কাকে বলে কবিতা? সদ্যপ্রয়াত প্রদীপ চৌধুরী লিখেছেন, ‘শব্দের ফ্রেমে বাঁধানো ভালোবাসার নামই কবিতা।’ এরকম অমোঘ উচ্চারণ আরও রয়েছে এই কবির। হাংরি আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা এই কবি তাত্ত্বিকভাবে কবিতাকে বুঝতে চেয়েছেন। তাঁর কবিতা–ভাবনার কেন্দ্রে রয়েছে একটিই শব্দ। ভালোবাসা। তাই তাঁর স্বীকারোক্তি, ‘আমি এভাবেই/ সাদা কাগজে আমার যতিরেখাহীন/ ভালোবাসার কথা লিখে গেছি।’ তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘জন্ম ও মৃত্যুর উপর অতিকায় দুই পা রেখে/ ভালোবাসা/ নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে—/ মহাকাব্যের এই কি সূচনা?’
প্রদীপ চৌধুরী মসৃণ, শৌখিন কবিতা লিখতে চাননি। তাঁর কবিতায় আছে পাগলামি। পাগলামি ছাড়া বোধহয় জীবনের কিছু মৌলিক সত্যের কাছে পৌঁছোনো যায় না। তাই তিনি লিখেছেন, ‘উন্মাদ পথিক তুমি কোন জন্মান্তরের প্রেত খুঁজে বেড়াও/ যার মুখোমুখি হতে তুমি বদ্ধপরিকর।’ এর কারণ হয়তো এই যে, তিনি মনে করেন, আধুনিক মানুষ যুগপৎ আদিম এবং আধুনিক। তাই মেকি সভ্যতা, কৃত্রিম শিক্ষা এবং শিক্ষিত ও মুখরোচক শব্দের প্রতি তাঁর কোনো আনুগত্য নেই। প্রদীপের মতে, শিশুর চিৎকার, মুমূর্ষুর প্রলাপ, মানসিক রোগীর খাপছাড়া কথাবার্তা, এসবও কবিতার অংশ হতে পারে। নান্দনিকতার অজুহাতে কবিতায় যা কিছু বর্জন করা হয়, তাদেরই নিজের কবিতায় স্থান করে দিতে চেয়েছেন প্রদীপ। আধুনিক জীবন, তার ভোগ ও দুঃখের স্বরূপকে তিনি তুলে ধরতে চেয়েছেন, যা আসলে আমাদের আত্মাকেই পরিষ্কার করে দিয়ে যায়।
প্রদীপের মতে, ‘মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া একজন আধুনিক মানুষের আর কিছুই করার নেই।’ কবিতাতেও তিনি লিখেছেন, ‘জীবনের রান্নাঘরে মৃত্যুর জন্যও পিঁড়ি পেতে রাখতে হয়।’ মানুষ কী শুধুই ঘাড় হেঁট করে অপেক্ষা করে যাবে? না। মানুষের অস্তিত্বের জন্যই গড়ে তুলতে হয় কবিতার প্রতিরোধ। একজন কবিই পারেন, জীবনকে জীবনের মুখের ওপর থুতুর মতো ছুড়ে দিতে। কোন্ জীবনের কথা বলেছেন প্রদীপ? তাঁর ভাষায়, ‘আমার চারপাশে যা ঘটে চলেছে তাকে মুখোশধারী পুরুষ বা স্ত্রীলোকের বিরক্তিকর একঘেয়ে প্রদর্শনী ছাড়া কিছু মনে হয় না।’ এই নিরন্তর, অবিরাম কামনা–প্রবাহে জীবনের মৌলিক গুণগুলি হারিয়ে যায়, প্রবল হয়ে ওঠে অর্থলিপ্সা, খাদ্যলিপ্সা ও ক্ষমতালিপ্সা। একমাত্র চূড়ান্ত সংকটের সময়ই মুখোশ আলগা হয়ে বেরিয়ে পড়ে প্রকৃত চেহারা। এই সংকটের সময়ই দরকার হয় প্রবল ঝাঁকুনির। পাগলামি ছাড়া এই ঝাঁকুনি সম্ভব হয় না।
ষাটের দশকে, প্রদীপ এবং অন্যান্য হাংরি কবি যখন লিখতে শুরু করেন, তখন ছিল এরকমই এক সংকটের সময়। প্রদীপের ভাষায়, ‘মিডিওক্র্যাসি তরুণ প্রজন্মের সেন্সিটিভিটিতে এনে দিয়েছিল এক ব্যাপক শূন্যতা।’ স্বপ্ন থেকে সমাজ, মধ্যবিত্ত ভণ্ডামির ফলে তছনছ হয়ে যেতে বসেছিল। প্রদীপের ভাষায়, ‘আমার যৌবনে আয়ুহীনতা ছাড়া কোনও বিপন্নতা নেই।’ তীব্র আক্রোশে তাঁর মনে হয়েছে, ‘আমি দেখতে পাচ্ছি নিজের কবন্ধ শরীর, চমৎকার, দোল খাচ্ছে বসন্ত বাতাসে।’ এই সময় হাংরি জেনারেশনের কবিরা নতুন কিছু করতে চেয়েছিলেন। প্রদীপের ভাষায়, ‘নতুনত্ব ব্যাপারটাই এক ধরনের নাশকতা, সুতরাং প্রকৃত প্রস্তাবে আমার কবিতা পুরোপুরিই বিধ্বংসী, অর্থাৎ মনুষ্যোচিত।’ মোহাবিষ্টের মতো তাঁরা যেন নিজেদের সত্য, খাঁটি আইডেন্টিটি আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। প্রদীপ লিখলেন, ‘আমার জীবন এক কারফিউ উৎসব।’
তিনি অনুভব করেন, কবিতা এমন এক ভাষায় লিখতে হবে, যা মানুষের মর্মলোককে সরাসরি বিদ্ধ করবে। ‘এক একটি শব্দের মধ্যে আমার দুঃস্বপ্ন ও সমুদ্রযাত্রা’-কে তিনি ধরে রাখতে চেয়েছেন। কবিতাই তাঁর কাছে ‘আলটিমেট সিন্থেসিস’। প্রদীপের ভাষায়, ‘কবিতাই আদিম ও আধুনিক মানুষের যাবতীয় জিজ্ঞাসা এবং অন্তর্ঘাতের, শিক্ষিত ও ভুল শিক্ষিত মানুষের চেতনা ও অবচেতনার যাবতীয় সংঘাতলুপ্তির একমাত্র উপায়।’ তাই জীবনের দরকারি ও পরিত্যক্ত, সবকিছুরই স্থান হতে পারে কবিতায়। কবিতাই তুলে ধরে জীবন সম্পর্কে কবির বিশেষ চেতনা। পৃথিবীতে মানুষের অতি সামান্য অস্তিত্বকে শতাব্দীব্যাপী প্রসারিত করে দেয় কবিতাই। কবিতা আমাদের ক্ষয়িষ্ণু, অনিশ্চিত, জটিল, আর্ত জীবনের এক প্রাণময় অবস্থা। কবিতা জীবনকে ‘জাস্টিফাই’ করে ব্যক্তিকে জীবনের মুখোমুখি দাঁড়াবার জন্য নির্দেশ দেয়, জীবনকে দুর্দান্ত করে তোলে। প্রদীপের ভাষায়, ‘উত্তেজনার পর সাবলীল রেতঃপাত/ এই আমার কবিতা।’
বাস্তবতার প্রকৃত স্বরূপ সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রদীপ লিখেছেন, ‘অর্থ, ক্ষমতা আর যৌনতা শাসিত আমাদের এই সভ্যতায় অনুভূতিপ্রবণ মানুষ সবসময়েই নিজেকে এক বিকট কালো গর্তে নিক্ষিপ্ত বলে অনুভব করে, যা থেকে বহির্গমনের কোনও পথ নেই।’ তাঁর মনে হয়েছিল, আমরা সবাই, ‘উৎপীড়নের মধ্যে অবাক হয়ে হাঁটছি।’ এ সেই বাস্তব, যেখানে মহাকাব্যের নায়কেরা কাঁধে গামছা নিয়ে খাবারঘরের দরজায় অপেক্ষা করে। এই সমাজের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘নপুংসক ও গণিকাপল্লীতে ওৎ পেতে আছে সাকার ঈশ্বর, মুণ্ডহীন ভালোবাসা, কেউ কাউকে সুপ্রভাত জানাচ্ছে না।’ বীভৎস একসময়ের বর্ণনা দিয়েছেন এইভাবে, ‘দিন রাত একটার পর একটা অসুখ হাতবদল হয়ে যাচ্ছে, বুলেটের মতো একের পর এক মানুষের কপালে গিয়ে ধাক্কা মারছে জীবাণু, ভয়াবহতার মধ্যে লিপ্ত থাকতে থাকতে কুস্বপ্নকে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিচ্ছি আমরা।’
কলকাতার দিকে তাকিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘কলকাতা যেন এক বিরাট আতঙ্কের কারখানা, একটি অর্ধসমাপ্ত গ্রাম, ধর্মে ও যৌনমিলনে সমান আতঙ্ক, আমার চারদিকে উদ্ধারহীন ভিড়, যন্ত্রচালিত যানবাহন, ব্যাধিলিপ্ত মানুষের মুখ–-ধ্বংস বলব একে? একে সৌন্দর্য বলব?’ গির্জার ত্রিশূলে নয়, তিনি যেন এক নষ্ট পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন। মানুষের সপ্রতিভ মার্কেটিং দেখে ক্লান্ত। নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বারবার তিনি একা হয়ে যেতে চান। তিনি জানেন, অপরিচয়ে থাকাই অমরতা। এবং অমরতা বা মানুষ কাউকেই ব্যবহার করার উপায় তাঁর জানা নেই। তাঁর মনে হয়, ‘ভিড়ের ভেতর আমি একা হাঁটি।’ নিজের ভেতর তীব্র চূর্ণ নির্জনতাকে অনুভব করেন তিনি। লেখেন, ‘জীবনের বর্ণাঢ্য পাঁচিলের বাইরে আমি একা বসে আছি।’ এই একাকীত্বই যেন তাঁর হাসপাতাল। তাঁর ভাষায়, ‘হাসপাতাল, তা কি এই জন্মের মন্দির?’ এই একাকীত্বই তাঁর স্বাধীনতা। তাই লেখেন, ‘আমার ভ্রমণ ও দীর্ঘযাত্রায়/ কোনো প্রভুর আঙুল ছিল না।’
তবু তিনি বেঁচে আছেন। যদিও এই বেঁচে থাকা সাংকেতিক। কবিতাই তাঁকে গিঁথে গেছে জীবনের রক্তাক্ত নোঙরে। এর কারণ হিসাবে লিখেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি আমার আত্মার প্রতি আমার ততটাই শ্রদ্ধা, যা না হলে এমন পাশবিক অবস্থায় আমার বেঁচে থাকা সম্ভব হতো না।’ কিন্তু নিজের অবস্থান সম্পর্কে তিনি জানেন। তাই লেখেন, 'সামাজিক ভাবে বেঁচে থাকতে হলে কতপ্রকার অমানুষিকতা বাঁচিয়ে রাখতে হয়।’ আত্মার মধ্য দিয়ে বয়ে যায় নর্দমা। কবি সতর্ক করে দেন এইভাবে, ‘অবিবেচকের মতো পা বাড়ানো মানেই অন্যের করুণা নিয়ে মৃত্যু, নেশার ঘোরে বেরিয়ে পড়া সব সততা শৌখিন খুরের চাপে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে।’ তাঁর মধ্যে সবসময়ই কাজ করে একটা অনিশ্চয়তা। তাই লেখেন, ‘আমি কখনো আমাকে সম্পূর্ণ দেখতে পাই না।’ তবু সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিছু কিছু পদশব্দ খুব প্রিয় হয়ে ওঠে। কবি লেখেন, ‘কিছু পদশব্দ ক্রমে শিল্পের পোশাকে হেঁটে চলে।’
প্রদীপ চৌধুরীর মতো কবি সবসময়ই জীবনকে নতুন চোখে দেখেন। প্রেম ও নিসর্গের নতুন সম্পর্ক তৈরি হয় তাঁর কবিতায়। তিনি লেখেন, ‘তরল নিসর্গে ডুবে আছি ক্রূরতম প্রেমে।’ এই কবির কাছে প্রেম সবসময়ই ক্রূরতম। ভালোবাসার পাজামা পরে এসে তা কেবলই গোপন ক্ষত সৃষ্টি করে। তাই তিনি লেখেন, ‘আমি রাইফেল হাতে সারারাত প্রেমিকার জন্যে অপেক্ষা করি।’ এ এমন এক রাইফেল, যার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে বুনো পাখির ঝাঁক। মেয়েরা ডানা মেলে তাঁর আত্মায় ভেসে বেড়ায়। তিনি জানেন, ‘হত্যা ও আত্মহত্যা উভয়েই ভালোবাসার সন্তান।’ তাই একটি চুম্বনের পাশে অভিপ্রেত ও দীর্ঘজীবী বিপ্লবকে তাঁর সামান্য ম্লান মনে হয়।
প্রদীপের কবিতায় যৌনতা আর আত্মরতি কখনও মিলে মিশে যায়। ‘মন্দির’ কবিতায় তিনি লেখেন, ‘মাথা অব্দি নিজেকে দেখি/ অদ্ভুত সৌন্দর্যের বোধ আমাকে আচ্ছন্ন করে তোলে/ আমি বুঝতে পারি দেবতা কখন মন্দিরের বেড়া ডিঙিয়ে/ আমার শরীরের প্রতি ভাঁজে ঢুকে পড়েছে/ আর তাঁর বৈদ্যুতিক স্পর্শে/ আমি আরো পবিত্র/ আমি আরো সুন্দর হয়ে উঠেছি।’ আত্মমুগ্ধতা এবং সৌন্দর্যবোধের মিশেলে তাঁর কবিতা এভাবেই যেন নার্সিসাসের স্বীকারোক্তি হয়ে ওঠে। আত্মানুসন্ধানের এই বিশেষ পর্বেই নিসর্গকে তাঁর আপনজন মনে হয়। তাই লেখেন, ‘আমি যে একজন সম্পূর্ণ মানুষ একথা বোঝার জন্যে কখনো/ সমুদ্রের কাছে যেতে হয়।’
প্রদীপ লিখেছেন, ‘আমি পৃথিবীর অদ্ভুত দৃষ্টিহীনতায় অবাক হয়ে যাই।’ বিস্ময়বোধের সঙ্গে ক্রমেই এসে মেশে ক্লান্তি এবং বিপন্নতা। নিজের স্বাধীনতা উদ্ধারের জন্য একদিন তিনি তীর্থযাত্রা শুরু করেছিলেন। উদ্যত কালো বিড়ালের থাবার সামনে ছেড়ে দিয়েছেন নিজেকে। টেবিলের উলটোদিকে নিজের আততায়ীকে নিয়ে প্রাতরাশ সেরেছেন। তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলতে চেয়েছেন, ‘একমাত্র ভালোবাসার শর্তহীন সংক্রমণই/ মানুষকে মানুষের মধ্যে ধরে রাখতে পারে।’ জীবনের রঙিন চিত্রকল্পগুলিকে ধ্বংস করতে চেয়েছেন। গোধূলির রক্তে মিশিয়ে দিয়েছেন নিজের বিক্ষত আত্মাকে। এভাবে তাঁর প্রতিটি কবিতাই হয়ে উঠেছে এক একটি স্বপ্ন। ঘৃণা ও ভালোবাসার কথাগুলি চিৎকার করে বলতে বলতে বাস্তবচেতনা এবং নিজের বোধকে তিনি মিশিয়ে দিতে চেয়েছেন। তিনি অনুভব করেছেন, ‘একটি কবিতাকে ঘিরে বয়ে চলেছে/ বরফ গলা লক্ষ কবিতার খরস্রোতা নদী।’
কবিতায় বাস্তবতার সীমারেখাকে বারবার লঙ্ঘন করতে চেয়েছেন প্রদীপ। চেয়েছেন নিজের চেনা জানা পৃথিবীকে হত্যা করতে। কাব্যলক্ষ্মীর যূপকাষ্ঠে রক্তাক্ত ভূমিকা পালন করতে চেয়েছেন তিনি। মিথ্যার অন্তরে লুকিয়ে থাকা সেই সত্যকে খুঁজে পেতে চেয়েছেন, যা মানুষকে পৃথিবীতে বাঁচিয়ে রাখে। তিনি একজন তাড়িত মানুষ। ইবসেনের ভূতের মতো নির্দয় ও প্রহৃত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছেন চোরাবালিতে। থুবড়ে পড়া পৃথিবীর কাছে তাঁর কোনো দাবি নেই। তিনি শুধু চেয়েছিলেন, ‘হে পৃথিবী তুমি পথের মতো প্রসারিত হও।’ আর এই বিস্তৃতির সাধনা করতে গিয়েই তিনি কল্পনা করেন, ভাগনারের সঙ্গে বাশোর দেখা হচ্ছে সানজো–শী শহরে। বসন্তের রক্তক্ষরণ আর ইগর স্ট্রাভিনস্কির সংগীত তাঁর কাছে একাকার হয়ে যায়। তিনি দেখতে পান, সারা পথে ঝরা বকুলের মতো, দুধের মতো সাদা ফুল ছড়ানো। তাঁর সমস্ত বিদ্রোহের উৎসে ছিল ভালোবাসা, সৌন্দর্যবোধ এবং জ্ঞানের প্রতি তৃষ্ণা, এই পৃথিবীতে যাদের নিতান্ত অভাব। তিনি তাই নিজের মতো করে নাশকতা চালিয়েছেন, এক মেকি এবং মুখোশ পরা সভ্যতাকে প্রত্যাখ্যান করতে চেয়েছেন আর কবিতা দিয়েই গড়ে তুলতে চেয়েছেন প্রতিরোধ, খুঁজে নিতে চেয়েছেন মনুষ্যত্ব ও আত্মানুসন্ধানের পথ, আর্ত হয়ে উঠেছেন ভালোবাসার জন্য, আত্মাকে আগুনে পুড়িয়ে খাঁটি করে তুলতে চেয়েছেন, নিজের হৃদয়কে রক্তাক্ত করে একের পর এক স্বীকারোক্তি করে গিয়েছেন। ক্রমশই একা হয়ে গেছেন প্রদীপ এবং সেই একলা চলার পথ দিয়েই আজ চলে গিয়েছেন অনন্তলোকে...
খুব সামান্যই পড়েছি এদিক-ওদিক; তবু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রিয় কবি। ডিয়ার ডিয়ার/ একি হত্যা, শূন্যতা অথবা শ্মশান থেকে/ আরেক জন্মের জন্যে অলৌকিকভাবে জেগে ওঠা?/ ডিয়ার ডিয়ার/ আমার এ জন্মের শেষ নাস্তিকতা তুমি/ ঈশ্বর পরিষ্কার করো আমার নিঃশ্বাস/ ঈশ্বর আমার মুখ থেকে চোয়াল খুলে নাও... এরকম কয়েকটা লাইন মনে পড়ে। মাঝেমাঝে মনে হয় হাংরি আন্দোলন না ঘটলে সত্যিই বাংলায় লেখালিখির বিশেষ অর্থ থাকত না। এই লেখাটার জন্যে ধন্যবাদ।