হয় এই রইল আমার ফোন আর পেজার নাম্বার। আমাকে সঙ্গে সঙ্গে জানাবেন। আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন একটা ভিজিটিং কার্ড।

    ওনাকে গেট অব্দি পৌঁছে দিলাম। উনি ওনার স্কুটার নিয়ে চলে গেলেন। এবারে চোখ গেল আনার হাতে ধরা ওনার ভিজিটিং কার্ডটায়।

    Hosp : 23300
    Resi : 544712
    Pager : 9652-452410

    Dr. G. Marula Siddappa
    M.B.B.S, D’Ortho, M.S. Ortho
    Orthopaedic Surgeon
    K R HOSPITAL, MYSORE

    এছাড়া তলার দিকে ওনার বাড়ি’র ঠিকানা ইত্যাদি।

    আমি ভাবতে বসলাম। সত্যি এ এক অজানা ভারতবর্ষ। মেট্রোপলিটন শহর কলকাতায় এত বছর বাস করছি কিন্তু কখনো কি শুনেছি যে একজন অর্থোপেডিক সার্জেন যিনি কিনা আবার এম.এস তিনি স্কুটার চালিয়ে এসে কতো যত্ন করে দেখে যাবেন এমন একজন বাচ্চাকে এই
    সকালবেলায় ?

    ওষুধ খাইয়ে দুপুরে ছেলে কোলে নিয়ে ঘুরে দেখলাম মাইশোর জু।

    এই লেখাটায় ডাক্তারবাবুর নামটা মনে করতে গিয়ে খুঁজে বার করলাম ওনার সেই ভিজিটিং কার্ডখানা। একটু হলুদ হয়ে গেলেও আমার কাছে ওই অক্ষরগুলো হীরের মত জ্বলছে এখনো ! 

    ……চলবে……পরের পর্বে…
    #
    ©গৌতমদত্ত

     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ০৯ এপ্রিল ২০২২ | ১৫০৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • pradip pan | ০২ জুলাই ২০২২ ১৮:১২509553
  • খুব ভালো লাগছে।
    পরপর পড়ে যাচ্ছি, বা পড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন