অসাধারণ ! প্রত্যেকটা পর্ব-ই পড়ি ও দারুণ লাগে, বলা হয়ে ওঠে না।
মা ছোটোবেলায় ব্রতচারী করতেন, অমিয়বালা ইস্কুলে, জসোবা আর জসোভা-র গল্প শুনেছি, আর গায়ে-গতরে খাটার আগে 'চল কোদাল চালাই'। আর আমাদের বরাকৃমি ইস্কুলের এক হেডমাস্টার ঐ হাততালির বদলে 'সাধু সাধু' শুরু করেছিলেন, সে এক যাতনা, তবে এই ইতিহাস জানতাম না।
আচ্ছা, 'দারিয়াবান্ধা' খেলা টা কী? নাম শুনেছি,।খেলেছি মনে হয় না।
যদুবাবু,
বরাকৃমি? আম্মো; ১৯৬১ থেকে ৬৫। তবে ১৯৭১ এ শুনেছি আমাদের ওয়ার্ডেন নন্দবাবুকে নকশাল আন্দোলনে ছুরি মারা হয়। তারপর থেকে হোস্টেল উঠে গিয়ে ওই ঘর গুলো মডেল স্কুল হয়ে যায়। ২০১২তে আমরা পাঁচজন ১৯৬৭ উচ্চমাধ্যমিক, ওখানে মহারাজদের সঙ্গে দেখা করে প্রেয়ার হলে বসে বিল্ডিং ঘুরে ঘুরে দেখে এসেছি। সরস্বতী পুজোর দিন ছিল।
দারিয়াবান্ধা খানিকটা কবাডির মত, কিন্তু অনেকগুলো এক্কাদোক্কার স্টাইলে ঘর কাটা থাকে। ডিফেন্সের টিমের ছেলেদের ওই ঘরের মধ্যে দাঁড়িয়েই অ্যাটাকিং টিমের ছেলেদের ছুঁয়ে আউট করতে হয়। অ্যাটাকিং টিমের কাজ বিপক্ষকে বোকা বানিয়ে দ্রুতবেগে ঘর গুলো পেরিয়ে ওপারে পৌঁছে যাওয়া। কেউ যেন টাচ না করতে পারে।
আপনি যে বরাকৃমি জানতাম। কোনো একটা পুরোনো টই-তে বোধহয় বলেছিলেন নরেন্দ্রপুরের গবা মহারাজ, অর্থাৎ তরুণকান্তি দে-ও বরাকৃমির ছাত্র। সেই থেকে ইস্কুলের ব্যাপারে গর্ব আর রাখার জায়গা পাই না। :)
নকশাল আন্দোলনের সময় ছুরি মারার গল্প আমার বাবা-জেঠাদের মুখেও শুনেছি। সম্ভবতঃ মিথ্যা নয়। ওরা ঐ স্কুলে পড়তেন না, তবে বাবা সক্রিয় রাজনীতি করতেন সেই সময়, আর আমাদের বাড়ি খুব একটা দূরেও নয়। আমি অবশ্য খুব বেশি যাই না আর। ইস্কুলের মাঝে ঐ মাঠ ভরিয়ে দিয়ে বিশাল মূর্তি-টূর্তি করে এমন-ই চেহারা পালটে গেছে যে আর ফিরে গেলে চিনতে পারি না। তবে চেনা স্যারেরা আছেন এখনো। দেখলে চিনতে পারেন, মনে হয় যেন দৃষ্টি একটু উজ্জ্বল হয়ে উঠলো, সেই টানেই মাঝে মাঝে ঢুঁ মেরে আসা।
'দারিয়াবান্ধা' বুঝলাম। মনে হচ্ছে না খেললেও দেখেছি। :)
অ্যাই, ঠিক বলেছ।অমন সুন্দর খেলার মাঠে বিশালকায় সব মূর্তি! কোন নান্দনিক সেন্স নেই গা!
ঠিক করেছি আর যাবো না। মিশনের হোস্টেল জীবন বেঁচে থাক আমার স্বপ্নে, আমার ছত্তিশগড়ের গ্রামের জীবনে লেগে থাকার ও তার মধ্যে আনন্দ খোঁজার শিক্ষা ওই জীবনে, এটা স্বীকার করি।
অহো, কী লেখা! লেখক-পাঠকে এমন জড়াজড়ি আত্মীয়তার হরিহরতা! আমারও ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে গেল।
আমাদের হাওড়ায় অবিশ্যি অত বড়োসড়ো 'মেলা' ছিল না, আমাদের ছিল বিদ্যার্থী সমাজ সব পেয়েছির আসর। যুগান্তরের। অখিল নিয়োগী -- স্বপনবুড়ো -- পরিচালিত। স্থানীয় অভিভাবক আমার মেজদা, বলা হত সঙ্ঘমিত্র। মেজদাদের নিজেদের ক্লাব ছিল বিদ্যার্থী সমাজ, তারই লেজুড় আমাদের আসর। নিয়ম অনুযায়ী সঙ্ঘমিত্রর অন্তত পঁচিশ বছর বয়েস হওয়া দরকার ছিল, অতগুলো ছেলেমেয়ের স্থানীয় অভিভাবক বলে কথা! মেজদা ছিল বড় জোর আঠের-উনিশ, সদ্য ইন্টারমিডিয়েট দিয়েছে! বয়েস ম্যানেজ করেছিল, এখন আমার মনে হয় স্বপনবুড়ো বুঝতে পেরেও চেপে গিয়েছিলেন, না হলে অতগুলো ছেলেমেয়ের খেলাধুলো মাটি! কী কী খেলা, কী কী মজা, লিষ্টি করছি না, রঞ্জন যা যা লিখেছেন সেরকমই। কিন্তু বছরে একবার বড়োসড়ো সমাবেশ হত, বিরাট ফাংশন হত, নাচ গান আবৃত্তি অভিনয় ইত্যাদি। মনে আছে সবাই মিলে মহাজাতি সদনে গিয়েছিলুম, পাড়ার একজন মেজদার-চেয়েও-বড় দাদা প্রচুর খাইয়েছিলেন।
আমাদের 'আসর'-এর পাশের মাঠেই ছিল --কিশোর সভা নয় -- কিশোর বাহিনীর মাঠ। আমরা জানতুম ওরা কম্যুনিস্ট ছিল। আমার মেজদার যিনি মেন্টর, বড় হয়ে বুঝেছি তিনি সোশ্যালিস্ট, কিন্তু কট্টর কম্যুনিস্ট বিরোধী। তাই আমরা কিশোর বাহিনী নই। কিন্তু আমাদের আর ওদের একই ব্রতচারীর মাষ্টারমশাই। তিনি আমাদের শিখিয়েছিলেন
এই আমাদের কিশোর বাহিনী সর্বজনপ্রিয়
হে ভগবান ওদের তুমি দীর্ঘজীবন দিও।
ওদেরও বোধ হয় শিখিয়েছিলেন বিদ্যার্থী সমাজ!
অনেক পরে, কল্যাণীতে বাড়ি করেছি। থাকতে এসে শুনলুম বিমল ঘোষ -- মৌমাছি -- এই পাড়াতেই থাকেন!
রঞ্জন দা, হুল্লাট হচ্ছে। সেই মজলিশি ঢঙে। যেমন তুমি লেখো।
শান্তিনিকেতনেও তো হাততালি দেবার বদলে 'সাধু, সাধু" বলার নিয়ম।
গানের এই লাইনটা কী সুন্দর -- “যা হারিয়ে যায়, তা আগলে বসে রইব কত আর”?
এপারে আটের দশকে বয় স্কাউট করতে গিয়ে ‘চল কোদাল চালাই, ভুলে মানের বালাই; ঝেড়ে অলস মেজাজ, হবে শরীর ঝালাই’ -- এই গান আমরাও গেয়েছি।
মনিমালা শৈশব স্মৃতি অপূর্ব
শেখরনাথ,
বেশ ক'বছর পরে তখন আমি বরানগর মিশনের হোস্টেলে। সেখানে একবার একজন এলেন ব্রতচারী শেখাতে। উনিও-, আপনাদের যেমন শেখানো হয়েছিল, তেমনই একটা ভ্যারিয়েশন করলেন--
" তারাই মোদের সবার প্রিয়,
সকলের আদরণীয়, সকল গুণে বরণীয়।
বিভু তোমায় এই মিনতি, দীর্ঘজীবন তারে দিও, সফল জীবন তারে দিও।
মোদের প্রীতি জড়িয়ে দিও।
মোদের প্রীতি মোদের স্মৃতি মোদের গীতি জড়িয়ে দিও"।।
এসব বোধহয় গুরুসদয় দত্তের রচনা। তবে তারাশংকরের স্মৃতিকথায় আইসিএস গুরুসদয় দত্তের সবাইকে রায়বেঁশে নাচানো নিয়ে কিছু তিক্ত-কষায় মন্তব্য আছে।
রঞ্জন-দাঃ ব্রতচারী সখা নামিয়ে পড়ছিলাম। দেখলাম ব্রতচারীর সতেরো খানা মানা আছে, কোনোটাই আর এ জীবনে মেনে চলা হলো না - বিশেষ করে "ভুলেও ভুঁড়ি বাড়াইবো না" দেখে রীতিমত বিমর্ষ হয়ে পড়লাম। যা বুঝছি সবকটা ধরে ধরে উলটো করে দিলে তাও আশা আছে।
তেরো ও ষোল মেনে চলি। চোদ্দ, ্পনের এবং সতের মানতে চেষ্টা করি।ঃ))))
হ্যাঁ তা ঠিক। দু-অ-দৈ-ভি-ক মেনে চলাই যায়। ঃ)