২৫ শে জানুয়ারি, মঙ্গলবারের আনন্দবাজার পত্রিকার প্রথম পাতায় স্কুল খোলা সংক্রান্ত বিষয়ে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য পড়ার পর প্রাণে ঠান্ডা বাতাস লাগলো, মনে আনন্দের জোয়ার উঠলো। নিন্দুকেরা অনেক তেরা বেঁকা কথা বলছেন বটে, যেমন তাঁরা বলেই থাকেন। সেই নিন্দুকদের বিরুদ্ধেই এই প্রচেষ্টা। এক এক করে আসি?
১। শ্রদ্ধেয় মন্ত্রীমশাই জানিয়েছেন "স্কুল খোলা নিয়ে উদ্বেগের কারণ নেই"। আহা বহুদিন পর মন জুড়িয়ে গেলো।
সব সার্ভেগুলো দীর্ঘদিন ধরেই বলছিল প্রান্তিক পরিবারের বাচ্চাদের কোনো কিছু রিডিং পড়ার ক্ষমতাই কমে যাচ্ছে অতি দ্রুত, স্কুলছুট হবার সংখ্যা আকাশ ছোঁয়া, লার্নিং গ্যাপ এত দ্রুত বাড়ছে, যা অনতিক্রম্য অধিকাংশ বাচ্চাদের ক্ষেত্রেই। অনেক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরাও জানাচ্ছেন প্রান্তিক পরিবারের বাচ্চাদের মধ্যে স্কুলছুটদের সংখ্যা বাড়ছে ভয়ঙ্কর ভাবে। পশ্চিমের দেশগুলো, WHO থেকে বৈজ্ঞানিক তথ্য জানাচ্ছে যে স্কুল যেখানে বেশি বন্ধ থেকেছে সেখানকার শিশুদের মানসিক সমস্যা ভয়ঙ্কর। মধ্যবিত্ত বা তার ওপরের স্তরের বাচ্চাদের মধ্যে বাড়ছে digital addiction. তথ্য এটাও দেখায় যে সারা দেশের তুলনায় এই রাজ্যে অনেক কম শতাংশ বাচ্চা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা অব্দি পৌঁছায়। আর এসব কিছুর মধ্যেই বড় উদ্বেগে ছিলাম যখন দেখছিলাম দুনিয়ার বহু দেশে তো বটেই আমাদের দেশেও সব রাজ্যে স্কুল খোলা থাকছে সুদীর্ঘ সময় ধরে, শুধু পশ্চিম বঙ্গ ব্যতিক্রম। আজ খুব নিশ্চিন্ত লাগছে। মন্ত্রী বলে দিয়েছেন উদ্বিগ্ন হবার কারণ নেই, কাজেই যাবতীয় উদ্বেগ এক ঢেঁকুরেই উধাও।
২। আনন্দ বাজার জানিয়েছে বরেণ্য শিক্ষামন্ত্রী স্বাস্থ্য দপ্তর আর মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর সাথে স্কুল খোলা নিয়ে নিয়মিত কথা বলছেন। অহ কি আনন্দ কি আনন্দ, নাচো নাচো নিত্যানন্দ। নিন্দুকদের কথা শুনে শুনে আমারও দৃঢ় ধারণা হয়েছিলো যে এ রাজ্যের কর্ণধাররা ভুলেই গেছেন যে শিক্ষা ব্যবস্থা বলে একটা কিছু জিনিষ আছে আর সেটা বন্ধ দু বছর ধরে। এখন দেখছি ওনাদের শুধু মনে আছে তাই নয় এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে মাঝে মধ্যে কথাও বলেন। আহা ...
৩। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন বাচ্চাদের ক্ষতি না করে স্কুল খুলতে হবে। এই একটি ছোট্ট কথা বলেই মাননীয় মন্ত্রী এই রাজ্যকে বিশ্বের মধ্যে এক ব্যতিক্রমী উচ্চতায় নিয়ে গেলেন। গোটা দুনিয়াতে আর এদেশের বাকি রাজ্যের বাচ্চাদের ক্ষতি হয় না স্কুল গেলে, শুধু হয় এই রাজ্যে। CDC থেকে WHO সবাই জানিয়েছে বাচ্চাদের আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা খুব কম। আর সংক্রমিত হলেও না তারা সংক্রমণ ছড়ায় না হয় গুরুতর অসুস্থ। তার মানে বিশ্ব মাঝারে আমরাই ব্যতিক্রম। জয় বিশ্ব বাংলা।
৪। উনি বলেছেন, কোভিড সংক্রমণ না বাড়িয়ে স্কুল খোলা হবে। আচ্ছা বলুনতো আর কতবার এই এক কথা বললে তবে আপনাদের মাথায় ঢুকবে? অফিসে, কারখানায়, বাজারে, রাজনৈতিক দাদাদের মিটিংয়ে, বিভিন্ন ভিড় উপচে পড়া মেলায়, মদের দোকানে, খাবার দোকানে, সিনেমা হলে, যাত্রার আসরে - সংক্রমণ ছড়ায় না ছড়ায় না ছড়ায় না। সংক্রমণ ছড়ায় শুধু স্কুল কলেজে। এবার থেকে সবাই এটা মাথায় রাখবেন আশা করি।
৫। মাননীয় মন্ত্রী মহাশয় জানিয়েছেন, প্রতিষেধকের ব্যবস্থা করে তবেই স্কুল কলেজ খোলা হবে। চোখে ছানি পড়েছে, ঠিক দেখতেও পাই না। কলেজের ছেলেমেয়েগুলোর তো কবেই টীকা হয়ে গেছে। তারা তো সব কলেজেই যাচ্ছে মন্ত্রীমশাই তো বলেই দিয়েছেন। আর আমি দেখছি সব ছাত্র ছাত্রী ঘরেই বন্দি। দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। আর ইয়ে ৫ বছর বয়স অব্দি টীকা হতে কত বছর লাগবে কেউ জানে না। কাজেই ততদিন অব্দি ছুটি ছুটি ছুটি .....
৬। শ্রদ্ধেয় শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন এমন করে স্কুল খোলা হবে যাতে আর বন্ধ করতে না হয়। একদম পরিষ্কার চাঁছা ছোলা কথা। কোভিড যতদিন আছে ততদিন পশ্চিমবঙ্গের বাচ্চাদের বড় বিপদ হবে স্কুল কলেজ গেলেই। শুধু এই রাজ্যেই এই বিপদটা আছে সেকথা বহুবার বলা হয়েছে, কিন্তু কিছু আকাট মানুষ বুঝতে চায় না। যাই হোক এবার পরিষ্কার হলো তো? কোভিড আগামী ১০০ বছরেও যাবে না, কাজেই বাংলার বাচ্চাদের স্কুল থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকবেই আর ঠিক সেই জন্যই স্কুল খোলা যাবে না, বাস।
৭। মাননীয় মন্ত্রী এও জানিয়েছেন যে কয়েকটি স্কুল একত্র করে খোলা জায়গায় একসাথে স্কুল হবে। সেই হট্টমেলায় কি মজা রে ভাই, কি মজা! কম কম করে বাচ্চারা নিজেদের স্কুল বাড়িতে গেলেই করোনা ধরবে কিন্তু অনেকে মিলে একসাথে হুল্লোড় করলে কিছু হবে না। এত আগেই প্রমান হয়ে গেছে কতবার। লোকাল ট্রেনের সংখ্যা কমিয়ে প্রতি ট্রেনে ভিড় বাড়িয়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি তো এই রাজ্যেই আবিষ্কার হয়েছিল। তবে এখন আবার ভুরু কোঁচকান কেনো? আবার প্রশ্ন করছেন একজন মাস্টার মশাই কি করে আই সি এস ই, সি বি এস ই এবং মাধ্যমিক বোর্ডের ক্লাস একসাথে করাবেন? অদ্ভুত প্রশ্ন! বাড়িতে চাল, ডাল, আলু ফুলকপি দিয়ে খিচুড়ি রান্না হয় না? সেটা যদি হয় তাহলে তিন বোর্ডের ক্লাস একসাথে হবে না কেনো? আর আপনি খামোখা এটাই বা ধরে নিচ্ছেন কেনো যে দুয়ারে স্কুল পড়াশোনার জন্য করা হচ্ছে? বলিহারি যাই। আর শুনে নিন কান খুলে, ফালতু প্রশ্ন করবেন না। মন্ত্রীমশাই পরিষ্কার বলে দিয়েছেন প্রশ্ন করার আগে বিধানসভায় যেতে হবে, নইলে আপনার প্রশ্ন করার কোনো অধিকার নেই।
৮। প্রায় ৫০ বছর আগে এই রাজ্যের শেষ মহীরুহদের মধ্যে অগ্রগণ্য এক উন্মাদ বলেছিলেন "ভাবো ভাবাটা প্র্যাক্টিস করো"! এইতো ৫ দশক পেরিয়ে আমাদের রাজ্যের কর্ণধাররা ভাবা প্র্যাক্টিস শুরু করেছেন। ধৈর্য রাখি সবাই, আর কয়েক দশকের মধ্যেই ভাবনার পর কাজ শুরু হবে, স্কুল খুলবে।
আপাতত দুয়ারে স্কুল আর ইয়ে তার সাথেই দুয়ারে মদ। জয়তু বিশ্ব বাংলা।