" তোর সাথে থাকতে গিয়ে আমার জীবনটাই নষ্ট হয়ে গেল " অভির কথাটা শোনার পর থেকে কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারছে না রনি। ও এইচ আইভি পজিটিভ জানার পরেও ওর সাথে সম্পর্কটা স্বাভাবিকভাবেই গড়ে উঠেছিল অভির সাথে। ডেটিং সাইটে নিজের এইচ আইভি স্ট্যাটাস লিখেই প্রোফাইলটা তৈরী করেছিল ও। সেখান থেকই আলাপ ওদের। তারপর থেকে এই তিন বছরে রণির সাথে একসাথে থাকতে থাকতে নিয়ম করে নিজের এইচ আইভি পরীক্ষা করাতে একবারও ভোলেনি অভি। যেমন রনি ভোলেনা নিজের সিডি৪ বা ভাইরাল লোড পরীক্ষা করাতে আর এন্টিরেট্রোভাইরাল ওষুধ খেতে।
ওদের ওপেন রিলেশনটা যতটা ওপেন ততটাই ওপেন রনির এইচ আইভি স্ট্যাটাসটাও। যদিও এটা নিয়ে অভির প্রচুর আপত্তি আছে তাও কিছুতেই কোনও কথা শোনেনা রনি। আর তাই আজকাল নাকি অনেকেই বলে বেড়ায় যে অভিরও এইচ আইভি আছে। তাতে যদিও অভির খুব একটা কিছু যায় আসেনা। ও মনে করে রনি ছাড়া বাকিদের সাথে কন্ডোম ছাড়া সেক্সএর প্লেজারটা তো ও পুষিয়েই নেবে। যদিও রনির যত্ন বা রনির প্রতি ভালোবাসায় কোনও খামতি রাখেনি ও। এভাবেই তিনটে বছর একসাথে কাটালেও রনির ইউনিভার্সিটির পরীক্ষা শেষ হওয়ায় রনি যেহেতু বাড়ীতে থাকে আজকাল দুপুরে অফিস কেটে অন্য কাউকে নিজেদের ফ্ল্যাটে ডাকতে না পারাটা মনে মনে বিড়ম্বনা তৈরী করে ওর। যদিও উইকেন্ড পার্টিতে গুলোতে যাওয়া নিয়ে রনির সঙ্গে তুলকালাম অশান্তি হয় মাঝে মাঝেই। সেদিন রাতে এমনই এক ঝগড়ার সময় অভির মুখে এমন কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে যায় রনি। আত্মসম্মানে লাগে ভীষণ। আর তাই ভোর বেলা এককাপড়ে বেরিয়ে পড়ে ও।
নিজের বাড়ি ফিরেই বাবার থেকে কিছু টাকা ধার নিয়ে অন্য শহরে চলে আসার পর একটা ছোটখাটো কাজ জুটিয়ে নিয়ে রণি একা থাকতে শুরু করেছে কিছু দিন। যেকোনো শহরেই একা থাকলে জীবনে অনেক লোকজন হঠাৎ করে জুটেই যায়, যদিও প্রয়োজন হলেও প্রিয়জন তারা কেউ না। তাই অফিস ফেরত একাকীত্ব আর নেশা এখন রনির নিত্যদিনের সঙ্গী । মাঝে মাঝে মাঝেই নেশার ঘোরে কেটে যায় বাকী রাতটুকু।কখনও কখনও রাতের ওষুধটাও খেতে ভুলে যায় ও।
এমনই একদিন আবারও ফোন করে খোঁজ নিতে গিয়ে, যখন অভি জানায়, এখনও লোকে অভিকেই এইচ আইভি পজিটিভ মনে করে অথচ ওর রিপোর্টটা নেগেটিভ। কি দরকার ছিল রনির নিজের এইচ আইভি নিয়ে এত সবাইকে বলার, এত সতী সেজে ডেটিং অ্যাপে লিখে বেড়ানোর, তাহলে তো আর অভিকে কেউ এইচ আই ভি পজিটিভ ভাবত না! রনি কিছুতেই বোঝাতে পারেনা এটাই হওয়া উচিত। এটা ওর দায়িত্ব। আর তাই ফোনটা রাখার পর কান্নায় ভেঙে পড়ে আর ভাবে, "দায়িত্বশীল হওয়াটা কি সত্যিই ভুল!" ওতো অভিকে ভালো রাখার জন্যই অভির জীবন থেকে সরে এসেছে, তারপরেও....
ভাবতে ভাবতে মাদক অবলম্বন করে ঘুমিয়ে পড়ে ও, সে ঘুম আর কখনও ভাঙেনি...
( সব চরিত্র কাল্পনিক হয় না)
পুনশ্চ - এইচ আইভি আক্রান্ত মানুষের জীবনে অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ওষুধে শরীর সুস্থ থাকলেও, প্রতিদিন মানসিক ভাবে ভালথাকাটাও ভীষণ জরুরি। অথচ আমরা শারীরিক স্বাস্থ্য নিয়ে যতটা ভাবি মানসিক স্বাস্থ্য কে সেভাবে গুরুত্ব দিই না। বহু মানুষ বিভিন্ন কারণে নিজের শেষদিন পর্যন্ত এইচ আইভি রিপোর্টটাকে গ্রহণ করতে পারেন না। নিজের বেড়েওঠার সময়ে তৈরী ব্যগেজগুলো বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। যতই সরকারি ভাবে প্রচারে সামাজিক বৈষম্য দূর করার চেষ্টা চলুক না কেন, আত্মবৈষম্য বা সেল্ফ স্টিগমার কারণে আত্মবিশ্বাসের অভাবে মানুষ যে কোনও সময় ভালনারেবল হয়ে উঠতে পারে। সেখানে আমাদের মত অন্য যৌনতার মানুষের ভালনারিবিলিটি আরও বেশি। সামাজিক নীতিপুলিশির কারণে অনেকেই সেগুলো থেকে বেরোতে পারেন না। আজও বহু পুরুষ দাড়ি কামানোর ব্লেড বা সেলুন থেকে এইচ আইভি সংক্রমণ হয়েছে বলে নিজের ডিফেন্স মেকানিজমে সেটাকেই বিশ্বাস করাতে ভালবাসেন বাকীদের কাছে, এটা জেনেও যে, "দাড়ি কামানোর ব্লেড থেকে এইচ আইভি ছড়ায় না"।
এই লেখাগুলো আসুক।